#লেখনিতে_আরিশা_জান্নাত_আদ্রা
‘দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কালিমা পড়ছে আরিমা,মনে হচ্ছে বাঘের গুহায় ঢুকবে।পিছন থেকে ছয় ভেড়ার ছানা’রা তাড়া দিচ্ছে।
একবার তাদের দিকে তাকিয়ে দাঁত কিড়ি’মিড়ি করছে তো আরেকবার দরজার দিকে অসহায় নেত্রে তাকাচ্ছে।
সে যতটুকু জানে নেতা সাহেব প্রচুর রগচটা ধরনের মানুষ।
‘দরজা হালকা করে খুলবে তার আগেই পিছন থেকে একটা ধা’ক্কা মেরে ভিতরে ঢুকিয়ে দিলো ফারহা,তখনই আরিমা সমস্বরে বলে উঠলো,,
”ম্যা চালতি হু,দোয়া’ও ম্যা ইয়াদ রাখ’না”
‘হঠাৎ রুমে কারো উপস্থিতি পেয়ে বারান্দা থেকে বের হয়ে এলো ফায়ান।
আরিমা ঢোক গিলছে,পছন্দের মানুষ’টা তার থেকে কয়েক হাত দূরে মাত্র,হার্ট মনে হচ্ছে উচ্চস্বরে বিট হচ্ছে।
-এই মেয়ে,তুমি কে?এখানে কি করছো,, ফায়ানের কন্ঠ গম্ভীর।
-না মানে,আমরা না ঘুরতে যেতে চাচ্ছি,
-তো যাও,এখানে আমাকে বলার কি আছে,,’বিরক্তি’তে ফায়ানের মুখ কুঁচকে আছে।
-না মানে আপনার অনুমতি লাগতো।
-কেনো?আমার অনুমতিই কেন?
-ফারহা’ও যাবে আমাদের সাথে,,’মিনমিন করে বললো আরিমা।
‘ফায়ান শান্ত পায়ে আরিমা’র দিকে এগোচ্ছে,বিস্ময়ে আরিমা’র চোখ ইয়া বড় বড় হয় গেলো,সে পিছনে সরতে সরতে নিজ মনে আওড়ালো ,
-এই নেতা’র চরিত্রের দোষ আছে না’কি,ধুর ধুর এসব কি বলছি,,’আবার নিজের মাথায় নিজেই টুকা দিচ্ছে সে।
‘পিছাতে পিছাতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলো আরিমা’র।এবার সে অসহায় নেত্রে ফায়ানের দিকে তাকালো।
যদিও আরিমার মুখ মাস্ক দিয়ে ঢাকা।তবু তার চোখ দেখে মনের খবর বুঝতে পারছে ফায়ান।তাকে চমকে দিতে আরেকটা কান্ড করে বসলো ফায়ান।
‘হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে আরিমার গাল ছুঁয়ে দিলো।আরিমা কেঁপে উঠলো যেনো।বুকে’র ভিতরে কেউ দ্রুত বে’গে ড্রাম বাজাচ্ছে যেনো।ফায়ানের কান্ডে সে বিস্মিত।
ফায়ান কয়েক পা পিছিয়ে এলো,কালো ট্রাউজারের পকেটে দুই হাত পুরে বললো,
-ঠিকাছে,কিন্তু সাথে আমি কোনো গার্ড দিবো না,আমার বোনকে প্রটেক্ট করার দায়িত্ব তোমার।যদি তার শরীরে একটা কাঁটার আঘাতও পরে….
”আরিমা ঢোক গিলে মাথা নাড়ালো,সে খেয়াল করে দেখলো ফায়ানের মাথায় এবার ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ লাগানো।তবুও অনেক সুন্দর লাগছে।যেনো ব্যান্ডেজটা তার সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
‘ফায়ান ঠোঁট কামড়ে কিছু ভাবলো তারপর মাথা নাড়াতে নাড়াতে বললো,,
-শোনো মেয়ে।তোমার হার্ট টা বড্ড বেসামাল, যেখানে সেখানে জোরে জোরে বিট হতে শুরু করে।সেটাকে সামলানোর দায়িত্ব তোমার বুঝেছো?,নাউ গেট আউট।
‘লাস্টের কথা’গুলো এত জোরে বললো,আরিমা কেঁপে উঠলো।পরক্ষণেই এক দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে আরিমা।আর মনে মনে ফায়ান’কে বকছে।শা’লা লুইচ্চা বেডা।ভেবেছিলাম কত্ত ভালো নেতা।সুযোগের সৎ ব্যাবহার। খাম্বা কোথাকার।
কিন্তু এই বেডা গার্ড’দের বারণ করে দিলো কেনো?আশ্চর্য। সন্দেহ করছে নাকি?ভাবার বিষয়।
‘এদিকে ফায়ান ভাবছে,,
“Welcome back arima ehsan pushpo”
‘মুখে তার বাঁকা হাসি।
***
-রাজী হইসে?
-বউয়ের কথা কোন বেডা ফালাই,,”আরিমা ফুল এটিটিউট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ছয় ভেড়ার ছানা একসাথে বলে উঠলো,,”তার মানে রাজী হয়েছে”‘বলেই আরিমার উপর একসাথে সবাই ঝাপিয়ে পরলো।
সাথে সাথে সে বিছানায় পড়ে গেলো।
-আল্লাহ এই ভেড়ার ছানাদের হাত থেকে রক্ষা করো।
***
‘অনেকক্ষণ ঘুরাঘুরি করে সবাই দম নিলো।প্রচুর পিপাসা পেয়েছে।তাই একটা দোকানে গিয়ে জোস কিনে,ঠান্ডা স্থানে বসে খাচ্ছে।এর মাঝে আফরিদ বললো,,
-দোস্ত,রাজী করালি কীভাবে?
-এটা আমার জন্য সহজ ব্যাপার।
-যে ভাব নিচ্ছিস মনে হচ্ছে তোর সত্যিকারের জামাই?
-আবার জিঙ্গাই?সে আমার সত্যিকারের জামাই,তাই না ফারু?
‘ফারহাও সায় জানালো।ঠিক তখনই আরিমা বললো,”তোরা থাক আমি একটু আসছি”
***
-সবাই জলদি জলদি গাড়িতে উঠ,কোনো কথা না।
‘আরিমার কথায় সকলে অবাক হলো,মাত্রই আসলো তারা,এখনই চলে যাবে?
-শোনতে পাচ্ছিস না আমার কথা,উঠতে বলেছি’,,ধমকে উঠলো আরিমা।
‘সবাই গাড়িতে উঠে বসলে চটজলদি গাড়ি ছাড়তে বললো আরিমা।সাথে কোনো ড্রাইভার নেই,ফারহা গাড়ি চালাচ্ছে পাশে তার আরিমা।চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে আছে,তার কানে খালি বাজছে”যদি তার গায়ে একটা কাঁ’টার আঘাতও পড়ে”
‘বাকিরা নানান প্রশ্ন করছে,আরিমা শুধু ফারহাকে জলদি গাড়ি চালাতে বলছে,ফারহা কিছু না বুঝলেও এটা বুঝতে পারছে,নিশ্চিত কোনো বিপদ আসতে চলেছে।ঠিক তখনই গাড়ির পিছনে গু’লি লাগার আওয়াজ হলো,সকলে চমকে গেলো,বেলা আর সিমরান চিৎকার দিয়ে উঠেছে।আরিমা গ্লা’স থেকে মাথা বের করে দেখলো কালো রঙের দুইটা গাড়ি তাদের পিছু নিয়েছে।
‘আরিমা নিজেকে শান্ত করলো,যে করেই হোক তার এদেরকে বাঁচাতে হবে।নয়তো শুরু হওয়ার আগেই সব শেষ হয়ে যাবে৷ কিন্তু গাড়িতে বসে সে কি করবে।
ততক্ষণে আরো আওয়াজ আসছে,পিছনের গাড়ি থেকে গুলি ছুঁড়েই চলেছে।ফারহা’র হাত কাঁপছে।মনে আসছে ভয়।বারবার বড় ভাইকে স্মরণ করছে সে।তার ছেলেমানুষী’র জন্যই সবার জীবন এত ঝুঁকিতে।
-আমার কথা শোন,আফরিদ দেখ তোর সিটের নিচে বেশ কয়েকটা ইটের টুকরো আছে।মনির আর শুভ’কে নিয়ে সন্তর্পণে গাড়ি গুলোর দিকে ছুঁড়ে মা’র।কুইক।
-কিন্তু তাদের সাথে আমরা পেরে উঠবো না।
-যা বলেছি কর।
‘আফরিদ’রা তাই করলো কিন্তু ফলাফল শূন্য। এদিকে গাড়ি গুলোও এগিয়ে এসেছে।আরিমা ফারহা’কে সরিয়ে দিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে পরলো।আতঙ্কে মেয়েটার হাত কাঁপছে।
‘বাকিরা অবাক চোখে আরিমা’কে দেখছে,এই মেয়ে গাড়িও চালাতে পারে?
‘আরিমা ফুল স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে।সবাই আল্লাহ’র নাম জপছে।পিছনের গাড়িটাকে ছাড়িয়ে এসেছে।তবু বিপদ থেমে নেই।
-ফারহা যা বলছি তা মনযোগ দিয়ে শোন।
আমরা নেমে যাবো,আর তুই অজ্ঞা’ন হওয়ার নাটক করবি।সি’টেই শুয়ে থাকবি।ভয় নেই আমরা আছি।বিশ্বাস করিস তো আমায়?
‘ফারহা মাথা নাড়ালো,বাকিরা যারপরনাই অবাক। আসলে আরিমা চাচ্ছে টা কি?
‘কিয়ৎক্ষণ বাদেই গাড়ি দুটো চলে এলো।আরিমা’রা একটা গাছের পিছনে লুকিয়ে আছে।গাড়ি থেকে বন্দুক’ধারী ক’জন লোক এসে গাড়ির চারপাশে দেখতে লাগলো।পরে ফারহা’কে একা পেয়ে কোনো কিছু না ভেবেই ফারহাকে নিয়ে ছুটে চললো।
‘তখনই বাকিরা বের হয়ে এলো,কিন্তু আরিমা কোথায়?দৌড়ে তারা রাস্তায় ছুটলো।তখনি তারা দেখতে পেলো আরিমা গাড়ি’র পিছনের ডেস্কে লুকিয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।মুখে বাঁকা হাসি।
চলবে,,,
(ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টি’তে দেখবেন।আর গঠনমূলক মন্তব্য করবেন)