#অন্যরকম তুমি পর্ব ২১
#তানিশা সুলতানা
“মা কাউকে ভালো লাগলে তার দিকে তাকিয়ে থাকলে সেটাকে ক্রাশ বলে। তোমার পাপাকে আমার ভালো লাগছে। তার দিকে তাকিয়ে ক্রাশ খাইছি। এবার তোমার খেতে ইচ্ছে হলে তুমি খাও।
ছোঁয়া পরির গালে হাত দিয়ে মিষ্টি হেসে বলে। পরি কি বুঝলো কে জানে?
” নাহহ তোমার ক্রাশ তুমিই খাও।
পরি আবার গেমস খেলা শুরু করে।
সাদি ছোঁয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
“স্যার আসবো?
সিমি দরজায় নক করে রিনরিনিয়ে বলে।
সাদি ল্যাপটপে মগ্ন ছিলো। সিমির কথা শুনে ল্যাপটপ থেকে চোখ ফিরিয়ে এক পলক সিমির দিকে তাকায়।
” হুমম এসো।
সিমি গুটিগুটি পায়ে এসে খাটের সাইডে দাঁড়ায়। পরি সিমিকে দেখে এক লাফে সিমির কোলে ওঠে।
“ছোঁয়ার কি শরীর খারাপ?
ছোঁয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে সিমি।
” হুমম জ্বর হয়েছে। এখন মাথা ব্যাথা করছে।
“আপনি কাজ করেন। আমি ছোঁয়াকে নিয়ে যাই? আজকের রাতটা আমার কাছে থাকলে কোনো পবলেম হবে কি?
সাদি ছোঁয়ার মাথা থেকে হাত সরিয়ে নেয়। ল্যাপটপ নিয়ে নেমে যায় খাট থেকে।
” সবে ঘুমিয়েছে। ওকে ডাকতে হবে না। তোমরা এখানে থাকো। আমি অন্য রুমে যাচ্ছি।
সাদি ল্যাপটপের চার্জার নিয়ে বেরিয়ে যায়। সাদি যেতেই সিমি মুচকি হেসে পরির কপালে চুমু খায়।
“তোমাকে এতগুলো মিস করেছি।
দুই হাত প্রসারিত করে বলে পরি।
” আমিও তো আমার মা কে এতগুলা মিস করেছি।
সিমি পরির নাক টেনে দিয়ে বলে।
“আমার সোনা টার খিধে পেয়েছে নাহহ?
পরিকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলে সিমি।
” পাপা খাইয়ে দিয়েছে আমাকে আর মাম্মাকে।
“ওহহ
আজকে ছোঁয়ার মনটা খুব ফুরফুরে। কেনো জানি খুব ভালো লাগছে।
সকাল সকাল উঠেপড়ে লেগেছে রান্না শিখবে বলে।
এখনো কেউ ওঠে নি। রাতে সিমির কাছেই ঘুমিয়েছে ছোঁয়া।
ফজরের নামাজ পড়েই কিচেনে চলে গেছে।
আগে কখনো রান্না করা হয় নি। আজকেই প্রথম বার।
কিন্তু কি রান্না করবে?
কিচেনের মাঝখানে গালে হাত দিয়ে কিছুখন বসে ভাবতে থাকে ছোঁয়া।
অবশেষে শাশুড়ীর কথা মাথায় আসে। শাশুড়ীর থেকে হেল্প নিলে মন্দ হয় না।
চট করে ফোন করে শাশুড়ীকে।
সাবিনা বেগম যেনো ছোঁয়ার ফোনের অপেক্ষায়ই ছিলো। রিং হওয়ার সাথে সাথে রিসিভ করে।
“শাশুড়ী কেমন আছেন?
এক গাল হেসে বলে ছোঁয়া।
” হুমম ভালো তুমি?
“আপনার ছেলের জন্য রান্না করবো ভাবছিলাম। তো কি রান্না করবো? আর কিভাবে?
” নুডলস রান্না করো।
“কি করে করে?
” ভিডিও কল দাও। আমি বলে দিচ্ছি।
ছোঁয়া শাশুড়ীকে ভিডিও কল দেয়। তারপর রান্না করায় লেগে পড়ে। সাবিনা বেগম যেভাবে যেভাবে বলে দেয় ছোঁয়া ঠিক সেভাবেই রান্না করে।
রান্না শেষ করে লম্বা দম নেয় ছোঁয়া। যাহহ বাবা রান্না করার মতো একটা কঠিন কাজ সম্পূর্ণ করলো।
“এখানে কি করছো?
সাদির প্রশ্নে হকচকিয়ে যায় ছোঁয়া। এই মুহুর্তে ওনাকে আশা করে নি৷ তাই একটু ভয় পায়। পেছনে ফিরে সাদির মুখটা দেখে মুচকি হাসে ছোঁয়া।
” আপনার কিছু লাগবে?
ছোঁয়া সাদির দিকে একটু এগিয়ে এসে বলে।
“নাহহহ। আমি নিজের কাজ নিজে করতে পছন্দ করি।
সাদি ফ্রীজ থেকে পানির বোতল বের করতে করতে বলে।
” তবুও কিছু লাগলে আমাকে বলবেন।
মাথা নিচু করে বলে ছোঁয়া। সাদি ভ্রু কুচকে ছোঁয়ার দিকে তাকায়। হঠাৎ পাল্টি খেলো কি করে?
“লিসেন
তোমাকে মেবি মা বা তোমার বোন বলেছে এসব বলতে। আমার এসব ভালো লাগে না।
বোতলের ছিপি খুলে এক ঢোক পানি খেয়ে বলে সাদি।
“আচ্ছা
আমি নুডলস রান্না করেছি। একটু খেয়ে দেখবেন?
সাদি এবার বিরক্ত হয়ে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে।
” সাট আপ ওকে।
তোমার না শরীর খারাপ?
যাও এখান থেকে।
ধমক দিয়ে বলে সাদি। ছোঁয়া নাক ফুলায়।
“ধমক দিয়েন সমস্যা নেই। কিন্তু থাপ্পড় দিবেন না বলে দিলাম।
” এখান থেকে না গেলে থাপ্পড়ও দেবো।
ছোঁয়া সাদিকে ভেংচি কেটে চলে যায়৷ ভেবেছিলো লোকটার সাথে ভাব জমাবে। তারপর ফুলের টব কিনে দিতে বলবে। কিন্তু এই এইরকম বজ্জাত লোকের সাথে ভাব জমানো যায়? কখনো সম্ভব?
সাদি ঢাকনা খুলে নুডলসটা দেখে। দেখতে বেশ ভালো হয়েছে। খাবার টেবিলে সেটা রেখে রান্না করায় লেগে পড়ে।
এক প্যাকেট নুডলস দিয়ে তো আর সবার ব্রেকফাস্ট হবে না।
রান্না শেষ করে সাদি রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। সিমি আছে রুমে। কি করে ঢুকবে? জামাকাপড়ও তো এই রুমেই। কি করবে ভাবছে?
“আপনার জামাকাপড় আমি ওই রুমে দিয়ে এসেছি।
ছোঁয়া রুম থেকে বের হতেই দেখে সাদি পায়চারি করছে। তখনই বলে।
” তোমাকে পাকনামি করতে কে বলেছে?
কপাট রাগ দেখিয়ে বলে সাদি।
ছোঁয়ার হাসি মুখটা চুপসে যায়। মাথা নিচু করে ফেলে। সাদি ফোঁস করে শ্বাস টানে। বাম হাত দিয়ে মাথার পেছনের আংশ চুলকে নেয়।
“রেডি হয়ে নাও।
” আমি তো আপির সাথে যাবো না।
ছোঁয়া মিনমিনিয়ে বলে।
সাদি চোখ ছোটছোট করে তাকায় ছোঁয়ার দিকে।
“স্কুলে ভর্তি করাতে নিয়ে যাবো ইডিয়েট
দাঁতে দাঁত চেপে বলে চলে যায় সাদি। ছোঁয়া সাদির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটে।
” কথাটা কি ভালো ভাবে বলা যেতো না? করলার জুস একটা। ইচ্ছে করে এক ঘুসিতে নাকটা ফাটিয়ে দেই।
ছোঁয়া বিরবির করতে করতে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। আজকে প্রথম বার সাদির সাথে বের হবে। ভাবতেই হাত পা ঝিনঝিন করে ওঠে ছোঁয়ার।
খুব ভালো ঘুম হয়েছে সিমির। তিন বছর পরে আজকে শান্তিতে ঘুমলো। জানালার কাঁচ ভেদ করে এক টুকরো রোদ্দুর এসে ভর করে সিমির চোখে মুখে। পিটপিট করে চোখ খুলে। বুকের ওপর ভারি কিছু অনুভব করতেই মুচকি হাসি ফুটে ওঠে সিমির অধর কোনে। দুই হাতে আরও একটু নিবিড় ভাবে জড়িয়ে নেয় পরিকে।
বড্ড আফসোস হচ্ছে। ইসস কেনো যে পরির ছোট বেলাটা অনুভব করতে পারলো না।
সিফাত সারা রাত নির্ঘুম কাটিয়েছে। পরিকে ছাড়া কখনোই ঘুম হয় না ওর। লুকিয়ে লুকিয়ে দশ বার দেখে গেছে পরিকে।
এটা অবশ্য ছোঁয়া জানে।
ছোঁয়া কালো জর্জেট থ্রি পিছ পড়েছে। ফর্সা গায়ে কালো রংটা বেশ মানিয়েছে।
ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছছে ছোঁয়া।
“আপি উঠো না। পরির খিধে পেয়েছে তো।
এই নিয়ে পাঁচবার ডাকলো ছোঁয়া। কিন্তু সিমির কোনো সারা নেই। বিরক্ত হয় ছোঁয়া। আজকে হঠাৎ এতো ঘুম আসলো কোথা থেকে?
সিমি পরিকে বালিশে শুয়িয়ে আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে। লম্বা হামি দেয়।
” কোথাও যাবি?
ছোঁয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে।
“হুমম স্কুলে ভর্তি হতে যাবো।
চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে বলে ছোঁয়া।
” একা?
“নাহহহ হনুমানটার সাথে যাচ্ছি।
” আচ্ছা সাবধানে যাবি। স্যারের সব কথা শুনবি। কেমন?
আচ্ছা
ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক আর চোখে মোটা করে কাজল টেনে ঘুমন্ত পরির কপালে চুমু দিয়ে বেরিয়ে যায় ছোঁয়া।
সাদি অফিসের জন্য রেডি হয়ে খেতে বসে গেছে। ছোঁয়াও গিয়ে সাদির পাশে বসে পড়ে।
সাদি ছোঁয়ার রান্না করা নুডলস খাচ্ছে না বলে মন খারাপ হয়ে যায় ছোঁয়ার। সাথে রাগও হয়। নুডলসের বাটিটা নিয়ে বেসিনে ভিজিয়ে রাখে ছোঁয়া।
সাদি সেদিকে তাকায়ও না। এক মনে ফোন দেখছে আর খাচ্ছে।
ছোঁয়া খায় না। দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মনে মনে পণ করে ওই লোকের রান্না করা খাবার খাবে না।
সাদি খাওয়া শেষ করে অফিসের ব্যাগ কাঁধে চাপিয়ে ছোঁয়ার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
“চলো
বলে আগে আগে বেরিয়ে যায়। ছোঁয়া রাগে গজগজ করতে করতে পেছনে হাঁটতে থাকে।
চলবে…………..