পদ্মজার জীবন
ফারিহা চৌধুরী
আমি পদ্মজা, আমি আমিরের প্রেমরানী
কেন আমির আপনি ছাড়লেন না পাপের প্রাচীরখানি
আমি পবিত্র, আমি পূন্য, আমি মায়া, আমি সুখ
তবে কেন হলেন আপনি পাপী, পাপ, ছলনা আর দুখ
আমিও তো চেয়েছিলাম বুনতে এক সংসারের জাল
তব কেন আপনি তা ছিন্ন করে হয়ে গেলেন তার কাল
হত্যার রাজ্যে সুখ পেয়েছেন, ছিলেন যে নারীতে মত্ত
তাও আপনার হয়ে থাকতে চেয়ে দিলাম যে এক শর্ত
ছেড়ে দিন না এই পাপ, ধ্বংস করুন পাপের পাতাল
তা না হলে ঘনিয়ে যে আসবে আপনারই অন্তিম কাল
হাওলাদার বংশ হবে ধ্বংস, আমার হস্তে উঠবে অস্ত্র
বংশের পুরুষ ধ্বংস হবে, যারা কাড়ল নারীর বস্ত্র
ছাড় পায়নি যে আমার পূর্ণা, আদরের প্রিয় বোনটা
হাওলাদার বংশের পিশাচের হাতে গেছে তার প্রাণটা
তার বিরহে আজ যে পাগলপ্রায় হয়েছে ভাই মৃদুল
লাশ দেখে তার কম্পিত হাত থেকে পড়ল নাকফুল
বিয়ের আগের রাতেই মেয়েটা যে হবে এহেন শিকার
বেনারসি হাতে, গয়না হাতে ফিরতে হয়েছিলো তার
ভাবেনি প্রেমিক, চলে যাবে তার শ্যামবতী প্রেমরাণী
কেঁদে কেঁদে আকুল হয়ে কত বলেছে আসো এখুনি
প্রস্তুত হয়ে যা পাপীরা, আমায় থামানোর নেই সাধ্য
হেমলতার মত হস্তে অস্ত্র তুলতে করলি যে তোরা বাধ্য
অবশেষে আসলো যে ঘনিয়ে সেই অন্তিম রজনী
সময় যে চলবে আপন গতিতে সে তো সবাই জানি
পরনে আজ সাদা শাড়ি মোর, বীভৎস এক রূপ
দর্পনে নিজেকে দেখে মনে ভাসছে কত স্মৃতি সুখ
আমিরের সাথে শতশত সুখ মুহুর্ত ছিলো পদ্মজার
সুন্দরী এই রমণী সুখী ছিলো, আমির যে শুধু তার
হায়! সুখ থাকে না যে বেশিদিন, চোখে আজ জল
ফরসা মুখে ডাগর চোখদুটো বেদনায় হলো অচল
শূণ্য দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে আছে, পাতালের এক কোনে
আমিরের বলা ভালোবাসি শব্দ ভাসে যে হিয়া কোণে
কেমনে সে মারবে তার প্রিয়কে, একি আদৌ সম্ভব?
অমনি মনে পড়ে মা হেমলতার কথা, সবই সম্ভব
তিনিও হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন পাপীদের শাস্তি
মা প্রিয় মেয়ে পদ্মজা তার করেছিলো কত ভক্তি
ভালোবাসি মা তোমায়, আল্লাহ গো দাও সেই শক্তি
মারতে যেন পারি শয়তানদের, জ্বালিয়ে তাদের অস্থি
কঠোর মৃত্যু পাবি তোরা, শেষ হতে হবে যে পাপ
তোরা ক্ষমার অযোগ্য , যতই চাস তোরা মাফ
হাতে রাম দা, খুন হয়েছে বংশের শেষ তিন পুরুষ
জবাই করে রক্তে ভাসিয়ে দিয়েছি নেই তাদের হুঁস
আপনি আমির তবুও নির্বাক, নেই চোখে ভয়
এত কেন কঠিন হৃদয় আপনার, নেই কোনো সংশয়
আঁখিজোড়া কথা বলে, আমি ভালোবাসি আপনাকে
আপনি কি তবে কভু ভালোবাসেননি এই পদ্মজাকে?
পাগলপ্রায় আমি এখনো দ্বিধায়, কি করিব আজ হায়
মারতে পারছি না কেন আমি, মোর প্রিয় বলে তাই?
সাদা শাড়ি মোর রক্তে লাল, অশরীরী এক রুপ
তবুও আপনি বললেন সুন্দর আমার সব রুপ
মৃত্যু সামনে দাঁড়িয়ে আছে , মুখে তবুও স্মিত হাসি
একবার কি বলবেন আমি তোমায় ভালোবাসি!
জড়িয়ে ধরলাম আপনায় প্রিয়, শান্ত হলো হৃদয়
হাত মুঠোয় মোর ছিলো অস্ত্র, করিনি বাক্য ব্যয়
চালিয়েছি ছুরি আমি, আপনার বক্ষ বরাবর
চোখে মৃদু জল, মুখে মৃদু হাসি, যাচ্ছেন পরপার
এ কেমন বিধি! ভালোবাসার হাতে প্রাণ দিলো যে
তারই ভালোবাসা
কেন সব ছিনিয়ে নিলে বিধি, নিশ্চিহ্ন হলো সব
বেঁচে থাকার আশা
আমি মরতে চাই আমির, বিশ্বাস করুন আমি পারছি না নিঃশ্বাস নিতে আপনিহীন এই দুনিয়ায়
জীবন যে মোর থমকে গেছে চোখের পলকে
অস্ত রবির প্রায়
আত্মহত্যা পাপ না হলে, গ্রহণ করতাম আমি সাদরে
নিষ্পলক চেয়ে আছে দুটি চোখ, যার ঘোর পদ্মজারে
পদ্মজাতে আটকে ছিলো আমির, পদ্মজার পর গ্রহন হয়নি অন্য পরনারী
সে আসক্তি, তার হাতে মৃত্যুও শান্তির ন্যায়, সে যে পুন্যময়ী এক নারী
জীবনে আর আসেনি বসন্ত, খুনী সেই পদ্মজার
আকাশ পানে তাকিয়ে রয়, কবে ডাক আসবে তার?
সমাপ্ত।
……………………
সম্পূর্ণ গল্প + রিভউ সহ নিচের লিংকে
…………………………………..
পদ্মজা উপন্যাসের সেই অনাকাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত।
এঁকেছেন গুণী মানুষ, মাহবুবা মীম।