লেখক:হৃদয় আহমেদ
পর্ব ১১
‘ কিন্তু আপনিতো আমায় কখনো বলেননি আমাকে আপনার পছন্দ! ইভেন, আমার মন বলেছিলো আপনি অমন ছেলেই নয়। ‘
আমার প্রশ্নের উত্তরে উনি চোখ সরিয়ে মরিচ টপের উপর রাখলেন। লাল রঙের দুটো ক্যাপসিক্যাম ঝুলে আছে গাছটায়।কিছু একটা ভেবে উত্তর দিলেন,
‘ বলেছি ভালো লাগে, ভালো বাসি এটাতো বলিনি? ‘
চোখে পানি জমলো। বুক ধুকধুক করছে। সবটা জেনে করা, অথচ আমায় ভালোবাসতেন না উনি। কি অদ্ভুত! চোখ বুজে নিলাম। ভিজে উঠলো গাল। ভাইয়া দেখার আগেই চোখের পানি মুছে নিলাম। জিজ্ঞেস করলাম,
‘ অন্যকেউ কেন নয়? ভালোবাসতেন না, অথচ আমাকেই বিয়ে করলেন? ‘
‘ ওইযে ভালো লাগতো! সেখান থেকেই। ‘
এমদম স্বাভাবিক গলা,মুখভঙ্গি! আড়ষ্ট কন্ঠে জিজ্ঞেস করলাম,
‘ আব্বুতো খুব পজিটিভ ছিলো আমায় নিয়ে, আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে। উনি হুট করে বিয়ে দেওয়ার লোক নন। কেন দিলেন? ‘
টপে চোখ আবদ্ধ রেখেই বললেন উনি,’ এসব তোর আব্বুই বলতে চেয়েছিলেন। আমি বাঁধা দিয়েছি। আর এই কারনটা আমায় উনি বলতে নিষেধ করেছেন। তাই আ’ম সরি। বলতে পারবো না। ‘
ঠিক ভেবেছি! নিশ্চয়ই কিছু না কিছু হয়েছে আব্বুর। বাধভাঙা নদীর মতো হু হু করে কেঁদে উঠলাম। আমার কান্নার স্বর পেতেই দ্রুত আমার দিকে তাকায় সিয়াম ভাইয়া। হঠাৎ আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নেন উনি। কন্ঠ উত্তেজিত,
‘ তুই যা ভাবছিস, ভুল ভাবছিস! তোর আব্বু সেদিন রাজধানী কেবল নিজের পেনশনের টাকা নিয়ে কিছু সমস্যা হয়েছিলো তাই গিয়েছিলো। এভাবে ভুল ভেবে নিজেকে কেন কষ্ট দিচ্ছিস?’
ভেজাকন্ঠে বললাম, ‘ তাহলে বলুননা আমায়! ‘
‘ হয়তো কোন স্পেশাল কারণ আছে, আমি ঠিক জানি না! ‘
‘ মিথ্যে বলছেন? ‘
ছেড়ে দিলেন উনি। আবারো অন্যদিক ফিরে বললেন, ‘ বলছি না মিথ্যে। ইট’স ট্রুথ। ‘
উনি বলার পরও কেন বিশ্বাস হচ্ছে না আমার? কেন মনে হচ্ছে সামনে যা হচ্ছে তার সবটাই পরিকল্পিত ভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। চোখ বুজলেই আব্বুর ফ্যাকাশে, শুকনো মুখটা ভেসে উঠছে। কিছুতেই নিজেকে শান্তনা দিতে পারছি না আমি। কিছুতেই না!
‘ আর কিছু? ‘ বললো ভাইয়া। আমি চোখের পানি মুছে নিলাম। শুকনো ডোগ গিলে বলে উঠলাম, ‘ কোথায় ছিলেন এ দু রাত? ‘
‘ এটা কি না জানলেই নয়? ‘
বলেই চলে যেতে যাচ্ছিলেন উনি। আমি পিছু ডেকে শক্ত গলায় বললাম,
‘ বলেছিলেন সবটা বলবেন! তাহলে যে পালাচ্ছেন? ‘
থেমে গেলো সিয়াম ভাইয়া। খানিক ঠায় দাড়িয়ে রইলো। এরপর নরম গলায় বললো,
‘ অবিশ্বাস,ভুল, আর ঘৃনা! তিনটে জিনিসই রয়েছে আমার প্রতি তোর। এতটুকু ভালোবাসা, বিশ্বাস নেই। কি বলবো? হাহ্! ‘
শেষের কথাটা কষ্টে জর্জরিত শোনায়। চাপা আর্তনাৎ নিয়েই স্হান ত্যাগ করলো সিয়াম ভাইয়া। জলভর্তি আখিতে আকাশের দিকে তাকালাম। অন্ধকারে ছেয়ে গেছে ধরনী।
____
অর্ধেক রাত চিন্তায় কাটলো। সকালের তির্যক রোদ মুখে পড়তেই হকচকিয়ে উঠলাম। তাড়াতাড়ি উঠতে গিয়ে আজও আটকে গেলাম। উনি জড়িয়ে রেখেছেন আমায়। আস্তে করে হাত সড়িয়ে উঠে বেলকনির পর্দা সরাতেই মুখে চকচকে রোদ পড়লো। মুখচোখ কুঁচকে নিলাম। এরপর পড়লো মাথায় হাত! এত বেলা হয়ে গেছে? আর আমি পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিলাম? আজ তো আমায় কলেজেও যেতে হবে! আবারো বেডের পাশের টেবিলটায় রাখা ফোন অন করে দেখলাম সারে নয়টা অলরেডি বেজে গেছে! তড়িৎ গতিতে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে ফিরে এসে রেডি হয়ে নিলাম। উনি এখনো ঘুমাচ্ছে। ডাকলাম না! বেড়িয়ে পরলাম রুম থেকে। একটু তাড়াহুড়ো করে নিচে নেমে ছুটে গেলাম রান্না ঘরে। এ সময় মামী রান্নাঘরেই থাকে।
‘ কি রে তুই খাবি না? কই যাচ্ছিস রেডি হয়ে? ‘
আমি ভেতরে গেলাম রান্নাঘরের। বাদাম ভাজছে মামী। বাদাম আমার খুব প্রীয়। গরম গরম কেবল নামালো মামী। বললাম,
‘ সকাল সকাল বাদাম বাজছো যে? ‘
‘ আর বলিস না। সিয়ামের আব্বু প্রতিদিন সন্ধ্যায় টিভি দেখে আর বাদাম খায়। কাল শেষ হয়ে গিয়েছিলো। তাই হুকুম এসেছে বাদাম ভাজার। ‘
‘ আমি নিবো কয়েকটা? ‘
ছোট্ট শিশুর মতো তাকিয়ে ভিজে গলায় বললাম। মামী ঠাট্টা হাসলো। বললো,
‘ নিবি তো এভাবে বলার কি আছে? নে। ‘
কয়েকটা বললেও গরম বাদাম কয়েক মুঠো করে ব্যাগে নিলাম। এরপর হাতে কতগুলো নিয়ে তাড়া দিয়ে বললাম,
‘ আমি আসছি। আমার দেড়ি হচ্ছে। ‘
‘ একটু খেয়ে যা। ‘
‘ খেয়ে নিবো চিন্তা করো না। ‘
‘ সাবধানে যাস। ‘
বেড়িয়ে পড়লাম বাড়ি থেকে। বাড়ির গাড়ি করে আমি কলেজে যেতে পারবো না সেটা কাল সাফ বলে দিয়েছি সিয়াম ভাইয়াকে। উনি রাতে তর্ক করেছেন। কথা বলার মুড ছিলো না বলে চুপ ছিলাম। তাই বলে কি গাড়ি করে যাবো নাকি? আমার যে বন্ধবী, ওরা সারাক্ষণ মজা নিবে। তাই রাস্তায় গিয়ে দাড়ালাম রিকশার আশায়। কিছুক্ষণ পর রিকশাও পেলাম আমি। উনি কলেজে নামিয়ে দিলেন।
গেটেই দাড়িয়ে তিশা, তন্নি আর প্রিয়। একটু দুরুত্ব নিয়ে তাকিয়ে আছে সামি। আমি রিকশা থেকে নেমে ভারা মিটিয়ে এগিয়ে গেলাম ওদের দিকে। সবাই গম্ভীর ভাবে তাকিয়ে আমার দিকে। ভ্রুযুগল কুঞ্চিত করে প্রশ্ন করলাম,
‘ এমন পেঁচার মতো মুখ করে দাড়িয়ে আছিস কেন তোরা? ‘
তিশা রাগান্বিত হয়ে বললো, ‘ তুই কি ভেবেছিস আমরা কিছু বুঝি না? ঘাসে মুখ গুজে চলি? ‘
সাবধানে বললাম, ‘ মানে? ‘
তন্নি এগিয়ে এলো আমার কাছে। বললো,
‘ এইযে তুই বিয়ে করে নিয়েছিস, আর আমাদের বলিসনি। শেষে তোর হাসবেন্ড এসে কিনা আমাদের চমকে দিলো। আর তুই ও পালিয়ে গেলি সেদিন। কিন্তু এরপর যেদিন ভর্তি ডেট ছিলো সেদিনও এলি না! আমরা বুঝিনা মনে করেছিস? ‘
তন্নির গম্ভীর কন্ঠে হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে রইলাম। প্রিয়োর মতো শান্তশিষ্ট ছেলেটাও এসে দাড়ালো আমার সামনে। কন্ঠ খিচে বললো,
‘ বিয়েতে ইনভাইট করিসনি এখন কি ট্রিটও দিতে চাচ্ছিস না? আমাদের সিয়াতো এমন হাড়কিপটে ছিলো না? কি রে সামি…
বলেই সামির দিকে তাকালো প্রিয়। দূরে দাড়ানো দেখে বিরক্ত কন্ঠে বললো,
‘ দূরে কি করিস? বল তাইনা? সিয়া এমন হারকিপটে ছিলো বলতো? ‘
কিছু বললো না সামি। বুঝলাম ওদের উদ্দেশ্য। শান্ত গলায় বললাম,
‘ যেহেতু হুট করে, আমার অপছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে হয়েছে সো আমি কোন ট্রিট ফ্রিট দিতে পারছি না। তোরা ভর্তি হয়েছিস? হলে থাক, না হলে আমার সাথে চল ভর্তি হতে। ‘
‘ এটা ঠিক হচ্ছে না কিন্তু। ‘
তন্নির কাঁদো কাঁদো গলায় বলে উঠলো। কিন্তু যে যাই বলুক এদের আমি খাওয়াতে পারবো না। আমাদের ভবনের নিচে গেলাম ভর্তি হতে। হলাম ভর্তি। ওরা পুরোটা সময় আমার পিছুনে ঘুরলো। আমি আবারো সবাইকে বললাম,
‘ তোরা বিলিভ কর! এ বিয়ে হুট করে হয়েছে। আমি রাজি ছিলাম না। আমার ওনাকে পছন্দও না। তাই এসব ট্রিট আমি দিতে একদমই পারবো না। ‘
‘ কাকে তোর অপছন্দ আরেকবার রিপিট কর সিয়া। ট্রিট আজ হবেই। হতেই হবে। ‘
সিয়াম ভাইয়ার গলা শুনতেই কলিজা কেঁপে উঠলো। পিছনে তাকাতেই দেখলাম কোটের হাত ঠিক করতে করতে এদিকেই আসছেন উনি।
#চলবে…
আজ খুব তাড়াহুড়োয় লিখেছি। ভুল বানান, এব্রোথেব্রো, ছোট, অগোছালো হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।