লক ডাউন এর শুরুতে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ম্যাসেঞ্জারে এড করেছিলাম যাতে টুকটাক কিছু পড়াতে পারি। যেহেতু লক ডাউন তাই অভিনব পন্থা অবলম্বন ছাড়া আমার আর কোন উপায় নেই।
প্রথমে কিছুদিন খুব ভালোই চলছিল, কোন কিছু না বুঝলে ছাত্রী আমাকে ম্যাসেঞ্জারে নক দিতো, আমিও যতটুকু সম্ভব হয় বুঝাতাম।
ম্যাসেঞ্জারে এড করার দু’দিন পরেই ছাত্রী ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিল, এক্সেপ্ট না করে ঝুলিয়ে রাখলাম। অবশ্য সপ্তাহ খানেক পরেই রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করেছিলাম। এর পরপরই ছাত্রী আমার টাইমলাইনের সব পিক ও স্ট্যাটাসে লাভ রিয়েক্ট দিয়ে ভরিয়ে দিল।
আমিও একটু আগ্রহ নিয়ে ছাত্রীর আইডিতে উকি মারলাম। বায়োতে লেখা আছে– “আমাকে পটাতে আসবেন না, আপনি নিজেই পটে যাবেন।“
হাজার খানেক ফলোয়ার, সুন্দর একটা কভার ফটোর সাথে ম্যাচিং করে সুন্দর একটা প্রফাইল। স্মার্ট আইডি বলতে যা বুঝায় আরকি। যাহোক, আর বেশি ঘাটাঘাটি না করে বেরিয়ে আসলাম।
ছাত্রী আমার ফেসবুকে খুব এক্টিভ। প্রতি ঘণ্টায় একটা করে স্ট্যাটাস দেয়। দেশে-বিদেশের এমন কোন ইস্যু নেই, যেটা নিয়ে সে লেখালেখি করেনা।তবে সে মাঝে মধ্যে ফটোর সাথে ইংলিশে এমন কিছু ক্যাপশন দেয় যা বুঝতে আমার ডিকশনারি বা গুগলের সাহায্য নিতে হয় প্রায়ই। অথচ এই ছাত্রীকেই আমি জে.এস.সিতে অনেক কষ্টে টেনেটুনে ইংরেজীতে পাশ করিয়েছিলাম। প্যারাগ্রাফ, কম্পোজিশন, এপ্লিকেশন সব কিছু শিখেছিল ২/৩ টা করে। মানে, একের ভিতর সব। ছাত্রী আমার সব কিছুতেই একের ভিতর সব খুঁজতো। অথচ সেই ছাত্রীর ইংরেজীতে এতো পরিবর্তন!! আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা।
ছাত্রী আমার কয়েকদিন ধরেই ছ্যাঁক ও বিরহ জাতীয় পোস্ট দিচ্ছে। গতকালের তিনটা পোস্ট ছিল এমন-
১। মানুষ মানুষকে কিভাবে ভুলে যায়? একটু কথা বললে কি হয়?
পোস্ট টা পড়ে আমারও খুব খারাপ লেগেছিল, তাই আমি স্যাড রিয়েক্ট দিয়েছিলাম।
২। তোমার মন করেছ লক, আমি হয়েছি ডাউন। ছাত্রী আমরা সাহিত্য চর্চাও করে।ছন্দ তৈরিতে ভাল হাত আছে দেখছি।
৩। আজ আমার অনেক মন খারাপ। কিছুই ভালো লাগছে না।
১০ মিনিট পর সেই স্ট্যাটাসে ১০০-এর বেশি লাইক আর ৪০-এর মতো কমেন্ট। কয়েকটি কমেন্ট নিচে কপি করে দেওয়া হলো–
১ম কমেন্ট– মন খারাপ কেন.? কী হয়েছে তোমার.? কেউ কি বকে দিয়েছে.?
২য় কমেন্ট– আপনার মন খারাপ হলে আমারও অনেক মন খারাপ হয়ে যায়। আপনি আর মন খারাপ করে বসে থাকবেন না প্লিজ ।
৩য় কমেন্ট– মন খারাপ হলে আমি ছাদে গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি। আপনার বাসায় কি ছাদ আছে.? ছাদে গিয়ে আকাশ দেখতে পারেন, দেখবেন মন একদম ভালো হয়ে গিয়েছে।
এ রকম আরো অনেক কমেন্ট আছে থাক তা আর না বলি। কিন্তু যিনি স্ট্যাটাস দিয়েছেন তার কোনো সাড়া-শব্দ পেলাম না। তাই আমিও মনে করলাম সত্যি সত্যিই হয়তো ছাত্রীর মন খারাপ। তাই ফোন করে জিজ্ঞেস করলাম, “আজ কি তোমার মন খারাপ?”
সে বললো, “আজ ভাইয়া ডিসকভারি চ্যানেল দেখতে গিয়ে আমাকে ষ্টার জলসার সিরিয়াল দেখতে দেয়নি, তাই মন ভিষন খারাপ ছিল।“
কেমনডা লাগে বলেন ?
এদিকে দু’মাসের টিউশনের সম্মানী বকেয়া। ভিষণ আর্থিক সংকটে পড়েছি, তাই আমারও মন খারাপ। ছাত্রীর স্ট্যাটাস কপি মেরে আমিও পোস্ট দিলাম– “আজ আমার মন খারাপ, মরে যেতে ইচ্ছে করছে।“
দুই ঘণ্টা পর আমার স্ট্যাটাসে ১০ টা লাইক আর ৩টা কমেন্ট।
প্রথম কমেন্ট — তোরও মন খারাপ হয়? লোল!
দ্বিতীয় কমেন্ট—লাইকার বয় সুমন।এই কঠিন লক ডাউন এর সময়েও লাইক ও কমেন্ট করে আপনাদের পাশে আছি। আপনারাও লাইক দিয়ে ও কমেন্ট করে আমার পাশে থাকবেন।
তৃতীয় কমেন্ট– তুই মর হ্লা। মরছ না ক্যা!! জিয়ারত খামু
শেষে আমি জানের ভয়ে পোস্ট ডিলিট দিছি।
তবে এই মন খারাপের দিনেও ছাত্রীর স্ট্যাটাস যতই পড়ছি ততোই পটে যাচ্ছি, মানে খুব বিনোদন পাচ্ছি।
আমি আগে থেকেই এই ছাত্রীকে ফাঁকিবাজ হিসেবে জানতাম। এখন নিশ্চত হলাম পড়ানোর সময় তিন-চার বার ওয়াশরুমের কথা বলে হয়তো সে ফ্রেন্ডদের ম্যাসেজের রিপ্লেই দিতো, কমেন্টের রিপ্লেই দিতো।
আর আমি ভাবতাম এই মেয়ে ঘণ্টায় ৩-৪ বার কেমনে হিশু করে!!