#শারমিন আঁচল নিপা
“অনন্যা আমার স্বামীর মেয়ে না। অনন্যার বাবা ছিল আরেকজন। এ বিয়ের আগে আমার আরেকটা বিয়ে হয়েছিল। সে স্বামী হুট করে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। তাকে কোনোভাবেই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এ পর্যন্ত তার খোঁজ মেলে নি। সে সময়টা অনন্যা পেটে আসে। আমার জীবনটায় যেন অমাবস্যা নেমে আসে। এ বাচ্চা নিয়ে কী করব? কীভাবে চলব? সেটাই অনেক বড়ো চ্যালেন্জ হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল। মা বাবার একটা মেয়েই আমি ছিলাম। আর আমার একটা ভাই আছে আমার ছোটো। সে বর্তমানে দুবাই থাকে। বেশ আদরে বড়ো হই আমি। সন্তান পেটে আসায় পরিবার সবাই দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। সন্তানের পরিচয় নিয়েও প্রশ্ন উঠার সম্ভবনা ছিল। তাই বাবা,মা, ভাই আমাকে ফিয়নার বাবার কাছে বিয়ে দেয়। ফিয়নার বাবা অনেক দরিদ্র ছিল তাই আমাকে বিয়ে করে। তবে ফিয়নার বাবা আমার সন্তানের ব্যাপারে কিছুই জানত না। আমি তখন দু মাসের অন্তস্বত্ত্বা ছিলাম। বিয়ের এক মাস পরে ফিয়নার বাবাকে বলি বাচ্চা পেটে আসে আমার। সে অনেক খুশি হয়েছিল। প্রথম সন্তান ছেলে বা মেয়ে নিয়ে তার কোনো অসন্তুষ্টি ছিল না। তাই অনন্যার জন্ম নিয়ে তার খুশি অনেক বেশি ছিল। কিন্তু ফিয়নার জন্মতে সে তেমন খুশি ছিল না। কারণ পর পর দুটো মেয়ে সে মানতে পারছিল না। সংসারের একটা প্রদীপ হিসেবে সে ছেলে আশা করেছিল।
এদিকে সন্তান আগে জন্ম নেওয়াতে তাকে বুঝানো হয় আমার সমস্যার জন্য বাচ্চা আগে হয়ে গিয়েছে। যেহেতু আমার বাচ্চা বাবার বাড়িতে হয় তাই আসল রহস্য সে এখনও উদঘাটন করতে পারেনি। মৃত্যুর আগে অবশ্য তাকে সত্যটা জানিয়ে ছিলাম আমি। কারণ মরে যাওয়ার আগে সকল সত্যি জেনে মরলে তার আত্মা হয়তো শান্তি পাবে। এ ধারণা নিয়েই তাকে সত্যিটা জানিয়েই শক্ত বেলুন দিয়ে আঘাত করি।
যতদিন বাবা, মা ছায়া হয়ে ছিল ততদিন আমি আর্থিক কষ্ট পাইনি। আমার কষ্ট শুরু হয় বাবা, মায়ের মৃত্যুর পর। ভাইও তখন বিয়ে করে পর হয়ে যায়। আমি কখনও এত খাদ্যাভাবে ভুগিনি। সে সময়টায় যতটা ভুগেছি। আর এর মূল কারণ ছিল অনন্যা। অনন্যা পেটে না আসলে আমার জীবনের এ হাল হত না। রঙিন থাকত। অনন্যার জন্যই আমার এমন পরিবারে বিয়ে করতে হয়েছে৷ তাই ছোটো থেকেই অনন্যাকে আদর করলেও আমার ভীষণ ক্ষোভ ছিল তার উপর। সে ক্ষোভের জন্যই হয়তো বিয়ের পর তার কষ্ট দেখে আমার কষ্ট লাগত না। আমার মনে হত আমি যদি তোর জন্য এত কষ্ট ভুগ করে নিতে পারি তুই কেন পারবি না। এ সব মিলিয়েই পূর্বে থেকে জিইয়ে থাকা রাগটা চলে আসে আমার মনে। তাই অনন্যার মৃত্যু আমাকে ততটা আঘাত করেনি। আমার জীবনে স্বচ্ছলতা দরকার ছিল৷ একটু আরামের দরকার ছিল। সেটা আমি পাইনি। এ না পাওয়া আমাকে কুড়ে কুড়ে খায়।
অফিসার আমির মায়ের কথা শুনে বলে উঠল
“এবার জেলে গিয়ে আরাম আয়েশ কইরেন। যতই হোক নিজের সন্তান ছিল। আপনার স্বামী অনন্যার বাবা ছিল না তবুও তার প্রতি কত মায়া ছিল। নিজের মেয়ের মতো কত ভালোবাসত। বেচারা জানতই না অনন্যা তার মেয়ে না। মেয়ের লাশ নিয়ে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছে। চোখের জল ফেলেছে। এরকম স্বামীকে মাথায় করে রাখা দরকার ছিল খুন করা না। আপনার নিজের ভুলের জন্য একটি নিরীহ প্রাণ কেড়ে নিলেন।”
মায়ের স্বীকারোক্তি শুনার পর আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল। অনন্যার প্রতি বাবার যেটা ছিল সেটা হলো মায়ার টান রক্তের টান না। অনন্যার প্রতি আমার যে টান সেটাও মায়ার টান। আর মায়ের ছিল নাড়ির টান। মায়ার টানের কাছে নাড়ির টানটাও ছোটো হয়ে গেল।
আমি কেবল মায়ের কাছে গিয়ে বললাম
“বাবার নামে এত বড়ো বড়ো মিথ্যা কাহিনি সাজানোর সময়ও তুমি বেশ সাবলীল ছিলে। তুমি টাকা লোভী অনেক আগে থেকেই ছিলে। আর দেখো সে টাকার লোভ তোমাকে কত নীচে নামিয়ে দিল। আর আমাকে এতিম করে দিল। বাবার কী দোষ ছিল বলো? কী দরকার ছিল বাবাকে শেষ করে দেওয়ার। সত্য কী চেপে রাখতে পেরেছো? এই অনন্যার জন্য বাবা মানুষের কাছে ভিক্ষা চেয়েছে এক বিন্দু জায়গা শুধু দাফন করার জন্য। দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে কেঁদেছে। এ অনন্যা তোমার জন্য কম করে নি মা। যখন আমাদের সাথে ছিল পড়ার পাশাপাশি তোমাকে সহায্য করত। টিউশন করে যা টাকা পেত তোমার জন্য শাড়ি আনত গহনা আনত। বাবার জন্য আনত না, তেমন। সব ভুলে গেলে মা? টাকার কাছে তুমি অনন্যার প্রাণটা বিক্রি করে দিলে? এতটুকু বিবেকে বাধলো না?”
আমি এসব বলতে বলতেই কেঁদে দিলাম। আমজাদ চৌধুরির আর মালিহার সাথে সাথে বাবার মৃত্যু রহস্যও বের হয়ে আসলো। তবুও রহস্যের সমাপ্তি হলো না। সময়ের অপেক্ষায় থাকতে হবে। এখনও ধোয়াশায় আছি আনহারি কে আর অনন্যা কে এটা ভেবে। ফাতেমাকে কে খুন করেছে। পটাসিয়াম সায়ানাইড কে মিশিয়েছে। কে আমাকে পেইন্টিং টা পাঠিয়েছে। সবকিছুই এখনও ধোয়াশায় আছে।
সে সাথে আরও মাথায় ঘুরছে, হেলেন কে? দীপকের সাথে তার কী সম্পর্ক। তৃনার কী হয়েছে? সব মিলিয়ে বেশ অশান্তি কাজ করছে আমার মনে। এ শহরে আর মন টিকছে। পরিবার বলতে আমার আর কেউ রইল না। সব হারিয়ে নিঃশ্ব আমি। দুঃখ আর আমাকে কষ্ট দিতে পারে না। যন্ত্রণা এতই প্রবল যে এখন সব কিছুই সহনীয় মনে হয়।
ঢাকায় এক দন্ড থাকার ইচ্ছা জাগছে না। শরীর ভীষণ কাঁপছে। বুকও ধুকধুক করছে। এ জীবন থেকে একটু মুক্তি চাই। তবুও যেন মুক্তি মিলছে না।
ঢাকা থেকে সেদিনেই কুঁড়গাও যাওয়ার জন্য রওনা দিলাম। আবারও সেই কালো বিড়ালটা দেখলাম যেটা সামনে এসে মিলিয়ে গেল। আমার মথায় সব প্রশ্নরা ঘুরপাক খাচ্ছে কেবল। জীবনের কোন দিকে আমি যাচ্ছি আমি নিজেও হয়তো জানি না।
ঢাকা থেকে কুঁড়গাওয়ে পৌঁছালাম মাগরিরবের আযানের সময়। দীপকদের বাড়িতে পৌঁছে লক্ষ্য করলাম বাড়িটা একদম চুপচাপ। নিয়ামত চাচাও নেই। দারোয়ান ছাড়া বাড়িটা দেখে প্রথমেই কেমন জানি উদ্ভট লাগলো। আমি সাত পাঁচ না ভেবে সোজা চলে গেলাম বাড়ির ভেতরে। বাড়ির মূল ফটকও খোলা। এবার কেন জানি না আমার কাছে বিষয়টি খটকা লাগলো। আমি ভেতরে প্রবেশ করলাম। লক্ষ্য করলাম কেউ নেই। শুধু মাত্র আনজুমান আর তার মেয়ে আছে। পিয়ালী বা দীপককে লক্ষ্য করছি না। সে সাথে আনহারিকেও দেখছি না। আমার ভেতরটায় এবার একটু ভয় হতে লাগল। আমি পুরো বাড়িটা খোঁজার আগে আনহারির নম্বরে কল দিলাম তবে খোলা পেলাম না। এবার যেন বিষন্নতা আমাকে ঝেঁকে ধরেছে। আমি পুরো বাড়িটা তন্ন তন্ন করে খুঁজেও আনহারিকে পেলাম না।
আমি হাঁপাতে লাগলাম। তাহলে কী দীপক আনহারির কিছু করেছে? পুলিশ স্টেশনে যাওয়া ভীষণ জরুরি হয়ে গেছে। আমি পুলিশ স্টেশনে যাওয়ার আগে আনজুমানের রুমে গেলাম। আনজুমান তার মেয়েকে নিয়ে বসে আছে। আমি তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম
“আনন্যা কোথায়? আর দীপকেই বা কোথায়?”
আনজুমান আমার দিকে তাকিয়ে বলল
“আমি সেসব কিছুই জানি না ফিয়না। সকাল বেলা অনন্যা আর দীপকের কথা কাটাকাটি হয়। এরপর ওরা একসাথে কোথায় বের হয়েছে আমার জানা নেই। সাথে পিয়ালিও গিয়েছে।”
আমি উতলা হয়ে জিজ্ঞেস করলাম
“কি নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছে?”
আনজুমান পাশ থেকে একটা তেলাপোকা আমার দিকে এগিয়ে দিল। আমি ভয়ে পিছু হটে বললাম
“কী করছেন?”
আনজুমান হালকা গলায় বলল
“এটা একটা সেন্সরের তেলাপোকা। তোমার ম্যাডাম অনন্যার। অনন্যা এ সেন্সর তেলাপোকা দিয়েই পায়েসে পটাশিয়াম সায়ানাইড মিশিয়েছে। তেলাপোকাটাকে একটা বিশেষ সংকেত দিলে উড়ে। তরীর আব্বু যখন পায়েস রান্না করেছিল তখন সে এ সেন্সর দিয়েই পায়েসে পটাশিয়াম সায়ানাইড মেশায়। এটা দীপক বুঝতে পারলেও কোনো প্রমাণ তার হাতে ছিল না। এটা নিয়েই তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়েছে। আমি জানি কাজটা অনন্যায় করেছে। তবে অদ্ভুতভাবে অনন্যা একটা কাগজ দেখালো যেটাতে দেখা গেছে দীপক কানাডা থেকে এটা দুইমাস আগে অর্ডার করেছে। এমন একটা জিনিস দীপু অর্ডার করেছে আমরা জানি না এটা অদ্ভুত না? কিন্তু তথ্য প্রমাণ তো দীপুর বিরুদ্ধে জানান দিচ্ছে। এসব নিয়েই তর্ক বিতর্ক হয়। তর্ক বিতর্কের এক পর্যায়ে তারা বাইরে যায়। এরপর দীপুর ফোনও বন্ধ পাচ্ছি। “
আমি বুঝতে পারলাম পটাশিয়াম সায়ানাইড মেশানোর আসল রহস্য। সবাই বুঝতে পারছে কাজটা আনহারি করেছে তবে তথ্য প্রমাণ সবকিছু বিতলে দিচ্ছে। এটাও আনহারির সাজানো একটা প্ল্যান। এখানে আসার প্ল্যান অনেক আগে থেকেই তার ছিল। আর সে অনুযায়ীই সে সবটা গুছিয়ে রেখেছিল। এখন ভাববার বিষয় তারা কোথায়? আনজুমানকে আবার জিজ্ঞেস করলাম।
“এত কিছু হয়ে গেল আর আপনি এত শান্ত হয়ে বসে আছেন বিষয়টি মাথায় ঢুকছে না।”
আনজুমান এবার শান্ত গলায় বলল
“নিজের স্বামীর জন্য সবসময় স্ট্রাগল করেছি। কিছু ছিল না তার, তবুও তাকে নিয়ে সংসার করেছি। সবসময় তাকে প্রাধান্য দিয়েছি। সে স্বামীর মুখোশ যখন খুলে গেছে তখন আমার ভেতরের আমিটা আর আমিতে নাই ফিয়না। এখন একটু হলে অনন্যার সে কষ্টটা আমি বুঝতে পারি। একজন মেয়ে হিসেবে ন্যায় অন্যায় বিচার করে অনন্যার সাথে ইনসাফ করা দরকার ছিল। তবে পরিবারকে সবার আগে প্রাধান্য দিতে গিয়ে অনন্যার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি। শুনো অনন্যা মরে যাক এটা কখনও চাইনি। চেয়েছিলাম অনন্যা বেঁচে থেকেও যেন তিলে তিলে মরে। কেন অনন্যার প্রতি এত ক্ষোভ ছিল জানি না। অনন্যা দেখতে সুন্দরী ছিল এ বিষয়টিও আমাকে খুব প্যারা দিত। তাই, না চাইতেও আমি তার সাথে খারাপ ব্যবহার করে ফেলি। আর এখন নিজের এ পরিস্থিতিতে অনন্যার প্রতি করা অন্যায়ে বেশ অনুতপ্ত। নিজের কৃতকর্মের জন্য আমি অনুতপ্ত। তাই এসব নিয়ে আর কথা বাড়াচ্ছি না। মা ও তার শাস্তি পাচ্ছে, ভাই ও পাবে। আমিও পেয়েছি। আচ্ছা তুমি অনন্যার কে জানি হও?”
“পারসোনাল এসিস্ট্যান্ট।”
কথাটা বলে আমি রুম থেকে বের হয়ে চলে আসলাম। আনজুমানের এত ভালো রূপটাও আমি মানতে পারছি না। চুপ হয়ে ভাবছি কোথায় গেল তারা? এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত নেমে গেল। রাত গড়িয়ে সকাল হয়ে গেল। তাদের খোঁজ মিলছে না। কলেও তাদের পাচ্ছি না। এবার আমার কাজ থানায় ইনফরম করা।
যে ভাবনা সে কাজ। আমি উঠে গেলাম দ্রূত। এখানে একা থাকতে ভয়ও লাগছে। চারজন মানুষ একসাথে নিখোঁজ। কোথায় আছে কোনো হদিশ নেই। আনজুমানের রুমের দিকে তাকিয়ে লক্ষ্য করলাম আকাশের দিকে তাকিয়ে কী যেন বিড়বিড় করছে। আমি সেসবে আর পাত্তা দিলাম না। সরাসরি চলে গেলাম অফিসার মাহিদের কাছে। এবার তার কাছে গিয়ে আমার কোনো অনুভূতি কাজ করছে না। আনহারির চিন্তায় আমার সকল অনুভূতি যেন মরে গেছে। আমি সেখানে যেতেই অফিসার মাহিদ হেসে বললেন
“আবার কী হয়েছে আপনাদের পরিবারের?”
উনার কথা শুনে কিছুটা বিরক্ত হলেও স্বাভাবিক গলায় বললাম
“বড়ো আপা মানে অনন্যা, দীপক, পিয়ালি, নিয়ামত চাচাকে গতলকাল থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমার মনে হচ্ছে অনন্যাকে ওরা কিছু করেছে। না হয় কোথায় যাবে ওরা। আনজুমানের ভাব গতিও ভালো ঠেঁকছে না। আপনি দয়াকরে একটা ব্যবস্থা করুন।”
আমার কথা শুনে অফিসার মাহিদ চুপ হয়ে গেল। কাকে জানি কল করছে। কল করে আমাকে বলল
“আনহারির নম্বরও তো বন্ধ।”
অফিসার মাহিদের মুখে আনহারি নামটা শুনে আমি চমকে উঠলাম। বেশ অগোছালো ভাষায় জিজ্ঞেস করলাম
“আপনি কী করে এ নাম জানেন? আপনি কী উনাকে চেনেন?”
অফিসার মাহিদ আমার দিকে তাকিয়ে বলল
“সে আমার ব্যাচমেটের পরিচিত ছিল। পড়াশোনা একই সাথে ছিল তাদের। মানে স্কুল কলেজ একই সাথে। এরপর আনহারি এডমিট নিল মেডিকেলে আমার ব্যাচমেট নিল ভার্সিটিতে। আমি আনহারিকে চিনি চার বছর আগে থেকে। বেশ কয়েকবার তার সাথে আমার কথা হয়েছে। সে তখন দেশের বাইরে ছিল। দেশে আসে কিছুদিন আগে।”
অফিসারের মাহিদের কথা শুনে আমি থমকে গেলাম, আনহারি একজন ডাক্তার সেটা আমার জানা ছিল না। আমি কৌতুহল গলায় জিজ্ঞেস করলাম
“আনহারি দেশের বাইরে গিয়েছিল কবে? কত বছর সেখানে ছিল?”
অফিসার মাহিদ হালকা গলায় বলল
“আনহারি দেশের বাইরে গিয়েছিল ৪ বছর আগে। আর সেখানেই ৪ বছর ছিল। নানা পরিকল্পনা করেও আসতে পারেনি। ৪ বছর পর কিছুদিন আগে আসলো।”
অফিসারের মাহিদের কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম। আনহারি যদি দেশের বাইরে থেকে চার বছর পর আসে তাহলে দুই বছর আগে কে মারা গেছে? আর ঐ পরিবারে কে ছিল? আমি আবারও জিজ্ঞেস করলাম
“আনহারি যদি দেশের বাইরে ৪ বছর থেকে থাকে তাহলে দুই বছর আগে তার পরিবারে কে ছিল? দুই বছর আগে কে মারা গিয়েছিল?”
অফিসার মাহিদ কিছু বলতে নিবে এর মধ্যেই অবিনাশ মুখার্জি নামে এক কনস্টেবল খবর নিয়ে আসে নদীতে একটা মেয়ের কাটা লাশ পাওয়া গিয়েছে। এ খবরটা শুনে আমার ভেতরটা চমকে উঠেছে। আনহারি না তো? অফিসার মাহিদ চেয়ার ছেড়ে উঠে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
“আমার এখন ঐদিকে ফোকাস দিতে হবে। আপনি একটা সাধারণ ডায়রি করে যান। আমি লা/শের সন্ধান করে আনহারির খোঁজ নিচ্ছি। আর বাকি তথ্য পরে সময় করে বলব। আপাতত আমি উঠি।”
অফিসার মাহিদ চলে গেলেন। আমি নিখোঁজের একটা ডায়রি করে থানা থেকে বের হলাম। থানা থেকে বের হয়েই আমি সরাসরি লাবনী জোহাকে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম
“আন্টি আনহারি দেশের বাইরে কবে গিয়েছিল?”
লাবনী জোহা সাবলীল গলায় উত্তর দিল
” উচ্চ মাধ্যমিকের পর ও দশেের বাইরেই থেকেছে। তার পড়াশোনা সেখানেই। এম বি বি এস কমপ্লিট করে দেশে আসে। কিছুদিন থেকে চার বছর আগে গিয়েছিল এম আর সিপি করতে লন্ডনে। এরপর তার কী যেন সমস্যা হচ্ছিল সেখানে তাই এক বছর থেকে চলে আসে। হঠাৎ এ প্রশ্ন?”
আমি উত্তরে বললাম
“এমনি। বলেই কলটা কেটে দিলাম।”
আমার মাথায় এবার নতুন প্রশ্নের সমাগম হচ্ছে। তাহলে দুই বছর আগে কে মারা গেল? আনহারি যদি দেশের বাইরে থাকে তাহলে আনহারির পরিবারের সাথে কে ছিল? প্রশ্ন যেন আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। আনহারি কোথায় আছে এ প্রশ্নটা যেন আমাকে আরও বেশি যন্ত্রণায় ফেলছে ।
আমি পাগলের মতো হাঁটছি। একা একা নিজেকে ভীষণ অসহায় এবং ক্লান্ত লাগছে। আনহারির কিছু হলে আমি লাবনী জোহাকে কী জবাব দিব সেটাই ভাবছি। আমার ভীষণ চিন্তা হচ্ছে। আমি কী একবার লাবনী জোহাকে বলব বিষয়টি নাকি বলব না। আমার কী করা উচিত আমি বুঝতে পারছি না। এসব ভেবে ভেবেই সামনের দিকে এগুলাম। হঠাৎ করে ইটে পা আটকে সামনের দিকে ঝুঁকে গেলাম। পড়ে যাওয়ার আগেই কেউ আমাকে ধরে নিল। আমি তার মুখ বরাবর তাকিয়ে দেখলাম একটা ছেলে। আমি তার হাত থেকে নিজের বাহু দুটো ছাড়িয়ে নিলাম। সে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
“কোথাও ব্যথা পাওনি তো ফিয়না?”
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম
“আপনি আমার নাম জানলেন কী করে? কে আপনি?”
তার উত্তর আসলো
আমি বিভোর। সে সাথে সমাধান হলো কিছু রহস্যের।
সবাই কমেন্ট করবেন প্লিজ।