#অবন্তিকা_তৃপ্তি
#পর্ব_১৯
‘শুভ্র, ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যা প্ল্যান, ডিজাইনড বাই আওয়ার মহু। অ্যা প্ল্যান টু মেইক ইউ জেলাস এবাইউট তুলি। আমার বউ আছে ব্যাটা, বাইরে চোখ দিলে চোখ তু লে নিবে একদম। আমি জাস্ট অভিনয় করেছি, তুলি তোদের ভালোর জন্যে জাস্ট আমার সঙ্গে তাল দিয়েছে। এন্ড অ্যাজ পার ম্যাই অভজারবেন্স, আমাদের প্ল্যান সাকসেসফুল। তোদের একসাথে দেখে তেমনটাই মনে হচ্ছে আমার।’
শুভ্র এ কথা শুনে সবার আগে তুলির দিকে বাঁকা চোখে তাকাল। তুলি শুভ্রর এমন চাওনি দেখে একটু কেশে অন্যদিকে মুখ ঘুরালো। শুভ্র সব জেনেছে; এখন তো টিপ্পনী কাটতে কাটতেএই মে রে ফেলবে। তুলির নজর লুকানো দেখে; শুভ্র ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলল। শুভমকে কিছু কথা শোনাতে ইচ্ছে হলেও, চেপে গেলো। গত রাতের ন্যায় চমৎকার এক রাত তাদের জীবনে আসার পেছনে মূলত তাদের এই অবাস্তব প্ল্যানই দায়ী; স্বীকার করতে বাধ্য হলো শুভ্র।তাদের সম্পর্ক ঠিকঠাক চলছিল না; সেটা এভাবে সবাই জেনে গেলো? লজ্জা পেয়ে গেলো শুভ্র। শুভম শুভ্রর দিকে চেয়ে ভ্রু নাচালে, শুভ্র মাথা চুলকে হেসে উঠল। শুভমের দিকে চেয়ে বললো,
‘থ্যাংকস শুভম। ইওর প্ল্যান ওয়ার্কড লাইক অ্য ম্যাজিক।’
শুভম কলার ঝাঁকিয়ে হাসলো। সবাই খাবার-দাবার শেষ করল। শুভ্র এরপর বারবার তুলির দিকে চাইলেও, তুলি এখন অব্দি আর মুখ তুলে নিই তুলি। শুভ্র তুলির এমন মুখ লুকানো দেখে মুখ টিপে হাসে।
_________
তারপর তুলিকে একা পেয়ে শুভ্র ঝেঁকে ধরল ওকে। দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তুলি। শুভ্রর দুহাতে তুলির কোমর চেপে রেখেছে। তুলি ইতি-ওতি চেয়ে বারবার মুখ লুকাচ্ছে। শুভ্র যেভাবে চেপে রেখেছে, আজ বোধহয় রক্ষা নেই আর তুলির। শুভ্র তুলির কপালের চুল আঙুলে পেছনের দিকে ঠেলে দিলো। এই কাজটা বোধহয় শুভ্রর সবচেয়ে পছন্দের কাজ। যখনই শুভ্র তুলির মুখোমুখি হয়, বারবার হাট বাড়িয়ে তুলির চুল আঙুলে দিয়ে কপাল থেকে সরায়। শুভ্র যখন এমন করে না; তুলির তখন কী যে ভালো লাগে। শুভ্রর মধ্যে ডুবে যাচ্ছে মনে হয় তখন।
তুলির ভাবনার মধ্যেই; শুভ্র তুলির থুতনিতে দুই আঙুল ঠেকিয়ে ওর মুখটা নিজের দিকে উঁচু করল। তুলি সরাসরি এবার শুভ্রর চোখের দিকে চাইল। শুভ্র বাঁকা হেসে টিপ্পনী কেটে বললো,
‘শুভ্রর কাছে আসার এত তাড়া ছিলো আপনার? প্ল্যান না করে নিজে থেকে এগিয়ে এলে আমি কী মানা করতাম?’
শুভ্রর অ সভ্য কথায় তুলি লজ্জা পেয়ে গেলো। জোর করে নিজের মুখ শুভ্রর থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে অন্যপাশে মুখ ঘুরাল। শুভ্র কিভাবে জানবে; তুলি রীতিমতো মরিয়া হয়ে যাচ্ছিলো শুভ্রর মুখ থেকে ‘ভালোবাসি’ কথাটা শোনার জন্যে।
শুভ্র তুলিকে সামনে এনে নিজে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। দুজনেই তারপর চুপচাপ। যতবার শুভ্রর গরম নিঃশ্বাস তুলির ঘাড়ে পরছে, ততবারই ছটফট করে উঠছে তুলি। মানুষটার স্পর্শ তুলির শরীরে যেন আ গু ন লাগিয়ে দেয়। শুভ্র একটাপর্যায়ে শীতল গলায় ডাকল;
‘তুলি?’
তুলি তখন ডুবে আছে আকন্ঠ শুভ্রর স্পর্শে। অনুভব করছে নিজের শরীরে শুভ্রর বেসামাল স্পর্শ! তুলি অনুভবের এইপর্যায়ে কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। তুলি জবাব দেয়;,
‘হু?’
‘আজ আমাদের ফিরতে হবে, বাস রাত ৭ টায়।।’
তাৎক্ষণিক তুলি চোখ খুলে ফেলল। শুভ্রকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সরাসরি শুভ্রর চোখের দিকে তাকাল। শুভ্রর এ কথা বলার সময় কষ্ট হয়েছে। কিন্তু তুলির সামনে নিজে দুর্বল হয়ে গেলে; তুলির পাগলামি আরো বেড়ে যাবে; তাই সে স্বাভাবিক ভাবেই তুলির দিকে চেয়ে রইল। তুলি জিজ্ঞেস করল,
‘তার মানে আমরা একসঙ্গে আর মাত্র ৫ ঘণ্টা আছি। তারপর-‘
বাকি কথা শেষ করার আগেই তুলির চোখ চলছল করে উঠল। শুভ্র তুলিকে এভাবে দেখে মুখটা দুহাতে আগলে চোখ মুছে দিয়ে মিষ্টি গলায় বললো,
‘৫ ঘণ্টা কোথায়? বাসেও তো একসঙ্গে থাকব আমরা।’
শুভ্রর এমন ছেলেমানুষী কথায় তুলি একদমই মন ভুলল না। চোখ বেয়ে অবশেষে জল গড়িয়ে পরলোই। তুলি বাচ্চাদের ন্যায় বায়না করল;,
‘আরো কটাদিন থাকি না? বাস ক্যানসেল করে দিন প্লিজ।’
শুভ্র তুলির পাগলামি দেখলো। তারপর ভীষণ দায়িত্ব নিয়ে তুলির চোখের জল মুছে বোঝাল,
‘তোমার বন্ধ আরও মাত্র ১০/১২ দিনের মতো আছে। বন্ধের পরপরই তোমার এক্সাম। পড়াশোনা লাগবে না করা?’
তুলি নাছোড়বান্দার ন্যায় বললো,
‘একটা এক্সাম খারাপ করলে কিছু হয়না। জীবনে হাজার এক্সাম আসবে, কিম্তু এমন সুন্দর সময় আর আসবে না, কখনোই না।’
তুলির কথা শুভ্রর ভীষণ ভালো লাগল। সত্যি বলতে, শুভ্রর ইচ্ছে হচ্ছে না তুলিকে এভাবে যেতে দিতে। বরং ইচ্ছে হচ্ছে, এ সময়টাকে এভাবেই হাতের মুঠোয় আঁকড়ে ধরতে। ঢাকা ফিরে গেলে শুভ্র থাকবে শুভ্রর মতো, তুলি নিজের বাসায়। দুজনের এভাবে এতটা কাছে থেকে দেখা হওয়া, স্পর্শ, তুলির এসব পাগলামি আর দেখবে কোথায় শুভ্র। কিম্তু বাস্তবতা তেমন নয়। তাদের মানতে হবে সেটা। তুলি অবুঝ, তাই বলে শুভ্র নিজেও তুলির সাথে অবুঝ হয়ে যেতে পারে না। শুভ্র তুলিকে বোঝাল,
‘এক্সাম নাহয় খারাপ হলো। আমার চাকরি? চাকরিতে তো ছুটি নেই। পরশু থেকে ডিউটি শুরু। যাওয়া লাগবে না আমাকে?’
‘পরশু শুরু, তাইনা? তাহলে আমরা আজ থাকি। কাল যাই?’
তুলি কী বলছে নিজেও জানে না। শুভ্র হালকা হাসল। তারপর বললো,
‘সাজেকে আসার সময় রাস্তা দেখো নি? যেদিন প্রথম সাজেক আসলে, ব্যথা ছিল না গায়ে? সাজকের রাস্তা তো ভালো না, এইজন্যে। এখান থেকে সারাদিন লাগবে ঢাকা যেতে, আর একটু রেস্ট না করলে পরদিন ডিউটি করতে পারব না তো।’
তুলির নিজের কাছে যতো যুক্তি ছিলো সব শেষ হয়ে গেলো। তুলি একদম বাচ্চাদের মতো ভেঙে পড়েছে। মূলত ভয় পাচ্ছে; বাসায় ফিরে গেলে এভাবে তাদের আর একসঙ্গে থাকা হবে না। নিজেদের মধ্যে তেমন কথাবার্তাও হবে না। শুভ্র কাজে ব্যস্ত হয়ে যাবে; তুলি পড়াশোনায়। এভাবে টাইম কেটে যাবে। দুজনের দূরত্ব বাড়বে। তুলি তখন বাঁচবে কিভাবে? তুলি শুভ্রকে আচমকা জড়িয়ে ধরল। হঠাৎ এমন করায় টাল সামলাতে না পেরে দু কদম পিছিয়ে গেল শুভ্র। পরপর নিজেকে সামলে দুহাতে শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো তুলিকে। যতটা আঁকড়ে ধরলও বুকের মধ্যে পি ষে ফেলা যায়; টিক ততটা। অন্যবার তুলি এমন করে জড়িয়ে ধরলে চেঁচাতো, তবে আজ তুলির মুখে ‘রা’ অব্দি নেই। আরাম করে শুভ্রর বুকের মধ্যে পরে আছে ও। শুভ্র তুলির চুলে চুমু খেলো। তারপর টিপ্পনী কেটে বললো ও; ,
‘ভালোবাসায় তো জ্ব লে-পু ড়ে যাচ্ছো, তুলি। এক কাজ করতে পারো, আন্টিকে বলে একেবারে চলে আসো না আমার কাছে। তাহলে আর এত পু ড়তে হবে না।’
তুলির কী হলো। শুভৃক জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ ঘষে ব্যস্ত হয়ে বলল,
‘আমি আজকেই বলবো গিয়ে। কীসের চার বছর, কোন চার বছর-টছর না। উই আর ম্যারেড, কেন আলাদা থাকব আমরা?ইসলামে নেই সেসব।’
শুভ্র থমকে গেলো। তুলির পাগলামি এবার লিমিট ক্রস করছে। শুভ্র এবার তুলিকে জোর করে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিলো। তুলি কান্নামাখা মুখে শুভ্রর দিকে চাইল। শুভ্র কিছুটা কঠোর হয়ে বললো;
‘পাগলমি করবে না। আমাদের বিয়ের মূল শর্ত এটাই ছিল। বিয়েরপর তোমার পড়াশোনায় ইমপ্যাক্ট যেন কক্ষণো না পরে। আগে যেভাবে পড়াশোনা করতে, এখনো তাই করবে। আর আমাদের একসাথে চার বছর পরই থাকা হবে, গট ইট? কিসব বলছো তুমি, তুলি? তোমার আম্মু শুনলে ভাববেন; আমি তোমাকে উল্টাপাল্টা বুঝিয়েছি। আমাকে দোষী বানিও না সবার সামনে প্লিজ।’
তুলি কাতর চোখে শুভ্রর দিকে চাইল। ভাঙা ভাঙা গলায় বলল,
‘আমাদের একসাথে থাকা কি পাপ? আপনি কেন দোষী হবেন?’
‘পাপ নয় তুলি। পরিস্থিতি বুঝো।’
তুলি নিজেকে সামলালো। সে কবে থেকে এমন ছিচকাঁদুনে হয়ে গেছে। শুভ্রর ইচ্ছে নেই, তুলিকে উঠিয়ে নেওয়ার, দুজন একসঙ্গে থাকার। তুলিকে দূরে দূরে রাখতে পারলেই শুভ্র যেনো বাঁচে। তাহলে সে কেন খামোকা পাগলামি করবে। সম্পর্কের শুরু থেকে তুলিই সবসময় আগে স্টেপ নিয়ে এসেছে। শুভ্র কী করেছে? কিছুই না। সম্পর্ককে আগ বাড়ানোর ক্ষেতে একমাত্র তুলি ভূমিকাই আছে, আর কারোর নেই; কারোর না। শুভ্র একা যদি থাকতে পারে, তাহলে তুলিও পারবে। তুলির দরকার নেই কারোর।
তারপর- তারপর বদলে গেলো সব। তুলি আর একটাবারও পাগলামি করল না। আর নাইবা শুভ্রকে জ্বা লালো। দুজনেই ঢাকা ফিরে এলো। বাসেও দেখা গেল, তুলি বড্ড নীরব ছিল। যা বলার, শুভ্রই বলেছে। শুভ্র ভেবেছে, তুলির মন খারাপ; তাই কথা বলছে না। কিন্তু শুভ্র ভুল ছিল। মন খারাপ নিয়; বরং তুলি অভিমান চেপে রেখেছিলো নিজের মধ্যে।
মনের মধ্যে অভিমানের ধোয়া উড়তে উড়তে একপর্যায়ে তা ঘনীভূত হয়ে ক্ষোভে পরিনত হয়েছে। ক্ষোভ থেকে অবহেলা। তারপর- তারপর কী?
#চলবে
আজ বিশাল বিশাল মন্তব্য আর ৫ হাজার রিয়েক্ট পেলে আগামী কালই পর্ব দেওয়ার ট্রাই করবো