মীরা
তখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ি। থাকি মৈত্রী হলের ৪০০৯ নম্বর রুমে। আমার পাঁচজন রুমমেট— রোজী আপা, ইলা, লীনা, ইলার ডাবলিং আয়শা আর আমার ডাবলিং শিলা।
চার বেডের রুমে ছয়জন হলেও আমাদের তেমন খারাপ লাগে না। রুমমেটদের সবার সাথে সবার সম্পর্ক ভালো। সবাই সবার সুযোগ সুবিধা বিবেচনা করে চলি। তাছাড়া শিলা আর লীনার বাসা সাভারে। তারা প্রায় সময়ই বাসায় থাকে। ইলার বড় ভাই ও বড় বোন ঢাকায় থাকে। ইলাও প্রায়ই ভাই বা বোনের বাসায় চলে যায়। রোজী আপা, আয়শা আর আমিই বেশী হলে থাকি।
বারান্দার সাথের দুটি জানালার পাশের বেড দুটিতে থাকে রোজী আপা আর লীনা। কারণ ওদের এই রুমে আসার আগে আমি আর ইলা এসেছি। তাই আমরা দুজন উত্তর দিকের বড় জানালার পাশের বেড দুটি নিয়েছি। আমাদের জানালা দিয়ে বিডিআরের ভিতরে দেখা যায়। সেখানে সবুজ ঘাসে ঢাকা মাঠ, বিশাল গোলাপ বাগান আর বড় বড় গাছের সারি আমাদের মুগ্ধ করে। একটা বড় পুকুরও দেখা যায়।
প্রথম প্রথম আমি আর ইলা খুব খুশী থাকলেও কিছুদিন পরেই বুঝতে পারলাম বারান্দার দিকের বেড দুটিই বেশ আরামদায়ক। কারণ রাতে বারান্দার জানালা দিয়ে হু হু করে দক্ষিণের বাতাস ঢুকে। আমাদের রুমে কোন ফ্যান নেই। কিন্তু রাত একটু গভীর হলেই ঐ দুটি বেডে ঠান্ডা লাগতে থাকে। ভোর রাতে তো রীতিমত কাঁথা গায়ে দিতে হয়। আর আমাদের দিকে বেডে আমরা গরমে সিদ্ধ হতে থাকি। আমি একটা টেবিল ফ্যান কিনেছিলাম কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়না। রাতে ঠিকমত কারেন্ট থাকে না। তাই আমি আর ইলা সুযোগ পেলেই রোজী আপা আর লীনার বেডে ঘুমাই।
একদিন হলের গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকছি দেখি সামনে পরিচিত একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ও দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমিও ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
— আরে মীরা? তুই এখানে?
মীরা আমার ছোটবেলার বান্ধবী। ফরিদপুরে গার্লস স্কুলে আমরা দুজন ক্লাশ থ্রি থেকে একসাথে পড়েছি। তারপরে কলেজে উঠে আমরা দুজন দুই কলেজে ভর্তি হওয়ার কারণে যোগাযোগটা কমে গিয়েছিলো। এরপরে আমি ঢাকায় চলে আসি আর মীরা রাজেন্দ্র কলেজে ডিগ্রীতে ভর্তি হয়। সেই থেকে মীরার সাথে আমার আর দেখা হয়নি। এরমধ্যে আমি ছুটিছাটায় নিয়মিত বাড়ি যাই কিন্তু কেন যেন মীরার সাথে আর দেখা হয়নি।
আমি আজ ওকে পেয়ে ভীষণ খুশী। ছোটবেলার বন্ধুত্ব কখনো অমলিন হয় না। মীরাকে দেখে আমার মনে হলো আমার একজন আপনজনের সাথে দেখা হলো। নানা রকম কুশল বিনিময়ের পরে জানতে চাইলাম,
— তুই এখানে কেন?
ও জানালো বিএ পাশ করে ও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রিলিমিনারিতে ভর্তি হয়েছে। মৈত্রী হলে সংযুক্ত। হল অফিসের কাজে এসেছে।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম,
— কোথায় আছিস?
— শামসুন্নাহার হলে একজন আত্মীয়ের রুমে আছি। মৈত্রী হলে ডাবলিং খুঁজছি।
— ইস আমার যদি ডাবলিং না থাকতো তাহলে কি যে ভালো হতো। তোকে ডাবলিং নিয়ে নিতাম।
— থাক তুই মন খারাপ করিস না। একটা ব্যবস্হা হবে।
ক্যাম্পাসে যাওয়ার বাসটা ছেড়ে যাচ্ছে। মৈত্রী হলের গেট থেকে মেয়েরা সবাইকে চিৎকার তরে ডাকছে। মীরা বাস ধরার জন্য দৌড় দিলো। আমি বললাম,
— দুপুরে আমার সাথে ভাত খেয়ে যা।
— আর একদিন খাবো।
একথা বলে এক দৌড়ে যেয়ে বাসে উঠে গেলো।
কয়েকদিন পরে দুপুরের দিকে রুমে বসে হীটারে রান্না করছিলাম। হঠাৎ কে যেন দরজায় ঠক ঠক করছে। পর্দার কারণে আমি মেয়েটাকে দেখতে পাচ্ছি না। বললাম,
— কে? ভিতরে আসেন।
মেয়েটা পর্দা সরিয়ে উঁকি দিলো। মীরা এসেছে। আমি ওকে দেখে খুব খুশী হলাম। সেদিন ওকে আর যেতে দিলাম না। কারণ সেদিন রুমে আমরা তিনজন ছিলাম। মীরা আমার বিছানায় ঘুমালো আর আমি লীনার বিছানায় ঘুমালাম।
সকালে উঠে সবাই ক্যান্টিনে নাস্তা খেয়ে যে যার মত ক্লাশে চলে গেলাম। মীরাকে বললাম ক্লাশ করে চলে আসতে। ও রাজী হলো। আসার সময় শামসুন্নাহার হল থেকে অতিরিক্ত ড্রেস নিয়ে আসবে। সেদিন দুপুরে আয়শা মুখ কালো করে ক্লাশ থেকে রুমে ফিরলো। কাঁদো কাঁদোভাবে বললো,
— আপু, বাড়ি থেকে খবর এসেছে আম্মা হঠাৎ খুব অসুস্হ হয়ে পড়েছে। আমি এখনই মামার সাথে বাড়ি যাচ্ছি।
আয়শা বাড়ি চলে গেলো। সেদিন রুমে থাকলাম আমরা তিনজন- আমি, রোজী আপা আর মীরা। সারা সন্ধ্যা মীরার সাথে অনেক গল্প করলাম। হলের মাঠে সবুজ ঘাসে হাঁটলাম। একটু বেশী রাতে ঘুমাতে গেলাম। মীরা আমার বেডে, আমি লীনার বেডে আর রোজী আপা তার নিজের বেডে ঘুমালাম। কিছুক্ষণের মধ্যে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম। কখন যেন ঘুমটা হালকা হয়ে গেলো। একটু একটু ঠান্ডা লাগছে। মনে হলো আমার বেড থেকে কেউ একজন নেমে এসে আমার মশারী তুলে আমার মাথার বালিশের পাশে বসলো। অন্ধকারের মধ্যে আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম মেয়েটা রুবি। ইলা আসার আগে ঐ বেডে রুবি থাকতো। রুবির বিয়ে হয়ে যাওয়াতে হল ছেড়ে বাসায় চলে গেছে। ওর একটা হাত আমার কপালে দিলো। সঙ্গে সঙ্গে আমার ঘুম পুরোপুরি ভেঙ্গে গেলো। আমি চোখ খুলে তাকালাম কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না। ভয়ে একদম পাথর হয়ে গেছি। জানালা দিয়ে ঠান্ডা বাতাস ঢুকছে। মনে হচ্ছে কিছুক্ষণ আগে বৃষ্টি হয়ে গেছে। সাহস করে পাশ ফিরলাম। দেখি রোজী আপা বিছানায় বসে আছে। অন্ধকারে আমি উনার মুখ দেখতে পাচ্ছি না। উনি বললো,
— মিলি, তুমি জেগে আছো?
— না আপা। এখনি ঘুম ভাঙ্গলো।
— তাহলে কে দরজা দিয়ে বাইরে গেলো?
— মীরা যেতে পারে।
আমি মীরাকে দেখতে পাচ্ছি না কারণ ঐ বেডটা আমার মাথা বরাবর পিছনে। রোজী আপা দেখতে পাচ্ছে। উনি বললো,
— না। মীরা ঘুমাচ্ছে।
আমিও বিছানায় উঠে বসলাম। দেখি মীরা দেয়ালের দিকে মুখ করে ঘুমাচ্ছে। আমাদের কথাবার্তায়ও কোন সাড়া দিচ্ছে না। আধো ঘুম আধো জাগরণে আমি এই মাত্র যা দেখলাম তা রোজী আপাকে আর বললাম না। দুজন একসাথে বারান্দায় বের হলাম। আমাদের রুমের সামনে বারান্দার লাইট জ্বালিয়ে দিলাম। টয়লেটে গেলাম। কোথাও কাউকে দেখলাম না। হলের সবাই ঘুমাচ্ছে। রুমে ফিরে এসে দরজা বন্ধ করে দুজন কাঁথা মুড়ি দিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে ক্যান্টিনে নাস্তা খেতে খেতে মীরা বললো,
— আজ চলে যাই। পরে আবার এসে থাকবো।
আমি বা রোজী আপা কেউই কিছু বললাম না।
সেদিন মীরা চলে গেলো। তারপর আর কোন খবর নেই। আমিও আর যোগাযোগ করিনি। অনেকদিন পরে একদিন ক্যান্টিনে মীরার সাথে আবার দেখা। আমি বললাম,
— মীরা, কেমন আছিস? কখন এসেছিস?
— দুদিন হলো।
আমি অবাক হয়ে বললাম,
— কোন রুমে উঠেছিস?
— ১১১১ নম্বর রুমে।
— পরিচিত কেউ আছে?
— না রে। শামসুন্নাহার হলে যার সাথে থাকতাম সে এই রুমে একটা ডাবলিং যোগাড় করে দিয়েছে।
আমি মীরার সাথে ওর রুম দেখে এলাম। মনে মনে খুশী হলাম ওর সাথে সন্ধ্যার পরে হলের মাঠে একসাথে হাঁটতে পারবো। কয়েকদিনের মধ্যেই লক্ষ্য করলাম ও আমাকে একটু এড়িয়ে চলে। ও কখনো আমার রুমে আসে না। আমি ওর রুমে গেলে কেমন যেন রুমমেটদের নিয়ে ব্যস্ত ব্যস্ত ভাব দেখায়। আমার মনটা বেশ খারাপ হলো। আমি ভাবলাম হয়তো আমি ওকে আমার রুমে থাকার ব্যবস্হা করিনি সেজন্য ও অভিমান করেছে। মনে মনে নিজেকে খুব অসহায় মনে হলো। আমিও ওর সাথে দূরত্ব বজায় রেখে চলতে লাগলাম।
প্রায় তিন মাস কেটে গেলো। হঠাৎ একদিন দেখি মীরা আমাদের বিল্ডিং-এর দোতলায় ঢুকছে। আমি আর পিছন থেকে ডাক দিলাম না। পর পর কয়েকদিন ওকে এখানেই দেখলাম। জানতে পারলাম মীরা ১১১১ নম্বর রুম ছেড়ে ২০০৫ নম্বর রুমে ডাবলিং এসেছে। মীরা আমাকে কিছুই জানালো না তাই আমি আর নিজ থেকে কিছু জানতে গেলাম না। তবে মনে মনে ধরে নিলাম নীচ তলার রুমে মশা, মাছি যেমন বেশী, বিড়ালেরও উপদ্রব আছে। তাই হয়তো রুম বদল করেছে। তবে এতো সহজে ডাবলিং যোগাড় করে ফেলেছে দেখে অবাক হলাম।
সেদিন টিভি রুমে নাটক দেখতে গিয়েছি। ১১১১ নম্বর রুমের একটি মেয়ের পাশে বসেছি। মেয়েটি বললো,
— আপা, মীরা আপা কি আপনার পরিচিত?
— হ্যাঁ। আমরা স্কুলে একসাথে পড়তাম।
— আপা, যদি কিছু মনে না করেন তাহলে একটা কথা জিজ্ঞাসা করি ?
আমি একটু অবাক হয়ে বললাম,
— কি কথা? কিছু মনে করবো না জিজ্ঞাসা করো।
— উনার সাথে কি কিছু আছে?
— মানে?
— উনি যখন আমাদের রুমে থাকতো রাতে প্রায়ই আমরা শুনতাম রুমের ভিতরে কেউ নুপুর পায়ে হাঁটছে।
— বলো কি? মীরাও শুনতো?
— না, উনি শুনতো না।
আমি আর বেশী কথা বাড়ালাম না। আমার আর রোজী আপার সে দিন রাতের অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেলো। তবে সে প্রসঙ্গে কিছু না বলে বললাম,
— কি জানি, আমি জানি না। ফরিদপুরে থাকতে এমন কথা কখনো শুনিনি।
কিছুদিনের মধ্যে আমাদের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হলো। সবাই পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত। একদিন পরীক্ষা দিয়ে হলে ঢুকছি দেখি মীরা বড় একটা ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো। অনেকদিন পরে ও আমাকে এড়িয়ে গেলো না। মনে মনে খুব খুশী হলাম। ভাবলাম, যাক আমার উপর অভিমান মনে হয় কমেছে। আমিও হেসে বললাম,
— কোথায় যাচ্ছিস?
— বাড়ি যাচ্ছি।
— পরীক্ষা শেষ?
— আজকেই শেষ হলো।
আমি হাত নেড়ে ওকে বিদায় জানালাম। মনে মনে ভাবলাম এবার ফরিদপুরে গেলে মীরাদের বাড়িতে বেড়াতে যাবো।
দেখতে দেখতে আমারও পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলো। ক্যান্টিনে বসে পরীক্ষা শেষের আনন্দে কয়েক বান্ধবী মিলে চা সিঙ্গারা খাচ্ছিলাম আর আড্ডা দিচ্ছিলাম। সুমি বললো,
— মিলি, মীরা নামের মেয়েটা কি তোর সাথে পড়তো?
— হ্যাঁ। কেন?
— ২০০৫ নম্বর রুমের মেয়েদের বড় জ্বালিয়েছে।
— মানে? কি বলছিস? ও তো বেশ ভালো মেয়ে।
— আমি যে জ্বালানির কথা বলছি তুই তা বুঝিসনি।
— কি বলছিস পরিস্কার করে বল।
— প্রথম দিকে রাতে রুমে থাকতো না। প্রায়ই বলতো শামসুন্নাহার হলে থাকবে। শুধু পরীক্ষার সময় থাকতো। রাতভর রুমের মধ্যে হাঁটাহাঁটি করতো। ঘুমের মধ্যে কথা বলতো, হাসতো। রুমমেটরা বললে স্বীকার হতো না।
— ওকে কি কেউ হাঁটতে দেখেছে?
— না তা দেখেনি। তবে হাঁটার শব্দে ওদের ঘুম ভেঙ্গে যেতো। ঘুম থেকে উঠে অবশ্য ওরা দেখতো ও ঘুমিয়ে আছে।
— হাউজ টিউটরের কাছে কমপ্লেন করেনি কেন?
— করেছিলো। হাউজ টিউটর বরং ওদের বকা দিয়ে দিয়েছে। যেহেতু কেউ ওকে নিজে চোখে হাঁটতে দেখেনি তাই ম্যাডামরা কমপ্লেন নেয়নি।
আমি একটু নিরব হয়ে গেলাম। মীরা সম্বন্ধে কোন খারাপ কথা বলতে বা শুনতে আমার একটুও ইচ্ছা করছে না। এমন সময় ক্যান্টিনে ২০০৫ নম্বর রুমের একটা মেয়ে এলো। ওকে সুমি ডাক দিয়ে বললো,
— এই লাইজু মীরা কি কি করতো একটু বলতো।
মেয়েটার মুখটা একদম ভয়ে কেমন হয়ে গেলো। ভয়ে ভয়ে বললো,
— জানেন লাস্ট দিন কি করেছে? আমার প্রায় তিন/চার ডজন কাঁচের চুড়ি ছিলো। উনি চলে যাওয়ার পরে দেখি সবগুলি চুড়ি ভাঙ্গা।
সবাই আমার মুখের দিকে তাকালো। মনে হলো যেন ওর স্কুলের বান্ধবী হিসেবে আমিই এর জন্য দায়ী। লাইজু একটু থামলো তারপর ফিসফিস করে বললো,
— উনার সাথে মনে হয় জ্বিন আছে।
এ কথা শুনে ভয়ে সবাই আঁতকে উঠলো। একজন ওকে বললো,
— তোমার উপরে কি কোন কারণে রাগ ছিলো?
— মনে হয়। কারণ আমিই সবাইকে নিয়ে হাউজ টিউটরের কাছে নালিশ দিয়েছিলাম।
— ও এ কথা জানলো কিভাবে?
— জানি না। জ্বিনতো সেইজন্য মনে হয় জেনে গেছে।
মাগরিবের আজান শুরু হলো।আমাদের আলোচনা এখানেই শেষ হলো। আমরা সবাই যে যার রুমে চলে গেলাম।
পরীক্ষা শেষে আমিও বাড়িতে বেড়াতে এলাম। মীরাদের বাড়ি আমাদের বাড়ি থেকে বেশ দূরে তাই নানা ব্যস্ততার কারণে ওর সাথে যোগাযোগ করা হলো না। মাসখানিক পরে যেদিন ঢাকায় ফিরে আসবো তার আগের দিন ফুচকা খেতে মুজিব সড়কের একটা দোকানে গিয়েছিলাম। ফেরার পথে মীরার কথা মনে পড়লো। তাড়াতাড়ি রিক্সা ঘুরালাম। মীরার ছোট বোন মায়া দরজা খুলে আমাকে দেখে ভীষণ অবাক হলো। কোন কথা না বলে এক দৌড়ে ভিতরে চলে গেলো। আমি ঘরের ভিতরে ঢুকে দাঁড়িয়ে রইলাম। মায়া ওর আম্মাকে ডেকে এনেছে। খালাম্মা ঘরে ঢুকে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন। আমি একটু অবাক হলাম। কাঁদতে কাঁদতে উনি বলছেন,
— ও যে তোমাকে কি ভালোবাসতো! সব সময় বলতো বিএ পাশ করে আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স করবো। মিলির সাথে থাকবো।
আমি খালাম্মার কথা কিছুই বুঝতে পারছি না। উনি কাঁদছেন আর বিলাপের মত এক নাগাড়ে বলেই যাচ্ছেন,
— আমরা ওকে মাস্টার্স পড়তে দিলাম না। ভালো বিয়ের প্রস্তাব আসলো, বিয়ে দিয়ে দিলাম। আমরা হাতে ধরে আমার মেয়েটার সর্বনাশ করলাম।আমার মেয়েটা যৌতুকের বলি হয়ে গেলো।
আমি আঁতকে উঠলাম।খালাম্মাকে হাত ধরে চেয়ারে বসিয়ে বললাম,
— মীরা মারা গেছে?
খালাম্মা একটু অবাক হয়ে বললেন,
— কেন মা তুমি শোন নাই? তালমায় ওর শ্বশুর বাড়ি ছিল। যৌতুকের টাকা দিতে পারি নাই। তাই ওরা আমার মেয়েটাকে মেরে ফেললো। ওর জামাইকে পুলিশ ধরতে পারে নাই। পলাতক।
— সরি খালাম্মা, আমি শুনিনি। মীরা কবে মারা গেছে?
— এই তো নয় মাস হলো।
ভয়ে আমার মুখটা শুকিয়ে গেলো। আজ থেকে আনুমানিক নয় মাস আগেইতো মীরা আমাদের হলে গিয়েছিলো। তারপর পরীক্ষা শেষ করে মাস দুয়েক আগে হল ছাড়লো। তাহলে সে কে ছিলো?
আমি অজ্ঞান হয়ে খালাম্মার গায়ের উপরে পড়ে গেলাম।