®মেহরুমা নূর
★আদ্রিতার প্রেমে পড়ার রেশ কাটতে বেশি সময় লাগলো না। উল্টো তার আপসোস হচ্ছে সে আস্ত একটা দৈত্য দানবের প্রেমে পড়ে নিজের এত্তোসুন্দর হৃদয়ের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঠেলে দিলো। বেচারি আমার হৃদয় টা! তার সাথে কত্তবড় জুলুম করলাম! এখনতো প্রেমে পড়া থেকে আর টেনে উঠানও সম্ভব না। আদ্রিতার এই মনোভাবের পরিবর্তন হয় নিবিড়ের পড়া নামক নির্দয় অত্যাচারের কারণে। সামনে এক্সাম আসতে চলেছে তার। আর এটা নিবিড় ভাইয়া যেন বেশিই সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছে। বইয়ের স্তুপ আদ্রিতার ছোট্ট মস্তিষ্কে পাহাড়ের মতো চেপে দিয়েছে। আদ্রিতা বেচারির অক্কা পাবার যো। এক্সাম এতো সিরিয়াসলি নেওয়ার কি আছে! এক্সামইতো! এক আসবে, এক যাবে। তাই বলে নিজেকে এভাবে অত্যাচারীত কোনো মানে হয়!
গত একঘন্টা যাবৎ এই অত্যাচারের শিকার হচ্ছে আদ্রিতা।প্রো লেভেলের অতিষ্ঠ হয়ে গেছে সে। তার সামনের চেয়ারে বসা দৈত্য দানবকে কীভাবে বুঝাবে তার এখন মোটেও পড়াশোনার মুড নেই। মাত্র নতুন নতুন প্রেমে পড়েছে। কোথায় এলোমেলো বাতাসে শাড়ির আঁচল উড়িয়ে নেচে নেচে গান গাইবে। কিন্তু আপসোস আদ্রিতার মনের মানুষ টা রোমান্টিক শাহরুখ খান না৷ কাঠখোট্টা, বদরাগী আর একরোখা স্বভাবের দৈত্য দানব একটা। এইযে এখন কেমন লর্ড গভর্নরের মতো সামনে বসে আছে।আদ্রিতাকে পড়তে দিয়ে নিজে ওর সামনে পায়ের উপর পা তুলে বসে, কোলের উপর ল্যাপটপ রেখে কাজ করছে। মনে হচ্ছে বিশাল রাজ্যের কোন মহারাজ সে। মহারাজইতো, আদ্রুতার মনের একমাত্র মহারাজ। আদ্রিতা পড়াশোনা চুলোয় দিয়ে টেবিলে কনুই ঠেকিয়ে গালে হাত দিয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে অবলকন করছে সম্মুখের সুদর্শন পুরুষটিকে। ল্যাপটপে মননিবেশ করে আছে সে নির্দয় পুরুষটি। পিয়ানো বাজানোর মতো ল্যাপটপের কিবোর্ডে আঙুলের ছন্দ চালাচ্ছে। মাথার মসৃণ রেশমের মতো চুলগুলো ফ্যানের বাতাসে কপালের উপর উড়ছে নিজ স্বাচ্ছন্দ্যে। গালের খোঁচা খোঁচা দাড়িগুলোর উপর মাঝে মধ্যে আঙুল ঘষছে। আদ্রিতা হাতে গাল ঠেকিয়ে সবকিছু গভীর ভাবে পর্যবেক্ষন করছে। তাকে দেখছে আর লম্বা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছে। ভারী নিঃশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে নিঃশ্বাসের টাঙ্কি খালি হয়ে যাবার যোগাড়। তার মনে হচ্ছে এই লোকটা এতো সুদর্শন হয়ে ঘোর দণ্ডনীয় অপরাধ করেছে। এতো সুদর্শন হওয়ার দায়ে তাকে অন্ধকার কারাগারে নিক্ষেপ করা উচিত। যে কারাগারের একমাত্র জেলার হবে আদ্রিতা নিজে।আদ্রিতা পুলিশের পোশাকে আর নিবিড় ভাইয়া তার কয়েদি। হায়য়….! ভাবতেই কতো ফ্যান্টাস্টিক ফিলিং হচ্ছে।
আদ্রিতার ফ্যান্টাসি জগতের উপর এক বালতি গরম পানি ঢেলে দিলো নিবিড়।আদ্রিতাকে এভাবে পড়া বাদ দিয়ে গালে হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখে নিবিড় দাঁত চিবিয়ে ধমকে উঠে বলল,
“এই বেয়াদ্দব! পড়া কমপ্লিট না করে এভাবে হা করে বসে আছিস কেন? কর্ণফুলী নদীর টানেলের এক্সিট-টা কি তোর মুখের ভেতর দিয়ে বের করতে চাচ্ছিস? এই তুই সত্যি করে বলতো তুই কি আদৌও মানব প্রজাতিতে পরিস, নাকি কচ্ছপ প্রজাতি থেকে উঠে এসেছিস? বছরের সেরা ঘ্যাঁচরের এওয়ার্ড টা নেওয়ার জন্য বুঝি এতো মেহনত তোর? সেটাতো এমনিতেও পাবি। জন্মগত ট্যালেন্টের পুরস্কার না পেয়ে কই যাবি।দ্য বেস্ট বলদি এওয়ার্ড গোস টু মিস আদ্রিতা শাহরিয়ার।
আদ্রিতার প্রেমের তরী ঠাস করে উল্টে ডুবে গেল পঁচা পানিতে। হৃদয়ের নতুন প্রেমের টগবগে তেলে ভাজতে থাক মালপোয়া গুলো একেবারে পুড়ে কয়লা হয়ে গেল। বিরহ, এখন শুধুই। এই বিরহে এখন রোমান্টিক গানের বদলে স্যাড সং গাইতে ইচ্ছে হচ্ছে। বাংলা সিনেমার নায়িকাদের মতো খোলা চুলে ঝড় বৃষ্টি-বাতাসের রাতে আঁচল মাটিতে টেনে নিয়ে যেতে যেতে গান গাচ্ছে, ♬ কারে দেখাবো মনের দুঃখ গো আমি বুক চিড়িয়া, অন্তরে দুঃখেরই অনল জ্বলে রইয়া রইয়া। এই বিরহের আগুনে পুড়তে পুড়তে আদ্রিতা পড়ায় আবারও মনোনিবেশ করার চেষ্টায় নিয়োজিত হলো। কিন্তু খুব একটা হতে পারছেনা। তার মনের মানুষ টা এতো কঠোর তা যতবারই মনে পড়ছে ততবারই দুঃখে কলিজার ভেতর ডোবা-নালা হয়ে যাচ্ছে। আদ্রিতার মাথায় হুট করে এক গভীর প্রশ্নের উৎপত্তি ঘটালো। তার মনের অনুভূতির মালিকতো নিবিড় ভাইয়া। কিন্তু নিবিড় ভাইয়ার অনুভূতির কোথাও কি আমি আছি! সে-ও কি আমাকে নিয়ে ওভাবে ফিল করে! প্রশ্ন টা মস্তিষ্কে হানা দিতেই ভাবনারা এলোমেলো ছুটতে লাগলো। যার দরুন হৃদপিন্ড ছটপট করছে। বইয়ের এই এই কালো কালো অক্ষরগুলো মহিষের মতো শিং বের করে যেন গুতো দিতে ছুটছে। কি ভয়ংকর অবস্থা! আজ আর পড়ালেখা হবেনা। তার এখন এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে নাহলে চলবেনা। কিছুতেই না।
__
আর্টবোর্ডে কারোর চোখের ছবি আঁকছে নূরান। পূর্ণ মনোযোগ তার নিজ কাজে।যেন মনের সকল অনুভূতি তার এই নয়নচিত্রে।আজ আর ব্রাশ ব্যবহার করছেনা। আর্টবোর্ডের সামনে হাঁটুগেড়ে বসে হাতের আঙুলে রঙ লাগিয়ে হাত দিয়েই আর্টবোর্ডে আঁকছে কারোর হরিণী আঁখি যুগল। নূরানের চোখে ছেয়ে আছে এক শীতল মোহনতা।চেহারায় এক প্রশান্তির আবহ বিদ্যমান। আঁকান শেষ করে হাঁটু গেড়ে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সেই আঁখি যুগল পানে। চোখে তার মুগ্ধতার রেশ। আর্টবোর্ডের আঁখি চিত্রে চোখ রেখে মনে মনে সে আওড়াল,
“তোমার চোখের ভাষা আফ্রিকান না চাইনিজ তা জানি না। তবে ও চোখের ভাষা পড়তে আমি ইচ্ছুক। ও চোখের গভীরতায় আমি সিক্ত হতে ইচ্ছুক। খুব করে ইচ্ছুক। এই ইচ্ছুকতা আমার উপর অনেক বেশি ভারী হচ্ছে। বশ করছে আমার আয়ত্ত রেখাকে।”
হাতের রঙ মুছে উঠে দাঁড়াল নূরান। মাথার লম্বা চুলগুলো আবারও ঠিক করে হেয়ার ব্যান্ড দিয়ে বেঁধে নিয়ে বিছানায় এসে বসলো। তার এমুহূর্তে নীলাম্বির সাথে কথা বলতে খুব করে ইচ্ছে হচ্ছে। আজ সারাদিন আর কথাই হয়নি। কলেজ থেকে আসার পর থেকে এই পেইন্টিং এ বসেছিল সে। কখন রাত হয়ে গেছে বুঝতেই পারেনি। তবে এমুহূর্তে এসে যেন আর না বললে চলছেনা৷ ইন্টারনেট কানেকশন অন করতেই টুংটাং করে অনেক গুলো ম্যাসেজ এসে জড়ো হয়ে গেল ফোনের স্ক্রিনে। নীলাম্বরীর ম্যাসেজ। নূরান ওপেন করলো। অনেক সারাদিন ভিন্ন ভিন্ন সময়ে এসে ম্যাসেজ করে গেছে। হয়তো কথা বলার জন্য বারবার এসেছিল। কিন্তু নূরানকে পায়নি৷ খুব গিল্টি ফিল হচ্ছে নূরানের। শেষ ম্যাসেজ এসেছে বিশ মিনিট পূর্বে। একটা কাব্য বার্তা,
“না হইলো মোর নিত্য কাজ
না হইলো সাধের সাজ।
মন পায়রা হইয়াছে উড়ু উড়ু
কহিবে কথা কারো সনে
উড়াইয়া দিবে কাব্য বার্তা
খুলিয়া মনের দার
প্রতিক্ষায় মন হয় ভীরু
সে আসে নাহি
বলে নাহি মোর কথা
আকুল আঁখি বলে হাসিয়া
সে বোঝেনা মনব্যাথা।”
নূরানের বুকের বামপাশে যেন কিঞ্চিৎ ব্যাথার অনুভব হলো। মেয়েটা নিশ্চয় মন খারাপ করেছে সারাদিন ওকে না পেয়ে। আজকাল মেয়েটার সব মনোভাব নূরান কেমন করে যেন বুঝে যায়। তাকে না দেখেও অনুভব করতে পারে যেন। নূরান ম্যাসেজ করলো,
“দুঃখিত ভূতনি জি, এই অধমকে কি ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখা যায় না! “
কিছুক্ষণ পর ম্যাসেজ সিন হলো। তবে রিপ্লাই এর জায়গায় একটা রাগ করে থাকার ইমোজি () এলো। হাসলো নূরান। বুঝলো জনাবা অভিমান করেছে। সে লিখলো,
“আমিতো ভেবেছিলাম আপনি অনেক সুন্দরী ভূতনী হবেন। কিন্তু একি! আপনি এমন নাক ফুলানো ভূতনী হবেন ভাবতেই পারিনি। ইউ আর ভেরি ডিসিপয়েন্টিক মি।”
আবারও একই ইমোজি এলো। নূরান লিখলো,
“বেশি রাগলে নাক দিয়ে শিং বের হয় তাকি জানেন? আমার দাদুন বলে। এজন্য তো আমি কখনো রাগি না। শিং বের হওয়া নাক আমাকে মোটেও সুট করবেনা। বাট আপনাকে অনেক সুট করবে নিশ্চয়। আরও ভয়ংকর ভূতনী দেখাবে। আপনার ত্রাশও বাড়বে বেশি বেশি। তাই বেশি বেশি করে রাগ করুন। যতো বেশি রাগ তত বড় শিং।”
এবার রিপ্লাই এলো,
“কে বলেছে আমি রাগ করেছি! আমি কখনো রাগ করি নাকি! আরে রাগ আর আমিতো দুই প্রান্তের মরু। কখনো দেখাই হয়না আমাদের। “
ম্যাসেজ পড়ে সশব্দে হাসলো নূরান। মন খোলা হাসি। মেয়েটা সত্যি ওর কথায় ভয় পেয়েছে দেখে খুবই মজা লাগছে ওর। তারপর আবারও ম্যাসেজের আদান প্রদান শুরু হলো। সময়ের সাথে যা হলো আরও প্রাণখোলা, দুষ্টু মিষ্টি।
__
চিন্তার পাতিল মাথায় নিয়ে ঘুরছে আদ্রিতা। নিবিড়ের মনের কথা কীভাবে জানবে সে, এটাই তার চিন্তার পাতিলে টগবগ করে ফুটছে। নিবিড় ভাইয়ার মনোভাব বোঝা বড় কঠিন কাজ। দেখেতো মনে হয় আমাকে পছন্দের প ও করে না। ধমকাতে ধমকাতে আমার ছোট্ট জানটার আচার বানিয়ে দেয়। যেন আমি তার বারা ভাতে পানি ঢেলে দিয়েছি। আমাকে ধমকানো তার সবচেয়ে ফেবারিট হবি। পারলে আদ্রিতা পাকোড়া বানিয়ে সস লাগিয়ে খেয়ে ফেলে। ভাবতেই মনে দুঃখের আর্টলান্টিক মহাসাগর জমে যায়। তবুও চেষ্টা তো করতেই হবে। জানতেতো হবেই৷ কিন্তু কীভাবে জানবে আদ্রিতা! হঠাৎ গুগল বাবার কথা মনে পড়লো আদ্রিতার। গুগল বাবা কবে কাজে লাগবে! আদ্রিতা ফটাফট গুগলে সার্চ লাগালো। কীভাবে বোঝা যাবে প্রেমিকের মনের কথা লিখে সার্চ দিলো। অনেকগুলো সাজেশন এলো সাথে সাথে। আদ্রিতা এর মধ্যে থেকে একটা ট্রাই করতে চাইলো। আইডিয়া টা এমন, প্রেমিকের সামনে একেবারে ভঙ্গিতে যেতে হবে। মাথায় ঘোমটা দিয়ে লাজুক লাজুক হাসতে হবে। ওভাবে দেখে যদি প্রেমিক তাকিয়ে থাকে অপলক নয়নে তাহলে বুঝতে হবে প্রেমিক আপনাকে পছন্দ করে।
আদ্রিতা এটাই ট্রাই করবে। এবং প্ল্যান অনুযায়ী সে কাজে লেগে পড়লো। অনেক আগের একটা লম্বা সেলোয়ার-কামিজ পড়ে নিলো। তারপর মাথায় লম্বা ঘোমটা দিয়ে নিজের কাজে লেগে পরল সে। নিচে এসে দেখলো তানি নিবিড়ের জন্য কফি বানাচ্ছে। আদ্রিতা সুযোগ পেয়ে গেল।সে তানির কাছ থেকে কফির মগ নিয়ে নিবিড়ের রুমে এগুলো। দরজার কাছে এসে আগে নিজেকে আবার পরিপাটি করে নিলো। মাথার ঘোমটাটা আরেকটু লম্বা করে ভেতরে দরজা ঠেলে ঢুকলো। বিছানায় হেডবোর্ডে পিঠ ঠেকিয়ে বসে কোলের উপর রাখা ল্যাপটপে নজর তার। আদ্রিতা হঠাৎ চেহারায় মাত্রাতিরিক্ত লজ্জার পাহাড় নামিয়ে আনলো। যেন এইমাত্র বাসর ঘরে পা দিলো সে। আর তার হাতে স্বামীর জন্য দুধের গ্লাস নিয়ে যাচ্ছে। নিবিড়ের পাশে এসে দাঁড়িয়ে গলা খাঁকারি দিয়ে কণ্ঠস্বর লজ্জার শিরায় চুবিয়ে বলল,
“আপনার কফি।”
এইটুকু বলতেই যেন লজ্জায় একেবারে মাটির তিন স্তর নিচে চলে যাওয়ার মতো ভঙ্গিমা করছে। কিন্তু যারজন্য এতো লজ্জার মা-বোন করছে তারই কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। সে নির্বিকার নিজের কাজে মত্ত থেকে বলল,
“হুম, রাখ।”
বিরক্ত হলো আদ্রিতা। একবার তাকাবেতো! নাহলে এক্সপেরিমেন্ট করবে কীভাবে! তাই নিবিড়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে আদ্রিতা নরম সুরে বলল,
“আর কিছু লাগবে আপনার?”
নিবিড় একইভাবে থেকেই বলল,
“না।”
আদ্রিতা হতাশ হলো। এখন কি করবে! ভাবনা চিন্তার মাঝে সে ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলো। নিবিড় কফির কাপ হাতে নিতে নিতে আদ্রিতাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,
“কিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন…
বলতে বলতে আদ্রিতার দিকে তাকাতেই ভ্রু কুঁচকে এলো তার। নিবিড়ের তাকানো দেখে আদ্রিতা তার প্ল্যানের নেক্সট লেভেল শুরু করলো। নিবিড়ের চোখ পড়েছে টের পেয়েই সে তর্জনী আঙুল মুখে ঢুকিয়ে দাঁতে আঙুল কামড়িয়ে লজ্জামাখা হাসি দিতে দিতে মাটিতে উপর হয়ে যাওয়ার উপক্রম। নিবিড়ের কুঁচকান ভ্রু যেন আরও ভাজ হয়ে গেল। সে বলল,
“কিরে, মৃগী রোগে আক্রান্ত হয়েছিস নাকি! এমন করছিস কেন?”
নিবিড়ের এই নিরাশাজনক কথায় আদ্রিতার রাগতো অনেক হলো। রাগে গরম কফিটা নিবিড়ের মাথায় ঢেলে দেওয়ারও ইচ্ছে হলো।তবে আপাতত সব মনকামনাই সাইডে রেখে নিজের প্ল্যানে ফোকাস করলো। নিবিড়ের কথায় রাগার পরিবর্তে আদ্রিতা মুখের উপর হাত রেখে হি হি করে লজ্জার চৌদ্দ গুষ্ঠি ডেকে এনে লাজুক হাসার ভঙ্গি করতে করতে মাথা নুইয়ে ফেলল। যেন তার নতুন বিয়ে করা স্বামী তাকে কোনো মজার কথা বলেছে। আড়চোখে তাকিয়ে দেখলো নিবিড় কেমন অদ্ভুদ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আদ্রিতা মনে মনে খুশিতে লাফাতে লাগলো। তার প্ল্যান কাজ করছে। নিবিড় ভাইয়া ওর দিকে তাকিয়ে আছে। জিও গুগল বাবা! আদ্রিতা নিজের প্ল্যান বহাল রেখে লাজুক হাসির ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করার প্রক্রিয়ায় আছে। খানিক পর হঠাৎ নিবিড় ওখান থেকে সরে গিয়ে ওয়াশরুমের দিকে এগুলো। নিবিড় যেতেই আদ্রিতা ব্রেক ডান্স শুরু করে দিলো। হায়, তার প্ল্যান কাজ করেছে। নিশ্চয় আমাকে এভাবে দেখে পাগল হয়ে গেছেন উনি। উলাল লা, আই লাব ইউ সোনেয়া। মনে মনে গাইতে লাগলো সে। দরজা খোলার শব্দে আবারও আগের ভঙ্গিতে ফিরে এলো। মাথার ঘোমটা টেনে লজ্জারাঙা মুখ করে মাথা নুইয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। হঠাৎ মাথার উপর ঝপাৎ করে পানি ঢেলে পড়ায় ধড়ফড়িয়ে কেঁপে লাফিয়ে উঠল আদ্রিতা। আচমকা কি হলো সে কিছুই বুঝে উটার সময় পেলনা। শুধু সামনে বালতি হাতে নিবিড় ভাইয়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো সে। বিস্ময়ে হতভম্ব চোখে তাকিয়ে রইলো নিবিড়ের দিকে। নিবিড় বলে উঠলো,
“এখন নিশ্চয় যে গা,জা খেয়েছিলি তার নেশা কেটে যাবে। না কেটে থাকলে বল, আরেক বালতি নিয়ে আসি! তা, না চাইলে এক্ষুনি রুমে গিয়ে নিজের বলদিমার্কা লুক ঠিক করবি। আর যদি ফের এসব দেখেছিতো সোজা নদীতে নিয়ে গিয়ে ছুড়ে ফেলে দিয়ে আসবো। “
আদ্রিতা হতাশ দুঃখী মনে বেড়িয়ে এলো নিবিড়ের রুম থেকে। ব্যাকরাউন্ডে যেন গান বাজছে, সানছে যো টুটে কই স্বাপ্না, যাগ ছুনা ছুনা লাগে…..
চলবে…..