#পর্ব-২৯ (রোমান্টিক পর্ব )
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ
সুইজারল্যান্ডের অত্যন্ত সৌন্দর্যপূর্ণ একটি এয়ারপোর্টে সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পড়ুয়া একজন রমনী দাড়িয়ে আছেন ব্যাগপত্র নিয়ে। হাতের হ্যান্ড ব্যাগটি ঝুলিয়ে নিয়ে লাগেজ টেনে নিয়ে চলেছে সে। সানগ্লাসের ফাঁক গলিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে খুঁজে চলেছে কাউকে। রমনীটি অবশেষে বাহিরের দিকে হাঁটা ধরলেন। তখনই নিজের দিকে ফুল হাতে নিয়ে এগিয়ে আসতে দেখা গেলো একটি শুভ্র মানবকে। শুভ্র মানবটির পড়োনে সাদা টি-শার্ট ও কালো ডেনিমপ্যান্ট। শুভ্র মানবটি হাতের ফুল এগিয়ে দিয়ে জড়িয়ে ধরলো নিজের সাথে সর্বশক্তি দিয়ে। সাদা শার্ট পরিহিতা রমনীর পা শূন্যে উঠে গেলো। শুভ্র মানবটিকে নিজেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো সন্তপর্ণে। শুভ্র মানুব সুযোগে ফিসফিস করে বলল,
‘ওয়েলাম টু আওয়ার মধুচন্দ্রিমা ইন সুইজারল্যান্ড সর্বনাশিনী।’
তটিনীর ঠোঁটে জায়গা করে নিলো শুভ্র মানবটির অতৃপ্ত ঠোঁট। বিদেশের এই মাটিতে এসব নরমাল। সুতরাং তটিনী বাঁধা দিলো না। নিজেও বহুদিনের অতৃপ্ত অনুভূতি থেকে বের হতে ডুব দিলো তৃপ্তিময় শুভ্র মানবের ঠোঁটের ভাজে।’
আশেপাশে এমন অহরহ ঘটছে। নিজের কাঙ্ক্ষিত মানুষকে বহুদিন পর কাছে পেয়ে তৃষ্ণার্থ সব মানব মানবীরা ঝাপিয়ে পড়ছে একে অপরের প্রিয়জনের উপর। রুদ্র বেসামাল হয়ে গেলো। তটিণী-র গলদেশে মুখ ডুবিয়ে থাকলো অনেকক্ষণ। তটিনী নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করলো। যতোই হোক তারা বাঙালি। এবার তার একটু আনইজি ফিল হচ্ছে বটে।
রুদ্রের হাত ধরে গাড়িতে চেপে বসলো তটিনী। সামনের ড্রাইভার নিজ মনে গাড়ি চালাতে ব্যস্ত। রুদ্র ধৈর্যহীন হলো। পুনরায় ডুব দিলো তটিণী-র মধ্যে। হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিলো স্পর্শকাতর সব জায়গা। বহুদিন পর সেই একই স্পর্শ পেয়ে তটিণী-র ঘুমিয়ে পড়া শরীর শিরশির করে উঠলো। রুদ্র টেনে নিজের কোলে বসিয়ে দিলো। নিজের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে ডুব দিলো প্রিয়তমার বুকের ভাজে।
গাড়ি থামলো রুদ্রের ফ্লাটের বিলাসবহুল বাড়িটার সামনে। বিল্ডিং এর একটি ফ্লাটে থাকে রুদ্র। ড্রাইভারকে ব্যাগপত্র নিয়ে যেতে বললো। ড্র-ই ব্যাগপত্র নিয়ে ফ্লাটের উদ্দেশ্যে গেলো। রুদ্র তটিনীকে কোলে তুলে নিলো গভীর অনুভুতির জোয়ারে ভেসে।
ড্রাইভার ফ্লাটের সামনে ব্যাগপত্র রেখে চলে গেলো। যাওয়ার আগে চাবির সাহায্যে খুলে দিয়ে গেলো রুদ্রের ফ্লাটের দরজা। রুদ্রের কোলে করেই তটিণী-র গৃহপ্রবেশ হলো। রুদ্র তটিনীকে নিয়ে প্রবেশ করলো ফুলে সজ্জিত কামরায়। চারিদিকে ফুলের বাহার দেখে তটিনী অবাক হলো। রুদ্র ঠোঁট কামড়ে হাসলো,
‘কতো দিন পর তোমাকে কাছে পাচ্ছি, প্রস্তুতি তো করতেই হয় ওয়াইফি।’
তটিনীকে বিছানায় বসিয়ে রুদ্র বের হয়ে গেলো। ব্যাগপত্র সব এনে রেখে দরজা লক করলো। তারপর এগিয়ে আসতে লাগলো তটিণী-র দিকে। তটিনী শার্টের বোতাম ঠিক করার চেষ্টা করলো,
‘ফ্রেশ হয়ে নিই আগে..
রুদ্র বলার সুযোগ দিলো না। দীর্ঘ এক বছরের দূরত্ব গুছিয়ে ফেললো তাদের। এতো ভালোবাসার জখমে তটিনীর শরীর ব্যথা করতে লাগলো। রুদ্র সেগুলোর ধার ধারলো না। একের পর এক ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে নিলো তটিণী-কে। তটিণী-র এতো ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে হাসফাস করলো। কিন্তু তবুও যেনো মন ভরলো না কারো। রুদ্র চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেলো সেই আদুরে ভালোবাসার চাদর। এবার যেনো তৃষ্ণা মিটলো দুটো অতৃপ্ত মনের, দুটি অতৃপ্ত আত্মার! সেইভাবেই রুদ্রের উপর নিজের সম্পূর্ণ শরীর ছেড়ে দিয়ে বুকে মুখ লুকিয়ে তৃপ্তির হাসি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো তটিনী। রুদ্র সেই ঘুমন্ত মুখশ্রীতে আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে লাগলো। পেটের কাছে গরম কিছুর অস্তিত্ব অনুভব করে তটিনী রুদ্রকে ঘুমের মধ্যে গভীর ভাবে জড়িয়ে নিলো। রুদ্র নিজের কাছে লেগে পড়লো। তটিণী-র ঘুম ছুটে পালালো। রুদ্রের উন্মুক্ত বক্ষে চুমু খেয়ে সায় দিলো নিজের মতো।
*
সুইজারল্যান্ডে রাত বারোটা। রুদ্র বাংলাদেশে নিজ বাড়িতে ফোন করে তটিণী-র ঠিকভাবে পৌছানোর কথা জানিয়ে দিয়েছে। কিচেনে সে আপাতত গরম গরম খাবার তৈরি করতে ব্যস্ত। তটিনী প্রচন্ড শীতের মধ্যে হিটার ব্যবহার করে গোসল করেও থরথর করে কাঁপছে। রুদ্র খাবার বানিয়ে নিজ হাতে খাইয়ে দিলো। নিজে খেয়ে বস গুছিয়ে রেখে বারান্দায় দুলনাতে তটিনীকে কোলে নিয়ে বসলো। বারান্দায় একটি থাই গ্লাস খুলে দিলো রুদ্র। লম্বা হুডি গায়ে জড়ানো দুজনের। তটিণী-র হাত পা গরম কাপড়ে ঢাকা। রুদ্রের বুকে মাথা ঠেকিয়ে সে বহুকাঙ্ক্ষিত তুষারপাত দেখতে লাগলো। রুদ্র বসার আগে বারান্দার এক কোণে মোবাইল সেট করে এসেছে। একের পর এক ক্যান্ডিট ফটো ক্লিক হচ্ছে তাতে। রুদ্র মোবাইল হাতে নিয়ে তটিণী-র ও তার ছবি পোস্ট করলো। ক্যাপশন দিলো ‘মধুচন্দ্রিমা ইন সুইজারল্যান্ড।’
সেই পোস্ট সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলো। বাদ পড়লো না রুদ্র ও তটিণী-র আত্নীয় স্বজন। সবাই দেখলো। রুপান্তর তটিণী-র ফোনে বার্তা পাঠালো, ‘জামাই পেয়ে বান্ধবীর কথা ভুলে গেছিস হারামি।’
তটিনী ও রুদ্রের রিলেটিভদের মধ্যে তুমুল আলোচনা হচ্ছে। ইতিমধ্যে রোবা নাহার ও ঈশানীর মোবাইলে অনেকে ফোন ও করেছে। তারা সেগুলো খুব ধীরেসুস্থে হ্যান্ডেল করেছে।
মিনহাজের সাথে মেসেজে কথা বলার এক পর্যায়ে রুপান্তর বলল, ‘আমার বিয়ে করার আগে সুইজারল্যান্ড এ হানিমুনে যাবো সেই ইচ্ছে জেগেছিল। কিন্তু বিয়ে তো হলো বাট সুইজারল্যান্ডে হানিমুনে যাওয়াটাই হলো না এখনো।’
মিনহাজ উত্তর পাঠালো,
‘যাওয়া হবে কখনো। সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে শুধু।’
রুপান্তর কথা পাল্টালো।
‘তোর পড়াশোনা কেমন যাচ্ছে?’ মেডিক্যালে পড়ছিস কয়েক বছর ডাক্তার হয়ে তো চিনবিই না।’
মিনহাজ হেসে রিপ্লাই দিলো,
‘আর কাউকে চিনি আর না চিনি নিজের বউকে তো ভুলতে পারবো না। এবার সে যে-রকমই হোক বউ-ই তো।’
রুপান্তর লিখলো,
‘তখন যদি বউকে আর স্বীকৃতি দিতে ইচ্ছে না-হয়?’
‘চৌধুরী বাড়ির পুরুষেরা কাপুরুষ নয় রুপান্তর। ‘
রুপান্তর দমে গেলো। মিনহাজ শুধালো,
‘আমি এতো সভ্য নই রুপ। পুরো পৃথিবীর সামনে সভ্য ভদ্র হলেও তোমার সামনে আমার অভদ্র হতে ইচ্ছে করে। কিন্তু আমি আটকে যাই। তুমি ফ্যান্টাসিতে ভুগছো রুপ। তুমি কি চাও তা তুমি কখনো নিজ মন থেকে ভাবোনি। সবই উপরে উপরে ভেবেছো। আমি চাই তুমি ফ্যান্টাসি ছেড়ে মন ভাবো। আমি তোমার জন্য সঠিক কি না, তুমি আমাকে নিয়ে পুরো এক জনম কাটাতে পারবে কি না। তোমার পরিবার সমাজ আমায় মানবে কি না। সবই ভাবো রুপ। আমরা কোনো মানুষই ভুলের উর্ধ্বে নই। খারাপ দিক আমারও আছে। সেগুলো নিয়ে ভাবো। তুমি আমার খারাপ দিকগুলো মেনে আমার সাথে থাকতে পারবে কি না সেটাও ভাবো। তারপর নিজের সিদ্ধান্ত জানিও। তটিণী-র জন্য তার রুদ্র ইরফান আছে। তোমার জন্য সবসময়ই মিনহাজ চৌধুরী থেকে যাবে। কথা দিচ্ছি!
*
গরম শীতবস্ত্র নিচে ভালোবাসাবাসি করে দুজনকে আরাম দিতে ব্যস্ত তারা। রুদ্র ফিসফিস করলো,
‘তোমাকে পুরো জনম কাছে ফেলেও তৃষ্ণা মিটবে না সর্বনাশিনী। তোমাকে শুধু পেতেই ইচ্ছে করে। আমাদের ইসলামে একটাই জনম আছে। তারপর আছে মৃত্যুর পরের জনম। সে জন্মেও তুমি আমাকেই বেছে নিও কেমন? আমি তুমি নামক হুরকে মৃত্যুর পরের জনমেও নিজের করে পেতে চাই প্রিয় ভালোবাসা!’
রুদ্রের ‘প্রিয় ভালোবাসা’ ভালোবাসায় তলিয়ে গেলো। এই ঘনমাত্রার হাওয়া, ঠান্ডা আবহাওয়া, ঝিরঝির মেঘের মতো উড়ে বেড়ানো তুষারপাত যেনো ভালবাসা বাড়িয়ে দিতে বেড়ে গেলো হঠাৎ করেই। তটিনী কেঁপে উঠে রুদ্রের ভেতরে ঢুকে যেতে চাইলো। রুদ্র আষ্ঠেপৃষ্ঠে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে ভালোবাসাবাসিতে ডুব দিলো।
সাদা সফেদ তুষারপাত পড়ছে আকাশ হতে। তুষারপাতে ঢেকে যাচ্ছে চারিপাশ। ঢেকে যাচ্ছে বাড়িঘরের থাই গ্লাস। রুদ্রের ঘরের থাইগ্লাসের সামনে উঁকি দিচ্ছিল একটি মিটিমিটি তারা। নাম তার ধ্রুবতারা। তুষার পাত থাই গ্লাসে পড়ে তটিণী-র লজ্জা বাছাতে ঢেকে দিলো সেই তারাকে। রুদ্র সে-ই দৃশ্য দেখে চোখ বন্ধ করে মুচকি হাসলো। ভালোাবাসার চাদরে মুড়িয়ে যাওয়া তটিণী-র কানে কানে শুধালো,
‘আমার লজ্জাবতীর লজ্জায় লজ্জিত হয়ে ধ্রুবতারা উধাও হয়ে গেলো। উধাও করে দিলো শুভ্র তুষারপাত। আমি তোমার লজ্জা উধাও করে দিবো লজ্জাবতী। সারাজনমে ভালোবাসাটা কম হয়ে গেলো না? আরেকটু বেশি ভালোবাসার সময় বেড়ে গেলে কি খুব ক্ষতি হতো?’
(চলবে)