(রহস্য উন্মোচন,২য় পার্ট)
#লেখনীতে_আরিশা_জান্নাত_আদ্রা
‘কে’টে গেছে বেশ কয়েক মাস।যে যার লাইফ নিয়ে ব্যাস্ত দিন কাটাচ্ছে।পুষ্প নিজ মনে পড়াশোনা করে যাচ্ছে।তার খুশীর সীমা নেই যেনো।
কারণ রামিশা আর রাজ তার সাথেই থাকে।রাজ একটা কোম্পানি’তে চাকরি করে।আসলেই কি তাই?রামিশা যদি একটিবার খোঁজ নিতো তবে কি তার ক্ষতি হয়ে যেতো?এখানেই প্রথম ভুলটা করেছে সে।রামিশা অন্য কোম্পানিতে চাকরি করে।যদিও রাজ বারণ করেছিলো।রামিশা মানে নি।সে নিজ দায়িত্বে বোনের খরচ বহন করবে।অগত্যা রাজও মানা করেনি।
‘আজকে শুক্রবার,তাই সবাই বাড়িতেই আছে।রামিশা জলদি জলদি ঘুম থেকে উঠে খোঁপা করতে করতে রান্না ঘরে ঢুকে গেলো।একটু চা খেয়ে তারপর রান্না শুরু করবে।
‘ঠিক তখনই পিছন থেকে পুষ্প এসে আরিমা’কে জড়িয়ে ধরলো!ঘুম’ঘুম চোখে রামিশা’কে জগিয়ে ধরে আছে পুষ্প।শক্ত করে।যেনো ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে সে।
-কি’রে,এতো সকালে তোর মুখ দেখা যাচ্ছে যে?ব্যালার কি ফুল।
-আপু,তোমাকে নিয়ে বাজে সপ্ন দেখেছি।তুমি আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছো।দেখে নিও কেউ যদি তোমাকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে চায় তাকে আমি মে….
‘বিড়বিড় করছিলো এতক্ষণ পুষ্প,অস্পষ্ট হলেও কথা গুলো শুনতে পেয়েছে রামিশা।পুষ্প ততক্ষণে ফের ঘুমিয়ে কাঁদা।এখন সে একটু নড়লেই রামিশার জায়গা হবে মাটিতে।মানে ঠা’সস করে পড়ে যাবে।
এভাবেও কেউ ঘুমাতে পারে?
‘এখন কি করবে রামিশা।নড়তেও পারছে না।তখনই রাজ এলো।রামিশা যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।
-রাজ!আরু’কে একটু কোলে করে তার রুমে দিয়ে এসো প্লিজ।আমি ময়দা মাখিয়ে ফেলেছি হাতে।আর আমি নড়লেই ও পরে যাবে।
-আমি?
-হ্যাঁ, তুমি তো ওর ভাই হও।সমস্যা নেই।প্লিজ দিয়ে এসো।এভাবে ওর প্রবলেম হচ্ছে।
-যথা’আজ্ঞা রাণী।
‘রামিশা হাসলো,মানুষটা তার সব কথা শোনে।এমনকি তাকে বড্ড ভালোবাসে।রামিশাও তাকে প্রচুর ভালোবাসে।তার জীবনে সুখের কমতি নেই যেনো।মৃ’ত্যুর আগ অব্দি সে এভাবেই দিনাতিপাত করতে চায়।
‘এদিকে পুষ্পকে রুমে শুইয়ে দিয়ে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাজ।বড় বোনের থেকে ছোটো বোনকেই তার কাছে বেশ লাগে।কেনো যে আগে চোখে পরেনি মা’ল টাকে।
‘হঠাৎ রামিশার ডাকে রাজ ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।
তারপর গল্প করতে করতে কাজে সাহায্য করতে লাগলো।এ যেনো এক সুখী পরিবারের সোনার সংসার।
এই সুখ কি বেশিদিন টিকবে?
***
‘বিকেল বেলা সবাই বসে টিভি দেখছিলো।রামিশা উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললো,,
-তোরা বোস!আমি কিছু বানিয়ে আনি তোদের জন্য।
‘পুষ্প টিভির দিকে তাকিয়েই মাথা নাড়ালো।সে বেশ মনযোগী হয়ে ভূতের মুভি দেখছে।
‘কিন্তু হঠাৎ ধ্যান ভাঙলো ধপাস করে কিছু পরে যাওয়ার শব্দে।
‘রাজ আর পুষ্প দৌড়ে রামিশার কাছে গেলো।রামিশা জ্ঞা’ন হারিয়েছে।রাজ ওকে কোলে তোলে বিছানায় নিয়ে এলো।তারপর মুখে পানি ছিঁটাতে লাগলো।মুখে আস্তে আস্তে চ’ড় দিলো।কাজ হচ্ছে না।পুষ্প হাত পা ঢলে দিচ্ছে।তবু জ্ঞা’ন ফিরছে না দেখে পুষ্প এবার কাঁদতে লাগলো।
‘তারা আর সময় ব্যয় না করে রামিশাকে হসপিটালে নিয়ে গেলো।ইমারজেন্সি’তে নিয়ে চেক’আপ করে একটা স্যালাইন দিলেন ডাক্তার।তারপর কেবিন থেকে বেরিয়ে পুষ্প’দের কাছে গেলেন।
-কোনো সমস্যা হয়নি তো আমার ওয়াইফের?
-চিন্তার কোনো বিষয় নেই এখানে।
-জ্ঞা’ন হারানোর কারণ?এরকম তো হয়নি কখনো?
-আরো আগে কি উনি মা হয়েছিলেন?
-ম…মানে?
-উনি মা হতে চলেছেন।প্রেশার লো হওয়ার কারণে একটু সমস্যা হয়েছিলো।স্যালাইন দিয়েছি,আর কোনো বিপদ নেই।রুগী আশঙ্কা মুক্ত।
‘ডাক্তার চলে যেতেই পুষ্প হামলে পরলো কেবিনে।
রামিশা রাজ আর পুষ্পের মতিগতি বুঝছে না।
এমন কি হয়েছে যার জন্য পুষ্পের চোখে পানি?
-রাজ,তুমি মন খারাপ করে আছো কেনো?
আর আরু তুই?এভাবে কাঁদছিস কেনো?
আমার কি বড় অসুখ হলো?
-কি’রে,কথা বল।
আ…আমি কি মা’রা যাবো?
‘পুষ্প রামিশা’কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।আর রাজ বাহিরে চলে গেলো।
-আপু, আমরা তিনজন থেকে চারজন হতে যাচ্ছি।
ছোট্ট বাবুনি আসছে।
‘রামিশা অবাক হয়ে একবার পুষ্পের দিকে তাকালো তো আরেকবার পে’টের দিকে।তারপর মাথা নাড়িয়ে জিগ্যেস করলো সত্যি কি’না?
পুষ্প’ও তার মতো মাথা নাড়িয়ে উৎফুল্লের সহিত সায় জানালো।
-দেখেছো।তোমার কথা শোনে রাগ করে চলে গেছে ভাইয়া।
-ও ঠিক হয়ে যাবে।স্যালাইন শেষ হোক।সেই অব্দি চল বাবুর নাম ঠিক করি।
-চলো চলো
***
‘এদিকে বাহিরে এসে রাজ পায়চারি করছে।সে বেবি নিতে চায়নি।কীভাবে কি হলো।এখন রামিশা’কেও তো মানানো যাবে না।শিট।
-ক’দিনের জন্য ভেবেছিলাম একে ইউজ করে মে’রে দিবো।তারপর আরিমার সাথে ভুলিয়ে ভালিয়ে সংসার করবো।হলো কই?ধ্যাত!
-ইচ্ছে করছে এখনি গিয়ে গ’লা টি’পে মে’রে দিয়ে আসি।শা’লি বাচ্চা নেওয়ার জন্য উঠে’পড়ে লেগেছে।অপেক্ষা কর।বেবি পৃথিবীতে আসুক।
জাস্ট ওয়েট এ্যান্ড ওয়াচ।নিশান্ত রাজ শেখ তার লক্ষ্য বদলাবে না।
***
‘হসপিটালের করিডোরের সামনে পায়চারি করে যাচ্ছে পুষ্প।রাজ একটা সি’টে হেলান দিয়ে বসে আছে।
পুষ্পের কান্ডে সে বিরক্ত।এতো চিন্তা হবার কি আছে।ম’রে গেলে তো ভালোই হবে।সে আরিমা’কে বিয়ে করতে পারবে।তাদের ছোট্টো একটা সংসার হবে।
ভাবতেই মুচকি হাসলো রাজ।
-এ’কি ভাইয়া তুমি হাসছো কেনো?পা’গল হয়ে গেলে নাকি?
‘রাজ চমকিত দৃষ্টিতে তাকালো পুষ্পের দিকে।তারপর বললো,,
-আব…আমি জানি আমার বউ’বাচ্চার কিছুই হবে না।তুমি অযথা টেনশন করছো।দেখি এখানে এসে বসো।
ঘেমে-নেয়ে কি অবস্থা।
-না ভাইয়া মন সায় দিচ্ছে না।
-আরু,তুমি না আমার সব কথা শোনো?হুম?কাম।
‘অগত্যা পুষ্প গিয়ে রাজের পাশে বসলে।সে রাজ’কে ভাইয়ের চোখেই দেখে,এর’চে বেশি কিছু না।
রাজ কিছু বলতে নিবে তখনই নার্স বেরিয়ে আসে।পুষ্প দৌড়ে যায়।তা দেখে রাজ ফোসস করে শ্বাস ফেলে।
-আপনি একটু অপেক্ষা করুন,বেবি নিয়ে আসছে।
-আপু,আমার আপু ঠিক আছে?
-হ্যাঁ সে একদম সুস্থ।
‘পুষ্প স্বস্তির শ্বাস ছাড়লো।
তারপরেই একটা নার্স তোয়ালে প্যাঁচিয়ে একটা ছোট্ট ছানা নিয়ে আসলো।পুষ্প কাঁপা কাঁপা হাতে বাচ্চা’টাকে তার আয়ত্তে নিয়ে নিলো।পাছে না বাবু পরে যায়।
কি সুন্দর বাবু ছোটো ছোটো হাত পা নাড়াচ্ছে।একটু কান্নাও করছে না।
‘পুষ্প খিল’খিল করে হেসে উঠলো।বাচ্চা’টা তার হাসির দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
সবমিলিয়ে রাজ প্রচুর বিরক্ত।কবে হবে আরিমা তার বউ?আরিমা আর তার বাচ্চা’কে সে কোলে তুলতে চায়।
***
কে’টে গেছে বহু’ মাস।বাবুর নাম পুষ্প রেখেছে।তার নাম দিয়ে মিলিয়ে।আরিমার বাচ্চা আরহাম।
রামিশা শুধু হাসে।পুষ্প রামিশা আর আরহাম একসাথেই থাকে।রাজ’কে আলাদা রাখে তারা।পুষ্প কিছুতেই আরহাম’কে ছাড়া থাকবে না।পড়াশোনা তার লা’টে উঠেছে।আরহামের এখন এক বছর।
‘বেশ পাকনা হয়েছে ছেলেটা।সারাদিন আরহাম’কে নিয়েই থাকে সে।কলেজ টাইমে কলেজ করে বাসায় এসে আরহাম’কে কোলে নিয়ে থাকে।আরহাম ঘুমালে তবুও ছাড়ে না।রামিশা টেনে শুইয়ে দিলে পরে উঠে গিয়ে পড়া কমপ্লিট করে।
‘আজ-কাল রামিশা’কে তার চিন্তিত মনে হয়।রামিশার কি কিছু হয়েছে?উত্তর পায় না পুষ্প।ভাইয়ার সাথে ঝগড়া হলো না’তো।
-আপু,,বলো না তোমার কি হয়েছে?কখনোই বলো না তুমি।
‘মুখ ফুলালো পুষ্প।বোন কি তাকে পর ভাবে?
রামিশা হয়তো বোনের মনোভাব বুঝতে পারলো।সে পুষ্পকে জড়িয়ে ধরে বললো,,,
-বোন আমার।আমি তোকে অনেক ভালোবাসি জানিস তো?আমার আরহাম আর রাজকেও অনেক ভালোবাসি।
‘বলতে গিয়ে গলা ধরে আসলো রামিশার।
-আপু?তুমি কিছু নিয়ে কষ্টে আছো?
-না পাখি।মনে হচ্ছে বেশিদিন বাঁচবো না।আমি তোকে কিছু বলি।
-শোন,আমার ছেলেটাকে এভাবেই মায়ের মতো আগলে রাখবি।তাকে কষ্ট পেতে দিস না।
-আপু,,
‘পুষ্পের গলা ধরে আসছে।রামিশার এসব বলার কারণ খুঁজে পাচ্ছে না।
-আমার বোকা ফুল! সারাজীবন বোকা হয়ে থাকিস না।একটু চালাক হয়ে যা বোন।
-আর হ্যাঁ। আজকে তোর ভাইয়ার সাথে একটু বেরোবো। বাবুকে দেখে রাখিস।
-কিন্তু আপু,,কি…
-তেমন কিছু না।তুই এক কাজ করিস।আমার যদি কখনো কিছু হয়ে যায়।তোর আলমারিতে কাপড়ের নিচে একটা ডায়েরি আছে।পড়ে নিস।আসি।রেডি হতে হবে।নইলে তোর ভাইয়া আবার রাগ করবে।
-আচ্ছা।
‘রামিশা চলে গেলো।পুষ্প তখনও তার যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে।মনটা ভালো নেই তার।আপু এসব কি বলে গেলো।তাদের তো সুখী পরিবার।ভাইয়া আর আপু দুজন দুজনকে কতো ভালোবাসে।এখানে আর কি চাওয়ার আছে।
***
‘বিকেল গড়িয়ে রাত হয়ে গেলো।রামিশা আর রাজের খবর নেই।পুষ্প বেশ চিন্তিত হলো এতে।ভাইয়ার সাথে আছে ভেবে কিছু আর ভাবলো না।রাজ রামিশাকে প্রচুর কেয়ার করে।যা পুষ্প নিজ চোখে দেখেছে।
‘আরহাম ঘুমিয়েছে।সে নিজেও পুষ্প বলতে অজ্ঞা’ন।
কিন্তু আপুরা আসছে না দেখে এবার বেশ চিন্তিত হলো পুষ্প।তাদের বিপদ হলো না’তো।
‘তখনই কলিং বেলে’র আওয়াজ হলো।পুষ্প দৌড়ে দরজা খুলতে গেলো।নিশ্চয় আপু এসেছে।আজকে সব জেনেই ছাড়বে।এত কি কষ্ট তার?কি মনে গোপন করে কাতরাচ্ছে?তাকে কেনো বলে না।সে তার সব কষ্ট ম্যাজিকের মতো দূর করে দিবে।
‘দরজা খুলেই রাজকে রক্তাক্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চমকালো পুষ্প।তার বোন কোথায়?
-ভা…ভাইয়া।আপু কোথায়?আ..পনার কি হয়েছে?
-বাহিরে এসো।
-পুষ্প তাড়াহুড়ো করলো না।ধীরেসুস্থে বাহিরে বের হলো।কয়েকজন পুলিশ দাঁড়ানো।তারা একটা ভ্যান গাড়িতে কিছু মুড়িয়ে রেখেছে।পুষ্পের মনে ভয়’রা এসে দানা বাঁধছে।তার বোন কোথায়?
-ভা..ভাইয়া।আপু?
‘রাজ হাত দিয়ে ভ্যানের দিকে ইশারা করলো।তারপর ধপ করে সেখানেই বসে পরলো।
পুষ্প একবার ভ্যানের দিকে তাকালো তো আরেকবার রাজের দিকে।
-আমি ভ্যা.. নে কেনো দেখবো?আমার আপু ও..খানে কেনো থা…কবে?
-আরু।তোমার আপু আর নেই আরু।আমাকে মাফ করো।তাকে আমি বাঁচাতে পারিনি।আমি আসার আগেই সব শেষ।
-মানে?কি বলেন এসব আপনি?
-আমরা একটা রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলাম। ভেবেছি খাওয়া দাওয়া করেই চলে আসবো।আমি অর্ডার দিতে গিয়েছিলাম এসে দেখি রামিশা নেই।হন্তদন্ত হয়ে রেস্টুরেন্টে থেকে বেরিয়ে কিছুদূর জটলা দেখতে পেলাম।দৌড়ে সেখানে গিয়ে দেখলাম,রামিশার পুড়া মৃত’দেহ।
‘বলেই কাঁদতে লাগলো রাজ।
পুষ্প বাকরুদ্ধ। সে কি রিয়েকশন দিবে ভেবেই পাচ্ছে না।তার বোন যে কিনা তাকে চোখে হারায়।যে তাকে না দেখে এক”দিন কাটাতে পারতো না।যাকে দেখলে তার বোন সারাদিনের ক্লান্তি ভুলে যেতো।সেই পুষ্প’কে না দেখে রামিশা থাকবে কীভাবে?
‘পুষ্প ধুপ করে মাটিতে বসে পরলো।সে কিছুই ভাবতে পারছে না।তার দুনিয়া অন্ধকার।
এতো কাছের মানুষ হারানোর কষ্ট কখনোই উপলব্ধি করেনি সে।বুকে জ্বালাপোড়া হচ্ছে।চোখ ঝলসে যাচ্ছে।
যে তার পুরো দুনিয়া।যাকে ছাড়া সে শূণ্য। সেই আপু।সেই আপু নাকি নেই।কতো ক’ষ্ট পেয়ে মা’রা গেছে।পুড়িয়েছে কেউ তার বোনকে।
‘হাত পুড়লেই যেই জ্বালা করে।সেখানে তার বোনের সারা শরীর পুড়েছে।কেমন লেগেছে আপুর কাছে?অনেক কষ্ট?তার ফুলকে হয়তো ডেকেছে রামিশা?তার যন্ত্রনার ব্যাখ্যা দিতে চেয়েছিলো?কিন্তু রামিশার ফুল যে আসলেই বোকা।সে টের পায়নি।তার বোন মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটফট করছে।
‘পুষ্প উঠে দাঁড়ালো।দৌড়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে রান্না ঘরে প্রবেশ করলো।হঠাৎ পুষ্পকে চলে যেতে দেখে রাজও ছুটলো।রান্না ঘর থেকে আওয়াজ পেয়ে সে সেদিকে গেলো।
-পাগল হয়ে গেছো তুমি?এভাবে হাত পুড়াচ্ছো কেনো?
‘পুষ্প এবার গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে উঠলো।রাজের কলার ঝাঁকিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগলো,,
-ও আমার সারা পৃথিবী।আমার ভালো খারাপের দুনিয়া।তাকে ছাড়া আমি বেঁচে থাকাকে ঘৃণা করি।আমার বোন সে।আমার মায়ের পরে দ্বিতীয় মা।আমাকে বাবা-মা’র অভাব বুঝতে দেয়নি সে।আমাকে কষ্ট ছুঁ’তে দেয়নি।
-কি করলি তুই তাকে কি করলি?দেখে রাখতে পারলি না?আমার বোনকে দেখে রাখতে না পারলে নিয়ে গেলি কেনো?আমাকে এতিম কেনো করলি তুই?জানিস না ও ছাড়া আমার আর কেউ নেই।তুই আমার বোনকে খু’ন করেছিস। তোকে আমি ছাড়বো না।
আমার হাসি’খুশি বোনটাকে নিয়ে গিয়ে ত..তুই এ কাকে ফিরিয়ে আনলি?কাকে আনলি তুই?বল
‘রাজ বাকরুদ্ধ।আরিমা কোনোভাবে তাকে সন্দেহ করছে না’তো?রাজ কিছু বলার আগেই পুষ্প রাজের বুকে ঢলে পরলো।রাজ যেনো স্বস্তির শ্বাস ছাড়লো।মেয়েটা বড্ড বাজে বকে।
***
‘রামিশা’কে দাফন দিতে নিয়ে যাবে।পাড়া প্রতিবেশী সবাই হাজির হয়েছে।
মেয়ে দুটো’কে তারা ভালো ভাবে চিনে।বিশেষ করে রামিশা।কি কষ্ট করেই না বোনটাকে বড় করলো।
যেই স্বামী সন্তান নিয়ে সুখের মুখ দেখলো।আল্লাহ মেয়েটাকে তোলে নিলো?সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা নেই তাদের।
-আরু মা।যা বোনকে দেখে আয়।একবারের মতো।আর যে দেখার ভাগ্য হবে না।
-চাচি,তুমি বেশি কথা বলো।একটু অপেক্ষা করো তো।আপু আসবে।কিছুই হয়নি তার।
-একটু তো কাঁদ মা।জ্ঞা’ন ফিরার পর থেকে অযথা তর্ক করছিস?
-আরে মিতুর মা।বুঝতে পারছো না?মেয়েটা যে অকালে সব হারালো।
‘দুজনেই মুখে আঁচল চেপে কাঁদতে লাগলো।তা দেখে পুষ্প বেশ বিরক্ত হলো।
হঠাৎ কোথা থেকে রাজ এসে পুষ্পের হাত টেনে ধরে বাহিরে খাটিয়ার কাছে আনলো।
-একবার দেখে নাও আরু।
‘পুষ্প ভ্রু কুঁচকে রাজের দিকে তাকিয়ে খাটিয়ায় থাকা রামিশার ক্ষত’বিক্ষত আদলের দিকে তাকালো।
যে কেউ তাকাতে পারবে না।পুড়ে যাওয়ার কারণে মুখ বুঝা যাচ্ছে না।এলো’থেলো হয়ে গেছে।
পুষ্প প্রাণ ভরে বোনের নিষ্পাপ মুখশ্রীটা দেখে নিলো।
তারপর কিছু একটা ভেবে দৌড়ে নিজ রুমে ছুটলো সে।
তারপর দরজা বন্ধ করে দিলো।
‘সবাই এসে দরজার কাছে ভীড় জমালো।মেয়েটা কিছু করে বসবে না’তো?
(আসসালামু আলাইকুম,সবাই গঠনমূলক কমেন্ট করবেন,,)