#শারমিন আঁচল নিপা
কালো একটা বিড়াল কোথায় থেকে এসে যেন মিলিয়ে গেল। যুক্তি হালকা দম নিল। রুমের ভেতর থেকে তার পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে রুদিতা বের হয়ে এলো। যুক্তিকে জড়িয়ে ধরে বলল
“মাম্মা চকলেট এনেছো?”
যুক্তি রুদিতার কথা শুনে কিছুটা অপ্রস্তুত গলায় বলে উঠল
“আজকে তো মাম্মা ভুলে গেছে। কাল অবশ্যই আনব। রাগ করে না আমার জান বাচ্চাটা।”
রুদিতা বাচ্চা হলেও মাকে বেশ বুঝে। সে হালকা হেসে আধু আধু গলায় বলল
” ঠিক আছে মাম্মা। আজকে তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। কাল কিন্তু মনে করে চকলেট আনবে।”
যুক্তি রুদিতার গালে একটা চুমু কেটে বলল
“আলবাদ আনব।”
যুক্তি কাপড় ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় এলিয়ে পড়ল। মোবাইলটা বেজে উঠল ফিয়নার কলে। যুক্তি কলটা ধরল। ফিয়নার সাথে তার পরিচয় হয় একটা বাস স্ট্যান্ডে। রুদিতা দৌঁড়ে যাচ্ছিল রাস্তায়। সে মুহুর্তে একটা বাসও বিপরীত থেকে ছুটে আসছিল। ফিয়নায় তখন রুদিতাকে আল্লাহর ইশারায় বাঁচায়। সে থেকে ফিয়নাকে বেশ আপন করে নেয় যুক্তি। যদিও তার সাথে খুব ক্লোজ না। তবুও মাঝে মাঝে খোঁজ নেওয়া, রুদিতার সাথে কথা বলার পর্ব তাদের চলে। ফিয়নার কলটা ধরেই যুক্তি বলে উঠল
“হ্যাঁ বলো, কেমন আছো?”
ফিয়না হালকা হেসে বলল
“আমি তো ভীষণ ভালো আছি। কালকের কথা মনে আছে তো? কাল সন্ধ্যায় আমার বাসায় কিন্তু চলে আসবে। আমার হলুদ হবে। তুমি না আসলে আর রুদিতা না আসলে আমার হলুদ ইনকমপ্লিটেই থেকে যাবে। “
ফিয়নার কথা শুনে যুক্তি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। সে সত্যিই সবটা ভুলে গেছে। তবুও সেটা ফিয়নাকে বুঝতে না দিয়ে বলল
“হুম অবশ্যই আসব আমি। সন্ধ্যা সাতটার মধ্যেই চলে আসব।”
বলেই কলটা কাটল। যুক্তির মাথা থেকে অনন্যার ঘটনা সরছেই না। যতবার সরাতে চাচ্ছে ততবারেই যেন সেটা ঝেঁকে বসছে। যুক্তি চোখ বন্ধ করলেই অনন্যার মুখটা ভেসে আসছে। হঠাৎ করে তার মাথায় ঢুকলো সে তার স্যারকে অনন্যা কাল যাবে এ বিষয়টি বলে নি। তাই চট করেই ফোনটা হাতে নিয়ে অনুভূমিক প্রান্তকে কল দিলেন।
অনুভূমিক প্রান্ত তখন নিজের বাসার লম্বা করিডোরে পায়চারি করছেন। রাতের খাবারের পর এটা তার স্বাভাবিক রুটিন। প্রতিদিনেই তিনি এভাবে হাঁটেন৷ যুক্তির কল পেয়ে সে কলটা ধরে হ্যালো বলতেই যুক্তি কোনোরকম সালাম বা কোনো সম্বোধন না করেই সরাসরি বলল
“কাল সকাল দশটায় একজন পেশেন্ট আসবে আপনার কাছে। তার নাম অনন্যা। মেয়েটার বেশ অদ্ভুত একটা অতীত আছে। আপনি একটু বিষয়টি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করবেন৷ মেয়েটাকে দেখে ভীষণ অসহায় লাগছিল। এ অসহায়ত্ব যেন কাটিয়ে উঠতে পারে সে বিষয়টায় একটু খেয়াল রাখবেন। আমার মনে হয়েছে আমার থেকে ভালো ট্রিটমেন্ট আপনিই করতে পারবেন।”
অনুভূমিক প্রান্ত তার লম্বা চুলগুলো হাত দিয়ে আঁচরাতে আঁচরাতে জবাব দিল
“ঠিক আছে। তুমি কেমন আছো?”
যুক্তি ঠিক আছে বলার পরেই ফোনটা কেটে দেয় তাই পরের বাক্যটা সে শুনে নি। এদিকে যুক্তির আচরণে বেশ কিছুটা অবসাদ দেখে অনুভূমিক প্রান্ত একটু চিন্তার ভাঁজ কপালে টেনে বসলেন।
পরদিন সকাল বেলায় যুক্তির ফোন বেজে উঠল। আজকে তার উইকেন্ড তাই সকালে উঠার প্যারা নেই। যুক্তির মেয়েকে তার বাসার আয়ায় দেখাশোনা করে। যুক্তির হাসবেন্ড বেশিরভাগ সময় দেশের বাইরে থাকে। তাই বাসায় তারা তিনজনেই থাকে। যুক্তি, রুদিতা আর রুদিতার আয়া। হঠাৎ কলটা বেজে উঠায় যুক্তি অপ্রস্তুত হয়ে কলটা ধরতেই লক্ষ্য করল অনুভূমিক প্রান্ত কল দিয়েছে। সে কলটা ধরে আমতা আমতা করে বলল
“স্যার এত সকালে? কিছু হয়েছে কী?”
চলবে……….
প্রাবাসী ভাইদের কাছে অনুরোধ, আপনারে কমপক্ষে ১টি এড এ ক্লিক করবেন
শারমিন নিপা