ছেড়ে দাও ও’কে,মেরো না,ছেড়ে দাও,কি করছো তোমরা,মেয়েটাকে আ’গুনে পুড়িও না,ম’রে যাবে মেয়েটা ছাড়ো!
প্লিজ ছেড়ে দাও ও’কে।ভাইয়া কোথায় তুমি?,মেয়েটা’কে বাঁচিয়ে নাও,ম’রে যাচ্ছে মেয়েটা!প্লিজ ও’কে ছাড়ো তোমরা!
‘মাঝরাতে প্রাণপ্রিয় ছোট বোনের কক্ষ থেকে চিৎকারের আওয়াজে নিজের রুম থেকে ছুটে আসলো ফায়ান।যদিও আজকে প্রথম নয় তবুও তাকে বেশ বিচলিত লাগছে,হন্তদন্ত পায়ে ছুটে বোনের কাছে চলে গেলো সে।
‘বোনের ঘর্মাক্ত মাথাটা নিজের প্রশস্ত বুকটার সাথে জড়িয়ে নিলো ফায়ান।ধীরে ধীরে বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,উদ্দেশ্য যদি বোনটা একটু শান্ত হয়,হলোও তাই,ফারহা কিছু সময়ের মাঝেই নিজেকে ধাতস্থ করে নিলো,তবে এখনো জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে মেয়েটা।
-বোন,এবার ঘুমিয়ে পড়,সকালে তোকে ভার্সিটি’তে নিয়ে যাবো ভর্তির জন্য ভুলে গিয়েছিস?দ্রুত না ঘুমালে সকালে উঠতে পারবি না,আমি তোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি,তুই ঘুমা!
‘ফারহা বড় ভাইয়ের দিকে ফ্যাল’ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে,ফায়ান আরেকবার বলতেই সে বাধ্য মেয়ের মতো শুয়ে পড়লো।
ফায়ান হেসে বললো,,
-এইতো আমার লক্ষী বাচ্চা,’বলেই বোনের মাথায় একটা চু’মু এঁকে দিলো,ফারহা চোখ বন্ধ করতেই এক ফোঁটা পানি চোখের কার্নিশ বেয়ে ঝড়ে পড়লো,ফায়ান তা দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।এছাড়া তার কিছু করার নেই।
‘বোন ঘুমাতেই কম্বলটা গলা অবদি জড়িয়ে দিয়ে লম্বা লম্বা কদম ফেলে বাহিরে এসে দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে সামনে তাকালো ফায়ান।
সামনে তার পরিবারবর্গ উপস্থিত, এটা নিত্যদিনের রুটিন বলা চলে,
তার মা সোনালী মুখে আঁচল চেপে কাঁদছে,আর তার বড় আম্মু অর্থাৎ বড় চাচার স্ত্রী মা’কে থামানোর ব্যার্থ প্রয়াস চালাচ্ছে।
ফায়ান দ্রুত পদে নিজের কক্ষে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো।
‘একটা মাত্র বোন তার,ভিষণ আদুরে,ছোট ভাই তো কবেই দেশ ছেড়েছে,তারপরও সোনালী তার দুই ছেলে মেয়েকে আঁকড়ে ধরেই বেঁচে আছে বলা চলে,এখন তো তার মেয়েটাও অসুস্থ!
কফি মেকার থেকে এক কাপ কফি ঢেলে বেলকনিতে চলে গেলো ফায়ান,এক হাতে কফির মগ ধরে আছে অপর হাতটা কালো রঙের ট্রাউজারে স্হান পাচ্ছে।
‘সকল ভাই-বোনদের মাঝে সে ফারহা’কে প্রচন্ড ভালোবাসে,ফারহার জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত সে,বাহিরে শক্ত কর্মোঠ এবং রগচটা একজন মানুষ হলেও পরিবারের কাছে সে শিশু সূলভ আচরণ করে।যেনো পাখি তার নীড়ে ফিরেছে।বিশেষ করে বোনের কাছে,বোনের সব আবদার পুরণ করতে তৎপর ফায়ান!তার সেই আদুরে বোন আজ প্রাণঘাতী অসুখে জর্জরিত,একটা এক্সিডেন্টে সে ট্রমায় চলে গেছে,দেশ বিদেশে বহু সাইকোলজিস্ট ডাক্তারদের খাটিয়েছে সে,কিন্তু সকলের এক কথা,এই ট্রমা’টা ভিষণ গভীরভাবে তার মনে দাগ কেঁটে গেছে,একদিন,এক মাস একবছর,মানে কোনো নিশ্চয়তা নেই যে কবে ফারহা ভালো হবে।
কবে থেকে বোনের মুখের হাসি দেখে না ফায়ান,তার বোন আগের মতো খিলখিল করে পুরো খান’ভিলা মাথায় তোলে না,
‘ভাবতেই বুকের ভিতর চিনচিন ব্যাথা অনুভূত হলো,সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাম পকেটের ফোনটাও বেজে যাচ্ছে,বাজতে বাজতে কলটা কে’টে যেতেই কল ব্যাক করলো ফায়ান,,
‘ওপাশের লোকটা হাঁপাতে হাঁপাতে বলতে লাগলো,,
-ভ….ভাই রায়হান শেখের লোকেরা আমাদের ছেলে-পেলে’দের উপর হামলা করেছে।
‘ফায়ান শান্ত কন্ঠে বললো,,
-ধরতে পেরেছো?
‘ওপাশের লোকটা এবার যেনো গর্বের হাসি হাসলো,,
-জ্বি ভাই,ধরে বেঁধে রেখেছি,খুব হয়রানি করিয়েছে।এবার আপনি যদি বলতেন এদের তোষামোদ কীভাবে করবো?
‘এবারেও শান্ত কন্ঠে উত্তর দিলো ফায়ান,,
-মাংস রান্না করার সময় পেঁয়াজ কীভাবে কা’টে জানো তো নাদিম?
‘নাদিম উৎসাহের সহিত বললো,,
-জ্বি ভাই, আপনি তো জানেনই আমি নিজের রান্না নিজে করি।
-ঠিক সেভাবেই তাদের কুচি’কুচি করে কে’টে শেখ ভিলায় পাঠানোর ব্যাবস্থা করো,’শান্ত কন্ঠে কথাটা বলেই খট করে কল কে’টে দিলো ফায়ান,,রাজনীতি’তে এসব ‘বা’ হাতের কাজ।
ঝটপট ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলো সে,সকালে যে বোনের ভার্সিটি যেতে হবে,এক’ঝলক সময়টাও দেখে নিলো,আড়াই’টা বাজে।
তপ্ত শ্বাস ফেলে চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো ফায়ান,।
***
এদিকে নাদিম শান্ত হতে পারছেনা,এখনো তার হাত থেমে থেমে কেঁপে উঠছে,এইমাত্র ভাই কি বললেন?সে নিরুপায়, তার কাজ গুলোই যে এমন,তাড়াতাড়ি কাজ সারতে হবে,কাজের বেলায় ভাই হের’ফের পছন্দ করেন না,,
‘ফোসস করে শ্বাস ছাড়লো নাদিম,আজকে বাড়ি গিয়ে রান্নার মন-মানসিকতা নেই অগত্যা আজও না খেয়েই থাকতে হবে
***
‘সকাল সকাল ফারহাকে ফ্রেশ হতে পাঠিয়ে দিলো ফায়ান,বার-বার করে বলে দিয়েছে যেনো একেবারে রেডি হয়ে নিচে নামে সে,ফারহাও বড় ভাইয়ের বাধ্যগত বোন,ঘাড় নাড়িয়ে সায় জানালো সে,
ফায়ান সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো,তার বোন কবে হাসবে আবার?
‘এরপর নিজেও ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো,,
‘পুরো নাম “সৌহার্দ্য ফায়ান খান,পেশায় একজন রাজনীতিবিদ, বর্তমানে এমপি পদে আছেন তিনি,২৯ বছর বয়সী এই তরুন যুবক যেভাবে সত্য-নিষ্ঠা ভাবে কর্ম করার মাধ্যমে উপরমহলের মন জয় করে নিয়েছে, ঠিক সেরকমভাবে’ই তার রূপ ও গুণের দ্বারা বহু রমনীর ডার্ক সার্কেলের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে,সে তার দুই ভাই-বোন’কে নিয়ে ভালোই ছিলো,মাঝখানে তার ভাই সাহিত্য দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমায়, এর অবশ্য কারণ আছে,পড়াশোনা শেষে সেখানেই নিজের বাবার ব্যাবসায় হাত দিবে বলেছে সাহিত্য,বাকি রইলো তার ছোট বোন ফারহা,সে তাকে চোখে হারায়!
ফারহা নিজেও বড় ভাই বলতে অজ্ঞান।
***
‘ভার্সিটি গেটের সামনে পরপর তিন’টে কালো রঙের গাড়ি এসে থামলো,যার ফলে চারপাশে কিছু সময়ের জন্য ধূলোয় গ্রাস করে নিলো,গাড়ি গুলো একদম চকচকে,যেনো মাত্রই কিনে আনা হয়েছে।
‘সামনের এবং পিছনের গাড়ি থেকে কয়েকজন বন্দুকধারী লোক নেমে এসে মাঝখানের গাড়িটার দরজা খুলে দিলো,
সেখান থেকে ফায়ান ফুল এটিটিউ’ডের সাথে নেমে এলো,পরনের সাদা পাঞ্জাবিটা যেনো ফর্সা শরীরে একদম লেগে আছে,বেশ মানিয়েছে তাকে, ফায়ান নামার পরপরই বোনকেও নামিয়ে নিলো।
আশেপাশে’র ছেলে-মেয়েরা হুমড়ি খেয়ে পরবে যেনো,তবে গার্ডদের জন্য কাছেপিঠেও আসতে পারছে না,চারপাশে চাপা গুঞ্জনে ভরে গেছে।হবে না’ই বা কে? স্বয়ং এমপি সাহেব যে ভার্সিটি প্রাঙ্গণে, এর কারণ কি হতে পারে?ফায়ান সবকিছুকে তুচ্ছ করে ফারহার হাত ধরে সামনে এগোতে লাগলো,তবুও কয়েকটা মন্তব্য তার কানে এসে বারি খেলো,সাথে সাথে তার গা’ল দুটো গরম হয়ে হয়ে গেলো,স্বভাব যতোই রগচটা হোক,এসবে সে ভিষণ লাজুক।সাথে পাল্লা দিয়ে রাগে কপালের রগ’টাও ফুলে উঠছে।
“কি হ***** সৌহার্দ্য ফায়ান খান “
“একদম চকলেট বয়”
“ইচ্ছে করছে খেয়ে ফেলতে”
“সাদা পাঞ্জাবিতে বেশ মানিয়েছে”
“গলার নিচে তিলটা দেখেছিস,কামড়ে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে”
‘ফায়ান নিশ্বাস আঁটকে এক প্রকার পালিয়ে এলো সেখান থেকে,যত্তসব লা’ফাঙ্গা মহিলা।
‘নাদিম পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাদের,অবশেষে ফারহাকে ক্লাস রুমে যেতে বলে সে প্রিন্সিপালের সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলো,পরে বোনের সাথে এসে দেখা করবে সে।আপাতত ফারহা যেনো ক্লাসে গিয়ে বসে থাকে।
‘ক্লাস রুমে গিয়ে একটা সিটে চুপচাপ বসে আছে ফারহা।যে যার মতো আড্ডা দিতে ব্যাস্ত।কেউ বা ফোন গুতা’চ্ছে।তখনই কেউ তার পাশ থেকে বললো,,
-হাই,আমি আরিমা তোমার নাম কি?
‘ফারহা সেদিকে তাকিয়েই টাস্কি খেলো।
চলবে,,,,,,,,,
আমার নেতা সাহেব সূচনা পর্ব
(আসসালামু আলাইকু, নতুন গল্প নিয়ে হাজির হলাম।আশা করি সাপোর্ট পাবো।ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,আর অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন)