ভাবীর সংসার সিজন ২ পর্ব ১
পলির বড় একা লাগছে আজ, দুই ছেলে বাসায় নেই। দুইজনেরই পরীক্ষা আজ, তাই গতকাল দুজনেই হল চলে গিয়েছে। আবিদ তার মতো ব্যস্ত সময় পার করছে, এইবার স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পেয়েছে। তাই সহজে ছুটি পায়না! পলির এখন খুব একা লাগে সারাদিন!
কলিংবেলের শব্দ পেয়ে পলি বিছানা ছেড়ে উঠেছে, দরজা খোলার আগে জিজ্ঞেস করলো কে?
– আমি তামিম!
— খুলছি!
পলি হা করে দেখছে দুই ভাই একটা বড় বক্স নিয়ে দাঁড়িয়ে বলছে হ্যাপি বার্থ ডে আম্মু!
পলির চোখের কোনে আনন্দ অশ্রু চিকচিক করছে। ছেলেদের এমন কান্ডে সে প্রতিবছর এক বার করে খুশি হয়। প্রতি বছর সাত জানুয়ারি ছেলেরা মাকে সারপ্রাইজ করে। ছেলেরা বড় হওয়ার পরে, পলির জন্মদিন পালন শুরু হয়েছে। তবে, আজ যে সাত জানুয়ারি, তার জন্মদিন, এটা তার একদম মনে নেই, কারণ প্রতি বছর রাতের বেলা ছেলেরাই মাকে আগে সারপ্রাইজ দেয়। এবার ছেলেরা বাসায় না থাকায় একদম মনে নেই পলির।
পলি বললো তোরা যে বললি, তোদের পরীক্ষা এজন্য হলে যাচ্ছিস। তবে এই ভর দুপুর বেলা, দুজনে হাজির হয়ে গেলি কি করে?
– আরে না! পরীক্ষা না, তুমি তো সারপ্রাইজ প্ল্যান করলেই প্রতি বার বুঝে নাও। এজন্য এই বার তালহা এই প্ল্যান দিল। আমরা হলে চলে গেলে, তুমি বুঝবেনা,!
তালহা বললো এই বার তুই থাম, আম্মু গিফট খুলো আগে!
– কত্ত প্ল্যান করা শিখে গিয়েছিস তোরা!
পলি গিফট খুলে হা করে বসে আছে। সে ভেবেছিল বড় বক্সে হয়তো কেক ফুল সাথে গিফট আছে। কিন্তু একদম মাইক্রো ওভেন নিয়ে বাসায় ফিরবে দুইভাই সেটা একদিম ভাবে নি সে!
পলি বললো এতো টাকা কোথায় পেলি?
– দুই ভাইয়ের স্কলারশিপের টাকা গত কাল পেলাম, সাথে এড করলাম দুইজনের টিউশনির টাকা।
– তোদের পকেট খরচের জন্য টিউশনি করিস, এই টাকা কেন খরচ করলি?
– পাছন্দ হয়েছে নাকি?
– খুব পছন্দ হয়েছে। কিন্তু এতো টাকা নষ্ট করা ঠিক হয়নি।
তালহা বললো, খালামনির বাসায় গিয়ে যে, বার বার ওভেন খুলে দেখছিলে, আমরা দুজনেই খেয়াল করেছি। কিন্তু সাহস করতে পারিনি। কিন্তু হুট করে স্কলারশিপের টাকা পেয়েই দুজন প্ল্যান করে ফেলি। টাকা নষ্ট হয়নি, ভালো কাজে লেগেছে।
তামিক বললো হয়েছে, অনেক কথা। এখন ইউটিউব দেখে নাশতা বানিয়ে দাও, আমরা বসে বসে খাই।
– আচ্ছা বানিয়ে দিব।
পলি উঠে গিয়ে এক সাথে দুই ছেলেকে ধরে আদর করছে। আহা! এই জীবনে এর চেয়ে বেশি খুশির মুহুর্ত আর কি আছে! ছেলেরা মাকে এতো খেয়াল করে দেখে, ভাবে। সত্যিই একটা ওভেনের শখ ছিল তার, কিন্তু এতো টাকা দিয়ে কেনা সম্ভব ছিল না! ছেলেদের মায়ের জন্য এতো ঠান আছে, এটা ভেবেই বার বার মন থেকে দোয়া আসছে আজ! সাথে অনেক বেশি গর্ব হচ্ছে, ছেলেদের জন্য!
কলি খবর শোনার পর থেকে বার বার বলছে আমার স্বর্ণের টুকরো ভাগ্না এরা! আপা রে, তুই সবচেয়ে সুখি। জলিপার ছেলেটার যদি এখন একটা চাকরি হয়, তবেই তার একটু শান্তি আসবে।
– কোন রকমে একটা চাকরি হলেই যেমন জলিপার একটু সুখ হতো! আমাদের ঢাকায় ফ্ল্যাট আছে সত্য, কিন্তু আবিদের বেতনেই সব চলে। এখন টিউশনি করাতে পারেনা! একা থাকে। বলতে গেলে চারটা সংসার! ও থাকে মেসে, তামিমের তো মেডিকেলে থাকতেই হয়, তালহার ও সপ্তাহে দুদিন হলে থাকতে হয়, সকাল আট্টায় ক্লাশ থাকে। আবার আমি বাসায় থাকি! কত খরচ, এদের টিউশনিতে পকেট খরচ হয়, কিন্তু বড় খরচ গুলি বাপের দিতে হয়। শ্বশুরের দেওয়া ফ্ল্যাট না পেলে ঢাকা শহরে বাড়ী করার স্বপ্ন ও ছিল না!
আল্লাহর রহমতে ভালো ভাবে শান্তিতে আছি এটাই শান্তি কিন্তু জলিপা বা শাহিদ কে বেশি কিছু করতে পারিনা খারাপ লাগে!
দোয়া কর ছেলে দুটি যেন ঠিকঠাক করে পড়াশোনা শেষ করে। ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পরে, এই দুইজন কে হয়তো একটু দেখতে পারবো!
– ইনশাআল্লাহ। আমিও চেষ্টা করি, কিন্তু সব সময় পারিনা রে আপা!
সাঈদ শ্বশুরবাড়ীতে বেড়াতে গিয়েছে শারমিন কে নিয়ে, প্রকান্ড বড় বাড়িতে সাহেদা বেগম একা থাকেন। সাহেদা বেগমের হাঁটা চলায় কষ্ট, একা একা একদম চলতে পারেন না! দুইজন কাজের মহিলা কুসুম ও চান্দ আলীর মাকে নিয়ে বাড়ীতে থাকেন। আইরিন তারিনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তারা আসতেই পারেনা, তারিনের পাশাপাশি বিয়ে হয়েছে কিন্তু সে চাকরি নিয়ে ব্যস্ত। শারমিন মাঝে মাঝে গিয়ে মাকে সময় দেন।
সাঈদের বয়স হয়েছে, ইদানীং প্রেশার খুব উঠানামা করে। ছেলে দুটি বাড়ীর বাইরে, এজন্য সময় কাটেনা। এখন প্রায়ই ইচ্ছা করেন মায়ের সাথে সময় কাটাবেন। প্রতিদিনই দুই বার করে মাকে ফোন দেন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে অনেক কিছুর পরিবর্তন এসেছে। রাহেলা বেগমের বয়স হলেও তিনি চলাফেরা করতে পারেন। কিন্তু শারমিনের শ্বশুর বাড়ীতে যেতে ভালো লাগেনা, তাই তিনি খুব একটা যেতে পারেন না। মাঝে মাঝে গাড়ী নিয়ে নিজে ঘুরে আসেন।
বাগানে হাঁটছিলেন সাঈদ, হাতে পেপার, ভাবছেন বসে পড়বেন। বয়স ষাট হওয়ায় চোখের পাওয়ারের যেমন সমস্যা হয়েছে, তেমনি শরীর একে বারেই দূর্বল হয়ে গিয়েছে, ডায়াবেটিস আর হাই প্রেশারে অবস্থা বেগতিক। অবসর জীবন বিরক্তিতে ভরে গিয়েছে।
কুসুম চায়ের কাপ দিতে এসে দেখে, বাগানে পড়ে আছেন সাঈদ, মাথার এক পাশে রক্ত পড়ছে, সম্ভবত মাথা ফেটে ফিয়েছে। এবং অজ্ঞান হয়ে গিয়েছেন। সে চিৎকার করে সবাইকে ডাকা শুরু করেছে।
শারমিন চিৎকার শুনে পাগলের মতো দৌড়ে এসেছেন, কিন্তু তিনি এসে দিশেহারা হয়ে গিয়েছেন। মাটি থেকে তাকে তুলতেও পারছেন না। দিশেহারা হয়ে ড্রাইভার কে কল দিচ্ছেন, কি করবেন না করবেন, মাথা কাজ করছেনা তার!
রাহেলা বেগম জাহিদ কে সকালে বলছেন আজ আমার কেমন যেন অস্থির লাগছে বাবা?
– প্রেশার ঠিক আছে?
– ঔষুধ খেয়েছি। ঠিক আছে, মনে শান্তি পাচ্ছিনা!
– ডাক্তারে যাবে?
– না বাবা! ডাক্তার লাগবেনা। আল্লাহ ভালো রেখেছেন, কিন্তু মনে খুব অশান্তি লাগছে।
নাহিদ রাত আট্টায় খবর পেল, সাঈদকে স্থানীয় হাসপাতালে রাখেনি, এখনঢাকার পথে আসছেন আছেন শারমিন। সাথে ড্রাইভার আর তারিনের জামাই, সুহেব।
ঘুমের কড়া ঔষুধ দেওয়া হয়েছে গারীতে তিনি ঘুমাচ্ছেন। নাহিদের প্রচন্ড রাগ লাগছে, ভাইজানের শরীর সকালে খারাপ হলো, এতো কিছু হয়ে গেল অথচ এখন রাতে জানানো হচ্ছে! মনের অজান্তেই চোখে পানি এসে গিয়েছে। নাহিদ শুধু বলছে, আল্লাহ আমার ভাইজান কে সকল কিছুর বিনময়েও ফিরিয়ে দাও আল্লাহ! নাহিদের কান্না এসে গিয়েছে, এই কথা বলতে গিয়ে। এটাই হচ্ছে রক্তের টান! যতই কষ্ট থাকুক মনে, ভাইয়ের কষ্টে ভেতর সবার আগে, ভাইয়ের পুড়ে!
সব ভাই-বোন কল দিয়ে শুধু কান্নাকাটি করছেন, কিন্তু রাহেলা বেগম কে কিছুর জানানো হয়নি। তিনি শুধু বলছেন সাঈদ আজ একবার ও কল দিল না! কি হয়েছে তার? একবার কল দিলাম, বউ বললো ঘুমে। এখন রাত নয়টা বাজে এখনো কল দিল না! শরীর খারাপ করে নি তো আবার! শাহিদের বউ বলছে, না না আম্মা ভাইজান ভালো আছেন।
সবাই মিলে চিন্তায় অস্থির হয়েছে, কি হলো সাঈদের? তিনি আবার ফিরবেন তো সবার মাঝে? সবাই খুব করে দোয়া করছে ভাইজানের জন্য! শারমিন্ন পরিষ্কার করে কিছুই বলছেনা, এজন্য চিন্তা আরোও বেশি হচ্ছে সবার। জাহিদ-শাহিদ ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হয়ে গিয়েছে। ভাইজান সুস্থ হবেন এই দোয়া সবার…….
চলবে……
আন্নামা চৌধুরী
ভাবির সংসার সিজন ২ সম্পূর্ণ গল্পের লিংক একসাথে
https://kobitor.com/category/uponnaslink/vabirsongsar/
বি.দ্র: আপনাদের সবার প্রিয় গল্প #ভাবির_সংসার নিয়ে আবারো ফিরলাম। সবার ভালবাসা পেলে লিখে যাবো।
আরেকটা কথা, অনেকেই আমার গল্প অন্য গ্রুপে কপি করে দেন, তাদের কে বলবো একটু জানিয়ে দিবেন।
আর কেউ কেউ নিজের নামে চালিয়ে দিচ্ছি, বিভিন্ন পেইজে! তাদের প্রতি অনুরোধ এই কাজ করবেন না। একজনের লেখা চুরি করা, কোন ভালো কাজ নয়। এতে করে নিজের প্রতিভা নষ্ট করছেন।
ধন্যবাদ, পাশে থাকবেন।