#অবন্তিকা_তৃপ্তি
#পর্ব_২৩
শুভ্রও কম না। টিপ্পনী কেটে বললো;
‘গরম গরম চায়ের সাথে কটা গরম গরম চুমু? হাওজ দ্যাট? খাতিরদারির কোন কমতি রাখব কেন? চায়ের সঙ্গে একদম খাসা চুমু বোনাস হিসেবেও দেওয়া হবে, কাম।’
কথাটা বলে তুলির দিকে হাত বাড়িয়ে দুষ্টু হেসে এগুলো শুভ্র। তুলি ভ্রু বাঁকিয়ে তাকাল। পরপর বসা থেকে উঠে দু কদম পিছিয়ে বললো;
‘এত গরম গরম জিনিস খেলে আমার বদ হজম হবে। আপাতত চা-ই এনাফ। ওটাই নিয়ে আসুন।’
শুভ্র তবুও এগিয়ে এলো। তার ঠোঁটে প্রগাঢ় দুষ্টু হাসি। তুলির কাছাকাছি এলে তুলি শুভ্রর বুকে হাত রেখে ঠেলে দিতে চাইল। অথচ তুলি ওমন শক্ত দেহখানা এক চুলও সরাতে পারলো না। শুভ্র তুলির কোমরে হাত রেখে চেপে ধরলো নিজের সঙ্গে ওকে। তুলিও এবার হার মানল। শুভ্রর গলায় হাত গলিয়ে দুহাতে গলা জড়িয়ে ধরল। শুভ্র কপালে ঠোঁট বসালো। তারপর সরে এসে তুলিকে আপাদমস্তক দেখে নিয়ে ঠোঁট কামড়ে দুষ্টু হেসে বললো;
‘বাব্বাহ, নীল জামাতে তো অস্থির লাগছে। বিছানায় গিয়ে জামাটার লেন্থ মেপে দেই, চলো।’
‘ছাপ্পান্নো।’
তুলি বললো। শুভ্র ভ্রু বাঁকালো। না বুঝে জিজ্ঞেস করল;
‘কী ছাপ্পান্নো?’
‘ওই যে বললেন লেন্থ মাপবেন, লেন্থ ৫৬ আমার।’
‘অ্যাহ!’
শুভ্র বোকা হয়ে গেলো। পরপর তুলির কৌতুক হাসি দেখে নিজেও বুঝে গেলো কাহিনীটা কী ঘটেছে। হেসে ফেলল শুভ্র। তুলির কপালে দু আঙুল দিয়ে টোকা দিয়ে বললো;
‘এতো দুষ্টুমি জানে রে এই মেয়ে।’
তুলি হেসে ফেললো। শুভ্র তুলিকে ছেড়ে দিলো। টিশার্টটা টেনেটুনে ঠিক করে তুলির দিকে চেয়ে বললো;
‘চা খাবে না? আমিও খাব। আসো একসঙ্গে বানাই।’
তুলি শুভ্রর পিছুপিছু হেলেদুলে রান্নাঘরে গেলো। শুভ্র চুলোয় দু কাপ চা বসালো। সঙ্গে আরেক চুলোয় বসালো পরোটা। পরোটা বাজার থেকে রেডিমেড কিনে আনা। সেটাই হালকা তেল দিয়ে ভাজলো। তারপর পরোটা একপাশে প্লেটে রেখে ফটাফট আলু কেটে ভাজি বসাল। আলু ভাজি হচ্ছে; এদিকে শুভ্র দুকাপ চা তৈরি করে তুলির দিকে এক কাপ এগিয়ে দিল। তুলি এতোক্ষণ হা করে শুভ্রর রান্না দেখছিল। শুভ্র কাপ এগিয়ে দিতেই তুলি চোখ পিটপিট করে বিস্ময় নিয়ে বললো;
‘আপনি রান্না জানেন?’
শুভ্র চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললো;
‘হ্যাঁ। আম্মু একা রান্না করে অলটাইম। আম্মু অসুস্থ হলে খাওয়া বন্ধ আমাদের। তাই শিখে নিয়েছি। এখন ফ্রি হলে আমিই রান্না করি। আম্মুকে রেস্ট দেই একটু।’
তুলি শুভ্রর এই মা ভক্ত দিকটা প্রচণ্ড ভালো লাগে। শুভ্র একজন আদর্শ স্যার, আদর্শ স্বামী এবং নিঃসন্দেহে একজন আদর্শ সন্তান। শুভ্র তার মাকে অসম্ভব ভালবাসে। শুভ্রর একহাতে যেন নিজের আত্মা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। মায়ের কিছু হলে সে আত্মা দেহ ছেড়ে ছুটবে। তুলি মনেমনে একটু ভয়ও পায়; ভবিষ্যতে তুলি আর শুভ্রর মায়ের সঙ্গে কোন ঝুটঝামেলা হলে শুভ্র কাকে সাপোর্ট করবে? যদি আফরোজা কোনোদিন শুভ্রকে তুলিকে ছেড়ে দিতে বলেন? শুভ্র ছেড়ে দিবে? হয়তো দিবে।
তুলি নিজের উল্টোপাল্টা চিন্তায় নিজেই বিরক্ত হলো। এমনটা কেনই বা হবে? তুলি কখনোই শুভ্র বা আফরোজার মনে কষ্ট দিবে না। কিম্তু- যদি কোনো অঘটন না চাইতেই ঘটে? তুলি থমকে গেল।
তুলি থামে। তারপর চায়ের কাপটা একপাশে রেখে শুভ্রর কাছে আসে। শুভ্র তখন চা খেতে খেতে আলু ভাজি নাড়ছে। তুলি গিয়ে শুভ্রর বাহু চেপে ধরে বলে;
‘স্যার, এদিকে ফিরুন।’
তুলির গলা কিছু ঠিক লাগছে না। শুভ্র হাতের কাজ সেরে তুলির দিকে ফিরল। তুলি শুভ্রর বুকে ডান হাত রাখল। শুভ্র তুলির সেই হাতের দিকে একবার চেয়ে আবারও তুলির দিকে তাকাল। ভ্রু বাঁকালো শুভ্র। তুলি থামলো। গলা ভিজিয়ে হঠাৎ করেই জিজ্ঞেস করলো:
‘আপনার আম্মু মানে আন্টি আমায় ঠিক কতটা পছন্দ করেন? সত্যি করে বলুন আমায়।’
শুভ্র এ ধরনের প্রশ্ন শুনে প্রথমে কিছুটা অবাক হয়েছ। পরপর তুলির আগ্রহ দেখে বললো;
‘যতটা ভালবাসলে নিজের একমাত্র ছেলেকে জোর করে, তার মতের বিরুদ্ধে, শুধুমাত্র তোমার উপর ভরসা করে বিয়ে করিয়ে দেন, ততটা পছন্দ করেন।’
তুলি শোনে। থমকে যায় কিছুক্ষণের জন্যে। পরপর আবার আরো একটা প্রশ্ন করে;
‘আর আপনি? আপনি আমায় কতটা পছন্দ করেন?’
তুলির গলা প্রশ্নটা করার সময় একটু কাঁপলো যেন। শুভ্র হয়তো আন্দাজ করতে পারলো, তুলির ভয়টা ঠিক কোথায়? শুভ্র থামলো। তার ডান হাতটা তুলির গালে রাখল। গরম হাতটা গাল স্পর্শ করার সঙ্গেসঙ্গে তুলি কেঁপে উঠল। শুভ্র উত্তর দিল;
‘আম্মু যেভাবে এতটা বছর ধরে আব্বুকে মনে রেখে দিয়েছে, যৌবন কালে স্বামী হারানোর পরও লোকের কথায় বিয়ের পিঁড়িতে বসেনি।আমিও তোমাকে ঠিক ততটাই ভালোবাসি, তুলি। ভালোবাসা বোঝার পর, তুমিই আমার প্রথম এবং তুমিই শেষ। শুনেছো?’
তুলি শোনে। গলাটা কাঁপলো বোধহয় খানিক। তুলি আবেগে নিজেকে সামলাতে না পেরে জড়িয়ে ধরল শুভ্রকে। শুভ্রও জড়িয়ে ধরলো। শুভ্র বুঝতে পারছে, উত্তরটা তুলির মনঃপূত হয়েছে। শুভ্রও হাফ ছাড়ল। তুলি সন্দেহ করেছিল, মায়ের জন্যে কোনোদিন শুভ্র তুলিকে ছেড়ে দিবে কিনা। অথচ শুভ্র জানে, তার আম্মু যে সবসময় ছেলের সুন্দর এক সংসারের স্বপ্ন দেখেন, তার পক্ষে কোনোদিন তুলিকে ছেড়ে দেওয়ার কথা মাথায়ই আসবে না। তুলি অবুঝ, এ বাড়ি আসুক। কটা দিন গেলে নিজেই বুঝে নিবে।
হঠাৎ নাকে কিছু পো ড়ার গন্ধ এলে শুভ্র তুলিকে ছেড়ে দিল। দ্রুত গিয়ে আলু ভাজি চুলো থেকে নামিয়ে নিলো। পো ড়া গন্ধে পুরো রান্নাঘর ছড়িয়ে গেছে। তুলি ঠোঁট উল্টে বলল;
‘জ্বলে গেছে নাকি?’
শুভ্র আলু ভাজি নেড়েচেরে দিল। তারপর কাতর কণ্ঠে বললো;
‘এভাবে রান্নাঘরে তোমার এত প্রেম পেলে তো বিপদ, তুলি। ঘরের সবার তাহলে জ্বলা খাবার খেতে হবে। ওহ গড।’
______________________
দুপুরের তীব্র রোদ গায়ে পরছে। সূর্যের তীব্রতাটা আজ অনেকটাই বেশি। শুভ্ররা তৈরি হয়ে নিচে নেমেছে। শুভ্র গাড়ি পার্কিং থেকে বের করে সামনে আনল। আফরোজা পেছনে উঠে বসলেন। তুলি সামনে, আর শুভ্র ড্রাইভ করছে। গাড়ি চলছে। শুভ্র গাড়ীতে সফ্ট মিউজিক ছেড়ে দিয়েছে। তুলি জানালার দিকে চেয়ে আছে।
আফরোজা আজ সাথে আছেন দেখে তুলি মাথায় ওড়না তুলে রেখেছে।কিম্তু বাতাসের ঝাপটায় ওড়না বারবার পরে যাচ্ছে। দেখা গেলো, তুলি একপ্রকার হিমসিম খাচ্ছে ওড়না সামলানো নিয়ে। আফরোজা পেছনে থেকে তুলির ওড়নার সঙ্গে যুদ্ধ করা দেখছেন। তাই তিনি আগ বাড়িয়ে বললেন;
‘এই তুলি? ওড়না পরে রেখেছিস কেন এত গরমে? গাড়িতে আমি আর শুভ্র ছাড় কে আছে আর? মাথায় কাপড় দেওয়া লাগবে না।’
শুভ্রও এবার তুলির দিকে চাইল। বললো;
‘খুলে ফেলো প্রবলেম হলে।’
তুলি যেন হাঁপ ছাড়ল। মাথা থেকে কাপড় সরিয়ে গলায় জড়াল। আফরোজা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন। ঘুমিয়েই পড়েছেন বোধহয়। তুলি জানালার দিকে চেয়ে আছে। শুভ্র এই ফাঁকে আফরোজার দিকে একবার তাকিয়ে সতর্ক হয়ে নিলো। পরপর বাম হাতটা দিয়ে আলগোছে তুলির নরম ডান হাতখানা চেপে ধরলো। সঙ্গেসঙ্গে তুলি সতর্ক হয়ে শুভ্রর দিকে চেয়ে পেছনে একবার আফরোজাকে দেখলো। নাহ, ঘুমাচ্ছেন। তুলি শুভ্রর দিকে চাইল। শুভ্র একহাতেই গাড়ি ড্রাইভ করছে। তুলি ফিসফিস করে বললো;
‘এত প্রেম গাড়িতে না দেখালে চলে না?’
শুভ্রও আস্তে কণ্ঠে বলল;
‘বেডরুমেই তো দেখাতে চেয়েছিলাম। সুযোগই দিলে না।’
শেষের কথাটা কাতর কণ্ঠে বলল শুভ্র। তুলি ভ্রু বাঁকিয়ে প্রশ্ন করল;
‘এমন করে বলছেন, যেন কতদিনের উপোস আপনি।’
‘দু সপ্তাহ চৌদ্দ ঘণ্টার উপোস আমি, তুলি।’
তুলি বুঝল না শুভ্রর কথা। কী গুনল শুভ্র? তুলি প্রশ্ন করল;
‘দু সপ্তাহ চৌদ্দ ঘণ্টা মানে?’
শুভ্র এবার দুষ্টু হাসে। তুলির দিকে চেয়ে চোখ টিপে বলে;
‘সাজেকের সেই রাতের কথা ভুলে গেছো? বৃষ্টি ভেজা রাত, ভেজা শাড়িতে তুমি, আমাদের গরম নরম হানিমুনের বিছানা। ওয়াও, আমি আর ভাবতে পারছি না। এমন রাত বারবার আসুক।’
তুলি শুভ্রর এমন বেলাজ কথা শুনে কেশে উঠল। থতমত খেয়ে বললো;
‘অসভ্য পুরুষ। আপনার মুখে লাগাম দিন।’
‘লাগাম? কার জন্যে দিব? তোমার জন্যে? বউ না তুমি আমার?’
শুভ্র একের পর এক বেলাজ কথা বলছে, আর তুলি বারবার খিচিয়ে উঠছে। শুভ্র যেন আজ থামছেই না। সিসিমপুরের ন্যায় চলছেই তার বেলাজ কথাবার্তা। তুলি তাই শুভ্রকে থামাতে একপর্যায়ে তেতে উঠে বলল;
‘আপনি যদি এখন দয়া করে চুপ থাকেন, তাহলে আজ রাতে যেটা চাইছেন সেটা পাবেন। তাও চুপ থাকেন, আমার কান জ্বলছে। ও আল্লাহ।’
#চলছে
ভার্সিটিতে ক্লাস শুরু হয়ে গেছে আমার। একবিন্দুই রেস্ট না নেওয়ার দিন এসে গেছে। দুঃখিত দেরি করে দেওয়ার জন্য। আজ গল্প দিব বলে, বিকেলের ঘুম স্যাক্রিফাইজ করলাম