#ইসরাত_মিতু
#সত্য_ঘটনা_অবলম্বনে
সব কিছু কেমন যেনো পাল্টে যাচ্ছে, সিমা তা খুব ভালো করে বুঝতে পারছে, সিফাতের মধ্যে আগের মত ভালোবাসা খুঁজে পায়না সে!
যে ভালোবাসা সিফাতের কাছ থেকে সে পেয়েছে, তা এখন অতীতের মত মনে হচ্ছে!
বাড়ির বড় ছেলের ঘরে কোনো সন্তান নেই, এটা কেউ মেনে নিতেই পারছেনা!
সিমার যেনো দুঃখের দিন মাত্র শুরু হতে লাগলো, সিফাত এখন রাতে দেরী করে বাসায় ফিরে, ঠিকমত কথাও বলে না , অল্প কিছুতেই রেগে যায়, এসব দেখে সিমা চোখের পানি ফেলে আর ভাবে .. আমিও তো মা হতে চাই, আমার কি কষ্ট হয় না, কষ্টটা তো আমার সবচেয়ে বেশি, অথচ আমিই এখানে অপরাধী, সব কিছু তো আল্লাহর হাতে, তিনি না দিলে আমার কী ক্ষমতা আছে কিছু করার!
সায়রা বানু এখন আর আগের মত সিমাকে পছন্দ করেনা, অনেক ধরনের কথা শুনায়, সংসারের কাজে কোনো ভুল হলে কথা দিয়ে খুব মানষিক যন্ত্রনা দিতে থাকে, সিমা প্রতিবাদ করতে গিয়েও পারেনা!
একদিন সিফাতের বাবা-মা সিমার আব্বা-আম্মাকে ডেকে পাঠালেন তাদের বাড়িতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবে তাই, দুপুরের খাবার শেষ করে তারা সিমার আব্বাও আম্মাকে তাদের রুমে ডাকলেন, সিফাতের বাবা কথা শুরু করলেন…
— দেখুন, আমরা তো অনেক বছর দেখলাম, অনেক ধৈর্য্য ও ধরলাম কিন্তু কোনো লাভই হলোনা, নাতি-নাতনীর কোনো মুখ দেখতে পারলাম না, আমাদের ছেলের ভবিষ্যত তো এভাবে নষ্ট হতে দিতে পারিনা, আমাদের চিন্তা তো আমাদেরই করতে হবে, তাই আমরা অন্য কিছু চিন্তা করছি।
— ঠিক বুঝতে পারলাম না আপনার কথা ভাই সাহেব, আমরাও তো চাই আমার মেয়েটা মা হোক, কিন্তু আল্লাহ্ না দিলে কারো তো কিছু করার নেই, আমরা সব সময়ই দোয়া করি ওদের জন্য যাতে আল্লাহ্ মুখ তুলে তাকায় ওদের দিকে, সিমার আম্মা কথাগুলো বললেন।
— আমি সব কিছু স্পষ্ট করে বলতে চাচ্ছি, সেটা হচ্ছে আমরা আমাদের ছেলেকে আরেকটি বিয়ে করাতে চাই, এভাবে আর কত দিন?
— কী বলছেন এসব! সন্তানের জন্য আপনারা আমার মেয়েটার জীবন শেষ করে দিতে চান? আমার মেয়েটার কষ্টটা আপনারা দেখবেন না? সিমার আব্বা- আম্মা দুজনেই বিচলিত হয়ে পড়লো! তাদের ভিতরটা কেঁপে উঠলো!
— আমরা তো আপনার মেয়েকে চলে যেতে বলছি না, ও এ বাসাতেই থাকবে, তাতে আমাদের আপত্তি নেই, আমরা শুধু আরেকজন বউ আনবো যাতে সিফাত বাবা হতে পারে।
— আমরা এটা কিছুতেই মানতে পারবোনা, এটা কখোনোই সম্ভব না, আপনারা আমার মেয়ের এত বছরের সংসারটা নষ্ট করে দিতে পারেন না, আর এমন কিছু করলে আমরা আপনাদের ছেড়ে দিবোনা।
— তাহলে আপনারা কী আমাদের গ্যারান্টি দিতে পারবেন আপনার মেয়ের মা হওয়ার ব্যাপারে? যদি গ্যারান্টি দিতে পারেন সে সন্তান দিতে পারবে তাহলে আমরা সিফাতকে বিয়ে করাবো না, সায়রা বানু বলে উঠলেন।
— সিমার মা কান্না জড়িত কন্ঠে বললেন, কী রকম কথা এটা? সন্তানের গ্যারান্টি কেনো মানুষ দিতে পারে? এসব জিনিস কী আমাদের হাতে আছে? আল্লাহ্ ছাড়া কেউ কী জানে কী হবে? এরকম কথা আপনি বলতে পারলেন?
এসব বলে সিমার আব্বা-আম্মা তাদের রুম থেকে কাঁদতে কাঁদতে বের হয়ে সিমাকে ডাকলো, সিমা সব কিছুই শুনেছে বাহিরে বসে, কথার আওয়াজে সারা বাসা যেনো কাপঁছিলো!
সবচেয়ে অবাক বিষয় হচ্ছে সিফাত এসব নিয়ে একটি কথাও বললো না, সিমা শুধু সিফাতের মুখের দিকে তাকিয়ে কাপঁছিলো, ওর হাত- পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিলো, মুখে কিছু বলতে পারছিলো না, ওর পৃথিবীটা সঙ্কীর্ণ হয়ে গেলো মুহূর্তেই, বেঁচে থাকার মানেটাই ভুলে গেলো সে, বুকের মধ্যে পাথর চাপা ব্যথা অনুভব করতে লাগলো!
সিমার আম্মা সিমাকে জড়িয়ে ধরে কান্নারত অবস্থায় বললো-
—চল মা, আমাদের সাথে চল, এখানে তোকে আমরা রেখে যেতে চাই না, এত অসম্মান আর অবহেলা নিয়ে এখানে তোর থাকার দরকার নেই! এত বছর ধরে যেখানে আছিস্ সেখানের কারো কাছে আপনই হতে পারলি না, সবাই এখানে স্বার্থপর!
—না আম্মা, তোমরা চলে যাও, আমার কপালে যা আছে তাই-ই হবে, আমিও দেখতে চাই আমাকে তারা কতটা কষ্ট দিতে পারে, আমি কিছুতেই তোমাদের সাথে যাবোনা, যা হয় হবে, তোমরা চলে যাও, আর তোমরা আমাকে নিয়ে চিন্তা করো না, সিফাত আমাকে কখনো কষ্ট দিবে না, এসব ভাববেও না, ওতো কিছু বলেনি এসব নিয়ে!
— বলেনি কিছু মানলাম, কিন্তু ওর বাবা- মা’কে এসব নিয়ে কিছু বলেওনি, তুই চল মা আমাদের সাথে, কিছুদিন থেকে চলে আসিস্।
সিমা ওর আব্বা-আম্মার কারো কথা-ই শুনলো না, রয়ে গেলো এ বাসায়।উনারা চলে গেলেন!
দু’দিন পর সিমার কাছে ফোন এলো, সিমার ছোটো বোন ফোন দিয়েছে, ওর আম্মা হাই প্রেসারের রোগী আগে থেকেই, এখন অবস্থা খুবই খারাপ, বমি করছে ঘন ঘন, উঠে দাঁড়াতে পারছেনা, ডাক্তার দেখে গিয়েছে এসে, হসপিটালে ভর্তি করাতে বলেছে, বার বার সিমার কথা বলছে ওর আম্মা। সিমা এসব শুনে ফোনটা রেখে সায়রা বানু ও সিফাতকে জানালো আর ওদের বাসায় যেতে চাইলো তখনি, সিমা রেডী হলো যাবে, কিন্তু সিফাত যেতে চাইলো না, গাড়ি ঠিক করে দিয়ে বললো- তুমি যাও, আমার কিছু জরুরী কাজ আছে, আমি পরে গিয়ে দেখে আসবো। সিমা মন খারাপ করে ওদের বাসায় চলে গেলো!
দু’তিন দিন হয়ে গেলো সিফাত একবার একটি ফোন করেও খোঁজ নেয় নি, সিমাও অভিমান করে ফোন দিলো না! ছয়- সাত দিন যাবার পর সিমার আম্মা কিছুটা সুস্থ হলো, সিমার ভিতরটা ছটফট করতে লাগলো সিফাতের আচরনে, বাসায় কি হচ্ছে সেটা নিয়েও চিন্তা হতে লাগলো ওর!
ওদের ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা ছিলো, সেই তারিখও পার হয়ে গেলো, কিছু রিপোর্ট দেখানোর কথা ছিলো!
দশদিন পর সিমা সিফাতকে ফোন দিলো…
— হ্যালো,সব ঠিক আছে?
— সব ঠিক আছে কি না তা কী তুমি একবারও জানতে চেয়েছো? একটিবার ফোন ও করোনি, আসা তো দূরের কথা! এত কাজ তোমার?
— দ্যাখো, অনেক ব্যস্ত ছিলাম তাই আসতে পারিনি, ফোনটা করবো করবো করেও কিভাবে যেনো করা হয়নি! এখানে মন খারাপের কিছু নেই! এত নরমাল একটা ব্যাপারকে এভাবে ভাবার কিছু নেই!
— আম্মা এখন কিছুটা সুস্থ, আমি চলে আসতে চাচ্ছি, আমাদের তো ডাক্তারের কাছে যাওয়ারও কথা ছিলো, তবুও তো তুমি এসে আমাকে নিয়ে গেলে না?
— আমি একাই গিয়েছিলাম, এখানে তো শুধু রিপোর্ট দেখানোর কথা ছিলো তাই গিয়ে দেখিয়ে এসেছি।দু’তিন দিন পরে এসে তোমাকে নিয়ে আসবো।
— কি বললো ডাক্তার?
— বাসায় এসে শুনো, এখন থাক!
— না, তুমি এখনি বলো, কি বলেছে?
— সিফাত চুপ হয়ে রইলো কিছুক্ষন তারপর বললো.. তুমি আর কখনোই মা হতে পারবেনা, রিপোর্টগুলো নাকি এমনি এসেছে!
সিমা কথাটা শুনে স্তব্ধ হয়ে রইলো, কখন যে ফোনটা হাত থেকে পড়ে গেলো টেরও পেলো না..
চলবে…