#ভ্যাম্পায়ার বর
পর্ব ৪
#M_Sonali
লোকটা ধিরে ধিরে চাঁদনীর পাশে গিয়ে বসলো। তারপর মুখে ফুটিয়ে তুললো রহস্যময় হাসি। লাল টকটকে চোখ দুটো সামনে শিকারকে পেয়ে যেনো চকচক করে উঠেছে। ঠোট ভেদ করে বাইরে বেরিয়ে এসেছে শুচালো চিকন লম্বা দাঁত। আর সেই দাঁত নিয়ে লোকটা এগিয়ে গেলো চাঁদনীর গলার কাছে। চাঁদনীর গায়ের ঘ্রান যেনো আরো বেশি টানছে লোকটাকে ওর দিকে। লোকটা আর দেড়ি না করে চাঁদনীর গলায় নিজের দাঁত বসাতে গেলো। আর তখনি চাঁদনী ঘুমের ঘোরে লোকটাকে টেডিবিয়ার ভেবে জরিয়ে ধরলো।
চাঁদনীর এমন কান্ড দেখে লোকটার রক্তের পিপাশা যেনো নিমিষেই উড়ে গেলো। লোকটা অবাক হয়ে চাঁদনীর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। চাঁদনীর ঘুমন্ত মুখটা দেখে কেমন একটা ভাললাগা কাজ করছে লোকটার মনে। কিন্তু মুহুর্তেই নিজের ভাললাগাকে দুরে রেখে লোকটার চোখ মুখ সব লাল হয়ে গেলো। এই মুহুর্তে তার রক্ত চাই। লোকটা আবারো চাঁদনীর গলার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। আর তখনি চাঁদনীর ঘুম ভেঙে রুমের ড্রিম লাইটের আলোয় লোকটার ভয়ংকর রুপ দেখে ভয়ে গলা ফাটিয়ে একটা চিৎকার দিয়ে উঠে বসলো চাঁদনী
— ভু ভু ভুত আআআআআআআআআআআআআআআআ
চাঁদনীর চিৎকারে পাশের রুম থেকে ওর আম্মু ছুটে চলে এলো চাঁদনীর কাছে। চাঁদনী সব সময় দরজা খোলা রেখে ঘুমায় তাই ওর মায়ের আর ডাকতে হলো না। চাঁদনীর পাশে এসে দেখলো চাঁদনী চোখ বন্ধ করে বসে থেকে সমানে চিৎকার করছে। চাঁদনীর মা চাঁদনীর মাথায় হাত বুলিয়ে মেয়েকে বুকে জরিয়ে নিয়ে বললো
— চাঁদ মা কি হয়েছে তোর এভাবে চিৎকার করছিস কেনো মামনি। চোখ খোল এই দেখ আমি তোর আম্মু।
মায়ের কথায় চোখ মেলে তাকালো চাঁদনী তারপর মাকে জাপটে ধরে কান্না করে দিয়ে বললো
— আ আম্মু আ আমি রাক্ষস দেখেছি। আমার রুমে রাক্ষস এসেছিলো। আমায় খেয়ে ফেলতে।ইয়া বড় বড় দাঁত ঐ রাক্ষসটার।
চাঁদনীর কথায় চাঁদনীর মাথায় হাত বুলিয়ে ওর মা বললো
— তুই হয়তো স্বপ্ন দেখেছিস চাঁদ, দেখ তোর রুমে তুই ছাড়া আর কেউ নেই। জানালা দরজাও তো লাগানো। আর রাক্ষস আসবে কোথাথেকে। রাক্ষস বলতে কিছু হয়না। তখন নিউজে ঐ সব দেখে হয়তো স্বপ্নেও ঐসব দেখেছিস ভয় নেই মামনি এই তো আমি তোর পাশেই আছি।
মায়ের কথায় মাকে ছেড়ে পুরো রুমের মাঝে চোখ বুলালো চাঁদনী। সত্যিই তো রুমের ভিতর কেউ নেই আর জানালার কাঁচগুলোও লাগিয়ে রাখা। চাঁদনী একটু শান্ত হলো আর ভাবলো হয়তো সত্যিই স্বপ্নে দেখেছে ও। রাতে আর চাঁদনীর মা চাঁদনীকে ছেড়ে গেলো না। চাঁদনীর পাশেই ঘুমিয়ে পরলো।
,
,
জঙ্গলের ভিতর একটি বড় গাছের নিচে জ্বলন্ত চোখে দাড়িয়ে আছে শ্রাবন। হ্যা শ্রাবনই সেই ভ্যাম্পায়ার যে চাঁদনীর রক্ত খাওয়ার জন্যে ওর রুমে ঢুকেছিলো।
রাগে শ্রাবনের শরীর যেনো জ্বলে যাচ্ছে। ও কেনো পারলো না ঐ ফাজিল মেয়োটাকে মারতে? ও তো চাইলেই মুহুর্তের মাঝে চাঁদনীর রক্ত খেয়ে ওকে সেখানেই শেষ করে দিতে পারতো। কিন্তু পারলো না কোনো? হ্যা এটা ঠিক যে শ্রাবন একজন পিওর ভ্যাম্পায়ার হলেও কখনো কোনো নির্দোষ মানুষের রক্ত খেয়ে তাদের মারে নি। কারন শ্রাবন ভ্যাম্পায়ার হলেও মানুষের ক্ষতি করে না। কিন্তু চাঁদনীর ওপর তো ওর প্রচন্ড রাগ ছিলো তাহলে চাঁদনীকে কেনো মারতে পারলো না ও?
এসব ভাবছে আর রাগে দাঁত কটমট করছে শ্রাবন। তখনি একটা সুন্দরী মেয়ে উড়ে এসে শ্রাবনের সামনে নামলো। তারপর শ্রাবনের কাছে এগিয়ে এসে বললো
— কি হয়েছে তোমার ভাইয়া? আজকে কোনো শিকার পাওনি নাকি? এত রেগে আছো কেনো?
— আমি ঐ ফাজিল মেয়েটাকে মারতে পারিনি ঐ চাঁদনীর রক্ত খেতে গিয়েও মারতে পারিনি। ওর রক্ত দিয়ে নিজের পিপাশা মেটাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু পারিনি আমি। কেনো পারলাম না ওকে মারতে। কেনো কনো?
রাগি গলায় চিৎকার করে বললো শ্রাবন। শ্রাবনের কথা শুনে হালকা রাগি গলায় মেয়েটি বললো
— ভাইয়া তুমি এটা মোটেও ঠিক করোনি। তুমি চাঁদকে মারতে পারো না। ও দুষ্টু হলেও অনেক ভালো একটি মেয়ে। আর তাছাড়া তুমি তো অন্য ভ্যাম্পায়ারদের মতো না। তুমিতো কোনো নির্দোষ মানুষের রক্ত খাওনা। তাহলে ওকে কেনো মারতে চাইছো?
— ভালো মাই ফুট, ও আমার সাথে এই ভ্যাম্পায়ার শ্রাবনের সাথে বেয়াদবি করার সাহস দেখিয়েছে। ওকে তো আমার হাতে মরতেই হবে। ওর রক্ত খেয়েই আমি আমার তৃষ্ণা মিটাবো।
— ওকে আমি আর তোমায় কিছু বলবো না ভাইয়া। তবে এমন যেনো না হয় যে চাঁদের রক্ত খেতে গিয়ে তুমি অন্য কিছু করে বসো।
— অন্য কিছু মানে?
শ্রাবনের কথার উত্তর না দিয়ে মুচকি হেসে উড়ে চলে গেলো মেয়েটা। শ্রাবনের রাগ যেনো আরো দিগুন বেরে গেলো। শ্রাবন দৌড়াতে লাগলো হাওয়ার বেগে। রাগ যেনো কিছুতেই কমছে না ওর।এখনি ওর তাজা রক্ত চাই।নিজের রক্তের পিপাশা আর চাঁদনীর ওপর হওয়া রাগ মিটাতে রক্ত চাই ওর। হঠাৎ একটা পোড়া বাড়ির সামনে গিয়ে থেমে গেলো শ্রাবন। ঐ পোড়া বাড়ির ভিতর থেকে ভেসে আসছে একটি মেয়ের আর্তনাদ আর কয়েকজন ছেলের হাসাহাসি। শ্রাবন নিজের ভয়ংকর ভ্যাম্পায়ার রুপে ঐ বাড়ির ভিতর প্রবেশ করলো। সেখানে তিনজন ছেলে একটি মেয়েকে তুলে এনে তার সাথে জবরদস্তি করার চেষ্টা করছে। শ্রাবনের ভয়ানক রুপ দেখেই মেয়েটাকে ছেড়ে ভয়ে চিৎকার করে উঠলো ছেলেগুলো। শ্রাবন হাওয়ার বেগে একটি ছেলের কাছে গিয়ে তার গলার শিরায় নিজের ভয়ানক শুচালো দাতগুলো বসিয়ে দিলো। তারপর মুহুর্তের মাঝে ছেলেটার সব রক্ত চুষে নিয়ে মেরে ফেললো ছেলেটাকে। ঐ ছেলেটার এমন ভয়ানক মৃত্যু চোখের সামনে দেখে ভয়ে চিৎকার করে জ্ঞান হাড়ালো মেয়েটা। আর বাকি ছেলেদুটো দৌড় দিলো বাইরের দিকে। কিন্তু তার আগেই শ্রাবন ছেলেগুলোকে ধরে ফেললো আর একে একে দুজনকেই রক্ত খেয়ে মেরে ফেললো।
ওদের রক্ত খেয়েও যেনো নিজেকে শান্ত করতে পারছে না শ্রাবন। তাই নিজের লম্বা ভয়ানক ধারালো নক দিয়ে ছিড়ে ফেড়ে টুকরো টুকরো করে ফেললো ছেলে তিনটার রক্তশুন্য লাশ। শ্রাবনকে দেখতে এখন অসম্ভব হিংশ্র লাগছে। শ্রাবনের মুখ থেকে টপটপ করে ঝড়ে পরছে তাজা রক্ত, চোখ গুলোতে যেনো আগ্নেয়গিরির লাভা ঠুকরে বের হচ্ছে। ভয়ানক সেই চেহারা নিয়ে খুব জোরে একটা গর্জন করে উঠলো শ্রাবন। শ্রাবনের গর্জনে কেপে উঠলো সারা পোড়াবাড়ি।
,
,
সকালে পোড়াবাড়ি থেকে চারটি লাশ উদ্ধার করলো পুলিশ। তার মাঝে তিনটি ক্ষতবিক্ষত ছেলে মানুষের দেহ আর একটি মেয়ের রক্ত শুন্য ফ্যাকাসে মৃত দেহ। একের পর এক এমন ভয়ানক মৃত্যু দেখে তোলপাড় শুরু হয়ে গেলো পুরো সিলেট জুরে। কে বা কারা এভাবে খুব করেছে এদের তার সঠিক তথ্য কেউ বলতে পারছে না। এদিকে সিলেটের আরেক প্রান্ত থেকে আরো দুটো লাশ উদ্ধার করা হলো আর সেগুলোও রক্ত শুন্য। এলাকা জুরে সকলের মনে ভয়ের সীমা নেই। টিভি ও নিউজ পেপারে শির্ষ খবরই হলো এটা। লাশগুলো নিয়ে শুরু হলো না না রকমের গবেষনা।কেউ কেউ বলছে এটা কোনো হিংশ্র জানোয়ারের কাজ। তো কেউ বলছে এটা নতুন কোনো হিংশ্র মানুষ রুপি পশুর কাজ। কিন্তু কেউই সঠিক তথ্য দিতে পারছে না।
,
,
কলেজে মিতু শ্রাবনী আর চাঁদনী বসে বসে গল্প করছে। মিতু আর শ্রাবনী ঐ খুন গুলোকে নিয়ে গল্প করলেও চাঁদনীর সে দিকে খেয়াল নেই। চাঁদনী চুপ করে বসে কি যেনো ভাবছে। চাঁদনীকে এমন চুপচাপ থাকতে দেখে মিতু আর শ্রাবনী এক সাথে বলে উঠলো
— কি রে দুষ্টুপাখি, কি হয়েছে তোর আজকে এমন চুপচাপ কেনো তুই?
— জানিস তোরা, গত রাতে আমি একটা খুব ভয়ানক স্বপ্ন দেখেছি। আর সেই স্বপ্নটাকে নিয়েই ভাবছি আমি।
চাঁদনীর কথা শুনে শ্রাবনী বললো
— কি এমন স্বপ্ন দেখেছিস রে যে এতটা ভাবছিস স্বপ্ন নিয়ে?
— আমি কাল রাতে স্বপ্নে দেখি আমি একটা মানুষরুপি ভয়ানক কোনো এক জন্তু যেমন ধর ঐ যে অনেক সিনেমাতে দেখায় না ভ্যাম্পায়ার না কি। তো ঐ রকম একটা ভ্যাম্পায়ারকে জরিয়ে ধরে শুয়ে আছি। আর সেই ভ্যাম্পায়ারটা আমার রক্ত খেতে আমার দিকে এগিয়ে আসছে তার ভয়ানক লম্বা দাঁত নিয়ে।
চাঁদনীর কথা শুনে মিতু আর শ্রাবনী এক সাথে উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠলো
— ইয়া আল্লাহ, তারপর, তারপর কি হলো রে, ঐ ভ্যাম্পায়ারটা তোর রক্ত খেয়ে নিলো? তুই মনে হয় খুব ভয় পাইছিলি তাইনা চাঁদ?
মিতু আর শ্রাবনীর কথা শুনে একটা শুকনো ঢোক গিলে ভয় না পাওয়ার ভাব নিয়ে চাঁদনী বললো
— আরে ধুর এই চাঁদনী ঐ সব দেখে ভয় পায়না। বরং স্বপ্নের মাঝে আমি তো ঐ ভ্যাম্পায়ারটাকে ডুসুম ডুসুম করে সেই লেভেলের ক্যালানি দিলাম। বেচারা ভ্যাম্পায়ারটা আমার হাতের মাইর খেয়ে ভয়ে চিৎকার করে আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে লেজ গুটিয়ে পালালো। হুহহ এসেছিলো চাঁদনীর রক্ত খেতে ও হয়তো জানেনা আমি কে।
চাঁদনীর কথা শুনে মিতু আর শ্রাবনী দুজন এক সাথে হা হা করে হাসতে লাগলো। তারপর কিছুক্ষণ হাসার পর হাসি থামিয়ে বলে উঠলো
— সত্যিই রে চাঁদ চাপা মারা কত প্রকার ও কি কি এটা লোকে তোর কাছে শিখবে। তুই যা চাপাবাজ না কি বলবো। একবার সত্যি সত্যিই ভ্যাম্পায়ারের সামনে পরলে বুঝবি ভয় কাকে বলে।
শ্রাবনী আর মিতুর কথা শুনে নিজের নাকটাকে ঘষা দিয়ে চোখ ছোট ছোট করে রাগি গলায় বললো
— হ্যা হ্যা দেখেনিস তোরা, যদিও ভ্যাম্পায়ার বলতে কিছু নেই। তবে যদি সত্যিই কখনো ভ্যাম্পায়ার আমার সামনে আসে না আমি তাকে ইচ্ছা মতো ক্যালানি দিবো। তারপর ঐ ভ্যাম্পায়ারটার সাথে ভাব জমাবো। শুনেছি ভ্যাম্পায়াররা নাকি খুব রোমান্টিক হয় তাই।
চাঁদনীর কথা শুনে মিতু আর শ্রাবনী আবারও হা হা করে হাসতে লাগলো। ওদিকে আড়ালে দাড়িয়ে দুটি হিংশ্র চোখ এক নজরে তাকিয়ে আছে চাঁদনীর দিকে। চাঁদনীর কথা শুনে রাগে তার শরীর জ্বলছে কিন্তু শেষ কথাটা শোনার পর আপন মনেই হেসে দিলো লোকটা।
,
,
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
বাথরুমে পা চ্লিপ করে পরে গিয়ে ডান হাতটা প্রায় মচকে গেছে আমার। অসম্ভব ব্যাথা হাতে। গল্প লিখতে কষ্ট হচ্ছে তাই অল্প করেই লিখলাম। কেউ পার্ট ছোট হয়েছে বলে রাগ করবেন না। ধন্যবাদ