লেখক:হৃদয় আহমেদ
পর্ব ৭
আকাশে চাঁদ উঠেছে। থলের মতো গোল চাঁদ। ফুরফুরে বাতাস বেলকনি থেকে এসে গায়ে লাগছে। কিন্তু মন ছুঁতে পারছে না কিছুই। বুক ব্যাথায় বিষিয়ে উঠেছে। ভেঙে টুকরো টুকরে হয়ে গেছে আমার মন। জানতাম সম্পূর্ণ দায়বদ্ধ এ বিয়ে! এই তো তার মুখোশ। তার আসল আচরন! কতটা অহংকার তার প্রফেশনে। বুক চুরমার হয়ে আসছে। ভেবেছিলাম হয়তো ভালোবাসেন আমায় উনি। কিন্তু উনি খুনি? কার খুনি? কোন মায়ের বুক খালি করেছে সিয়াম ভাইয়া? তাই ত্রিধা আপু তাকে ছেড়ে চলে গেছে? চোখ ফেটে পানি গড়িয়ে পড়লো। বুক ঝলসে যাচ্ছে। অসহনীয় যন্ত্রনায় হেঁচকি তুলে হু হু করে কেঁদে উঠলাম।
‘ সিয়া! ‘
পুরুষালি কন্ঠে কেঁপে উঠলাম। দু হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে মুছে নিলাম চোখ। ঘৃনাভরা চোখে তাকালাম সামনের মানুষটার দিকে। ছোট ছোট চোখে আমাকেই দেখছিলেন উনি। চিঠি তারাতাড়ি বালিশের নিচে রাখলাম। কেবল প্রথম লাইন পড়েছি। পুরোটা পড়া শেষ হয়নি। হাত কাঁপছে, বুক কাঁপছে! কোন খুনি সামনে দাড়িয়ে আমার। আর তাও সে আমার স্বামী। সন্মোধনটা ছিলো ‘ খুনি সিয়াম ‘ দিয়ে। কেন? কি আছে পুরো চিঠিতে?
,,ফ্লাসব্যাক,,
ছাঁদে অনেকক্ষণ দাড়িয়ে আছি। একটু ব্যাথা করছে পা। আব্বু কি আমাদের এখানে আসতে বলে নিজেই কোথাও চলে গেলো নাকি? ক্লান্তিভরা পূর্ন দৃষ্টি নিয়ে তাকালাম সিয়াম ভাইয়ার দিকে। হালকা বাতাসে সামনে চুলগুলে এলোমেলো ভাবে উড়ছে। পাতলা, মৃসন চামড়া ভরসন্ধ্যায় কত স্নিগ্ধ,সুন্দর দেখাচ্ছে। লোকটিকে যত দেখি মুগ্ধতা বাড়ে। বয়স বাড়ার সাথেসাথে তার কি সৌন্দর্য ও বৃদ্ধি পাচ্ছে? উনি খোলা আকাশ দেখছেন। তারাদের মেলা বসেছে আকাশে। হঠাৎ ই আমার দিকে তাকালো সিয়াম ভাইয়া। একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম। তড়িৎ গতিতে চোখ সরিয়ে নিলাম আমি।
‘ কি দেখছিলিস হুম? ‘
আটকানো গলায় বললাম, ‘ কই না, না নাতো। ‘
বলেই আবারো বলতে লাগলাম,
‘ কি জন্য ডেকেছে কি বলেছে আব্বু? ‘
‘ না। ‘
‘ আপনি বরং রুমে চলে যান। ঠান্ডা লাগবে। ‘
‘ আর ইউ ওকে সিয়া? ‘
কপাল কুঁচকে তাকালাম আমি। বললাম,
‘ কেন? ‘
‘ একজন ডেকেছে, আর তার কথা না শুনেই চলে যাবো? ‘
‘ আপনার যে অল্পতেই ঠান্ডা লাগার বেরাম আছে। ভুলে গেছেন? ‘
উনি চমকে উঠলেন। আবাক কন্ঠে বললেন, ‘ মা বলেছে? ‘
‘ না। আগে দেখতাম, আপনি রাতে কখনোই অনু, তনু আপু আর অলভীর সাথে ছাঁদে আসতেন না। ‘
‘ তুই লুকিয়ে দেখতিস আমার কাজকর্ম? ‘
মুখ বাঁকিয়ে বললাম,’ বয়েই গেছে! ‘
চোখ সরিয়ে কিছু সময় দাড়িয়ে রইলো সিয়াম ভাইয়া। কিছু বলবে না? কিছু একটা ভেবে চলেও গেলো। এখনো ওনার অফিসের অনেক কাজ পরে আছে। এ বাড়িতে ওয়াই-ফাই না থাকায় উনি কাজ করতে পারছেন না। অফলাইন প্রবলেম গুলো নিয়েই দুপুর থেকে কাজ করছিলেন।
উনি যেতেই ছাদে রাখা বেঞ্চে বসে পড়লাম। আব্বু এলো। আমার পাশে বসলেন উনি। চাঁদের আলোয় চারপাশ আলোকিত, মুগ্ধতা কেড়ে নিতে বাধ্য মন। আব্বু খুব যত্নে মাথায় হাত রাখলেন। আমি বলে উঠলাম,
‘ কি বলবে? ‘
আব্বু হাত সরিয়ে দুহাত বুকে গুজে বললেন,’ কলেজ ভর্তি হচ্ছিস কবে? ‘
‘ কাল যেতে বলেছে একবার। ‘
‘ ও বাড়িতে কোন অসুবিধা হয়? ‘
মাথা নাড়িয়ে বললাম, ‘ কই না তো। ‘
‘ জানিস সিয়া, ত্রিধা যখন সরাসরি বললো ও এ বিয়েতে আসবে না, তখন সিয়ামের কি অবস্থা হয়েছিলো? তোর মামী-মামা খুব আকুতি নিয়ে বলেছিলেন যেন সিয়ার সাথে বিয়েটা দেই। আমি রাজি ছিলাম না। অনেক জোর করলো, তাই….’
‘ তাই তুমি আমার চিন্তা না করে রাজি হয়ে গেলে। তাইতো? ‘
‘ পরিস্থতির চাপে রে মা। ‘
শান্ত করলাম নিজেকে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এতটুকু কারনের জন্য আব্বু কিছুতেই এ বিয়েতে রাজি হতে পারে না। আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে আব্বুর কতশত ভাবনা ছিলো, আর এইটুকুতেই বিয়ে দিতে রাজি হয়ে গেলো আব্বু? এও সম্ভব? কন্ঠনালি খিঁচে বলে উঠলাম,
‘ ব্যাস এতটুকুই কারন এ বিয়ের? ‘
‘ হুম। ‘ কন্ঠ শান্ত শোনালো। তবে কি আমিই ভুল ভেবেছি? আমি যতটা ভাবতাম ততটা চিন্তিত ছিলো না আব্বু?
‘ তুই নাকি খুব রাগারাগি করিস সিয়ামের সাথে? ‘
টনক নড়লো। চমকে তাকালাম আব্বুর দিকে।
‘ কখনোই না। কে বলেছে? ‘
‘ আমার মনে হলো। ‘
বুঝেশুনে কথা বলা শক্তপোক্ত লোকটা অদ্ভুত সব কথা বলছে। চোখ ছলছল করে উঠলো। বটগাছের মতো উঁচু মস্তিষ্কে ভাবা লোকটার কথাগুলোয় আহত করছে আমার বুক। না না। শক্ত হতে হবে আমায়। সবটা জানতে হবে। কয়েকটা প্রশ্ন কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে আমায়। তার মধ্যো একটি হলো আজ কোথায় গিয়েছিলো আব্বু। বসে থাকতে পারছি না। মনে হচ্ছে পাশে বসে থাকা লোকটার বুক ফেটে যাচ্ছে। গোপন কথাগুলো না বলার কষ্ট একটু একটু করে নিঃশেষ করে দিচ্ছে তাকে। আমি উঠে দু পা এগোতেই বলে ওঠে আব্বু,
‘ সিয়া…’
পিছু ফিরতেই আবারো বলতে লাগলো আব্বু,
‘ যা কিছুই হয়ে যাক সিয়ামকে ভুল বুঝবি না। পৃথিবী উল্টে গেলেও না। ‘
কিছুই বললাম না। ছুটে রুমে চলে এলাম। ভাইয়া রুমে নেই৷ কিন্তু উনি তো রুমে আসবেন বলেই চলে এলেন ওখান থেকে। ওয়াশরুমের দরজাও খোলা। তাহলে কি নেই উনি রুমে? হুট করেই চিঠির কথা মনে পড়লো। অজানা অনুভূতি হচ্ছে। দুপুরে চুপিসারে বইয়ের ভাজে রেখেছিলাম। টেবিলে গিয়ে বইয়ের ভাজ থেকে চিঠিটা বের করে রুমে এলাম। বুক ধুকপুক করছে। জানি না কেন, চিঠিটা হাতে নিলেই বুক ধুকপুক করে, হাত নিশপিশ করে। দামামা বাজে বুকে। দ্রিম, দ্রিম শব্দের উৎপত্তি হয় বুকে।
চিঠিটা নিয়ে বসে পড়লাম বিছানায়। আলতো করে ভাজ খুললাম চিঠির। অসম্ভব সুন্দর হাতের লেখা। মুগ্ধ নয়নে প্রথম লাইনটুকু পড়ে চোখ ভর্তি ঘৃনা জমলো।
‘ খুনি সিয়াম ‘
চোখ ছানাবড়া। আমি কি ঠিক পড়লাম? সত্যিই কি খুনি সিয়াম লেখা? চোখ বোলালাম চিঠির পাতায়। ভুল পড়িনি আমি। সুন্দর করে শুরু করেছে আগুন্তকঃ! লিখেছে খুনি সিয়াম দিয়ে শুরু।
#চলবে….
আমার সংসার গল্পের লিংক (all part) kobitor.com
খুব ছোট হলো? খুব ব্যাস্ততায় সময় কাটছে। গল্পে এইটুকু ঝামেলা পুহিয়েই সিয়া-সিয়ামের মিলন হবে। হ্যাপি রিডিং।