মুমিন নামে একটা ছেলের সাথে আমার প্রায়ই দেখা হয়। ছেলেটা সম্ভবত একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে। বয়স খুব বেশি না। বাইশ – তেইশ বছর হবে। পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি লম্বা। দেখতে শুনতে বেশ ভালো। কিন্তু ছেলেটা সবসময় হতাশ থাকে!
আমার একটু কৌতূহল হলো একটা অল্প বয়সের ছেলে এমন হতাশ কেন থাকে?
আমি মুমিন কে একদিন রাস্তায় দেখলাম মাথা নত করে আনমনে হাঁটছে। আমি ডাকলাম,”এই মুমিন।”
আমার দিকে তাকিয়ে শুকনা একটা হাসি দিলো।
“কেমন আছ?”
“ভালো!”
ভালো কথাটা অনেক কষ্টে করে বলল।
“তোমার সময় আছে?”
“হ্যাঁ ভাই। এখন কোনো কাজ নেই।”
“আচ্ছা চলো চা খাই।”
চা খেতে খেতে জিজ্ঞেস করলাম। “তোমার কি সমস্যা বলো তো?”
বলতে চাচ্ছিল না। এ ধরনের ছেলেরা সহজে মনের কথা প্রকাশ করতে পারে না। কিছুটা জোর করার পর বলল, “ভাই খুব প্রেশারে আছি।”
“কী নিয়ে এত চাপে আছ?”
“চাকরি নিয়ে ভাই। বসটা সবসময় দৌড়ের ওপরে রাখে! অকারণে জারি দেয়!”
“এই চাকরিটা ছেড়ে দাও। তুমি তো প্রাইভেট চাকরি করো তা-ই না?”
“জানি ভাই। এই চাকরি ছাড়লে হয়ত আরেকটা চাকরি পাবো। কিন্তু কয়েক মাস সময় তো লাগবে। এ কয় মাস বসে খাওয়ার মতো টাকা আমার নাই! তাছাড়া বাড়িতে টাকা পাঠাতে হয়। না পাঠালে বাবা মা চলতে পারে না!”
“কতটা বেতন পাও তুমি?”
“পনেরো হাজার টাকা ভাই। থাকা খাওয়ায় সাত হাজার খরচ হয়ে যায়। বাড়িতে আট হাজার টাকা পাঠাই। হাতে কিছুই থাকে না!”
“চাকরি করার আগে কী করতা মুমিন?”
“দুইটা টিউশনি করতাম ভাই।”
“কত টাকা পাইতা?”
“দশ হাজার টাকা।”
“মনে করো তোমার বেতন বারো হাজার টাকা। তখন কী করবা?”
“কী করবো ভাই। চলতে খুব কষ্ট হবে! বাড়িতে টাকা কম পাঠাব। “
আমি মুমিন কে নিয়ে একটা ব্যাংকে গেলাম। ওকে একটা তিন হাজার টাকার ডি পি এস করালাম। এটা বেতন ঢুকার পর অটো কেটে নিয়ে যাবে ব্যাংক। রাজি হচ্ছিল না সহজে।
অনেকদিন হলো বাইরে আছি। এলাকায় যাওয়া হয় না খুব একটা। বছরখানেক পর মুমিনের সাথে দেখা হলো। ছেলেটা কে বেশ হাসি-খুশি মনে হচ্ছে! মনে হয় আগের চাকরি ছেড়ে দিয়েছে। এখন আর প্রেশার -টেশার নাই। দেখে ভালো লাগছে! আমাকে দেখে এগিয়ে আসল।
“ভাই কেমন আছেন? “
“ভালো আছি। তুমি কেমন আছ মুমিন?”
“খুব ভালো আছি ভাই! ভাই চলেন চা খাই।”
এখন চা খাওয়ার ইচ্ছে ছিলো না। ছেলেটা এত আগ্রহ নিয়ে বলছে তাই না করতে পারলাম না। আজ মুমিনই চায়ের অর্ডার দিলো।
“ভাই এখন এলাকায় থাকেন না?”
“খুব কম থাকা হয় ভাই। তারপর তোমার কী খবর বলো? চাকরি পরিবর্তন করেছে বুঝি?”
“না ভাই। আগের চাকরিতেই আছি।”
“তোমার আগের বস বোধহয় চেঞ্জ হয়ে গেছে? “
“না ভাই আগের বসই আছে।”
“তোমাকে কেমন অন্যরকম লাগছে?”
“আগে দূর্বল ছিলাম। তাই সব সময় ভয়ের মধ্যে থাকতাম। চাকরিটা চলে গেলে বিপদে পড়ে যাব। আপনার কথায় কিছু টাকা জমা হলো। এখন আর চাকরি হারানোর ভয় পাই না। বসও ব্যাপারটা বুঝে গেছে। আগের মতো অযথা চাপ দেয় না। “
“শোন মুমিন, নিজেকে শক্তিশালী করতে হয়। এই জন্য না যে অন্যকে হারাতে হবে। এই জন্য নিজেকে শক্তিশালী করতে হবে যেন দুনিয়া তোমাকে পিষে না ফেলতে পারে। “
Nabil Mahmud