#লেখনিতে_আরিশা_জান্নাত_আদ্রা
যেখানে সব মেয়েরা প্রায় খোলামেলা পোষাকে এসেছে,শার্ট-প্যান্ট,টপস আরো অনেকে অনেক ভাবে এসেছে।সেখানে এই মেয়ে স্কার্ফ পরে মাস্কের মাধ্যমে তার শ্যামলা মুখশ্রীটা ঢেকে রেখেছে।শুধু চোখ আর কপালের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে।
তবুও বোঝা যাচ্ছে,মেয়েটার চোখ দুটোতে দারুণ মায়া,কোনো পুরুষকে ঘায়েল করার জন্য তার মায়াবী চোখ দুটোই যথেষ্ট।
‘পরক্ষণেই ভাবলো ভাইয়াকে বলবে সে’ও এই মেয়ের মতো করে আসবে,কিন্তু যদি গরম লাগে?
-কি হলো, কথা বলো।
‘ফারহা কিছুক্ষণ চুপ থেকে উত্তর কা’টলো,
-কি বলবো?
-তোমার নাম বলো,
-ফারহা।
-আমার নামের মতোই সুন্দর তোমার নাম।তুমি কেনো বলছি তুই করে বলবো ঠিকাছে?
‘ফারহা ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে আবার চুপ হয়ে যায়।
‘আরিমা বুঝেছে মেয়েটা স্বল্পভাষী, কিন্তু তার যে মেয়েটাকে ভালো লেগেছে,এভাবে কম কথা বলা মোটেও আরিমার পছন্দ না।তার বন্ধু’কে মন খারাপ করে বসে থাকতে দিলেও চলে না।
‘ব্যাগ থেকে তার হেয়ার ব্যান্ড বের করলো আরিমা,ব্যান্ড টা দেখলে যে কারে হাসি আসবে,ব্যান্ডের মাথায় দুটো শিং এর মতো,আরিমা এটা নিজ হাতে বানিয়েছে,বানানোর কারণও আছে বৈ’কি।
ব্যান্ডটা হাতে নিয়ে এদিক সেদিক তাকালো আরিমা।অতঃপর সামনে দৃষ্টি দিলো,সেখানে একটা সাদা রঙের পোলো শার্ট পরিধান কৃত ছেলে ফোন স্ক্রোল করছে,মনে হচ্ছে ফোনের ভিতরে ঢুকে যাবে,বিরক্তিতে শ্বাস ফেলল আরিমা।
‘পরক্ষণেই কুটিল হেসে ব্যান্ড নিয়ে ছেলেটার মাথায় পরিয়ে দিলো,বাহ চমৎকার দারুন লাগছে,মনে হচ্ছে ছেলেটাকে বলি,আয় বাবা কাছে আয় তোর মাথায় একটা চুম্মা খাই। এত মানিয়েছে না…….।
‘আরিমার খোঁচায় তার দিকে তাকালো ফারহা,আরিমা মুখ চেপে তাকে কিছু ইঙ্গিত করছে,প্রথমে বুঝতে না পারলেও চট করে সামনে তাকায় সে।
‘এক সেকেন্ড……দুই সেকেন্ড…….তিন সেকেন্ডের মাথায় ফারহা হো হো করে হাসতে লাগলো,তার সাথে পাল্লা দিয়ে আরিমাও হাসছে,হাসতে হাসতে একজন অপরজনের গায়ে ঢলে পরছে।বাকি ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের দিকে ভূত দেখার মতো তাকিয়ে আছে,হয়তো ভাবছে “এই দুই মেয়ের হলো কি”
‘আরিমার হাতের ইশারায় সবাই সামনের দিকে তাকাতেই পুরো ক্লাসে’ই এবার হাসির রোল পরে গেলো,কিন্তু যা’কে নিয়ে এতকিছু,সেই সাদা শার্ট পরিধান কৃত ছেলেটার কোনো হুঁশ নেই, সে একমনে একবার সামনে তাকাচ্ছে তো একবার পিছনে,ডানে,বামে,।
‘পাশের ছেলেটা ইশারা করলো যেনো সে তার মাথায় দেখে হেয়ার ব্যান্ড জাতীয় কিছু,হাতে নিয়ে দেখতেই রাগে লাল-নীল হতে লাগলো ছেলেটা,তাকে নিয়েই সবাই হাসাহাসি করছে,দারুণ অপমানবোধ করলো সে।পিছনে তাকিয়ে একবার দেখে ভাবলো এই মেয়েরাই এরকম করেছে,।
‘ছেলেটা যেনো খেঁকিয়ে উঠলো,,,
-এই মেয়ে তোমার সাহস তো কম না,আমাকে জোকার বানিয়েছো সবার সামনে।আবার দাঁত বের করে শাঁকচুন্নিদের মতো হিহি করে হাসছো,লজ্জা করে না?
‘আরিমা কিছুটা এগিয়ে গেলো ছেলেটার দিকে,এতে ছেলেটা বিব্রত ভঙ্গিতে মাথা কিছুটা পিছিয়ে নেয়।
‘চোখ দুটো পিটপিট করে আরিমা ঢঙ্গী স্টাইলে বললো,,
-কেনো কেনো?তোমাকে জোকার বানিয়েছি কীভাবে? তোমার মাধ্যমে আমি একটু সবাইকে হাসালাম।মানুষকে হাসাতে আমার বেশ লাগে।
দাও আমার ব্যান্ড দাও’বলেই ছোঁ মেরে ছেলেটার হাত থেকে ব্যান্ডটা নিয়ে নিলো আরিমা,,পরক্ষণেই আবারো খিলখিল করে হাসতে লাগলো,ফারহার সাথে ধুপধাপ বারি খাচ্ছে,ফারহা পারছে না যেনো বেঞ্চ থেকেই পরে যায়।
-আচ্ছা ছেলে শোনো,তোমাকেও ভালো লেগেছে আমার,নাম কি তোমার?
‘ছেলেটা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিলো,অতঃপর রোবোটিক ভাবে বললো,,
-আফরিদ হাওলাদার….
‘আরিমা এক হাত দিয়ে ফারহার এক হাত প্যাঁচিয়ে বললো,,,
-আমার নাম আরিমা,আর এ হলো ফারহা।
আমরা আজকে থেকে ফ্রেন্ড ঠিকাছে?
‘ছেলেটা এখনো ধ্যান ধরেই আছে,হঠাৎ মাথায় কারো চাটি পরাতে সেদিকে তাকালো আফরিদ।
-শা’লা আমাদের জন্য না দাঁড়িয়েই চলে এসেছিস?তো আগে আগে এসে কোন মাইয়াটা পটাইতে পেরেছিস দেখি তো?
‘পাশ থেকে আরেকজন বললো,,
-লাগা লাগা,শা’লারে লাগা।
‘আফরিদ বোকা বোকা হাসি দিয়ে বললো,,
-দোস্ত তোরা রাগছিস কেন?দেখ এদের সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়ে গেছে,ও’র নাম ফারহা,আর এ আরিমা।
‘একটা মেয়ে বললো,,
-আমরাও আজকে থেকে তোমাদের ফ্রেন্ড,
আমার নাম সিমরান,আর এ হলো বেলা,আর এই দুটো ছেলে দেখছো না?এদের নাম মনির আর শুভ।
‘আরিমা একঝলক সবার দিকে তাকিয়ে গুণে নিলো,,তারপর সমস্বরে আওড়ালো,
-পুরাই ভেড়ার দল।
___________
‘এরা সাত ভেড়ার ছানা মাঠে চলে এলো,প্রথম দিন তাই ক্লাস হয়নি,এমনিই কেটে গেলো,এখন যে যার বাড়ির পথে যাবে,যদিও এতক্ষণে জেনে গেছে ওরা সবার বাড়ি একদিকেই।একসাথে গল্প করতে করতে যাবে তারা।তখনই গুটি কয়েক ছেলে-মেয়ে সামনে এসে দাঁড়ালো তাদের,তারা বুঝতে পারলো এবার নিজেরাও তথাকথিত জার্গের শিকার হবে।
‘ফারহা গিয়ে আরিমার পিছনে লুকালো,এদের মোটেও ভয় লাগছে না,কিন্তু তার বড় ভাই যদি জানতে পারে কেউ তার সাথে ঝামেলা করেছে,তাহলে এদের কে’টে কুঁচিকুঁচি করবে,মাটিতে পুতে রাখারো সময় দিবে না,নদীতে ভাসিয়ে দিবে।সে চিনে তার বড় ভাইকে।
-এই বাচ্চারা তোমরা কি বাড়িতে চলে যাচ্ছো?
‘ছেলেটার এহেন কথায় আরিমা দাঁত ক্যালিয়ে বললো,,
-নাহ ভাইয়া,আমরা এতিমখানায় যাচ্ছি,আসলে বাড়ি-ঘর নেই তো।
-কিন্তু ড্রেস’আপ দেখে তো মনে হচ্ছে না তোমরা এতিমখানার বাসিন্দা,ইয়ার্কি করো?
-ইয়ার্কি করবো কেন?আপনি কি আমাদের নাতী লাগেন নাকি বেয়াই?
‘বাকিরা হেসে কুটিকুটি, এবার ছেলেটাও কিছুটা বিব্রতবোধ করলো।
‘পাশ থেকে আরেকটা ছেলে বললো,
-এই মেয়ে দেখো।
-কি দেখাবেন,দেখান।
‘বেলার এহেন কথায় সবাই আরেক দফায় হাসলো।
‘ফারহা খোঁচা দিয়ে আরিমা’কে কিছু বললো,আরিমা এদিক সেদিক তাকিয়ে একটা মেয়েকে দেখে নিলো,যেভাবে মেক-আপ করেছে,ইচ্ছে করছে পেট ফেটে হাসি,ফারহা নিজেও মিটিমিটি হাসছে।
-আল্লাহ আপি,তোমার দিকে তো খেয়ালই করি নাই, এত্তো কিউট কেন তুমি আপু?তোমার স্কিন এতো গ্লো কেন?কি ক্রিম ইউজ করো,নামটা বলবা প্লিজ?আমিও তোমার মতো হতে চাই,,’চোখ দুটো পিটপিট করে বললো আরিমা।
‘এতেই যেনো কাজ হলো,মেয়েটা খুশীতে গদগদ হয়ে গেলো,যা দেখে সাত ভেড়ার ছানা’রা মনে মনে প্রচুর হাসছে কিন্তু প্রকাশ করতে পারছে না,এ’কে টোপ হিসেবে ব্যাবহার করে এখান থেকে বের হতে হবে।
-আসলে অনেক গুলা ক্রিম ইউজ করি তো,কালকে সময় নিয়ে সবগুলোর লিস্ট তোমাকে এনে দিবো।
‘সাত ভেড়ার ছানা একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে,ক্রিমের লিস্ট?
‘মনির গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,
-আমি আপনাকে আপু ডাকতে পারবো না আপ,
‘শুভ খোঁচা দিয়ে বললো,,
-শা’লা আপু তো ডেকেই ফেলছোস,
-ওহ হ্যাঁ মিস্টেক,
-কেনো আপু ডাকবা না আমাকে?
-আমি আপনাকে দেখে ক্রাশ খাইছি,এত কিউট মেয়ে ভার্সিটি’তে আছে?আপনার অবস্থান তো পরী লোকে হওয়া উচিত, আপনি পরীদের রাণী আর আমি রাজা।
‘মনির একটু থেমে আবার বললো,,
-আমার না সিনিয়র মেয়েদের সাথে প্রেম করার বড্ড ইচ্ছা,আপনি যদি একটা সুযোগ দিতেন?
‘মেয়েটা লাজুক হেসে বললো,,
-ভেবে জানাবো।
-আপু আজকে কি আমরা আসতে পারি?আসলে বাড়িতে ছানা-পানা আছে তো?
‘আরিমার কথায় সবাই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো,,
-আচ্ছা তার আগে তোমাদের নাম তো বলে যাও।
-আমার নাম বিলকিস,আর এর নাম রাহিমা,বেলা আর সিমরানকে উদ্দেশ্য করে বললো এদের নাম জুলেখা ও রত্না বানু।
এই তিন ছেলেদের নাম……..
-থাক থাক আর বলতে হবে না তোমরা আসতে পারো।
‘এদিকে মেয়েটার বন্ধুরাও কিছু বলতে পারলো না,কারণ ভিপি’র মেয়ে বলে কথা।
____________
‘এদিকে গে’টের বাহিরে এসে এতক্ষণের চাপানো হাসি একে একে উগড়ে দিলো সবাই,হাসতে হাসতে একজন আরেকজনের উপরে পড়ছে।
-শেষমেশ কি’না একটা কিরিম আফার প্রেমে থপাস করে পরলি মনির?কোথায় গেলো তোর অঞ্জনা?
-আরে পাগল একটু ঢোঁ মেরে আসলাম,আমগো বাসার কুত্তাও হের দিকে তাকাইবো না,পোষাকের শ্রী দেখছোস,,’বলেই নাক কুঁচকালো মনির,সবাই আরেক দফা হাসলো।
-কিন্তু ওই মেয়ে যদি তোকে একসেপ্ট করে নেই?
‘সিমরান পাশ থেকে বললো,,
-ওর একটা প্রেমিকা আমার জন্য টিকেছে?এবারেরটাও টিকবে না।
‘এদিকে ফারহা চিন্তিত তার ভাইয়ের কথা ছিলো দেখা করবে এখনো আসলো না,চলে গেছে হয়তো,তার ভিষণ অভিমান হয়েছে বড় ভাইয়ের প্রতি,ঠিক তখনই একটা কালো রঙের গাড়ি তাদের সামনে এসে দাঁড়ালো,ভেড়ার ছানারা উৎসুক হয়ে সেদিকেই তাকিয়ে আছে,
‘ড্রাইভার ফারহার কাছে এসে বললো,,
-আপা,বড় স্যার ভিছি আছে,আফনেরে আমার লগে যাইতে কইছে।
‘সবাই সমস্বরে বলে উঠলো,,
-ভিছি?
‘ফারহা বললো,,
-ও’টা বিজি হবে।
-ওই হলো,আহেন আফা।
‘আফরিদ বিড়বিড় করে বলছে”ইংরেজির দফারফা করে দিবে এই ভদ্রলোক।
-সবাই আমার সাথেই চল,তোদের নামিয়ে দিবো,
‘সকলেই সায় জানিয়ে উঠে গেলো গাড়ি’তে।
-আচ্ছা ফারু,এত দামী গাড়ী কই পাইলি?বড় স্যার টা কে?
-এভাবে চোখ নাচাচ্ছিস কেন?এটা আমার ভাইয়ার গাড়ি।
-তোর ভাইয়ার নাম কি?কি করেন তিনি?
-সৌহার্দ্য ফায়ান খান…….বাকিটা বলার আগেই আফরিদ চিৎকার দিয়ে উঠলো,,
-শা’লি পানি রা’ক্ষসের মতো খাস?দেখ’শুনে গিলতে পারিস না,’বলেই রুমাল দিয়ে মুখ মুছতে লাগলো।সবাই একবার আফরিদ’কে দেখছে আরেকবার বোতল হাতে বসা আরিমা’কে দেখছে,তাদের আর বুঝতে বাকি নেই এই পানি কোথা থেকে এসেছে।
সবাই হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে।
‘এদিকে আরিমার হুঁশ নেই,সে নিজ মনে আওড়াচ্ছে,,
-নেতা সাহেব আমি এসে গেছি,আপনাকে যেহেতু একবার পেয়ে গেছি,আর ছাড়াছাড়ি নেই,আমি আসছি শীঘ্রই,দেখা না হলে,কথা না হলে,আপনি “আমার নেতা সাহেব” হবেন কীভাবে? বলেই বাঁকা হাসলো আরিমা।
_________
‘বাসায় এসে মাত্র ওয়াশরুমে ঢুকেছে সে,তখনই পরপর ফোনে রিং হতে লাগলো,,চোখে মুখে কয়েক ঝাঁপটা পানি মেরে ফোনটা এসে হাতে নিলো,,
‘ফারু’ নামে সে’ভ করা নাম্বার থেকে ১০+ মিসড কল,ভ্রু কিঞ্চিৎ উপরে তুললো আরিমা,মেয়েটার কোনো বিপদ হলো না’তো?
-হ্যালো……
-আরু,তোর বাসার পাশে বড় মাঠ’টা আছে না?আমি আসছি একটু রেডি থাক,ওখানেই যাবো।
-কিন্তু কেন?তোকে এত বিচলিত লাগছে কেনো?
-আরু,সেখানে মা-রা’মা-রি হচ্ছে,ভাইয়া সেখানে,তুই রেডি থাকিস,’বলেই খট করে কল কে’টে দিলো ফারহা।
‘এদিকে আরিমা হা কলে কলের দিকে তাকিয়ে আছে,পরক্ষণেই হুঁশ ফিরলো তার,হন্তদন্ত হয়ে যা ছিলো তা পরেই আবার ছুটলো বাহিরে।
‘না..না,তার নেতা সাহেব কোনো পাতি নেতা হতে পারে না,যে পাবলিকের হাতে উত্তম-মাধ্যম খাবে।যদি মা’ইর খায়?
না না কখনোই না,এরকম হলে কম দামী সেন্ডেল দিয়ে নিজের মাথা নিজে ফাটাবে।
সুযোগ বুঝে বাকি পাঁচ ভেড়ার ছানার ফোনে একটা ম্যাসেজ সেন্ড করে দিলো আরিমা।
আত্মা তার দুরু দুরু করছে,শেষে কি’না এমন নেতা’র উপরে ক্রাশ খাইছি যে পাবলিকের হাতে ধোলাই খায়?ছিঃ ছিঃ আরু,পরক্ষণে নিজের মাথায় গাঁট্টা মারলো,কি আজব ভাবনা তার,,,
চলবে,,,,,
(ভুলে ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,,আর গঠনমূলক মন্তব্য করবেন প্লিজ)