টেনশন নিয়ে স্ট্যাটাস
শিক্ষক: ” টেনশন কাকে বলে
আমি : ” মনে করেন,, আপনি রাস্তায় বের হলেন গাড়ি নিয়ে,,
একটা সুন্দরী মেয়ে লিফট চাইল,, লিফট দিলেন,,
“”হঠাৎ, মেয়েটি গেল অসুস্থ হয়,, নিয়ে গেলেন হাসপাতালে
” কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এসে বলল,, মোবারক হো আপনি বাবা হতে চলেছেন….!!! টেনশন শুরু হয়ে গেল…!
“” আপনি টাস্কি খেয়ে বললেন,, আমি উনার স্বামী না….!
” কিন্তু মেয়েটি জোর দিয়ে বলতে লাগলো আপনি আমার স্বামী….!
“” টেনশন বাড়তে লাগলো….!!!
“” পুলিশ আসলো এবং আপনার মেডিকেল চেক- আপ করা হলো…..
” জানতে পারলেন,,, ” আপনি কোনো দিন বাবা হতে পারবেন না…..!!!
“” লাউ ঠ্যালা…!! টেনশন গেল আরো বেড়ে ….!!!
“”হাত – পা ছেড়ে দিয়ে হাসপাতালের বাইরে এসে চিন্তা করতে লাগলেন……!!!!
” ঘরে দুই বাচ্চা তাহলে কার
“” এইটাই হলো আসল টেনশন,,,, স্যার……!!!!!
“ শিক্ষক আমার কথা শুনে,,,,
“” টেনশনে অজ্ঞান হয়ে গেল,,,,,,,,
অনুগল্প
টেনশন
………………..
বাসর রাতের টেনশন এবং তারপর
——————————————
এখন রাত প্রায় একটা।ঝুমুর বাসর ঘরে ঘোমটা দিয়ে বসে আছে।অথচ ফরহাদ সাহেবের কোন খবর নেই।বাসর ঘরের এক কোনে বসে রহিমা খালা পান চিবুচ্ছেন আর কেরোসিনের স্টোভে চা বানাচ্ছেন।উনি এই বাসায় অনেক বছর যাবত কাজ করেন।উনার সবচেয়ে মজার বিষয় হল, উনি কথা বলার সময় সাধু-চলিত-আঞ্চলিক সব মিলিয়ে কথা বলেন।ঝুমুর অবাক হয়ে রহিমা খালার কাজ দেখছে। সে বুঝতে পারছে না তার বাসর রাতে এসব কি হচ্ছে। ঝুমুর এ বাড়িতে আসার পরপরই তার শাশুড়ি তাকে বলেছিলেন,
-“মা আমার ছেলেটা একটু বেশি সহজ সরল।তুমি একটু ওকে তোমার মতো করে গড়ে নিও।ও খুবই ভালো ছেলে।”
ঝুমুর মাথার ঘোমটা টা নামিয়ে ফেলল। এইভাবে দীর্ঘ সময় ঘোমটা দিয়ে বসে থাকতে থাকতে তার ঘাড় ব্যথা হয়ে গেছে। ঘোমটা নামিয়ে ঝুমুর জিজ্ঞেস করল,
-“খালা,আপনি এখানে কেন ?”
-“আমি চা বানাইতাছি।বাবাজী কইছে আজ সারারাত এইটা আমার ডিউটি।”
-“মানে কি ! আপনি কি সারারাত এখানেই থাকবেন !”
-“জি,আমি সারারাত এইহানে থাহুম।আপনার কোন সমেস্যা আছে ?”
-“অবশ্যই সমস্যা আছে। এটা আমার বাসর ঘর। এখানে আপনি থাকেন কিভাবে ?”
-“মা জননী, আমি রাইতে দুই হাত দুরের জিনিসও ঠিকমতো দেহি না।তাই আমি এইহানে থাকলেও আপনাগো কোন সমস্যা হইতো না।”
বলেই পিচ করে পানের পিক ঘরের মধ্যে ফেলে মুখ চেপে হাসতে লাগলেন।
-“রহিমা খালা আপনি এটা কি করলেন ! আপনি ঘরের মধ্যে নোংরা পানের পিক ফেললেন কেন ? “
-“এটা কি কইলেন মা জননী ! পিক নোংরা হইব কেন ? এটা তো আমার মুখেই ছিল।নোংরা হইলে কি এই জিনিস আমি রহিমা খালা মুখে রাখতাম ? রাখতাম না।আমি বড় বংশের মাইয়া।”
-“বুঝলাম আপনি বড় বংশের মেয়ে,কিন্তু তাই বলে ঘরের মধ্যে পানের পিক ফেলবেন !”
-“জি,বড় বংশের মাইয়ারা ঘরের মধ্যেই পানের পিক ফেলায়।আর একটা কথা আম্মা আপনে হইলেন নতুন বউ, চুপচাপ থাকবেন।নতুন বউ এর বেশি কথা বলাটা ঠিক না।”
-“ঠিক আছে কম কথা বলব।তা আপনি কি জানেন ফরহাদ এখন কোথায় ?”
-“নাউজুবিল্লা।মা জননী এইটা কি করলেন ? সোয়ামীরে নাম ধইরা ডাকলেন।তওবা করেন। স্বামীরে ডাকতে হইবে শোদ্ধার সাথে।”
-“ঠিক আছে শ্রদ্ধার সাথেই ডাকব।তা আপনাদের জনাব মো: ফরহাদ সাহেব, উনি এখন কোথায় ?”
-“বাজান বাসায় নাই।একটা খুবই দরকারী জিনিস কিনতে ঔষুধের দোকানে গেছেন।”
-“আপনি জানেন সে কিনতে গেছে !”
-“জানবো না কেন ? সে তো আমার কাছেই প্রথম জিনিসটা খুজছিল। আমি বলছি নাই। তখন সে বলল, খালা এটা কি বললেন, আজ আমার বাসর রাত,আজ যদি এই জিনিস না থাকে তাহলে তো আমার বাসর রাতই নষ্ট হইয়া যাবে।”
ঝুমুরের মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে গেল।মনে মনে বলল,এর তো আসলেই মাথায় সমস্যা আছে। না হলে বাসার কাজের বুয়ার সাথে কেউ কি ঐ জিনিসের কথা আলোচনা করে ?”
-“বউমার মুখ দেখি লজ্জায় একবারে লাল হয়ে গ্যাছে ।”
-“আপনি না বললেন আপনি দুরের জিনিস ভালো দেখেন না।তাহলে কিভাবে বুঝলেন আমি লজ্জায় একেবারে লাল হয়ে গেছি ?”
-“মাঝে মাঝে দেহি আবার মাঝে মাঝে দেহিনা।সবই কপাল। আফসোস আল্লাহ কেন যে গরীব মাইনেষেরে এমন রোগ দেয় বুঝিনা।”
একটু পর ফরহাদ সাহেব বাসর ঘরে ঢুকলেন।তার পরনে শেরওয়ানি। তারমানে উনি শেরওয়ানি পরেই ঐ গুরুত্বপূর্ণ জিনিস কিনতে গিয়েছিলেন।ঝুমুরের লজ্জায় ও রাগে পুরো শরীর কাঁপতে লাগল।ঝুমুরের পক্ষে আর চুপ করে থাকা সম্ভব হল না। সে ঘোমটার ভিতর থেকেই বলল,
-“তুমি এত রাতে বাইরে গিয়েছিলে কেন ?”
ফরহাদ সাহেব নতুন বউ এর মুখে তুমি সম্বোধন শুনে কিছুটা চমকে গেলেন।
-“একটা খুবই দরকারী জিনিস কিনতে গিয়েছিলাম।”
-“বুঝলাম,তা এই পোশাকে কেন গিয়েছিলে ?”
-“এই পোশাকে কি সমস্যা ? অবশ্য গরমের কারণে আমি একবার ঠিক করেছিলাম লুঙ্গি পরে যাবো।কিন্তু খালা বললেন, বিয়ের দিন বর লুঙ্গি পরে বাইরে যাবে এটা কেমন কথা।বিয়ের দিন বর যেখানেই যাবে শেরওয়ানি পরেই যাবে।ভেবে দেখলাম খালার কথায় যুক্তি আছে।উনি খুবই জ্ঞানি মহিলা।”
-“তাই বলে তুমি বিয়ের পোশাকে দোকানে ঐ জিনিস কিনতে যাবে ? তোমার কি একটুও লজ্জা লাগল না ? দোকানদার কি ভাবল ? নিশ্চয় দোকানদার হাসছিলো।”
-“তা অবশ্য হাসছিলো।দোকানদার বলল, ফরহাদ ভাই আপনে নতুন বউরে বাসর ঘরে একলা রেখে এই জিনিস কিনতে আসছেন ?
-“তা তোমার ঐ দরকারী জিনিস আগে কিনলে না কেন ?”
-“আমি তো জানতাম না ঐ জিনিস আজই লাগবে। পরে খালাই বুদ্ধি দিলো। বলল এ জিনিস না হলে বাসর রাত মাটি।”
ঝুমুর অবাক হয়ে ভাবল,এই বদমাশ ব্যাটা বলে কি ! এর তো চরিত্র মন সবই নোংরা।
-“তোমাকে তো আমি সহজ সরল ভেবেছিলাম। কিন্তু তোমার চরিত্র তো পুরাই নষ্ট।তুমি খালার সাথে ঐ জিনিস নিয়ে আলোচনা করলে কিভাবে ?
-“ মানে কি ? ওরস্যালাইন নিয়ে আলোচনা করলে চরিত্র নষ্ট হয়ে যায় নাকি ? বিশ্বাস করেন এই তথ্য আমার জানা ছিল না। থাকলে অবশ্যই আলোচনা করতাম না।”
-“ওরস্যালাইন ! তুমি ওরস্যালাইন কিনতে গিয়েছিলে ?”
-“জি।হঠাৎ করেই পেট টা খারাপ হয়ে গেল ? কেন আপনি কি ভেবেছিলেন ?”
-“আমি ভেবেছিলাম…. না কিছু না।তা তোমার হঠাৎ পেট খারাপ হলো কেন ? উল্টোপাল্টা কি খেয়েছ ?”
-“আমি আসলে…..সরি উত্তর দেওয়ার সময় নাই । “
বলেই ফরহাদ সাহেব টয়লেটের দিকে দৌড় দিলেন। ঝুমুর বোকার মতো টয়লেটের দরজার দিকে তাকিয়ে রইল।মনে মনে বলল,ব্যাটা বলদ তুই আর পেট খারাপ করার সময় পাইলি না। বাসর রাতে কারও পেট খারাপ হয় !
ফরহাদ সাহেব টয়লেট থেকে বের হয়ে খালাকে বললেন,
-“খালা শোনেন, প্রতি পাঁচ মিনিট পরপর চা দেবেন।কোন ফাঁকি ঝুঁকি চলবে না। আর খেয়াল করে পানের পিক ফেলবেন, যেন চায়ের মধ্যে না পরে।তা হলে নতুন বউ এর সামনে মান-সন্মান থাকবে না। “
-“বাজান আপনে নিশ্চিত থাকেন, নতুন বউরে পানের পিক দিতাম না।আমনে যান,বউ এর কাছে গিয়া বসেন।আমি চা আনতাছি।”
ঝুমুর ঘোমটার ভিতর থেকেই ধৈর্য নিয়ে দুই জনের কান্ড-কারখানা দেখছে। সে ঠিক করলো আরও কিছুক্ষণ এই পাগলামী দেখবে,তারপর যা করার করবে।কিন্তু কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না।ফরহাদ সাহেব বিছানার এক কোনায় পা ঝুলায়ে বসলেন।রহিমা খালা দুই কাপ চা এনে বিছানার উপর রাখলেন। ফরহাদ সাহেব বললেন,
-“খালা আপনার চা কোথায় ? যান নিয়া আসেন।তিনজনে মিলে বিছানায় বসে আরাম করে চা খাব।”
খালা চা নিয়ে বিছানায় গিয়ে বসলেন।তারপর পিরিচে চা ঢেলে আওয়াজ করে চা খাওয়া শুরু করলেন।ঝুমুর ঘোমটার আড়াল থেকে খেয়াল করল, ফরহাদ সাহেবও খালার মতো করেই চা খাচ্ছে।ঝুমুর প্রথমে ভেবেছিল খাবেনা।পরে কি মনে করে সেও ওদের মতো পিরিচে চা ঢেলে আওয়াজ করে চা খাওয়া শুরু করল।ফরহাদ সাহেব ঝুমুরের দিকে তাকিয়ে বলল,
-“কি,মজা না ? আসলে খালার চায়ের কোনো তুলনা হয় না। খালার হাতের চা খেলে মনে হয় শ্রীমঙ্গলে চা বাগানে বসে চা খাচ্ছি।একেবারে অমৃত।”
প্রকৃতপক্ষে ঝুমুর চা খেয়ে কোন মজাই পায়নি। কারণ এটা কোন ভাবেই চায়ের পর্যায়ে পরে না। অথচ এই বলদ এ চায়ের প্রশংসায় গদগদ। ঝুমুরের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেল।এইভাবে চা খেয়ে বাসর রাত নষ্ট করার কোন মানেই হয় না। ঝুমুর ঘোমটার আড়াল থেকে বলল,
-“খালা আপনাকে আর চা বানাতে হবে না। রাত অনেক হয়েছে,আপনি যেয়ে শুয়ে পরেন।দরকার পরলে আমি চা বানিয়ে নেব।”
-“আমনের বানান চা বাজান খাইতো না। বাজান আমার হাতের চা ছাড়া অন্যের চা খায় না।”
-“খালা কিন্তু সত্য বলেছেন।”
ফরহাদ সাহেব মাথা দুলিয়ে বললেন।
-“শোনো,আমিও খুব সুন্দর চা বানাই। আমার বানানো চা খেলে তোমার মনে হবে তুমি শ্রীমঙ্গল না,দার্জিলিং এ বসে চা খাচ্ছো।আর তাছাড়া তোমার এখন চা না,তোমার দরকার ওরস্যালাইন খাওয়া।”
খালার বাসর ঘর ছেড়ে যাবার কোনো লক্ষণ দেখা গেল না। ঝুমুর বুঝল এভাবে হবে না।সে বিছানা থেকে নেমে খালাকে হাত ধরে এক প্রকার জোর করেই রুমের বাইরে রেখে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিল।তারপর এসে বিছানায় উঠে বসল।ঝুমুর এখনো ঘোমটা দিয়েই আছে। ঝুমুর বিছানায় গিয়ে বসতেই ফরহাদ সাহেব বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালেন।তারপর দরজার দিকে দৌড় দিলেন।দরজার ছিটকিনি খুলতে যাবেন,তখন ঝুমুর শাসনের সুরে বলে উঠল,
-“তুমি এখন কোথায় যাচ্ছ ? তুমি যদি এখন রুমের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা কর,আমি তোমার মাথা বাঁশ দিয়ে মেরে ফাটিয়ে দেব।”
-“আপনি নিশ্চয় ভয় দেখাচ্ছেন ? “
ফরহাদ সাহেব ভয় পেয়ে বলল।
-“না,আমি মোটেও ভয় দেখাচ্ছি না।আমি একশত ভাগ সিরিয়াস।”
-“কিন্তু আমাকে তো একটু দোকানে যেতেই হবে।একটা খুবই দরকারী জিনিস কিনতে ভুলে গেছি ? “
-“তোমাকে কোথাও যেতে হবে না।তোমার ঐ দরকারী জিনিস আমার ব্যাগের মধ্যেই আছে।”
ফরহাদ সাহেব বুঝলেন না,ঝুমুর কোন জিনিসের কথা বলছে।আসলে ফরহাদ সাহেব কোনো কিছু কিনতে যাচ্ছিলেন না। উনি আসলে পালাতে চাচ্ছিলেন। উনি রুম থেকে বের হতে পারলে আজ আর এই বাসায় ফিরতেন না।ফরহাদ সাহেব বুঝতে পারছেন, এই মেয়ে ডেঞ্জারাস টাইপের মেয়ে।এর সাথে এক রুমে থাকা কোনভাবেই নিরাপদ নয়।উনি এখন বুঝতে পারছেন বিয়ে করার সিদ্ধান্তটা তার ভুল ছিল।
-“এদিকে আস,আমার সামনে এসে বসো।”ঝুমুর গম্ভীর কন্ঠে বললেন।
ফরহাদ সাহেব ঝুমুরের সামনে গিয়ে বসলেন।ঝুমুর মিষ্টি করে বলল,
-“এবার আমার ঘোমটা খোলো, তারপর আমার মুখ দেখে বল আমাকে কেমন লাগছে।আমার পক্ষে আর ঘোমটা দিয়ে বসে থাকা সম্ভব না।”
ফরহাদ সাহেব কাঁপা কাঁপা হাতে ঝুমুরের ঘোমটা নামিয়ে দিলেন। ঝুমুর লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলল।সে অপেক্ষা করছে আর ভাবছে তার স্বামী এখন তার চিবুক ধরে বলবে, তুমি এত সুন্দর কেন ? কিন্তু অনেকক্ষণ হয়ে গেল ফরহাদ সাহেবের কোন সাড়া শব্দ নেই। বিরক্ত হয়ে ঝুমুর চোখ খুলে দেখল,ফরহাদ সাহেব জ্ঞান হারিয়ে বিছানার উপর কাত হয়ে পরে রয়েছেন। ঝুমুরের জানা মতে বাসর রাতে স্ত্রীর চেহারা দেখে জ্ঞান হারানোর নজির সম্ভবত আর নেই।ঝুমুর বুঝতে পারছে, এই বলদরে লাইনে আনতে তার যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হবে।ঝুমুর ফরহাদ সাহেবের চোখে-মুখে পানির ছিটে দিলেন।ফরহাদ সাহেব ধীরে ধীরে চোখ খুললেন।তারপর উঠে বসলেন। ঝুমুর নরম সুরে বলল,
-“ তুমি কি টয়লেটে যেয়ে যেয়ে দূর্বল হয়ে জ্ঞান হারিয়েছ, নাকি আমার রূপ দেখে জ্ঞান হারিয়েছ ?”
-“জানিনা আফা।” ফরহাদ সাহেব দূর্বল কন্ঠে বললেন।
-“তুমি আমাকে আপা বলছো কেন ?”
-“জানিনা আফা।”
-“মানে কি ?”
-“আফা আমার বউ কই ?” ফরহাদ সাহেব রীতিমত ঘামছেন।
-“তোমার সমস্যা কি ? আমিই তোমার বউ।”
-“প্রশ্নই আসে না।আমার বউ যথেষ্ট কালো আর তার চোখ টেরা।”
ঝুমুর খিলখিল করে হেসে উঠল।তারপর বলল,
-“শোনো তুমি যার কথা বলছো সে হচ্ছে শেফালি, আমার খালাত বোন।তুমি যখন আমাদের বাসায় আমাকে দেখতে গিয়েছিলে, তখন ঐ রুমে আমি না গিয়ে ওকে পাঠিয়েছিলাম তোমাকে বিভ্রান্ত করার জন্য।তবে তুমি যে ওকে দেখেও বিয়েতে রাজি হবে এটা আমি ভাবিনি। আচ্ছা বাদ দাও, এবার আমাকে ভালো করে দেখ, তারপর বল আমি সুন্দর কিনা।”
-“এক মিনিট, এখুনি আসছি।”
বলেই ফরহাদ সাহেব আবার টয়লেটের দিকে দৌড় দিলেন।ঝুমুর অলরেডি বুঝে গেছে তার বাসর রাত শেষ।একটু পর ফরহাদ সাহেব টয়লেট থেকে বের হয়ে পাঞ্জাবীর পকেট থেকে কালো একটি সানগ্লাস বের করে চোখে পরলেন।
-“তোমার সমস্যা কি ? তুমি রাতের বেলা সানগ্লাস পরলে কেন ? সানগ্লাস পরলে তুমি তো আমাকে আবারও কালোই দেখবে। সানগ্লাস খোলো।”
-“সানগ্লাস খোলা যাবে না।সমস্যা আছে।”
-“কি সমস্যা ?”
-“মেয়েদের মুখের দিকে তাকাতে আমার লজ্জা লাগে।”
-“মাইগড বলো কি ? বউ এর মুখের দিকে তাকাবে সেখানেও তোমার লজ্জা ! তুমি কি জানো বাসর রাতে স্বামী-স্ত্রী আর কি কি করে ?”
-“ জানি,তাই তো আরও বেশি লজ্জা লাগছে।”
-“শোনো লজ্জা পেলে তো আর বাসর রাত হবে না।এখন সানগ্লাস টা খুলে ফেল, তারপর আমার চোখের দিকে তাকাও।আমি দেখতে চাই তুমি কতোটা রোমান্টিক।”
ফরহাদ সাহেব চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে ঝুমুরের চোখের দিকে তাকালেন। মা আর রহিমা খালা ছাড়া জীবনে এই প্রথম কোনো মেয়ের দিকে উনি সরাসরি তাকালেন।
-“বল আমাকে কেমন লাগছে ?”
ফরহাদ সাহেব বুঝতে পারছেন, ভয়ে উনার শরীর কাঁপছে। গলা শুকিয়ে আসছে।
-“আমি পানি খাবো।”
-“এখন পানি, চা, বিষ কিছুই তুমি পাবেনা। তুমি শুধু এখন আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকবে।চোখের পলকও ফেলতে পারবে না। “
-“আমি টয়লেটে যাব।”
-“প্রয়োজনে তুমি বিছানায় টয়লেট করবে।তবুও আমার সামনে থেকে কোথাও যেতে পারবে না।ফাজিল ব্যাটা আমার বাসর রাত নষ্ট করার ধান্দায় আছে। আমি সারা জীবন এই বাসর রাত নিয়ে কতো স্বপ্ন দেখেছি,আর এই বদ ব্যাটা এই রাতে পেট খারাপ করে বসে আছে। তুমি আমার চোখের দিকে তাকাও।”
ফরহাদ সাহেব টয়লেটের বেগকে কন্ট্রোল করার জন্য পুরো শরীর খিঁচে বসে রইলেন। তারপর ভয়ে ভয়ে আবার ঝুমুরের চোখের দিকে তাকালেন।
-“জি, আপনার চোখের দিকে তাকিয়েছি।”
-“ভেরিগুড। বল কি দেখছো ?”
-“আপনার চোখ দেখছি।”
-“তা তো বুঝলাম চোখ দেখছো। কিন্তু চোখের মাঝে তুমি কি দেখছো ? একটু গভীর ভাবে আবেগ দিয়ে তাকালেই অনেক কিছুই দেখতে পাবে।”
ফরহাদ সাহেব আরেকটু কাছে ঝুঁকে এসে নিজের চোখ দুটি যথা সম্ভব বড় করে ঝুমুরের চোখের দিকে তাকালেন। তারপর মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন,
-“জি, আমি এখন পরিস্কার দেখতে পাচ্ছি।”
ঝুমুরের এখন খুশিতে উড়তে ইচ্ছে করছে।কারণ এই গাধাটার মধ্যে ও রোমান্টিকতা ঢোকাতে পেরেছে।
-“ভেরিগুড । বলো কি দেখতে পাচ্ছ ?”
-“চোখের পাতায় ছোট ছোট কালো কালো চুল দেখতে পাচ্ছি।”
-“কালো কালো চুল ছাড়া আর কি দেখছ ? “
-“সাদার মধ্যে দুইটা কালো কালো মনি দেখছি।”
-“ঐ ব্যাটা তুই শুধু চোখের মধ্যে কালো কালো চুল,আর কালো কালো মনি দেখিস, আর কিছু দেখিস না ? মাইগড আমি এটা কারে বিয়ে করলাম।এর মধ্যে তো কোন আবেগই নাই।”
ফরহাদ সাহেব বুঝতে পারছেন না,তার নতুন বউ কেন রাগ করছে।সে তো খারাপ কিছু বলেনি। যা দেখেছে তাই তো বলেছে।
-“আমি বুঝলাম না ।আপনি চেতলেন কেনো ? আমি কি মিথ্যা বলেছি ? “
ঝুমুর কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ করে বসে থাকে । একটু পর একটি দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলে,
-“সবাই বলে আমার চোখ দুটো নাকি অপূর্ব সুন্দর। কতো স্বপ্ন ছিল, বাসর ঘরে আমার বর আমার চোখের গভীরে হারিয়ে যাবে। মুগ্ধ হয়ে আমার হাত ধরে চোখের দিকে তাকিয়ে কোনো রোমান্টিক কবিতা বলবে।অথচ…..।”
-“মন খারাপ করছেন কেন ? আপনার হাত ধরে কবিতা বলতে হবে ? এটা কোন ব্যাপারই না।”
বলেই ফরহাদ সাহেব ঝুমুরের একটি হাত ধরে চোখের দিকে তাকালেন। চার চোখের সরাসরি মিলনে এক রোমান্টিক পরিবেশ সৃষ্টি হলো বাসর ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যে।ঝুমুর অতি আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে স্বামীর কাছ থেকে মন ভালো হয়ে যাওয়ার মতো কোন কবিতা শুনবে বলে। হঠাৎ করেই ফরহাদ সাহেব উচ্চ স্বরে আবৃত্তি করে বললেন,
“ঐ দেখা যায় তাল গাছ ঐ আমাদের গা, ঐখানেতে বাস করে কানা বগির ছা…..।”
এ পর্যন্ত বলেই থেমে যান ফরহাদ সাহেব। কারণ তিনি খেয়াল করলেন, তার স্ত্রী এখন আর রোমান্টিক ভাবে তাকিয়ে নেই।তার স্ত্রী এখন তার দিকে ভুরু কুঁচকে চোখ ছোট করে তাকিয়ে আছেন।
-“আপনি এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন ?”
-“ঐ দেখা যায় তালগাছ তোর রোমান্টিক কবিতা ! তুই কি আমার সাথে ফাজলামি করোছ ? “
-“এটা আপনার পচ্ছন্দ হয়নি ? তাহলে অন্য একটি বলি।”
ফরহাদ সাহেব আবার ঝুমুরের হাত ধরে চোখের দিকে তাকালেন। তারপর প্রচন্ড আবেগে গলা কাঁপিয়ে সুর করে বলে উঠলেন,
“ঐখানে তোর দাদীর কবর, ডালিম গাছের তলে…।”
ঝুমুর ট্রাফিক পুলিশের মতো হাত তুলে ফরহাদ সাহেবকে থামিয়ে দিলেন। তারপর চিৎকার করে বললেন,
-“মাইগড, তোমার তো আসলেই মাথায় সমস্যা আছে।”
-“কি বলেন ! আমার মাথায় কোন সমস্যা নেই। একদম ফ্রেশ ।”
-“তুই বললেই তো আর হবে না।তোর মাথায় অবশ্যই সমস্যা আছে।সমস্যা না থাকলে পৃথিবীর কোন সুস্হ মানুষ বাসর রাতে স্ত্রীর চোখের দিকে তাকিয়ে আবেগে ‘ঐ দেখা যায় তালগাছ ‘ কবিতা পড়বে না।”
-“আসলে আমি শুধু এই দুটো কবিতাই মুখস্হ পারি।সরি ভুল হয়ে গেছে।আরও একটা মুখস্হ পারি,আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি..।আপনি যদি চান তাহলে শোনাতে পারি।”
-“খবরদার । তুই যদি বাসর রাতে এখন জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার চেষ্টা করিস আমি তোরে স্রেফ খুন করে ফেলবো।”
-“বুঝলামনা আপনি আমাকে তুই তুই করে বলছেন কেন ?”
-“শোন তোর ভাগ্য ভালো,বাংলা ভাষায় তুই এর নিচে কিছু নাই, থাকলে তোরে তাই বলতাম। বদমাশ ব্যাটা আমার বাসর রাতটাই নষ্ট করে দিয়েছে।একে তো তোর পেট খারাপ, তারউপর তোর রুচি খারাপ।ঐ ব্যাটা দুনিয়ায় এতো দিন থাকতে এই দিনে তোর পেট খারাপ হয় কি করে ?”
ঝুমুর রেগে গিয়ে চিৎকার করে কথাগুলো বলল।
-“শোনেন আপনার অভিযোগ গুলি সঠিক। কিন্তু আমি তো আর ইচ্ছে করে পেট খারাপ করিনি। আর একটি কথা আমি কখনো মেয়েদের সাথে মিলামেশা করিনি, প্রেম করিনি তাই প্রেমের কবিতাও পড়া হয়নি।আর আজ পর্যন্ত কোন মেয়ের চোখের দিকে তাকাইনি। তাই জানিনা চোখের মাঝে কি দেখা যায়।আপনি কি আমাকে একটু শিখিয়ে দেবেন ?”
ফরহাদ সাহেবের কথাগুলো শুনে ঝুমুরের মনটা একটু নরম হলো।ভাবলো সত্যিই তো বেচারার কি দোষ।সে মিষ্টি করে বলল,
-“তুমি আমার চোখের দিকে তাকাও।”
ফরহাদ সাহেব ঝুমুরের চোখের দিকে তাকালেন।চার চোখের আবার মিলন হলো।ঝুমুর বলল,
-“তুমি জানো আমি এখন তোমার চোখের মাঝে কি দেখছি ? আমি তোমার চোখের মাঝে শান্ত একটি নদী দেখছি।আর দেখছি,ঐ নদীর পাড় দিয়ে একটি ঘোড়া প্রচন্ড গতিতে ছুটে যাচ্ছে।”
-“কি বললেন ! আমার চোখের মধ্যে ঘোড়া দৌড়ায় ! মাইগড, সমস্যা তো আমার মাথায় না, সমস্যা তো আপনার মাথায়।”
-“কি বললা ? আমার মাথায় সমস্যা ? তোমাকে আমি রোমান্টিক বানানোর চেষ্টা করছি আর তুমি আমাকে বলছো, আমি পাগল ? তুমি এই মুহূর্তে আমার সামনে থেকে দুর হও।আমি এই রাতে তোমারে আর আমার সামনে দেখতে চাই না।”
ফরহাদ সাহেব মলিন মুখে উঠে দাঁড়ালেন । তারপর ধীর পদক্ষেপে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। ঝুমুর ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিলো।
ঝুমুরের এই এক সমস্যা।অল্পতেই রেগে যায়। রেগে গেলে ওর মাথা ঠিক থাকেনা।ঝুমুর ঠিক করেছে আজ রাতে ও আর কিছুতেই দরজা খুলবে না। এই বলদরে দৌড়ের ওপর রাখতে হবে।না হলে একে মানুষ করা যাবে না।
ফরহাদ সাহেব রুম থেকে মলিন মুখে বের হয়ে আসলেও আসলে সে মনে মনে খুবই খুশি।নিজেকে এখন তার স্বাধীন মনে হচ্ছে। খেয়াল করে দেখল তার মায়ের রুম অন্ধকার। সম্ভবত মা এবং রহিমা খালা ঘুমুচ্ছেন।ফরহাদ সাহেবের এ মুহূর্তে বাসায় থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে না। উনি ঠিক করলেন আজ রাতটা পার্কে গিয়ে কাটিয়ে দেবেন।
প্রায় ভোর পাঁচটার দিকে ঝুমুরের ফোনে একটা অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসল। ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলতেই,
-“ঝুমুর আপনি কি ঘুমিয়ে পরেছেন ? সরি আপনার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিলাম। আসলে একটা ছোট্ট সমস্যা হয়ে গেছে।মাকে বলাটা ঠিক হবে না। আপনি কি একটু রমনা থানায় আসতে পারবেন ?”
-“মানে কি ! তুমি কোথায় ?
-“আমি এখন রমনা থানায় ।”
-“তুমি বাসা থেকে বের হলে কখন ? “
-“ভাবলাম আপনি যখন রুম থেকে বের করে দিয়েছেন, তাহলে পার্কে গিয়ে হাটাহাটি করি।রমনা পার্কে গিয়ে হাটছি, এমন সময় পেটটা মোচর দিলো। পার্কে টয়লেট পাবো কোথায়,একটা গাছের নিচে বসে পরলাম।হঠাৎ দেখি পুলিশ পার্কের ভিতর ঢুকছে। আমি পুলিশ দেখেই দিলাম দৌড় ।পুলিশও আমার সাথে দৌড় দিল।”
-“তুমি দৌড় দিলে কেন ?”
-“জানিনা কেন জানি পুলিশ দেখেই দৌড় দিতে ইচ্ছে হল।এখন পুলিশ বলছে আমি নাকি ছিনতাইকারি।এতো করে বললাম আজ আমি বিয়ে করেছি।আজ আমার বাসর রাত।এই দেখুন আমার পরনে শেরওয়ানি।কিন্তু ওরা কিছুতেই বিশ্বাস করলো না।আমি পুলিশ কে বললাম, স্যার আপনারাই বলেন, এই পোশাকে কি কেউ ছিনতাই করে ? পুলিশ বলল,অবশ্যই করে।আমি বললাম,স্যার কে করে ? পুলিশ বলল, তুই করোস।”
-“ওরা কি তোমাকে মেরেছে ?”
-“এটা আপনি কি বললেন ! বাংলাদেশের পুলিশ ধরবে আর মারবে না, এটা কেমন কথা।”
-“ওরা কি তোমাকে বেশি মেরেছে ?” ঝুমুরের গলাটা ধরে এলো।ওর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে।”
-“আপনি কি কাঁদছেন ? আমি তো বেশি ব্যাথা পাইনি।আপনি কাঁদছেন কেন ?”
-“কেন কাঁদছি ? সেটা তুমি বুঝবে না।কারণ ওটা বোঝার ক্ষমতা তোমার নেই।”
ফরহাদ সাহেব আসলেই বুঝতে পারছেন না, ঝুমুর কেন কাঁদছে।ওর মাও বিনা কারণে ওর জন্য প্রায় কাঁদে ।আসলে মেয়েরা জানি কেমন।একটু আগেই ওকে রুম থেকে বের করে দিল,অথচ পুলিশ ওকে মেরেছে একথা শুনেই এখন বাচ্চাদের মতো কাঁদছে।ফরহাদ সাহেব মনে মনে ভাবল,এই দুনিয়া আসলেই বড় বিচিত্র জায়গা।
বি: দ্রষ্টব্য :
ভাবছেন এমন বলদ স্বামী নিয়ে ঝুমুর কেমন আছে ? ওরা ভালো আছে, সুখে আছে।ওদের একটি মেয়ে হয়েছে।সেটা অবশ্য বড় খবর না। বড় খবর হলো মেয়ের বয়স মাত্র সাত মাস, এর মধ্যে ঝুমুর আবারও প্রেগন্যান্ট।
বিশেষ দ্রষ্টব্যের বিশেষ দ্রষ্টব্য:
স্বামী বোকা না চালাক সেটা গুরুত্বপূর্ণ না, গুরুত্বপূর্ণ হলো সে আপনাকে ভালোবাসে কিনা। আর এটাই জীবনে বেশি দরকার।
ইমদাদ বাবু
নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
টেনশন নিয়ে কবিতা
কবিতা ঃ টেনশন
ডাঃঊর্মি চৌধুরী
সবকিছুতে লেগে রয়েছে
স্ট্রেস আর টেনশন
বলতো করবো কাকে মেনশন?
এতোটুকু নেই নিস্তার
কবে ফেলবো স্বস্তির নিঃশ্বাস
খোলা আকাশের নিচে প্রাণ খুলে
শ্বাস নেবো দু-দন্ড কাজ ভুলে!
কবে পাড়ি দেবো সমুদ্র-পাহাড়?
কবে দিন আসবে চোখ মেলে দেখবার?
হারিয়ে যাবো সীমানা ছাড়িয়ে
সুবাতাস জগতে যাবে ছড়িয়ে।
পাখিদের কলতান,ঝরণার ঐক্যতান
বৃষ্টির রিমঝিম,ঝড়ের উত্তাল হাওয়া
মিটিয়ে দেবে সব চাওয়া-পাওয়া।
সমুদ্রের উচ্ছ্বাস, বাঘের গর্জন
আকাশ নামক বিশাল ছাদের নিচে
সব মানুষ দাঁড়িয়ে, ভেদাভেদ ছাড়িয়ে
করবে না কেউ কারো ছিদ্রান্বেষণ
দিকে দিকে সুবিচার,সুশাসন!
মানুষের তরে মানুষ থাকবে
প্রকৃতিকেও মানুষই ভালোবাসবে!
ভাইরাস দূর হবে,যোগাযোগ বাড়িয়ে দেবে
হে জগত মাতা,তুমি হও ত্রাতা!
ভালো লাগে না আর মুখোশ আটা।
বাড়ির আশে-পাশে,ছাদে-ব্যালকনিতে
ফাঁকা জায়গা পেলেই গাছ লাগাও।
বার বার সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে
নিজেকে করোনা থেকে বাঁচাও!
আকাশের নীল -নীলিমাতে
রাশি রাশি মেঘ চললো ভাসতে ভাসতে।
উড়িয়ে দিলাম চিল ঘুড়ি
অজানাতে দিলো পাড়ি।
ও ঘুড়ি,আমায় নেবে সঙ্গে?
আসবো না আমি আর এই সংসার রঙ্গে!
………..
………….
মানসিক টেনশন
ছেলের বাবা মায়েদেরও টেনশন ভয় আশংকা থাকা জরুরী।
সেদিন একজন বন্ধু আমাকে হতাশা থেকেই বললেন
বন্ধুঃ যাক আপনি অনেকটা টেনশন ফ্রি হলেন
আমিঃ কিভাবে ?
বন্ধুঃ কেননা আপনাদের ঘরে মেয়ে হয়নি। ছেলে হয়েছে। মেয়ে হলে বুঝতেন বাবা মায়ের কতোটা টেনশনে থাকতে হয়।
আমিঃ ক্লিয়ার করেন তো কথাটা
বন্ধুঃ এই দেশে এই সমাজে একজন মেয়ের বাবা মা হওয়া কতোটা মানসিক চাপের। চারদিকে নারী নির্যাতন আর ধর্ষণের যেই পরিস্থিতি। মাঝেমাঝে নিজের মেয়েটার মুখের দিকে তাকাতে পারিনা লজ্জায়। আমার ক্ষমতা থাকলে ওকে আবার ওর মায়ের গর্ভে ফেরত পাঠিয়ে দিতাম। এই দেশটা নারীর জন্য মৃত্যুকূপ।
আমি আমার বন্ধুর কাঁধে হাত রেখে বললাম
আমিঃ আচ্ছা আপনার মেয়েকে নিয়ে আপনার প্রতিটি অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলি, আপনার মেয়ে হয়েছে বলে আপনি অনিরাপদ আর আমার ছেলে হয়েছে বলে আমি নিরাপদ এই বিষয়টিকে আমি ভিন্নভাবে দেখি। আর ভিন্নভাবে দেখি বলেই আমি নিজেকে আপনার চেয়ে বেশি অনিরাপদ মনে করি
বন্ধুঃ সেটা কিভাবে ?
আমিঃ আপনার মেয়ে আর আমার ছেলে। আপনার মেয়ে ধর্ষিত হতে পারে এই আশঙ্কাটা সত্যি। আবার আমার ছেলে ধর্ষক হতে পারে এটাও সত্যি। আপনার মেয়ে যদি ধর্ষিত হয় সেটা ওর অপরাধ না। সেটা অন্য কারো অপরাধ। আপনার মেয়েটি সেখানে একজন ভিক্টিম মাত্র। আর যদি আমার ছেলেটি ধর্ষক হয় সেটা আমার ছেলের অপরাধ। আমি সেকারণে আপনার চেয়ে বেশি ভয়ে থাকি, শঙ্কায় থাকি, আতঙ্কে থাকি। যদি আমাদের দেয়া শিক্ষা ব্যর্থ হয় ? যদি এই নারী বিরোধী সমাজ আমার ছেলেকে ধর্ষক বানিয়ে তোলে ? আমি দশজন ধর্ষিত কন্যার বাবা হয়েও মাথা উঁচু করে শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে আমার কন্যাদের কপালে চুমু খেয়ে বলতে পারবো
”আমি গর্বিত কারণ ওরা আমার মেয়ে। আমার মেয়েরা কোন অপরাধ করেনি। আমার মেয়ে নির্যাতিত হয়েছে রাষ্ট্র সমাজ পুরুষ ও পুরুষতন্ত্রের হাতে। এবং আমি আমার নির্যাতিত কন্যাদেরকে আরো বেশি ভালোবাসি”
আমার ছেলেটা যদি ধর্ষক হয় তবে আমি কি করবো বলতে পারেন ? এই’যে ছেলেকে ভালোবেসে এতো এতো কথা বলছি। এতো এতো স্বপ্ন দেখছি এইসব কিছু আমি কোথায় লুকাবো বলতে পারেন ? একজন ধর্ষককে কি কপালে চুমু খেয়ে গর্ব করে বলতে পারবো যে ”ও আমার ছেলে, আমি ওকে নিয়ে গর্ব করি”। আমার কি সেদিন আত্মহত্যা করতে হবেনা বলেন ?
বন্ধুঃ রাসএল ভাই এভাবে তো ভাবিনি কখনো ! আপনার চিন্তার ধারণটাই আলাদা…
আমিঃ আমি সত্যিই আপনার চেয়ে বেশি অসহায়। আমি আপনার চেয়ে বেশি শঙ্কিত। এই হিংস্র পুরুষতান্ত্রিক সমাজ আমার মধ্যে এই ভয় আতঙ্ক আর অসহায়ত্ব ডুকিয়ে দিয়েছে।
#ঋক বাবা তুই পুরুষ হসনে, মানুষ হ।
মানসিক চিন্তা দূর করার উপায়
দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির ১১টি উপায়
টেনশন বা দুশ্চিন্তা মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এটি যেন মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। টেনশন ছাড়া মানুষের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া আজকাল কঠিন ব্যাপার!
বিভিন্ন গবেষণার ফলে প্রমাণিত হয়েছে, মানসিক চাপ হৃদযন্ত্রের ক্ষতি সাধন করে। নিউ ইয়র্কের রচেস্টার মেডিকল সেন্টারের ‘সেন্টার ফর মাইন্ড-বিডি রিসার্চ’ এর মনোরোগবিদ্যার সহকারী অধ্যাপক ড. ক্যাথি হেফনার বলেন, “বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানা গেছে যে, দুশ্চিন্তা, স্বল্পপুষ্টির খাবার খাওয়া বা ব্যায়াম করার অনীহার ফলে যেসব শারীরিক সমস্যা দেখা যায়, মানসিক চাপের ফলেও সৃষ্ট সমস্যাগুলো সাধারণত আরও ভয়াবহ হয়ে থাকে।”
দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকার কিছু উপায় নিয়ে সাজানো হলো এই লেখাটি; যে উপায়গুলো মানসিক চাপ কমিয়ে হৃদয়ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।
১। মেডিটেশন
মানসিক চাপ দূর করে মনকে শান্ত করার জন্য মেডিটেশন একটি অত্যন্ত কার্যকরী ব্যায়াম। কার্নেগী মেলন বিশ্ববিদ্যালয় এর এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ২৫ মিনিট করে টানা ৩ দিন মেডিটেশন করলে তা হতাশা এবং দুশ্চিন্তা অনেকখানিই দূর করতে সহায়তা করে। ড. হেফনার বলেন, “ইয়োগা, ধ্যান ইত্যাদি শরীরে দুশ্চিন্তা সৃষ্টিকারী হরমোনের পরিমাণ কমিয়ে ফেলে এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।”
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যারা নিয়মিত ইয়োগা করেন তারা তুলনামূলক কম শারীরিক সমস্যা বা প্রদাহে ভোগেন।
২। নিজেকে ব্যস্ত রাখুন
দুশ্চিন্তাকে মাথা থেকে দূরে রাখতে হলে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। আপনার মস্তিষ্ক এবং হাত ব্যস্ত থাকে এমন কোন কাজ করুন যেমন গেম খেলুন বা কোন হস্তশিল্প তৈরি করুন। বলা হয়ে থাকে, “অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা।” এটি কিন্তু বাস্তবিকই সত্য। আপনি কোনো কাজ না করে অলসভাবে শুয়ে বসে থাকলে হতাশা আর দুশ্চিন্তা আপনাকে ঘিরে ধরবে- এটাই স্বাভাবিক। তাই যে কোনো প্রোডাক্টিভ কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন।
৩। ক্ষোভ ঝেড়ে ফেলুন
মনের মধ্যে ক্ষোভ জমা করে রাখার অভ্যাস কখনোই হৃদযন্ত্রের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। নিউরোসায়েন্স এর এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ক্ষমা করার পরিবর্তে ক্ষোভ জমা করে রাখলে মানসিক চাপ বেড়ে যায় এবং সেই সঙ্গে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়ে।
ডক্টর সিমন্স বলেন, “আপনি ভাবতেই পারবেন না মনের মধ্যে ক্ষোভ জমা থাকলে তা কত দ্রুত এবং দীর্ঘ সময় ধরে শরীরের ক্ষতি সাধন করে। তাই নিজের ঘাড় থেকে এই আপদ নামিয়ে মানসিকভাবে সুস্থ থাকুন সব সময়।”
৪। বাস্তববাদী হওয়া
যে কোনো ঘটনা বা ভবিষ্যতে কী ঘটতে পারে এ আশঙ্কায় অনেকে অযথা উৎকণ্ঠিত ও চিন্তিত হয়ে পড়েন। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, জীবন মানেই কিছু সমস্যা থাকবে এবং এমন কিছু ঘটনা ঘটতে পারে যা জীবনে কাম্য নয়। তবে এও ঠিক, সবকিছুর সমাধান রয়েছে ও সময়ের সাথে সব ঠিক হয়ে যায়। কাজেই বাস্তব পরিস্থিতি মেনে নিয়ে তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার মানসিকতা গ্রহণ করতে হবে। ফলে কিছুটা টেনশন কমে যাবে। তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারের প্রতি অতিরিক্ত আবেগী মনোভাব দূর করতে হবে।
উদাহরণস্বরূপ, গবেষকদের মতে প্রিয় ফুটবল দলের পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার হারও বেড়ে যায়।
তাই তুচ্ছ কারণে উত্তেজিত হওয়া যাবে না। কারণ জীবনের মূল্য এর চেয়ে ঢের বেশি।
৫। নির্ভুল হওয়ার চিন্তা বাদ দিন
যারা সাধারনণত টাইপ ‘এ’ চরিত্রের মানে সবসময় শুদ্ধ চরিত্রের অধিকারী হতে চান তারাই মূলত হৃদরোগে বেশি ভোগেন।
অধ্যাপক হেফনারের মতে, এ ধরনের অতিরিক্ত খুঁতখুঁতে মনোভাব শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিচরিত্রে শত্রুতার মনোভাব তৈরি করে। তিনি বলেন, টাইপ ‘এ’ চরিত্রের পেছনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে। প্রকৃতপক্ষে, এ ধরনের মনোভাব ব্যক্তিমনে অন্যদের প্রতি প্রবল বিদ্বেষ তৈরি করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি হওয়ার মূল কারণ যা পরে হৃদরোগ ডেকে আনে। তাই সবসময় ভালো চিন্তা করুন এবং সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করুন।
৬। ক্যাফেইন নেওয়া কমিয়ে দিন
ক্যাফেইন খুব দ্রুত আপনার ইন্দ্রিয়কে সজাগ করে তুলে এবং মানসিক চাপ বর্ধক হরমোনের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে। এটা তখনই ভালো যদি আপনি কোনও হিংস্র বাঘের মুখে পড়েন।
তাই ঘন ঘন চা-কফি খাওয়ার অভ্যাস ছাড়ুন। কেননা এসবে প্রচুর পরিমাণে ক্যাফেইন থাকে।
এমনকি জিরো-ক্যালরি বা চিনিহীন বলে বাজারজাত করা কোমল পানীয় থেকেও নিজেকে দূরে রাখুন।
৭। তালিকা তৈরি করুন
আপনার মনে হতে পারে আপনি শত শত সমস্যায় ভুগছেন। তাই আপনার দুশ্চিন্তার কারণগুলোর একটা তালিকা তৈরি করুন। দেখবেন, অল্প কয়েকটির পর আর কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না। এর মধ্যে কিছু সমস্যা থাকবে যেগুলো কমবেশি সবারই থাকে। আপনি উপলব্ধি করবেন যে আপনার আসলে দুশ্চিন্তা করার খুব বেশি কারণ নেই। এটা আপনার দুশ্চিন্তা কমাতে এবং আপনাকে মানসিকভাবে শান্তি দিবে।
প্রাণ খুলে হাসলে শতকরা বিশভাগ বেশি ক্যালরি পোড়ানো যায়
৮। বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান
সবসময় একাকী থাকা মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি হৃদযন্ত্রেরও ক্ষতি করতে পারে। এমনকি কখনও হৃদরোগ ধরা না পড়লেও ক্ষতির আশংকা থেকেই যায়।
তাই একাকী ঘরে বসে না থেকে বন্ধুদের সঙ্গে বের হয়ে পড়ুন। তবে এক্ষেত্রে প্রকৃত বন্ধু নির্বাচনে সচেতন হতে হবে।
৯। প্রাণ খুলে হাসুন
২০০৫ সালে পরিচালিত গবেষণায় জানা যায়, সবসময় গম্ভীর থাকার বদলে প্রাণ খুলে হাসলে শতকরা বিশভাগ বেশি ক্যালরি পোড়ানো যায়। প্রাপ্তবয়স্ক কিছু মানুষকে নিয়মিত হাস্যকর এবং তুলনামূলক গম্ভীর চলচ্চিত্র দেখানোর পর গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে আসেন।
নিয়মিত আমোদ-প্রমোদ হৃদস্পন্দনের হার বাড়িয়ে দেয়। ২০১০ সালে প্রকাশিত আমেরিকান জার্নাল অফ কার্ডিওলজি’র তথ্যানুসারে, হাসি-ঠাট্টার ফলে দেহের সংবহনতন্ত্র বা বিভিন্ন নালীর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই ঠোঁটের কোণে সবসময় এক চিলতে হাসি রাখুন কিংবা পারলে মন খুলে হাসুন।
১০। ডায়েরি লিখুন
আপনি হয়তো কখনোই ডায়েরি লেখেননি। যে বিষয়টি আপনাকে কষ্ট দিচ্ছে, মানসিক চাপের কারণ হচ্ছে সেটি একটি ডায়রিতে লিখুন। পাশাপাশি আপনি কী চান বা কী করলে আপনার ভালো লাগত সেই বিষয়টিও লিখুন। ডায়েরি লেখার এই অভ্যাসটি মানসিক চাপ কমাতে অনেকটা সাহায্য করবে আপনাকে।
১১। পাওয়ার ন্যাপ বা পর্যাপ্ত ঘুম:
বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে না ঘুমিয়ে থাকার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। সুস্থ থাকতে হলে ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুম আবশ্যক। এক্ষেত্রে সময়ের চেয়ে কতটা নিশ্চিন্তে (sound sleep) ঘুমানো গেলো তা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
‘ঘুম’ থেকে ভালো Stress Looser আর কিছু হতে পারে না। তাই যখন কোনোও কিছুই আর ভালো লাগবে না বা মনে হবে কোনো কিছুতেই মন দিতে পারছেন না, তখন একটু নিরিবিলি জায়গা দেখে পাওয়ার ন্যাপ নিয়ে নিন। দুশ্চিন্তা কেটে যাবে!
এ কথা যেমন সত্যি যে, টেনশন মানুষের জীবনে স্বচ্ছন্দ গতি এবং স্বাভাবিক চলার পথে বিঘ্ন ঘটায়, তেমনি এ কথাও অস্বীকার করার অবকাশ নেই যে, জীবনে কিছু পরিমাণ টেনশন থাকা প্রয়োজন। কেননা, এই টেনশন জীবনের কাজ করার পেছনে উৎসাহ জোগায় এবং ক্ষেত্র বিশেষে, কাজ করার পেছনে চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে।