রাত তখন প্রায় 2.00 AM..ফেসবুকিং করছিলাম। হঠাৎ দেখলাম একটা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট আসলো। একটা মেয়ের আইডি; আইডির নাম: “সফুরা সুলতানা।”
আমি প্রোফাইল চেক না করেই ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করে ফেললাম।
ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করার পর আমি মেয়েটির প্রোফাইলে ঢুকে তার ছবিগুলো দেখতে লাগলাম।
মাশাআল্লাহ! এতো সুন্দর মেয়েটা! বলার বাহিরে.
তার আইডিতে তার সাথে অনেকেরই ছবি আছে। এরা হয়তো তার পরিবারের লোকজন ও বন্ধু-বান্ধব হবে; এসব দেখে এতটুকু নিশ্চিত হলাম যে এটা ফেইক কোন আইডি না।
আমি ছবিগুলো দেখতে লাগলাম।
মিনিট খানিক পর একটা ম্যাসেজ আসলো. ইনবক্সে গিয়ে দেখলাম এই মেয়েটারই ম্যাসেজ।
মেয়েটি _ Hi
আমিও রিপ্লাই দিলাম _ hello
মেয়েটি বললো, “কেমন আছেন?”
আমি– জ্বি ভালো। আপনি?
~ হ্যাঁ, ভালো।
–জ্বি , ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দেয়ার কোনো কারন?
~ নাহ, এমনি দিলাম।
— ওহ আচ্ছা।
~ আপনাকে ভালো লেগেছে।
তার এ কথা শুনে কিছুটা অবাক হলাম। আবার একটু ভালোও লাগলো। কারন কেউ কোনদিন আমাকে এভাবে বলেনি। ওর ছবিগুলো দেখে আমার ও অনেক ভালো লেগেছে।
আমি জবাব দিলাম,
— ইয়ে..মানে…… বুঝতে পারলাম না
~ বললাম, আপনাকে আমার অনেক ভালো লেগেছে।
— ওহ ……আচ্ছা।
…বন্ধুত্ব করবেন?
— হ্যাঁ, করবো।
~ তাহলে আজ থেকে আমরা বন্ধু ।
— ঠিকাছে ।
তার সাথে বন্ধুত্ব হলো আমার। সারা রাত আরো অনেক কথা বললাম তার সাথে। পরিচিত হলাম অনেকটা।
তার নাম সফুরা। অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ে। কলেজ রোডের পাশেই তার বাসা।
আমিও আমার সম্পর্কে সবকিছু বললাম তাকে।
এভাবে আমরা একে অপরের সাথে কথা বলতে থাকি। আমাদের বন্ধুত্বের প্রায় তিন মাস হয়ে গেলো । এ তিন মাসেই আমার আলাদা একটা ভালোলাগা কাজ করে তার প্রতি। আর সফুরা ও আমাকে পছন্দ করতে শুরু করেছে।
এ তিনমাস আমরা প্রতিদিন চ্যাট করেছি এবং সফুরা আমাকে সবসময় একটাই কথা বলতো যে, “কখনো আমাদের চ্যাটের স্ক্রিনশট নিবে না, আর কখনো আমাকে কোনো পোস্টে মেনশন করবা না।”
এ কথাটা সে সবসময় খুব জোর দিয়ে এবং সিরিয়াসলি বলতো। যা আমার কিছুটা অদ্ভত লাগে যে সে কেনো সবসময় এক কথা বলে।
যাই হোক, আমি এসব মাথায় না নিয়ে সফুরার কথামতো কখনো আমাদের চ্যাটের স্ক্রিনশট নেই নি, আর কখনো তাকে কোনো পোস্টে মেনশন ও করিনি.
সে সবসময় কেন জানি তার আইডিকে লুকাতে চাইতো, কারনটা আমার জানা নেই।
অনেক দিনই হয়ে গেলো আমরা কথা বলছি, কিন্তু বাস্তবে কোনো দেখা নেই।
আমি সফুরাকে জিজ্ঞেস করলাম, “দেখা করবে?”
সফুরা প্রথমে না করলেও, পরে রাজি হয়ে যায়। কারন তারও নাকি অনেক ইচ্ছা আমাকে দেখার।
সফুরা আমাকে একটা কফি শপের নাম বলে, নামটি হলো – “রেড চিলি”
আমি কফিশপটা না চেনার কারনে সফুরা আমাকে সেই এড্রেস ম্যাসেজে পাঠিয়ে দেয়।
সে বললো এই কফিশপে রাত 12.30AM এর দিকে আসতে।
আমি সফুরাকে জিজ্ঞেস করলাম,
— “এতো রাতে দেখা করবা?”
~হ্যাঁ, আম্মু মামা বাড়িতে গিয়েছে, আর আব্বুর রাতের ডিউটি আছে, তাই আমার পক্ষে রাতের বেলায় দেখা করাটাই সুবিধা জনক।
সফুরার যুক্তিটি মানার মতো। তাই আমি এ নিয়ে আর কিছু জিজ্ঞেস করলাম না। আমি বললাম, “আচ্ছা ঠিকাছে আজ রাতেই এসো।“
হুম, ঠিকাছে।
রাত ১১ টার সময় আমি বাসা থেকে লুকিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। সময়টা ছিলো শিতকাল, তাই রাস্তায় মানুষ ছিলো মাত্র হাতে গুনা কয়েকজন। চারিদিকে বরফ ঘন কুয়াশা।
কোনো রিকশা বা বাস নেই। তাই বাধ্য হয়ে পাঁয়ে হাঁটা শুরু করলাম। প্রায় অনেকটা হাঁটার পর একটা রিকশার দেখা মিললো।
রিকশাওয়ালাকে বললাম, মামা সামনে যে “রেড চিলি” কফিশপ আছে, ওখানে যাবেন?
রিকশাওয়ালা প্রায় ৮/১০ সেকেন্ড ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তারপর বললো,
….“সত্যি ঐ হানেই যাইবেন?”
— আরে মামা হ্যাঁ, ওখানেই যাবো।
সে আবার কিছুক্ষন হা করে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।আমি খুব বিরক্ত হচ্ছিলাম তার এ আচরণে। কিছুক্ষ্ন পরে সে বললো,
~ “আইচ্ছা, চলেন। ভাড়া কিছু বাড়ায় দিয়েন।“
রিকশায় উঠে রওনা দিলাম “রেড চিলি” এর দিকে। বেশ খানিকটা সময় লাগলো পৌঁছাতে।
পৌঁছানোর পর রিকশা থেকে নেমে রিকশাওয়ালাকে ভাড়া দিচ্ছিলাম।
রিকশাওয়ালা ভাড়া নিতে নিতে বললো,
~ “মামা! সাবধানে থাকবেন।“
তার এ কথা শুনে আমার কিছুটা খটকা লাগলো।
যাই হোক, আমি হেঁটে হেঁটে চারিদিকে ঘুরতে লাগলাম। কিন্তু “রেড চিলি” নামের কোনো কফিশপ দেখছিলাম না।
চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার, কিছুটা দূরে প্রায় ১২/১৫ টা কুকুর একসাথে ঘেউ ঘেউ শব্দ করছে।
মোবাইলের ফ্লাশ অন করলাম। অন করে উপরে তুলতেই দেখলাম আমার মাথার উপরে একটা ভাঙাচোরা বোর্ড, যে বোর্ডের উপর লেখা “রেড চিলি” কফিশপ।
আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম। কারন এই কফিশপটা এখন আর কফিশপের হালে নেই। প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত। ভাঙা আয়না পড়ে আছে চারিদিকে। পোড়া পোড়া সব টেবিল চেয়ার। দেয়ালগুলো ভেঙে গিয়েছে। আর উপরে ভাঙা দেয়ালে একটা বোর্ড আটকে আছে, যেখানে লেখা- “রেড চিলি কফিশপ”।
আমি প্রচন্ড ভয় পেলাম! হাত-পা কাঁপতে শুরু করলো আমার। আমি কাঁপতে কাঁপতে কোনোমতে মোবাইলটা বের করে ফেসবুকে ঢুকলাম। দেখলাম সফুরা এক্টিভ।
সফুরাকে মেসেজ দিলাম,
- “ কই তুমি? কখন আসবে? আর এই জায়গাটা এমন কেনো?”
~ এইতো আসছি, দু’মিনিট।
সফুরার রিপ্লাই পেয়ে মোবাইলটা আবার পকেটে রেখে দিলাম। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম সেই অন্ধকার জায়গায়। একটু পর অনুভব করলাম গুড়িগুড়ি বৃষ্টির ফোটা আমার মুখে লাগছে আর তীব্র বাতাস শুরু হয়েছে। আমার বুকটা ভয়ে ধকধক করতে লাগলো।
আমি বৃষ্টি হতে বাঁচার জন্য সেই ভাঙাচোরা “রেড চিলি” কফিশপের ভিতর ঢুকে পড়লাম।
মোটামোটি কিছুটা হলেও বৃষ্টি থেকে বাঁচা যাচ্ছে।
সেই ভাঙ্গাচোরা কফিশপের ভিতর দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ খেয়াল করলাম, আমার ঘাড়ে কিছু একটা বারবার স্পর্শ করছে, যা অনেকটা মেয়েদের ভেজা চুলের মতো।
এটা অনুভব করার পর আমি আর নাড়াচাড়া করতে পারছিলাম না। পেছনে ফেরার মতো সাহসটুকু পর্যন্ত হচ্ছিলো না আমার । আমি মুখ খুলে “আয়াতুল কুরসি” পড়তে চাইলেও আমার মুখ যেনো জমে বরফ হয়ে গেলো। আমি মনে মনেই “আয়াতুল কুরসি” পড়তে লাগলাম আর আস্তে আস্তে পেছনের দিকে তাকাতে লাগলাম।
পেছনে তাকিয়ে দেখলাম সেই কফিশপের ছাদের সাথে একটা কাটা মাথা ঝুলে আছে। একটা মেয়ের মাথা। সে মাথার চুলগুলো বাতাসে বারবার আমার ঘাড়ের সাথে স্পর্শ করছিলো।
আমি প্রচন্ড রকমের ভয় পেলাম, বাহিরের দিকে দৌঁড় দিতে চাইলাম। কিন্তু আমি কোনোমতে সেই কফিশপ হতে বাহির হতে পারছিলাম না। আমি যতই দৌঁড়ে বাহিরের দিকে যেতে চাচ্ছিলাম, আবার কে যেনো আমাকে বাহির থেকে ধরে এনে ভিতরে আছড়ে ফেলছিলো।
খুব জোড়ে জোড়ে চিৎকার করতে লাগলাম। কিন্তু কেউই আমার আওয়াজ শুনছিলোনা।
একটু পর দেখলাম কে যেনো আমার পাশ দিয়ে তীব্র গতিতে চলে গেলো, অনেকটা বাতাসের মতো। আমি প্রচন্ড ঘামছিলাম। ভয়ে গলাটা শুকে কাঠ হয়ে গেলো আমার।
বাহিরে তখনো তীব্র বৃষ্টি হচ্ছে, আর এখানে ভেতরে আমি একলা।
হঠাৎ দেখলাম আমার কাছ থেকে মাত্র কয়েক ফুট দূরত্বেই একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটির পরনে ছিলো একটা ছেড়া টপস্ এবং গোলাপি রঙের জামা। চেহারা চুলে ঢাকা। মেয়েটির হাত দুটো ঝলসে গিয়েছে। দেখে মনে হচ্ছিলো আগুনে পোড়ানো হয়েছে তার হাতগুলো।
মেয়েটি আর্তনাদ করে কাঁদছে এবং আমার দিকে তাকিয়ে বলছে, বাঁচাও, আমাকে বাঁচাও।
আমি এ দৃশ্য দেখে কাঁপতে শুরু করলাম, মনে হচ্ছিলো ভয়ে এক্ষুনি বেরিয়ে আসবে আমার প্রাণ। আর মনে মনে ‘আয়াতুল কুরসি’ পাঠ করতে লাগলাম। কিন্তু কিছুতেই যেনো কাজ হচ্ছিলো না। মেয়েটির আরো জোরে আর্তনাদ করতে লাগলো, কাকুতি মিনতি করছিলো তার প্রাণ বাঁচানোর জন্য।
আমি আর সহ্য করতে না পেরে সজোরে চিৎকার করে উঠলাম…..
পরদিন রাতের বেলা জ্ঞান ফিরলো আমার। চোখ খুলে আমি নিজেকে আবিষ্কার করলাম আমার বিছানায়। কয়েকজন মানুষ নাকি সকালে রেখে গিয়েছে আমাকে। আর তখন থেকেই নাকি আমি অজ্ঞান।
আমার সহসা মনে পড়লো কাল রাতের কথা। সাথে সাথেই ঘামতে লাগলাম আমি। আম্মু এক গ্লাস পানি এনে দিলেন, এক শ্বাসেই সবটুকু পানি খেয়ে নিলাম।
বাসার সবাইকে কোনোভাবে মিথ্যা কথা বলে ম্যানেজ করলাম, কিন্তু আসলেই কি হয়েছিলো তা কাউকে বলতে সাহস পেলম না।
একটু পর উঠে টেবিলের উপর থেকে মোবাইলটা নিয়ে সফুরাকে ম্যাসেজ দিলাম,
— “কি ফালতু জায়গায় দেখা করতে ডেকেছিলে কাল রাত ?”
— কেনো? জায়গাটি তো আমার অনেক ভালো লাগে।
_আমি রেগে গিয়ে বললাম, “তুমি আসোনি কেনো??”
~ এসেছিলাম তো, দেখনি তুমি?
— কি সব আবোল-তাবোল বকছো? তুমি তো আসোই নি কাল!
~ এসেছিলাম তো! তুমি দেখনি আমার সেই পোড়া হাত? আমি কত আর্তনাদ করেছি তোমার কাছে, কিন্তু তুমি আমায় বাঁচাও নি।
..
সফুরার এ রিপ্লাই দেখে আমি সাথে সাথে সেখানেই ঠায় বসে পরলাম।ঠিক যেন পথ হারা কোন পথিক রাস্তার সন্ধান না পেয়ে পথের মাঝে দিশেহারার মত বসে রয়েছে।
আমদের গল্প যদি আপনাদের ভাললাগে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট এর মাধ্যমে জানাবেন এবং বেশি বেশি বন্ধু দের সাথে শেয়ার করে আমাদের উৎসাহ দিবেন যেন আমরা আপনাদের জন্য নতুন নতুন গল্প নিয়ে আসতে পারি।