#লেখনীতে_আরিশা_জান্নাত_আদ্রা
‘ফিরোজ খান গাল ফুলিয়ে গেইটের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে।আপাতত মেহমান সবাই ভিতরে,তাই এখানে কেউ এসে তাকে ডিস্টার্ব করবে না।ছেলের কান্ডে সে আসলেই হতাশ।ছেলে হয়ে বাপ’কে এমন কথা কেউ বলে নাকি।এ’কে না দেখলে বোধহয় তার জানায় হতো না।
‘কিছুক্ষ’ন আগে ফায়ান ফিরে এসেছে,সাথে আরিমা’কে নিয়ে।আরিমার পরিধানে একটা সিম্পল শাড়িী আর মাথায় হিজাব লাগানো।মুখ মাস্ক দিয়ে ঢেকে রেখেছে।
‘হবু পুত্রবধূর এহেন রূপ দেখে ফিরোজ খান আবার হতাশ হয়ে গেলেন।বিয়ে’তে অন্তত কেউ একটু সাজে।এই মেয়ে তো আরো নিরামিষ। দুই নিরামিষ মিলে সংসার করবে কীভাবে?নাতি-নাতনির মুখ আদৌও দেখা হবে?
‘তারপর মনকে এই বলে বোঝ দিলেন,পালিয়ে যাওয়া মেয়ে তো আর বিয়ের জন্য রাজী না যে সাজু’গুজু করে বিয়ের পিড়ি’তে বসবে।কিন্তু মেয়েটা পালালো কেনো?
তার ছেলে লাখে একটা, চেহারা,ব্যাবহার, সুনাম,টাকা-পয়সা কোনোদিক থেকেই কমতি নেই তার ছেলের।এই মেয়েটা কি অন্য কাউকে ভালোবাসে?নাহলে পালাবে কেনো?
এসব ভাবতে গিয়ে ফিরোজ খান আবার হতাশ হচ্ছেন।
‘পর’ক্ষণেই একটা কথা মনে পড়তেই উনার রাগ উঠে গেলো।
-এই না’কি আমার ছেলে বাপ’কে কি না কি বলে বসে লোক’দের সামনে লজ্জায় ফেলে।
-কি’রে কে তোকে লজ্জা দিলো আবার?
‘ফিরোজ খান তাকিয়ে দেখে তার ছোটো’বেলার বন্ধু রাশেদ।
-এতো দেরী করলি কেনো?আরেকটু পরে আসলে তো খাবার-দাবা’রের শেষে শুধু প্লে’ট নিয়ে যেতে হতো।
-সমস্যা কি?প্লেট বিক্রি করে নাহয় বিরিয়ানি খেতা’ম।তাও তো বলতে পারতাম সৌহার্দ্য ফায়ান খা’নের বিয়ের প্লেট বেঁচে বিরিয়ানি খেয়েছি।
‘ফিরোজ খান হেসে দিলো।দুজনেই হাসতে লাগলো।কতোদিন পর দেখা তাদের।ব্যাবসার জন্য ফিরোজ খান বেশি’রভাগ সময় দেশের বাহিরেই থাকেন।সাথে ভাই জাভেদ খান থাকে।তারা আর সময় কোথায় পায় বন্ধু’দের সাথে আড্ডা দেয়ার।
-এবার বল,কে তোকে লজ্জা দেয় পাবলিক প্লে’সে?সৌহার্দ্য ফায়ান খানের বাপ’কে লজ্জায় ফেলে?কে সেই ছা’গ’ল?সে কি জানে না এমপি জানলে তাকে কি করতে পারে?
-আরে ব’ল’দ থাম।এতো ঢং করার কারণ নেই,আমার নিমক’হারাম ছেলেই আমাকে লজ্জা দেয়।
‘রাশেদ থতমত খেয়ে গেলো।”ফায়ান আবার তোকে কিসের লজ্জা দিবে?
-শোন তবে।
‘ফায়ান গাড়ি থেকে নামার পর,ফিরোজ খান তার দিকে এগিয়ে যায়।এদিকে বর বউ একসাথে এসেছে দেখে সবাই অবাক হয়ে তাদের দেখতে ছুটে আসে।
ফিরোজ গিয়ে ছেলে’কে বলে,,
-বাবা ফায়ান,এসব কি?
-কি’সব কি?
-তুমি কি এই পাঞ্জাবী পরে বিয়ে করবে?না মানে একটা শেরওয়ানী পরলে ভালো হতো না?
-কেনো?শেরওয়ানী পরবো কেনো?আমার শেরওয়ানী ভালো লাগে না।
-এমন করে না বাবা।আমি গার্ড’দের বলে দিচ্ছি তারা তোমার জন্য আর বৌমা’র জন্য পোষাক আনবে।
-তোমার বৌমা আর আমি, দুজনেই এই পোষাকে ক’ম্ফো’র্টে’ব’ল।
-তুই বুঝছিস না।
-উফ আব্বু।তোমার যদি একান্তই সমস্যা হয়ে থাকে।শেরওয়ানী তুমি পরে ফেলো,আর একটা ভালো শাড়ী এনে আম্মু’কে পরিয়ে আবার বিয়ে করে নাও।আমরা তো তোমার বিয়ে দেখিনি,সেই সুযোগে বিয়েটাও দেখা হয়ে যাবে।বাপ ছেলে একসাথে বিয়ে করবো কি বলো?
‘সবাই হো হো করে হেসে দিলো।যেনো হাসতে হাসতে লুটো’পুটি খাবে।এদিকে ফিরোজ খানের মুখ থম’থমে হয়ে গেলো।
-গা’ধা কোথাকার,আমার বিয়ের সময় কি তুমি ছিলে?যে দেখতে পাবে।
-উফফ আব্বু।তুমি কি তোমার বিয়ের দিন আমার কথা শুনেছিলে?বলো?শুনোনি তাইনা?আমিও আমার বিয়ের দিন তোমার কথা শুনছি না।
-আরে আমার বাপ।আমার বিয়েতে তুই ছিলিস না।
-তো?আজকাল দেশ কতো আপডেট হয়েছে।চাইলে আমাকে আগেই পৃথিবীতে এনে তারপর ধুম’ধাম করে বিয়ে করতে পারতে।
-এখন সরো।আমি ভিতরে যাবো।বিয়ের ল’গ্ন বয়ে যাচ্ছে যে।
-আজ’কালের পোলাপান, বাবা মায়ের কথা শুনেই না।এদের যে কি হবে!
‘ফায়ান ভিতরে প্রবেশ করতে গিয়েও থেমে গেলো।
-মনে নেই আব্বু।তোমাকে বিয়ে করানোর জন্য দাদু তোমার পিছনে লাঠি নিয়ে কতো ঘুরেছে?পিঠেও তো কয়েক ‘ঘা পরেছিলো।তুমিও তোমার বাপের অবাদ্ধ সন্তান ছিলে।সেই তুলনায় আমি তোমার থেকে ফাস্ট।
এই যে আমাকে বলতে হলো না।একজন’কেই দু’দু বার বিয়ে করে নিচ্ছি।
‘ফিরোজ খান টা’স্কি খেলো।ফায়ান কিভাবে জানলো তার বাবা বিয়ে করানোর জন্য তাকে লাঠি’পেটা করেছে?আজ’কাল ছেলে তার উপর’ও রিসার্চ করে নাকি?
‘রাশেদ হাসছে,হাসতে হাসতে ফিরোজ খানের উপরে ঢলে পরছে।বাবা ছেলের কান্ডে সে বিমোহিত যেনো।
-হয়েছে,দাঁত দেখানো বন্ধ কর।দুর্গন্ধ আসছে।
‘সাথে সাথে রাশেদ হাসি বন্ধ করে দিলো।ফিরোজ এখন ক্ষে’পে আছে।কিন্তু হাসি থামার নাম নেই তার।অপারগ হয়ে মুখ টিপে হাসছে সে।
-চল,বিয়ে মনে হয় শেষ হতে চললো।আমার তো কোনো মূল্য’ই নেই।তাড়াতাড়ি চল।নাহলে তুই খাবার’টাও খেতে পারবি না।
_________
‘বিয়ে পড়ানো শেষ।আরিমা আর ফায়ান পাশাপাশি বসে আছে।আরিমার কোলে আরহাম চুপটি করে বসে আছে।একদিন মাম্মা’কে কাছে না পেয়ে ছেলেটা কেমন নেতিয়ে গেছে।আরিমার বেশ মায়া হলো তার ছেলের প্রতি।মাথায় একটা চুমু খেলো আরহামের।
‘ফায়ান একবার আরিমার দিকে তাকালো,আরেকবার আরহামের দিকে।তারপর হালকা হেসে আবার ফোনে মনযোগ দিলো।
‘বিয়ে বাড়ি’তে কেউ বাচ্চা’টার সম্পর্কে কথা তুলছে না।তারা ভাবছে কনের রিলেটি’ভের বাচ্চা হবে হয়তো।
কতোই তো বিয়ে দেখেছে তারা।নতুন বউয়ের কোলে বাচ্চারা বসে থাকে।যেনো এটাই তাদের একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কিন্তু কনের বাড়ির কেউ নেই এটা তাদের ভাবার বিষয় নয়।সৌহার্দ্য ফায়ান খান নিশ্চয়ই অযোগ্য কাউকে জীবন’সঙ্গী হিসেবে বেছে নিবে না?
‘ফারহা ফায়ানের কাছে এসে দাঁড়ালো।
কারো উপস্থিতি পেয়ে ফায়ান মাথা তুলে তাকিয়ে দেখলো ফারহা তার দিকে তাকিয়ে আছে।
এক পলক তার দিকে তাকিয়ে আবার ফোনে মনযোগ দিলো ফায়ান।
-কিছু বলবি?
-তেমন কিছু না।আরু’কে ঘরে দিয়ে আসি ভাইয়া?রাত অনেক হলো।
-আরহাম’কে সাথে নিয়ে যা।নয়তো বাসরে ডিস্টার্ব’নেস তৈরি করবে।
‘আরিমার কাঁশি উঠে গেলো।যেনো সে শুকনো মাটিতে আছাড় খেলো।ফারহা ড্যাবড্যাব করে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।মা’গো তার ভাই এরকম ঠোঁট’কাটা স্বভাবের কবে হলো?
‘ফারহা এক ভ্রু উঁচু করে আরিমার পানে দৃষ্টি দিলো।
ফারহা’র দৃষ্টি দেখে আরিমা মিনমিন করে বললো,,
-আমার দিকে দেখছিস কেনো?আমি কি করেছি?
-তাই তো ফারু।ভাবির দিকে কেউ ওভাবে তাকায়?আমার বউ’কে সম্মান দিবি।
‘আরিমা যেনো ভীমড়ি খেলো।এই লোকটা কি শুরু করেছে।
‘ফারহা বেশ বুঝতে পারছে ভাই আরিমাকে জ্বালাচ্ছে।
সে তাদের মাঝে থাকতে চায় না।তাই আরহাম’কে জোর পূর্বক আরিমার থেকে নিয়ে এলো।আরহাম ঘুমে কাঁদা।ফারহা যেতেই আরিমা খেঁকিয়ে উঠলো।
-আপনার লজ্জা’শরম বলতে কিছুই নেই?বেশশরম পুরুষ।
‘ফায়ান ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আরিমার দিকে তাকালো।তারপর মুখ বাঁকিয়ে বললো,,
-কেনো।আমি কি প্যা’ন্ট খুলে ঘুরছি যে আমার লজ্জা থাকবে না?আমি তো বস্ত্র’সহ বসে আছি।বস্ত্রহীন তো নই আমি।এই তোমার মতলব কি?
‘আরিমা এবার চোখ বড় বড় করে তাকালো ফায়ানের দিকে।
-আমার মতলব মানে?
-তুমি কি ইন’ডাইরেক্ট’লি আমাকে বস্ত্র’হীন অবস্থায় দেখতে চাইছো?
‘বলেই ফায়ান সন্দিহান চোখে তাকালো আরিমার দিকে।আরিমা হা করে ফায়ানের দিকে তাকালো।তার নেতা সাহেব কি দিন দিন লাজ-লজ্জা খোয়াচ্ছে?
ছিঃ ছিঃ ভয়ঙ্কর কান্ড।
‘ফায়ান আরিমা’র দিকে ধ্যান দিলো না।মেয়েটা এবার কিছুক্ষণ ভাবুক তাকে নিয়ে।বউয়ের ভাবনায় থাকাটাও একটা যোগ্যতা।ভাগ্য লাগে।তার’উপর বউ সুন্দরী হলে তো কথায় নেই।
-এই যে আমার হতাশ বাবা।এভাবে ঘুর’ঘুর করছো কেনো?
-কে হতাশ?আমাকে তোর হতাশ মনে হয়?
-না, তুমি তো সারাদিন কথায় কথায় হতাশ হয়ে পরো।তাই এই নাম তোমার জন্যই পারফেক্ট।
-হারাম’জাদা।বিয়েটা খালি শেষ হোক।
***
‘চুল খুলে দাও,বেণী ভে’ঙে দাও বন্ধু আমার!
ভা’ঙা মনে শত্রু’তা ভরে দাও আবার।
-উদ্ভ’ট তুমি।আর তোমার সব কবিতা।
‘হঠাৎ রুমে ফায়ানের উপস্থিতি পেয়ে ভড়কালো আরিমা।মাত্র-ই তো সে রুমে আসলো।এখনই ফায়ান হাজির?
-আমার রুম আমি আসবো না?
‘আরিমা তব্দা খেয়ে গেলো।
-আপনি বুঝলেন কীভাবে আমি….
-যেভাবে চোখ দুটো রসগোল্লা’র মতো বানিয়ে রেখেছো,তাতেই বুঝে গেছি।
-ওহ।
-যাকগে,তোমার কবিতা’টা সুন্দর ছিলো।কিন্তু কবিতায় সামান্য ভুল আছে।
‘আরিমা ভ্রু কুঁচকে তাকালো।তার কবিতায় কি ভুল আছে?
‘ফায়ান এক পা এক পা করে আরিমার দিকে এগিয়ে গেলো।তারপর তা’কে পিছন দিক ঘুরিয়ে ক্লিপ দিয়ে আটকানো চুল গুলো ছেড়ে দিলো।বেলকনির গ্রি’লের সাথে আরিমা’কে হালকা চেপে ধরে,কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস’ফিস করে বললো,,
-চুল খুলে দাও,বেণী ভে’ঙে দাও বন্ধু আমার!
ভা’ঙা মনে ভালোবাসা ভরে দাও আবার।
‘আরিমা ঈষৎ কেঁপে উঠলো।তা বুঝতে পেরে ফায়ান বাঁকা হাসলো।আরিমার চুলে মুখ ডুবিয়ে হালকা ঘ্রাণ নিলো ফায়ান।তারপর ভ্রু কুঁচকালো সে।
-তুমি কি সেম্পু ইউজ করো?
‘এই অবস্থায় এরকম কথা আরিমা মোটেও আশা করেনি।মনে মনে আন’রোমান্টিক উপাধি দিয়ে দিলো তার নেতা সাহেব’কে।
-চলো নামাজ পরবে।
‘আরিমা সায় জানালো।দু’জনেই অজু করে এসে নামাজ আদায় করে নিলো।।
‘জায়নামাজ উঠিয়ে রেখে আরিমা বললো,,
-আমি কোথায় ঘুমাবো নেতা সাহেব?
‘ফায়ান ঠা’স করে আরিমা’র দিকে তাকালো।আরিমা দৃষ্টি নিচু করে নিলো।এভাবে কেউ তাকায়?তার বক্ষস্থল যে ধুক’পুক করে উনি বুঝি তা জানেন না?
-বউ তুমি কোথায় ঘুমাবে মানে?আমার বুকে ঘুমাবে।
‘আরিমা আজ অবাকের ঠে’লায় জ্ঞা’ন হারাবে।
-কিইইইই?কখনো না।
-আশ্চর্য! বউ আমার,বিছানা আমার,ঘর আমার।একবার না দুই দুইবার বিয়ে করা বউ’কে যদি নিজের বুকে না নিয়ে ঘুমাই,পুরুষ সমাজ আমাকে মেনে নিবে না বউ।
‘বলেই আরিমাকে এক টানে তার বুকে ফেলে দিলো।আরিমার মাথা হ্যাং হয়ে গেছে।নেতা সাহেবকে নিশ্চিত ভূতে পেয়েছে।এরকম উদ্ভট আচরণ হঠাৎ?
‘আচ্ছা আমি যা জানি,নেতা সাহেব তা জেনে যায়নি তো?
‘আরিমা মুখ তোলে ফায়ানের দিকে তাকালো।ঠিক তখনই ফায়ান আরিমার কপালে কিস করে দিলো।
আরিমা ফায়ানের বুকে মুখ লুকালো।তার কেমন শান্তি শান্তি ঠেকছে।তার কারণ কি হতে পারে?ফায়ানের বুকে সে এই তার কারণ?
-তুমি আমার বউ,আমার পবিত্র ফুল।
চিন্তা নিয়ে নিয়ে শুকিয়ে যে’ও না।আমার আদর করতে প্রবলেম হতে পারে।পরে দেখা যাবে একটা চুমুর ভার’ও নিতে পারছো না।আমি তোমার পাশে আছি।তোমার সব যুদ্ধের হাতিয়ার আমি হবো বউ।
‘বলেই আরিমাকে আরেকটু আকড়ে ধরলো ফায়ান।
‘চলবে,,,
(একটু একটু রোমান্টিক পর্ব হয়ে গেছে আজ গঠনমূলক কমেন্ট করবেন প্লিজ)