পুত্রের ৩ বছর হবার পর থেকে তার ফুটবল কোচ, ক্রিকেট কোচ, গৃহ শিক্ষক, অংকণ শিক্ষক, নৃত্য শিক্ষক হিসেবে বিনাবেতনে নিয়োগ পেয়েছি।
আলহামদুলিল্লাহ।
ছেলেকে মাঠে নিয়ে যাচ্ছি কয়েকদিন ধরে।আগে নিয়ে গেলে খেলতে চাইতো না,দৌড়াদৌড়ি করে গাছ পাতা ফুল দেখে চলে আসত।এখন বল খেলতে চায়। বড় বড় বাচ্চারা খেলে সে পাশে স্যান্ডেল খুলে দুই হাঁটুতে হাত রেখে অভিজ্ঞ ফিল্ডারের মত দাঁড়িয়ে থাকে। বল তার দুই ফুট দূরে দিয়ে গেলেও সে উত্তেজনায় মাটিতে পরে যায়।
অন্য বাচ্চারা তাকে বল ছুঁতেও দেয়না, তার কারণ সে সাইজে তাদের চেয়ে অনেক ছোট (3 Years 2 months)।
তো সে দাঁড়িয়ে থাকে, আমি তাকিয়ে থাকি এই চলছিল। গতকাল একটা ১০-১২ বছরের বাচ্চাকে আড়ালে ডেকে বললাম,
“শোন তোমার নাম কি?”
“মোঃ আসিফ ইকবাল “
“মোঃ আসিফ ইকবাল তোমাদের দলে ঢুকার নিয়ম কি? আমার ছেলে কি ঢুকতে পারবে?”
” না আন্টি, ও ছোট ব্যাথা পাবে৷ আমাদের দলে সবাই ৭/৮ বছরের উপরে”
এদিক ওদিক তাকিয়ে ছেলের পকেটে একটা চকলেট দিয়ে বললাম,
“বাবা, আমার ছেলেকে একবার তোমাদের ফুটবলে লাত্থি দিতে দিও,সে খুব আশা করে এসেছে”
সে পকেট থেকে চকলেট বের করে আমার পাশে রেখে বলল,
“সরি আন্টি এভাবে পারব না, ক্যাপ্টেনের বল।ওকে জিজ্ঞেস করে দেখি”
একটু পরে,ছেলে বল এনে দিয়েছে।আমার পুত্র এত খুশি হয়েছে। পুরা মাঠের সবাই পুত্রের দিকে তাকিয়ে। ছেলে আমার স্যান্ডেল পরে টিভির মত উপর দিকে তাকিয়ে কপালে হাত নিয়ে হাতে চুমু খেয়ে পা দিয়ে লাত্থি মারল।
বেচারার স্যান্ডেল উড়ে চলে গেলো বেশ অনেকটা দূরে৷কিন্তু বল নড়ল না। ছেলেরা হাসতে হাসতে বল নিয়ে গেল।পুত্র আশাহত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। আমি ভাবলাম গেল ছেলের খেলার সাধ মিটে গেল।তখনি মোঃআসিফ ইকবাল এসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।
সাথে সাথে পুত্র দুই হাঁটুতে হাত দিয়ে ক্রিকেটীয় ফিল্ডারদের মত আবার দাঁড়িয়ে পরল।
খেলা শেষে মোঃআসিফ ইকবাল আমাকে বলল,
“আন্টি এইভাবে তো ওকে খেলাতে পারবেন না।আমি একটা বুদ্ধি দেই”
বলে থেমে আমার হাতের চকলেটের দিকে তাকিয়ে রইল।
চকলেট দিলাম।
সে বলল,
“এই মাঠে ছোট বড় মোট ৫ দল খেলে। সব দলেই ক্রিকেট খেলার সময় বল খুটার লোক লাগে।ওকে কোন এক দলে বল খুটার কাজে ঢুকাইয়া দেন।আস্তে আস্তে দলে ঢুকবে”
আজকে আগে আগে গিয়ে এক বাচ্চাকে ডাকলাম। আসিফ ইকবাল কে দেখলাম না।
“বাবা, তোমার নাম কি?”
” নাম লাগবেনা, কাজ বলেন”
“তোমাদের দলে বল খুটার জন্য আমার ছেলেকে দিতে চাই”
“আগে খেলছে?”
“খেলছে”
প্রায় তিন মিনিট ইন্টারভিউ এর পর ছেলের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত হল। শেষ প্রশ্ন ছিল আমাকে,
“আন্টি পারবে তো?”
“পারবে, ইনশাল্লাহ”
ছেলে বল খুটায় পারদর্শী হয়ে যাচ্ছে। তবে অনেক বেশি সময় লাগে কারণ বল খুঁজে পেয়ে আনার সময় সে নাচতে নাচতে আসে। এই সময়ে দলের ছেলেরা আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।
আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি।
গল্পঃ খেলোয়াড় পুত্র
লেখাঃ সুলতানা জহুরা আফরিন
(সত্য ঘটনা অবলম্বনে) Repost