#রম্য
সালেহা খাতুনের ভীষণ মন খারাপ। তার ছেলের বউটা একদম তার মন মতো হয়নি। সে ঘুম থেকে ওঠে দেরিতে, ঘরের কোনো কাজ করতে চায় না, সারাদিন শুয়ে শুয়ে কেবল ফেসবুক চালায় আর ফেসবুকে নিজের অনলাইন শপের প্রমোশন করে বেড়ায়। দেখে-শুনে সালেহা খাতুন একদম অতিষ্ঠ হয়ে গেলেন।
তিনি অনেক চেষ্টা করেছেন বউকে বোঝানোর, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। ছেলেকে বলেও কোনো লাভ হয় না, ছেলেটা হয়েছে একদম ভেড়া, বউয়ের সামনে উঁচু গলায় কথা বলতে পারে না। এ অবস্থায় সবচেয়ে কাজে লাগতো যে মানুষটিকে, তিনি আজ দশ বছর হলো ওপারে পাড়ি দিয়েছেন। নইলে তার হুংকারে বউটার সোজা হতে দু’মিনিটও লাগতো না। প্রচন্ড বিরক্তি নিয়েই সালেহা খাতুন দিনাতিপাত করতে লাগলেন।
কিন্তু একদিন হঠাৎ করে তিনি আবিষ্কার করলেন, তার বউটা একদম পাল্টে গেছে। সে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে সব কাজ নিজের হাতে করে শেষ করে রাখছে, সালেহা খাতুনের কিছু বলা লাগছে না। তিনি ঘুম থেকে উঠেই দেখছেন সব কাজ সারা। তার বাসায় যে ছুটা বুয়াটি প্রতিদিন এসে কাজ করে যায়, সে এই কয়দিন কোনো কাজ না পেয়ে বাড়ির ওয়াইফাই দিয়ে ইমোতে তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলে সময় পার করে দিলো। শেষমেষ ছুটা বুয়াটিকে বাদই দিলেন তিনি।
শুধু কাজকর্মের বেলাতেই নয়, সালেহা খাতুনের মন জোগাতেও বউটা সারাদিন ব্যস্ত। ‘কি খাবেন মা’, ‘কি পরবেন মা’, ‘কি করবো মা’ করে করে বউটা তাকে অস্থির করে ফেলছে। মনে মনে ভীষণ খুশি হলেন সালেহা খাতুন- যাক, বউটা তবে এতোদিনে লাইনে এসেছে।
তবে শুধু সালেহা খাতুন নন, তার ছেলে সৌমিকও বউয়ের এই পাল্টে যাওয়াটা খেয়াল করে। যে শম্পা রাতে তাকে কাছে ঘেঁষতে দিতো না, সে এখন আদরে আদরে তাকে অস্থির করে ফেলে। ‘মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়’- এই আপ্তবাক্য অনুসরণ করে বউ পাল্টে গেছে, এটা ধরেই সে আর ব্যাপারটা নিয়ে বেশি ভাবলো না।
এর মাঝেই একদিন সালেহা খাতুন বসে টিভি দেখছেন, তার পাশে শম্পা। রিমোটটা তিনি ভুলে খাবার টেবিলে রেখে এসেছিলেন, শম্পাকে সেই রিমোট আনতে বললেই সে হাত ইয়া লম্বা করে রিমোটটা নিয়ে এলো। দেখে, সালেহা খাতুন ভয়ে কাঁপতে লাগলেন।
কিন্তু তিনি একটু বুদ্ধিমান কি না, ভয় যে পেয়েছেন বউকে বুঝতে দিলেন না। সন্ধ্যাবেলায় সৌমিক বাসায় ফিরে কলিংবেল দেয়ার আগেই তিনি দরজা খুলে সৌমিককে ডেকে নিয়ে গেলেন ভেতরে। এরপর বললেন, ‘তোকে একটা জিনিস দেখাবো।’
বলেই তিনি ছেলেকে নিয়ে লুকিয়ে রান্নাঘরের দিকে গেলেন। রান্নাঘরে শম্পা রান্না করছিলো, মা-ছেলে সবিস্ময়ে এবং সভয়ে দেখলো, শম্পা দুহাতে দেয়ালে ভর দিয়ে দু’পা চুলার নিচে দিয়ে রেখেছে। পায়ে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে, আর সে আগুনেই রান্না হচ্ছে খাবার।
রুমে এসে সৌমিককে সালেহা খাতুন বললেন, ‘দেখলি?’
‘হু।’
‘কি করবি এবার?’
‘মা, দাদি একটা গল্প করতেন না, আমাদের এলাকার মাথায় শ্যাওড়া গাছে একটা শাকচুন্নি আছে, সেটা সুযোগ পেলেই বাড়ির বউদের লুকিয়ে সে বাড়ির বউ সেজে গিয়ে ঘর-সংসার করে? আমার মনে হয় এটা ঐ শাকচুন্নি। শম্পাকে কোথাও লুকিয়ে রেখে তার রুপ ধরে এসেছে।’
‘এখন কি করবো?’
‘আমার এক বন্ধু একবার ভূত তাড়াতে ওঝা বাবা এজেন্সির নাম্বার দিয়েছিলো। ওদের একবার ফোন করি দাঁড়াও।’
কিন্তু ফোনটা হাতে নিয়েও সৌমিক ফোন দিলো না। সালেহা বললেন, ‘কি হলো?’
‘মা, ফোন দেয়া কি খুব দরকার? শাকচুন্নি হোক আর যাই হোক, আমাদের তো উপকারই করছে।’
‘হ্যাঁ, ঠিকই বলেছিস। কি সুন্দর গুছিয়ে সব কাজ করছে। আর এত্তো ভদ্র ব্যবহার! আজ-কালকের মেয়েদের মধ্যে তো এসব দেখাই যায় না।’
‘ঠিক তাই। দেখো, তোমার এখন বুয়া লাগছে না। আবার গ্যাস ইউজ না করে পায়ে আগুন জ্বালিয়েই রান্না করছে। গ্যাসের খরচটাও বাঁচছে আমাদের। আরো কতো চমৎকার কি করতে পারে ও কে জানে।’
সালেহা খাতুন হঠাৎ ছেলের হাত ধরে বললেন, ‘বাবা, তাহলে ফোন দিস না এখন ওঝাকে। আরো কয়েকদিন দেখি।’
সেসময়ই শম্পা এসে দরজার সামনে দাঁড়ালো। জিজ্ঞেস করলো, ‘মা-ছেলে মিলে কি ফুসুরফুসুর করো?’
সৌমিক হেসে বললো, ‘মাকে বলছিলাম, তোমাকে দেখতো ভীষণ সুন্দর লাগছে আজকে। আই লাভ ইউ, বউ।’ বলেই শম্পার গালে চকাস করে চুমু খেয়ে ফেললো সে।
শম্পা লজ্জায় লাল হয়ে বললো, ‘যাহ, দুষ্টু। মায়ের সামনে এমন কেউ করে?’
বউ আর ছেলের কাণ্ড দেখে সালেহা খাতুনও মুচকি মুচকি হাসতে লাগলেন।
(শেষ)
#একটি আধুনিক শাকচুন্নির গল্প
লেখা- সোয়েব বাশার
.