ভাবীর সংসার সিজন ২ পর্ব ২
চার বার রিং হওয়ার পরে ও , ডা. নাহিয়ান কবির ফোন তুললো না! নাহিদের বেশ চিন্তা হচ্ছে ভাইজানের জন্য! কিন্তু এই মুহুর্তে ঢাকা যাওয়া সম্ভব না৷ নিউরো সাইন্স ইন্সটিটিউটে সাঈদ কে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে!
নাহিদের ফোনে রিং হতেই নাহিদ দেখলো, জাহিদের কল। নাহিদ সাথে সাথেই রিসিভ করলো!
নাহিদ,
– হ্যা মেজ ভাই বলো..
– কিরে! তুই না বললি নাহিয়ান কে কল দিবি, দে তাড়াতাড়ি। ভাইজানের গাড়ী গাবতলি ক্রস করেছে।
– কল দিয়েছি, ও বললো ফোন দিচ্ছে!
– এরা অনেক ব্যস্ত, এদের কি ফোন ধরার সময় আছে।
– না, না। নাহিয়ান অন্য রকম মানুষ। আচ্ছা, কল কেটে দাও, নাহিয়ান ব্যাক করেছে।
– হ্যা।
নাহিয়ান আমি নাহিদ কেমন আছিস?
– আরে দোস্ত, তোর নাম্বার সেইভ আছে। বল ব্যাটা কি খবর?
– তুই এখন কোথায়?
– এখন, হাসপাতালেই আছি, তবে এখন বাসায় চলে যাবো। আজ দুটি ওটি ছিল তাই এতো রাত হয়েছে, নয়তো ১১ টার ভিতরে চলে যাই।
নাহিদ, পুরো ঘটনা নাহিয়ান কে বুঝিয়ে বললো! এখন কি করা যাবে?
– এখন উনারা কোথায় আছে?
– গাবতলি ক্রস করেছে।
– সকালের ঘটনা, এতো দেরী কেন?
– লোকাল ট্রিটমেন্ট করেছিল দোস্ত।
– আমি সব কিছু দেখছি, তুই জাহিদ ভাইয়ের নাম্বার দেয়, আমি সব ঠিকঠাক করছি।
– অনেক ধন্যবাদ দোস্ত! আমি পড়শু আসবো! ছুটি পাচ্ছিনা!
– আয়, আস্তে ধীরে, দেখি আগে কি হয়। আমরা আছি। এখন রাখছি!
– হ্যা।
নাহিদের এতো ভালো লাগছে, নাহিয়ান সেই ইন্টারমিডিয়েট এর বন্ধু ছিল। এখন একজন নিউরো সার্জন। বড় ডাক্তার, অথচ কত আন্তরিক।
রাতেই সাঈদ কে ভর্তি করা হলো, নাহিয়ান সহ আরও দুইজন ডাক্তার দেখে বলছেন, টেস্টের রিপোর্ট না দেখে কিছু বলতে পারবেন না! তবে উনি খুবই দূর্বল!
নাহিয়ান জাহিদের সাথে বাইরে বের হয়ে বললো, উনার মাথার পিছনে হালকা ফেটে যাওয়ায়, সেখানকার ডাক্তার দুটি স্টিচ দিয়েছে। আর ঘুমের কড়া ডোজের ঔষুধ দেওয়া, এজন্য এরকম নিস্তেজ হয়ে ঘুমাচ্ছেন। বিপি এখন ঠিক আছে, তবে স্ট্রোক করেছেন কিনা? কিংবা অন্য কিছু হয়েছে কি না! দেখতে হবে। আজ রাতে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে থাকুন। সকালে, সিটিস্ক্যান, আর ইসিজি আমরা দেখি! আর রিপোর্ট ভালো না আসলে, এম.আর.আই করবো।
– ভয়ের কিছু নেইতো!
– ভাই, কি হয়েছে এখনো শিওর না! তবে, এখন উনি ভালো আছেন।
– অনেক ধন্যবাদ ভাই। অনেক কষ্ট দিলাম।
– নাহিদের ভাই, মানে আমার ও ভাই। আর যেকোনো প্রয়োজনে কল দিবেন। আসছি!
শারমিন বেশ রাগ করে বলছেন, সে কে? এতো কথা বলছে? এম.বি.বি.এস ডাক্তার কি বুঝে?
– ও এম.বি.বি.এস না শুধু, নিউরোলজির সার্জন।
– তা, যাই হউক, বড় ডাক্তারের সাথে কথা বলো।
– ভাইজান পড়লেন কি করে?
– আমি কি করে বলবো জাহিদ। আমি ঘরে ছিলাম।
– বাইরে অপেক্ষা করতে হবে ভাবী। বসেন, তারিনের হাজবেন্ড কোথায়?
– আছে, নিচে। তুমি একটা কেবিন নাও!
– কেবিন কি রোগী ছাড়া দিবে? ভাইজান কে এখানে রেখে, কেবিনে থাকাও যাবেনা।
– আমি এখানে বসে রাত কাটাতে পারবো না! আমার বড় মামীর বাসা পাশে, আমি তারিনের হাজবেন্ড কে নিয়ে চলে যাচ্ছি! সকালে আসবো। তুমি থাকো, তোমার ভাইয়ের কাছে।
এরমধ্যে পলি তার ছেলে তামিম কে নিয়ে হাসপাতালে এসেছে। চোখ ভেজা, জাহিদের কাছে এসে বলছে, ভাইজান কি করছেন মেজ ভাই?
– এখন সি.সি.ইউ এর ভিতরে। ডাক্তার বললেন এখন ভালো আছেন।
– রক নজর দেখা যাবে এখন, আমার খইব অস্থির লাগছে।
– ভিজিটিং আওয়ার ছাড়া দেখা করা যাবেনা।
– খবর পেয়ে অনেক নফল নামায পড়ে দোয়া করেছি।আল্লাহ আমার ভাইজান রে ফেরত যেন দেন! এখন সত্যি ভালো আছেন তো ভাইজান?
– ভালো আছেন। তুই এতো রাতে কিভাবে আসলি?
– তোমারে ফোন দিলাম, তুমি ফোন ধরলেনা। কোথায় ভাইজান কিছুই জানিনা। পরে নাহিদের কাছে খবর নিয়ে ১২ টার দিকে রওনা হলাম। কত দূর আমার বাসা, ভয় লাগে, তাই রিকশা দিয়ে এসেছি, দেরী হয়েছে।
– সবাই ফোন দিচ্ছে। হয়তো তোর ফোন খেয়াল করিনি। শাহিদ, কলি, পলিপা সবাই কল দিচ্ছে।
পলি ভাবীর কাছে এসে বললো, ভাবী কেমন করে পরলেন ভাইজান?
– তোমাদের কথায় মনে হয়, আমি ধাক্কা দিয়ে ফেলেছি।
– কি যে বলেন! সেটা বলিনি। ভাবলাম, সামনে ছিলেন কি না! কিভাবে পরেছেব, দেখেছেন।
– না, আমি ভেতরে ছিলাম, আম্মার সাথে।
– রাত আট্টায় জানালেন, অথচ ঘটনা সকালের।
– পলি, সকাল থেকে কত দৌড় দিয়েছি জানো! তোমাদের জানালে কি হতো! তোমরা কি করতে? অযথা প্রশ্ন কর কেন?
জাহিদ আস্তে করে পলিকে বললো এই তুই এদিকে আয়!
-কি।
– ভাবীর মেজাজ তুই জানিস না! আর প্রশ্ন করবিনা! আল্লাহর কাছে শুধু দোয়া কর।
-এরকম করছে কেন ভাবী?
– বাদ দেয়।
– কলি কান্নাকাটি করতে করতে প্রেশার লো করে ফেলেছে জুয়েল বললো। আল্লাহ আমার ভাইজান কে সুস্থ করে দিন, আর কিছু চাওয়ার নেই।
শারমিন জাহিদের কাছে এসে বললেন, এই নাও টাকা, যা লাগে প্রয়োজনে খরচ কর! আমি বাসায় যাচ্ছি। তোমরা দুইজন থাকো!
– টাকা থাক ভাবী, আমার কাছে আছে।
– লাগলে কল দিও।
– জি।
পলি হা করে দেখছে, ভাবী এতো নিষ্টুরের মতো ঘুমের জন্য চলে যাচ্ছেন,উনি কি কোন দিন ও ঠিক হবেন না!
শারমিন চলে যাওয়ার পর, পলি আর জাহিদ বাইরে চেয়ারে বসে রইলো। তামিম বললো আম্মু, তুমি কি রাতে থাকবে?
– হ্যা। ভাইজান কে না দেখে যাই কি করে?
– আমার কাল নয়টায় ক্লাস!
– সকাল হলে, বাসায় চলে যাস। সেখান থেকে কলেজে।
– এইখান থেকে বাসায় গিয়ে কলেজে যাবো!
– আমার ভাইকে না দেখে, আমি কিভাবে যাবো?
– তাহলে, এইখান থেকে আমি কলেজ যাবো। তুমি বড় মামার কাছে থাকো!
– আচ্ছা! তাই হবে।
পরের দিন সকালে, সাঈদের ঘুম ভেঙে যাওয়ার পর, জাহিদ কে ডাকা হলো, জাহিদ কাছে যেতেই সাঈদ বললেন শারমিন কি করছে রে?
– ভাবী, মামার বাসায় গিয়েছে।
– ভালো হয়েছে।
– ভাইজান আপনার এখন কেমন লাগছে?
– মাথা টা প্রচন্ড ব্যাথা করছে।
– পড়লেন কিভাবে?
– পত্রিকা পড়ছিলাম বাগানে দাঁড়িয়ে, হঠাৎ মাথাটা ঝিম করে উঠলো, আর বলতে পারিনা।
– পলিও এসেছে, আপনাকে দেখতে!
– আচ্ছা! আমার আবার ঘুম লাগছে, একটু ঘুমাই!
শারমিন দুপুর ১২ টার দিকে আসলো এর মধ্যে সাঈদের টেস্ট হয়েছে সব,জাহিদ-পলি সাথেই ছিল। ডাক্তার দেখেও গিয়েছেন। বলেছেন বিকালে রিপোর্ট দেখে জানাবেন কি অবস্থা! এখন এভাবেই মনিটরিং অবস্থায় রাখতে হবে।
পলি বার বার বলছে, ভাইজান কেমন যেন শুকিয়ে গিয়েছেন। সকালে, হালকা কি খাবার দিয়েছে। মুঝটা কেমন কালো হয়ে গিয়েছে।
জাহিদ বললো ভাবী, আপনি থাকেন, আমি পলিকে ওর বাসায় দিয়ে আসি। রাতে এসেছে। আমিও একটু ফ্রেশ হয়ে আসি। আর খাওয়ার সময় ডাকবে, আপনি যাবেন। আমি তিন টার ভিতরে আসছি! শাহিদ ও রওনা হয়েছে, চলে আসবে। বাসা অনেক দূরে, যেতে আসতেই আড়াই ঘন্টা লেগে যাবে। আমি তাড়াতাড়ি ফিরবো।
– পলি কে একা বাসায় যেতে পারেনা? ঢাকা শহরে কি জন্য থাকে। তুমি আমাকে রেখে চলে যাবে।
– এখন ও কিভাবে যাবে?
– আমিও একা এসেছি। মামার ড্রাইভার নামিয়ে দিয়ে গেল।
– ড্রাউভার কি আছেন? তবে, ওকে নামিয়ে দিয়ে যেতো।
– কি যে বলো জাহিদ! ওরা কি আমার প্রাইভেট ড্রাইভার, যে আমার ননদ কে তার বাসায় নামিয়ে দিবে।
পলি বললো আমি যাচ্ছিনা বাসায়। তালহা কে বলছি, ও হল থেকে এসে যেন আনাকে নিয়ে যায়, ভাবী আপনি চিন্তা মুক্ত থাকেন।
জাহিদ এক পাশে গিয়ে পলিকে বললো, ভাইজান জ্ঞান ফিরে আগে,বউয়ের খোঁজ নিলেন, এতো ভালবাসা, অথচ ভাবীকে দেখ, কেমন দায়সাড়া ভাব!
– বাদ দেয়। তালহা এতো দূর থেকে আসবে?
– আসবে। সমস্যা নাই। আর শাহিদ আসলে, ওর সাথে যাবি।
– ও কাল ও আসতে চেয়েছিল। আসতে পারেনি। এখন সকালে বললো রওনা হচ্ছে, এখন জানিনা।
– ও আর নাহিদ ভাবীকে একদম দেখতেই পারেনা৷ কষ্ট ভুলতে পারেনা। ভাইজানের টানেই আসবে, দেখবে!
– হ্যা, তাই।
– ভাইজান এমন নিস্তেজ হলেন কেন মেজ ভাই? খুব কষ্ট হচ্ছে বোধ হয়!
– আল্লাহ জানেন ভালো। আমি যোহরের নামায পড়ে আসি। তুই থাক ভাবীর সাথে।
– আচ্ছা!
জাহিদ নামায শেষ করে, হাউমাউ করে আল্লাহর কাছে ভাইজানের জন্য দোয়া করছে, আল্লাহ যেন তাকে ফিরিয়ে দেন। আগের সকল দু:খ ভুলে গিয়েছে সে, কোন কষ্ট নেই আর। আল্লাহ যেন শুধু ভাইজান কে ফিরিয়ে দেন।
চলবে….
আন্নামা চৌধুরী
–