#লেখনীতে_আরিশা_জান্নাত_আদ্রা
-কি গো নতুন বউ,সকাল সকাল এভাবে রা’ঙা মুখ করে বসে আছো কেনো?আমাদের রঙ্গি’লা বধূ!কি ব্যাপার?
‘আরিমা চোখ ছোট ছোট করে ফারহা’কে দেখছে।মেয়েটার মাথায় চলছে কি।
-কি’রে,এভাবে বলছিস কেনো।
-কীভাবে বলবো সোনা?
-বইন তোর হয়েছে কি?
-বাদ দে,আগে বল।কাল রাত কীভাবে কাটালি?
-মানে?
-দেখ তোর গাল দুটো রসগোল্লা হয়ে আছে।কেনো কেনো?বল দেখি।
-ফা’জি’ল উনি তোর ভাই লাগে,এসব বলতে লজ্জা করে না?
-ভাইয়ের আগে তুই আমার বান্ধবী। আমার রাইট আছে।
-তো তুই সহ বাসর ঘরে ঢুকতিস!
‘ফারহা এবার কপাল চাপড়ালো।কাকে কি বলছে দুজনেই নিরামিষ। তা তা’র বোঝা উচিত ছিলো।
-ভাইয়া কোথায়?তুই একা কেনো রুমে?
-উনি চার’টার দিকে একটা কল পেয়ে চলে গেছেন।
-মানে?কই গেছে?আটকালি না কেনো?আজ তো বৌভাত।
-তোর ভাই কোনো বাচ্চা না।যথেষ্ট এডাল্ট উনি।তার’উপর একজন নেতা।উনার তো কতোই কাজ আসবে।
-কি’রে একদিনেই পা’ক্কা গিন্নী’র ভাব যে?রা’তে ডোজ বেশি পড়েছে?
‘বলেই কিটকিট করে হাসতে লাগলো ফারহা।
-আরে ধুর পাগলা।সেসব কিছুই না।
-আচ্ছা তুই ভাইয়া’কে ভালোবাসিস তাইনা?সেই ছোট’কাল থেকে?
‘আরিমা হকচকিয়ে গেলো,এসব কি বলছে ফারহা।
সে কি সব জেনে গেলো?
-মানে?এসব কি বলিস?
-আমি জানি সোনা।
-ক..কীভাবে?
‘আরিমার হাসফাঁস লাগছে।সে এতো তাড়াতাড়ি ধরা পরতে চায় নি।
-দোস্ত নেতা সাহেব’কে বলিস না প্লিজ।
‘আরিমার চোখ পানিতে টলমল করছে।এই ব্যাথা যে কাউকে বুঝানোর নয়।সে ছোটো কাল থেকে একজন’কে মন দিয়ে বসেছিলো,কিন্তু ষোড়শী’তে যে বিরাট ভুল করে বসেছিলো।এরকম ভুল কীভাবে করেছিলো সে?ছিহ্।
ফায়ান সব জানলে তাকে কি মেনে নিবে?না আর তাকে হারাতে পারবে না সে।
-কি’রে?কই হারালি?
-আই লাভ ইউ ‘রে…..
-আই লাভ ইউ টু রে….
‘ফারহা আরিমা’কে জড়িয়ে ধরলো।তার ভীষণ কান্না পাচ্ছে।
-আমি ভাবতেও পারি’নি তোকে আবার ফিরে পাবো!
-আমার যে ফিরতেই হতো!অপরাধী’দের শাস্তি দিতে হতো না?
***
-ভাই সব শেষ হয়ে গেলো।সব শেষ।
‘ফায়ান নিজের টেবিলের উপর বসে আছে।পার্টি অফিস সম্পুর্ন খালি।শুধু সে আর নাদিম এখানে উপস্থিত। এমতাবস্থায় নাদিমের কথা শুনে বেশ বিরক্ত হলো ফায়ান।
-এভাবে মহিলা’দের মতো কথা বলছো কেনো?
-ভাই,রাজ দেশ ছেড়েছে।প্রাইভেট প্লে’নের মাধ্যমে সে রাতা’রাতি’ই বাংলাদেশ থেকে কেটে পরেছে।
-তো?ও চুলোয় যাক।তোমার শাস্তি আছে নাদিম।
‘নাদিম ভড়কালো।ঘাম ঝরছে তার।সে কোনো ভুল করেনি তো?
-ভা..ভাই।আমার দ্বারা কোনো ভুল হয়েছে?
-চরম ভুল করেছো তুমি।এ ভুলের মাফ নেই।
-ভা…ভাই।
-তোমার কি আক্কেল’গুড়ুম হয়েছে?কাল আমার বিয়ে হলো।বউয়ের সাথে বাসর তো দূরে থাক।একটু শান্তি’তে ঘুমাতেও পারলাম না।কি করা উচিত তোমাকে?
‘নাদিম হা করে ফায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।সে যেনো বিশ্বাস-ই করতে পারছে না ফায়ান এরকম নির্লজ্জ হয়ে গেছে।
‘পরক্ষণেই নিজের মাথায় চাটি মারলো নাদিম,ভাই যদি জানে সে মনে মনে কি বলছে,নির্ঘাত গর্দান যাবে তার।
-শোনো একটা কথা বলি।
‘ফায়ানের গম্ভীর কন্ঠে নাদিম একটু নড়ে’চড়ে বসলো।
-আমি তোমার বিয়ে ঠিক করেছি।
‘নাদিম চরম আশ্চর্য হলো যেনো।তব্দা খেয়ে বসে আছে।
-ভাই??
-বউ না হলে তো বুঝবে না, কীভাবে মাঝ’রাতে ডেকে আনো।তোমার বাসর রাতে তোমাকেও আমি এভাবে ডেকে এনে প্রতিশোধ নিবো।
‘নাদিম ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো।শুকনো ঢোক গিললো।
-ভাই পাত্রী কোথায় পেলেন?
-কেনো?ফারহা’কে ভালো লাগে না তোমার?
‘শেষ,নাদিম বুঝি জ্ঞা’ন হারাবে।বিয়ে করে ফায়ানের মাথা একদম গেছে।
-কি বলছেন এসব ভাই?আমি?
-দেখো এতো কথা বলতে নারাজ আমি।
‘হঠাৎ ফায়ানের ফোন’টা বেজে উঠলো।
ফায়ান বিরক্তি নিয়ে ফোন রিসিভ করলো।এই মোবাইল-ই বার’বার তার বউয়ের থেকে তাকে সরিয়ে আনে।
-স্যার,,এলাকায় মারা’মারি হয়েছে।জলদি আসুন স্যার।
-বিকেলে আসছি।
-কিন্তু…..
‘আর কিছু বলতে না দিয়ে ফায়ান কল কেটে দিলো।
তারপর বললো,,
-নাদিম,গাড়ি বের করো।আমার ভীষণ বউ বউ পাচ্ছে।বউটা নিশ্চয় রেগে আছে।তা’কে মাঝ রাতে ফেলে চলে আসতে হয়েছে।
‘এই বলে ফায়ান অফিস থেকে বেরিয়ে গেলো।নাদিমও পিছু পিছু ছুটছে।
‘বিয়ে করার সাইড ইফেক্ট এসব।নয়তো ভাই কস্মিনকালেও কাজে হের’ফের পছন্দ করেন না।
কি সাংঘাতিক! সে আর ফারহা?এসব ভাবতেই গাল দুটো টমেটো হয়ে গেলো নাদিমের।ইশশশ কি লজ্জা কি লজ্জা।
***
-কি’রে তোর জামাই কোথায়?
‘আরিমা খেয়ে-দেয়ে এসে নিজের রুমে ঘাপটি মেরে বসে আছে।বাহিরে গেলেই ভেড়া গুলোর জন্য বিপাকে পরতে হবে।কি না কি প্রশ্ন করে বসে।হঠাৎ আকস্মিক কন্ঠ শুনে চমকে গেলো সে।
-তোরা এখানে কেনো?
‘ছয় ভেড়ার ছানা’কে একত্রে দেখে আরিমা ভড়কালো।যাদের থেকে পালানোর চেষ্টা করছে তারাই হাজির?
-ছাড় তো,এসব নেতা’ফেতার চরিত্র গোবরের মতো পবিত্র।দেখ কার সাথে না কার সাথে ফুর্তি করছে।
‘আরিমা চোখ পাকিয়ে আফরিদের পানে তাকালো।চোখ দিয়েই ভস্ম করে দিবে যেনো।
-দোস্ত,মজা করেছি।স্যার দুশ্চরিত্র না আমরা জানি।
‘আরিমা ঠাস করে একটা কিল বসিয়ে দিলো আফরিদের পিঠে।
আফরিদ ব্যাথায় চোখ’মুখ খিঁচিয়ে বন্ধ করে নিলো।
-সুন্দরী মেয়েদের হাতের জোর বুঝি বেশি?
-আরেকদিন এসব ফালতু কথা বলবি তুই।
-স্যরি দোস্ত।আর বলবো না।মাগো।পিঠ জ্বলে যাচ্ছে যেনো।
-কি’রে বেলা।শুনেছিলাম তোরা নাকি ঝগড়া লাগিয়ে’ছিলি?
‘আরিমার কথায় বেলা মিট’মিট করে হাসলো।
-তোর বয়ফ্রেন্ডের কি খবর?
-কাল রাতে ব্রেকআপ করেছি দোস্ত!
‘আরিমার চোখ কপালে।এই মেয়ে বলে কি।জামা-কাপড়ের মতো ছেলে বদলায়।
-তো কাঁদছিস না কেন?
-আরেকটা পটিয়েছি তাই।
‘বেলার টপা’টপ উত্তর শোনে।ফারহা ঠা’স করে আফরিদের উপর পরে যেতে নিলো।আরিমা তাকে হেঁচকা টান দিয়ে সোজা দাঁড় করিয়ে দিলো।
-কে সেই হত’ভাগা?
‘বেলা মুচকি মৃচকি হাসছে।বাকিরা তার দিকে তাকিয়ে আছে উৎসুক দৃষ্টিতে।
-মনিররররররররররর?
‘আরিমা’র চিৎকারে সবাই কানে হাত দিলো।
-মনির,তুই?শেষ’মেশ অঞ্জ’নার বয়ফ্রেন্ড বেলা’তে এসে থামলো।
-দোস্ত…..
‘মনির লজ্জায় লাল’নীল হয়ে যাচ্ছে।
-আমার কোনো দোষ নেই,ও জোর করে আমার সাথে রিলেশনশিপে জড়িয়েছে।
‘অসহায় কন্ঠে বুলি আওড়ালো মনির।
-কি বললি তুইই?
-এই তোরা থামবি?তোদের কাছে ট্রিট প্রাপ্য আমরা।
এখন বল দুলাভাই কোথায়।তাকে দেখছি না যে?
-এই যে আমার শ্যালক-শ্যালিকা’রা।আমাকে মিস করছো বুঝি?
‘হঠাৎ ফায়ানের আগমনে সবাই ভড়কে গেলো।
তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরিয়ে গেলো সবাই।এখানে থাকা বিপদ’জন’ক তাদের জন্য।
সবার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ফায়ান মুচকি হাসলো।তারপর ঠাসস করে দরজা লাগিয়ে দিলো।
ওপাশে যারা ছিলো,হঠাৎ শব্দ পেয়ে তারা লাফিয়ে উঠলো।
-দুলাইভাই ডেঞ্জারাস।
**
-দরজা বন্ধ করলেন কেনো?নিশ্চয়ই কিছু খান’নি?আসেন আপনাকে খেতে দেই।অনুষ্ঠান শুরুর অনেক দেরী।
‘ফায়ান কিছু বললো না।আরিমার দিকে এগিয়ে তাকে নিজের সামথে মিশিয়ে নিলো।তার পর এক হাত আরিমার পিঠে রেখে বললো।
-আমার না ভীষণ বউ বউ পাচ্ছে।তাই সব কাজ রেখে তোমার কাছে ছুটে এসেছি বউ।
‘আরিমা হতবাক,কাল রাত থেকে ইনার হয়েছে কি।কি’রকম নির্লজ্জ মার্কা কথা বলছে নেতা সাহেব।
-আপনি দিনকে দিন নির্লজ্জ বে’হায়া নেতা হয়ে যাচ্ছেন।ছাড়ুন আমাকে।ওদের বের করে দিলেন কেনো?কি ভাববে?
-আমি তাদের বের করি’নি।নতুন দম্পতি’কে প্রাইভেসি দিতে হয়।তা তোমার ভেড়ার বাচ্চা’রা জানলেও তুমি জানো না।
-আপনি ছাড়ুন আমাকে।লু’ইচ্চা বেডা।
-আমি লুচ্চা’মো করেছি?
‘ফায়ান এক ভ্রু উঁচু করে আরিমার দিকে তাকালো।
-না করেন নি।ছাড়েন।
‘আরিমা ছুটার চেষ্টা করছে।কিন্তু পারছে না।
‘ফায়ান আরিমা’কে ছেড়ে দিয়ে এক হাত দিয়ে গাল চেপে ধরলো তারপর ডান গালে একটা চুমু দিয়ে সরে এলো।
‘আরিমা ডান গালে এক হাত রেখে হা করে তাকিয়ে আছে ফায়ানের পানে।
‘ফায়ান মুচকি মুচকি হেসে বললো,,
-বউ আরেকটা চু’মু দিবো?এভাবে তাকিয়ে থেকো না।নাহলে চু’মুর ডোজ বেড়ে যাবে।
-অসভ্য,চরম অসভ্য আপনিইইইইইইইই।
‘ফায়ান হাসতে হাসতে ওয়াশরুমে ঢোকে গেলো।
***
-বাহ,বউ’মা তো মাশাল্লাহ।
‘বলেই আরিমার কপালে একটা চু’মু খেলো ফায়ানের খালামনি।
-খালামনি তুমি ওকে চু’মু না দিয়ে আমাকে দাও।
‘মিসেস রুবিনা ফায়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,,
-কেনো?তোকে কেনো চু’মু দিবো?বউমা’কে দিবো।কি সুন্দর দেখতে মেয়েটা।তোর মতো ছা’গ’ল কীভাবে এ’কে পটালো।হ্যা রে, কালো জাদু করিস’নি তো আবার?
-উফফফ খালা’মনি।তুমি বুঝো না কেনো।তোমার বউ’মা’কে চুমু খাওয়ার জন্য আমি আছি।কিন্তু আমাকে চুমু খাওয়ার জন্য কেউ নেই।
‘বলেই মুখটা দুঃখী দুঃখী ভাব করে নিলো ফায়ান।যেনো নিস্পাপ শিশু সে।
এদিকে আরিমা বিষম খেলো।এতক্ষণ সে মুচকি মুচকি হাসছিলো তাদের কাহিনী দেখে,এবার ইচ্ছে করছে এক ঘুসি’তে বৃন্দাবন পাঠিয়ে দিতে ফায়ান’কে।
‘চরম অসভ্য নেতা সাহেব।ভীষণ অসভ্য।
চলবে,,,,
(গঠনমূলক কমেন্ট চাই গাইস)