ভাবীর সংসার ৪৬ তম পর্ব
জুয়েল কাবিনের জন্য সব ধরনের বাজার করে, বিকেলের দিকে বাসায় আসলো। রুমি খালা পছন্দ করে কলির জন্য সব জিনিস কিনেছেন। রুমী খালা সব জিনিস কলির সামনে নিয়ে গিয়ে খুলে খুলে দেখাচ্ছেন!
সব জুয়েল আর আমি পছন্দ করে কিনেছি। দেখ তো ঠিক আছে কিনা!
কলির শাড়িটি বেশ ভালো লেগেছে মেরুন রঙের বেনারসী শাড়ি। এক সেট সুন্দর গোল্ড প্লেটের গহনা, দরকারী সব কসমেটিকস, এক জোড়া স্যান্ডেল। একটি স্বর্ণের আংটি, আরেকটি গ্রামীন চেক শাড়ি। সব কিছুই বেশ সুন্দর হয়েছে।
জুয়েল রুমী খালাকে বললো,
খালা আমার আম্মার গহনা, আমার বড় খালাম্মার কাছে। আমি গত মাসে পলিশ করে রেখেছি। আমি গহনা গুলি আনতে চাই। খালাম্মার বাসা শাহজাহানপুরে বেশিক্ষণ লাগবেনা।
– এশার পরে, কাবিন। আর এখন যাবে?
– স্বর্ণ গুলি না আনলে ও কেমন লাগে খালা! আমি ঘন্টা খানেকের মধ্যে আসছি। আর খালাম্মাকে ও নিয়ে আসবো।
– সাবধানে যেও।
– জি।
সাঈদ কাছে এসে রুমী খালাকে বললো আপনি কি একটু ঘরে আসবেন খালা?
– হ্যা আসছি! চল।
সাঈদ রুমে যেতেই বলা শুরু করলেন খালা কি দেখে আপনি কলির জন্য এমন একটা ছেলে আনলেন? যার মা নেই, দেখতে কালো, কয় টাকা বেতন পায়?
– মা নেই বলে কি ছেলে খারাপ?
– মা ছাড়া ছেলেরা ভালো হয়না। আর এমন কালো ছেলে!
– কালো দিয়ে কি হবে! মনটা খুব ভালো। স্বভাব-চরিত্র খুউব ভালো।
– না, না। এই ছেলে আমার পছন্দ হয়নি। প্রথমে দর্শনদারী পরে গুন বিচারী।
– বাবা, তুই তো রুপ দেখে বিয়ে করেছিলি, তা বউয়ের কথায় এখন উঠছিস – বসছিস, মা ভাইকে আলাদা করে দিয়ে।
– খালা!
– আমার সাথে চিৎকার করবিনা। নিজের বোনের বিয়ে নিয়ে তুই কি মাথা ঘামিয়েছিস? নিজের আলিশান বাসায় তো পাত্রপক্ষ আসলে নিয়ে যেতে পারতিস, মায়ের চিল কোঠার ঘরে এসে চিৎকার করিস। বড় আপা তোকে অধিক স্নেহ করে মাথায় তুলেছে। এখন, ঝামেলা না করে, বোনের কাবিন শেষ করে যা। অশান্তি করিস না, ছেলের গ্যারান্টি আমি দিলাম যা!
সাঈদ কিছু বলতে যাচ্ছিলেন তখন রাহেলা বললেন আমার ও একই কথা বাবা, তুই কাবিন শেষ করে যা, আর এখন গিয়ে বউমা, আর দাদাভাইকে নিয়ে আয়!
রাত আট্টায় কলির কাবিন হয়ে গেল জুয়েলের সাথে। জুয়েলের মায়ের চারভরি ওজনের হার, কানের ঝুমকা, আর এক জোড়া চুড়ি পরেছিল কলি। পাড়ার মোড়ের পার্লারে হালকা করে সেজেছিল সে, তবুও দারুন লাগছিল কলিকে।
অফ হোয়াইট রঙের পাঞ্জাবীতে জুয়েল কে বেশ মানয়েছিল। জুয়েলের পরিবারের সাত জন আত্নীয় আর কলিদের পরিবারের সবার উপস্থিতি ক্সবিন হয়ে গেল তাদের, দুই মাস পরে, অনুষ্ঠান করে ঘরে তুলে নিবে জুয়েল।
কাবিন পরে, কলি আর জুয়েল কে কথা বলার জন্য সবাই রেখে আসলো।
জুয়েল প্রথমেই বললো এতো কেঁদেছিলে কেন? আমি কালো বলে?
– না।
– কান্নাকাটির কোন দরকার নেই, আরও দুই মাস আছ, এই বাসায়। আর আরেকটা কথা কলি, তুমি যদি চাকরি করতে চাও, আমার কোন আপত্তি নেই।
– থ্যাংক ইউ।
কলির কাবিনের এক মাস পরে, আবার জাহিদ ট্রান্সফার হয়ে একদম পাশের গ্রামের স্কুলে চলে এসেছে। এখন বাড়ী থেকেই স্কুলে যাচ্ছে জাহিদ। শাহিদ ও প্রতিদিন বলছে মা, আমিও বাড়ী চলে যাই, লাইব্রেরীতে সময় দেই। কারণ, এখানে এতো কষ্ট করে চাকরি করে কয় টাকা থাকে? তার চেয়ে বাড়ীতে গেলে নিজের ব্যবসা নিজে দেখলাম। মেজ ভাই তো আর পুরোপুরি সময় দিতে পারেন না।
রাহেলা বেগম শুধু বলেন, কলির অনুষ্ঠান হউক, আমি বাড়ী চলে যাবো। আমার ছেলে বাড়ী ফিরেছে, ঘর বাড়ী ঠিক করে বিয়ে করাতে হবে। আমি আর এই শহরে থাকবো না।
নাহিদের এই নিয়ে দ্বিমত আছে, সে মাকে ছাড়বেনা। বাড়ীতে নয়, ঢাকা শহরেই রাখবে মাকে।
জুয়েল প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার আসে, দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে কলিকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়, রাতে খাওয়া দাওয়া করে কলিকে নামিয়ে দিয়ে যায় বাসায়।
প্রতি শুক্রবারে আসতে সময়, কলির জন্য নতুন একটা শাড়ি নিয়ে আসে, জুয়েল। এসেই বলবে এই শাড়িটা পরে আসো কলি, দেখি কেমন লাগে তোমায়!
কলির এই কয়েকদিনে জুয়েলের উপর কেমন যেন এক ধরনের টান অনুভব হয়, সেটা কি ধরনের টান বলতে পারবেনা। তবে সে কাছে থাকলে, তার ভীষণ আনন্দ হয়, ভীষণ। এটাই কি তবে ভালবাসা?
জুয়েল খুবই রোমান্টিক ছেলে, প্রতি শুক্রবারে আসতে সময়ে লম্বা লম্বা চিঠি নিয়ে আসে, বাইরে গেলে সুন্দর করে গানের দুই চার লাইন শোনায়। সুরেলা কন্ঠে গান শুনতে বেশ ভালো লাগে কলির। এর মধ্যেই এক শুক্রবার কলিকে নিয়ে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় নিয়ে গিয়েছে জুয়েল। তার মতামত তুমি যদি করতে পার, চাকরি কর, আমার আপত্তি নেই। তবে, আমার জন্য করা লাগবেনা, নিজের ইচ্ছা হলে করতে পার।
রাহেলা বেগমের অন্য দুইজন জামাই বেশ লাজুক, কিন্তু জুয়েলের শ্বাশুড়ীর সাথে খুব ভালো সম্পর্ক। সে সব সময় বলে আম্মা আমার মা নেই, কত বছর মাকে দেখিনা, আপনাকে আম্মা ডাকলে আমার মা কে ডাকছি মনে হয়! আপনি আমার মায়ের মতোই আমার কাছে।
আজ বুধবার, প্রচন্ড রোদ উঠেছে। রাহেলা বেগম গোসল করে শাড়ী ছাদে শুকিয়ে দিচ্ছেন, মনে হচ্ছে রোদে শরীর পুড়ে যাচ্ছে।
হঠাৎ বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখেন জুয়েল এসেছে, গায়ে চাদর জড়ানো।
রাহেলা বেগম এমন খোঁচা খোঁচা দাড়ি দেখে প্রথমে চিনতে পারেন নি। আবার এই গরমে গায়ে চাদর!
জুয়েল সালাম দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাহেলা উত্তর দিয়ে বললেন, বাবা ভিতরে চলো।
এই কলি, লেবু পানি দে, জুয়েল এসেছে।
বাবা, তোমার কি শরীর খারাপ?
– আজ চার দিন ধরে জ্বর। পড়শু অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি। গতকাল রাত কোন দিকে গিয়েছে বলতে পারিনি, মেসে কেউ থাকেনা দিনে, ভয় লাগছে।
এখন বাড়ীতে যে যাবো সে শরীরের অবস্থায় নেই। এজন্য অনেক চিন্তা করে এখানে এসেছি আম্মা।
– খুব ভালো করেছো। আমি কি তোমার পর?
রাহেলা বেগম কপালে হাত দিয়ে আৎকে উঠেছেন, জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। চোখ লাল হয়ে গিয়েছে।
কলি দেখে, মন খারাপ করে বসে আছে। এরকম অবস্থা হয়ে গিয়েছে তিন দিনে। কলির চোখের কোণে পানি জমে গিয়েছে।
রাহেলা বেগম বিকালেই নাহিদ আর কলিকে নিয়ে ডাক্তারে নিয়ে গেলেন। এতো জ্বর দেখে ভয়ে চুপসে গিয়েছেন রাহেলা।
ডাক্তার ইস্কন্দর আলী দেখে বললেন আমি টেস্ট দিচ্ছি, এগুলো দ্রুত করিয়ে নেন,ডেঙ্গু অথবা টাইফয়েড হতে পারে। আপনারা রিপোর্ট পেয়েই আমাকে দেখাবেন, আর রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত রোগীকে মশারীর ভিতরে রাখবেন।
কলির মন টা এতো খারাপ হয়ে আছে, কি হলো জুয়েলের? তার জুয়েলের খারাপ কিছু হয়নি তো? টাইফয়েড হলে, কত রকমের জটিলতা হয়ে যায়, তার জুয়েলের কিছু হবেনা তো! বার বার চোখের কোনে পানি জমছে কলির……
চলবে….
আন্নামা চৌধুরী।
১৪.০৩.২০২২
আমার উপন্যাস “সময় ঘড়ি” পাওয়া যাচ্ছে পেন্সিলের স্টলে। ভালো লাগলে নিতে পারেন। পেন্সিলের স্টল নং ১০৫.