#লেখনিতে_আরিশা_জান্নাত_আদ্রা
‘পড়ন্ত বিকেল বাহির থেকে ক্ষীণ আলোক রশ্নী এসে গাড়ির ফাক গলে ফারহা’র চোখে পরলো।সাথে সাথে হালকা করে চোখ খুললো।নাহ্ আশেপাশে কেউ নেই।তাকে একাই একটা গাড়ি’তে রেখেছে।একটু একটু ভয় পাচ্ছে সে।আরিমা’র কথা তো মেনে নিলো,এবার কি হবে?কিয়ৎক্ষণ পরেই ঠক’ঠক শব্দ ফার’হার কানে এসে বারি লাগলো।প্রথমে পাত্তা না দিলেও একই ঘটনা যখন বার’বার ঘটতে লাগলো তখন তার টনক নড়লো।
-ফারু শুনছিস আমায়?ফারু এই ফারু।
‘কোত্থেকে আরিমা’র গলার আওয়াজ আসছে তা তা’র বোধগম্য হলো না।তবু কান পেতে শোনতে লাগলো।আবারো সেই ফিস’ফিস আওয়াজ।
-ফারু শুনছিস তুই?শুনতে পেলে একটা হালকা করে বারি দে সি’টে।
‘ফারহা তা’ই করলো,উত্তেজনায় তার হাত পা কাঁপছে।
-এবার তোর সি’টের নিচে হাত দে।
‘ফারহা আশ্চর্য হয়ে গেলো,এখানে তার ফোন কে রাখলো।চটজলদি মেসেঞ্জারে গেলো ফারহা।সেখানে আরিমার ম্যাসেজ।
-আগেই বলে দিচ্ছি,ভয় পাবি না।আমার কথা শোন,তোর ভাইকে একটা ম্যাসেজ দে,তারপর আমি যা বলছি তা উনাকে বলে দিবি।
-ঠিক আছে।
‘এরপর আরিমা একটা বার্তা দিলো তাকে,সেটা কপি করে সৌহার্দ্য ফায়ান খান নামক আইডি’তে পাঠিয়ে তারপর দম নিলো।
***
‘ফায়ান পার্টি অফিসে বসে একটা মিটিং এ্যাটেন্ড করছিলো ম্যাসেজের টো’নে সে ফোনটা হাতে নিলো।
কিয়দংশ বাদেই তার মেজাজ চরম গরম হলো,,ম্যাসেজটা রায়হান শেখের যেখানে সে হুমকি দিয়েছে,,
-সৌহার্দ্য ফায়ান খান,পারলে বোনকে বাঁচিয়ে নাও।নাহলে কিছু সময়ের মধ্যেই প্রাণ’প্রিয় বোনের মৃত দেহ টা চোখের সামনে দেখতে পারবে।কাউন্ট ডাউন শুরু করো জিনিয়াস।
‘পরপর আরো একটি ম্যাসেজ আসলো,তা দেখে ফায়ানের মুখে মৃদু হাসি খেলে গেলো।
-আজকে মিটিং এই অব্দি’ই,আমার জরুরী কাজ এসেছে।কালকে আবার মিটিং এর জন্য প্রস্তুতি নিবেন।
‘বলেই নাদিমকে নিয়ে বেরিয়ে এলো ফায়ান।তার শরীরের রক্ত টগবগ করছে।বোনের ব্যাপারে বেশিই পজেসিভ ফায়ান।না জানি কেমন অবস্থায় আছে মেয়েটা।আর আরিমা,এই মেয়েকে দেখে নিবো আমি।ডাফার গার্ল।
***
‘পাঁচ ভেড়ার ছানা সেখানেই একটা ব্রিজের উপর বসে আছে,বেলা আর সিমরান কেঁদে কে’টে অস্থির।বাকি তিন যুবক নখ কামড়াচ্ছে।কয়েকবার ধ’মকেও মেয়েদের থামাতে ব্যার্থ তারা।
এখান থেকে যেতেও পারছে না কেউ,আরিমা পই’পই করে বারণ করে গেছে।যেনো তারা এখানেই থাকে।
***
‘একটা জঙ্গল টাইপ জায়গায় গাড়ি এসে ব্রেক কষলো,সাথে সাথে ফারহা ফোনটা সি’টের নিচেই ফেলে রাখলো,তবে সন্তর্পণে ফোনের লোকেশন ট্র্যাকিং সিস্টেম অন করে রাখলো।যেনো ফায়ান তার হদিস পায়।
দুইটা লোক এসে ধরে ফারহাকে ভিতরে নিয়ে গেলো।আশ্চর্যের ব্যাপার চারপাশে কেউ-ই নেই।আরিমা আস্তে আস্তে ডেস্ক থেকে নেমে এলো।তারপর পা টিপে টিপে তাদের সাথে চলতে লাগলো।ঠিক তাদের থেকে কয়েক হাত পিছনে আরিমার অবস্থান।লোক গুলো ফারহাকে রুমে শুই-য়ে দিয়ে বেরিয়ে এলো।গাড়ির কাছে গিয়ে কাউকে কল দিলো।
‘আরিমা এক পলক লোকটাকে দেখে দ্রুত-গতিতে দরজার কাছে গেলো।লোকটা আর আরিমা’র মাঝে দেয়াল হয়ে আছে একটা বড় মো’টাসোটা গাছ।আরিমা তাড়’তাড়ি নিজের ব্যাগ থেকে একটা পিন বের করে নিলো।তারপর ফট করে তালা”টা খোলে ভিতরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।
‘হঠাৎ কারো উপস্থিতিতে ফের চোখ বন্ধ করে নিলো ফারহা।এতক্ষণ চোখ খোলে আশ-পাশ টা দেখছিলো।
-হয়েছে,এবার নাটক বন্ধ করো,তুমি পাশ,’বলেই ফারহার কাঁধে একটা থা’প্পর লাগালো আরিমা।
-তুই এসেছিস?
***
‘ফায়ান গাড়ি চালিয়ে ওই অব্দি আসলো যেখানে পাঁচ ভেড়ার ছানা ঘাপটি মে’রে আছে।গাড়ির কাঁচ নামিয়ে তাদের কাছে ডেকে নিলো ফায়ান।ছোট ছোট পদে তারা ফায়ানের নিকট গেলো।
-আমার বোনের যদি কিছু হয়,তোমাদের অবস্থা কিন্তু নাজেহাল।,’বলেই সেখান থেকে সুড়সুড় করে চলে গেলো।
‘এদিকে শান্ত কন্ঠের হুমকি’তে চটে গেলো আফরিদ।
-শা’লা,এতই বোন দরদী,গার্ড পাঠাস নি কেনো?
-এই ছা’গল চেঁচাচ্ছিস কেনো।শোনতে পেলে কে’টে রেখে দিবে।
‘শুভ’র কথায় বেশ বিরক্ত হলো আফরিদ,গাড়ি ইতিমধ্যে তাদের দৃষ্টি সীমানার বাহিরে চলে গেছে।
এবার তাদের মনে ও খ’টকা লাগছে,সৌহার্দ্য ফায়ান খান বোনকে একলা ছেড়ে’ছে,তাও আবার গার্ড’হীন?
***
‘ফারহা’কে যে রুমে রাখা হয়েছে,একজন লোক সেটার দরজা খুললো।লোকটা সামনে তাকাতেই ভিমড়ি খেয়ে গেলো।
রাখলো এক মেয়ে হয়ে গেলো দুই মেয়ে।আশ্চর্য কান্ড’কারখানা।
‘তাও আবার দুটোই বসে লুডু খেলছে।
-এই মেয়ে,তুমি কোথা থেকে এলে,,’লোকটার ভরাট গলার প্রশ্নে কিছুটা নড়ে-চড়ে বসলো ফারহা।
-উড়ে উড়ে এসেছি,আপনার সমস্যা?
‘আরিমার এহেন খাপ’ছাড়া জবাবে লোকটা আবার ভিমড়ি খেলো,কি মেয়ে লোক’রে বাবা।
-উড়ে উড়ে আসো আর ঝুলে ঝুলে,একটু পর এই মেয়েটার সাথে তোমাকেও ম’রতে হবে,,
‘আরিমা অসহায় কন্ঠে বললো,,
-আচ্ছা,আমাদের মে’রেই ফেলবে?
-তা নয়তো কি?কিন্তু তুমি কেন নিজের মৃত্যু নিজে ডেকে এনেছো?
‘আরিমা বিড়বিড় করে বললো,,”মৃত্যু’ই তো আমাকে ডেকে আনে,পিছুই ছাড়ে না।আমি কি করবো”
-বান্ধবী একা ম’রবে,ভাবলাম সঙ্গ দেই।
‘লোকটি টাস্কি খেয়ে গেলো যেনো,আহা কি বন্ধুত্ব। এদের ম’রতে হবে ভাবতেই কষ্ট লাগছে।কি ফুটফুটে দুটো ছানা।
-আমাদের মারবেন কেন?
-স্যারের আদেশ।
-কোন স্যার?
-বলা বারণ।
-আচ্ছা,আমাদের একটা শেষ ইচ্ছা রাখবেন,জে’লের কয়েদী’দেরও তো শেষ ইচ্ছা পুরণ করা হয়।
‘ফারহা শুধু ড্যাবড্যাব করে আরিমার কীর্তি দেখছে,কিন্তু পরের কথাটা শুনে তার মাথা হ্যাং হয়ে গেলো।
-আমাদের সাথে এক দান লুডু খেলবেন?ম’রেই তো যাবো।
‘লোকটার আজ যেনো অবাক হওয়ার পালা।কি উদ্ভট শেষ ইচ্ছা।তবুও মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো।
***
খেলায় টানটান উত্তেজনা চলছে।ঠিক তখনই দরজা ভেঙে ভিতরে কেউ প্রবেশ করলো।আরিমা সেদিকে তাকিয়ে বিরক্তি’মাখা কন্ঠে বললো,,
-রং টাইমে এন্ট্রি নেন কেনো নেতা সাহেব।অসহ্য।
‘ফায়ান কিছু সময় থম মেরে দাঁড়িয়ে ছিলো।এদিকে নাদিম ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছে।টাকলু দেখে ওই লোকটার কলিজা শুকিয়ে গেলো।স্বয়ং সৌহার্দ্য ফায়ান খান তার সামনে।আজকে গ’লা কে’টে রেখে দিবে।ভয়ে তার টাক মাথা বেয়ে ঘাম চিবুকে পরছে।
‘হঠাৎ তখনই আশ’পাশ থেকে ক’জন লোক তাদের ঘিরে দাঁড়ালো।ফারহা ভাইকে দেখে যতটুকু শান্ত হয়েছিলো এবার তার থেকে বেশি ভয় পাচ্ছে।এতগুলো লোক কোথা হতে উদয় হলো?
‘ফায়ান শান্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে,কিন্তু আরিমা শান্ত হতে পারলো না,গটগট পায়ে এগিয়ে গেলো এবং ফায়ানের পাঞ্জাবির পকেটে হাত দিয়ে একটা গা’ন বের করলো।ফায়ান এক ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে।আরিমা ভ্রুক্ষেপহীন দৃষ্টি দিলো সেদিকে।
‘ফায়ানের হাতে গা’ন ধরিয়ে দিয়ে বললো শ্যুট করুন।নয়তো বেঁচে ফিরতে পারবো না।এতকিছুর পরেও আশে’পাশের কেউ-ই এক পা নড়লো না।তা দেখে ফায়ান মৃদু হাসলো।
এদিকে আরিমার ধৈর্য্যের বাধ ভেঙে যাচ্ছে।সে নিজেই ফায়ানের হাত ধরে ট্রিগারে রাখলো।তারপর একটা একটা করে গুলি ছুঁড়তে লাগলো।কিন্তু কেউ আরিমার দিকে বা ফায়ানের দিকে গা’ন তাক করছে না।আশ্চর্য।এর রহস্য কি?
‘আর বুলেট নেই।আরিমার হাত কাঁপছে।বুঝাই যাচ্ছে একদম কাঁচা হাত।কিন্তু মুহুর্তেই তাদের ভড়কে দিয়ে ফারহা’র দিকে গা’ন পয়েন্ট করলো টাকলু টা।
‘যখনই গু’লি ছুঁড়বে তার আগ মুহুর্তে আরিমা ঝাপিয়ে পড়লো ফারহার উপর,ফলে গুলি’টা তার ডান বাহুতে স্থান পেলো।
সবাই স্তব্ধ, এত তাড়াতাড়ি সব ঘটে গেলো কেউ কিছুই করতে পারলো না।সাথে সাথে অন্য একটা গা’ন দিয়ে টাকলু লোকটাকে শ্যুট করে দিলো ফায়ান।
এগুলো সে ভালো’ভাবেই সামাল দিতে পারতো, আরিমা এসে বাঁধা প্রদান করেছে।
‘আরিমা ব্যাথায় কুঁকড়ে গেলো,ফারহা আরিমা’কে ধরে কান্না করছে।সেদিকে একবার অসহায় দৃষ্টে তাকালো ফায়ান।তারপর আরিমাকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে পরলো হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।
এই ছা’গল রমনী’টিকে সে দেখে নিবে।খালি একবার সুস্থ হোক।ইডিয়ট মহিলা।
***
‘দুই দিন পর আরিমা’র জ্ঞা’ন ফিরলো।পিটপিট করে চোখ মেললো সে,আশেপাশে তাকিয়ে বুঝতে চাইলো সে কোথায়।নাকে ফিনায়েলে’র গন্ধ এসে ঠেকতেই বুঝতে পারলো সে হসপিটালে।আস্তে আস্তে সব মনে পরলো।এ’কি তার মুখে মাস্ক নেই।মাথা একটা কাপড় দিয়ে ঢাকা দেখে হালকা হলো সে।
-এই আরুর জ্ঞা’ন আসছে,’বলেই ছয় ভেড়ার ছানা যে’ই আরিমার উপর ঝাপিয়ে পরবে,তখনই কারো ধমকে তারা ছিঁটকে পড়লো সেখান থেকে।
‘আরিমা প্রহর গুনছিলো,কখন এরা ঝাঁপিয়ে পরে আর হাতের সাথে মা’জাও ভাঙে,কিন্তু নাহ ফায়ান তাদের ধ’মক দিয়ে সরিয়ে দিয়েছে।
-কি ম্যাডাম,সামান্য একটা গু’লি খেয়ে দুই দিন অজ্ঞা’ন?এত দূর্বল হলে চলে?
‘আরিমা চেষ্টা করে সি’টে হেলান দিয়ে বসলো।তার দৃষ্টি ফায়ানের পানে।লোকটা তাকে খোঁটা দিচ্ছে।
-সহজ কাজটাকে কঠিন করেছো তুমি।ডাফার গার্ল,’বলেই একটা থাপ্প’ড় বসিয়ে দিলো আরিমা’র গালে।
‘শক্ত হাতের থা’প্প’ড় খেয়ে আরিমা বাকরুদ্ধ।ফ্যাল’ফ্যাল নেত্রে ফায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।
আচ্ছা তার নেতা সাহেব তার গা’য়ে হাত তুলতে পারলো?
চলবে,,,,
(ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখেন,অবশ্যই বলবেন গল্পটা আপনাদের কেমন লাগছে।আর গঠনমূলক কমেন্ট করবেন)