ভাবীর সংসার ৪৪ তম পর্ব
জাহিদ কলিকে নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে বাসায় ফিরছে, রাহেলা বেগম ঘরবাড়ি ঠিকঠাক মতো পরিষ্কার করছেন। নাহিদ মাকে সাহায্য করছে। আগামীকাল কলিকে দেখতে আসবে ছেলেপক্ষ।
রাহেলা বেগম নাহিদ কে বললেন, এই নাহিদ সাঈদের বাসায় কলিকে দেখালে কেমন হয়?
– অত্যন্ত খারাপ হয়।
– তুই এইভাবে কথা বলিস কেন?
– মা, কলিপাকে এইখানে এই অবস্থায় দেখে নিলেই ভালো। সারাজীবন তো আর ভাইজানের বাসায় নিয়ে যেতে পারবেনা।
– আমার ভয় হয়, যদি আবার এই বিয়েটাও ভেঙে যায়।
– এতো দুঃচিন্তা কেন কর!
– আমার মেয়ে, তাই চিন্তা ও বেশি। মেয়ের মায়ের চিন্তা ছাড়া উপায় আছে!
– যত্তসব উল্টা-পাল্টা চিন্তা।
কলি আর সাঈদ বাসায় আসতে আসতে ঘড়িতে প্রায় ছয়টা বেজে গেল। ক্লান্তিতে দুজনের মুখ কালো হয়ে গিয়েছে।
রাহেলা বেগম লেবুর শরবত দিয়ে বললেন, মুখ হাত ধুয়ে এসে, শরবত টা খেয়ে নে তোরা! জাহিদ কে বার বার বললাম, দেরী করিস না, তবুও দুই দিন দেরী করে গেলি, এখন মেয়েটার চেহারা কালো হয়ে আছে।
– মা, আমি স্কুলে গিয়ে ছুটি নিয়ে তবে গেলাম, এরকম কি যাওয়া যায়? বিনা ছুটিতে? আর আজ রেস্ট নিলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
নাহিদ বললো কি রে কলিপা কোথায় কোথায় ঘুরেছিস বল? কক্সবাজারে গিয়েছিস নাকি?
কলি জাহিদের দিকে তাকিয়ে আছে, জাহিদ পলির বাসার কথা সব জেনেছে কলির মুখে।
জাহিদ বললো ও ওর দুলাভাই নিয়ে ঘুরেছে, তুই কলির জামাই নিয়ে ঘুরবি। এখন কালকের কি কি বাজার লাগবে, লিখে নে। দুইভাই গিয়ে নিয়ে আসি।
– তুমি রেস্ট নাও, আমি নিয়ে আসি।
– একটু অপেক্ষা কর, আমি সাথে যাবো, ভাইজান কে বলতে হবে।
– তুমি ভাইজান কে বলতে যাও, আমি বাজারে যাই।
রাহেলা বললেন নাহিদ যে কেন এমন করে বুঝিনা বাবা। কি যে জেদি হচ্ছে দিন দিন।
– ও দুঃখ পেয়েছে বেশি, তাই এমন করে। ছোট মানুষ।
কলি দুপুরের পর থেকে সেই ছেলের ছবি মাথায় নিয়ে বসে আছে। দেখতে ভীষণ স্মার্ট ছেলেটি। বিয়ে হলে খারাপ হবেনা অবশ্য! আজ কি পছন্দ করবে? নাকি আজ ও চলে যাবে।
বিকাল চারটার দিকে, রুমি খালা ছেলেপক্ষ নিয়ে এলেন, তিনি এসে তাদের কে ছোট রুমে রেখে, ভিতরে গেলেন।
রাহেলা বেগম নাশতা রেডি করে রেখেছেন, তিনি সব একে একে নিয়ে গেলেন। নাহিদ ও সাহায্য করছে, এবং সার্ভ করে দিচ্ছে।
নাহিদ এক ফাঁকে এসে বললো আপারে, তুই আফ্রিকান দের বাড়ী যাচ্ছিস।
– মোটেও না, ছেলে আমি দেখেছি ফর্সা সুন্দর।
– এখানে সব কালো মামুষ এসেছে।
– তাহলে ছেলে আজ আসেনি। কনফার্ম।
রুমি রান্নাঘরে এসে বললেন আপা শোনো, আমি তোমাদের না জানিয়ে নিয়ে এসেছি। এই ছেলে আগের ছেলে পক্ষ না। আগে যারা এসেছিল তারা না করে দিয়েছে, কলি তাদের নিয়ে আসায়।
– আগে বললি না কেন?
– তুমি মন খারাপ করবে তাই। যাই হউক এই ছেলে জগন্নাথ থেকে এম.এ করেছে। সিটি করপকরপোরেশনে চাকরি করে। ভালো চাকরি, দুই ভাই। ছোট জন ও চাকরি করে, দুই বোন বিবাহিত। শুধু সমস্যা একটা।
– আবার কি সমস্যা?
– ছেলে একটু কালো। কিন্তু ছেলে ভালো। আমি চাই আপা, তুমি য্রন মত দাও।
– আচ্ছা দেখি আগে।
কলিকে রুমে নেওয়ার আগে, রুমি এক মিনিটে শুধু বললেন এই ছেলে, আগের জন নয়। আর শুধু চেহারা দেখবিনা, মন দেখবি।
কলি রুমে গিয়ে দেখে সবাই কুচকুচে কালো। রুমি পরিচয় করিয়ে দিলেন, এই পাত্র জুয়েল খান।
কলি এক ঝটকায় দেখেই মাথা ঘুরিয়ে গিয়েছে। ছিপছিপে কালো চেহারা, মাথায় চুল কম, লাল একটা পাঞ্জাবী গায়ে দিয়ে এসেছে। কেমন যেন হ য ব র ল লাগছে। এই ছেলে? কেমনে বিয়ে করবে,মতকে আল্লাহ বাঁচাও।
রাহেলা বেগমের ছেলে পছন্দ হয়নি, কালো সমস্যা না, কিন্তু এতো হেংলা ছেলে,বয়স এবং এই পরিবারের কালো।
কিছুক্ষণ কথা বলার পর, ছেলের ফুপু বললেন, আলহামদুলিল্লাহ আমাদের মেয়ে পছন্দ হয়েছে, যদি সম্ভব হয়, আজ রাতেই কাবিন করে ফেলতে চাই। পরে, মাস দুয়েক পরে অনুষ্ঠান!
রাহেলা বেগমের একদম ভালো লাগেনি, কলি কি ভাবছে কে জানে, সাঈদের ফোনে কল যাচ্ছেনা। সাঈদ আসলে সহজেই সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন। কলি কি রাজী হবে? আর এতো অল্প সময়ে কি করবেন, কিছুই বুঝতে পারছেন না তিনি। সব জেনে মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে….
চলবে…
০৮/০৩/২০২২
আন্নামা চৌধুরী
দীর্ঘ পাঁভ দিন মাকে নিয়ে সিসিইউ তে থেকে আজ বাসায় ফিরলাম। এখন এনজিওগ্রাম রিপোর্ট নিয়ে অনেক দুঃচিন্তায় কাটছে সময়, তবুও প্রিয় পাঠকের জন্য সামান্য হলেও লিখলাম। দোয়া রাখবেন মায়ের জন্য।