শিশিরের আদ্র পর্ব ১৫
#Neel
সন্ধ্যার আগে ই কমিউনিটি সেন্টারে উপস্থিত থাকতে হবে। বিকাল থেকে রেডি হচ্ছি।আজ আমি একা ই রেডি হচ্ছি। গ্রাউন তো।রেডি হয়ে নিচে নামতেই হঠাৎ কিছুর সাথে পায়ে বারি খেয়ে পড়ে যেতেই ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম।
আজ আমি শেষ। নিশ্চয়ই হাত পা, না হয় কোমর ভেঙে গেছে। কিন্তু কোন ব্যাথার অনুভব ই তো পাচ্ছি না। মিট মিট করে চোখ মেলতেই দেখি আমি কারো বাহুতে।উপরে তাকাতেই দেখি,আদ্র ভাইয়া আমাকে ধরে আছে ।
অন্যদিকে অহনা রাগে ফুঁসছে। তার প্লান উল্টে গেছে। শিশির কে ল্যাং দিয়ে ফেলতে গিয়েছিল, কিন্তু শেষমেশ আদ্র বাঁচিয়ে নিল। রাগে সেখান থেকে চলে গেল।
আদ্র ঠিক ই অহনাকে লক্ষ্য করেছে। আদ্র মনে মনে বলল-, এর শাস্তি অহনা তোকে পেতেই হবে। সঠিক সময় আসুক।আজ আমি না থাকলে প্রিয়তমার অনেক বড় ক্ষতি হতে পারতো। তোকে তো এর মাশুল দিতে হবে। অনেক ছাড় দিয়েছি,আর না।
আদ্র – তোর কি হুঁশ থাকে না। হাঁটতে বের হলেই, এখানে সেখানে, এর সাথে, তার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাস? আজ যদি আমি না থাকতাম তাহলে কত বড় বিপদ হতো , একবার ও ভেবেসিছ?
আমি খিলখিলিয়ে হেসে উঠলাম। বললাম – তো কি হয়েছে,আজ তুমি বাঁচিয়ে দিয়েছো, অন্যদিন যার সাথে ধাক্কা খাবো, সে বাঁচিয়ে দিবে। আমার মতো বাচ্চা দেখলে, সে ও বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসবে। আর না হয়, তুমি আমার বডিগার্ড হয়ে যাও।
আদ্র ভাইয়া দাঁত চেপে বলল- অন্যকেউ বাঁচাবে, তাই না? বডিগার্ড বানাবি? আমাকে সামলাতে পারবি, বাচ্চা?(লাস্টের কথাটা বাঁকা হেসে বলল)
ইরেএএ, কথায় ফেঁসে গেছি। ধেৎ, এই এক আদ্র ভাইয়ের কাছে ই আমি কখনো কথায় বাজিমাত করতে পারি না। নানা ভাবে ফেঁসে যাই। কথা এড়াতে বললাম – বড়রা, অন্যরা কোথায়? কাউকে দেখছি না তো?
আদ্র- আজ তো আপনার বিয়ে, তাই আপনার জন্য সবাই বসে থাকবে।আর আপনি তো আমাকে বডিগার্ড বানাইছেন, তাই আপনার জন্য আমাকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আসুন অনামিকা শিশির চৌধুরী, গাড়িতে উঠে আমাকে ধন্য করুন।যেন আপনাকে আমি বিয়ের মহলে নিয়ে যেতে পারি।
আদ্র ভাইয়ের হেলালি কথায় গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে। তাই মুখ ফুলিয়ে এগিয়ে চলছি। খুব রাগ হচ্ছে, কোথায় বলবে, শিশির তোকে সুন্দর লাগছে, তা না। উল্টো কথা শুনাচ্ছে।হু । আমি কি ইচ্ছে করে দেড়ি করেছি নাকি? বাড়ির সবাই তাড়াতাড়ি করে চলে গেছে, তাতে আমার কি দোষ। সবাই আমার মতো লেইট লতিফা হতে পারলো না?
গাড়ির ফ্রন্ট সিটে বসলাম। আদ্র ভাইয়া এসে ড্রাইবার সিটে বসল। হঠাৎ করে আমার দিকে এগিয়ে এলো। ভয়ে আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। মিনিট খানেক পর চোখ মেলে তাকালাম। আদ্র ভাইয়া নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে বলল- মেয়েদের মতো ঢঙ্গি এ পৃথিবীতে আর একটিও প্রানি নেই। এমন করলো, যেন আমি বাঘ ভাল্লুক , কী যেন করে ফেললাম।আজব মেয়েলোক রে বাবা ।
আদ্র ভাইয়ের কথায় আরো বেশি মুখ ফুলিয়ে মুখ জানালার দিকে করে বাইরে তাকিয়ে রইলাম। কিন্তু গাড়িটা মিনিট দশেক পর থেমে গেল। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম ,আরে এটা তো বিয়ের মহল না।শুনশান নিরব একটা জায়গা।আদ্র ভাইয়ের দিকে তাকালাম, দেখলাম সে গাড়ি থেকে নিচে নেমে গেল। আমি ও নিচে নামলাম। উফ্, কি সুন্দর পরিবেশ। একটা নদী, নিজ ধারায় প্রবাহিত হচ্ছে। (রাইটার -নীল)মনোরোম পরিবেশ, মনে চায় এভাবেই কাটিয়ে দেই মূহুর্তের পর মূহুর্ত , লগ্নের পর লগ্ন।এক ধ্যানে মগ্ন আমি, নদীর সৌন্দর্যের কাছে।
হঠাৎ সুরেলা কিছুর আওয়াজ এ আমার ধ্যান ভাঙল। আদ্র ভাইয়ের হাতে গিটার। সে গিটার বাজাচ্ছে। আদ্র ভাইয়া এত সুন্দর গিটার বাজাতে পারে? তার মানে আদ্র ভাইয়া ইচ্ছা করে ই গাড়ি এখানে থামিয়েছেন। কিন্তু কেন?আদ্র ভাইয়া কে যত দেখছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি। গিটার বাজাতে বাজাতে একসময় গান ধরল…
তুমি না ডাকলে আসবো না..
…কাছে না আসলে ভালোবাসবো না..
… দূরত্ব কী ভালোবাসা বাড়ায়
….নাকি চলে যাওয়ার বাহানা বানায়…
দূরের আকাশ নীল থেকে লাল গল্পটা পুরোনো…
…ডুবে ডুবে ভালোবাসি, তুমি না বাসলেও আমি বাসি!!
ওয়াও!! আমি কল্পনা ও করতে পারিনি। এতো সুন্দর সারপ্রাইজ। আমাকে? কিন্তু কেন? তার তো প্রিয়তমা আছে। আসলেই তো? তার প্রিয়তমা কে সারপ্রাইজ না দিয়ে আমাকে কেন? হয়তো ভুল করে ফেলেছে। আদ্র ভাইয়া যে এতো সুন্দর গান ও গেতে পারে। কল্পনার বাইরে।গান আর সুরের তালে তালে আমি হারিয়ে গেছি। কখন যে আদ্র ভাইয়া আমার কাছে এসে গেছে খেয়ালই করতে পারিনি।
আদ্র ভাইয়া কানের কাছে ফিসফিস করে বলল – ভালোবাসি প্রিয়।
ঝটকা খেলাম। দূরে সরে গেলাম। হুট করে আদ্র ভাইয়া হাঁটু গেড়ে বসলো মাথা নিচু করে বলল-
অন্য প্রেমিকদের মতো আমি ঠিকঠাক মতো প্রোপজ করতে জানি না। তবে শিশির আমি তোকে চাই।
…. আমার এলোমেলো জীবনের প্রথম প্রনয় তুই প্রিয়তমা!!
… আমার হিংস্র বিষাদময় জীবনের শুকতারা তুই প্রিয়তমা!!
… আমার বাঁচা মরার শূন্য পয়েন্ট তুই প্রিয়তমা!!
ভালোবাসি তখন থেকেই প্রিয় যখন (একহাতে আমার হাত ধরে) নাদান বাচ্চা ছিলি তুই প্রিয়তমা!!
#Noor
প্লিজ , শিশির আমাকে ফিরিয়ে দিস না, আমাকে বাঁচতে দিস প্লিজ!! না হয় আমি সবকিছু তছনছ করে দিবো!!
অন্যহাতে একটি শিশির ভেজা গোলাপ ফুল আমার দিকে এগিয়ে দিল। আমার হাতে ধরিয়ে দিল।
থমথমে পরিস্থিতি তে পরে গেছি। কি করবো, কি করবো, মন বলে আদ্র ভাইয়ের প্রস্তাব এ মেনে নেই, পরোক্ষভাবে মন বলছে, এটা সম্ভব নয় আদ্র ভাইয়া আমার ভাইয়ের মতো, আর উনি সাইকো। উনি…(আদ্র ভাইয়া বলল)
আদ্র- আমি তোকে এখন ই প্রস্তাব গ্রহণ করতে বলবো না। আগে তুই সময় নে। আমাদের বিষয় নিয়ে ভাব। তবে দিন শেষে পজেটিভ উত্তর টা দিবি। তাই তুই নিজ ইচ্ছায় মন থেকে রাজি হ এটা আমি চাই, না হয় জোর করে হলেও তোকে আমার হতেই হবে।
লে হালুয়া । এতো দেখছি প্রোপজ নয় হুমকি দিচ্ছে। তাহলে প্রোপজ করার কি দরকার ছিল। ধেৎ জীবনটা বেদনাময়।
আদ্রের মোবাইল বেজে উঠলো। অপর পাশের ব্যক্তিটি কি বলল , জানি না, তবে আদ্র ভাইয়া বলল- ওকে আমি আসছি। এবার খেলার আসল মজা জমবে।
আদ্র – শিশির দ্রুত গাড়িতে উঠ। আমাদের যেতে হবে।
মিনিট পাঁচেক পর আমরা বিয়ের মহলে পৌঁছে গেলাম। চারদিকে হইচই। মনে হয় ঝামেলা লাগছে। ধেৎ । আদ্র ভাইয়া আগে এখানে কেন আমাকে নিয়ে এলো না। কি হয়েছে জানতে ই পারলাম না। নাহিদ ভাইয়া? তার কি কিছু হয়েছে? সে কি বিয়ে করে ফেলেছে? এত কিছুর মধ্যে তার কথা ভুলে গেছি।তাহলে স্নেহা আপুনির কি হলো। মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করছি, যেন আমি যা ভাবছি তা না হয়। আদ্র ভাইয়ের সাথে এগিয়ে যাচ্ছি।
আদ্র ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল – সোজা দৌড়ে মেজ মা, ছোট মা দাদির কাছে যা। খবরদার লাফালাফি করবি না। এখানকার মহল গরম। অনেক কিছু ঘটবে। কোন প্রশ্ন করবি না দ্রুত যা।
আদ্র ভাইয়ের কথা মতো মায়ের কাছে দাঁড়ালাম। মা আমাকে তার সাথে মিশিয়ে নিল।যেন হারিয়ে যাব।কি হচ্ছে বুঝতে পারছি না। নাহিদ ভাইয়াকে কোথাও দেখছি না। তবে তার কনে তো এখানে ই।(রাইটার-নীল) মির্জা চিল্লাচিল্লি করছে।বড় রা সবাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।নিজাম আর সুমাইয়া আপু একসাথে দাঁড়িয়ে আছে।
হঠাৎ গুলির শব্দে ভয় পেয়ে গেলাম। তাকিয়ে দেখি আদ্র ভাইয়ার হাতে গুলি।একি আদ্র ভাইয়া গুলি ও চালাতে জানে। আর কি কি জানে সে ।আর সবচেয়ে বড় কথা তার কাছে বন্দুক আসলো কোথা থেকে। ভাইয়া একটা চেয়ার টেনে এনে আয়েশি ভঙ্গিতে বসে পরলো। পায়ের উপর পা তুলে বলল – মির্জা!! মির্জা!! মির্জা।। মির্জা রে আজ তো তোর মেয়ের বিয়ে হবে না রে। আফসোস কি বাত? তোর মেয়ের হবু বর আগেই বিয়ে করে ফেলেছে। বিধবা হো গেয়া তেরা লারকি।মাজা আ গেয়া।কেয়া বাত হে। তালিয়া ( হাত তালি দিল)দেখ মির্জা, পাপ বাপকেও ছাড়ে না। মনে করে দেখ, কোন পাপের ফসল এখন ভোগ করছিস।
মির্জা আব্বাস – এগুলো কি চৌধুরী? সেই একই ভুল আবার? প্রথম ভুলে কত জনের রক্তের হোলি খেলা হয়েছে, যদি তোরা চৌধুরী রা আবার ও একই ভুল করিস এবার না হয় বংশ নির্বংশ করে দিব।(রেগে ও চিল্লিয়ে)
আদ্র – লাইক সিরিয়াসলি মির্জা। তাহলে দেখা কিছু পাওয়ার তোর।
মির্জা চোখের ইশারা দিল, মাস্ক ওয়ালা ছেলেটি কানের মাইক্রোফোনে কিছু বলল , সাথে সাথে অনেক গুলো গার্ড আমাদেরকে ঘিরে ফেলল। সবার হাতে বন্দুক। আমি ভয়ে মাকে জড়িয়ে ধরলাম। পুরো বিয়ের মহল থমকে গেছে।
বড় বাবা- এগুলো কি হচ্ছে মির্জা।
মির্জা – তুই দেখতে পাচ্ছিস না, তোর করা ভুলের মাশুল, আর আবার ও একই ভুল, এবার আমার মেয়ের উপর, না না এবার প্রতিশোধ টা জমবে।
হঠাৎ মির্জা আব্বাস এর মেয়ে বলে উঠলো – বাবা, ওয়েট ওয়েট। বাবা আমার সাথে যার বিয়ে ঠিক করেছিলে, তাকে আমার কোন কালেই পছন্দ ছিল না। কিন্তু ঐ ছেলেটির (আদ্র ভাইয়াকে ইশারায়) সবকিছু ই আমার ভালো লেগেছে। আই লাইক হার এটিটিউট।সে ও তো অবিবাহিত।আর বিবাহিত হলেও সমস্যা নেই। আমার তাকে চাই। যেকোনো মূল্যে ই চাই। তো তার সাথে ই আমার বিয়ে হোক। দুয়ে দুয়ে চার ও হয়ে গেল, আর ঝামেলা ও মিটে গেল।
আদ্র ভাইয়া জোরে হাসতে শুরু করলো। সবাই আদ্র ভাইয়ের দিকে তাকালো। মেয়েটির কথা শুনে খুব কষ্ট হচ্ছে, যেন কেউ আমার হৃৎপিণ্ড বরাবর আঘাত করেছে।
আদ্র- কি মাল পয়দা করছিস মির্জা। আমি আদ্রের পছন্দ হয় নাই। এমন মাইয়া উ/ল/* হয়ে সামনে ঘুরলে কুত্তা ও চেয়ে দেখবে না।লাজ লজ্জা কিছুই নেই। ঐ বেসরম মাইয়া, আমার দশটা বউ থাকলে ও তো তোকে বিয়ে করবো না। শান্ত, রোহান খেলা টা জমা না রে ইয়ার।
শান্ত – আমি এই মেয়ের ধারে কাছে ও যাব না ঘৃনা করে।
শান্ত ভাইয়া চোখের ইশারায় দুইটা মেয়ে এগিয়ে এলো, এসেই মির্জার মেয়েকে কয়েকটি চর দিল। সাথে সাথে মেয়েটি হাঁটু মুড়ে পড়ে গেল। প্রথম মেয়েটি মির্জার মেয়ের গলা বরাবর ছুড়ি ঠেকিয়ে ধরলো।
আদ্র- মির্জা এতো তুলতুলে মেয়ে কেউ পয়দা করে? আমার পরিবারের সবাইকে গান পয়েন্ট থেকে সরাতে বল , না হয় মেয়ের কর্লা গেল।
মির্জা ভয় পেয়ে গেল। সাথে সাথে সবাই কে ছেড়ে দিল।
আদ্র ভাইয়া চিল্লিয়ে বলে উঠলো – গার্ডস, লেটস মেইক দিস। হার্রি আপ।
সাথে সাথে কতগুলো কালো কোর্ট পড়া গার্ডরা মির্জার গার্ড গুলো কে ঘেরাও করে ফেললো আর গান ছিনিয়ে হাঁটু মুড়ে বসিয়ে দিল। আর মেয়ে গার্ড রা আমাদের সুরক্ষা দিতে ঘিরে ফেলল।
আদ্র – ওওও মির্জা এতো কম গার্ড নিয়ে, চৌধুরীর সাথে মোকাবেলা করতে এসেছিলি। চৌধুরীর বর্তমান নিয়ে একটু খোঁজ নিতি। নে মির্জা মামআ , শুরু কর। যেগুলো এখনো অজানা। কাম অন। স্পিক আপ লাউডলি।নাউ( রেগে আর জোরে বলল)
আদ্র ভাইয়ের চিৎকার এ সবাই কেঁপে উঠলো।
মির্জা আব্বাস বলতে শুরু করল।
মির্জা – ঘটনা আজ থেকে এক প্রজন্ম আগে। চৌধুরী বাড়ির বড় ছেলে আহনাফ চৌধুরী, যে খেলা শুরু করেছিল। আমার বংশে….
চলবে…