®রোজা রহমান
‘
সকাল আটটা বেজে মিনিটের কাঁটা গিয়ে একের ঘরে ঠেকেছে। মালিথা ভিলার সদস্য সহ মেহমানরা নাস্তা করছে। নাস্তায় আছে চালগুঁড়া আটার রুটি এবং গরুর মাংস ভুনা সাথে ভুঁড়ি ভুনা যেটা কুয়াশা, শিশিরের দুজনের অতি প্রিয়। এত মানুষের এক সাথে খাওয়া হবে না বলে আগে জাকির মালিথা, জাহিদ মালিথা সহ তুষার, তুহিন, অয়ন, সাব্বির, সাবিব খেয়ে উঠে গেছে। নীহার, শিশির একটু আগে উঠেছে। আর কুয়াশারা একসাথে খাবে বলে বসে ছিল। এখন কুয়াশাদের সাথে শিশির নীহারও বসেছে।
ভাগ্যক্রমে আজ খাবার টেবিলে কুয়াশার পাশের চেয়ারে বসতে হয়েছে শিশিরের। এরা কখনো একসাথে পাশাপাশি খেতে বসে না। এটা বাড়ির লোকই বসতে দেয় না কারণ তাদের কথা, অত্যন্ত খাবার সময় শান্তিতে খেতে দেবে আর তারাও যেন শান্তিতে খায়।
খেতে খেতে ভুঁড়ি ভুনার বাটিতে সবার নেওয়ার পর অবশিষ্ট যা ছিল কুয়াশা আজ ঢেলে নিয়েছে। এটা সেদিনের প্রতিশোধ৷ সেদিন শিশির এমনটা করেছিল তাই সে- ও করল। শিশির পাশ থেকে ভ্রু কুঁচকে তাকাল। বিড়বিড় করে বলল,
” রা-ক্ষসী একটা। এ এত গেলে তো যায় কোথায় সব!! শরীর দেখে তো মনে হবে না, গোবর ঠাঁসা এত গেলে! ”
কুয়াশা কি শুনল কথাগুলো? বোধহয় সম্পূর্ণ কথা তার কান অবধি আসে নি। শুধু কানে এসেছে রা-ক্ষস। কুয়াশা চেঁতে উঠল। বলল,
” এ্যাই, তুমি রা-ক্ষস কাকে বললে? ”
বিরক্ত হলো শিশির। শুধু শিশির না উপস্থিত সকলেই হলো
” বয়ড়া, এ্যাই তুই শুনেছিস যখন তখন সঠিক ভাবে শুনতে পারলি না? তোকে আমি রা-ক্ষস না রা-ক্ষসী বলেছি “
আজমিরা চোখ গরম করে ধমক দিলেন,
” কুয়াশা..! থা-প্পড় খেতে না চাইলে মুখ বুজে খা ”
কুয়াশা কটমটিয়ে শিশিরের দিকে তাকিয়ে খাওয়া ধরল। শিশির ওর তাকানো পাত্তা না দিয়ে খেতে লাগল। খেতে খেতে শশী বলল,
” খালামনি, রান্না এতত টেস্ট হয়েছে তা বলার মতো না। আমার তো শুধু খেয়েই যেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু আফসোস আমার পেট অত বড় না ”
শেষ কথাটা এমন ভাবে বলল সকলে শব্দ করে হেসে ফেলল। জাকিয়া বেগম বললেন,
” পেট ভরে খা আর যখনি খিদে লাগবে এসে খেয়ে নিবি৷ তোর শরীরের যে অবস্থা। আর পারলে অনুষ্ঠানের পরেও থেকে যাবি কিছুদিন৷ তাহলে মন ভরে খেতে পারবি৷ ”
” না খালামনি আব্বু রাখবে না। এবার সামনে এসএসসি আছে। আব্বু তো এত জলদি আসতেই দেবে না৷ আমিই জোর করে এসেছি৷ ”
শেষ কথাটা সামনে থাকা নীহারের দিকে তাকিয়ে বলল। বৃষ্টি বলল,
” তো কি হয়েছে? পরীক্ষার অনেক দেরি। থেকে যেয়ো। আবার কবে আসবে না আসবে। আমি খালামনি, খালুকে বলব তোমাকে রেখে যেতে ”
শশী যেন এই এরকম কিছু একটায় শুনতে চাইছিল। সে খুশি হয়ে বলল,
” আচ্ছা বলে দেখো। থাকতে দিলে আমার আপত্তি নেই”
মিহির ফোঁড়ন কেটে বলল,
” হ্যাঁ, আপনি তো শুধু পড়াশুনোয় ফাঁকি দিতে পারলেই বাঁচেন। ডাব্বা মা-রবি দেখিস। ”
” তোকে অত চিন্তা করে মাথা নষ্ট করতে কে বলছে ভাইয়া?”
জাকিয়া বললেন,
” এ্যাই খাবার সময় এত কথা না বলে চুপচাপ খা ”
কেউ আর কথা বলল না। চুপচাপ খেয়ে দেয়ে উঠে পড়ল। খেয়ে সকলে সোফায় বসল বিশ্রাম নিতে সাথে টুকটাক আড্ডা চালিয়ে গেল৷
‘
এর মাঝে বাহিরে থেকে একজন এসে জানাল ডেকোরেশনের লোক এসেছে। সেখানে তুষার আর তুহিন উঠে কথা বলতে গেল। আজ থেকে মালিথা ভিলার ডেকোরেশনের কাজ চলবে। কারণ মাঝে আর দুইদিন আছে। বুধবার থেকে বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে।
একটু পর শিশির আর নীহার উঠে গেল। তারা ডেকোরেশন কিভাবে হবে এবং কোথায় কি হবে সব ঠিক করে দিতে গেল।
_____
বেলা দশটা। বাড়িতে কারোর কাজ আপাতত নেই। আলসেমীর সময় এটা। মেয়েরা এক জোট হয়ে বৃষ্টির ঘরে তাদের মতো করে গল্প করছে একে অপরের উপর শুয়ে শুয়ে। তিন জা যার যার ঘরে বিশ্রাম করছেন। বিকেলে ঈশা আসবে জানিয়েছে। এর মাঝে কুয়াশার ফোনে স্মৃতি কল দিল। স্মৃতির সাথে কুয়াশা কথা বলে ফোন রাখল। স্মৃতি জানাল সে বৃহষ্পতিবারে সকালে চলে আসবে।
‘
আড্ডার মাঝে শশী নেমে প্রয়োজনে বাহিরে গেল। কিন্তু বের হয়ে সামনে সিঁড়ি দিয়ে নীহারকে উঠতে দেখল। ঠোঁটে দুষ্টমির হাসি খেলে গেল তার। আশেপাশে চোখ বুলাল, নাহ কেউ নেই৷ সে ঘরের সামনে থেকে কিছু কদম এগিয়ে গিয়ে ঠাস করে পড়ে গেল। পড়েই কাঁদতে লাগল পা ধরে গুনগুনিয়ে। একদম ড্রামা, সিরিয়ালে যেমনটা হয় ঠিক তেমনি ভাবে নীহার শশীকে পড়তে দেখে আর কাঁদতে দেখে ছুঁটে এলো। এসে একের পর এক প্রশ্ন করতে লাগল,
” কি হয়েছে শশী? পড়লে কিভাবে তুমি? কোথায় লেগেছে? অতিরিক্ত ব্যথা পেয়েছ? ”
এমন সব প্রশ্ন করতে করতে শশীর সামনে হাঁটু মুড়িয়ে বসে শশীর ধরে রাখা পায়ে হাত দিল। কেঁপে উঠল শশী। এই বয়সেও এত ফিলিংস!! যায়হোক শশী কাঁদতে কাঁদতে বলল,
” এই যে এই পায়ে ব্যথা পেয়েছি। ”
হাত দিয়ে ডান পায়ের পাতা দেখাল। কিন্তু কথা হচ্ছে মেয়েটা যে ড্রামা করছে সেটা বোঝা তো গেল কিন্তু চোখ দিয়ে তার আসল কান্না কি করে এলো? আশ্চর্য!! ওমা চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি পড়ছে, ভাবা যায়! একদম নিখুঁত ড্রামাবাজ মেয়ে। চোখের পানি দেখলে যে কেউ তো মোমের ন্যায় গলে যাবেই সাথে কেউ বুঝবেই না এটা এই ড্রামাবাজ মেয়ের ড্রামার কেরামতি।
নীহার আহা রে, ইশশ রে এমন সব বাণী বলে হা হুতাশা করতে ব্যস্ত হলো। সে শশীর পায়ে হাত দিয়ে সেখানে আলতো করে ডলে মালিশ করতে লাগল। জিজ্ঞেস করল,
” অনেক ব্যথা করছে? বলো নয়তো ডক্টর ডাকতে হবে। মোচকা লেগেছে। ”
” হ্যাঁ ব্যথা করছে। এখন আমি হেঁটে ঘরে যাব কি করে?”
বলে আবার কাঁদতে লাগল। আস্তে আস্তে কাঁদছে যেন ওর কান্নার আওয়াজে ঘর থেকে কেউ না আসে। কি চালাক!!
নীহার বলল,
” দাঁড়াও আমি সকলকে ডাকছি ”
” এ্যাই, এ্যাই না না কাউকে ডাকতে হবে না। আমি একাই যেতে পারব আর ঠিক হয়ে যাবে একটু পর। ডক্টরও ডাকতে হবে না। ”
” থা-প্পড় দেব মেয়ে। এটা কেমন কথা? তোমার পায়ে এতটা ব্যথা পেলে কাউকে ডাকব না? আবার বলছো ডক্টরও ডাকতে হবে না “
” হ্যাঁ ডাকতে হবে না। একটু বসে থাকলে ব্যথা কমে যাবে৷ আমার এমন হয় মাঝে মাঝেই। ডক্টর লাগে না। “
তারপর একটু থেমে নীহারের চোখের দিকে গভীর আবেগঘন দৃষ্টি দিয়ে বলল,
” আমাকে ঘরে দিয়ে আসুন না ”
নীহার ভ্রু কুঁচকে কথাটা বোঝার চেষ্টা করল। শশীর চোখের দিকে তাকিয়ে সে-ও গভীর, তীক্ষ্ণ ভাবে বোঝার চেষ্টা করছে কিছু একটা। বুঝতে কি সক্ষম হলো? বোধহয় হলো। তাই তো তার বুকের মাঝে ধুক করে উঠল। হৃৎপিণ্ড দ্রুত গতিতে চলতে লাগল। মস্তিষ্ক একটা কথা আউড়াল,
” শেষ কিনা সে একটা বাচ্চা মেয়ের পাল্লায় পড়ল? ”
নীহার নিজেকে সামলে নিল অতি কৌশলে। শশীকে বুঝতে দিল না সে ওর মতলব বুঝে ফেলেছে। তাই বলল,
” শোনো ইঁচড়েপাকা মেয়ে আমি সকলকে ডাকছি, এরপর তোমাকে ঘরে নিয়ে যাওয়া হবে তারপর ডক্টর ডাকা হবে। তুমি অনেক ব্যথা পেয়েছ কিনা! ”
কথার মধ্যে যে ব্যঙ্গ ছিল সেটা শশী ধরতে পারল না। সে তড়িঘড়ি করে বলল,
” আরেহ না না, আপনি কাউকে ডেকে বিরক্ত করেন না তো। আচ্ছা, থাক লাগবে না আপনার সাহায্য। আমি একায় যেতে পারব, সরেন ”
এই বলে কপট রাগ দেখিয়ে একলাফে উঠে দাঁড়াল। দাঁড়াল ঠিক এক লাফ দিয়ে কিন্তু বান্দা এবার হাঁটার সময় আবার নাটক শুরু করল। ন্যাকা কেঁদে বলল,
” আমার কেউ নেই এখানে তাই এমন অবহেলা পাচ্ছি। একটা বাচ্চা মেয়ে যে কষ্ট করছে সেটা কারো চোখে পড়ছে না। মেহমানের খাতির যত্ন করতে পারে না এরা৷ থাকব না এদের বাড়ি চলে যাব আমি ”
বলে আবার কাঁদতে লাগল। নীহার এর এই ড্রামায় হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝে উঠল না৷ পূর্ণ দৃষ্টি দিল মেয়েটার উপর। লম্বা, উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের, চিকনচাকন শারীরিক গড়নের, গোলগাল আকৃতির মুখ, উঁচু নাক মায়াবী চোখের এই বাচ্চা বাচ্চা সূলভ চেহারার মেয়েটা দেখতে অতি অমায়িক। সব মায়া যেন এই মেয়েটার মুখে। কান্না করছে সেটা দেখতে যেন বেশ ভালো লাগছে নীহারের৷ নাকের পাটা ফুলে ফুলে তুলছে থেকে থেকে, গাল মুচছে বার বার দৃশ্যটাও অসাধারণ। এসব ভাবতে ভাবতে নীহার নিজের মনেই বলল,
” মায়ময়ী বাচ্চা নাকি মায়াময়ী ইঁচড়েপাকা! ”
পরক্ষণেই নিজে নিজের মাথায় বারি দিতে ইচ্ছে হলো। কি ভাবছে সে? এই বাচ্চা মেয়েকে নিয়ে কি ভাবছে? আস্তাগফিরুল্লাহ, সে-ও কি তবে পিছলা খেল এই ইঁচড়েপাকা মেয়ের উপর!
এদিকে নীহার ওর দিকে তাকিয়ে আপন মনে ভাবতে ব্যস্ত আর শশী নীহারের গোষ্ঠী উদ্ধার করতে ব্যস্ত। আনমনে বলে যাচ্ছে ,
” ধুরর, এই খবিশের উপর ক্রাশ খেলাম আমি? রোমান্টিকের বালায় নেই? কই একটা মেয়ে পায়ে ব্যথা পেয়েছে তা দেখে সাথে সাথে কোলে তুলে নেবে তা না এই লোক তার গোষ্ঠী ডেকে ঢোল পিটাতে চাচ্ছে? অসহ্য আনরোমান্টিক লোক একটা ”
নীহার বোধহয় ‘আনরোমান্টিক লোক’ কথাটা শুনে নিয়েছে কারণ শশী সেটা শব্দ করে বিড়বিড়িয়ে বলেছে। ভ্রু কুঁচকে গেল নীহারের। কি বলে এ ইঁচড়েপাকা মেয়ে? সে কি এখন তার সাথে রোমান্স করার কথা ভাবছে? তা না হলে আনরোমান্টিক কেন বলল?? চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে নীহার। এ তো দেখছি ভাবনার থেকেও দ্বিগুণ ইঁচড়েপাকা!!
নীহারকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে শশী ভরকে গেল। বলল,
” সরেন, আপনাকে নিয়ে যেতে হবে না। আমি একায় যাচ্ছি। ”
এই বলে ঢং করে খুঁড়িয়ে এক পা এগুলো কিন্তু আর এগুতে পারল না। নীহার শশীর হাত টান দিয়ে ধরে এক ঝটকায় তার বুকে এনে ফেলল এরপর একপল দেরি না করে আশেপাশে একবার নজর বুলিয়ে শশীকে কোলে তুলে নিল। শশী চোখ বড় বড় আশেপাশে নজর দিল কেউ দেখছে কিনা! এরপর নীহারের দিকে নজর দিল। নীহারও শশীর দিকে তাকিয়ে বলল,
” ঢং তুমি ভালোই জানো ইঁচড়েপাকা মেয়ে। চলো তোমার এই ঢংয়ে আমিও সামিল হয়। অসুস্থ মেহমানের একটু খাতির যত্ন করি। তোমার ঢংয়ের ইচ্ছেটা না হয় পূরণ করেই দিই!! “
দুষ্ট চোখে দুষ্ট হাসি ঠোঁটে রেখে সম্পূর্ণ কথাটা বলল নীহার। শশী তো এবার আরো চোখ বড় বড় করে তাকাল। ইয়া আল্লাহ, এই লোক তার ড্রামা করা টের পেয়ে গেছে নাকি!!
‘
এই মেয়ে একটা কোরিয়ান ড্রামাতে দেখেছিল নায়িকা নায়কের উপর ক্রাশ খায় এবং নায়ককে ইমপ্রেস করার জন্য যা নয় তা করে। তো নায়িকা একসময় এমন শশীর মতো নায়ক কে দেখে পড়ে যাওয়ার অভিনয় করে নায়কের এ্যাটেনশন পাবার জন্য এবং সফলও হয়। নায়ক গিয়ে নায়িকাকে কোলে তুলে নেয়। আর সেই ড্রামাটা কাজে লাগিয়েছে এই মেয়ে। পাক্কা ড্রামাবাজ মেয়ে। পড়াশোনা না করে সারাদিন উড়নচণ্ডির মতো ভবঘুরে বেড়াবে আর এমন সব ট্রিপিকাল ড্রামা দেখে সেগুলো বাস্তবে ট্রায় করবে। এমন সব ড্রামা সে স্কুলেও করে বেড়ায় বান্ধবীদের নিয়ে। মেয়ে হয়ে ছেলেদের ইভটিজিং করে এই মেয়ে। প্রচুর সাংঘাতিক এই মেয়ে!
‘
নীহার যে শশীকে কোলে তুলে ঘরে গেল এটা একজন দেখে নিয়েছে আর সে হলো শিশির। সে বাহির থেকে এসে নিচে থেকে উপরে তাকিয়ে এই কাহিনী দেখেছে।
নীহার শশীকে নিয়ে গিয়ে বিছানায় ধারাম দিয়ে ফেলল। বলল,
” কিছু কি খাও নাকি সারাদিন এমন ড্রামা করেই বেড়াও? আমি যে আস্ত একটা মেয়ে কোলে নিয়ে এতদুর আসলাম সেটা তো ফিল-ই হলো না আমার। মনে হলো এক কেজি তুলা কোলে নিয়ে আসলাম। ইঁচড়েপাকা মেয়ে”
শশীতো একের পর এক অবাক হচ্ছে। আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাবে তখন নীহার ওর সামনে একটু এগিয়ে এসে হালকা ঝুঁকে লো ভয়েজে বলল,
” তুমি যে ড্রামা করছো আমি জানি। এসব সব কিছু তোমার এই ইঁচড়েপাকা বয়সের দোষ। এইটুকু বয়সে এতো পেকেছ কেন? ফাজিল মেয়ে ”
বলে চলে যেতে নিল। কিন্তু শশী নীহার হাত ধরে আঁটকে দিল। নীহার ভ্রু কুঁচকে তাকাল। শশী বলল,
” সব আপনার দোষ, আপনার জন্য পেকেছি। ”
তারপর একটু থেমে বলল,
” আপনাকে আমার ভালো লাগে নীহার ভাই!! ”
কথাটা এত স্বাভাবিক ভাবে বলল যেন এটা অতি সামান্য কোনো কথা। নীহারকে এটা নিয়ে কোনো বিচলিত হতে দেখা গেল না৷ সে অতি সহজ ভাবে বলল,
” শশী তুমি অনেক ছোট একটা মেয়ে। আমার এই সামান্য এ্যাটেনশনে তুমি গলে যেয়ো না৷ আমি জাস্ট মজা করে তোমার ড্রামায় সঙ্গ দিয়েছি৷ এটা কাজিন হিসেবে ফাজলামো ধরে নাও। তোমার সাথে আমার এসব হবে না। পড়াশুনোয় মন দেবে সব ভুলে। ”
শশীর নরম, কোমল, ছোট্ট মনটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। চোখে পানি এসে হানা দিল। মেয়েটার টলমল চোখের সামনে আর থাকল না নীহার। দ্রুত পায়ে চলে গেল। রেখে গেল এক সমুদ্র সমান ব্যথা, ভঙ্গুর হৃদয় সাথে সেই সমুদ্রের ন্যায় টলমল পানির একজোড়া মায়াময়ী চোখ।
______
আজ বুধবার। মালিথা ভিলা জাঁকজমকপূর্ণভাবে সাজানো হয়েছে। লাইটিং দিয়ে ডেকোরেশন করা হয়েছে পুরো বাড়ি। বাড়িতে মেহমানও একে একে আসতে শুরু করেছে। আম্বিয়া বেগমের বোন এখানে এসেছেন। আগামীকাল আম্বিয়ার বোন লগনের সাথে ভাইয়ের বাড়ি চলে যাবেন৷ আপাতত তুহিনদের এখানে থাকবেন। যেহেতু উনার ভাই ও বোনের ছেলে-মেয়ের বিয়ে হচ্ছে সেহেতু দুইদিকেই নজর দিতে হবে৷ অনি, অয়ন, অভি এখানেই থাকবে। আর ইয়াসমিনদের ওখানে ইয়াসমিনের বাড়ির এবং নানার বাড়ির আত্মীয়রা সব আয়োজন করছে।
জাকিয়ার ভাই, বোন আসার কথা থাকলেও আসে নি তারা জানিয়েছে আগামীকাল আসবেন।
কথা হয়েছে কুয়াশারা দুই পক্ষেই থাকবে। মানে বিষয়টা এমন, তারা বরযাত্রীও যাবে আবার বরের হাতও ধোয়াবে অর্থাৎ তারা কনে পক্ষও হবে আবার বর পক্ষও হবে। এটা শুধু কুয়াশারা করবে মানে মেয়েদের জন্য প্রযোজ্য আর ছেলেরা বর পক্ষে থাকবে।
‘
বিকেলের দিকে রিজভী আসল। রিজভীকে এ বাড়ির সকলে অনেক ভালোবাসে। সে ছোট থেকেই শিশিরের সাথে আছে। এসেই শিশিরদের সাথে নানান কাজ করতে লাগল।
মেয়েরা সব লগনের জন্য জিনিস তৈরী করছে। কেমন করে সাজানো হবে সব আইডিয়া বৃষ্টি দিচ্ছে। এই মেয়েটা এসব দিকে খুব পটু।
সব কিছুর মাঝে আজ সকালের পর আর ঝগড়া করার সুযোগ হয়নি শিশির কুয়াশার। কারণ তারা দু’জন দু’জনের কাজে এতটায় ব্যস্ত। সকালে এক চালান বরযাত্রীর বিষয় নিয়ে বেঁধেছিল।
‘
শশী এই দুইদিন মন বেজার করে বেড়াচ্ছে। প্রয়োজনের বেশি হাসছে না। নীহার কে দেখলে শুধু তাকিয়েই থাকছে। কথা আর বলছে না। তার মনটা বিষিয়ে দিয়েছে। ছোট্ট মন এত কিছু ভাবে নি যে নীহার তাকে গ্রহণ করবে না বা নীহারেরও পছন্দ অপছন্দ বলে একটা ব্যাপার স্যাপার আছে। সে শুধু ভেবেছিল, সে নীহারকে পছন্দ করে সেটা বলতে পারলেই হলো। নিজের বয়স নিয়ে কখনো ভাবে নি। তার স্বপ্ন বুনার দরকার সে বুনেছে এখানে এত ভাবাভাবির কি আছে? তার ছোট বিবেক এটাই বলেছে। কিন্তু সেদিন নীহারের কথাটা শুনে বড় ধাক্কা খেয়েছে। সে কখনো ভাবেই নি বয়স ছোট থাকার জন্য নীহার তাকে গ্রহণ করবে না।
‘
মেয়েরা বসার ঘরে বসে সব তৈরি করছিল। এমন সময় ঘেমে ন্যায়ে শিশিররা এলো। তারা বাহিরে রিসিপশনের জন্য প্যান্ডেল করছে সেখানে ছিল। আজকে সব কাজ সম্পন্ন হলো। শিশির এসে শশীকে বলল,
” ঠান্ডা কিছু আনতে ”
শশী উঠে চলে গেল। নীহার খেয়াল করল চঞ্চল মেয়েটা নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। খারাপ লাগল নীহারের৷
অনি হা করে শিশিরকে দেখছে। ঘামের শরীর ও মুখ এতটাও সুন্দর লাগে তার জানা ছিল না৷ ওর ঐ হা করে তাকানো কুয়াশা দেখল। অনির নজর মুখো তাকিয়ে দেখল সে শিশিরকে দেখছে৷ ভ্রু কুঁচকে গেল। আপন মনে ভাবল,
” এই হা করাটা আবার ঐ বুনো ওলের কি দেখছে? দেখার মতো কি এমন আছে ওর? ”
|| চলবে ||
বুনো ওল বাঘা তেতুল গল্পের লিংক ( all part )