#ভ্যাম্পায়ার বর
পর্ব ৫
#M_Sonali
চাঁদনীর কথা শুনে কিছুক্ষণ হাসার পর হাসি থামিয়ে শ্রাবনী বললো
— আমি তোকে আশীর্বাদ করছি দুষ্টুপাখি, খুব তারাতারি যেনো কোনো পিয়র ভ্যাম্পায়ার তোর প্রেমে পরে। আর তোর মনের আশা পুরোন করে।
কথাটা বলেই হো হো করে হেসে দিলো শ্রাবনী। শ্রাবনীর কথা শুনে মিতু আর চাঁদনী এক সাথে বলে উঠলো “আমিন”
তারপর ওরা ক্লাসে চলে গেলো। চাঁদনীদের ক্লাসের হৃদয় নামের একটি ছেলে চাঁদনীকে খুব লাইক করে। মনে মনে ভালও বাসে। কিন্তু চাঁদনী যা দুষ্টু আর রাগি সেই ভয়ে ছেলেটা কিছু বলতেও পারেনা। তবে সারাটা ক্লাস জুরে ছেলেটা আর চোখে চাঁদনীকেই দেখে। ক্লাস শেষে চাঁদনী মিতু আর শ্রাবনী বাইরে বের হতেই পিছন থেকে হৃদয় বলে উঠলো
— হেই দুষ্টুপাখি একটু দাড়াও প্লিজ।
হৃদয়ের ডাকে ভ্রু কুচকে পিছনে ফিরে তাকালো চাঁদনী। হৃদয় চাঁদনীর কাছে এগিয়ে এসে বললো
— ইয়ে মানে দুষ্টুপাখি তোমার সাথে আমার একটু কথা ছিলো। যদি কিছু মনে না করো কালকে একবার ক্লাস শেষে দেখা করতে পারবে একা?
— আমার সাথে কি কথা তোমার? কালকে নয় এখনি বলে ফেলো আমি আজকের কাজ কালকের জন্যে ফেলে রাখতে পছন্দ করিনা। তাই এখনি বলো কি বলার আছে।
কথাগুলো রাগি গলায় বললো চাঁদনী। চাঁদনীকে রাগ করতে দেখে ছেলেটা মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো
— না মানে আসলে কথাটা একটু পার্সোনাল চাঁদ। তাই যদি কালকে একটু একা দেখা করতে তাহলে ভালো হতো।
— পার্সোনাল? আমার সাথে তোমার কিসের পার্সোনাল কথা শুনি। আমি কি তোমার বিয়ে করা বউ যে আমার সাথে তোমার কোনো পার্সোনাল কথা বলতে হবে?
চাঁদনীর কথা শুনে ছেলেটা মিন মিন করে বললো
— তোমায় বউই তো বানাতে চাই দুষ্টুপাখি কিন্তু তোমাকে যে খুব ভয় করে আমার।
ছেলেটাকে উদ্যেশ্য করে শ্রাবনী বলে উঠলো
— বউকে দেখে ভয় পাওয়া ভালো। কিন্তু আদৌ বউ বানাতে পারবে তো?
শ্রাবনীর কথা শুনে মিতু চাঁদনী আর হৃদয় অবাক চোখে শ্রাবনীর দিকে তাকালো। হৃদয় মনে মনে শুকনো ঢোক গিলে বললো
— এই মেয়েটা আমার কথা শুনলো কি করে? আমি তো খুব আস্তে বলেছি কথাটা।
— কি রে শাঁকচুন্নি কি বলিস এটা। কে কাকে বউ বানাতে পারবে না?(শ্রাবনীকে লক্ষ করে বললো মিতু)
মিতুর প্রশ্ন শুনে হৃদয় দ্রুতো হেটে সেখান থেকে লাইব্রেরীর দিকে চলে গেলো। তখন শ্রাবনী উচ্চস্বরে হেসে বললো
— আরে ঐ হৃদয় নামের ছেলেটা আমাদের দুষ্টুপাখির প্রেমে পরছে আর ওকে প্রপোজ করার জন্যে কালকে দেখা করতে বললো। বিয়েও করতে চায় ওকে। কিন্তু খুব ভয়ও পায় আমাদের চাঁদ যে ঝগড়াটে।
কথাটা বলেই আবারও হিহি করে হাসতে লাগলো শ্রাবনী। শ্রাবনীর কথা শুনে চাঁদনী রাগে ফোস ফোস করতে করতে বললো
— কিইইইই এত্ত বড় সাহস ঐ হৃদয় নাকি রাম ছাগলটার। ও আমাকে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখে। ওর তো আজকে আমি মাথাই ফাটিয়ে ফেলবো।
কথাটা বলেই লাইব্রেরীর দিকে ছুটলো চাঁদনী। আর এদিকে মিতু শ্রাবনীর দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বললো
— হৃদয় যে চাঁদকে বিয়ে করতে চায় তুই কি করে জানলি?
মিতুর কথা শুনে হাসতে হাসতে আনমনে শ্রাবনী বললো
— আরে ঐ হৃদয় তখন আস্তে আস্তে কথাটা বলেছিলো আমি শুনেছি।
— হৃদয় তো তোর চাইতে আমার কাছেই দাড়িয়ে ছিলো বেশি। আর আমি শুনতে পেলাম না তুই কিভাবে শুনতে পেলি ওর কথা?
মিতুর কথায় কিছুটা ভড়কে গেলো শ্রাবনী। আমতা আমতা করে বললো
— আরে এখন আমার কান যদি শুনে নেয় তাহলে আমার কি দোষ বলতো। চল দেখি চাঁদ কি করে হৃদয়ের সাথে।
শ্রাবনীর কথায় মিতু আর কিছু না বলে শ্রাবনীর সাথে লাইব্রেরীর দিকে পা বাড়ালো।
চাঁদনী লাইব্রেরীতে ঢুকে দেখলো হৃদয় অন্য দিকে মুখ করে বই হাতে মুখের সামনে ধরে বসে মনযোগ দিয়ে বই পড়ছে। চাঁদনী সোজা গিয়ে ছেলেটার সামনে দাড়িয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে বলতে শুরু করলো
— আব্বে ঐ লাল কাওয়া, চিকনা বান্দর আফগানীস্তানের পালাতক আসামী। তোর সাহস কি করে হয় আমাকে বিয়ে করতে চাওয়ার। তুই জানিস আমি চাইলে তোকে তুলে একটা আছাড় দিতে পারি। তোর প্রতিটা চুল যত্ন সহকারে ছিঁড়তে পারি। এই চাঁদকে বিয়ে করার সাধ তোকে জম্মের মতো মিটিয়ে দিবো।আবে মুখের সামনে বই কি ধরে রাখছিস ক্যান, নতুন বউ এর মতো লজ্জা পাচ্ছিস বুঝি? বই সরা আর আমার সাথে কথা বল।
কথাগুলো বলেই ছেলেটার হাত থেকে বই টা কেড়ে নিলো চাঁদনী। তারপর সামনের লোকটার দিকে তাকিয়েই একদম হা হয়ে গেলো। গাড়ো বাদামী রঙের অসম্ভব সুন্দর এক জোড়া চোখ রাগি লুকে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। হালকা বাদামী রঙের চুলগুলো বাসাসে হালকা করে উড়ছে। লম্বা নাকটার ওপরে রাগে লাল হয়ে আছে। ফর্সা গালে খোচা খোঁচা দাড়ী সাথে গোলাপী ঠোট। সব মিলিয়ে অসাধারন সুন্দর একটি ছেলে রাগি লুকে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। চাঁদনী বই টা টেবিলে রেখে ভয়ে একটা ঢোক গিললো। তারপর আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো লাইব্রেরীতে ও আর ঐ ছেলেটা ছাড়া আর কেউ নেই।
চাঁদনী ভয়ে ভয়ে লাইব্রেরী থেকে বের হওয়ার জন্যে পা বারালো। কারন একা একটা ছেলে যা খুশি করতে পারে ওর সাথে তাই চাঁদনীর আর সাহস হলো না। আর তখনি শ্রাবন উঠে দাড়িয়ে চাঁদনীর একটা হাত ধরে একটানে চাঁদনীকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো শ্রাবন।
হঠাৎ হাতে এমন টান পরায় ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো চাঁদনী। চাঁদনীকে চোখ বন্ধ করতে দেখে শ্রাবন দাঁতে দাঁত চেপে বললো
— এখন চোখ বন্ধ করেছো কেনো। তুমি তো খুব সাহসি চোখ খোলো তাকাও আমার দিকে। কি যেনো বলছিলে তুমি আমায়? আবার বলোতো দেখি?
শ্রাবনের কথা শুনে ভয়ে ভয়ে চোখ খুললো চাঁদনী। তারপর শ্রাবনের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করে বললো
— আ আমায় ছে ছেড়ে দিন প্লিজ। আ আমি আপনাকে বলিনি আমি ভেবেছিলাম এ এখানে হৃদয় বসে আছে।
চাঁদনীর কথা শুনে শ্রাবন বাকা হেসে চাঁদনীকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরে বললো
— এমন তোতলাচ্ছো কেনো দুষ্টুপাখি। তুমি তো খুব সাহসী ভ্যাম্পায়ারের সাথে ভাব জমাতে চাও। তাহলে এখন এত ভয় পাচ্ছো কেনো?
শ্রাবনের কথা শুনে বড় বড় চোখ করে শ্রাবনের দিকে তাকালো চাঁদনী তারপর মনে একটু সাহস জুগিয়ে রাগি গলায় বললো
— আমি ভ্যাম্পায়ারের সাথে ভাব করি বা ভুতের সাথে তাতে আপনার কি। ছাড়ুন বলছি আমাকে নইলে আপনি ভাবতেও পারবেন না যে আমি আপনাকে কি করবো।
চাঁদনীর কথা শুনে হা হা করে হেসে দিলো শ্রাবন। তারপর চাঁদনীর মুখের কাছে মুখ নিয়ে বললো
— ভ্যাম্পায়ারের সাথে প্রেম করার খুব শখ না তোমার? খুব সাহসী ভাবো তুমি নিজেকে। কিন্তু তুমি কি জানো ভ্যাম্পায়ারের মনে কোনো দয়া মায়া ভালবাসা থাকে না। কারন তাদের খাদ্য হয় মানুষ। তাই কিছু বলার আগে ভেবে বলবে। আবার এমন যেনো না হয় যে তোমার কথা সত্যি হয়ে তোমার জীবন অভিশপ্ত হয়ে গেলো। আর কি করবে তুমি আমায়? করে দেখাও দেখি কত সাহস তোমার।
শ্রাবনের এত কাছে থেকে অসম্ভব ভয় করছে চাঁদনীর এমনিতে চাঁদনী সাহসী হলেও কখনো কোনো ছেলের সাথে এতটা কাছে আসেনি বা একা থাকেনি। তাই ভয়টা বেশ জেকে বসেছে চাঁদনীর মনে। আর শ্রাবন সেটা বুঝতে পেরে চাঁদনীর ভয় পাওয়াটাকে বেশ ইনজয় করছে।
চাঁদনী শ্রাবনের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা করলো। কিন্তু শ্রাবনের শক্তির কাছে নিজেকে শক্তিশূন্য পুতুল মনে হচ্ছে চাঁদনীর তাই কোনো উপায় না পেয়ে শ্রাবনের গলায় কামড় বসিয়ে দিলো চাঁদনী। শ্রাবন এমন একটা ঘটনার জন্যে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। শ্রাবনের হাত একটু ঢিলা হতেই চাঁদনী দৌড়ে লাইব্রেরীর দরজার কাছে গিয়ে পিছনে ফিরে শ্রাবনকে উদ্যেশ্য করে বললো
— দেখলেন তো চাঁদনীর সাহস ঠিক কতটা। আর হ্যা ভ্যাম্পায়ারের সাথে প্রেম করার খুব শখ তো আমার। তাই ভ্যাম্পায়ারের মতো একটু কামড় দেওয়ার ট্রাই করলাম। আমার থেকে ১০ হাত দুরে থাকবেন। নইলে এর পর সত্যিই ভ্যাম্পায়ারের মত আপনার রক্ত চুষে খাবো বেটা কান কাটা হনুমান একটা আসছে চাঁদনীকে ভয় দেখাতে হুহহ।
কথাটা বলেই দৌড়ে চলে গেলো চাঁদনী। চাঁদনীর এমন কান্ড দেখে আর ওর কথা শুনে থ হয়ে দাড়িয়ে আছে শ্রাবন। এটা মেয়ে নাকি আস্ত কোনো শাঁকচুন্নি। কোনো ভয় ডর নেই এর মাঝে। একে তো আমার চাই চাই। ভ্যাম্পায়ারের সাথে প্রেম করার শখ তো তোমার। তুমি এই ভ্যাম্পায়ারেরই বউ হবে মাই ডেভিল কুইন।
কথাটা ভেবেই মুচকি হাসলো শ্রাবন। আর তখনি হাওয়ার বেগে শ্রাবনের সামনে এসে দাঁড়ালো শ্রাবনী। তারপর বাকা হেসে বললো
— কি ভাইয়া মিললো তো আমার কথা? শেষ মেষ তুমি পরলে তো আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড এর প্রেমে? আমি জানতাম ঐ দুষ্টুপাখি তার দুষ্টুমিতে তোমায় পাগল করবেই। হিহিহি
শ্রাবনীর কথা শুনে রাগি চোখে শ্রাবনীর দিকে তাকালো শ্রাবন। সাথে সাথে শ্রাবনী সেখান থেকে হাওয়া।
শ্রাবনের মুখে ফুটে উঠলো মিষ্টি হাসি। হ্যা শ্রাবন প্রেমে পরে গেছে তার চাঁদনীর তার দুষ্টু পাখির। হঠাৎ কিছু একটা ভেবে চোখ মুখ শক্ত করলো শ্রাবন। তারপর বাতাসের মতো ছুটে চলে গেলো কোথায় যোনো,,,,
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
গত পর্বে অনেকেই প্রশ্ন করেছিলেন শ্রাবন ভালো ভ্যাম্পায়ার হলে নির্দোষ কিছু মানুষকে কেনো মারলো। তাদের বলছি গল্পটা পড়তে থাকেন ধিরে ধিরে সব জানবেন। রহস্য এখনো শুরুই হয়নি।