ভাবীর সংসার ৪৮ তম পর্ব
বিয়ের আর এক সপ্তাহ বাকী, রাহেলা বেগমের বুক টা কেমন যেন খালি খালি লাগে। বড় দুই টা মেয়েই এখন কত কত দূরে চলে গিয়েছে, এখন কলিও। মেয়েদের কি অন্য কারো জন্যই বড় করে তোলা হয়! এজন্য একেকজন বিয়ে হচ্ছে আর দূরে চলে যাচ্ছে।মেয়েকে দেখলেই চোখের কোনে পানি জমে উঠে।
রাহেলা, কলিকে ডাকলেন, বললেন শোন, তোর জন্য যে, এক লক্ষ টাকা ব্যাংকে রেখেছিলাম মনে আছে?
– হ্যা।
– জাহিদ বলছে, সে একা বিয়ের খরচ চালাবে। আমি তো জানি তার ইনকাম কত? সামনে বিয়ে করবে। আমি পঞ্চাশ হাজার দিয়ে বলেছি বাকী টাকা এখন তুই খরচ কর।
– পুরো টাকা দিতে।
– শুধু খাবারের খরচ আর হল ভাড়া। আর জুয়েল ও কিছু দিচ্ছে। এখন মা, পলির বিয়েতে স্বর্ণ ছিল না, আমি দিয়েছি। তোর আলহামদুলিল্লাহ স্বর্ণ ভালো পেয়েছিস। তুই কি নিবি বল?
– কিচ্ছু না মা। তুমি রাখ, সামনে মেজ ভাইয়ের বিয়ে।
– শোন, টাকা হচ্ছে শক্তি। টাকা থাকলে শক্তি থাকে বেশি। এক কাজ কর, তুই এই টাকা রাখ, তোর যা যা পছন্দ মন মত করে কিনে নেয়।
– লাগবেনা মা।
– লাগবে। তুই রাখ।
কলি টাকা দিয়ে কি করবে, সে এখন চিন্তা করছে। তবে তিন ভাইয়ের জন্য সুন্দর তিনটি পাঞ্জাবি এক রকমের কিনতে হবে৷ না, ভাইজান কে সে বাদ দিবেনা। তিনি তাদের বাদ দিয়েছেন, কিন্তু তারা মনে রাখবে আজীবন! জলিপা, পলিপার জন্য শাড়ি, মায়ের জন্য শাড়ি কিনতে হবে। এই টুকু শপিং এখন শুধু বাকি বিয়ের জন্য।
কলির বিয়ের অনুষ্ঠান গতকাল শেষ হয়েছে। ছোট্ট অনুষ্ঠান, কিন্তু ভীষণ সুন্দর ভাবে হয়ে গিয়েছে। যদিও অনেকে বলেছিল জুয়েল দেখতে এতো সুন্দর না! কিন্তু রাহেলা বেগম সবাইকে বলেছেন, মন সুন্দর বড় সুন্দর, রঙ সুন্দর দিয়ে কি হবে!
রিতা খালা, কলিকে সুন্দর এক জোড়া স্বর্ণের বালা গিফট করেছেন।।যদিও কলি বার বার বলেছিল, খালা আমার শ্বাশুড়ির অনেক গহনা পেয়েছি, লাগবেনা। আপনি দোয়া করবেন।
কিন্তু রিতা খালার একই কথা, আমি তোমাদের ভালবাসি, এটা ভুলে যেও না কিন্তু!
বিয়েতে জলি আসতে পারেনি, ছোট্ট বাবু নিয়ে আসার সাহস নাকি তার হয়নি। পলি বিয়েতে এসেছে, কিন্তু বিয়ের দিন রাতেই ট্রেনে সে রওনা হয়েছে। তার শরীর ভালো নেই, বাবু হবে।
এই মাসের আঠাশ তারিখ এই বাসা ছেড়ে দিবেন রাহেলা। রাহেলা বেগম বাড়ী চলে যাবেন, শাহিদ ও মায়ের সাথে থাকবে, জাহিদের লাইব্রেরি দেখবে। ঢাকায় থাকবে শুধু নাহিদ। নাহিদ ও মেস দেখছে, কিন্তু তার মন ভালো নেই, মা চলে যাবেন এই ভেবে।
কলি আস্তে আস্তে করে দুই রুমের বাসা গুছিয়ে নিয়েছে। মায়ের টাকা থেকে ছয় হাজার টাকা খরচ করে এক সেট বেতের সোফা কিনেছে, ব্লক প্রিন্ট করা পর্দা, সুন্দর পরিপাটি করে বসার ঘর সাজিয়েছে।
আজ সবার, কলির নতুন সংসারে দাওয়াত, কলি একা একা সব রান্না করছে। রাহেলা বেগম সাহায্য করতে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কলি বার বার বলেছে, না, তুমি সময় মতো আসবে। দেখো আমি পারি কিনা?
জুয়েল বাজার করে এনেছে, তবুও বার বার জিগ্যেস করছে কলি আর কিচ্ছু লাগবে? দেখো কিছু বাদ পরেনি তো!
কলি হেসে বলছে না, কিচ্ছু বাদ পড়েনি।
– ভাবীর জন্য স্পেশাল কিছু রান্না কর!
– তাই?
– হ্যা। কাঁটা পেয়ে তার ফুল করি দান, সারাটি জীবনভর।
– জি জনাব।
কলি দুপুরের সব খাবার সুন্দর করে টেবিলে সাজিয়েছে। পোলাও, রোস্ট, গরুর মাংস ভুনা, সর্ষে ইলিশ, ছোট মাছের চর্চরি শুটকির পাতুড়ি। সুন্দর করে পরিবেশন করেছে কলি।
নাহিদ বলছে কি রে তুই সব রান্না করেছিস নাকি জুয়েল ভাই কিনে এনেছে?
– খেয়ে দেখ, টেস্ট তোর পরিচিত।
শারমিন বলছেন, কলি একটা বড় বাসা নাও, এতো ছেট বাসায় দম বন্ধ লাগে।
– মাস দুয়েকের মধ্য ওর ট্রান্সফার হয়ে ঢাকার বাইরে চলে যাবো, এজন্য আর বাসা বদল করছিনা।
– একেক রকম একেক টা ফার্নিচার কিনেছ কেন? সেট ম্যাচ করে কিনলেনা?
– আরেকটু বড় লোক হই, কিনে নিব ভাবী। তোমায় আরেক পিস মাছ দেই?
– না, আর লাগবেনা।
কলি জানে ভাবীকে সন্তুষ্টি করা, কারো পক্ষে সম্ভব না। তবুও চেষ্টা করা।
রাহেলা বেগম মেয়ের ছোট্ট সংসার দেখে খুব আনন্দ পেয়েছেন। মেয়ে শান্তিতে ঘর করছে, এটাই চির শান্তির করা।
দাওয়াত খেয়ে বাসায় ফিরতেই বাড়ীওয়ালা হাজির, ভাবী আপনি কোথায় ছিলেন?
– কলির বাসায়।
– পলি অসুস্থ, জামাই ঢাকায় নিয়ে রওনা হয়েছে। খুবই নাকি অসুস্থ। আপনাদের বাসায় থাকতে বলছে।
– বলেন কি? আমার মেয়ের কি হয়েছে?
– কি হয়েছে জানিনা, শুধু বললো চট্টগ্রাম একা রাখা যাবেনা, তাই সরাসরি ঢাকায় আসছে।
– আরেকবার কল দেই ভাই?
– পিসিয়ার থেকে করা। সুতরাং পাওয়ার সম্ভবনা নাই। আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করেন।
– ইয়া আল্লাহ, আমার মেয়ে টার কি হলো? বিয়ে খেয়েই সেদিন ক্লান্ত হয়ে চলে গেল! আমার দম শান্তিতে আসছেনা, আমি পলির কি হলো….
চলবে….
আন্নামা চৌধুরী
১৯.০৩.২০২২