#লেখনীতে_আরিশা_জান্নাত_আদ্রা
‘ওরে ও রিকশা ওয়ালা,তুই ধীরে ধীরে চালা,
আজ বলবো তোকে মনে কতো জ্বালা।
‘ওরে ও রূপের মাইয়া,আমায় গরীব মানুষ পাইয়া,তুই বাঁকা চোখে থাকোস কেনো চাইয়া।
‘ঘরে আমার নাই তো আপন মা,সৎ মায়ে তো দুঃখ বুঝে না।
লেখা পড়া কম তো করি নাই,কর্ম দোষে তবু রিকশা চালাই।
-এটা বাদ,আবার নতুন করে শুরু করি।
‘ফারহা’র কথায় আফরিদ ‘আচ্ছা’ বলে ঘাড় নাড়ালো।
‘প্রেমেরি জ্বরে মরছি কেঁপে,দাও না মুখে থার্মোমিটার।
দেখো আমার জ্বর’টা মেপে।উঠে যে গেছে সাড়ে তিন চার।
কোন ডাক্তার এ জ্বর সারাবে।
পরেছি অসুখে,অল্প বয়সে।
তবে কি ভালোবেসে প্রাণ’টাও যাবে।
যাবে,যাবে।
-ধ্যাত্তি’রি’কি,এগুলা গান হলো?ফাউল কোথাকার।
‘আরিমা’র কথায় ফারহা নাচ থামিয়ে দিলো,সবাই আরিমা’র দিকে তাকিয়ে আছে।এগুলো গান না’তো কি?
-ভাবি,আপনি একটা গান বলুন,পুরাতন গান।আমাকে ডেডিকেট করে গাইবেন কিন্তু।
‘সাহিত্যের কথায় আরিমা ঠোঁট কামড়ালো,সে গান ভাবছে।হঠাৎ তার মাথার বুদ্ধি খোলে গেলো।
লাফিয়ে উঠলো আরিমা।
-এক সেকেন্ড, তোমরা এখানেই অপেক্ষা করো।আমি জাস্ট পাঁচ মিনিটে আসছি।
‘বলেই আরিমা ছাদ থেকে নেমে নিজের রুমে চলে গেলো।সবাই একজন আরেকজনের মুখ চাওয়া’চাওয়ি করছে,আরিমার মাথায় কি চলছে কে জানে।
‘আরিমা ফিরে এলো,পরনে তার একটা কাপড়,যেটার নিচে মোটা লাল রঙের পাড় দেয়া।আর বাকি সম্পুর্ন অংশ সাদা।শাড়ি’টা আগে’কার দিনের মহিলা’দের মতো পরেছে,কোনো কুঁচি নেই।
-বাড়ির পাশে বেতের আড়া,
হাল জুইরাছে ছোট্ট দেওরা রে,,
এতো বেলা হয় দেওরা মোর পান্তা খাই’না আইসা রে।
-জৈষ্ঠ্য’মাসে আম পড়ে,টাপুর’টুপুর শব্দ করে রে,
দেওরা আমার আম টুকাইয়া রাখে আমার,ঘরে রে।
-দেওরা আমার বাজারে যায়,,রাস্তার মাঝে বাঘের ভয়’ও রে,,
দেওরা’রে মুই কিইন্না দিমু,ময়ূরপঙ্খি ঘোড়া রে।
-স্বামী আর যেমন-তেমন,দেওরা আমার মনের মতন রে,,,
দেওরা ম’রলে হইমু পা’গ’ল হইমু দেশান্তরি রে,।
(গান পারি না,পুরাতন গান আরো না,হালকা ট্রাই করলাম)
‘সবাই এক’সাথে চিল্লিয়ে উঠলো,আরিমা নাচ থামিয়ে হাঁপাতে লাগলো,তারপর সবাই’কে থামিয়ে বললো,,,
-আরে,এতো লাফাচ্ছিস কেনো তোরা?সাহিত্য ভাইয়া আমার দেবর না,ভাই লাগে ভাই।
-আমরা জানি,তাই বলে একটু মজা করতে পারবো না?
-কঁচুপোঁড়া,সর যা,উনি যদি এসে দেখেন আমি এভাবে রঙ’ঢং করছি,আমাকে আছা’ড় দিবেন।
-ওই যে তোর উনি,দেখ।
‘আরিমা খেয়াল করে’নি যে ফায়ান তার পিছু পিছু ছাদ অব্দি চলে এসেছে।সে ফায়ান’কে দেখেই’নি।
আরিমা ফায়ানের দিকে তাকিয়ে হাসবে না কাঁদবে বুঝে উঠতে পারছে না।বেচারা মুখ ফুলিয়ে রেখেছে।আরিমা হালকা ঢোক গিললো,তারপর বললো,,,
-দেওরা আমার যেমন তেমন,,স্বামী আমার মনের মতন রে,স্বামী ম’র’লে হমু পা’গ’ল হমু দেশান্তরি’রে।
‘বলেই ফায়ানের পাশ কাটিয়ে দৌড়ে চলে গেলো সে।দু হাত দিয়ে শাড়ি খামচে ধরে দৌড়াচ্ছে আরিমা।পাছে না আবার শাড়ি খুলে পরে যায়।
‘আরিমার যাওয়ার দিকে একবার তাকিয়ে ফায়ানও নিচে নেমে এলো।এদিকে বাকিরা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
-আরুর পারফরম্যান্স কিন্তু সেই ছিলো।
‘বলেই সাহিত্য ফিক করে হেসে দিলো তার সাথে তাল মিলিয়ে বাকিরাও হেসে যাচ্ছে।
***
‘আরিমা যখন ফারহা’র রুমে এসেছিলো,তখন দেখলো ফারহা ওপাশ ফিরে দাঁড়িয়ে আছে,শরীর মৃদুৃ মৃদু কাঁপছে।সে ফারহা’র পিছনে দাঁড়িয়ে বললো,,
-রাজ’কে ভুলতে পারিস’নি?
‘ফারহা এবার উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো,আরিমা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো,মহিলা পা’গ’ল হলো নাকি?
-কি’রে?এভাবে পা’গ’লের মতো হাসছিস কেনো?
-আমি রাজ’কে কবে ভালোবেসেছি?
-মানে?
-ওসব কিছু করেছি ছা’গ’লটার এটেনশন পাওয়ার জন্য।
-তার’মানে তুই নাদিম’কে বিয়ে করতে রাজী?
-আবার জিঙ্গায়।(জিগাই)
‘সাথে সাথে বন্ধুমহলের সকলে হৈ’হৈ করে উঠলো,কারণ তারাও আরিমার পিছু পিছু এসেছিলো।ফারহা কি করে দেখার জন্য।
-তুই আমার ভাবি হবি?এই তুই রান্না পারিস তো?
-এই এই,সম্মান দে আমায়,তোর ভাবি লাগি।
-এখনো হোস’নি।
-হুহ্,হয়ে যাবো।চল ছাদে গিয়ে খানিক নাচানাচি করি।
‘সবাই চিল্লিয়ে উঠলো,,
-ইয়েএএএএএএএএএ।
***
‘আরিমা ঘরে ঢুকার সাথে সাথে ফায়ানও ঢুকে গেলো।আরিমা যে’’ই ওয়াশরুমের দিকে ছুটবে ফায়ান তার আঁচল হাতে চেপে ধরে একটা টান দিলো,যার ফলশ্রুতিতে আরিমা’র পিঠ এসে ফায়ানের বুকে ঠাঁই পেলো।
‘আরিমা হাঁপাচ্ছে,ভীষণ’ভাবে হাঁপাচ্ছে।ফায়ান খালি তার বউয়ের গতি’বিধি দেখে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে উনি রাজ্যের কাজ করে এসেছেন।এতক্ষণ তো আ’কা’ম করলো।
‘ফায়ান কিছু বলতে নিবে তার আগেই আরিমা বলে উঠলো,,
-আপনার কাছে আর্জি আছে আমার একটা।
‘ফায়ান একপাশে ঘাড় কাত করে আরিমার দিকে সম্পুর্ন দৃষ্টি দিলো।
আরিমা পর’পর কয়েকটা ঢোক গিললো,,কি ধারালো সেই দৃষ্টি।
-কয়টা লাগবে?
‘ফায়ানের কথায় আরিমা ভ্রু কিঞ্চিৎ উপরে তুললো।
-কি কয়টা লাগবে?
-বাচ্চা।
‘আরিমা কটমট দৃষ্টিতে ফায়ানের দিকে তাকালো,তা দেখে ফায়ান ফিক করে হেসে দিলো।আরিমা শান্ত কন্ঠে শুধালো,,,
-আমি চাই,অতি’দ্রুত আপনি নাদিম আর ফারহা’র বিয়েটা দিয়ে দিন।
‘ফায়ান কিছু একটা ভাবলো,তারপর বললো,,
-আচ্ছা,কিন্তু আমার একটা প্ল্যান আছে।
-কি প্ল্যান?
-কালকে ওদের আকদ হবে,পরে ধুমধাম করে সবাইকে জানিয়ে আবার বিয়ে দিবো।
‘আরিমা লাফিয়ে উঠলো,
-তাহলে তো শপিং করতে যেতে হবে,ছাড়ুন আমায়।
-মহিলা’দের খালি শপিং আর শপিং,জামাইয়ের দিকে খেয়াল নেই না?জামাই যে বউ’হীনতায় ভুগছে।
-কেনো আপনার বউ মা’রা গেছে?
‘ফায়ান রক্তচক্ষু নিয়ে তাকালো আরিমার দিকে।
আরিমা হালকা ঢোক গিলে সন্তর্পণে আঁচল ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
ফায়ান সেদিকে তাকিয়ে মুখ বাঁকিয়ে হাসলো।
-কতোই দূরে যাবে বউ?দিন’শেষে এই নেতা সাহেবের বুকে’ই তোমার ঠাঁই নিতে হবে।
কালকে আছে তোমার জন্য চমক।সইতে পারবে তো?
***
-ভাইয়া,
‘সাহিত্য সিগারেট ফুঁকতে ব্যাস্ত ছিলো,হঠাৎ আরিমা’র আগমনে সে হকচকিয়ে গেলো।
-তুই কখন এলি।
‘আরিমা কিছু বললো না।ধীর পদে সাহিত্যের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
-আচ্ছা ভাইয়া,তুমি তো বিদেশ থাকতে আমাকে কল দিয়ে খোঁজ নিতে তাইনা?
-হ্যাঁ নিতাম।
-তুমি আমার খোঁজ কীভাবে পেলে?তাও আপুর মৃ’ত্যুর পর?
‘সাহিত্য আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো,,
-আজকে তোকে একটা সত্যি কথা বলবো।
‘আরিমা উৎসুক দৃষ্টিতে তাকালো।
সে শুনতে আগ্রহী।
-আমি রাশি’কে ভালোবাসতাম,সেই ছোটো’বেলা থেকেই।ভেবেছিলাম আরো বড় হবো যখন,তখন কাকিমা’কে বলে রাজি করাবো,কিন্তু আমার মা এই ব্যাপারে কোনো’ভাবে জেনে যায়।
এরপর অনেক বকা’বকি করে আমাকে।কসম কাটায়,যেনো আমি রাশির আশেপাশে না থাকি।উনার ভাবনা,এতে দু জা’য়ের সম্পর্কে ফা’টল ধরতে পারে।
-আমিও সহ্য না করতে পেরে বিদেশে চলে যাই।ভেবেছি সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস অব্দি থাকবো।আমি যদি জানতাম,রাশির সাথে এরকম
হয়ে যাবে,কখনোই ওকে ছেড়ে যেতাম না।
-আর তোর খোঁজ পেয়েছি আমার এক বন্ধুর থেকে,তোকে ছোটো’কালে অনেক’বার দেখেছে,তাই সে হালকা চিনতে পেরেছিলো।
আমি জানতাম তোরা মা’রা গেছিস।
পরে তার মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি তুই বেঁচে আছিস।তারপর তোর সাথে সক্ষ্যতা করলাম।
বাকিটা জানিসই তো।
‘আরিমা কিছুক্ষণ থম মে’রে দাঁড়িয়ে থাকলো।সাহিত্য’ তো কম কষ্ট পায়’নি।হায়রে ভালোবাসা,কেউ পেয়েও পায়’না।আবার কেউ পাওয়ার পরে মাটিতে ছুঁড়ে মা’রে।
প্রিয় ভালোবাসা,
তুমি হলে সর্বনাশা!
তুমি বয়ে আনো খুশী, আনন্দ হাসি!
আবার কারো জন্য হও ফাঁসি!
তবুও প্রিয় ভালোবাসা,
তোমাকে বেশিই ভালোবাসি
***
‘ফারহা ধ্যান ধরে তার গ্যালারি ঘাটছে,এখানে অর্ধেকের বেশি’ই নাদিমের ছবি।
রাজের সাথে যখন যখন সাক্ষাৎ হতো,তখনই সে কাছে’পিঠে নাদিম’কে দেখতে পেতো।লোকটা কি আদৌও জানে,সে ফারহা’র মনে কতোটুকু জায়গা করে নিয়েছে?
‘ভাবতেই লাজুক হাসলো ফারহা।ইশশ,কাল তার আর নাদিমের বিয়ে।নাচতে ইচ্ছে করছে।
আহ্ আমার ভালোবাসা।
চলবে,,,,,
আমার নেতা সাহেব পর্ব ৩১ (অন্তিম পর্বের প্রথম অংশ)
#লেখনীতে_আরিশা_জান্নাত_আদ্রা
‘সারা বাড়িতে হুল’স্থুল কান্ড,আজ যে সৌহার্দ্য ফায়ান খানের একমাত্র বোনের বিয়ে তা লোকজন’কে জানাতে হবে না?
‘শুধুমাত্র আকদ না করিয়ে রেখে একেবারে’ই তোলে দিবে ফারহা’কে।বড় বড় নেতা’রা নিম’ন্ত্রি’ত।কনস্টেবল থেকে শুরু ডিআইজি সবাই উপস্থিত,হাতে গুনা কয়েকজন সনামধন্য রিপোর্টা’ররাও আছে।এদেরকে ফায়ান নিজে গিয়ে ইনভাইট করে এসেছে।
‘সবাই যে যার মতো রেডি হতে গেছে,কাল রাতের মধ্যে অনেক লোক লাগিয়ে বাড়ি’টা জাঁকজমক ভাবে সাজানো হয়েছে।ফায়ানের বোনের বিয়ে বলে কথা।
***
-আরে,রে আমার মেকআপ’টা করা হয়নি,এই ফারহা,আমাকে মেকআপ’টা করে দে না।
-এই তুই কি পা’গ’লা?যার বিয়ে সে না সেজে তোকে সাজাবে?এতো সেজে কি হবে?বিয়ে কি তোর?
‘বেলা রেগে অগ্নি’শর্মা হয়ে তাকালো মনিরের দিকে।মনিরও কিড়’মিড়িয়ে তাকিয়ে আছে।দেখেই বুঝা যাচ্ছে আজকে এদের মাঝে হবে,(মানে ঝগড়া)
-রাগ করিস না বেলা,জানিস তো ও তোর পিছে লাগে,আমার কাছে আয় দেখি।
‘বেলা নাক সিট’কে সিমরানের কাছে চলে গেলো।পরে মনির’কে দেখে নিবে।
এদিকে মনির আর আফরিদ,অসহায় ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে,মানে এদের সাজ শেষ হচ্ছে না,নিচে কখন নিয়ে যাবো কনে’কে
তখনই শুভ হাঁপাতে হাঁপাতে এলো,।মনে হচ্ছে কুত্তা’দৌড় দিয়েছে।
-কি’রে কুত্তা’র মতো এক হাত জিভ বের করে হাঁপাচ্ছিস কেনো?Anything wrong?
-দোস্ত,,,সর্বনাশ হয়ে গেছে।
‘আরিমা ওয়াশরুম থেকে বের হতে হতে বললো,,
-কার সর্বনাশ করে এলি?
‘সবাই গোল গোল দৃষ্টি’তে আরিমার দিকে তাকিয়ে আছে,বিশেষ করে শুভ।
-আমি কারো সর্বনাশ করি’নি,কেউ আমার সর্বনাশ করেছে।
‘সবাই মাথায় হাত দিলো,
-বলবি তো কে তোর কি সর্বনাশ করেছে।
-Love at first sight হয়েছিলো,,,,,,,
‘’বলেই ঠা’সস করে মাটি’তে আঁছড়ে পরলো শুভ।সবাই তাকে ধরাধরি করে তুললো।
তারপর একযোগে বলে উঠলো,,
-তারপর?????
-কাছে আমি গিয়া দেহি ওইডা কোনো মাইয়া না,ওইডা হলো ভার্সিটির এক ফুচকা’ওয়ালা মামা।
‘সবাই ফিক করে হেসে উঠলো,হাসতে হাসতে একজন অপরজনের উপর হেলে-দুলে পরে যাচ্ছে।শেষে কি’না ফুচকা ওয়ালা মামার প্রেমে।
-আজকের দিনেও এমন না করলে নয়?বোনকে নিতে পাঠিয়েছি,আর তোমরা পা’গ’লের মতো হাসছো?
‘হঠাৎ ফায়ানের আগমনে সবাই চুপ হয়ে গেলো,কিন্তু মনে পরতেই হাসি থামাতে পারছে না,মুখ টিপে হাসছে।কিন্তু আরিমা আর ফারহা হাসি থামাতেই পারছে না,সদ্য কাজল আঁকা চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরছে।তবুও থামে না।
‘ফায়ান এক পলক দুজনকে দেখে নিলো,
আহ্,রূপ যেনো ঠিকরে পরছে।
‘ফায়ান এগিয়ে এসে আরিমা আর ফারহা’র হাত দুটো দু’হাতে ধরে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো,
বাকিরা সাথে সাথে আবার ফিক করে হেসে উঠলো,এদিকে শুভ রাগে গজরাতে গজরাতে ফায়ানের পিছু পিছু বেরিয়ে গেলো।এদেরকে পরে দেখে নিবে।
***
‘সবাই সিঁড়ির দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।ফায়ান মাঝ’খানে,যে কি’না বরাবরের মতোই সাদা পাঞ্জাবী পরে আছে,তবে আজকে উপরে একটা সোনালী রঙের কটি পরেছে,এটাই পার্থক্য। তার বাম পাশে আরিমা,যার গায়ে সোনালী রঙের একটা সিল্কের শাড়ি।হাত ভর্তি সোনালী রঙের চুড়ি,মাথায় হিজাব করা।
ডান পাশে হলো বিয়ের কনে,একটা ভারী কাজের সুন্দর মেরুন রঙের লেহাঙ্গা পরে আছে।সে নিজেও আজকে মাথায় হিজাব প্যাঁচিয়েছে।
হাতে মেরুন রঙের থোকা ধরা চুড়ি।দুজনের কপালেই টিকলি স্থান পেয়েছে।
‘এক কথায়,তিনজন’কেই অপরূপ সুন্দর লাগছে,
ফায়ান দুই হাত দিতে দুজন’কে ধরে নিচে নামলো,তারপর ফারহা’কে তার নিজ আসনে বসিয়ে দিলো,সাথে সাথে ছয় ভেড়ার ছানা তাকে ঘিরে ধরলো,তারা এখানে দাঁড়িয়েই তার বান্ধবীর বিয়ে দেখবে।
‘বেচারা নাদিম উশ’খুশ করছে প্রেয়সী’কে এক পলক দেখার জন্য। কিন্তু সে তো ফায়ানের মতো হতে পারছে না।তাই মনো‘বাঞ্ছা’টা চাপা দিয়ে রাখলো সে,বাসর ঘরে’ই নাহয় দেখবে।
‘এদিকে কাজী এসেছে বিয়ে পড়াবে।
মেয়েরা হালকা পিছু সরে গেলো,সেখানে ফায়ান,ফিরোজ আর জাভেদ,তিন খান এসে বসলো,কিন্তু সাহিত্য’কে পাওয়া যাচ্ছে না।
‘তখনই সাহিত্য এসে হাজির হলো,যার পরনে একটা কালো রঙের ঢিলে’ঢালা শার্ট।বেশ মানিয়েছে তাকে।
‘ফারহা’কে কবুল বলতে বলছে কাজী,কিন্তু সে চুপ করে বসে আছে।কথা বলছে না।
-ফারু,কবুল বলবি নাকি বিয়ে ভেঙে দিবো?
‘সবাই হকচকিয়ে গেলো, ফারহা নিজেও চমকে তাকালো ফায়ানের দিকে।সে কি একটু সময়ও নিতে পারবে না?
-বলবি?নাকি বিয়ে ভেঙে দিবো?
-কবুল,,
‘সবাই চেঁচিয়ে উঠলো,আর বেচারি ফারহা তার বড় ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে,তার ভাই এতো আজব কেনো?
এদিকে নাদিমও মুখ চেপে হাসছে।
বড্ড অস্বস্তি’কর পরিস্থিতি।
***
-লেডিস এন্ড জেন্টে’লম্যান,আমি সৌহার্দ্য ফায়ান খান আজকে আপনাদের সাথে কিছু কথা বলতে চাই।আপনাদের কিছু জানাতে চাই।
‘সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে ফায়ান’কে দেখছে,আরিমা আরহাম’কে কোলে নিয়ে ফায়ানের কাছে চলে গেলো,কারণ ফায়ান বার’বার হাতের ইশারায় তাকে ডাকছে।আর কতো উপেক্ষা করবে সে?
‘আরিমা যেতেই ফায়ান আরহা’মকে কোলে তোলে নিলো,তারপর আবার বলতে লাগলো।
-আমি আজকে আপনাদের যা বলবো আর যা দেখাবো,তা হয়তো আপনাদের ধারনার বাহিরে হবে।
‘এই বলে ফায়ান আরিমার হাতে একটা পেন’ড্রাইভ ধরিয়ে দিলো,আরিমা গিয়ে সেটা টিভি’তে সেট করে দিলো।
খান ভীলার ড্রইংরুমে’র টি’ভিটা বেশ বড় বলা চলে,তাই যে কেউ-ই নির্ভেজালে দৃশ্য দেখতে পারবে।
‘আরিমা রিমোট এনে ফায়ানের হাতে ধরিয়ে দিলো,ফায়ান ভিডিও অন করেই একপাশে সরে এলো,যাতে করে সবাই দেখতে পারে।কোনো অসুবিধে না হয়।
‘আরিমা নিচের দিকে তাকিয়ে নখ দিয়ে টাইলসে খুটছে,সে আর এসব দেখতে পারবে না,বুকের ভিতর হুঁ হুঁ করে।সহ্য হয়’না তার।রামিশার ব্যাপার’টা মাথা’চাড়া দিয়ে উঠে।
‘কমিশনার যেনো লাফ দিয়ে উঠলো,তার বিশ্বস্ত অফিসার’কে কি’না রায়হান শেখ মে’রেছে?কিন্তু তাকে ধরবে কীভাবে,সে তো পলাতক।এটা কোনো’ভাবেই মানা যায় না।
‘তারপর আরেকটা ভিডিও অন হলো,যেটাতে রামিশার দৃশ্য। বাড়ির সকলের চোখ পানি’তে টই’টুম্বুর।ছয় ভেড়ার ছানা’রা থেমে থেমে কাঁদছে।শব্দহীন কান্না।এই ভরা মজলিসে এমন কেউ নেই যার চোখে রামিশার জন্য পানি নেই।
‘আর সাহিত্য?সে তো এক কোণে গিয়ে বার’বার দেয়ালে হাত দিয়ে বারি দিচ্ছে।তার কলিজা মোচড় দিচ্ছে।তার ভালোবাসার মানুষ কি’না এভাবে মা’রা গেছে?ছিহ্, সে কেমন প্রেমিক’পুরুষ।
‘আরিমার কানে এসে বাক্য’টা আবার এসে বারি খেলো,এমনকি বেশ কয়েকবার।
-আমার বোকা ফুল,ভালোবাসি বোন।
‘এবার আরিমা আর কন্ট্রোল করতে পারলো না ঝর’ঝর করে চোখর পানি ছেড়ে দিলো,ভিতরে তার পুঁড়ছে।সে আর দমিয়ে রাখতে পারলো না নিজেকে।সেখানেই বসে পরলো।
চিল্লিয়ে কাঁদছে মেয়েটা,লোকে কি বলবে সেটা তার দেখার বিষয় না।তার কষ্ট হচ্ছে,দম বন্ধ লাগছে এটাই বড় বিষয়।আর এক সেকেন্ড সে চুপ হয়ে থাকলে দম বন্ধ হয়ে মা’রা পরবে।
‘ফায়ান আরহাম’কে সোনালীর কোলে দিয়ে এখান থেকে যেতে বললো,বেচারা আরহাম তার মাম্মা’মের কান্না দেখে অস্থির হয়ে উঠছে।
তাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে মোহনা আর সোনালী সেখান থেকে খানিক দূরে গিয়ে দাঁড়ালো।
-প্লিজ,নিজেকে সামলাও বউ। এভাবে ভেঙে পরতে নেই।
‘আরিমা কেঁদেই যাচ্ছে।থামার নাম-গন্ধ নেই।লোকে বুঝছে না কেনো কাঁদছে সৌহার্দ্য ফায়ান খানের ওয়াইফ?কিন্তু মেয়েটার কান্না তাদের ভিতরে দাগ কা’টছে।
‘শেষে ফায়ান আরিমা’র কাঁধ ধরে ঝাঁকি দিলো,যাতে সে সম্বিত ফিরে পায়।কিন্তু আরিমা তাতে চেঁচিয়ে উঠলো,,,
-আমার বোন’টা কি দোষ করেছিলো বলতে পারেন নেতা সাহেব?কি করেছিলো সে,শুধু একটু ভালো’বাসা,ভালো থাকা কামনা করেছিলো। আমার বোনটা বড্ড অবুঝ ছিলো নেতা সাহেব।
সে শুধু আমার ভালো’টাই বুঝে এসেছে সবসময়।ফিরিয়ে দিন না।আমার বোনকে এনে দিন’না নেতা সাহেব।সে একটু ভালো’ভাবে বাঁচুক।
আমার বোন’টা একটু ভালো’ভাবে বাঁচুক নেতা সাহেব।
‘সবাই বুঝে নিয়েছে,আরিমা আর রামিশা দুজনেই আবিদ আর আশালতা’র সন্তান। সবার বুক চিঁড়ে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।আহারে বেচারি বোনটা অকালে মা’রা পরলো।
‘জিসান আর দিশা দিয়াজ’কে কোলে নিয়ে চোখ থেকে পানি বিসর্জন দিচ্ছে।ফারহা হেঁচকি তোলে কাঁদছে।নাদিম অসহায় দৃষ্টি’তে সেদিকে তাকিয়ে আছে।নিশাতেরও অবস্থা নাজে’হাল।
ভেড়ার ছানাদের তো কথায় নেই।
‘ফায়ান আর না পেরে আরিমা’কে ধমক দিলো।
-একটু যদি থামতে তাহলে কিছু বলতে পারতাম।
‘আরিমা অশ্রুসিক্ত পল্লবে ফায়ানের দিকে তাকালো,ফায়ান চোখ বন্ধ করে বড় বড় শ্বাস ফেলার মাধ্যমে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করছে,সে এভাবে তার বউকে দেখতে পারছে না,তার বউ থাকবে হাসি’খুশি,দেখলেই যেনো চু’মু দিতে ইচ্ছে করে,আর এ কীভাবে অবলা নারীর মতো কাঁদছে,মনে হচ্ছে জামাই ম’রেছে।
-তো আমি আরো’কিছু বলতে চাই আপনাদের।
-আজ থেকে কয়েক’বছর আগে,বোনকে নিয়ে সিলেট ঘুরতে গিয়েছিলাম।কারণ বোন জেদ ধরেছিলো সে সিলেট ঘুরে আসবে,আমিও না করতে পারিনি।সেদিন সন্ধ্যায় আমি বোন’কে নিয়ে একটা ক্যাফে’তে বসে ছিলাম।
Flashback
‘সন্ধ্যা গড়িয়ে গেছে,ফারহা’র এখানে বসে থাকতে বেশ বিরক্ত লাগছে,কারণ সে এক জায়গায় বসে থাকার মেয়ে না।বেশ চঞ্চল প্রকৃতি’র মেয়ে ফারহা।সে তার ভাইকে ডেকে উঠলো,,
-ভাইয়া,চলো বের হই এখান থেকে ভালো লাগছে না আর।
‘ফায়ান বোনের সব আবদার পূরণ করতে তৎপর। তাই সে নাদিম’কে সাথে নিয়ে ফারহা’র সাথে বেরিয়ে এলো ক্যাফে থেকে।বলে রাখা ভালো যে,নাদিম ফায়ানের সাথে বহু বছর যাবত আছে।
‘একটা নিরিবিলি জায়গা ধরে হাঁটছে তারা তিনজন,ফারহা আগে আগে লাফাচ্ছে,নাদিম আর ফায়ান পিছনে কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে,কিন্তু দৃষ্টি তার ফারহা’র দিকে।কয়েকবার ধমকও দিয়েছে।কাজ হয়নি।
-ভাইয়া আইস’ক্রিম খাবো প্লিজ,না করো না।প্লিজ।আমি তোমার হাতেই আইসক্রিম খাবো,তুমি আনবে যাও না।
‘ফায়ান দীর্ঘশ্বাস ফেললো,,
-নাদিম,বোনকে দেখে রেখো আমি আসছি।
‘’ফায়ান আইসক্রিম নিয়ে অর্ধেক পথ আসতেই ফারহা’র চিৎকার শুনতে পেলো,আইসক্রিম সেখানে ফেলে রেখেই ছুটলো ফায়ান।
বোনকে অচেতন অবস্থায় দেখে বেশ ঘাবড়ালো ফায়ান।কি হলো বোনের?
-স্যার,আমি ম্যাম’কে গাড়িতে উঠিয়ে পাশে থাকা হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছি।আপনি প্লিজ ওই মেয়েটাকে দেখুন,তাকে পুড়াচ্ছিলো কিছু লোক।
‘ফায়ান সায় জানালো,তারপর দৌড়ে গেলো মেয়েটার কাছে,ফারহার হাতে পানির বোতল ছিলো সেটা ছোঁ মেরে ফায়ান নিয়ে গিয়ে যথা সম্ভব আগুন নিভিয়ে দিলো।
‘সেরকম পুঁড়ে’নি।শাড়ি’টা মোটা হওয়ার দরুন সেরকম শরীর পুঁড়তে পারে নি।তাপ লাগার কারণে আত’ঙ্কে জ্ঞা’ন হারিয়েছে মেয়েটা।
মেয়েটার মুখটা চেনা চেনা লাগলো ফায়ানের।বেশি না ঘেটে কোলে তোলে নিলো সে।তারপর গাড়িতে বসিয়ে দুজন’কে হসপিটালের উদ্দেশ্যে নিয়ে গেলো।
‘দুর্ভাগ্য বসত সেখানে কিছুক্ষ’ণ পরেই ব্লাস্ট হয়।যার ফলে কিছু মানুষ মা’রা যায়।সেখানে থেকেই একজনের লা’শ রাজ রামিশা বলে চালিয়ে দেয়।
Flashback and
‘সবার মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে,কি হলো পরে?ছয় ভেড়ার ছানা হা করে তাকিয়ে আছে।সবার এক অবস্থা।
‘ফায়ান কাউকে উদ্দেশ্য করে বললো,,
-রাশি,তুই তোর বাড়িতে সাচ্ছন্দ্যে প্রবেশ করতে পারিস।
‘তারপর আরিমা’র দিকে তাকিয়ে চোখ মা’রলো ফায়ান,ঠোঁট কামড়ে হাসছে সে।কেমন দিলো সে বউকে,আজকে নির্ঘাত তার বউ খুশী হয়ে তাকে দুই তিনটে চু’মু দিবে।ভাবতেই ফায়ানের মনটা খুশীতে নেচে উঠলো।
‘রামিশা সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করলো,পরনে কালো রঙের একটা শাড়ি,পাথর গুলো’তে লাইটিং এর আলো পরে ঝিকমিক করছে।মাথায় হিজাব প্যাঁচানো,মুখে অমায়িক হাসি।
‘’আরিমা কথা বলতে ভুলে গেছে,চুপ করে অশ্রুসিক্ত পল্লবে রামিশার দিকে তাকিয়ে আছে,মুখে কোনো কথা নেই।দৃষ্টি নড়’চড়ও করছে না।
‘এটা তার বোন?যাকে সে আবার স্পর্শ করতে পারবে?যার বুকে মাথা রেখে আবার ঘুমাতে পারবে?যার সাথে রাত জেগে গল্প করতে পারবে?
আরিমার শরীরে কম্পন ধরে গেছে।এটা তার বোন?
‘রামিশা সোজা আরিমা’র কাছে এগিয়ে এলো,তারপর আরিমা’র সামনে হাটু মোড়ে বসলো।আরিমার গালে এক হাত ছুঁয়ে বললো,,
-আমার বোকা ফুল,কেমন আছিস বোন।
‘আরিমার শরীর দুলে উঠলো,সে কাঁপা’কাঁপা হাতে রামিশার পুরো মুখ ছুঁয়ে দিলো।তারপর কাঁপা’কাঁপা কন্ঠে বুলি আওড়ালো,,
-আ…আমার বো…ন?
‘রামিশাও অশ্রুসজল নয়নে মাথা নাড়ালো।
আরিমা আবার বললো,,
-আ…আমি,ছুঁ…তে পার…ছি?
‘আরিমা কথা বলতে পারছে না,গলা ধরে আসছে।শুধু মুখ নাড়াচ্ছে সে,কথা গুলো ভিতরেই রয়ে যাচ্ছে। সে দুই হাত দিয়ে বোন’কে আঁকড়ে ধরে গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে উঠলো।দুজনেই হাউমাউ করে কাঁদছে।তাদের কান্নায় চারপাশে মানুষজনের সাথে মনে হয় খান ভীলার ইট পাথর গুলোর বুকটাও যেনো হুঁ হুঁ করে উঠছে।
-আমার বোন,আমার বোন ফিরে এসেছে,কোথায় ছিলে তুমি এতদিন।জানো কতো কষ্ট পেয়েছি আমি?তোমার বোকা ফুল অনেক কষ্টে ছিলো তো!তুমি এতো পাষাণ কীভাবে হলে আপু?
‘রামিশা আরিমার চোখে মুখে চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিলো,তারপর আবার বোনের মাথা’টা বুকের সাথে চেপে ধরলো।
দুজনের বক্ষ’স্থলেই যেনো শান্তির প্রজাপতি ডানা ঝাপড়াচ্ছে।এতো শান্তি, আরাম ক’বছর পায়নি তারা।
চলবে,,,,
#আমার_নেতা_সাহেব
#অন্তিম_পর্ব
#লেখনীতে_আরিশা_জান্নাত_আদ্রা
‘প্রত্যূষের আলো ফোঁটার সাথে সাথে আরিমা জেগে গেলো,তারপর চোখ কচলাতে কচলাতে বিছানা ছেড়ে উঠে পরলো।প্রতিদিন’কার মতো খোপা করতে করতে চারপাশে তাকালো।
‘ফারহা’র রুম দেখে খানিক স্তম্ভিত হলেও পরক্ষণে সব মনে পরাতে খাটের দিকে তাকালো সে।যেখানে রামিশা আরহাম’কে বুকে জড়িয়ে ঘুমোচ্ছে।শান্তির ঘুম।কি জানি এরকম ভাবে কবে থেকে ঘুমায় না তার বোনটা।
‘আরিমা গিয়ে এক পাশ থেকে রামিশা’কে জাপটে ধরলো।আহ্ কতোদিন পরে মা মা গন্ধ পাচ্ছে।চোখ বুজে জোরে শ্বাস টানলো সে।বেশ ফুরফুরে লাগছে এবার।
‘আরিমা আরহাম আর রামিশার কপালে চুমু দিয়ে বেরিয়ে এলো,অনেক রাত করে তারা ঘুমিয়েছে।দু বোন মিলে আজকে অনেক গল্প করেছে।এতো যে ভালো’লাগছে তার।
‘’আরিমা যেই রুমের সামনে গেলো,ফায়ান হেঁচকা টান দিয়ে তাকে ভিতরে নিয়ে এলো,আরিমা হকচকিয়ে গেলো।পরক্ষণেই রাজ্যের রাগ ভর করলো তার মাথায়।
আরিমা ফায়ানের গেঞ্জি’র কলার ধরে জোরে টান দিলো ,
-আমাকে আগে কেনো বলেন নি?খুব ভালো লাগে না আমাকে কষ্ট দিতে?সবাই আমাকে কষ্ট দেন,কি পেয়েছেন কি আমায়?
‘ফায়ান আরিমার হাত সহ তাকে জড়িয়ে ধরলো,তারপর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,,
-বউ,বুঝতে পারছো না।রাশির অনেক জায়গায় ক্ষ’ত হওয়ার জন্যে ওকে বিদেশ নিতে হয়েছিলো,কয়েক’মাস আগেই সে সুস্থ হয়ে ফিরেছে।
‘আরিমা শান্ত হলো,তারপর কিছু মনে হতেই ফট করে ফায়ানের দিকে তাকালো সে।
ফায়ান ঠোঁট কামড়ে বললো,,
-তুমি যা ভাবছো আমিও তা’ই ভাবছি।
-তাহলে হয়ে যাক?
-ইয়েস,তার আগে একটা চু’মু দাও।
-দেখি সরেন,ফ্রেশ হয়ে আসি।ফারহা’কে কল করতে হবে।
-আমি কল দিয়েছিলাম,ফারহা ঘুমোচ্ছে।
-আচ্ছা,ছাড়ুন এবার।
‘ফায়ান ছাড়লো না,বরং নিজের সাথে আরো নিবিড় ভাবে মিশিয়ে নিয়ে কপালে গাঢ় চুম্বন এঁকে দিলো।তারপর রাস্তা থেকে সরে দাঁড়ালো।আরিমা দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো।ফায়ান ফিক করে হেসে উঠলো।
-নেতা সাহেব,আপনার গলার তিল’টা অনেক সুন্দর।ইচ্ছে করে কামড়ে খেয়ে ফেলি।
‘বলেই ফায়ানের মুখের সামনে দরজা থ’রা’ম করে বন্ধ করে দিলো আরিমা।এদিকে ফায়ান হা করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবার ফিক করে হেসে দিলো,তারপর এক হাত দিয়ে ঘাড় ডলতে ডলতে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ঘুরে ঘুরে নিজেকে দেখতে লাগলো।”নাহ্,সৌহার্দ্য ফায়ান খান দেখতে মাশাল্লাহ। বলেই হেসে দিলো ফায়ান,পরক্ষণেই মুখমণ্ডল গম্ভীর করে বেরিয়ে এলো রুম থেকে।
‘আরিমা আবার দরজা বন্ধ করে হেসে দিলো,এতক্ষণ দরজা ফাঁক করে ফায়ানের কর্মকান্ড গুলো দেখছিলো সে।
“আমার নেতা সাহেব বড্ড পাগল।
***
‘নাদিম সোফায় বসে ফারহা’র দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে।সে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ফারহা’কে দেখছে,গোল’গাল ফর্সা চেহারা,মায়াবী চোখ,হালকা টনটনে নাক,সব মিলিয়ে পারফেক্ট।ফারহা অবশ্য অনেকটা ফায়ানের মতোই দেখতে হয়েছে,দেখেই বুঝা যাবে দুই ভাই’বোন।একদম কার্বন’কপি।
‘কিন্তু ফারহা কাল রাত থেকে যে ঘুমোচ্ছে।আর উঠার নাম নেই।এসেই ঘুমিয়েছে মেয়েটা।
আর কতো ঘুমোবে?নাদিম গালে হাত দিয়ে ফারহার দিকে তাকিয়ে আছে।মেয়েটা তাকে বড্ড টানে।
-আমাকে দেখা শেষ হলে এদিকে আসুন,আমি ফ্রেশ হবো,আমাকে টেনে তুলুন।
‘ফারহা চোখ বন্ধ রাখা অবস্থায় কথা’টা বলে উঠলো,নাদিম হকচকিয়ে গেলো,ফারহা দেখে ফেলেছে কি?ইশশ লজ্জার বিষয়।
-উঠাবেন না আমাকে?
‘নাদিম উঠে গিয়ে ফারহা’র হাত ধরলো,ফারহা হেঁচকা টানে নাদিম’কে বিছানায় ফেলে দিয়ে তার উপরে শুয়ে পরলো জাপটে ধরে।
বেচারা নাদিম হা হয়ে গেছে,অদ্ভুত ভালোলাগা’য় জাপটে ধরেছে তাকে।তার ভালোবাসার মানুষ তার বুকে?
‘নাদিম মুচকি হেসে ফারহা’কে দুই হাত দ্বারা আগলে নিলো,এদিকে ফারহাও তার অগোচরে মুচকি হাসলো।তারপর আরেকটু নিবিড়
‘ভাবে নাদিম’কে জড়িয়ে ধরলো,এ যেনো এক সুখ’কর অনুভূতি।
***
-মাম্মা,এই আন্টি’টাকে চেনা চেনা লাগে আমার।
‘আরহামের কথায় চমকালো রামিশা,তাকে চিনে মানে?
-কীভাবে চিনো বাবা?উনি তোমার আন্টি না,তোমার আম্মু।
-আম্মু?
-হ্যাঁ,আমাকে মাম্মাম ডাকবে আর উনাকে আম্মু ডাকবে ঠিকাছে?
-ঠিকাছে মাম্মাম,আম্মু আমাকে কোলে নাও।
‘বলেই দু হাত বাড়িয়ে দিলো আরহাম,রামিশার বুকটা ধ’ক করে উঠলো,কতো বছর পর ছেলের মুখের ডাক শুনতে পেলো সে।
আরহাম’কে কোলে তোলে নিলো রামিশা।তারপর চু’মু দিতে দিতে বললো,,
-এইতো বাবা,আম্মু কোলে নিয়েছে।আমার চাঁদ সোনা।
‘আরহাম চুপটি মেরে রামিশার গলা জড়িয়ে ধরে আছে,যেনো কতো আরাম পাচ্ছে ছেলেটা।
-আম্মু,তোমার শরীর থেকে সুন্দর ঘ্রাণ আসছে একটা।কি সুন্দর। মা মা ঘ্রাণ।
‘আরিমা মুচকি হেসে বললো,,
-এতোদিন আমি মা মা ঘ্রাণ পেয়েছি,এবার তুমি সহ ভাগ নিতে এলে বাবাই?
‘বলেই হেসে দিলো আরিমা,রামিশাও হাসছে,দুজনের হাসি দেখে আরহামও খিল’খিল করে হেসে দিলো।তিনজন সমান তালে হেসে যাচ্ছে।যেনো সুখী পরিবার একটা।
***
-নে,সই কর।
‘ফায়ানের কথায় সাহিত্য অবাক হলো ভীষণ,
-কি হলো?কর সই।
-কিসের পেপার ভাইয়া এটা?
-তোর সব সম্পত্তি নিজের নামে করে নিবো তাই সই চাচ্ছি,ছা’গ’ল কোথাকার।
‘সাহিত্য আর না ঘেটে সই করে দিলো,সাথে সাথে ফায়ান টা’ন দিয়ে পেপার’টা নিয়ে নিলো,তারপর সামান্য ঝেড়ে একটু পরোখ করে নিলো।
সব ঠিকাছে।
‘তারপর রামিশার কাছে গেলো ফায়ান,খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বাড়ির সবাই লিভিং রুমে আড্ডা দিচ্ছিলো।এর মাঝে ফায়ানের আগমনে ভড়কালো তারা।
এ-সময় ফায়ান বাসায় থাকে না তেমন।
-শোন রাশি,আমি তোকে কিছু বলতে চাই।
‘রামিশা একবার আরিমা’র দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ালো।
-দেখ,তুই এখনো বেশ ছোটো,সবকিছু শেষ হয়ে যায় নি।কারো জন্যে থেমে থাকবি না তুই।নিজের মতো করে বাঁচতে হবে তোর।যে তোকে ধো’কা দিয়েছে তার কথা আর মনে করবি না।জীবন নতুন’ভাবে শুরু কর।
‘’একটু থেমে আবার বললো,,
-তোর বিয়ে ঠিক করেছি আমি।
‘আরিমা ছাড়া সবাই চমকালো,রামিশা নিজেও চমকেছে।অশ্রসিক্ত নয়নে সে ফায়ানের দিকে তাকালো।কি করবে সে?কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।আরিমা রামিশার এক হাত ধরে বললো,,
-দেখো আপু,সব কিন্তু শেষ হয়ে যায় নি।আবার সব মানুষ কিন্তু সমান না,রাজ কখনো তোমাকে ভালোবাসে’নি আপু,তুমি ভে’ঙে পরলে সে জিতে যাবে।তুমি লড়ো,লড়াই করে যাও,আমি আছি,আমরা আছি তোমার পাশে।সব আবার নতুন’ভাবে শুরু করো।
‘রামিশা অবাক হয়ে আরিমা’র দিকে তাকালো,তার বোকা ফুল চালাক হয়ে গেছে।
-কিন্তু ভাইয়া,আমি কেনো অন্যকারো জীবন ন’ষ্ট করবো?এই অধিকার আমার নেই।
-ন’ষ্ট করবি মানে?
-আমার মতো পুঁড়া কপালি একজন’কে কে নিজের সঙ্গী হিসেবে নিবে?আমি কি আদৌও কারো ঘরণী হবার যোগ্যতা রাখি?
-আপু,বেশি বাজে বকবে না।ভাইয়া তোমাকে ছোটো’বেলা থেকেই ভীষণ ভালো’বাসে।
-মানে?
-হ্যাঁ সাহিত্য তোকে ছোটো থেকেই ভীষণ ভালোবেসে এসেছে।আমিই তাকে নিষেধ করেছি বিধায় সে দেশ ছেড়েছিলো।সেই থেকে আমার ছেলেটা আমার সাথে কথা বলে না’রে মা।
‘সোনালী কাঁদতে লাগলেন,ছেলের অবহেলা সে সহ্য করতে পারে না।কষ্ট হয়।
-নে সই কর।
-এটা কি?
-সই কর আগে, বলছি,
‘রামিশা না পড়েই সই করে দিলো।
‘ফায়ান আর আরিমা বিশ্বজয়ের হাসি দিলো।তারপর গলা ঝেড়ে বললো,,
-তো,তুই আর সাহিত্য আজকে থেকে লিগ্যাল হাজবেন্ড ওয়াইফ।আশা করি আমার বউকে নিয়ে আর তোর কাছে রাখবি না।আমার বউ ছাড়া ঘুমাতে সমস্যা হয়।আর হ্যাঁ,আমার ভাই তোকে সুখী’ই রাখবে।দেখে নিস।
-আম্মু,সাহিত্য ঠিক’ই আছে,খালি তোমার সাথে অভিমান করেছিলো।রাতে বিরিয়ানি করিও ওর জন্য, দেখবে সব ঠিক।
***
‘’সাহিত্য যেনো বিশ্বাস-ই করতে পারছে না রামিশা তার রুমে।রামিশাও বেশ বিপাকে পরলো।সন্ধ্যে বেলাতেই আরিমা তাকে একটা শাড়ি পরিয়ে এই ঘরে দিয়ে গেছে,কেমন লাগে?কিছু বলতেও পারছে না সে।খালি হাত মোচড়াচ্ছে।
-রাশি,,
‘’সাহিত্যের সামান্য ডাকেও কেঁপে উঠলো যেনো রামিশা,এতো দরদ মিশিয়ে কেউ ডাকতে জানে নাকি?
‘সাহিত্য এক পা দু পা করে রামিশার দিকে এগিয়ে গেলো,তারপর তার এক হাত নিজের হাতের মুঠোয় ভরে নিলো।রামিশা এতে বেশ চমকালো।
-আমাকে ছুঁবে না,
‘সাহিত্য ভ্রু কিঞ্চিৎ বাঁকিয়ে শুধালো,
-কেনো ছুঁবো না?তুই কি আমার বউ না?
‘বউ’ শব্দ’টা শোনে রামিশার চারপাশ ভালো’লাগায় ছেয়ে গেলো,সুখ’কর অনুভূতি’রা ডানা মেলছে।নিজেকে ধাতস্থ করে সে বুলি আওড়ালো,,
-আমার শরীরে অন্যকারো……,
‘বাকিটা আর বলতে দেয়’নি সাহিত্য,সে কন্ঠে ক্রোধ মিশিয়ে বললো,,
-খবরদার, ওই জা** কথা আমার সামনে যদি বলেছিস।
‘রামিশা মাথা নিচু করে নিলো,তখনই এক ফোটা তরল পদার্থ টপ করে মাটিতে পরে গেলো,
সাহিত্য এবার এগিয়ে এসে রামিশার মাথা’টা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলো।
-আমি তোকে ভালোবাসি আমার রাশি,তুই আমার কাছে যেমন ছিলিস,সেরকম’ই আছিস।আর সারাজীবন তেমন’ই থাকবি।কোনো নর’পশুর জন্য মন খারাপ করবি না,এতে আমি ক’ষ্ট পাবো।আমার পবিত্র স্পর্শ দিয়ে তোর মাঝের সকল খারাপ স্পর্শ’কে দূর করে দিবো।তুই আমার রাশি একান্ত’ই আমার।তোর ভাগ আমি দুনিয়ার কাউকে দিতে রাজি নই।একবার যে’ই ভুল করেছি।সেটা আর দ্বিতীয়’বার করবো না।
ভালোবাসি আমার রাশি।
‘রামিশা পরম শান্তি’তে সাহিত্যের বুকে মাথা এলিয়ে দিলো,যে’ই দাবানল এতো বছর যাবত নিচের মাঝে পুষে রেখেছিলো আচমকা সব নিভে গেলো।পরম শান্তি,আর ভরসা এসে হানা দিলো মনে।এই স্থান’টা’ই চায় তার।একটু শান্তির জন্য। ভালো থাকার জন্য।
***
‘ফারহা নিজের রুমের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে,বাহিরে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে,সাথে বাতাস বইছে।এইতো বিকেলে আরিমা আর ফায়ান গিয়ে তাকে নিয়ে এসেছে,সাথে অবশ্য আফরিদও এসেছে।বেচারা কি বাসায় একা থাকবে নাকি?
-কি ব্যাপার,ঘুমোবে না?
-জামাইয়ের আদর ছাড়া ঘুম আসে না’কি?
‘নাদিম ভড়কালো,মেয়েটা তার বড় ভাইয়ের মতোই ঠোঁট’কাটা হচ্ছে না’কি?তাহলে তো সর্বনাশ।
-চলো,এসো ঘুমাবে।
‘ফারহা কথা না বলে উল্টো ঘুরে নাদিমের গলা আঁকড়ে ধরে,সে বড্ড অভিমান করেছে,তার জামাই তাকে একটা চু’মু অব্দিও দেয় নি।কি নিরামিষ লোককে পছন্দ করেছে সে?
-আপনি আমাকে ভালোই বাসেন না।
‘ফারহা’র অভিমানী কন্ঠে নাদিম মুচকি হাসলো।
-বাসি তো,আমার বউকে আমি অনেক ভালোবাসি।এই এতো এতো ভালোবাসি।
‘ফারহা খুশীতে লাফিয়ে উঠলো।
-তাহলে চুমু দিন,
‘বলেই গাল এগিয়ে দিলো ফারহা,নাদিম হেসে দিলো।তারপর ফারহার গাল নিজের দুই হাতে ভরে নিয়ে পর’পর কয়েকটা চুমু খেলো ফারহা’র কপালে,ফারহা মৃদু কেঁপে উঠে নাদিম’কে জড়িয়ে ধরলো,নাদিমও নিজের বউ’কে বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখলো,যাতে কেউ তাকে ছিনিয়ে নিতে না পারে।শেষ নিঃশ্বাস অব্দি এভাবে থাকতে চায় সে।
***
‘আফরিদ মশা মা’রছে আর ভাবছে,তাকে বিয়ে করিয়ে দিলে এমন কি হতো?এবার নিজেকে বড্ড শূণ্য শূণ্য লাগছে।বেলা আর মনির,শুভ তো সারাদিন টাঙ্কি’ই মা’রে।সিমরান আর সে’ই খালি আছে।
-চাচ্চু,আমি ওয়াশরুমে যাবো।
-হ্যাঁ বাপ চল,চারপাশে সব জোড়া জোড়া,মাঝখানে আমি কপাল পুঁড়া।
-আমিও।
‘আফরিদ ফিক করে হেসে দিলো,তার সাথে আরহামও হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে,টুং করে একটা ম্যাসেজ এলো আফরিদের নাম্বারে।
-নিজেকে সিঙ্গেল ভাবা বন্ধ কর,তোর জন্য আমি সিমরান’ই যথেষ্ট।এবার আমাদের বিয়ে ঠিক কর।সবাই এক বাসাতেই থাকবো।ফের ম্যাসেজ দিবি না।আমি ঘুমাবো,গুড নাইট হবু বর।
‘আফরিদ ঠোঁট কামড়ে হাসলো,যাক এতদিন ঘুরিয়ে শেষমেশ সিমরান রাজি হয়েছে।
আরহাম’কে বিছানায় ছুঁড়ে মে’রে দুজন দু’জন’কে জাপটে ধরে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো।
শান্তি আর শান্তি।
***
-বউ,একটু আদর দাও না।
-উফ,বেশি বিরক্ত করলে কিন্তু আমি আরহামের কাছে চলে যাবো।ঘুমাতে দিন না।
‘ফায়ান ঠোঁট ফুলিয়ে পাশ ফিরে গেলো,সে আর বউয়ের কাছে ফিরবে না।নতুন বউয়ের ব্যবস্থা করতে হবে, এটা আদর করে না।
পরক্ষণেই ফায়ান ভাবলো,,না না,তার বউ যদি আবার অন্যকাউকে বিয়ে করে নেয়?না না,এটা সে মানতে পারবে না,তার আদর তাকেই আদায় করতে হবে।সে পুরুষ মানুষ হুম।
‘ফায়ান পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে আরিমা নেই।দ্রুত উঠে বসলো সে,তার বউ গেলো কই।ছোটো মুরগীর বাচ্চার মতো বউটাকে কি শেয়ালে নিয়ে গেলো?
‘তখনই ওয়াশরুমের দরজা খট করে খুলার শব্দ হলো।ফায়ান হা করে আরিমার দিকে তাকিয়ে আছে,আরিমা জর্জেটের কালো রঙের একটা শাড়ি গায়ে জড়িয়েছে,একদম মানিয়েছে তার গায়ে।ফায়ানের ঘোর লেগে যাচ্ছে।গভীর মায়া’য় ডুব দিতে ইচ্ছে করছে।
‘সে এক পা এক পা করে আরিমার দিকে এগিয়ে গেলো,আরিমা সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে।নড়া’চড়া করছে না।ফায়ান গিয়ে আরিমা’র পিঠে হাত দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো তাকে।আরিমার চুলে নাক ডুবিয়ে ঘ্রাণ নিলো ফায়ান।
‘আরিমা দু হাতে ফায়ানের গলা আঁকড়ে ধরলো,তারপর ফায়ানের গলায় থাকা লালচে তিল’টাতে নিজের নরম ঠোঁট বসিয়ে দিলো,ফায়ান আরিমা’র কোমর দু হাত দিয়ে চেপে ধরলো।
‘আরিমা ছিঁটকে সরতে গিয়েও সরতে পারছে না।ফায়ান তাকে ছাড়ছে না।
-আগুন লাগিয়ে দিয়ে পালানো হচ্ছে?
উঁহু,মিসেস খান,আজকে আপনার ছাড় নেই।
‘ফায়ানের একেক’টা কথা কেমন যেনো শোনাচ্ছিলো,আরিমা শত চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারলো না নিজেকে,তাই সে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলো।ফায়ান মুচকি হেসে আরিমার কপালে একটা চু’মু এঁকে দিলো,তারপর ঘাড়ে নিজের মুখ ডুবিয়ে দিলো,আরিমা ফায়ানের চুল আঁকড়ে ধরলো।
‘চোখ বন্ধ করে নিয়েছে মেয়েটা,থাক,আজ আর সে নেতা সাহেব’কে বাঁধা দিবে না।
‘ফায়ান আরিমা’র তিঁর’তিঁর করে কম্পমান ঠোঁটের দিকে এগিয়ে গেলো,দুজনের নিঃশ্বাস তাদের চোখে মুখে এসে বারি খাচ্ছে।
আরিমা কম্পিত স্বরে বলে উঠলো,,
-ভালোবাসি,আমার নেতা’ সাহেব।আপনি শুধু একান্তই আমার নেতা সাহেব আর কারো না।আমার নেতা সাহেব।
‘ফায়ান মুচকি হেসে বললো,,
-ভালোবাসি বউ,খুব বেশিই ভালোবাসি।
‘বলেই আরিমার ঠোঁটে নিজের পুরুষালী ঠোঁট চেপে ধরলো ফায়ান।হয়ে যাক আজ নতুন অধ্যায়ের সূচনা।ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হোক দুটি মন।
‘বেস্ট অফ লাক ফায়ান”আমার পক্ষ থেকে
(অবশেষে আমার দ্বিতীয় গল্প শেষ হলো,,এতো এতো ভালো লাগছে আমার।আবার আরিমা আর ফায়ানের জন্য খারাপও লাগছে,শেষ হয়ে গেলো গল্প’টা অতিদ্রুত,,আজকে সবাই মন্তব্য করে যাবেন,গল্পটা কেমন ছিলো)