– কত টাকা হয়েছে মামা ?
– ৯ টাকা ।
– এই দুই পৃষ্ঠা ফটোকপি করতে ৯ টাকা !!
– হুম মামা । কালির দাম বেড়েছে ।
দাঁড়িয়ে আছি ভার্সিটির ফটোকপির দোকানের সামনে ।
দশ টাকার একটা নোট দিলাম দোকানদারকে। তিনি আমাকে এক টাকার পরিবর্তে একটা চকলেট দিলেন ।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম,
– মামা এটা কী ?
– ভার্সিটি ।
– কিন্তু আমার কাছে তো মনে হচ্ছে প্রাইমারী স্কুল । পিচ্চিদের মত আমার হাতে চকলেট ধরিয়ে দিলেন । দেন এক টাকা দেন ।
লোকটা অবাক হয়ে আমাকে এক টাকার একটা কয়েন দিলেন । আমি চলে আসলাম । মনে মনে ভাবলাম নিশ্চয়ই লোকটা আমাকে কিপটা ভাবছে ।
যা ইচ্ছা ভাবুক ; আমার কি ।
ক্লাশ শেষ করে মেসে চলে আসলাম। পকেটে হাত দিয়ে দেখি ঐ এক টাকার কয়েন সহ মোট একুশ টাকা আছে ।
উফ , সব মাসের শেষে এমন অবস্থায় কেন যে পড়তে হয় ?
রান্নাঘরে গিয়ে দেখলাম রান্না হয় নি। বুয়া আসে নি, তাছাড়া টাকাই নেই বাজার হবে কি করে।
রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। একটুপর টুং টুং করে বেজে উঠলো ফোন ।
জানপাখি মিসকল দিয়েছে ।
দুই বার দিল । আমি কলব্যাক করলাম ।
অপর প্রান্ত থেকে একজন মেয়ে সুন্দর কন্ঠে বলল,”আপনার একাউন্টে পর্যাপ্ত পরিমাণ ব….” পুরো কথাটা শোনার আগেই কেটে দিলাম ।
কিছুক্ষণপর জানপাখি নিজেই কল দিল,
– ঐ কলব্যাক করছো না কেন ?
– আসলে ফোনে ব্যালেন্স নেই বাবু।
– এত কিপটা কেন তুমি ? প্রায়ই শুনি তোমার ফোনে ব্যলেন্স নাই । যাই হোক । আমি রেস্টুরেন্টে আছি তাড়াতাড়ি আসো ।
– বাবু,আমি তো অসুস্থ । খুব শরীর খারাপ ।
আমার কথা শুনে ও রেগে দু’একটা কথা বলে ফোন কেটে দিল । আমার একটু মন খারাপ হল। কিন্তু কিছু করার নেই । একুশ টাকা নিয়ে তো আর রেস্টুরেন্টে যাওয়া যাবে না!!
ক্ষিধায় পেট চোঁ চোঁ করছে। একুশ টাকা নিয়ে ছোটো একটা হোটেলে গিয়ে দুটো সিঙ্গাড়া কিনে খেলাম । যাক পেটের এক – পঞ্চমাংশের হাহাকার কমেছে ।
একটুপর মা ফোন দিলো,
– খেয়েছিস বাবা?
– হুম আম্মু ।
আর কিছু না বলে ফোনটা রেখে দিলাম । মাকে জানানোর কী দরকার! ছেলে ভালো আছে এটা জানলেই মা নিশ্চিন্তে থাকবেন।
শেষ হল মাসের শেষ কটা দিন ।
নতুন মাসের শুরুতে বাবা টাকা পাঠালেন ।
– আব্বু এত অল্প টাকায় কী মাস চলে ?
– কী করবো বল?তোর ভাইবোনদের পড়াশোনা আর সংসার সবটা তো আমাকেই দেখতে হয় । একটু কষ্ট করে চলিয়ে নে বাবা ।
– ঠিক আছে আব্বু ।
মাসের প্রথম কটা দিন ভালোই চললো। শেষটা আগের মতোই। রাস্তার পাশে ভ্যানে নতুন শার্ট বিক্রি হচ্ছে। নিজের পরনের কুঁচকে যাওয়া বিবর্ণ শার্টটার দিকে তাকালাম। এই শার্টেই ভালো মানাচ্ছে আমাকে। আরও কয়েক মাস দিব্যি পরা যাবে এটা। কিছুদূর হেঁটে সামনে এগিয়ে যেতেই দেখি আমার ভালোবাসার মানুষটা অন্য একজনের হাত ধরে বসে ফুচকা খাচ্ছে।
নাহ্ , একটুও মন খারাপ হয় নি আমার ; মধ্যবিত্ত কিপটা ছেলের কাউকে ভালোবাসার যোগ্যতা নেই। আর ভুলে কাউকে ভালোবাসলেও সেটা কিছুদিন পর হারিয়ে যায় নিয়তির কাছে।
পরদিন কুঁচকে যাওয়া শার্টটা কোনোরকমে ইস্ত্রি করে পরে ব্যাগ হাতে চললাম ভার্সিটির দিকে। হয়তো এই মাসেও অনেকের কাছে কৃপণ উপাধি পাবো।
“নাহ্ , গায়ে মাখি না কারো কথা । দিন তো চলে যাচ্ছেই । স্বপ্ন দেখছি রঙ্গীন দিনের । আচ্ছা কী নাম দেওয়া যায় এই স্বপ্নের ??
একজন কৃপণ ব্যাচেলরের স্বপ্ন !!”
একজন কৃপণ ব্যাচেলরের স্বপ্ন
(তুর্জয় শাকিল)