#ভ্যাম্পায়ার বর
পর্ব ২৬ ও শেষ
#M_Sonali
আশেপাশের প্রচন্ড শব্দে ঘুম ভেঙে যায় চাঁদনীর। চাঁদনী ঘুম ঘুম চোখে মিটিমিটি করে তাকিয়ে দেখে ওর চারপাশে যেন যুদ্ধ শুরু হয়েছে। যে যুদ্ধে যোগ দিয়েছে শ্রাবণী শ্রাবণ ও আকাশ, চাঁদনীর আব্বু আম্মু আহত অবস্থায় এক পাশে পড়ে আছে। চাঁদনীর শরীর প্রচণ্ড দুর্বল হওয়ায় ধীরে ধীরে উঠে বসে বোঝার চেষ্টা করে কি হচ্ছে এখানে। তখন চাঁদনী দেখে সামনে শ্রাবণ শ্রাবণী আর আকাশের সাথে অন্য সব ভ্যাম্পায়ারদের খুব পরিমাণে হাতাহাতি-মারামারি হচ্ছে। একে অপরকে আহত করতে ব্যস্ত তারা। চাঁদের মাথায় ঢুকছে না এখানে কি হচ্ছে এসব। কিন্তু শ্রাবণ কে সামনে দেখে চাঁদের মনের মধ্যে একটু খুশি অনুভূত হচ্ছে।
চাঁদনী ধীরে ধীরে নিজের বেড থেকে নেমে ওর আম্মু আব্বুর পাশে গিয়ে বসে। তারপর ওর আব্বু আম্মুকে ডাকতে ডাকতে বলে
— কি হয়েছে আব্বু আম্মু তোমরা এভাবে আহত হয়ে পড়ে আছো কেন এখানে? আর এখানে কি হচ্ছে এসব?
চাঁদনীর কথা শুনে চাঁদনীর আব্বু হালকা নরে উঠলো, কিন্তু চাঁদের আম্মু যে ভাবে পরে ছিলো ওই ভাবেই আছে তার মধ্যে কোনরকম নড়াচড়া বা কথা বলার শক্তি নেই। চাঁদনী ওর আম্মুর কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর আম্মুর মাথাটা নিজের কোলের মধ্যে নেয়। নেওয়ার পরে খেয়াল করে চাঁদনীর আম্মুর গলায় কাছে দুটি বড় বড় দাঁতের গর্ত হয়ে আছে সাথে সারাশরীর সাদা ফ্যাকাসে। আম্মুর এমন অবস্থা দেখেই চাঁদনীর বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠে। চাঁদনী ওর আম্মুকে ধাক্কা দিতে দিতে ডেকে বলতে লাগে
— আম্মু আম্মু কথা বলো তুমি, কি হয়েছে তোমার আম্মু কথা বলো প্লিজ এভাবে পড়ে আছো কেনো আম্মু। আমার সাথে কথা বল এই দেখো আমি তোমার চাঁদ।আমার সাথে কথা বলবে না তুমি আম্মু প্লিজ কথা বল আমার সাথে কথা বলনা আম্মু।
কথাগুলো বলেই কান্নায় ভেঙে পড়ে চাঁদনী।চাঁদনীকে এভাবে কাঁদতে দেখে অনেক কষ্টে ওর আব্বু বলে ওঠে
— চাঁদ মামনি তোমার আম্মু আর আমাদের মাঝে নেই। হয়তো আমিও আর বেশি সময় থাকবো না তোমাদের মাঝে। আমারও যে সময় ঘনিয়ে এসেছে। তবে তার আগে তোমাকে কিছু সত্যি কথা বলে যেতে চাই আমি মামনি।
চাঁদনী ওর আব্বুর কথা শুনে ওর আম্মুর মাথা নিজের কোল থেকে নিচে নামিয়ে দিয়ে ওর আব্বুর মাথা নিজের কোলে তুলে নিলো। তারপর কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো
— আব্বু তোমার কিচ্ছু হবে না তুমি ঠিক হয়ে যাবে প্লিজ এভাবে আমাকে ছেড়ে চলে যেওনা।
— চাঁদনী মামনি আমার সময় হয়ে গেছে আমি তোমাদের মাঝে আর থাকতে পারবো না। কিন্তু মারা যাওয়ার আগে তোমাকে কিছু সত্যি কথা না বললে হয়তো সারাজীবন তুমি মিথ্যের মধ্যে থেকে যাবে তাই তোমাকে সব কিছু সত্যি কথা বলে তারপরে আমি মরে যেতে চাই।
আব্বুর কথা শুনে চাঁদনী ওর আব্বুকে কি বলবে বুঝতে পারছেনা। শুধু অঝোরে কান্না করে চলেছে চাঁদনী। চাঁদনীর কান্না যেন বিন্দুমাত্র কমছে না। অনেক কষ্টে চাঁদের আব্বুর চাঁদের চোখের জল মুছে দিয়ে বলতে শুরু করল
— আমি জীবনে যে পাপ করেছি সেই পাপের ফল আমি এখন পাচ্ছি মামনি। আমি একজন জন্মদাতা বাবা হয়েও নিজের এক সন্তানকে নিজের হাতে জন্মদিনেই জঙ্গলে ফেলে চলে এসেছিলাম। আর অন্য সন্তান মানে তোমায় তোমার স্বামী হারা সন্তান হারা করেছি। সেই পাপের পরিনামই হয়তো আজকে আমি ভোগ করছি। তবে আমি এতোটুকু খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছি যে শ্রাবন তোমাকে অনেক ভালবাসে। ওর মতো করে তোমায় কেউ ভালবাসতে পারবে না। তুমি শ্রাবনের কাছে ভালো থাকবে মামনি আমি তোমাদের দুজনকে একসাথে দেখতে চাই।
— এসব তুমি কি বলছো আব্বু! তোমার আরেক সন্তানকে তুমি জঙ্গলে ফেলে দিয়ে এসেছো মানে? আমি তো তোমার কথা কিছুই বুঝতে পারছিনা! আমি যতোটুকু জানি আমার তো আর কোনো ভাইবোন কখনো হয়নি আম্মুর মুখে শুনেছিলাম। তাহলে কাকে ফেলে দিয়ে আসার কথা বলছো তুমি আব্বু?
চাঁদনীর কথা শুনে চাঁদনীর আব্বু কিছুক্ষণ চুপ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে। চাঁদকে প্রথম থেকে ঘটে যাওয়া সব কথা খুলে বললো, যা শ্রাবন আর শ্রাবনীকে বলেছিল সেদিন। সব কথা শুনে চাঁদনী যেন নির্বাক হয়ে গেল। তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে চাঁদনী কিছু বলতে যাবে, ঠিক তখনই একটা ভ্যাম্পায়ার এসে চাঁদনীকে ওর আব্বুর কাছ থেকে তুলে দাঁড় করিয়ে চাঁদনীর গলায় নিজের ধারালো দাঁত গুলো বসাতে গেলো। ঘটনার আকস্মিকতায় চাঁদনী জোরে একটা চিত্কার দিলো শ্রাবন বলে। সাথে সাথে শ্রাবণ কোথা থেকে যেনে এক দৌড়ে ছুটে এসে ওই ভ্যাম্পারটাকে এক হাত দিয়ে ধরে চাঁদনীর থেকে সরিয়ে আরেক হাত দিয়ে এক টানে ধর থেকে মাথা আলাদা করে ছুড়ে ফেলে চাঁদনীকে নিজের বুকে টেনে নেয়। চাঁদনীও ছোট বাচ্চাদের মতো শ্রাবনের বুকে মুখ গুঁজে কান্না করতে থাকে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে।
তখনই অন্য একটা ভ্যাম্পায়ার ছুটে এসে হামলা করে চাঁদনী আব্বুর ওপর। এটা দেখে শ্রাবণ চাঁদনীকে ছেড়ে চাঁদনীর আব্বুকে বাঁচাতে যাবে ঠিক ওই সময় দেখে কোথা থেকে আকাশ ছুটে এসে এই ভ্যাম্পারটাকে একটানে ওর আব্বুর থেকে ছাড়িয়ে এমন ভাবে হত্যা করলো যেন ওর খুব আপন কারো গায়ে হাত তুলেছে ভ্যাম্পায়ারটা। এমন দৃশ্য দেখে চাঁদনী এবং শ্রাবনী আর শ্রাবন হা করে তাকিয়ে রইল আকাশের দিকে। আকাশ নিজেও জানেনা ও কেনো এভাবে ছুটে এসে বাচিয়ে নিলো চাঁদের আব্বুকে।
তারপর বেশ কিছুক্ষণ এভাবে যুদ্ধ চলার পর খারাপ ভ্যাম্পায়াররা ওদের সাথে পেরে উঠতে না পেরে সবাই যার যার মত পালিয়ে গেল। সবাই পালিয়ে যেতেই চাঁদনী দৌড়ে এসে ওর আব্বুর মাথাটা নিজের কোলে নিয়ে হু হু করে কান্না শুরু করলো। ওর আব্বুর অবস্থা খুবই খারাপ, আকাশ এসে ওর আব্বুকে বাঁচালেও ঐ ভ্যাম্পায়ারটা আকাশ আসার আগেই নিজের ধারালো নখ দিয়ে চাঁদনীর আব্বুর গলায় খুব বিশ্রী ভাবে আঘাত করে।
যার ফলে চাঁদনীর আব্বুর গলা থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। কিন্তু এ রক্ত দেখে কেন যেন আকাশ, শ্রাবন শ্রাবনীর কারো একটুও নেশা হচ্ছে না বা ইচ্ছা করছে না রক্ত চুষে খেতে।বরং ওদের অনেক কষ্ট ফিল হচ্ছে। কেন জানিনা আকাশের খুব কষ্ট হচ্ছে চাঁদের আব্বুর অবস্থা দেখে। আকাশ গিয়ে চাঁদের আব্বুর পাশে বসে। আকাশকে দেখে চাঁদের আব্বু কি মনে করে যেন বলে উঠে
— বাবা কে তুমি আমাদের বিপদে আমাদের বাঁচালে? শ্রাবন আর শ্রাবনী না হয় চাঁদকে ভালোবাসে বলে ওকে বাচাতে এসেছে।কিন্তু তুমি কে বাবা আর কেনইবা আমাদের এভাবে বাঁচাতে এসেছো?
চাঁদনীর আব্বু কথা বলতে পারছে না খুব কষ্ট হচ্ছে তার। তবুও নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে কেন জানিনা এই কথাগুলো জিজ্ঞেস করলো আকাশ কে। আকাশ কি বলবে বুঝতে পারছেনা তাই আকাশকে চুপ করে থাকতে দেখ শ্রাবণ নরম কন্ঠে বলে উঠল
— আঙ্কেল ও হলো আপনার ছেলে, আপনার সেই ছেলে যাকে আপনি ভাম্পায়ার বলে জঙ্গলে ফেলে দিয়েছিলেন। ওই ই হল সেই ভাম্পায়ার আকাশ চাঁদের বড় ভাই।
শ্রাবণের কথা শুনে অবাক হয়ে গেল চাঁদনী আর চাঁদনীর আব্বু।চাঁদের আব্বু চোখের জল ছেড়ে দিয়ে আকাশের হাতজোড়া শক্ত করে ধরে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল
— আমাকে তুই ক্ষমা করে দে বাবা, আমি হয়তো পৃথিবীর একমাত্র অসহায় বাবা যে নিজের ছেলেকে নিয়ে জঙ্গলে ফেলে দিয়ে এসেছিলাম একবারও তার কথা চিন্তা না করে। তবে মৃত্যুর আগে যে আমি তোকে দেখতে পাবো এটা কখনো কল্পনাও করতে পারেনি বাবা। আমাকে তুই মাফ করে দিস তোর এই খারাপ বাপটাকে তুই ক্ষমা করিস বাবা।
চাঁদের আব্বুর কথা শুনে কেন জানি না আকাশের বুকটা যেন ফেটে যাচ্ছে। ওতো এতদিন ভাম্পায়ার রাজ্যের দুজন ভাম্পায়ার কে নিজের মা বাবা বলে জানতো। কিন্তু আসলে রক্তের টান হয়তো এমনই হয়। সেটা ও বুঝতে পারল এতকিছুর পরেও কেন জানিনা চাঁদের আব্বুকে এভাবে দেখে কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে আকাশের। ইচ্ছে করছে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আব্বু বলে ডাকতে।
আকাশের মনের কথাটা হয়তো চাঁদের আব্বু শুনে নিয়েছে। সে আকাশের হাত ধরেই বলল
— বাবা আকাশ আমাকে একটু তোর কোলে মাথা রাখতে দিবি বাবা? জানি সবকিছু জানার পর হয়তো আমাকে তুই পৃথিবীর সবচাইতে নিকৃষ্ট বাবা মনে করছিস। কিন্তু বিশ্বাস কর ওই পরিস্থিতিতে তোকে ফেলে আসা ছাড়া আর কোনো পথ ছিলো না আমার। কিন্তু যখন তোকে ফেলে দিয়ে আমি বাসায় চলে আসি তখন আমার মনে হয় হাজার হলেও তুই আমার ছেলে, অন্তর আত্বা কেপে ওঠে তোকে ফেলে এসে আমার। তাই আমি আবার ছুটে যাই সেই জঙ্গলে। কিন্তু সেখানে গিয়ে আর আমি তোকে পাইনি, তোকে যে কাপড়ে পেঁচিয়ে ফেলে দিয়ে ছিলাম শুধু সেই কাপড়গুলো পড়েছিল সেখানে। ভেবেছিলাম শিয়াল কুকুরের কামড় দিয়ে নিয়ে খেয়ে ফেলেছে হয়তো। বাসায় এসে খুব বেশি কান্না করেছিলাম আমি তোর জন্য। কিন্তু ধীরে ধীরে আবার সবকিছু ঠিক হয়ে যায়। তবে কখন আমি ভাবি নি তোকে আমি এই সময় এভাবে দেখতে পারবো আমাকে ক্ষমা করে দিস বাবা অভাগা বাবাকে ক্ষমা করে দিস তুই।
কথাগুলো এক নাগাড়ে বলেই চাঁদনীর হাত নিয়ে আকাশের হাতের মধ্যে দিয়ে বলে ওঠে চাঁদের আব্বু
— এটা তোর ছোট বোন চাঁদনী, আকাশ তোর বোনের দায়িত্ব এখন থেকে আমি তোর কাছে দিয়ে গেলাম। যদিও আমি বাবা হয়ে কখনো তোর সাথে আমার দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। কিন্তু আশা করি তুই তোর বোনের দায়িত্ব অবশ্যই পালন করবি।আর আমাকে ক্ষমা করে দিস বাবা শেষ বারের মতো।
কথাগুলো বলেই জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে সেখানেই মারা গেল চাঁদের আব্বু। চাঁদের আব্বু মারা যেতেই আকাশ চাঁদের আব্বুকে বুকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কান্না করে বললো
— আব্বু এভাবেই যদি আমার জীবনে আসবে তাহলে কেন আবার হারিয়ে গেলে। একবারও বাবা বলে ডাকার সুযোগ দিলে না আমায়। তুমি আমার সাথে যাই ই করে থাকো না কেন বাবা, তবে আমি তোমায় কথা দিচ্ছি আমার বোনের সব দায়িত্ব আমি পালন করব একজন বড় ভাইয়ের মতো। আর দেখে রাখবো ওকে আমি তোমার দেওয়া কথা অবশ্যই পালন করব বাবা।
তারপর চাঁদনী আর আকাশ দুজনেই কান্নায় ভেঙে পড়ল, পাশে দাঁড়িয়ে শ্রাবনীও কাঁদছে কিন্তু শ্রাবন পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শ্রাবণের চোখের জল তবে তা গড়িয়ে পরেনি এখনো। শত হলেও ওদের মাঝে মানুষের রক্ত আছে। ওদের মাঝে ভ্যাম্পায়ারের ডিএনএ থাকলেও ওরাতো আসলে মানুষ। আর মানুষ বলেই ওদের মাঝে হৃদয় আছে হৃদয়ে অনুভব হয় কষ্ট যে কষ্ট পেয়েই হয়তো চোখে জল এসে গেছে ওদের।
,
,
৫ বছর পর
— মাম্মাম মামমাম দেখনা মামনি আর আংকেল আমাকে কিছুতেই বাইরে যেতে দিচ্ছে না। বলছে আমার বাইরে গেলে নাকি কি ক্ষতি হবে। তুমি একটু ওদের বলোনা আমি একটু বাইরে যাব গিয়ে একটু খোলা আকাশের নিচে সমুদ্রের জলে খেলা করবো। আমাকে কেন তোমরা দিনের বেলা বাইরে যেতে দাও না! আমাকে যেতে দাও না প্লিজ মাম্মাম!
— ইরা সোনা তোমার মামনি আর আংকেল তোমায় যেটা বলেছে তোমার ভালোর জন্যই তো বলেছে। এই চড়া রোদের মধ্যে তোমার বাইরে যাওয়া একদম ঠিক নয়। আমার স্কিন নষ্ট হয়ে যাবে তাই না সোনা! তুমি পুরো প্রাসাদে ঘুরে ঘুরে ইচ্ছা মতো খেলো তোমাকে কেউ মানা করবে না। কিন্তু এখন বাইরে যেও না সন্ধ্যার পর তোমার আব্বু আর তোমার আংকেল ও মামনি মিলে তোমায় বাইরে থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসবে কেমন?
— না মাম্মাম না আমি আজকে কারো কথা শুনবো না, আজ পর্যন্ত তোমরা দিনের বেলা আমাকে একটু সময়ের জন্যেও, বাইরে বের হতে দাও না। আজকে আমি বাইরে যাব তোমাদের কারো কথা শুনবো না।
কথাটা বলেই ছোট্ট ইরা দৌড়ে বাড়ির বাইরে চলে গেল। চাঁদনী হাজার চেয়েও ইরাকে আটকাতে পারলোনা। মুহূর্তের মাঝে ছোট্ট ইরা বাসা থেকে বেরিয়ে গেল সাথে সাথে চাঁদনী চিৎকার করে আকাশ শ্রাবনী আর শ্রাবনকে ডাকতে লাগল। চাঁদের চিৎকার শুনে সবাই এসে দাঁড়ালো চাঁদনীর সামনে। চাঁদনী উত্তেজিত হয়ে বললো
— তাড়াতাড়ি তোমরা প্রাসাদের বাইরে যাও আর ইরাকে নিয়ে এসো।ইরা আমার কথা না শুনে বাইরে বের হয়ে গেছে। ওকে আটকাও নইলে সূর্যের আলো গায়ে পড়লে ওর ক্ষতি হয়ে যাবে।
চাঁদনীর কথা শোনামাত্র আকাশ শ্রাবনী আর শ্রাবন দৌড়ে প্রাসাদ থেকে বের হল। বের হতেই তিনজনে অবাক হয়ে গেল, ছোট্ট ইরা পানির উপরে দৌড়াদৌড়ি করছে আর সমুদ্রের পানি নিয়ে খেলা করছে। হাসিতে যেন মুক্ত ঝরছে অসম্ভব সুন্দর লাগছে ছোট্ট ইরাকে।
( পাঁচ বছর আগে চাঁদের আব্বু আম্মুকে কবর দিয়ে সেই সমুদ্রের মাঝখানে দ্বীপের ওপর তৈরি করা প্রাসাদে চলে আসে শ্রাবন চাঁদনী, শ্রাবনী আর আকাশ। তারপরেই আকাশ আর শ্রাবনীর বিয়ে হয় সেখানে।ইরা শ্রাবণী আর আকাশের প্রথম সন্তান, কিন্তু চাঁদের কখনো সন্তান হতে পারবেনা বলে শ্রাবণী নিজের প্রথম সন্তান ইরাকে চাঁদের হাতে তুলে দিয়েছে। তারপর শ্রাবনীর আরো একটা ছেলে হয়েছে। ছেলেটা অনেক ছোট। ইরার বয়স ৪ বছর। এরা চাঁদনী আর শ্রাবনকে মা-বাবা বলে জানে। আর শ্রাবণী ও আকাশ কে জানে আন্টি আর আংকেল বলে।)
ইরা দুজন ভ্যাম্পায়ারের সন্তান বলে ওরা ভেবেছিল হয়তো সূর্যের আলোতে বের হতে পারবে না ইরা অন্য সব ভ্যাম্পায়ারের মতো। তাই ইরা হওয়ার পর থেকে কোনদিনও দিনের আলোয় ইরাকে বাইরে বের করেনি ওরা। কিন্তু আজকে ইরা সবাইকে অবাক করে দিয়ে বাইরে সূর্যের আলোয় বেরিয়ে এমনভাবে খেলছে যেন ওর কোনো কিছুই হচ্ছে না। এটা দেখে রীতিমতো সবাই অবাক হয়ে গিয়েছে। কারণ ইরাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে ইরা শ্রাবণ শ্রাবণী আর আকাশের চাইতেও শক্তিশালী কোন ভ্যাম্পায়ার হবে হয়তো। তাই ইরা পানির ওপর দিয়ে হাটাহাটি করতে পারছে এমনভাবে দৌড়াদৌড়ি করছে যেন কিছু হচ্ছে না। ও সূর্যের আলো এসে সম্পুর্ন শরীরে ছেয়ে গেছে ইরার। এতে যেন সৌন্দর্য আরো বেড়ে গেছে শরীর থেকে একটা আলোকরশ্মি ঝরছে চারিদিকে ইরার। সবাই অবাক চোখে ইরার দিকে তাকিয়ে থেকে ইরার খেলা দেখছে।
হঠাৎ দৌড়াদৌড়ি করে খেলতে খেলতে ইরা মাঝ সমুদ্রে চলে যায়। তারপর বিশাল বড় একটা মাছ ছো মেরে ধরে নিয়ে চলে আসে চাঁদের সামনে। তারপর চাঁদের সামনে মাঝটা রেখে বলে
— মাম্মাম এই মাছটা আজকে সুন্দর করে রান্না করে তুমি খাবে কেমন এটা তোমার জন্য। তার আগে আমার খুব পানি পিপাসা পেয়েছে আমি একটু খেয়ে নেই কেমন?
কথাটা বলেই সেই মাছটার গলার কাছে নিজের বিশাল বিশাল দাঁত বসিয়ে দেয় ইরা। তারপর জোকের মত চুষে চিষে সেখান থেকে মাছের রক্ত খেতে থাকে। মাছটা ছটফট করতে করতে কিছুক্ষণের মধ্যে মারা যায়।
চাঁদনী অবাক চোখে হা করে ইরার কান্ড দেখতে থাকে। পাশে থেকে শ্রাবন শ্রাবণী আর আকাশ মুচকি মুচকি হাসছে ইরার কান্ডে।
,
,
রাত ১২.০৫ মিনিট
ইরাকে অনেক কষ্টে ঘুম পাড়িয়ে সেখান থেকে উঠতেই চাঁদনীকে কোলে তুলে নেয় শ্রাবণ। তারপর চাঁদনীকে নিয়ে যেতে থাকে অন্য একটি রুমে। চাঁদনী শ্রাবনের বুকে কিল ঘুষি মারতে মারতে বলতে থাকে
–কি করছেন কি শ্রাবন, আপনি আমাকে এভাবে কোলে নিয়ে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন। নামান বলছি আমায় খুব ঘুম পাচ্ছে ঘুমাবো আমি।
চাঁদনীর কথার উত্তর না দিয়ে শ্রাবণ চাঁদনী কে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়। তারপর চাঁদের উপর ভর দিয়ে উঠে দুই হাত খাটের সাথে আটকে দিয়ে বলে
— এত ঘুম কিসের হুমম! ইরা হওয়ার পর থেকেই তুমি আমার কাছে আসো না ঠিক করে। বলি ইরাই কি তোমার সব আমি কিছু না? (অভিমানি কন্ঠে)
— আপনি কি আমার ইরাকে হিংসে করছেন আপনি? কিন্তু কেনো?
চাঁদনীর কথা শুনে অভিমানি কন্ঠে শ্রাবন বলে
— তো কি করব বল চাঁদ পাখি! ইরা হওয়ার পর থেকে তুমি আমাকে একটুও সময় দাও না। আমারও তো ইচ্ছে হয় আমার দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র বউ কে ইছা মত আদর করতে তার আদর খেতে। কিন্তু সেটারও সুযোগ পাই না তাই আজ আর কোন কথা শুনবো না আমি। আজ এই রাত শুধু তোমার আর আমার।
কথাটা বলেই চাঁদনীকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চাঁদনীর মাঝে ডুব দেয় শ্রাবন,,,,
_________=====সমাপ্ত=====_________
পুরো গল্পটা কেমন লাগলো জানাবেন সবাই। আজকে গল্পটা তারাতারি লিখেছি।তাই বানানে ভুল থাকলে কষ্ট করে পড়ে নিয়েন সবাই।ধন্যবাদ