পদ্মজার উৎসর্গ
এটা নিয়ে অনেক পোস্ট হচ্ছে। তার মধ্যে গুটিকয়েক মন্তব্য আমার বাবাকে নিয়ে। যারা গভীরভাবে ভাবার ক্ষমতা রাখে না তাদের জন্য ভেঙে বলা জরুরি মনে হলো।
বাবাকে ঘিরে না হলে অবশ্য এ নিয়ে পোস্ট করতাম না।
প্রথমত, অক্ষরজ্ঞানহীন শব্দটা নিয়ে। মোটার বিপরীত চিকন, কালোর বিপরীত সাদা, দিনের বিপরীত রাত। তেমনই শিক্ষিতর বিপরীত অশিক্ষিত। কিন্তু আমি দেখেছি, যারা পড়াশোনা করেও নীচ আচরণ করে তাদের অশিক্ষিত বলে গালি দেয়া হয়। এটা সর্বত্র চর্চিত।
যেহেতু আমার মা পড়াশোনা করেছে অথচ বাবা পড়াশোনা করেনি, তাই বলাই যায় দুজন দুই মেরুর মানুষ।
দুজন দুই মেরুর মানুষ বুঝাতেই শিক্ষিত আর অক্ষরজ্ঞানহীন দুটো শব্দ ব্যবহার হয়েছে, ব্যাস এইটুকুই।
শিক্ষিতর বিপরীতে অশিক্ষিত না লিখে অক্ষরজ্ঞানহীন লিখেছি কেন তার ব্যাখ্যা উপরে দিয়েছি। অশিক্ষিত শব্দটা আমার কাছে যাদের ভেতরে মানবিক শিক্ষা নেই তাদের জন্য।
কিন্তু অক্ষরজ্ঞানহীন মানে যে পড়াশোনা করেনি। আর পড়াশোনা না করা খারাপ নয়। আশি শতকে পড়াশোনার এতো মূল্য ছিল না। বাপ-দাদার জমিজমা, ব্যবসা সামলানোই বড় ব্যাপার ছিল। আমার বাবা সেটাই করতো।
অক্ষরজ্ঞানহীন শব্দটা খুবই স্বাভাবিকভাবে বাবা ও মা দুজন দুজনার বিপরীত ছিল সেটা বুঝাতে দেয়া হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, আমার বাবাকে ভুল বোঝা হচ্ছে যেটা একদমই মেনে নিতে পারছি না। এটা মা’কে করা উৎসর্গ করা, তাই মা নিয়েই শুধু বলা হয়েছে। বাবাকে নিয়ে বলা হয়নি।
বাবা বাড়ির বড় ছেলে। তার বড় তিনবোন আর ছোট দুই ভাইবোন ছিল। দাদা মারা যায় বাবাকে কিশোর রেখেই। ব্যবসা-বাণিজ্য, জমিজমা, বাড়িঘর সহ মা-পাঁচ ভাইবোন সবার দায়িত্ব বাবার ঘাড়ে ছিল। তার উপর তখনকার গ্রামের মানুষ। তখন ‘বাচ্চার’ বাবা হওয়া ছিল বিজয়ের মতো।
বাবা কিন্তু মা কে পছন্দ করে বিয়ে করেছে। মা কে দেখার পর, নানাবাড়ির নদীর অন্য পাড়ে গিয়ে বসে থাকত যাতে বাড়ির ঘাটে আসলে মা কে দেখতে পারে।
যেহেতু সমাজ, আর পরিবার ছিল। তাদের চাপাচাপি শুরু হয় বিয়ের তিন বছর পরেই যাতে বাবা আরেকটা বিয়ে করে। তার অবশ্য কারণ আছে। গ্রামের মানুষরা স্বাভাবিকভাবেই কবিরাজ, ঝাড়ফুঁক এসবে বিশ্বাস করত। কোন না কোন ফকির বলছে, আম্মুর কখনো ছেলেমেয়ে হবে না বা দোষ আছে।
সেই মন্তব্যকে ঘিরেই আরো চাপাচাপি করতে থাকে আরেকটা বিয়ের জন্য। বাবা তিন বছর সবার চাপাচাপি সহ্য করেছে। ছয় বছরের শেষ দিকে না পেরে রাজি হয়।
বর্তমানে হাজার হাজার ছেলে ফ্যামিলির কথা ভেবে, মা পছন্দ করেনি সেই অজুহাতে প্রেমিকাকে ছেড়ে দেয়।
সেখানে দিনের পর দিন সমাজ আর পরিবারের কথা সহ্য করে ছয় বছর টিকেছে এটাই তো অনেক! বাবা কখনোই মন থেকে চায়নি, আরেকটি বিয়ের। সৃষ্টিকর্তাও তা হতে দেয়নি, আলহামদুলিল্লাহ।
যেহেতু দুজন দুইরকম তাই স্বাভাবিকভাবেই সব বিষয়ে দুজনের মতের অমিল থাকে। তবুও ছাব্বিশ-সাতাশ বছর ধরে একসঙ্গে আছে। মা’র জ্বর হলে বাবা জলপট্টি দেয়।
ঘুমানো অবস্থায় যদি দেখে মা’র পায়ে ময়লা লেগে আছে, ভেজা কাপড় এনে তা মুছে দেয়।
আমার উৎসর্গের ভিলেন ছিল কুসংস্কারাচ্ছন্ন ‘সমাজ’। আমার বাবা নয়।
এমনকি উৎসর্গটা লিখে সবার আগে বাবা আর আমার বাবার বাড়ির মানুষদের পড়ে শুনিয়েছি। তারা এইটুকু শুনেই বলে, ‘তোর আম্মুর পুরো কাহিনিটা লিখ।’
ছোট ফুফি বলছে, ‘ভাবিকে যে আমি কথা শুনিয়েছিলাম সেটাও লিখিস। কিন্তু এরপর কিন্তু বলে দিবি, আমি এখন ভাবিকে ভালোবাসি।’
আমার পরিবার এতোটাই সাপোর্টিভ।
অথচ কিছু মানুষ সামান্য একটা উৎসর্গপত্র নিয়ে এতো কিছু জাজ করে ফেলছে!
বাবাকে নিয়ে যখন উৎসর্গপত্র লিখব সেখানে বাবা আমার হিরো হয়ে থাকবে।
এখন অনেকে বলবে, ব্যক্তিগত কথা বাহিরে আনার কি দরকার।
আমার শতভাগ ব্যক্তিগত কাহিনির এক ভাগও গত সাত বছরে ফেসবুকে বলিনি। এই কথাগুলো বাধ্য হয়ে বলেছি অন্ধদের জন্য।
ব্যাপারটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, আমি হাঁচি দিলেও
হাঁচির শব্দ নিয়েও ভুল ধরা শুরু হবে। আমার ভুল ধরতে পারলেই কিছু মানুষের যেন সেদিন আর ভাত খাওয়া লাগে না। এমনি পেট ভরে যায়।
না, না। এতে আমার সমস্যা নেই। বেস্ট অফ লাক।
তবে লেখালেখি ছাড়া আমার আর কোনো আপডেট ফেসবুকে আর আসবে না, ইনশাআল্লাহ। ফেসবুক আর আগের মতো স্বস্তির জায়গা নেই।
কেউ আবার বলিয়েন না, সব কথা কানে নিও না।
আমি কোনো কথাই কানে নেই না। কোনো বাহিরের গ্রুপেও এড নেই। কিন্তু কিছু মানুষ স্ক্রিনশট মেরে আমাকে দেখাবেই: তাও কথা বলি না। টপিকটা ব্যক্তিগত হওয়াই লিখতে হলো।
আর দয়া করে বাহিরের গ্রুপে কি হচ্ছে না হচ্ছে, আমাকে লিংক বা স্ক্রিনশট দিবেন না প্লিজ।
লেখার সমালোচনা হবেই। স্বাভাবিক ব্যাপার।
সম্পূর্ণ গল্প + রিভউ নিচের লিংকে