শিশিরের আদ্র সিজন ২ পর্ব ২
Neel
আদ্র ভাইয়ের চোখ থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম। বিছানা থেকে নামতেই আদ্র ভাইয়া বলল – জানিস শিশির? একপক্ষের প্রনয় খুব ই সুন্দর। খুব ই। তবে সেটা অপর পাশের ব্যক্তিটি না জানা অব্দি। যখন অপর পাশের ব্যক্তিটি এই প্রনয় সম্পর্কে জেনেও তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে তখন জীবনে বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে না। তার চেয়ে বড় কথা কি জানিস? দু পক্ষ ই দুজনকে ভালোবাসে , কিন্তু কোন এক বাঁধার কারনে কাছে আসতে পারে না , তখন প্রেমিক মন বেঁচে থেকে ও মরে যায়, মানে জীবন্ত লাশ। শিশির? আমাকে কী বলা যায় না, কি দোষ টা আমার? আমার সমস্যা কিন্তু আমা….
থামেন তো আদ্র ভাইয়া। আপনার এই পেঁচানো কথা আমার মাথায় ঢুকছে না। আমি ফ্রেস হবো। আর ধন্যবাদ আমাকে খেয়াল রাখার জন্য। পুরোনো সেই অধ্যায়ে কেন পড়ে আছেন, মুভ অন করেন।
বলেই ওয়াসরুমে চলে এলাম। এগুলো বলতে বুক টা কেঁপে উঠেছিল। ওয়াসরুম এর মধ্যেই কান্না করে দিলাম। চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়ালাম। বললাম, কাঁদব না। আর না। কিন্তু বেইমান চোখের পানি গড়িয়ে পড়েই।
ফ্রেস হয়ে নিচে নামতেই ড্রইংরুমে সবাই বসে আছে। ওহ্ এখন তো খাবার খাওয়ার সময়। কতদিন ধরে বাড়ির খাবার খাই না। ৬ মাস হবে হয়তো। আজ ও খাব না। কেন খাব? সবাই আদ্র আদ্র করে , কেউ তো আর আমার দিকটা দেখে না। আদ্র ভাইয়া আমাকে ঠকিয়েছে। ঠকিয়েছে। ভার্সিটিতে ভর্তি হব। তাইতো কাল বাড়িতে এসেছিলাম বলতে আর কাগজ গুলো নিতে। বলতে দিল কোথায়।
আমাকে দেখেই মাইই এগিয়ে আসলো। বলল – কত দিন পর, আয় আমি তোকে খায়িয়ে দেই। পরিবারের উপর কেউ রাগ করে। সব শেষে আমরাই তোর আপনজন।
একটা মলিন হাসি দিয়ে মায়ের দিকে তাকালাম। মা আমার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে আছে। কিন্তু কেন? জানি না। মাকে আমার এখন সহ্য হচ্ছে না। সে কেমন জন্মদাত্রী মা? মেয়ের মতামত কে গুরুত্ব দেয় না?তার কাছে তো আমার থেকে তার ওয়াদা, আদ্র বড় । চুপচাপ ড্রইংরুম ছেড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলাম।
অন্যদিকে শিশির যেতেই, শিশিরের মা কান্নায় ভেঙে পড়ে। চিৎকার করে বলে উঠলো – আমার মেয়ের শান্তি ,সুখ আমি কেড়ে নিয়েছি। কাল আমি ওকে এই হাত দিয়ে মেরেছি। আমার কলিজা ফেটে যাচ্ছে।
আমি কি করলাম?
সুমাইয়া – এমন মেয়ে কেন জন্ম দিয়েছেন? যে মেয়ে মা বাবার সম্মান নিয়ে খেলে।
নিজাম রেগে গিয়ে বলল – সুমাইয়া আর একটা কথা নয়। এ বিষয়ে তুমি নাক গলাবা না। বছর হবে তুমি এই বাড়িতে পা দিয়েছো তবে এই খেলা তোমার আসার আগে থেকেই শুরু হয়েছে। তাই চুপ।আর আমার বোনের ব্যাপারে বাড়ির বউদের থেকে নয় আমরা নিজেরাই বুঝব। সামনে থেকে যেন তোমাকে এসবে কথা বাড়াতে না দেখি।
সুমাইয়া চুপচাপ হয়ে গেল। কিন্তু ভেতর দিয়ে রেগে গেছে।যেন শিশির কে পেলে এখানে ই কবর দিয়ে দিত।
আদ্র এতোক্ষণ উপর থেকে এগুলো দেখছিল। আদ্র নিচে নেমে, শিশিরের মায়ের কাছে গেল। আদ্র কে দেখে শিশিরের মা বলল – বাপরে তোকে দেওয়া কথা রাখতে পারি নাই। আমার মেয়ে বুঝতে চায় না রে। ওকে বুঝা তুই। তোর চেয়ে বেশি ওকে কেউ ভালোবাসবে না। সুখে রাখবে না।
আদ্র – আপনি থামেন, ছোট মা। আমাকে বলেন কাল কী হয়েছিল? যার জন্য শিশির এমন পদক্ষেপ নিল। শিশির তো এতো দূর্বল নয়?
আদ্রকে সব কিছু খুলে বলল। আদ্রের মুখটা মলিন হয়ে গেল। বলল আমি দেখছি বেপার টা।
সন্ধ্যায়, মামা বাড়ি তে আদ্র ভাইয়া আমার সাথে দেখা করতে এসেছিল। কিন্তু আমি দেখা করিনি। রুম থেকে বের ই হইনি। অনেক ক্ষন অপেক্ষা করেছিল।শেষে বাধ্য হয়ে চলে গেল।
রাতে শুয়ে শুয়ে এগুলো ভাবছি। আর আদ্র ভাইয়ের সাথে কাটানো মূহুর্ত গুলো মনে পড়ছে। আদ্র ভাইয়া,কেন আপনি ডায়েরি সম্পর্কে মিথ্যা বললেন? কেন? আর কেনই বা খুন করলেন। আপনি আমাকে ছোট থেকেই ভালোবাসেন, আমার কথা কি একবারও মনে হয়নি? এগুলো আমার উপর কি এফেক্ট পড়বে?
পরের দিন.. সারাটা দিন ভালো গেল। বিকেলে ড্রইংরুমে বসে জান্নাত এর সাথে কথা বলছি আর মজা করছি। এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠল। আজ মামা মামী ও বাসায় নেই। আমাদের বাড়িতে গেছে। সুজাতা ( মহিদ ভাইয়ার স্ত্রী) আপু কলিংবেল খুলে দিল। বলল – ভেতরে আস।
দরজার দিকে তাকাতেই দেখি আদ্র ভাইয়া। এদিকে এগিয়ে আসছে। তাকে দেখে আমি সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। চলে যাব রুমে। কথা বলব না,তার সাথে। কথা বললে ই আমি দূর্বল হয়ে পরি। হঠাৎ করেই হাতে টান লাগলো। মানে কেউ হাত ধরে আছে। তাকাতেই দেখি আদ্র ভাইয়া।
আপনি আমার হাত ছাড়ুন আদ্র ভাইয়া। এভাবে হাত ধরছেন কেন? আমি আপনার সাথে কোন কথা বলব না। আমার পিছনে কেন পড়ে আছেন?
আদ্র ভাইয়া একটা বাঁকা হাসি দিল। তার বাঁকা হাসি মানে আমি ফেঁসে গেছি তার খপ্পরে। ভয় লাগছে। কিন্তু আমাকে ইগনোর করে আদ্র ভাইয়া সুজাতা আর জান্নাত কে বলল- যাও গাড়ি গিয়ে বসো। আমাদের বাড়িতে ফাংশন আছে।
ওরা ও মুচকি হেসে চুপচাপ চলে গেল। আমি আদ্র ভাইয়ের দিকে ভুরু কুঁচকে তাকালাম। সাথে সাথে আদ্র ভাইয়া আমার মুখের সামনে একটা স্প্রে মারলো। মিনিট দুয়েক পর আমি ঢলে পড়ি।
আদ্র শিশিরকে আগলিয়ে নেয় তার বুকে। এমন ভাবে জড়িয়ে ধরলো যেন ছাড়লেই পালিয়ে যাবে।
আদ্র মুচকি হেসে বলল – খুব ভুল করেছিস, কাল আমাকে ইগনোর করে। আদ্র সব কিছু মানতে পারে তবে শিশিরের ইগনোর না। তোকে অনেক ছাড় দিয়েছি তবে আর না?
এবার তোকে আদ্রের হতে হবে।
___
কতক্ষন জ্ঞান ছিল না জানি না। তবে হুঁশ ফিরতেই আমি নিজেকে নিজের রুমে পাই। পাশে মিনা ভাবি আর কিছু মেয়েরা। এই মেয়েরা কারা, তাদের তো আগে দেখেছি কোথাও মনে পরছে না।
উফ্ মাথাটা ধরে আছে। আমি এখানে কেন? আমি তো মামার বাড়িতে ছিলাম। উঠে বসে মিনা ভাবি কে বললাম – ভাবি, আমি এখানে কিভাবে? আদ্র ভাইয়া আমার মুখে একটা স্প্রে মেরেছিল। তারপর আমার আর মনে নেই।
মিনা – অশি, আদ্র তোমাকে অজ্ঞান অবস্থায় এখানে নিয়ে এসেছে। এগুলো পড়ে নেও।( লাল টুকটুকে একটা গ্রাউন)
আমি বললাম – এই গ্রাউন তো আমার নয়।আর আমি এগুলো পড়বো কেন? আর এ মেয়েরা কারা?
মিনা – আজ তোমার আর আদ্রের বিয়ে ? বাড়ির সবাই মিলে এই ডিসিসন নিছে।আর এই মেয়েগুলো পার্লার থেকে এসেছে, তোমাকে সাজাবে বলে।
আমি বিয়ের কথা শুনে চমকে উঠলাম। বিয়ে? আমার আর কার বিয়ে? আদ্রের? তোমরা পাগল হয়ে গেছো? সবাই রাজি মানে কি? আমি, যে বিয়ে করবে কনে রাজি না। তাই বিয়ে করবো না। বুঝছো তোমরা। (বলেই গ্রাউন আর জিনিস পত্র গুলো নিচে ফেলে দিলাম)
আমার কথা কেউ ই শুনলো না। ওরা চুপচাপ রুম থেকে চলে গেল। মিনিট পাঁচেক পর আদ্র ভাইয়া রুমে এলো। আদ্র ভাইয়া কে দেখে আমার গা পিত্তি জ্বলে উঠলো। রেগে গিয়ে চিৎকার করে বললাম -আপনি আমার লাইফটা হেল করে দিচ্ছেন আদ্র। আমাকে আমার মতো কেন ছাড়ছেন না। আমি কি বলেছি একবার ও , আদ্র আমি আপনাকে ভালোবাসি। আপনাকে আমি বিয়ে করতে চাই? আপনি এতো ছেছড়া কেন?আপনাকে আমি বিয়ে করবো না, কখনো করবো না আদ্র ওপস মাফিয়া এএসি আদ্র চৌধুরী।
আদ্র ভাইয়া চমকে আমার দিকে তাকালো। কিন্তু বেশিক্ষণ না। তাকিয়ে আমার দিকে এগিয়ে এলো। আমার আর আদ্র ভাইয়ের দিকে অল্প হয়তো এক দুই ইঞ্চি ফাঁক হবে।আদ্র ভাইয়া আমার কোমর ধরে তার সাথে মিশিয়ে নিল, এখন এক ইঞ্চি ও ফাঁকা নেই। কানের কাছে ফিসফিস করে বলল – ওওও অনামিকা শিশির চৌধুরী, জেনে গেছিস। ভালো হয়েছে। এতোক্ষণ ওপস একটা বছর লাগল তোর ঐ ক্ষোভ টা প্রকাশ করার জন্য। আমি বারবার বলছি আমার সম্পর্কে কিছু ধারণা না না ভুল ধারণা থাকলে, আমার কাছে গোপন না করে আমাকে ই বলতে।মন খুলে প্রকাশ করতে।
আদ্র ভাইয়ের থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য মুচড়া মুচড়ি করছি ।আদ্র ভাইয়া হঠাৎ ঘাড়ে তার ঠোঁট স্পর্শ করল। মূহুর্তে আমি ফ্রিজ হয়ে গেলাম। না চাইতেও আদ্র ভাইয়ের বুকের শার্ট টা তে খামচে ধরলাম।
আদ্র শিশিরের অবস্থা বুঝতে পেরে অপর দিকে মুচকি হাসে। শিশির কে ছেড়ে দেয়। শিশির এখনো ঘোরের মাঝেই আছে। আদ্রের সাথে মিশে দাঁড়িয়ে আছে।আদ্র আবারো ফিসফিসিয়ে বললো – কি যেন বলছিলি আমায়? ছেছড়া? তাই তো। আয় তোকে ছেছড়া কাকে বলে, রিয়ালিটি তে দেখাই।
আদ্র ভাইয়ের এহম কথায় আমি ছিটকে দূরে সরে দাঁড়ালাম। বড় বড় দম নিচ্ছি। হৃৎপিণ্ড জোরে বিট করছে। এমন সময় আদ্র ভাইয়া এমন এক কথা বলল আমার তখন দম যায় যায় অবস্থা। করুন চোখে আদ্র ভাইয়ের দিকে তাকালাম।
আদ্র ভাইয়া বলল….
চলবে…