তথ্য গোপন করে বিয়ে
বিয়ের পর বাসায় ফিরে জানতে পারি-আমার স্ত্রীর আমার সাথে চার নাম্বার বিয়ে৷ মানে আমি তার চতুর্থ স্বামী। অথচ বিয়ে ঠিক হবার দিন থেকে আজ প্রায় এই এগারো দিনেও আমি টের পাইনি৷ এমনকি, ওর পরিবার থেকেও আমাকে জানায়নি। আমার চোখের সামনেই মেয়েটা নতুন বউ সেজে ঘোমটা দিয়ে বসে আছে। কে বলবে, এই মেয়েটা এবং তার পরিবার রীতিমতো আমার সাথে প্রতারণা করেছে। এই মুহুর্তে আমি কী সিদ্ধান্ত নেবো? সরাসরি ওকে জিজ্ঞাসা করবো নাকি এক্ষুণি ওর বাড়ির লোককে ডেকে চরম অপমানিত করবো?-
সদ্য বিবাহিত স্ত্রী রুহি আদশানী’র সামনে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো ঈশান। কী করবে, কী বলবে-কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না সে। বাড়িভর্তি মেহমান। ঈশানের বাবা, মা, বোন, ভাগনী প্রত্যেকটা মানুষের চোখেমুখে যেন আনন্দ ঠিকরে পড়ছে। এই মুহুর্তে তাদেরকে কীইবা বলবে সে!
ঈশান মেয়েটার দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে। ব্যাপারটা লক্ষ্য করে রুহি কিছুটা ভয় ভয় দৃষ্টিতে আড়চোখে দেখে নিলো। মানুষটার চোখে একরাশ প্রশ্ন। রুহি অবস্থাটা যথাসম্ভব এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করলেও পারছে না। সংশয়ে হোক আর ভয়েই হোক, বারবার ঈশানের চোখে চোখ পড়ে যাচ্ছে তার। ঈশান তার দিকে এভাবে চেয়ে আছে কেন!
রুহির কাছে উত্তর না মিললেও ব্যাপারটা একরকম
হাস্যরসাত্মকভাবে উড়ে গেল। ঈশানকে এভাবে নববধূর দিকে চেয়ে থাকতে দেখে তার বান্ধবী মৈত্রী ধাক্কা দিয়ে বলে উঠলো,
—কী রে! ফুলশয্যা তো এখনও দেরি আছে। এরমধ্যেই হ্যাংলার মত বউকে চেয়ে চেয়ে দেখা শুরু করে দিলি? একটু সবুর কর। আর মাত্র কিছুক্ষণের অপেক্ষা। আমরা তো তোর বউ দেখেই চলে যাবো।
মৈত্রী এত জোরে কথাগুলো বললো যে, উপস্থিত সবাই শুনতে পেয়েছে। ওর সাথে সাথে প্রত্যেকেই হো হো করে হাসতে শুরু করে দেয়। ব্যাপারটাতে ঈশান প্রচন্ড বিরক্ত কিংবা বিব্রত হয়ে পড়ে। সে কোনোরকমে অবস্থাটা সামাল দেবার জন্য সামান্যতম মৃদু হাসির চেষ্টা করলো। তারপর দ্রুত নিজের ঘরে ঢুকে পড়লো। এইসব হাসি তামাশা তাকে এই মুহুর্তে মোটেও আনন্দ দিচ্ছে না। যে ছেলের সদ্য বিবাহিত স্ত্রী চতুর্থতম বিয়ে করে ঠকায়, তার আনন্দ আসবে কোথা থেকে!
বাসর ঘরটা হাজার হাজার টাকায় কেনা তাজা ফুল দিয়ে সাজানো। মেঝেতে গোলাপের অগণিত পাঁপড়ি ছড়ানো। শুধু মেঝেতেই নয়, বিছানায়ও তাজা গোলাপের পাঁপড়ি দিয়ে “লাভ সাইন” করে তার মধ্যে লেখা হয়েছে “ঈশান লাভ রুহি”। ঈশানের ইচ্ছে করছে একটানে ওগুলো সব নামিয়ে ফেলতে। কিন্তু পারলো না। সে আরও একবার পকেট থেকে নিজের মোবাইলটা বের করে হোয়াটসঅ্যাপটা আবার যাচাই করে দেখে।
একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে একটি ছেলের সাথে রুহির অন্তরঙ্গ চারটি ছবি। সাথে লেখা-আমি রিদাফ রোকন। আপনার বর্তমান স্ত্রী রুহির তিন নম্বর প্রাক্তণ স্বামী। আপনার সাথে কিছু জরুরি কথা আছে। আমাকে অবশ্যই কল দিবেন।
নিজের স্ত্রীর সাথে অন্য পুরুষের এমন নোংরা ছবি দেখে ঈশানের গা গুলিয়ে উঠেছিলো। সে সাথে সাথেই ছেলেটিকে ফোন করলে ছেলেটি জানায়,
—আমি এখন যা বলবো, আপনার হয়তো বিশ্বাস হবে না। আপনার স্ত্রীর সম্পূর্ণ নাম রুহি আদশানী। বয়স চব্বিশ। বাড়ি দিয়াবাড়ি সংলগ্ন রুস্তমপুর। আশা করি,এর বেশি নির্ভরযোগ্য সূত্র দিতে হবে না। ভাই, আমি জানি না আপনি কে। কিন্তু আপনি যেই মেয়েকে বিয়ে করেছেন, এই মেয়েটি সাংঘাতিক রকমের ধুরন্ধর। আমার সাথে মাত্র ছয়মাস সংসার করার পরেই সামান্য কারণ দেখিয়ে ডিভোর্স নিয়েছে। সাথে কাবিনের মোটা টাকা। শুধু আমারই নয়, ওর প্রাক্তণ যে দুজন স্বামী ছিল, তাদেরও একই অবস্থা। বিশ্বাস করুন, আপনার জীবনটাও এই মেয়ে নরক বানিয়ে ফেলবে।
—আপনি রুহির সম্পর্কে নাম,ঠিকানা কিংবা পরিচয় জানতেই পারেন। কিন্তু তাই বলে আমার স্ত্রী সম্পর্কে ভুলভাল কথা বলার স্পর্ধা আমি আপনাকে দেবো না। এসব ফটোশপেও এডিট করা যায়। আপনি নিশ্চিত রুহিকে পছন্দ করতেন। এখন ওকে আপনার জীবনে না পেয়ে প্রতিহিংসায় জ্বলে পুড়ে যাচ্ছেন। তাই না?
ওপাশ থেকে আরও দৃঢ়কন্ঠে রিদাফ বললো,
—আমার পাঠানো ছবিগুলো ফটোশপ নাকি রিয়েল,তা কোনো ফটো স্পেশালিষ্টকে দেখালেই প্রমাণ পাবেন। আমি এই মেয়ের সাথে দীর্ঘ ছয়মাস সংসার করেছি,একই বিছানায় শুয়েছি। এমনকি ওর শরীরের কোথায় কী আছে, তাও জানি। এরপরেও আপনি আমাকে অবিশ্বাস করবেন? এই মেয়ে এবং ওর মা দুজনই ভয়ংকর খারাপ। আমি ওদের থাবা থেকে আপনাকে বাঁচাতে চাই। আমার এবং ওর অতীতের স্বামীদের সাথে রুহি এবং ওর মা সায়মা শিকদার মিলে যা করেছে, তা আর কোনো পুরুষের সাথে হতে দিতে চাই না। আপনার বিশ্বাস না হলে সরাসরি আমার সাথে কথা বলুন। আমি পাই টু পাই প্রমাণ দেখাবো।
—আচ্ছা, কাল বিকালে আমি আপনার সাথে যোগাযোগ করবো। এখন রাখছি।
রিদাফের সাথে ওর এই অব্দিই কথা হয়েছে। এই ছেলেটা এতসব কথা কীভাবে এক নাগাড়ে বলে গেল! ঈশানের মাথাটা কেমন যেন চক্কর দিয়ে উঠলো। একটা মেয়ের এক বিয়ে, দুই বিয়ে নিয়ে তার বিশেষ আপত্তি নেই। তাই বলে চার বিয়ে! সেটাও সমস্যা ছিল না। ঈশান সমস্তটাই মেনে নিত। কিন্তু সায়মা শিকদার তো একবার ঈশানকে নিজের মেয়ের অতীত সম্পর্কে সত্যটা জানাতে পারতেন। সেটাও কেউ জানালো না! এমনকি এ বাড়ির কেউই রুহির ব্যাপারে বিন্দুমাত্রও টের পেলো না? এটা কীভাবে সম্ভব! ঈশানের খেয়াল হলো- পাত্রী দেখতে যাওয়ার দিন রুহির সাথে শুধুমাত্র ওর মা, মামা পরিচয়ে একজন এবং আরও দুজন আত্মীয় পরিচয়ের মানুষ ছিলেন। ঈশানের বাবা তোফায়েল আহমেদকে রুহির মায়ের শর্ত ছিল ঠিক এইরকম,
—বেয়াই সাহেব, আপনার ঘরে মেয়ে দিতে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু আপনাকে তো বলেছিই, আমার স্বামী বেঁচে নেই। একা একা বহু কষ্টে মেয়েকে বড় করেছি। মেয়ের বিয়ে নিয়ে সাধ আছে, কিন্তু সাধ্যি নেই। তাই মেয়ের বিয়েটা আমি আয়োজন করে দিতে পারবো না।
রুহির সাথে ঈশানের আলাদাভাবে কথা বলতে দিলে সেও চোখ টলমল করে বলেছিল,
—আমার মা আমার কাছে সব। আপনি যদি সত্যিই আমাকে বিয়ে করতে চান, তবে অনুরোধ-আমার মায়ের কাঁধে কোনো ঋণ ঝোলাবেন না। আমি বিয়ে করবো স্রেফ কোর্ট ম্যারেজ। ঢাকঢোল পেটাবো না। নিজেদের মত সামান্য আয়োজনে বিয়ে হবে। এত এত মানুষকে দাওয়াত করে খাওয়ানোর চেয়ে দান করে দেওয়া উত্তম।
রুহির চিন্তাধারা ঈশানের এত বেশিই ভালো লেগে যায়, সে আর এই মেয়ের মধ্যে বিন্দুমাত্রও নেতিবাচক দিক খুঁজে দেখার অবকাশ পায় না। ঠিক যেন কল্পনার দুজন রাজকুমার আর রাজকুমারীর মতই দুই পরিবারের সম্মতি নিয়ে এই দুজন বিয়ের পিঁড়িতে বসে পড়ে। রুহিকে নিয়ে কতশত স্বপ্ন সে সাজিয়েছিল। অথচ এখন কী আর এই মেয়ের সাথে এই বাসরঘরে মুখ তুলে তাকাতে ইচ্ছে করবে? ঘৃণায় ওর থুথু ফেলতে ইচ্ছে করবে না? ভালোবাসার মানুষের প্রতি একবার ঘৃণা জন্মে গেলে হাজারবার ভালোবাসা দিয়েও তা দূর করা যায় না।
রিদাফের কথায় বিশেষ গুরুত্ব না দিলেও রুহির ভয় ভয় চাহনি দেখেই ঈশানের গা-পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে। কী করবে ভাবতে ভাবতে সে কল দেয় রুহির মা সায়মা শিকদারের নাম্বারে। একবার রিং হয়ে কেটে গেলেও ওপাশ থেকে সায়মা শিকদার ফোন ধরলেন না। কিন্তু ঈশান থামে না। সে আবার কল করে। অবশেষে দ্বিতীয়বার প্রায় কেটেই যাবে,এমন মুহুর্তে তিনি কল রিসিভ করলেন।
—বাবা ঈশান! তোমরা যে বাসায় পৌঁছেছো, এ খবর তোমার বোন আমাকে দিয়েছে।
—আমি জানি। আমার সামনেই ও কল দিয়েছিল।
—তাহলে… তুমি হঠাৎ এই সময়ে? কোনো সমস্যা হয়েছে?
—আপনার মেয়ের যে এর আগে তিনবার বিয়ে হয়েছিল, এই কথাটা আপনি আমাদের থেকে লুকিয়েছেন কেন?
—তিন বিয়ে? তাও আবার রুহির? কী যা তা বলছো তুমি! ওর যে একটা ছেলের সাথে গভীর সম্পর্ক ছিল, এই কথা তো আমি তোমাকে বলেছিই। কিন্তু এর আগে ওর বিয়ে তো হয়নি। এসব ভূয়া খবর কে দিচ্ছে?
—আপনার মেয়ের তিন নাম্বার প্রাক্তণ জামাই রিদাফ রোকন। চিনতে পারছেন?
রিদাফের নাম শুনে সায়মা শিকদার যেন কিছুটা ঘাবড়ে গেলেন। তিনি বেশ কিছুক্ষণ নির্বাক হয়ে ফোন কানে ধরেই দাঁড়িয়ে রইলেন….
(চলবে….)
গল্প— অসমাপ্ত পর্ব:-০১
লেখক-Sharifa Suhasini
#অসমাপ্ত পর্ব:-০২
লেখক- Sharifa Suhasini
—আপনার মেয়ের তিন নাম্বার প্রাক্তণ জামাই রিদাফ রোকন। চিনতে পারছেন?
রিদাফের নাম শুনে সায়মা শিকদার যেন কিছুটা ঘাবড়ে গেলেন। তিনি বেশ কিছুক্ষণ নির্বাক হয়ে ফোন কানে ধরেই দাঁড়িয়ে রইলেন। ঈশান আবার বললো,
—চুপ করে আছেন কেন? ধরা পড়ার ভয় পাচ্ছেন? আমি সব সত্যি জেনে গেছি।
—বাবা ঈশান, তুমি যা শুনেছো, ব্যাপারটা মোটেও সত্য না। তুমি তো এ যুগের ছেলে। কেউ একজন যা তা বুঝাবে, আর তুমি তাই বুঝবে, বলো বাবা?
—আর ছবিগুলো? সেসব তো মিথ্যে নয়।
—ঈশান, তুমি যথেষ্ট ভেবেচিন্তেই আমার মেয়েকে বিয়ে করেছো। আর এখন বাইরের মানুষের কথায় ওর চরিত্র নিয়ে সন্দেহ করে আজ তোমাদের বাসর ঘরে না গিয়ে আমাকে জেরা করছো? দরকার হয় মেয়েটাকে আমি বিয়ের পিঁড়িতে না বসিয়ে আজীবন আইবুড়ো করে ঘরে বসিয়ে রাখতাম। বাপ মরা মেয়েটাকে কত কষ্টে বড়ে করেছি, তা কেবল আমিই জানি। আর আজ তাকে বিয়ে করে বাড়ি নিয়ে গিয়ে এই প্রহসন শুরু করেছো! এই তোমার বিশ্বাস? “আমার মেয়েকে ভালো রাখবে”- এই ভরসাটা কী আমি এমন এক ঈশানকেই করেছিলাম?
সায়মা শিকদারের আবেগী কথার স্বর ঈশানের কানে যেন জনম দুখিনীর আর্তনাদ হয়ে ভেসে আসতে লাগলো। ঈশান আর প্রশ্ন করার সাহসই করে উঠতে পারে না। এই সুযোগে সায়মা শিকদার আবার বললেন,
—তোমাকে রুহি বলেছিল না? একটা ছেলের সাথে ও গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল। পরবর্তীতে সেই ছেলেটি আমার মেয়েকে ধোকা দিয়ে পালিয়ে গেছিল। ওর নাম কিংবা ছবি দেখেছো?
—তাকে কেন দেখতে যাবো? বিয়ের আগে সবারই কমবেশি অতীত থাকে, ভালোবাসার মায়ায় পড়ে। রুহিও পড়েছিল। এ নিয়ে মাথাব্যথা করা আমার স্বভাবে নেই।
—আসলে এই রিদাফের সাথেই মূলত আমার মেয়ের সম্পর্ক ছিল। আর সেই সম্পর্ক থাকাকালীন সময়ে ওর সাথে… আমি আর বলতে পারবো না বাবা। তুমি বুঝতেই পারছো, এরপরের বিষয়টুকু কী ছিল। আমরা তোমার থেকে কিছুই লুকোইনি বাবা। লুকোনোর হলে তো এতবড় সত্যিটাও লুকোতাম। সব শুনেই তুমি রুহিকে বিয়ে করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলে। অতীতের ভুলের জন্য আমার মেয়েটা আর কত ভুগবে, বলতে পারো বাবা? বিশ্বাস না হয়, তুমি আগামীকাল ওই ছেলে আর রুহিকে সাথে নিয়ে আমার সাথে দেখা করো। ওই ছেলে সমস্ত সত্য কথা স্বীকার করবে। আমার তো ভয় হচ্ছে, রুহির ক্ষতি করাটাই ওর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। বাবা ঈশান, তুমি দ্রুত একটা ব্যবস্থা করো। রিদাফ যদি ওদের ছবিগুলো সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে দেয়, তবে আমার মেয়েটা আর কোথাও মুখ দেখাতে পারবে না। তাছাড়া ও তো এখন তোমার ঘরের বউ। তোমার, তোমার বাবার এমনকি পরিবারের নামও এখন ওর সাথে জড়িত।
ঈশান ক্ষণিক মুহুর্ত ব্যাপারটা ভাবার চেষ্টা করলো। রুহির প্রাক্তণকে সে সত্যিই চিনতো না৷ তবে বিয়ের আগে খোঁজ রাখাটা উচিত ছিল। যেহেতু আগামীকাল রিদাফ ওকে সময় দিতে চেয়েছে,তাহলে একসাথে বসাই উত্তম হবে। তাছাড়া তার শাশুড়ী বলতে গেলে একেবারেই মাটির মানুষ। ভদ্রমহিলার চোখের পানি মিথ্যে হতে পারে না। সেকারণে, এই মুহুর্তে ঈশানের মনে ওদের প্রতি আর বিন্দুমাত্র সন্দেহও রইলো না। তার কাছে পরিবার এবং নিজের স্ত্রীর সম্মানটাই এই মুহুর্তে মুখ্য বিষয়। ঈশান সায়মা শিকদারকে আগামীকাল একই সময়ে দেখা করতে বলে দিলো।
★
আত্মীয়রা এক এক করে যার যার বাড়ি ফিরতে আরম্ভ করেছে। আর বাকিরা পড়ে আছে এখানে সেখানে। সায়মা শিকদারের সাথে কথা শেষ করে ঈশান ছাদে বন্ধুদের সাথে গল্পে মশগুল ছিল।
এরমধ্যে রাত যখন বারোটা বেজে সাতচল্লিশ মিনিট পার হয়ে গেছে। ঈশানের ফোনে বারবার ওর বোন আশাবরী কল দিয়েই যাচ্ছে। বন্ধুদের মধ্যে মৈত্রীই বিরক্ত হয়ে বলে ওঠে,
—তোর আপা কল দিচ্ছে, আর তুমি পাত্তাই দিচ্ছিস না?
অথচ রিদাফের এই হঠাৎ আগমন নিয়ে ঈশান এত বেশিই ধ্যানমগ্ন ছিল যে, তাকে যে কেউ কল দিচ্ছে-তা টেরই পায়নি। সে তাড়াহুড়ো করে কল রিসিভ করলে ওপাশ থেকে আশাবরী ধমক দিয়ে বলে ওঠে,
—তুই কী মানুষ নাকি ইতর?
—তোমার কাছে তো সবসময় ইতরই ছিলাম আপা। মানুষ বলে আর কবে ডাকলে?
—ফাজলামি বন্ধ করে আল্লাহর ওয়াস্তে ঘড়িটা দেখ। কত বাজে? ঘরে নতুন বউ রেখে ছাদেই রাত কাটিয়ে দিবি?
ঈশান মোবাইলটা কানের পাশ থেকে নামিয়ে স্ক্রিণেই সময় দেখে চমকে ওঠে।
—সে কী! একটা বাজতে যাচ্ছে!
—এবার নিজের বউয়ের উপর দয়া দেখিয়ে আড্ডাবাজি বন্ধ করে ঘরে আয়। তোর ভাগ্নীরা ওকে বাসর ঘরে নিয়ে যাচ্ছে। ঘড়ি ধরে তোকে এক মিনিট সময় দিচ্ছি। এরমধ্যে সোজা নেমে আসবি। কুইক।
আশাবরী ফোন রেখে দিলো। রুহিকে নিয়ে তার সন্দেহ নেই ঠিক। তবে মনের ভিতর অজানা দ্বন্দ এসে ভর করছে। অন্যদিকে, সে এমন কাপুরুষ হতে পারবে না -যে উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়া স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বাইরের কারো কথা শুনে নিজের সংসারের প্রথম দিনটা মাটি করে ফেলবে।
বন্ধুদেরকে বিদায় দিয়ে ঈশান নিজের ঘরের সামনে এসে দাঁড়ায়। আত্মীয়-স্বজন সবাই যার যার মত করে এখানে ওখানে শুয়ে পড়েছে। বাবা-মার ঘরে নাকি নয়জন। ডাইনিং রুমের সোফা আর মেঝেতে গুনলে নিশ্চয় আঠারো-বিশজন তো হবেই। ব্যাপারটা খেয়াল হতেই ঈশান আনমনে মুচকি হেসে ওঠে। যাক, শুধুমাত্র তার বউয়ের কারণে আজ ওর ঘরে এত শত আত্মীয় থেকেও কেউই ঘর দখল করতে আসেনি।
তবে সেই হাসিটুকু তার ঠোঁটের কোণে খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। রুহিকে সে রিদাফের বিষয়ে জিজ্ঞেস করবে কি-না, তা ভেবেই কেমন যেন সংশয় ভর করছে। মেয়েটা কী মনে করবে, কে জানে!
দ্বিধাদ্বন্দের ভিতরেই সে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো। নিজের ঘরে ঢুকতেও কেমন অদ্ভুত অপরিচিত লাগছে যেন সব৷ বিছানার মাঝখানে আধা হাত লম্বা ঘোমটা টেনে বসে আছে রুহি। ঈশান টেবিলের উপরে পড়ে থাকা গ্লাস থেকে এক চুমুকে পানিটুকু খেয়ে নেয়৷ তারপর ভয়ে ভয়েই ওর পাশে গিয়ে বসে। রুহি তখনও নির্বাক, চুপচাপ। ঈশান কী দিয়ে কথা শুরু করবে, ভাবতে ভাবতে হঠাৎই বলে ওঠে,
—তোমার মায়ের সাথে আগামীকাল দেখা করতে যাবো। রেডি থাকবে। তোমার যে প্রাক্তণ রিদাফ না কে জানি, ওর সাথে একবার সাক্ষাৎ করা দরকার।
-মানে!
রুহি ঘোমটার ভিতর থেকে মুখ বের করে ড্যাবড্যাব চোখে তাকায়। কিন্তু ঈশান খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই কথায় কথায় রিদাফের সাথে পরিচয় হবার গল্প বলতে শুরু করে দিলো। এই ফাঁকে রুহি নিজের মোবাইল ফোনটা আড়ালে বের করে দেখে, তার মা বেশ কয়েকবার তাকে কল দিয়েছিল। কিন্তু ফোন সাইলেন্ট থাকার কারণে মানুষের ভিড়ে সে টেরই পায়নি। তাহলে কী রিদাফ তাকে নিয়ে নতুন কোনো পরিকল্পনা করছে? রুহি কৌশলে রিদাফের প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলে উঠলো,
—আমি শুনেছি, আপনি অনেক পরিশ্রম করে আপনার কোম্পানিটা দাঁড় করিয়েছেন।
নিজের ব্যবসা নিয়ে রুহির আগ্রহ আর প্রশংসা দেখে ঈশান সহাস্যে জবাব দেয়,
—ঠিকই শুনেছো। তবে কোম্পানিটা কিন্তু বিশাল নয়। মোটামুটি। এতেই আমি খুশি। আমার পরিশ্রমের কারণেই এখন আমার কোম্পানিতে আটাশ জন মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
ঈশানকে কথায় ভুলিয়ে রেখে রুহি কোনোরকমে রিদাফের টপিকের ভূতটা মাথা থেকে ছাড়িয়ে নিলো। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে-এতসব আলোচনা করতে গিয়ে ঈশান ওর কাছাকাছি হচ্ছে না। ওকে স্পর্শ করছে না। অথচ ঈশান তাকে স্পর্শ করে ওর খুব কাছে না এলে সবকিছুই তো থেমে যাবে। সে ইচ্ছে করেই ঈশানের একটা হাত নিজের বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে বললো,
—আপনি চিন্তা করবেন না। দেখবেন, সবকিছু আরও ভালো হবে। এখন তো আমি আপনার সাথে আছি। আপনার বুকের মধ্যে আমাকে আগলে রাখবেন না?
রিদাফ সহসা আর জবাব দিতে পারে না৷ হতভম্ব হয়ে সদ্য প্রেমে পড়া প্রেমিকের মত চেয়ে রইলো রুহির দিকে। মাথা থেকে ঘোমটা নেমেছে কাঁধ পর্যন্ত, গলার হার এসে ঠেকেছে বুকের ঠিক মাঝখানে৷
★
পরদিন সকালবেলা বাইরে বন্ধুর বাসায় রুহিকে নিয়ে দাওয়াতে যাবার নাম করে বের হবার কথা ঈশান আগেভাগেই বলে রাখে। কিন্তু রিদাফের নাম্বারে অনেকবার কল দিয়েও ছেলেটার সাথে আর যোগাযোগ করতে পারে না সে। অপেক্ষা করতে করতে দুপুর পার হয়ে যায়। অগত্যা রুহিকে নিয়ে শাশুড়ী সায়মা শিকদারের সাথে সে একাই দেখা করে। সায়মা শিকদারের ঠোঁটেমুখে কেমন উদাসীন ভাব ফুটে উঠছে। ঈশানকে একা দেখে তিনি অবজ্ঞার সুরে প্রশ্ন করলেন,
—কোথায় সেই হতচ্ছাড়া? আমার মেয়ের জীবন নরক করতে উঠেপড়ে লেগেছে, তাই না?
কিন্তু দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও রিদাফ আর এলো না। ব্যাপারটা ঈশানের কাছেও বেশ বিরক্তিকর লাগছে। সে হতাশ হয়ে বলে ওঠে,
—সকাল থেকেই ছেলেটার ফোন বন্ধ। আগে জানলে আপনাকে এখানে কষ্ট করে ডেকে আনতাম না।
সায়মা শিকদার আবারও উপহাসের সুরে জানালেন,
—দেখো বাবা, বাইরের মানুষের কথায় আমার মেয়েটাকে সন্দেহ করো না৷ দেখলে তো? আমার মেয়ে এই ছেলেটার সাথে সম্পর্ক করে কতবড় ভুল করেছে? তোমার মত হীরার টুকরো ছেলে পেয়েছি বলেই আমার মেয়েটা নতুন জীবন পেয়েছে।
এই বলে তিনি রুহির দিকে ফিরে তাকালেন। রুহির গলা যেন শুকিয়ে কাঠ হবার উপক্রম।
তবে ঈশান কোনো কথাই বলে না৷ রিদাফ হঠাৎ ফোন বন্ধ করে ফেললো কেন-এটাই তার মাথায় ঢুকছে না। রেস্টুরেন্টের বিল পরিশোধ করে সে মোবাইলটা পকেটে রাখতে যাবে, এমন মুহুর্তে একটা আননোন নাম্বার থেকে আরও একটি মেসেজ আছে ওর ফোনে।
“ঈশান, রিদাফ ছেলেটা আর বেঁচে নেই। আমিও ওর মত একজন ভুক্তভোগী বলছি। তুমি আমাকে ফ্রি সময়ে কল দিও প্লিজ। আর আমার কথা কাউকে জানাবে না। আমি তোমাকে সায়মা শিকদারের এক ভয়ংকর সত্যি দেখাবো।”
(চলবে…)
………………………
……………..
গল্প- #অসমাপ্ত পর্ব:-০৩
লেখক- Sharifa Suhasini
“ঈশান, রিদাফ ছেলেটা আর বেঁচে নেই। আমিও ওর মত একজন ভুক্তভোগী বলছি। তুমি আমাকে ফ্রি সময়ে কল দিও প্লিজ। আর আমার কথা কাউকে জানাবে না। আমি তোমাকে সায়মা শিকদারের এক ভয়ংকর সত্যি দেখাবো।”
ঈশানের গলাটা কেমন শুকিয়ে আসতে শুরু করলো। কোন ভয়ংকর চক্রান্তে জড়িয়ে গেল সে! তাকে মোবাইলের দিকে বারবার তাকাতে দেখে সায়মা শিকদার ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করে,
—কী হচ্ছে, খুলে বলো তো।
—কিছুই না৷ ছেলেটাকে কল দিচ্ছি। এখনও ধরছে না। তার মানে সে আমাকে ধোকা দিলো। আর আমিও বোকার মত তার কথা শুনে আপনাকে এসব আজেবাজে প্রশ্ন করে বসলাম। রুহিকেও সন্দেহ করেছি। ছিঃ, ছিঃ, এমন বোকামো আমি কীভাবে করতে পারলাম!
সায়মা শিকদারের ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসির রেখা ফুটে উঠলো। ঠিক এই সময়ের, এই সন্ধিক্ষণের অপেক্ষাতেই তো তিনি ছিলেন। আর এক মুহুর্তও দেরি না করে তিনি প্রতিপক্ষ সমালোচনায় মত্ত হয়ে বললেন,
—আমি তোমাকে তখনই সত্যি কথা বলেছিলাম ঈশান। এই দুনিয়ায় কেউ কারো ভালো চায় না। তোমার কি আর কোনো সন্দেহ আছে? নাহলে আমার মেয়েকে আমার সাথে ছেড়ে দাও। নব বিবাহিতাকে এভাবে সন্দেহের তীর ফুটিয়ে সংসার শুরু করার কোনো মানেই হয় না ঈশান।
—না, না। আমার কোনো সন্দেহ নেই। আমরা বরং এবার আসি। বাড়িতে মিথ্যে বলে বের হয়েছিলাম। আর হ্যাঁ, আমি ভীষণভাবে দুঃখিত। অহেতুক আপনাদেরকে এত বাজে একটা পরিস্থিতির মধ্যে ফেললাম।
সায়মা শিকদার মুখে আওয়াজ করলেন না। কেবল মাথা দুলিয়ে সায় দিয়ে বুঝালেন, ঈশান যে ভুল ধারণা করেছিল, তার জন্য তিনি ক্ষমা করে দিয়েছেন। এই মানুষটি কেমন যেন রহস্যে ঘেরা। অর্ধেক উত্তর দিয়েই বুঝিয়ে দেয় তার জবাবের সম্পূর্ণ গল্প। রহস্যময় মানুষগুলোকে সহজে বুঝতে পারা যায় না। তাদের এই রহস্যে থাকে ভয়ংকর কোনো চরিত্র অথবা একেবারেই সাদামাটা। সায়মা শিকদারের ভেতর কী আছে, কে জানে! তবে খুব শীঘ্রই তার রহস্যের ব্যবচ্ছেদ সে ঠিকই করবে।
ঈশান বিদায় দিয়ে রুহিকে সাথে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। মোটরসাইকেলে ঈশানের পাশে বসে বেশ ভালোই লাগছে রুহির। সে ঈশানের কাঁধে আলতো করে আঙুল বুলিয়ে চেপে ধরে। ঈশান কেমন যেন শক খেল।
—আরে, আরে, করছো কী! এমন করছো কেন? পড়ে যাবো তো।
কিন্তু রুহি ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে প্রসঙ্গ পাল্টে জবাব দেয়,
—আপনি আমাকে এভাবে এড়িয়ে চলছেন কেন?
—কোথায় এড়িয়ে চললাম?
—কাল রাতে কী কান্ডটা করলেন? আমার সাথে ঠিকমতো কথাও বলেননি। আর এখন! আমার মায়ের সাথে দেখা করতে এলেন অন্য একটা ছেলের কথায়। নিজের স্ত্রীর প্রতি এত অবিশ্বাস? এরচে’ বরং আমাকে বিয়ে না করে সেদিনই রিজেক্ট করে অপমান করতেন। আমার গায়ে সইতো। কিন্তু যে ছেলে আমার সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি করছে, আপনি তার কথায় এভাবে এতদূর ছুটে এলেন? আপনার এমন আচরণ দেখে আমার ভারি কষ্ট হচ্ছে ঈশান।
ঈশান নিরুত্তর। রুহির সাথে সে যা করেছে, সবই অক্ষরে অক্ষরে তার মনে আছে। কিন্তু রিদাফকে নিয়ে যে ভয়ংকর তথ্য সে পেয়েছে, এরপর সত্যতা যাচাই না করে এই মেয়ে কিংবা এর পরিবারের কাউকেই সে বিশ্বাস করতে পারবে না। তবে রুহি কিংবা সায়মার সামনে সে প্রকাশ করলো না৷ যা করার, এবার একাই করবে।
বাসায় ফিরে সে রুহিকে নামিয়ে দিয়ে বন্ধুর জরুরি কল এসেছে বলে কোনোরকমে বুঝিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। বাসা থেকে বেশ খানিকটা দূরে এসে সে হোয়াটসঅ্যাপের সেই নাম্বারে কল করে। তবে সীম থেকে নয়, হোয়াটসঅ্যাপ থেকেই৷ সীমকলে সমস্যা হতে পারে। সায়মা শিকদারের প্রতি ওর এই মুহুর্তে বিন্দুমাত্র বিশ্বাস আসছে না। এই মহিলা যে অনেক গভীর এবং অনেক দূর অব্দি যেতে পারে-তা তার কথাবার্তা শুনলেই অনুভব করা যায়।
রিং হবার সাথে সাথেই অপর পাশ থেকে একটি পুরুষ কন্ঠস্বর ভেসে উঠলো
—ঈশান! আপনি এই মুহুর্তে কোথায় আছেন?
—কোর্টগাছা, বড় পুকুরের ধারে।
—আপনি ওখান থেকে সরাসরি আর্মি ক্যাম্পে আসবেন। সেখানে নীল চন্দন কফি হাউজ নামে একটি কফিশপ আছে। ওখানে এসে যেকোনো আর্মি অফিসারকে “মোহন চ্যাটার্জি” নাম বললেই আপনাকে চিনিয়ে দিবে। খবরদার,আমাকে কল করবেন না। কফিশপ কিংবা আর্মি ক্যাম্পে আপাতত সিম নেটওয়ার্ক কাজ করে না। গত এক সপ্তাহ ধরে বিশেষ গোপনীয় সাইবার মহড়া চলছে।
ঈশানের বেশ ভয় করতে লাগলো। এই মুহুর্তে সে আর সামনে এগোবে কি-না, সেটারই সঠিক সিদ্ধান্ত সে নিতে পারে না। কার সাথে দেখা করতে হবে, তার থেকে কী সংবাদ পাবে, কে জানে! তবে জীবনের টানপোড়েনের হিসাব চুকাতে গেলে এইটুকু রিস্ক তাকে নিতেই হবে। দ্বিধাদ্বন্দের মধ্যেই সে আর্মি ক্যাম্পে উপস্থিত হয়। কোর্টগাছা থেকে আর্মি ক্যাম্পে বাইকে পোঁছাতেই সময় লাগলো টানা দুই ঘন্টা পনেরো মিনিট। এত দূরের একজন মানুষের সাথে কী কাজ থাকতে পারে-ভাবতেই গা হিম হয়ে যাচ্ছে ওর।
কফি শপে বিশেষ ভীড় নেই। দু চারজন অফিসার কফি কিংবা নিতান্তই হালকা পাতলা ফাস্টফুড খেতে খেতে গল্প করছেন। একেবারে কোণার দিকে দুইপাশের দুটো টেবিলে দুজন অফিসার। একজনের বয়স সম্ভবত চল্লিশ কিংবা বিয়াল্লিশ। অন্যজনের সর্বোচ্চ তেত্রিশ। ঈশান সিনিয়র লোকটির কাছে যাবার সাহস পেল না। এই বয়সের আর্মি অফিসারদের দৃষ্টি থাকে তীক্ষ্ণ। তুলনামূলক অল্পবয়সী অফিসারটিই সুবিধাজনক। সে বেশ সঙ্কোচ নিয়েই তার কাছে গিয়ে সালাম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো
—এক্সকিউজ মি, এখানে মোহন চ্যাটার্জি নামে কেউ থাকেন?
কফির কাপটা ঠোঁট থেকে নামিয়ে ছেলেটা মুচকি হেসে জবাব দিলো,
—আমিই মোহন। আর আপনার জন্যই আমি অপেক্ষা করছিলাম। বসুন। এই কফিশপে দিনরাতের অনেকটা সময় কাটাই আমি।
—আপনি সত্যিই মোহন? আপনাকে বিশ্বাস করবো কীভাবে?
—বিশ্বাস? হা হা হা। বুঝেছি, সায়মা শিকদারের কুকর্মের প্রভাব আপনাকে খুব ভালো মতই গ্রাস করে ফেলেছে।
ছেলেটির জবাব শুনে ঈশানের আর বুঝতে বাকি রইলো না, ইনিই মোহন চ্যাটার্জি। আর খুব সম্ভবত এই মানুষটিও সায়মা শিকদারের প্রতারণার জালে ফেঁসেছেন। ঈশানের কিছুতেই বুঝে আসে না, এরকম একজন বুদ্ধিমান আর চটপটে মানুষ কীভাবে ওই মহিলার ফাঁদে পড়ে গেলেন। সে সামনের একটি চেয়ার টেনে বসে জিজ্ঞাসা করে,
—আপনি রুহির কত নাম্বার স্বামী?
—দুই নাম্বার।
—প্রথমজন কে?
—রোকন শাহরিয়ার। তবে লোকটার সাথে দীর্ঘ দুই বছর কোনো যোগাযোগ করতে পারিনি। শুনেছি, নতুন বউ আর পরিবার নিয়ে মালয়েশিয়া সেটেল হয়ে গেছে। এরপর আর কোনো খোঁজ রাখতে পারিনি।
—কিন্তু আপনি তো হিন্দু৷
—সে বিস্তর কাহিনী৷ একেবারে পাক্কা হিন্দু ঘরোয়া নারী সেজে আমার জীবনে এসেছিল। এত নিঁখুত অভিনয় করেছে যে,আমি টেরও পাইনি। বিয়ের ঠিক দুইদিন আগে আমাকে ডেকে নিয়ে বলেছিল,”মোহন,আমার বাবা-মা মুসলিম। আমি কোনো হিন্দু নই৷ কিন্তু হিন্দুদের পূজা পার্বন আমার এতই ভালো লাগত যে, মন্দিরে আমি লুকিয়ে পূজো দিতাম। তারপর তুমি আমার জীবনে এলে। আমি যেন আরেকটা নতুন অধ্যায় শুরু করতে পারলাম। আমি তোমাকে মিথ্যে বলে বিয়ে করতে পারবো না।”
বুঝুন অবস্থা! শয়তানের আবার নিজস্ব ধর্ম আছে নাকি? তাদের স্বার্থে যখন যে ধর্ম প্রয়োজন, সেটাই ধারণ করে। আমিও বোকার মত ওর প্রতি এতই মুগ্ধ, এতখানি ডুবে গেছিলাম, সেদিন সাত পাঁচ না ভেবেই ওকে বিয়ে করে ফেলি। ভালোবাসার কাছে সবাই অসহায়। আর তাছাড়া, বিয়ের ঠিক দেড় সপ্তাহ আগে ওর সাথে আমার ফিজিক্যাল সম্পর্কও হয়েছিল। সব মিলিয়ে…
ঈশান তাকে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করলো না৷ সে অবাক হয়ে রুহির মিথ্যে অভিনয়ের কথা ভাবছে। এই মেয়েটির মুখে কত নিষ্পাপতা! সে মোহনকে আবার জিজ্ঞাসা করে,
—এই রুহি এবং তার মায়ের আসল ব্যাপারটা কী? আর আপনিই বা এদের ফাঁদে কীভাবে পা দিলেন, কীভাবে মুক্ত হলেন?
—আপনাকে এতদূর যখন ডেকে এনেছি, তখন সবই বলবো। তার আগে রিদাফের ঘটনা জানবেন না? ওকে যে মে*রে ফেলা হয়েছে, সেটার খোঁজ নিবেন না? এর পরের টার্গেট যে আপনি, তা কী জানেন!
ঈশান মুখ কাচুমাচু করে মোহনের দিকে তাকালো। সে আশেপাশে ফিরে দেখে, সবাই ওর দিকে কেমন সন্দেহের দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। ব্যাপারটা কী হলো!
(চলবে…)
………………………
#অসমাপ্ত পর্ব:-০৪/শেষ
লেখা- Sharifa Suhasini
আপনাকে এতদূর যখন ডেকে এনেছি, তখন সবই বলবো। তার আগে রিদাফের ঘটনা জানবেন না? ওকে যে মে*রে ফেলা হয়েছে, সেটার খোঁজ নিবেন না? এর পরের টার্গেট যে আপনি, তা কী জানেন!
ঈশান মুখ কাচুমাচু করে মোহনের দিকে তাকালো। সে আশেপাশে ফিরে দেখে, সবাই ওর দিকে কেমন সন্দেহের দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। ব্যাপারটা কী হলো! কাঁপা কাঁপা কন্ঠে সে মোহনকে জিজ্ঞাসা করে,
—এরা সবাই আমার দিকে এভাবে চেয়ে আছে কেন?
—ওরা জানে, আমি বিয়ে করে প্রতারিত হয়েছিলাম। আবার সেই মেয়েকেই আপনি বিয়ে করেছেন। ব্যস, এতটুকুই।
—আমার মাথাটা কেমন আউলিয়ে যাচ্ছে। আপনি প্লিজ আমাকে বিস্তারিত সব খুলে বলুন। এদের উদ্দেশ্য কী। আর এরা এভাবে একের পর মানুষ কেন ঠকাচ্ছে? এমনকি, রিদাফকেই বা কেন আর কীভাবে মে*রে ফেলেছে!
মোহন নিজের জন্য আরেক কাপ এবং ঈশানকে এক কাপ কফি দিতে আদেশ দিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো। এক ভয়ংকর কুচক্রী মহলের গল্প বলা প্রয়োজন।
“সায়মা শিকদারের তিন মেয়ে। নিজের মেয়ে দুটো। রুহি আর তুষি। দ্বিতীয় মেয়েটা এতীম খানা থেকে দত্তক নিয়ে পুষেছে। তিনটি মেয়ের রুপই নজরকাড়ার মত। স্কুল-কলেজ জীবনে শত শত পুরুষ তাদেরকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাবার জন্য প্রহর গুনেছে। সায়মা শিকদার এবং তার স্বামী হাসীবুল শিকদার যে মেয়েটিকে দত্তক নিয়েছিল, তারও সেই সুন্দর মুখশ্রী দেখেই দত্তক নিয়েছে।
রুহির প্রথম বিয়েতে রোকন যেকোনো মূল্যেই তাকে পাবার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল। ভালো পারিবারিক ব্যবসা। বিয়েতে দেনমোহর ধরা হলো চল্লিশ লক্ষ টাকা। উচ্চবিত্ত পরিবারের জন্য এই অর্থের পরিমাণ নিছকই সামান্য। বরং এর কমে দেনমোহর দিতে রোকনের পরিবারের সম্মানেই বাধে। ঠিক এই সুযোগটাই নিয়েছিল সায়মা শিকদার ও তার চক্র। নানান বিষয়ে ঝামেলা বাধিয়ে শেষমেস রোকনের থেকে ডিভোর্স করিয়ে নেয়। সাথে দেনমোহরের চল্লিশ লক্ষ টাকা নগদ। শুধু এখানেই শেষ নয়। রুহি নানান কৌশলে তাদের পারিবারিক দুর্বলতার প্রমাণগুলোও সংগ্রহ করে রেখেছিল। যার ফলে ওরা উল্টো ব্যবস্থা কী নিবে, বরং নিজেরাই জালে ফেঁসে গেছিল। এরপর হাসীবুল শিকদার পরিবার নিয়ে বাসা পাল্টে ফেলে। রোকনের ঠিকানা থেকে বহুদূরে। মাঝখানে তুষিকেও এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে বিয়ে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় বিয়ে। সেখানেও ঝামেলা বাধানোর প্রক্রিয়া চলছিল।
এরপর সময়ের চাকায় ঘুরে এসে পড়ে মোহনের দ্বারপ্রান্তে। মোহনই প্রথম রুহির প্রেমে পড়েছিল। অমন সুন্দরী, বুদ্ধিমতী, মনোহরিনীর প্রেমে কোন পুরুষই বা পড়বে না? বিয়ের পুর্বে মোহনের সাথে উন্মাদ যৌণতায় জড়াতেও দুইবার ভাবেনি। তবে সম্পর্কের পূর্বে সেই চিরাচরিত এক মিথ্যে—”এর আগে একটি ছেলের সাথে সম্পর্ক হয়েছিল। ছেলেটি ভালোবাসার কথা বলে রুহিকে ঠকিয়েছে।”
কিন্তু সেই ঠগবাজ পুরুষটি কে, তা কখনোই প্রকাশ করেনি আর।
এরপর একইভাবে বিয়ে,এমনকি মোহনের ভালোবাসার জন্য মুসলিম থেকে হিন্দু হবার মত বিদঘুটে প্রতিশ্রুতি দিতেও ভোলেনি সে। তবে দেনমোহরের মুসলিম রীতিটাকে ঠিকই কাজে লাগিয়েছে। মোহনের থেকে বিয়ের দিনই আদায় করে নিয়েছে বত্রিশ লক্ষ টাকা। এই বিয়েটা টিকেছিল মাত্র চারমাস। এরপর একই বাহানা, একই প্যাটার্ন। ডিভোর্সের পর আবার বাসা পাল্টে ফেলা। এভাবেই চক্রাকারে চতুর্থ শিকার ঈশান।”
রুহির পরিবারের এই চক্র সম্পর্কে শোনার পর ঈশান থ মে’রে বসে রইলো। কফি ঠান্ডা হয়ে গেছে, কিন্তু এক চুমুকও মুখে দেবার ভাবনা আসেনি তার। বিয়ের আগে সে তো ভুলেই গেছিল,একটা মানুষ, একটা পরিবার কখনোই পার্ফেক্ট হয় না। একটা মেয়ে সব গুণে গুণান্বিত হয় না। ত্রুটি, একটু অগুণ নিয়েই তো নারী। সবদিক দিয়ে পার্ফেক্ট হবার ক্ষমতা তো কেবল ভন্ডদেরই আছে। তার অবাক হবার মাত্রা আরও দ্বিগুণ হলো- রিদাফের মৃত্যুর কারণ জানার পর। রিদাফ মোটামুটি বেশ ভালো ব্যবসা করতো। রুহিকে বিয়ের সময় দেনমোহরের কাবিন করেছিল সাতচল্লিশ লক্ষ টাকা। কেবলমাত্র ওর সাথেই দীর্ঘদিন সংসার করেছে রুহি। এক বছর সাড়ে তিনমাস। রিদাফের যে একেবারে ত্রুটি ছিল না, ঠিক তা নয়। পিতৃহীন ছেলেটা স্বভাবে ছিল বেশ রগচটা। কথায় কথায় রেগে যাওয়া, গায়ে হাত তোলার অভ্যাস আজন্মের। ব্যস, এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছে সায়মা শিকদার এবং তার পরিবার। এতগুলো টাকা পরিশোধ করে, রুহিকে হারিয়ে রিদাফ যেন পাগলপ্রায় অবস্থা। ব্যবসায়ও মন নেই। শেষমেস যা হবার, তাই হলো। ব্যবসা একেবারে লাটে উঠে গেল। পথের ভিখারির চেয়েও করুণ অবস্থা। শেষ সময়ে রিদাফের টনক নড়েছিল। রুহির পরিবারের উপর প্রতিশোধ নিতে প্রচুর কাঠখড় ছেলেটা পুড়িয়েছে। মোহন কিংবা রোকনকে সেই খুঁজে বের করেছিল। কিন্তু রুহির পরিবারের নাগাল পায়নি। যতদিনে পেয়েছে, ততদিনে ঈশানের সাথে বিয়ে ঠিক এবং ঈশান অব্দি পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিয়েটাও হয়ে গেল।
ঈশান পাত্রী দেখার সময় মামা পরিচয়ের যাকে দেখেছিল, মূলত সেই রুহির বাবা হাসীবুল শিকদার। রিদাফ যে ওকে সব জানিয়ে দিচ্ছে, এটা জানার পরেই হাসীবুল শিকদার এবং তার গ্যাং রিদাফকে শেষ করে দিয়েছে। সর্বশেষ আলাপ সে মোহনের সাথেই করেছিল। রিদাফ যে ঈশানের সাথে দেখা করবে, সেটাও সে মোহনকে জানিয়েছিল। আর ঠিক সেই সময়েই মানুষটাকে শেষ করে গু-ম করে দিলো।
ঈশান হতভম্ব হয়ে মোহনকে জিজ্ঞাসা করে,
—আমি যে এখানে এসেছি, ওরা কী জানে?
—আমার তরফ থেকে জানে না৷ তবে ওরা অতি চালাক, ধুরন্দর। সন্দেহ করতে পারে। ওদের পক্ষে সম্ভব নয়, এমন কাজ খুব কমই আছে।
—কিন্তু মোহন বাবু, আমি একটা ব্যাপার কিছুতেই মেলাতে পারছি না। আপনি যদি অভয় দেন, তবেই জিজ্ঞাসা করবো।
—কী ব্যাপার?
—আপনি এত ভালো পজিশনে আছেন, আপনি কীভাবে ধোকা খেলেন?
—মোহ। সবই মোহের খেলা। মোহন চ্যাটার্জি মোহে ডুবেই ধ্বংস হয়েছে ঈশান ভাই।
কফিশপ আরও ফাঁকা হতে শুরু করেছে। শপের দুপাশে নিয়নের আলো,মৃদু লাইট জ্বলজ্বল করছে। একজন আর্মি অফিসার জুনিয়র কয়েকজনকে সান্ধ্যকালীন নির্দেশনার জন্য ঘোষণা দিয়ে গেল। কিন্তু মোহন নড়লো না৷ যথেষ্ট পড়াশোনা করেই সে চাকরিতে ঢুকেছে। অল্প কয়েক বছরের ব্যবধানে অর্জন করেছে প্রোমোশন। মানুষটা হয়তো এক্ষুণি উঠে যাবে। কিন্তু ঈশানের মনের ভিতর কেমন যেন আকুপাকু করছে। মোহনকে আরও কিছু জিজ্ঞাসা করার আছে ওর। প্রশ্ন করা উচিত কি-না ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ করে জিজ্ঞেস করে বসে,
—আপনার যে পজিশন, আপনি চাইলেই তো খুব সহজে এই গ্যাংটাকে ধরতে পারতেন। এমনকি, এখনও পারেন। তবুও ছেড়ে দিচ্ছেন কেন? আর এভাবে রিদাফকেই উস্কে দিয়েই বা কেন সহযোগিতা করছিলেন?
—আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন, আমি একটা পয়েন্ট বলেছিলাম। ওরা এমন কাউকে টার্গেট করে, যারর পয়সা আছে এবং বিশেষ কোনো দুর্বলতা ওরা জানে।
—আপনার দুর্বলতা কী?
মোহন সংকোচিতভাবে চেয়ারে এগিয়ে বসলো। হয়তো উত্তর দেওয়া উচিত হবে না তার, তবে ঈশানকে বিশ্বাস করা যায়। বার কয়েক উশখুশ করতে দেখে ঈশান বাধা দিয়ে বলে,
—আপনার সমস্যা হলে থাকুক। আমার বিশেষ জোর নেই।
—না, ঠিক সেরকম কিছু নয়। আপনাকে বিশ্বাস করা যায়। আমার এই অল্প বয়সে এত সাফল্য, এত টাকার পেছনে আমার সবকিছু ভালো ছিল না। অনেক মিথ্যে বিষয় সাজিয়েও নিজে লিড দিয়ে অপারেশন করেছি। আমার পরিচয়ের সহযোগিতায় অনেক অবৈধ ব্যবসায়ীকে দুই নাম্বারি কাজ সহজ করে দিয়েছি। এজন্যই এত অল্প সময়ে গোপনে গোপনে আমার টাকার পসরা হয়েছে। এই তথ্যগুলো সবই ওরা জানে। আর বিয়ের পর তো রুহি আমার স্ত্রী হবার সুবাদে আমার সব তথ্যই পাচার করার সুযোগ পেয়ে গেছে। আমি ওদের ধরলে ওরা আমার এইসব তথ্য ফাঁস করে দেবে।
—তাহলে আমার কী দুর্বলতা ছিল?
—সেটা তো আপনিই খুঁজে বের করবেন।
ঈশান মোহনের সাথে কথা শেষ করে বাইরে বেরিয়ে আসে। সে রুহির চার নাম্বার স্বামী। আর এর পরিবার জেনেশুনেই ইচ্ছে করেই বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে রুহিকে ওর সাথে বিয়ে দিয়েছে। ঈশান ভেবে পায় না-তার দুর্বলতা কী! বহু বছর আগে কারখানায় এক শ্রমিক কাজের সময় মা*রা গেছিল। ঈশান তার পরিবারকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে মানিয়ে নিয়েছিল, যাতে অহেতুক মামলায় জড়াতে না হয়। এর বেশি আর কীইবা করার ছিল তার? মামলা মোকদ্দমা হলে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি। ওরা কী এই সত্যটা জানে? নাকি একবার কক্সবাজার বেড়াতে গিয়ে এক বান্ধবীকে নেশার ঘোরে জোরপূর্বক স্পর্শ করেছিল। সেই দূর্ঘটনার হদিস জোগাড় করেছে? সেদিন ওদের সাথে বান্ধবী মৈত্রী ছিল। কিন্তু রোশার সাথে যা ঘটেছিল, তা ঈশান এবং ওর বন্ধু ফুয়াদ ছাড়া আর কারো জানার কথা নয়। নিজের হুঁশ হতেই রোশার কাছে ঈশান বহুবার ক্ষমা চেয়েছে। মেয়েটাকে সে ধর্ষ*ণ করেনি, সত্য। কিন্তু মলেস্ট তো করেছিল। সেদিনের পর থেকে রোশা আর কখনোই ঈশানের সাথে যোগাযোগ করেনি। তবে এই খবর প্রচার হলে ঈশানের মানসম্মান আর কিছুই বাকি থাকবে না। ওরা কী এটাও জানে? নাকি র্যান্ডমলি ভিন্ন কোনো ছক কষেছে! ঈশানের কাছে এর কোনোটিরই উত্তর নেই। তবে এইটুকু ঠিক অনুধাবন করতে পারছে—
“জীবনের সামান্যতম ভুলের মাশুলও অনেক কঠিনভাবে পরিশোধ করতে হয়। আজ অন্নপ্রাসনের ভাতের সাথে করা পাপগুলোর হিসাব নিকাশও বেরিয়ে আসছে নিজের অজান্তেই। কোন ভুলের মাশুল হিসেবে শাস্তি পেতে হবে রুহির এই গ্যাংয়ের কাছে, কে জানে! তবে কাবিনের বায়ান্ন লক্ষ টাকা ঠিক আদায় করে ঈশানকে লুটেপুটে খেয়ে যাবে, এ ব্যাপারে সে নিশ্চিত। সেই দিন কবে?”
শান্ত, বিধ্বস্থ মনে ঈশান বাড়ি ফেরে৷ কলিংবেল চাপার আগেই রুহি এসে দরজা খুলে দিলো। মেয়েটির চোখেমুখে হাসি যেন ঠিকরে পড়ছে। এত খুশির কারণ কী ওর! ঈশান কখনোই তার জবাব পাবে না। পাপে ঠিক এভাবেই পাপ কাটে অন্য কোনো পাপীর হাতে। হায় জীবন! এই জীবনের এমনই কিছু গল্প এভাবেই অসমাপ্ত হয়ে পরিণামে পতিত হয় অজান্তেই!