#এক কাপ চা পর্ব ৬
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্ব ৬
(১৬)
ইখুমের নিস্তব্ধতা যেন প্রতিবাদের ভিন্ন এক সুর। রাশেদের কথা শুনে সে দাঁড়িয়ে বলল,
“বাচ্চা কখনো একটি সম্পর্কের কারণ হতে পারে না।একটা বাচ্চার জন্য যেমন স্বামী স্ত্রীকে এক থাকতে হবেই এমন কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই,ঠিক তেমনি নিয়ম নেই স্বামী স্ত্রীর এক ছাদের তলায় থাকার জন্য একটা সন্তানকে মায়ের গর্ভে খুন করে ফেলার।
আমি আমার সন্তানকে কিছুই করবো না।তার মায়ের গর্ভে বেড়ে উঠার জন্য কিংবা পৃথিবীতে আসার জন্য কোনো সহমর্মিতার প্রয়োজন নেই।
না আছে টিকে থাকার লড়াইয়ের জন্য অন্যের বাবার প্রয়োজন।
প্রতিটি মা একজন যোদ্ধা।আমি নিজেই পারবো আমার সন্তানের সকল দায়িত্ব বুঝে নিতে।
আপনি বরঙ আপনার হবু বউয়ের সাথেই থাকুন।আটটি মাস অপেক্ষা করুন। আমিই আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো।মোহরানার কোনো টাকা কিংবা কোনো ক্ষতিপূরণ ছাড়াই।বুঝে নিবেন আপনাকে হাদিয়া দিয়েছি।
আর যদি আপনারা শারিরীক মেলামেশা নিয়ে চিন্তিত থাকুন তবে আমি আপনাকে দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি দিচ্ছি।”
সামিনা এক ঘর লোকের সামনে প্রায় চিৎকার করে বলল,
“তোর চিন্তাভাবনা এতটা নিম্ন কেন ইখুম?আমিও একটা মেয়ে। আমার সম্মান নিয়ে এসব বলার অধিকার কাউকে দেইনি।”
“তবে আমি দিচ্ছি।আমার স্বামীকে তোমাকে। এবার অন্তত কোনো খারাপ কাজে লিপ্ত হওয়ার চিন্তা করো না।একজন নারীর এই সিদ্ধান্ত নিতে কতটা কষ্ট হয় তুমি বুঝবে না।তুমি যেমন তোমার মেয়ের কথা চিন্তা করে এসব করেছো,আমিও তেমন আমার অনাগত সন্তানের কথা ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।কারণ জানো তো?
আসলের থেকে সুদ বেশি প্রিয়।”
রাশেদকে কোনো কথা বলার সুযোগ দেয়নি ইখুম।এতদিন তার মনে হতো সে হয়তো ওদের অহেতুক সন্দেহ করছে কিন্তু আজ তার কথায় নিজ মন থেকে সম্পূর্ণ উঠে গেল রাশেদ।
কোনো এক বইতে সে পড়েছিল,
পূর্বে ধানের ভাত না কী তেঁতো লাগে ঠিক তেমনি তেঁতো লাগছে সব কিছু তার কাছে।
দ্রুত পায়ে সে নিজের ঘরে ফিরে এলো।তার বাবাকে কল দিয়ে আগামীকাল তাকে নিতে আসতে বলেছিল সে। এখনো তার বাবার বাড়ির কেউ জানে না তার সাথে এত কিছু ঘটেছে।
(১৭)
পায়ের ব্যথায় চোখ মুখ কুঁচকে যাচ্ছে সাগরিকার। তার হাত অজান্তেই এগিয়ে যাচ্ছে পায়ের দিকে।
ইচ্ছে হচ্ছে জোঁক এনে পায়ে ছেড়ে দিতে।জোঁক রক্তের সাথে শুষে নিবে তার ব্যথাও।
খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটছে সে পুরো ঘর জুড়ে। জোলো বাতাস বইছে বাহিরে।আজ মনে হচ্ছে পূর্ণিমা৷কোথাও বৃষ্টি হয়েছে না কী? আকাশটা পরিষ্কার। এক টুকরো মেঘ তুলোর মতোন উড়ে এসে ঢেকে দিচ্ছে চাঁদকে।চাঁদ ঢাকা পড়ছে মেঘে আবার মেঘ সরে যাচ্ছে। আবার চাঁদ উঁকি দিচ্ছে।
চাঁদের দিকে তাকিয়ে তার বড্ড মন খারাপ হয়।চাঁদ আর রাঙা মায়ের সুখ এক রকম।সুখের আগমন তো হয়,মেঘ এসেও ঢেকে দেয়৷ শুনেছে চাঁদেও না কী মরিচা ধরেছে। সাথে মরিচা ধরতে শুরু করেছে তাদের পরিবারেও।
“যা চা নিয়ে আয়।”
তাজবীদের কণ্ঠে সাগরিকা ভ্রু-কুঁচকে তাকিয়ে রইল।দাঁতে দাঁত চেপে সে বলল,
“বিয়ে করে বউ কে হুকুম দাও না। আমাকে কেন জ্বালাতে আসো বাপু? কবে যে আমার বিয়ে হবে! কবে যে আমি এই বাড়ি থেকে যেতে পারবো।আল্লাহ্ তুমি আমার দিকে চোখ তুলে তাকাও না কেন?”
“বিয়ের এত শখ?”
“হ্যাঁ, আমার বর্তমানে তিনটা স্বপ্ন।
বিয়ে, বিয়ে এবং বিয়ে।বিয়ে ছাড়া আমার আর কোনো লক্ষ্য নেই।”
“তো পাত্র দেখবো?ঘটু মন্ত্রীরে বিয়া করবনি?”
তাজবীদের কথায় তার পিঠে দুম করে কিল বসিয়ে দিলো সাগরিকা।
তারপর বলল,
“সত্যি করে বলো তো! আমার জন্য কি একটাও বিয়ে আসে না?একটাও না?”
“তুই বুঝবি না।”
“আপনি গুরু আমি শিক্ষক বুদ্ধি আমার কম।আপনি বুঝাইয়া দিলে বুঝিতে সক্ষম।”
“ছি কি অশ্লীল গান।যা ঘুমা।”
“ভাইরে! বিয়ে কথা কি হলো?”
“ভাইয়াকে বলে দেখি। কি করা যায় কত দূর।”
“ভাই মাফ চাই। আমার বিয়ে করার দরকার নাই।তাও প্লিজ বলিয়ো না।পায়ে ধরি।”
রাত তখন গভীর। আজ পায়ে ব্যথা পাওয়ার জন্য তাশদীদ তাকে আচ্ছা মতো বকেছে। কারণ সে শুকনো।জায়গায় আছাড় পড়েছিল।এমন নয় যে সে হিল জুতো পড়েছিল।এমনি এমনি পড়ে ব্যথা পাওয়ার কোনো যুক্তিই নেই।
গভীর রাতে সাগরিকার ঘুম কিছুটা হালকা ছিল।সে অনুভব করছিল তার ঘরে কেউ হাঁটছে। আলতো স্পর্শ করছে তার পায়ে।
ঘরে হঠাৎ সিগারেটের গন্ধে ভরে উঠেছে। উষ্ণ দুই ঠোঁটের স্পর্শ তখন সাগরিকার দু পায়ে।
কেউ পরম ভালোবাসায় ভরিয়ে দিচ্ছে তার দুই পা।
সাগরিকার হঠাৎ ভয় হতে শুরু করেছে৷ সে চাইছিল প্রাণপণে চিৎকার করতে। হঠাৎ তার দেহ নিস্তেজ হতে শুরু করলো।সে বুঝতে পারলো সে জ্ঞান হারাছে।
তার ঘুম যখন ভাংলো তার মা মাথার কাছে বসে আছে। ইখুম তার পাশে।তাশদীদ তার ব্লাড প্রেশার মাপছিল।
সে মা কে দেখে সে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে বলল,
“মা আমি আর কোনো দিন বিয়ের কথা বলবো না। বিয়ের কথা বললেই তেনারা কেন আসে?”
(১৮)
রাশেদ সকাল বেলা নাস্তার টেবিলে বলল,
“আমরা বের হবো কিছুক্ষণ পর।”।
তার বড় ভাই নিশ্চুপ ছিলেন।এই মুহুর্তে তিনি বললেন,
” যেতে হলে তোমাকে এই বাড়ির সকল সম্পর্ক এবং সম্পত্তি ত্যাগ করতে হবে।!
“কেন?”
“তোমার অন্যায় আমি মেনে নিবো না।তোমাকে মানতেই হবে। হয় সম্পর্ক না হয় সম্পদ।”
“বেশ তবে নিয়ে আসুন কাগজ।আমার আপত্তি নেই।”
কিন্তু সামিনা আপত্তি করে বলল সে যাবে না।তার অধিকার সে ছাড়বে না। কারণ স্নেহার ভবিষ্যৎ। যে স্নেহার ভবিষ্যতের রাশেদকে আগে তাকে নিশ্চয়তা দিতে হবে ইখুমের সন্তান পৃথিবীতে আসবে না।তার কথা শুনে রাশেদ বলল,
“বেশ তবে তাই হোক।আজই তবে হবে ইখুমের এবোরশন।”
চলবে।
.