#লেখনীতে_আরিশা_জান্নাত_আদ্রা
‘আরিমা আরহাম’কে নিয়ে বাগানে বসে আছে,দৃষ্টি তার শূণ্যে,এদিক সেদিক খেয়াল নেই তার।এই তো কাল তার আর ফায়ানের বিয়ে।আরিমার এতে কোনো প্রকার বাঁধা নেই।বাঁধা কীভাবে থাকবে?সে তো এটাই চায়।যা হচ্ছে হোক।সে আরহামের ভবিষ্যৎ চায়।তার জীবন তো রসাতলে চলে গেছে কবেই।তার ছেলের ভবিষ্যৎ এর জন্য আরিমা যা ইচ্ছে তাই করতে পারবে।
‘-কি গো মেয়ে?এখানে ছেলেকে নিয়ে বসে কি করছো?একা একা ভালো লাগে বুঝি?
‘আরিমা একবার দিশার দিকে তাকালো।তারপর মুচকি হেসে উত্তর কাটলো,,,
-না ভাবি,আসলে ভিতরে তো প্রচুর লোকজন,তাই সেখানে ভালো লাগছিলো না।
-এটা কোনো কথা।তুমি না বললে কেউ তোমার পাশ ঘেঁষবে না আরু।কারণ তুমি সৌহার্দ্য ফায়ান খা’নের বউ।তোমাকে বিরক্ত করার সাহস কার আছে?
‘আরিমা হেসে দিলো।সাথে সাথে দিশা’ও তার সাথে হাসতে লাগলো।মেয়েটা প্রচুর মজা করে।ভিতরে কাজ চলছে তাই আরিমা খোলামেলা জায়গায় এসে বসে ছিলো।হঠাৎ আরিমার একটা কল এলো।আরিমা দিশার কাছে আরহাম’কে দিশার কাছে রেখে কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়ালো।
***
‘সময় মধ্যরাত,সবাই ঘুমিয়ে কাঁদা।আরিমার বন্ধুমহলের সবাই উপস্থিত এখানে।আরিমাকে যে রুম দেয়া হয়েছে সেখানেই সবাই ফ্লোরে আসন পেতে ঘুমিয়ে আছে।সবাই গল্প করতে করতে এখানেই ঘুমিয়ে পড়েছে।
‘আরিমা আরহাম’কে একবার দেখে নিয়ে আস্তে আস্তে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।তারপর সন্তর্পণে মেইন ডোর পেরিয়ে দেয়াল টপকে রাস্তায় এসে দাঁড়ালো।ফোসস করে শ্বাস ছাড়লো আরিমা।ভাগ্যিস কেউ দেখে’নি।
‘হাতে থাকা ব্যাগ নিয়ে একটা ঝোঁপের আড়ালে চলে গেলো আরিমা।কিছু সময় বাদে সেখান থেকে বেরিয়ে এলো সম্পুর্ণ ভিন্ন রূপে।
‘কালো স্যুট প্যান্ট পড়া।তার উপর হুড়ি চাপানো।বুঝাই যাচ্ছে না ছেলে না মেয়ে।পারফেক্ট লুক।
***
-সব রেডি?
-ইয়েস ম্যাম।
‘আরিমা একটা অন্ধকার ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো।সামান্য আলো ব্যার্থ হচ্ছে ঘর’টাকে আলোকিত করতে।
আরিমা গটগট শব্দ তোলে রুম’টাতে ঢুকলো।যেখানে আগে থেকেই একটা লোক আধ’মরা হয়ে পড়ে আছে।আরিমা লোকটার সম্মুখে দাঁড়ালো।
-নিশাত,মনে হচ্ছে খুব ভালো খাতিরযত্ন করেছিস?
‘বলেই লোকটার মাথার চুল খামচে ধরলো আরিমা।লোকটা উল্টো হয়ে ঝুলছে।রক্ত টপ’টপ করে নিচে গড়িয়ে পড়ছে।চুলে জোরে টান লাগাতে লোকটা আরো ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠলো।
-অবশ্যই।বেশ তোষামোদ করেছি বেচারা’কে।তবু মুখ ফোটে কিচ্ছু বলছে না।মনে হচ্ছে মেয়েদের রোল প্লে করেছে।
‘আরিমা নিশাতের দিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকাতেই বললো,
-কপাল ফাটে তবু মুখ ফোটে না।
-শাট আপ।
‘নিশাত ভদ্র ছেলের মতো মুখে আঙুল দিয়ে চুপ হওয়ার অভিনয় করে দাঁড়িয়ে আছে।
-বলে নি তো কি হয়েছে বলবে।
-নে বল।কেনো আমার কলিজা’র উপর হাত দিয়েছিস?
-আমি কিচ্ছু জানিনা।এটা শুধুই এক্সি’ডেন্ট ছিলো ম্যাম। মাফ করে দিন প্লিজ।আমি ইচ্ছে করে করিনি ম্যাম।
‘বলেই কাঁদতে লাগলো লোকটি।আরিমা’র বেশ মায়া হলো।ইচ্ছে করছে নিশাতের ঘাড় মটকে দিতে।
এদিকে আরিমার চাহনি দেখে নিশাত ঢোক গিললো।
-নিশাত,এত বড় ভুল কি করে করলি তুই?শা’লা’কে এখনো জীবিত রেখেছিস কেনো?
‘আরিমার এহেন কথায় সবাই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো।লোকটা আবার ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে লাগলো।
-তুই জানিস না তুই কার কলিজায় হাত দিয়েছিস।কি ভেবেছিস আমি চিনতে পারবো না তোকে?
খুব ভালো ভাবে তোকে আমি চিনি।তুই বলবি নাকি আমি আঙুল বাঁকা করাবো?
‘বলেই আরিমা ঠা’সস করে পর’পর কয়েকটা ঘু’সি বসিয়ে দিলো লোকটার মুখে।
-নিশাত।মেয়েটাকে ভিতরে নিয়ে আয়।
‘নিশাত গিয়ে একটা বাচ্চা মেয়েকে ধরে নিয়ে আসলো।
মেয়েটা নিশাতের কোল থেকে বাবা বাবা বলে কাঁদতে লাগলো।
‘লোকটা অসহায় চোখে একবার তার মেয়ের দিকে তাকালো।তারপর বললো,,
-ম্যাম আমি সব বলছি।আমার সত্যিই কোনো দোষ নেই। আমাকে অনেক টাকা দিতে চেয়েছিলো তারা।আমি অসহায় ছিলাম।আমার মেয়ে অসুস্থ ছিলো।তার অপারেশনে’র জন্য অনেক টাকা লাগতো।আমার কোনো দোষ নেই ম্যাম।
‘বলেই কাঁদতে লাগলো লোকটা।আরিমা এমনিতেও বাচ্চা’টার কোনো ক্ষ’তি করতো না।
-নিশাত।লোকটাকে বাড়ি পাঠিয়ে দে।সাথে কিছু টাকা।
-হ্যাঁ? কি বলিস এসব।
-যা বলছি তাই কর।আর আমি গেলাম।কাল ঠিক টাইমে খান বাড়ি চলে আসিস।
***
‘খান ভীলা’য় তুফান উঠেছে।ফায়ান তার রুমের সব জিনিস একটা একটা করে ভেঙে ফেলেছে।রাগে তার চোয়াল শক্ত হয়ে এসেছে।
‘বাহির থেকে কেউ দরজা ধা’ক্কা দিয়েও তার মন গলাতে পারছে না।
ফায়ানের বাবা ফিরোজ খান আর তার বড় ভাই জাভেদ খান বাসায় এসেছে।তারা শুনেছে তাদের ছেলের নাকি বিয়ে।তাই হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসেছে।কাকে বিয়ে করছে ফায়ান।তাদের একবারও জানায়নি।
‘কিন্তু এখানে এসে দেখে ঘটনা উল্টো।মেয়ে বাসায় নেই।পালিয়ে গেছে।তাই ফায়ান ঘরে ভাঙচুর করছে।
***
-হ্যালো নাদিম।
-ভাই আপনি দরজা খুলছেন না কেনো?
-জলদি আমার রুমে আসো।
-দরজা না খুললে কীভাবে যাবো?
‘কাঁদো’কাঁদো ভঙ্গিতে কথা’টা বললো নাদিম।
-আরে ছাগল কোথাকার বেলকনির দরজা খোলা আছে।পাশের রুম থেকে লাফ দিয়ে আসো।
-এএএ ভাই,এত বড় রিস্ক?
-তুমি এখন না আসলে তোমাকে আরিমা কিডন্যাপের কে’সে জেলে পু’রে দেবো।
‘নাদিম তৎক্ষনাৎ ফোন কে’টে,নাউজুবিল্লাহ আস্তাগফিরুল্লাহ বলে পাশের রুম থেকে ফায়ানের রুমে গেলো।
‘ধপ করে কিছু পরার শব্দ পেয়ে ফায়ান বেলকনিতে গিয়ে দেখলো নাদিম কাত হয়ে পড়ে আছে।ফায়ান নাদিম কে টেনে তুললো।
-আসলেই গা’ধা তুমি।
***
-বিয়ের কোনো আয়োজন যেনো নষ্ট না হয়।সবাই বিয়ের কার্যক্রম করতে থাকো।সঠিক সময়ে বিয়ে হবে।তোমরা মজা করো মাস্তি করো।আমি আসছি।
‘ফিরোজ খান ছেলে’কে বললো,,
-কোথায় যাচ্ছিস বাবা?মেয়েটা পালিয়ে গেছে তো।
‘ফায়ান এক পলক আরহামের দিকে তাকালো।বেচারা তার মাম্মার জন্য কাঁদতে কাঁদতে দূর্বল হয়ে পড়েছে।
-বাবা,মনে করো আমি বউ আনতে যাচ্ছি।সঠিক সময়েই চলে আসবো।
‘বলেই ফায়ান নাদিম’কে নিয়ে বেরিয়ে এলো বাসা থেকে।নিজের কাজ নিজের হাতেই করবে সে।
‘এদিকে বন্ধুমহলে’র ভাবনা জুড়ে শুধুই আরিমা আর আরিমা।সে কিছুতেই আরহাম’কে রেখে কোথাও যাওয়ার মেয়ে না।কিছু তা রহস্য আছেই এখানে।
চলবে,,,,
(ভুল’ত্রুটি হলে ক্ষ’মার দৃষ্টিতে দেখবেন,আর গঠনমূলক কমেন্ট করবেন প্লিজ)