®মেহরুমা নূর
★সিরাজগঞ্জ পৌঁছাতে প্রায় দুপুর পেরিয়ে গেল ওদের। আদিত্যদের গ্রামের জমিদার বাড়িটিতেই গিয়ে নামলো ওরা। বিয়ের সব আয়োজন এখান থেকেই করা হবে এমনটাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গাড়ি থামলে সবাই যার যার মতো নামা শুরু করলো। তাসানতো লাফ দিয়ে নেমেই গ্রামীণ পরিবেশ দেখতে ছুট লাগালো। নিজেই সবার কাছে গিয়ে ভাব জমাতে লেগে পড়লো।সবাই নেমে গেলে নিবিড়ও নেমে দেখলো আদ্রিতা সিটে মাথা এলিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। নিবিড় আদ্রিতার সাইডের দরজাটা খুলে ডাকতে চাইলো আদ্রিতাকে। তবে ডাকতে নিয়েও আবার থেমে গেল। তার মায়াপুরির মায়ারানীটাকে কিছুক্ষণ দেখার লোভ যেন তার কন্ঠ চেপে ধরলো। আলতো করে হাত রাখলো আদ্রিতার গালে। চোখের তৃষ্ণা খানিক মিটিয়ে নরম সুরে ডাকলো,
“পুতুল, এই পুতুল ওঠ।চলে এসেছি আমরা।”
চোখ মেলে তাকালো আদ্রিতা। চোখের সামনে ঝুঁকে থাকা নিবিড়ের মুখটা দেখে কিছুটা হকচকিয়ে উঠে বসলো সে। নিবিড়কে দেখে হঠাৎ তার অভিমানে মুখ ভার হয়ে এলো। অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে অন্য পাশ দিয়ে নেমে গেল সে। তা দেখে নিঃশব্দে ঠোঁট হালকা বাঁকিয়ে হাসলো নিবিড়। তার অভিমানী পাখি আবারও অভিমান করেছে। আসার পথে যমুনা সেতু পার হওয়ার সময় আদ্রিতা বায়না ধরলো সে যমুনা পারে যাবে। সবাই বলল,পড়ে আসবো বেড়াতে। এখন নামার দরকার নেই। কিন্তু আদ্রিতা গো ধরে বসলো সে যাবেই। শেষমেশ নিবিড় ধমক দিয়ে আদ্রিতাকে থামিয়ে দেয়। আর একারণেই মহারানীর অভিমান হয়েছে। সেই মহারানী কি আর জানে, তার চুল পরিমান আবদার মিটাতে নিবিড় হাজার বার হিমালয় পর্বত চড়তে পারবে! জানবে কীভাবে! সে যে অবুঝ পাখি। পারে শুধু নির্দয়ের মতো নিবিড় কে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খারখার করতে।
ওদের পৌঁছাতে দেখে ফিরোজের বাবা-মা সহ আরও অনেকে এগিয়ে এলো ওদের কাছে। তারা ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলল,
“আরে আইসেন আপনেরা,আসেন আসেন ভেতরে আসেন।”
তানি ফিরোজের দাদীকে সালাম দিয়ে বলল,
“কেমন আছেন আপনারা?”
ফিরোজের দাদী হাসিমুখে বলল,
“আমরা ভালুই আছি। তা তোমরা ক্যাবা আছ সবাই? কত্তদিন পর আইলা গেরামে। আঙ্গারে কথা কি এল্লাও মনে পড়ে না তোঙ্গারে!”
(সিরাজগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষা)
“তা কেন হবে! অবশ্যই মনে পড়ে।আসলে ব্যাস্ততার কারণে বেশি আসা হয়না।”
“তাই বল্যা আইসপ্যা না! হেই যে আবিরের বিয়ার মোদে সব আছিলা। আর আল্যানা। তোমাগেরে ছোওয়াল পাওয়ালো কত্তো বড় হইয়া গেছে।”
তানি বলল,
“হ্যাঁ তাতো হয়েছে। এইযে দেখেন সবাই এখানেই আছে।”
তানি একে একে সব নতুন জেনারেশনের পরিচয় করিয়ে দিলো। ফিরোজের দাদী নিবিড়ের সামনে এসে বলল,
“উম্মাইলো! তোমার ব্যাটা না দেহি এহারে মদ্দা মানুষ হয়া গেছে। এহারে আমার চাচা হশুরের(আবির,আদিত্যর দাদা) মতোই দেহা যায়। তা ক্যাবা আছুরে গেদা?”
নিবিড়কে গেদা ডাকায় আদ্রিতা ফিক করে হাসতে নিয়ে আবার মুখ চেপে ধরলো। বাকিরাও মুখ টিপে হাসছে। নিবিড় অস্বস্তিপূর্ণ জোরপূর্বক হেঁসে বলল,
“জি দাদী ভালো আছি।”
দাদী একে একে বাকি গুলোর কাছেও এলো। তাসানকেও গেদা বলাই বেচারা ক্যাবলা মার্কা হাসি দিলো। মেয়েগুলোকেও ছাড়লনা। আদ্রিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দাদী বলল,
“উম্মাইলো,আদিত্যর মাইয়া কি সুন্দর পুত্তুলের মতো হইছে। এহারে আদিত্যর মায়ের মতোই দেহা যায়। কিরে গেদি তুই কেবা আছু?”
আদ্রিতাও দাঁত কেলিয়ে জোরপূর্বক হেঁসে বলল,
“জি দাদী ভালো আছি। তোমরা কেমন আছ?”
“আমরাও ভালুই আছি। আয় আয় ভেতরে আয়।”
তাসান বলে উঠলো,
“হ্যাঁ হ্যাঁ গেদাগেদিগনস চলো চলো।
সবাই ভেতরে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলো।তারপর বিশাল লিভিং এরিয়ায় সবাই এসে জমা হলো বিয়ের সব আয়োজন নিয়ে আলোচনা করতে। ফিরোজের মা সবার জন্য তেলের পিঠা বানিয়েছিল। সেগুলো এনে খেতে দিলো সবাইকে। গরম গরম তেলের পিঠা হাতে নিয়ে খেতে লেগে গেল সব। তাসানতো রিতীমত কাড়াকাড়ি শুরু করে দিয়েছে। অপরাহ্ন বলে উঠলো,
” হাবাইতার মতো করস ক্যান! যেন আজন্ম ভিখারি। আস্তে আস্তে খা। গলায় ঠেকে যাবে।”
“ওই খবরদার! আমার খাবারে নজর দিবিনা। এমনিতেই আমি ঠিকমতো খেতে পারিনা।রুচি পাইনা মুখে।আর তুই আবার নজর দেস!”
“হ ঠিকই কইছস। তাও ভালো তোর রুচি নাই। নাইলে আমগোই চাবাই খাইয়া ফেলতি।”
ওদের কান্ড দেখে হাসলো সবাই। বিয়ের জন্য বাড়িতে মেহমান আর কাজের লোকের সমাগম অনেক। আর আদ্রিতাদের আসার খবর শুনে আশেপাশের অনেক লোকজনও আসছে দেখতে। আদ্রিতা খেয়াল করলো গ্রামের কয়েকটা মেয়ের দল দরজার আড়াল থেকে উঁকি দিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। আর কি যেন বলাবলি করে আবার হাসছেও। ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেল মেয়েগুলো নিবিড়কে দেখছে। তাকে দেখেই লাজুক হেঁসে নিজেরাই কুটিকুটি হচ্ছে। ব্যাপার টা আদ্রিতার কাছে খুব ইন্টারেস্টিং লাগলো। সে উঠে দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো মেয়েগুলোর সামনে। মেয়েগুলোর সামনে হাত নাড়িয়ে হাসিমুখে বলল,
“হাই, আমি আদ্রিতা। তোমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছে কেন? ভেতরে আসো।”
মেয়েগুলো বলল,
“না না আমরা ভেতরে যামুনা। আমরা তো খালি দেইখপ্যার আছি।”
“কি দেখতে এসেছ?”
ওদের মধ্যে একজন বলল,
“আসলে ময়না কইলো,জমিদার বাড়িতে নাহি সিনেমার নায়ক আইছে। তাই আমরা নায়ক দেইখপ্যার আছি।”
আদ্রিতা ভ্রু কুঁচকে বলল,
“নায়ক!”
“হ ওইযে ওই নায়কডারে।”
নিবিড়ের দিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করে দেখালো মেয়েটা। আদ্রিতা বুঝতে পারলো ওরা নিবিড়কে নায়ক ভাবছে। বিষয়টা বেশ মজাদারই লাগলো তার কাছে। কিছু একটা ভেবে আদ্রিতা বলল,
“তো এখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন? চলো ভেতরে গিয়ে নায়কের সাথে দেখা করো।”
“না, আঙ্গারে শরম হরে।”
“আরে শরমের কি আছে। তোমাদের নায়ক সাহেব অনেক জেন্টাল লোক। সবার সাথে অনেক ভালো ব্যবহার করে। তার ফ্যানদের জন্যতো সব করতে পারে। অটোগ্রাফ, সেলফি যা চাও তাই দিবে। অন্য কিছু চাইলে তাও করবে। শুধু বলার অপেক্ষা।
” কিন্তু ওহোনে কত লোক। সবাই কি কইবো!”
“ওও আচ্ছা, তো তোমরা নায়কের সাথে আলাদা দেখা করতে চাও তাইতো!”
মেয়েগুলো মাথা দোলালো। মানে হ্যাঁ। আদ্রিতা বলল,
“ঠিক আছে। আমি তোমাদের কাজ করে দিতে পারবো। তার আগে বলো আমি কি পাবো? আমারও তো কিছু বেনিফিট দরকার তাইনা!”
মেয়েগুলো বলল,
“আঙ্গারে আম বাগান আছে। আপনারে অনেক গুলান আম দিমুনে।”
“ঠিক আছে। তবে শুধু আম দিলে কাজ হবে না। আমাকে আম গাছে চড়া শেখাতে হবে তাহলে কাজ করে দেবো।”
“ঠিক আছে হিখামুনে।”
“আচ্ছা, তাহলে ডিল ডান। আমি তোমাদের হিরোর সাথে আলাদা মিটিং ফিক্স করে দিবো।তোমাদের যেখানে, যে সময় বলে দিবো তোমরা চলে এসো কেমন!”
“আচ্ছা।”
মেয়েগুলো চলে গেল খুশিমনে। আদ্রিতা মনে মনে ভীষণ পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে তার প্ল্যানের কথা ভেবে। ওই দৈত্য দানব সবসময় আদ্রিতাকে অত্যাচার করে। সবসময় ভয় দেখায়, বকাঝকা করে, ধমকায়। আজ ভালো একটা বদলা নেওয়া যাবে। মজা হবে তার অবস্থা দেখে।
গ্রামের মেহমানদের মাঝে আরও কিছু কাজিন যোগ হয়ে গেল ওদের সাথে। যেমন ফিরোজের ছোট ভাই ফয়সাল, ফুাপতো, খালাতো, চাচাতো তালোইতো এমন আরও অমক তমক কাজিন জড়ো হয়ে আড্ডা মাস্তি আরও চারগুণ বেড়ে গেছে। পিঠা খাওয়া শেষে তাসান ফাইজার উদ্দেশ্যে বলল,
“ওই জামাইর বউ,আমগো গ্রাম ঘুরাবিনা! আমরা কি শুধু ঘরের ভিতরে ডিম পারতে এসেছি! “
আদ্রিতাও বলল,
“হ্যাঁ আপু আমারও গ্রাম ঘুরে দেখার খুব ইচ্ছে। চলনা যাই।”
ফাইজা বলল,
“আচ্ছা চল। তোরা রেডি হয়ে আয়। আমি মাকে বলে আসছি।”
একটু পরেই বের হলো সবগুলো। ফাইজা, ফয়সাল ওরা দুই ভাইবোন ঢাকাবাসীদের নিয়ে বের হলো গ্রাম ঘুরতে। সবুজে ঘেরা, শস্য শ্যামল মায়ায় জড়ানো ছোট্ট গ্রামের মেঠোপথ দিয়ে হেঁটে চলেছে সবাই। ফয়সাল হাঁটতে হাঁটতে তাদের খেত খামার গুলো দেখিয়ে দিচ্ছে। নূরান সবার পিছে ধীর গতিতে চলছে। নিজের মতো নিজে। এই কোলাহল, যানজট মুক্ত শ্যামল পরিবেশের মুগ্ধতায় হারাচ্ছে সে। এখানকার বাতাসে যেন এক অসীম মায়া। মাটির গন্ধে আপন আপন ভাব। নূরান পায়ের জুতো জোড়া খুলে হাতে নিলো। খালি পায়ে মাটির সাথে নিজেকে আরও সংযুক্ত করলো।নিজের মতো একা একাই হেঁটে সবার থেকে আলাদা হয়ে গেল। বাকিদেরও এই গ্রামীণ প্রকৃতি মনোমুগ্ধকর আত্মতুষ্টি দিচ্ছে। আদ্রিতাতো সবকিছুতেই বাচ্চাদের মতো উৎসাহে লাফাচ্ছে শুধু। আশেপাশের লোকজন গুলো উৎসুক দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তা দেখে তাসান বলে উঠলো,
“আজ মনে হয় আমারে একটু বেশিই হ্যান্ডসাম লাগছে। দেখনা গ্রামের মেয়েগুলো কেমন হা করে তাকিয়ে আছে। হয়তো ভাবছে এতো হ্যান্ডসাম ছেলেটা কোথাথেকে এলো।”
অপরাহ্ন বলে উঠলো,
“হতে পারে এটা ভাবছে,চিড়িয়াখানার হনুমান এখানে কীভাবে চলে এলো!”
“আরে যাই বলিস। মাইয়া তো গ্রামের গুলাই বেস্ট। এক্কেরে সহজ সরল লজ্জাবতী একেকটা। গ্রামে আসার প্রতিদান এবার ভালোই পাবো। ডজনখানেক তো পটিয়েই ফেলবো দেখিস। নাহলে যাওয়ার সময় গান গাইবে কীভাবে,♬ পারদেশি পারদেশি যানা নেহি,মুঝে ছোড়কে মুঝে ছোড়কে।”
রবি বলে উঠলো,
“আমিও ভাবছি শহরে তো অনেক সেবা করলাম। এবার গ্রামের মহিলাদের দুঃখ দূর করার জন্য নিজেকে নিয়জিত করবো।”
তাসান বলে উঠলো,
“হ্যাঁ মামা তাতো দেখতেই পেলাম। আসতে না আসতেই ফিরোজের বিধবা ফুপু তোমার ক্লাইন্ট হয়ে গেছে। যাওয়ার আগে গ্রামের কোনো নারীকে আর দুঃখিত রাখবেনা মনে হয়। কেমনে করো মামা! আমগোও কিছু শেখাও।”
“সবই প্রতিভা বৎস। আর মহৎপ্রাণ ভাবনা।”
এভাবেই হাসাহাসি করতে করতে সবাই খেতে চলে এলো। সবুজ ধানের খেত বাতাসে দোল খাচ্ছে। অপূর্ব সে দৃশ্য। সামনেই সেচ পাম্প থেকে ঝপঝপ করে পানি পড়ছে। সরু ড্রেন দিয়ে পানি গড়িয়ে ধান খেতে যাচ্ছে। তা দেখে আদ্রিতা এক্সাইটেড হয়ে লাফিয়ে উঠে ফাইজাকে ওখানে নিয়ে যেতে বলল। সে সেচ পাম্পের কাছে যাবে। কিন্তু বরাবরের মতোই বাঁধ সাধলো নিবিড়। সে কড়া গলায় বলল,
“একদম না। সামনে ড্রেন কতো পিচ্ছিল দেখেছিস। পড়ে হাত পা ভাঙার শখ জেগেছে! “
ফাইজা বলল,
“হ্যাঁ অরি ওখানে পিচ্ছিল আছে তুই পড়ে যাবিতো।”
“পড়বোনা আপু। প্লিজ যাইনা, প্লিজ প্লিজ প্লিজ….”
“আচ্ছা ঠিক আছে চল। কিন্তু সাবধানে যাস।”
বাকিরাও সেচ পাম্পে যাবে।পাম্পের সামনে লম্বা একটা ড্রেন। সেখানে দুইটা বাঁশের টুকরো রাখা আছে পার হওয়ার জন্য। সবাই জুতা খুলে পা টিপে টিপে এগুলো। ফয়াসাল, তাসান আগেই লাফ দিয়ে চলে গেল। তানহা যেতে নিয়ে ব্যালেন্স হারাতে নিলেই তখন হাত ধরে ফেললো অপরাহ্ন।চোখে চোখ পড়লো, হাত ধরে পার করলো তাকে। চশমা ঠিক করে দ্রুত অন্য পাশে চলে গেল তানহা৷ সানভি পার হতে ভয় পাচ্ছে দেখে ফাইজা ওকে ধরে পার করালো। এবার আদ্রিতার পালা। সে এক পা এগুচ্ছে তো দুই পা পেচাচ্ছে। এমন পিচ্ছিল বাঁশের উপর দিয়ে পার হবে কীভাবে। তবুও মনে সাহস যুগিয়ে কাঁপা কাঁপা পা বাঁশের উপর রাখতেই হঠাৎ নিজেকে হাওয়ায় পেল আদ্রিতা। মাথা তুলে দেখলো নিবিড় তাকে কোলে তুলে নিয়েছে। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই নিবিড় ড্রেন পার করে অপরপাশে আদ্রিতাকে নামিয়ে দিয়ে আবার অন্য পাশে গিয়ে দাঁড়াল সে। যেন চোখের পলকে সব হয়ে গেল। কিন্তু উনার ভাব দেখে মনে হচ্ছে কিছুই হয়নি। আদ্রিতা সবার দিকে তাকিয়ে দেখলো সবাই পানি দেখতে ব্যস্ত। এদিকে কারোর নজর নেই। স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল আদ্রিতা। আপাতত সে নিজেও পানি দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। ঝর্ণার মতো ঝপঝপ পড়তে থাকা পানির কাছে গিয়ে দুই হাতে পানি নিয়ে খেলতে লাগলো। নিবিড় পেছন থেকে কড়া গলায় বলছে,
“অরি পড়ে যাবি কিন্তু। পিছে আয়।”
কিন্তু কে শোনে কার কথা। পানি পেয়ে লাফিয়েই চলেছে সে। অতঃপর যা হবার তাই হলো। পিছলে গিয়ে পানির গর্তের মাঝে পড়লো। সেচের পানিতে পুরো ভিজে গেল সে। আদ্রিতার পড়ে যাওয়া দেখে হো হো করে হেঁসে উঠলো সবাই। আদ্রিতা প্রথমে একটু লজ্জা পেলেও পরবর্তীতে সে পানির সাথে আরও বেশি করে মেতে উঠলো।ঝর্ণার পানিতে যেমন নিজেকে ভেজায় তেমনি সেচের পানিতে সে ভিজতে লাগলো। আদ্রিতার ভেজা দেখে তাসানও ঝপ করে নেমে পড়লো। সেচে মাথা ডুবিয়ে ভিজতে লাগলো। দুজনের কান্ড দেখে বাকিরা হাসতে লাগলো। কিন্তু আদ্রিতা দেখলোনা তার এমন মজা আরেকজনকে কি পরিমাণ রাগিয়ে দিচ্ছে। দেখতে পেলনা নিবিড়ের শক্ত ক্রোধিত মুখমন্ডল।
মনের সুখে ভিজেতো নিলো আদ্রিতা। কিন্তু উঠতে নিয়ে পড়লো বিপাকে। এই ভেজা কাপড়ে এখন বাড়ি ফিরবে কীভাবে! খেতে চারপাশে অনেক চাষীরা কাজ করছে। এই অবস্থায় সবার সামনে দিয়ে যাওয়া অসম্ভব। ভিতু চোখে তাকালো নিবিড়ের দিকে। নিবিড়ের কঠিন চাহুনি দেখে আরও অসহায় হয়ে আদ্রিতার মুখমন্ডল। কাঁদো কাঁদো মুখ দাঁড়িয়ে রইলো সে।বাকিরাও নিবিড়ের রাগী চেহারা দেখে ভয়ে চুপসে গেছে। এভাবে কিছুক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পর নিবিড় এগিয়ে গেল। রাগী মুখ করেই খপ করে আদ্রিতার হাত ধরে টেনে তুলে সেচ পাম্পের ছোট্ট ছাপড়া ঘরটাতে নিয়ে গেল। ঘরের মাঝে নিয়ে একপ্রকার ছুড়ে মারল।চোয়াল শক্ত করে রাগী গলায় বলল,
“মনতো চাচ্ছে ওই পানির ভেতর তোকে গেঁড়ে থুয়ে যাই। ইডিয়ট একটা।”
আরও ভয়ংকর ভাবে কতক্ষণ ইচ্ছে মতো ধমকালো। আদ্রিতার চোখে পানি চলে এলো।ভেজা শরীরে কাঁপছে আর নাক টানছে।আসলেই দৈত্য দানব একটা। নাহয় একটু ভিজেছি তাই বলে এভাবে বকবে! যেন কতবড় অপরাধ করে ফেলেছি। আমাকে বকাঝকা করার শুধু বাহানা চাই উনার।
নিবিড় দেখলো ছাপড়া ঘরটাতে একটা গামছা ঝুলানো আছে। সেটা নিয়ে আদ্রিতার মুখের উপর ছুঁড়ে দিয়ে বলল,
“মাথা মুছে নে।”
তারপর গায়ের জ্যাকেট টা খুলে একইভাবে ছুঁড়ে দিয়ে বলল,
“এটা পড়ে বেড়িয়ে আয়।”
বলে বাইরে চলে গেল নিবিড়। আদ্রিতা মাথা মুছে জ্যাকেট টা পড়ে নিলো। তবে রাগ হচ্ছে তার ভীষণ। লোকটা শুধু ওকে বকে। আজতো সে বদলা নিয়েই ছাড়বে। মজা দেখিয়ে ছাড়বে।
___
পরদিন বিকেলেই নিজের মাস্টার প্ল্যানের কাজে লেগে পড়লো আদ্রিতা। গ্রামের সেই মেয়েগুলোর সাথে আমবাগানে এসেছে আদ্রিতা।এরইমধ্যে তাদের সাথে ভালোই ভাব হয়ে গেছে তার।সকাল সকালই মেয়েগুলোর সাথে আমবাগানে এসে লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে। আম পেরে খেয়েছে আবার তাকে গাছে উঠানোও শিখিয়েছে।এখন প্রতিদান হিসেবে নিজের করা ডিল অনুযায়ী এবার আদ্রিতার পালা। সে মেয়েগুলোকে জানালো আজ বিকেলে সে তাদের নায়কের সাথে দেখা করিয়ে দিবে। মেয়েগুলো যেন আম বাগানে চলে আসে। সেখানেই তাদের নায়ক আসবে। মেয়েগুলো খুশি হয়ে গেল। বিকাল হতেই আদ্রিতা নিবিড়কে আম বাগানে নিয়ে যাওয়ার ফন্দি আঁটলো। সে এক পিচ্চিকে বুঝিয়ে পাঠালো নিবিড়ের কাছে। পিচ্চি গিয়ে আদ্রিতার বলে দেওয়া অনুযায়ী নিবিড়কে বলল,
“অরি আপু, আম বাগানে আপনাকে ডাকছে। “
নিবিড় ভ্রু কুঁচকে বলল,
“আমাকে ডাকছে মানে! আর ও বাগানে কি করছে?”
“জানিনা।”
বলেই পিচ্চি দৌড়ে চলে গেল। আদ্রিতা আড়াল থেকে সব দেখছে। নিবিড় তখনই বের হয়ে গেল। আদ্রিতা মনে মনে খুশি হয়ে সেও লুকিয়ে নিবিড়ের পিছু পিছু গেল। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরেই আম বাগান। পৌঁছাতে বেশি সময় লাগলোনা। নিবিড় বাগানে এসে এদিক ওদিক তাকিয়ে আদ্রিতাকে ডাকতে লাগলো,
“পুতুল, কোথায় তুই? পুতুল! “
বাগানের মাঝে একটা সিঁড়ি বাঁধা পুকুরও আছে। নিবিড় সেদিকেও এসে খুঁজতে লাগলো। আদ্রিতাকে কোথাও না দেখে একটু খটকা লাগলো তার। ভাবলো হয়তো পিচ্চিটা তার সাথে মজা করেছে। সে ফিরে যাওয়ার জন্য ঘুরে দাঁড়াতেই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। তার সামনে শতখানেক মেয়ের ভীড় দেখে বেচারা নিবিড় টাস্কি খেয়ে গেল। মেয়েগুলো চারিদিক থেকে নিবিড়কে প্রায় ঘিরে ফেলেছে। নিবিড়কে দেখে মেয়েগুলো কেমন মুচকি মুচকি হাসছে। নিবিড় অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলল,
“কিছু হয়েছে! না মানে সবাই এখানে একসাথে! ব্যাপার কি! কি চাই!”
নিবিড়ের প্রশ্ন শুনে যেন মেয়েগুলোর হাসি আরও বিস্তৃত হলো। একজন এগিয়ে এসে লাজুক ভঙ্গিতে বলল,
“আঙ্গারে সাথে এল্লা ছবি উইঠপেন! আঙ্গারে মেলা শখ নায়কের সাথে ছবি ওঠার।এল্লা ওঠেন না!”
মেয়েগুলোর কথা ঠিকমতো বুঝতে পারলোনা নিবিড়। প্রচন্ড অস্বস্তিতে পড়ে গেল সে। একেবারে চরম লেভেলের অস্বস্তি যাকে বলে। জীবনে অস্বস্তি কাকে বলে তা যেন এই মুহুর্তে উপলব্ধি করতে পারছে সে। এদের মাঝ থেকে বেরোনোর উপায় খুঁজছে সে। নিবিড়ের এমন করুন মুখশ্রী দেখে গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকা আদ্রিতার ভীষণ মজা লাগছে। পেট ফাটা হাসি অনেক কষ্টে চেপে রাখছে। সবসময় আদ্রিতাকে বকা দেওয়া না! এখন দেখ কেমন লাগে! মেয়েগুলো নিবিড়ের কাছে ঘেঁষে এসে ছবি তুলতে লাগলো। নিবিড়ের এবার বিরক্তি সীমা ছাড়া য়ে যাচ্ছে। অনেক কষ্টে নিজের রাগ দমিয়ে রাখছে সে। যতোই হোক মেয়েদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা তার অভ্যসে নেই। তাছাড়া গ্রামের মেয়েদের সাথে রুড বিহেব করলে তাদের বংশের বদনাম হবে। অহংকারী ভাববে।তাই রাগ হলেও সেটা প্রকাশ করছেনা আপাতত। কয়েকজনের সাথে ছবি তুলে কোনরকমে সেখান থেকে বেড়িয়ে আসতে চাইলো। চলে আসতে নিয়ে হঠাৎ কিছু একটা ভেবে একটা মেয়েকে জিজ্ঞেস করলো,
“আমার সাথে দেখা করার কথা আপনাদের কে বলেছে? কীভাবে জানলেন আমি এখানে আসবো?”
একজন বলল,
“ওইযে আদ্রিতা আফা কইছে।”
মেয়েগুলো চলে গেল একটু পর। তবে নিবিড়ের রাগ এবার তরতরিয়ে বাড়লো। বুঝতে পারলো এসব আদ্রিতার সয়তানি। তারমানে ওই পাঁজিটাও নিশ্চয় এখানেই কোথাও আছে। আদ্রিতা গাছের পেছন থেকে শুনে ফেললো যে মেয়েটা ওর কথা বলে দিয়েছে। ভয়ে আত্মা আমগাছে উঠে গেল তার। এখন কি হবে! এই দৈত্য দানব তো আজ সত্যি সত্যিই ওকে খেয়ে ফেলবে। ভাবতে ভাবতেই নিবিড়ের রাগী গলার ডাক শুনতে পেল সে।
“অরি,দেখ আমি জানি তুই এখানেই আছিস। ভালো চাসতো বেড়িয়ে আয়। নাহলে আমার খুঁজে বের করতে হলে সেটা তোরজন্য আরও ভয়াবহ হবে বলে দিলাম। ফটাফট সামনে আয়।”
আদ্রিতার এবার ভয়ে গলা শুঁকিয়ে এলো। নিবিড় এরইমধ্যে এদিক ওদিক খোঁজাও শুরু করে দিলো। আদ্রিতা ভাবলো সে আস্তে কোনরকমে এখান থেকে বের হয়ে গেলেই হলো। একবার বাড়ি পৌঁছালে এই দৈত্য আর কিছু করতে পারবেনা। সেখানে সোনা মা, চাচ্চুদের সামনে উনি কিছু বলতে পারবেনা। এই মনোস্তাপ করে ধীরে ধীরে পেছাতে লাগলো আদ্রিতা। তবে ভাগ্য সহায় হলোনা। শুকনো পাতার উপর পা রাখতেই মরমর শব্দে তা আওয়াজ করে উঠলো। সেই শব্দে ধরা খেয়ে গেল সে। নিবিড় দেখে ফেললো তাকে। আদ্রিতাকে দেখে তার দিকে এগুতে নিলেই আদ্রিতা নিজের জান বাঁচাতে দিকবিদিক না দেখে মারলো দৌড়। নিবিড়ও ছুটলো তার পেছনে। বাগানের মাঝে এলোমেলো ছুটে দৌড়াতে লাগলো আদ্রিতা।নিবিড় তার পেছনে ছুটতে ছুটতে জোরে জোরে বলতে লাগলো,
“অরি,দাঁড়া বলছি। ভালো হবে না কিন্তু। অরি….
আদ্রিতা ছুটেই চলেছে। অলিম্পিক দৌড়ের প্রতিযোগিতায় নেমেছে সে।গোল্ড মেডেলতো আজ নিয়েই ছাড়বে। কিছুতেই নিবিড়ের হাতে পড়বেনা বলে তার পণ। দৌড়াতে দৌড়াতে একসময় পায়ের জুতা খুলে গেল তার। তবুও থামলোনা। খালি পায়েই ছুটতে লাগলো। আদ্রিতার জুতা খুলে যাওয়া দেখে নিবিড়ের কন্ঠে যেন পরিবর্তন দেখা গেল। কিছুটা উদ্বেগী স্বরে ডাকলো,
“পুতুল এবার কিন্তু বেশি বেশি করছিস। দাঁড়া বলছি।দেখ ভয় নেই আমি রাগ করবোনা।এভাবে খালি পায়ে দৌড়াস না। লেগে যাবে। শুনতো আমার কথা….
বলতে না বলতেই অঘটন ঘটে গেল। আদ্রিতার আর্তনাদ শোনা গেল। নিবিড়ের চোখে দেখা দিল আতঙ্ক। প্রাণপণে ছুটলো সে আদ্রিতার কাছে।আদ্রিতা মাটিতে বসে পড়ে পা ধরে কাঁদছে। বড়ুই গাছের কাটা বিঁধেছে তার পায়ে। র,ক্ত বের হচ্ছে পায়ের তালুতে। ব্যাথায় আর্তনাদ করে কাঁদছে আদ্রিতা। নিবিড় তড়িৎ গতিতে ছুটে এসে হাঁটু গেঁড়ে বসলো আদ্রিতার সামনে। পায়ের অবস্থা দেখে চোখের শুভ্রতায় মুহূর্তেই লালিমায় ভরে উঠলো তার।আদ্রিতার পানে হিংস্র চাহুনি নিক্ষেপ করে ক্ষিপ্ত স্বরে বলল,
“হয়েছে এখন! আমার কথা কেন শুনিস না তুই! মনতো চাচ্ছে গলা টি,পে এখুনি মেরে তোকে।”
রাগের বহিঃপ্রকাশ স্বরুপ আদ্রিতার দিকে আঘাত করার উদ্দেশ্যে হাত বাড়িয়ে তীব্র ক্ষিপ্র স্বরে বলল,
“তোকে তো…..”
এতটুকু বলে মুখের সামনে বাড়ানো হাত আবারও মুঠো করে ফেলে চোখ বুজে নিজেকে একটু নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করলো। কারণ মেয়েটা এমনিতেই ব্যাথায় করুন আর্তনাদ করে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। আর নিবিড়ের রাগ দেখে আরও ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে যাচ্ছে। চোখ খুলে নিবিড় আদ্রিতার কাটা বিধা পা’টা আস্তে করে তুলে নিজের হাঁটুর উপর রাখলো। আদ্রিতা যেন আরও ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠে কান্নার জোড় বাড়ালো। পায়ে এখনো কাটা গেঁথেই আছে। তারকাঁটার মতো বড় দুটো কাটাসহ চার ইঞ্চি লম্বা ছোট্ট একটা ডাল গেঁথে আছে।ব্যাথায় কাতর আদ্রিতা টের পেলনা নিবিড়ের শরীরও কাঁপছে। মাথা শরীর ঘেমে উঠেছে। নিবিড় কাটা ছাড়ানোর জন্য হাত বাড়াতেই আদ্রিতা ভয়ে আরও জোরে জোরে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“না না হাত দিবেন না। অনেক ব্যাথা হবে। অনেক জ্বলছে। প্লিজ হাত দিবেন না। খুব ব্যাথা করছে আমার।”
নিবিড় এবার আদ্রিতার গালে হাত রেখে কোমল স্বরে বলল,
“হুঁশশ,ভয় নেই। কিচ্ছু হবে না। আস্তে করে বের করে দিবো।”
“না না অনেক ব্যাথা করবে। প্লিজ হাত দিবেন না। মরে যাবো আমি।”
নিবিড় এবার মুখটা এগিয়ে আদ্রিতার মুখের খুব কাছে আনলো। গালে বৃদ্ধাঙ্গুল বুলিয়ে মায়াবী চোখে তাকিয়ে অত্যন্ত আদূরে কন্ঠে বলল,
“হুঁশ হুঁশ, কাঁদে না।এই পুতুল সোনা, তাকা আমার দিকে। তুই আমার লক্ষী পুতুল না! ময়না পাখিটা, তাকা আমার দিকে। আমি থাকতে কোনো ব্যাথার সাহস নেই তোকে ছোঁয়ার।”
নিবিড়ের এমন হৃদয় গলানো আদুরে আলাপে আদ্রিতা থমকিত চোখে তাকালো নিবিড়ের মায়াবী চোখের পানে।কান্নার সুর ধীরে ধীরে যেন কমে এলো। ঘোরের মাঝে হারিয়ে গেল হঠাৎ। ঠিক তখনই সুযোগ বুঝে নিবিড় আদ্রিতার পায়ের কাটা টান দিয়ে বের করে ফেললো। কাটা বের হতেই হুঁশ এলো আদ্রিতার। যন্ত্রণায় হালকা আর্তনাদ করে উঠলো। কান্নার গতি আবারও বেড়ে গেল। নিবিড় সাথে সাথে আদ্রিতাকে পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বাঁধা পুকুর পাড়ে এলো। সিঁড়ি বেয়ে পানির কাছে এসে আদ্টিতাকে সিঁড়ির উপর বসালো। কাটা বিঁধা পা’টা পানিতে নামিয়ে পা ভালো করে ধুয়ে দিলো নিবিড়। আদ্রিতাকে রেখে পাশ থেকে কিছু দূর্বাঘাস তুলে এনে পানিতে ধুয়ে দাঁতে চিবালো কিছুক্ষণ। আদ্রিতার পা নিজের পায়ের উপর নিয়ে চিবানো ঘাস পায়ের ক্ষততে রাখলো। হালকা জ্বলে ওঠায় আদ্রিতা আবারও আর্তনাদ করে উঠলো। কান্না অনবরত লেগেই আছে। ঘাসের রস দেওয়ার পর প্যান্টের পকেট থেকে রুমাল বের করে পায়ে ব্যান্ডেজের মতো বেঁধে দিলো। ততক্ষণেও আদ্রিতা ফুঁপিয়েই চলেছে। কেঁদে কেটে চোখ মুখ লাল টুকটুকে করে ফেলেছে।নিবিড় মুখ নামিয়ে আদ্রিতার ক্ষত পায়ের পাতায় তার অধর ছোঁয়াল। মুহুর্তেই কান্না বন্ধ হয়ে গেল আদ্রিতার। থমকে গেল ভেতর বাহির। শিউরে উঠলো বদন। বেড়ে গেল নিঃশ্বাসের আনাগোনা। নিবিড় মাথা তুলে তাকালো আদ্রিতার কেঁদে কেটে লাল করা মুখপানে। তার পুতুল টা সত্যিই কোমলমতি ননির পুতুল। নিবিড় থাকতে তার পুতুলকে কোনো আঘাত ছুঁতে পেল এটা তার সবচেয়ে বড় অপারগতা। এই দায় কীভাবে বহন করে বেড়াবে সে! আদ্রিতা হঠাৎ ছুটে লজ্জার কবলে আবদ্ধ হয়ে গেল। নজর লুকাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো সে।ময়লা হাতে বারবার কান্না মুছতে গিয়ে আদ্রিতার মুখে মাটি লেগে আছে। নিবিড় হাতে পানি নিয়ে আদ্রিতার কান্নাভেজা মুখখানা পানি দিয়ে আলতো হাতে ধুয়ে দিলো। চোখ বুজে ফেললো আদ্রিতা। নিঃশ্বাস এবার আঁটকেই যাবে তার। মৃদু কম্পনে শরীর অবশের পর্যায়ে। যে কম্পন তার সামনের ব্যাক্তিকে করছে তীব্র আহত। দুই হাতে আদ্রিতার মুখখানা আগলে ধরে কপালে কপাল ঠেকালো নিবিড়। নিবিড়ের অশান্ত নিঃশ্বাস আদ্রিতাকে আরও বিবশ করলো। নিবিড় আদ্রিতার কপালে কপাল ঠেকিয়ে অশান্ত কন্ঠে ফিসফিসিয়ে বলল,
“মেয়ে তুই ক্রূরমতি তীব্র প্রলয়ঙ্কারী লাভা। যে মানবকে পৃথিবীর কোনো বস্তু ভীত করতে পারেনা। সেই লৌহের ন্যায় মানবকেও ভীত করার ক্ষমতা একমাত্র তুই রাখিস। এই দহনের পালা শেষ করে কবে দিবি একটুখানি শীতলতা।”
চলবে……..