শিশিরের আদ্র সিজন ২ পর্ব ৬
(প্রথম খন্ডের শেষ খন্ড)
Neel
কিছু বলার আগেই আদ্র ভাইয়া আমাকে পাঁজাকোলা করে নিল। বিছানায় ফেলে দিয়ে দুহাত তার একহাতের মুঠোয় করে নিল। আস্তে করে ঠোঁটে চুমু দিল।
আদ্র ভাইয়ের কাছে আসায় আমি যেন নিজের মধ্যে নেই। নিঃশ্বাস বড় বড় করে নিচ্ছি। আদ্র ভাইয়াকে আমার ঠিক লাগছে না। তার চোখের দিকে একবার তাকালাম, কেমন ঘোর নেশা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
নিজেকে সামলাতে ও পারছি না, আবার আদ্র ভাইয়াকে থামাতে ও পারছি না। আদ্র ভাইয়া পাগলের মতো আমার শরীরে তার ছোঁয়া দিয়ে ই যাচ্ছে। অবশেষে মনের কথা ই মানলাম , মানতে বাধ্য হলাম, আদ্র ভাইয়ের রঙে ই নিজেকে রাঙিয়ে নিলাম।
( পাঠকগণ আমার আইডিয়া নেই, বাসর রাতে কি হয়, আর স্বামী স্ত্রীর মিলন ই বা কিভাবে শুরু হয়, আপনারা আপনাদের মতো ভেবে নেন)
রঙিন স্বপ্ন, রঙের মেলা, স্বামী স্ত্রী, ভালোবাসার মানুষ, মন দুটোই এক হবেই এটাই হয়তো প্রাকৃতির খেলা।
আদ্র হয়তো পাগল প্রেমিক, প্রতি পাগল প্রেমিক ই তার মেহবুবা কে নিজের করে পেতে চায়, হয়তো হারানোর ভয়ে। আদ্র ও ব্যতিক্রম নয়। শিশির কে হারানোর ভয়ে হয়তো, প্রেমিক মন মেহবুবা কে নিজের রঙে রাঙানোর জন্য পাগল হয়ে গেছিল।
___
ফজরের আজান শুনে ঘুম ভেঙ্গে যায়। নিজেকে আদ্র ভাইয়ের বুকে এলোমেলো অবস্থায় পাই। আদ্র ভাইয়ের দিকে তাকালাম, খুব ই নিষ্পাপ লাগছে। কিন্তু হঠাৎ মনে পড়ে গেল, আমার স্বামী, আমার আদ্র তো নিষ্পাপ নয়, সে তো খুনি, তাহলে আমি কে? আমি একজন খুনির বউ। একজন খুনির রঙে নিজেকে রাঙালাম।
শরীর ব্যাথায় টনটন করে উঠলো। আদ্র ভাইয়ার থেকে আস্তে দূরে সরে গেলাম। শরীরের ব্যাথা তো ঠিক হয়ে যাবে তবে, মনের ব্যাথা!! আমি সেটা কিভাবে ঠিক করবো??
গোসল শেষে নামাজ পড়লাম। নামাজ এ আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলাম, আমাকে যেন সঠিক রাস্তা দেখায়। এই দ্বিধা দ্বন্দ্বে আমি আর থাকতে পারছি না!!
নামাজ শেষে মনটা একটু শান্তি লাগছে। তবে আদ্র ভাইয়ের রুমে আর ভালো লাগছে না। তাই চুপচাপ গায়ে একটা চাদর জরিয়ে ছাদে চলে এলাম।
শীত প্রায় শেষের দিকে। এখন আর খুব বেশি কুয়াশা পড়ে না। শিশির আর আদ্র এক হয়ে মিশে গেছে। এখন শিশির কে দেখা যায় না, আদ্রের মাঝেই শিশির সমাবর্তন হয়ে গেছে।
দোলনায় বসে ভাবছি কি করবো। আমি আদ্র ভাইয়াকে এখনো মন থেকে মেনে নিতে পারছি না। এমন সময় ই কেউ পাশে বসে আমার ঘাড়ে হাত রাখল।
চমকে উঠলাম। চেয়ে দেখলাম পাশে আমার ভাই বসে আছে। ভাইয়ের করা সেই কান্ড গুলো মনে পড়তেই মন বিষিয়ে উঠলো। উঠে যেতেই, ভাইয়া হাত ধরে বসিয়ে দিয়ে বলল-আর কত দূরে যাবি? নিজের অবস্থা দেখ? দাদি যাওয়ার পর থেকে কেমন পাল্টে গেছিস। তাছাড়া আদ্র কে তুই ভালোবাসিস, তবুও কেন দূরে সরে যাচ্ছিস?
শান্ত ভাইয়ার দিকে তাকালাম। সাথে সাথে চোখের অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। আমি জানতাম আমার এই অশ্রু কখনো সঠিক সময়ে গড়াবে না।যেখানে বের হতে মানা করবো,আরো বেশি করে বের হবে।
শান্ত ভাইয়া আমাকে তার বুকে জড়িয়ে নিল। শান্ত ভাইয়ার বুকে নিজেকে নিরাপদ লাগছে। হয়তো এটাই ভাই বোনের পবিত্র সম্পর্ক, বোনদের নিরাপদ আশ্রয়।
শান্ত – আমাকে বল! কি জানিস তুই, কেন এমন করছিস। তোর এই রকম হওয়া আমি মেনে নিতে পারছি না। খুব কষ্ট হয় আমার খুবই।
ভাইয়ের কথা শুনে, ভাইকে খুব আপন মনে হলো এতো দিনের জমানো লুকোনো সব কথা খুলে বলে ফেললাম। বললাম – ভাইয়া আমার স্বামী খুনি, তোমার বোন একজন খুনির স্ত্রী। ভাইয়া এটা আমি মেনে নিতে পারছি না, মন চাচ্ছে এই ছাদ থেকে লাফ দিয়ে মরে যাই।
শান্ত ভাইয়া তার হাত দিয়ে আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল – আচ্ছা এইটার জন্য তুই এতো কষ্ট পাচ্ছিলি?শোন, আগে তোকে একটা প্রশ্ন করবো।তার উত্তর দিবি। তারপর আমি তোর প্রশ্নের সমাধান দিয়ে দিব।
আচ্ছা শিশির আমাকে তুই কত টুকু ভালোবাসিস? জানিনা। তবে আমাকে যদি কেউ মেরে ফেলে তুই যদি তাকে কখনো পাস কি করবি?
আমি শান্ত ভাইয়ার কথা শুনে চমকে উঠলাম। শান্ত ভাইয়া কে আরো জোরে জরিয়ে ধরলাম। বললাম- আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি ভাইয়া, অনেক। কখনো কেউ তোমার ক্ষতি করবে আমি বেঁচে থাকতে কখনো তা হতে দিব না।খুন করে ফেলবো তাকে, সে যে ই হোক না কেন।
শান্ত বোনের পাগলামি তে মুচকি হেসে বলল- পাগলি বোন আমার। শোন এখন, তাহলে আদ্রের কথাটা ভাব একটু। যে তার মায়ের ভালোবাসা ও পায় নাই। সেদিন দাদার গাড়িতে দাদা আর আদ্র কথা বলছিল। মির্জা আব্বাস যখন দাদাকে খুন করছিল তখন আব্বাস সব নিজ মুখে বলছিল। আদ্র তা শুনতে পায়। তখন থেকেই আদ্র পাগলামি শুরু করে। আমাদের প্রতিবেশী এক ছেলেকে মারতে চেয়েছিল।
আদ্র কোন নির্দোষ মানুষকে খুন করে নাই। সেই ডাক্তার আর মির্জা কে ই এক ছেলে তার মায়ের হত্যার, দাদা,নানার হত্যার প্রতিশোধ নিয়েছে। আমি মনে করি এটা খুন হয় ওদের বিনাশ।
ঠিক ই তো আমি কখনোই এভাবে ভেবে দেখি নাই। ভাইয়া কে বললাম – তাহলে রাফায়াতকে কে খুন করলো? তাছাড়া আদ্র ভাইয়া ডায়েরি সম্পর্কে আমাকে বলে নাই কেন। কেন ওটাকে নিয়ে মিছে কথা বলেছে?
শান্ত – রাফায়াত কে আমি হত্যা করেছি। তুই কিভাবে ভাবলি, আমার বোনের দিকে কুনজর কারি কে আমি ছেড়ে দিব।(অদ্ভুত বাঁকা হেসে)।
আর যখন প্রথম ডায়েরিটা পেলি তুই আদ্র তখন জানত না আসল খুনি কে । সে ওর বাবাকে মনে করছিল। তাই তুই ভয় পাবি বলে তোকে জানায় নাই। তাছাড়া পরের বার তুই যে ডায়েরি টা আবার পড়েছিস , তা তো আদ্র জানতো ই না, তুই কি আদ্র কে একবার ও জানিয়েছিলি আদ্র কে।
সত্যি তো। ভাইয়া তো সত্যিই বলছে। আমি আদ্র ভাইয়া কে ভালোবেসেছি ঠিক তবে কখনো আমার মনের ক্ষোভ প্রকাশ করিনি। সে বার বার বলেছে তাকে নিয়ে সব কথা যেন তার কাছেই শেয়ার করি। আমি সরি আদ্র ভাইয়া।
শান্ত ভাইয়া কে ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। বললাম – ধন্যবাদ তোমাকে ভাইয়া। খুব ভালোবাসি তোমাকে। আমি বুঝে গেছি,আর আদ্র ভাইয়াকে কষ্ট দিব না।
শান্ত ভাইয়া ও উঠে দাঁড়াল। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বলল – এবার তো জামাইকে ভাইয়া বলা বন্ধ কর।
শান্ত ভাইয়ার কথায় লজ্জা পেলাম। মুচকি হেসে দৌড়ে সেখান থেকে চলে এলাম।
রুমে এসে আদ্র ভাইয়াকে খুঁজছি। কিন্তু আদ্র ভাইয়াকে রুমে পেলাম না। বারান্দার উঁকি মেরে দেখি উনি দাঁড়িয়ে আছেন ফ্রেস হয়ে।
আদ্র ভাইয়া আমার দিকে না তাকিয়ে ই বলল- আরো রাগ কি আছে আমার উপর এখনো? থাকলে বলতে পারিস আদর দিয়ে পুষিয়ে দিব।
লজ্জা লাগছে, ভালো লাগছে, বুঝাতে পারবো না, মিষ্টি এক অনুভূতি ঘিরে রেখেছে আমাকে। সত্যি ই যেন পবিত্র সম্পর্ক আমার মন আর আমাদের সম্পর্ক টা ও পবিত্র করে দিয়েছে। এতো দিন এর কষ্ট , মন ব্যাথা , আজ আর নেই।
আদ্র ভাইয়ের দিকে এগিয়ে গেলাম, দু পা উঁচু করে তার ঠোঁট এ নিজ ইচ্ছায় একটা ছোট্ট পরশ এঁকে দিলাম।
আদ্র – হলো না তো। এই মাথা মোটা তুই কি চুমু ও খেতে জানোস না। তোকে কতবার চুমু দিয়েছি, তাও ও চুমু খেতে পারোস না। ধেৎ। হলো না। জীবন শেষ আমার। দি গ্রেট আদ্র এর স্ত্রী নাকি চুমু খেতে জানে না।কি লজ্জাজনক।
আদ্র ভাইয়ের কথা শুনে খিলখিল করে হেসে উঠলাম। আদ্র ভাইয়া কে জড়িয়ে ধরে বললাম – ভালোবাসি আপনাকে আদ্র ভাইয়া। অনেক বেশি।
আদ্র – যাক আমার প্রিয়তমার রাগ ভেঙেছে।তা রাগ টা ছিল কি নিয়ে বলবেন?
মুচকি হেসে বললাম – বুড়ো বয়সে একসাথে যখন এক শীতের সকালে কুয়াশায় শিশির আদ্র একত্র হবে, তখন আদ্রের বুকে মাথা রেখে শিশির তার পুরোনো রঙের ভালোবাসার কথাগুলো না হয় জাহির করবে।
আদ্র শিশির কে জড়িয়ে ধরতে। বলল – ভাইয়া ডাকটা ছেড়ে এবার সাইয়া ডাক।
আমি মুচকি হেসে আদ্র কে জড়িয়ে ধরলাম।আদ্র প্রিয়তমা কে পেয়ে জয়ীর হাসি দিল। সাথে সেই সাইকো ওয়ালা ভয়ংকর হাসি আবার ও দি গ্রেট মাফিয়া এসি আদ্রের মুখে ফুটে উঠল, কিন্তু বরাবর ই শিশিরের অদেখা ই রয়ে গেল।
~~~~~~~~~সমাপ্ত~~~~~~~
(আদ্র শিশির #শিশিরের_আদ্র প্রতি বসন্তে শেষ হলেও প্রতি হেমন্তে ফিরে আসেই, আর আদ্র তো সেই শিশিরের জন্য সারাটা কাল ভয়ংকর হয়ে অপেক্ষা করে!!)