#অবন্তিকা_তৃপ্তি
আজ কাব্যদের ছাদের আকাশে মস্ত বড় চাঁদ দেখা দিয়েছে। সন্ধ্যার দিকে ‘ভাইকুঞ্জ’ পরিবারের সবগুলো আন্ডা-বাচ্চা দৌড়ে দৌড়ে ছাদের দিকে যাচ্ছে। আজ বহুদিন পর, কাব্যের ভাই শাহবীর সিদ্দিক স্নিগ্ধ আজ বাড়ি ফিরেছে। মূলত ও পড়াশোনা করে; মিলিটারি ইনস্টিটিউশন অফ সাইন্স এন্ড টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে রোজ-রোজ করা শাসনে থেকে যখন বাড়ি ফিরে; কাব্য তখন ছোট ভাইয়ের জন্যে পার্টির আয়োজন করে। ওরা দুই ভাই সেদিন রান্না করে ছাদে; কামলা খেটে সবাইকে খাবার সার্ভ করে, সাথে ভাইকুঞ্জের ছেলেমেয়েদের সাথে লেট নাইট পার্টি তো চলেই। পরদিন দুই ভাই থেকে শুরু করে এ বাড়ির প্রতিটা ছেলে মেয়েই দুপুর দুটোয় মায়েদের কাছ থেকে বকা শোনে হেলেদুলে ঘুম থেকে উঠে। এভাবেই চলছে এতো বছর। স্নিগ্ধ এবার হুট করেই বাড়ি এসেছে; কাউকে না জানিয়েই। তাই কাব্য মাত্রই রাতের দিকে বাজারে গিয়ে যা পারে কিনে এনেছে; বাকি জিনিস এই মাঝরাতে নিজেদের রেস্টুরেন্টটা খুলিয়ে স্টক থেকে নিয়ে এসেছে। তবুও ওদের পার্টি করা চাই-ই! এর পেছনে একটা কারণ আছে. . . স্নিগ্ধ কখনোই আর্মি শাসিত কোনো ভার্সিটি বা কলেজে পড়তে চায়নি। কিন্তু আনোয়ার অর্থাৎ ওদের বাবা রিটায়ার্ড আর্মি হওয়ার দরুন এ বাড়ির প্রতিটা ছেলে-মেয়েকে বাধ্যতামূলক আর্মি শাসিত স্কুল-কলেজে পড়ানো চিন্তা করেছিলেন।
কাব্য শুরুতে ক্যাডেট স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন। স্কুলটা কোনরকমে কাটিয়েছে ক্যাডেটে কড়া শাসনের মধ্যে। কিন্তু কলেজে উঠেই; কাব্য জেদ ধরেছিল. . . সে ক্যাডেটে পড়বে না। ক্যান্টনমেন্টে চলে যাবে. . . সেখানে হোস্টেলে থেকে বাকি পড়া শেষ করবে। আনোয়ার শুরুতে গাইগুই করলে. . . কাব্য সোজা বাড়ি থেকে দুদিনের জন্যে নাই হয়ে যায়। পরবর্তীতে শামিমার কান্নাকাটির জোরে আনোয়ার বাধ্য হোন ছেলের কথা শোনতে! অবশ্য কাব্যের গুণধর বাবা-মা জানেন না. . . কাব্য এই দুদিন বন্ধুদের সাথে বান্দরবন ঘুরতে গিয়েছিল। একদিক থেকে ভালোই হয়েছিল. . . ক্যাডেট স্কুলে পড়ে মাথা-টাথা চিড় ধরে গেছিল ওর একপ্রকার। ছুটিটা কাটিয়ে লাভ তো হয়েছেই।
এবার আসে স্নিগ্ধের পালা। বাবার খুব কাছের আদরের পুত্র হওয়ার দরুন ভাইয়ের দেখিয়ে দেওয়া এই রাস্তায় চলতে পারেনি ও। কাব্য পড়েছে বলে ও ক্যান্টনমেন্টে স্কুল-কলেজ শেষ করলে; বিশ্ববিদ্যালয়ের বেলায় ইচ্ছে করেই আনোয়ার মিস্ট চুজ করে দিলেন। বেচারা স্নিগ্ধ তারপরেই ফেসে গেলো। ফোন দিয়ে কাব্যকে নিজের দুঃখের কথা বলে সবসময়. . . কাব্য কি করবে? তাই ভাই বাড়ি এলে টুকটাক ওর মনোরঞ্জন করানোর চেষ্টা চালায়।
স্নিগ্ধ আজকেই বাড়ি ফিরেছে. . তাই সবার জন্যে আজ রাতে পার্টি রেখেছে ছাদে।চিকেন বারবিকিউ করা হবে সেখানে।
সবাই উপরে চলে গেছে ততক্ষণে। কায়া সুন্দর করে ওড়না মাথায় দিয়ে কুহুর রুমে এসে দেখে. . কুহু হা করে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফোন স্ক্রোল করছে। কায়ার মেজাজ সেটা দেখেই বিগড়ে গেল; ও টুপ করে ফ্যানটা বন্ধ করে দিল। ফ্যান বন্ধ করতেই কুহু গরমে অতিষ্ট হয়ে ফোন রেখে কায়ার দিকে তাকালো;
— মার্চ মাসের গরমে কার এত শীত লাগতেসে ভাই?
কায়া দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো. . কুহুর ওমন চিড়ছিড়ে মেজাজের দু পয়সার দাম না দিয়ে ভাবলেশহীনভাবে বললো;
— গরম না শীত সেটা পরে ভাববে। উঠো; পার্টি আছে আমাদের ছাদে।
কুহু তিতিবিরক্ত হয়ে ফোনটা আবার মুখের সামনে ধরলো। আঙ্গুকের সাহায্যে দ্রুতগতিতে স্ক্রল করতে করতে বললো;
— যাবো না আমি. . ফ্যান চালা।
কায়া বিরক্ত হয়ে ঠাস করে কুহুর হাত থেকে ফোন নিয়ে বন্ধ করে বিছানায় ছুড়ে ফেলল;
— ফোনের প্রতি অ্যাডিকটেড হয়ে গেছো তুমি কুহুপু। উঠবে না কাব্য ভাইকে ডাকবো?
কুহু ঘড়ির দিকে তাকালো। ঘড়ির টাইম মেপে নিয়ে বললো;
— কাব্য ভাই বাজার থেকে এসে গেছেন?
কায়া জবাবে বললো;
— হ্যাঁ; আমাদের ডেকেছে এইজন্যেই।
কুহু কথাটা শোনামাত্রই টুপ করে শোয়া থেকে উঠে গেল। চুল একপেশে করে ঠিকঠাক করতে করতে হেসে বললো;
— আগে বলবি না তুই। আচ্ছা কোন জামা পড়বো? দেখিয়ে দে না।
কুহু উঠে আলমারি খুলেছে। আলমারিতে ঠাসা ঠাসা ড্রেস দেখেও সিলেক্ট করতে পারছে না কোনটা পড়বে। মুখটা গোমরা করে; ঠোঁট কামড়ে ধরে দেখে যাচ্ছে সকল ড্রেসকে.. . হাতাচ্ছে একটার পর একটা।
কায়া সাহায্য করলো; পিংক একটা ড্রেস বের করে দিয়ে বললো;
— এটা পড়ো। সেবার বিয়েতে পরে গেছিলে; দারুণ লেগেছিলো।
কুহু ড্রেসটা দেখলো ভালো করে। তারপরেও যখন মন ভরলো না; আয়নার সামনে দাড়িয়ে ড্রেসটা গায়ে আলগাভাবে ধরে একেবেকে নিজেকে দেখলো। এই ড্রেসে ভালো দেখাচ্ছে. . কুহু কায়ার দিকে তাকিয়ে থাম্বস আপ দেখিয়ে বললো;
— ডান! আমি চেঞ্জ করে আসি।
চেঞ্জ করবে বলেও; কুহু বিছানার উপর ড্রেস রেখে শুধু ওড়না-পায়জামা নিয়েই দৌড় দিল। কায়া দীর্ঘশ্বাস ফেললো আবারও। এই কুহু সবসময়ই এমন করবে. . অবশ্য এমন এলোমেলো থাকা মেয়েরাই জিতে যায় সবসময়! এই কুহু ড্রেস চাওয়ার চক্করে কাব্য ভাইয়ের পক্ষ থেকে ভালোই রোমান্স জিতে যাবে। কাব্য ভাই যাবে. . ড্রেস দিবে. . কুহু লজ্জা পাবে. . তারপর! তারপর কুহুপু হাচি দিয়ে বসবে। রোমান্সের দফারফা হয়ে যাবে একদম! এটাই হয়ে আসছে সবসময়. . কায়া হান্ড্রেড পার্সেন্ট গ্যারান্টি. . সামনে এটাই হবে।
–
কুহুকে ঠিক জামা এগিয়ে দেওয়া লাগলো। কুহুর চোখ-মুখে ভ্যাবলার হাসি! কায়া আর লজ্জা দিলো না ওকে। চুপচাপ ড্রেস দিল ওয়াশরুমের দরজার ফাঁক দিয়ে। কুহু তৈরি হয়ে হালকা ব্লাশ দিল গালে;কাজল, আর একটা রেড লিপস্টিক! কায়া লাল রঙ্গা লিপস্টিক দেখে নাক-মুখ কুঁচকে বললো;
— এই কালার ক্যান দিসো?
কুহু লিপস্টিক হাতে ফিরে তাকালো কায়ার দিকে;
— ভালো দেখাচ্ছে না?
কায়া এগিয়ে গিয়ে; একটা নুড শেডের লিপস্টিক নিয়ে লাল লিপস্টিকের উপরে ঘষে দিল। ভালো করে দেখে বললো;
— আগেরটা ডার্ক বেশি ছিলো। এইবার ঠিক আছে।
কুহু তারপর ওড়না সুন্দর করে ঝুলিয়ে চুল ঠিক করে কায়াকে নিয়ে বেরুলো।
_________
কাব্য-স্নিগ্ধ বারবিকিউ করছে। এই বিল্ডিংয়ের ছাদের একপাশে বানানো হয়েছে চুল্লি রাখার জন্যে আলাদা জায়গা। সেখানেই দাড়িয়ে দুইভাই। দুজনের গায়ে কিচেন এপ্রোন। দুই ভাই রান্না করছে. . আর গল্পে বেহুশ হয়ে যাচ্ছে। কাব্য স্নিগ্ধকে কাজের ফাকে ভার্সিটি কেমন যাচ্ছে. . তা জিজ্ঞেস করে যাচ্ছে। স্নিগ্ধও ধোয়া উড়াতে উড়াতে বেশ জবাব দিচ্ছে কাব্যের কথাতে।
কায়া ছাদে গিয়ে দুই ভাইয়ের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। ছোট দশ বছরের মহুয়া গিয়ে দাড়িয়েছে তার প্রিয় কাব্য ভাইয়ের পাশটায়। বড়বড় চোখে বিস্ময় নিয়ে দেখছে. . তার আদর্শ কাব্য ভাইয়া কি করে মোরগ পোড়াচ্ছে। মাঝেমধ্যে আগ্রহ দমাতে না পেরে জিজ্ঞেসও করছে এটা সেটা. . কাব্যও ভীষণ ধৈর্য নিয়ে জবাব দিচ্ছে বাচ্চা মহুয়ার প্রশ্নের।
কাব্য আরো এক পিস মোরগ স্লাইস পোড়ানোর জন্যে দিলো। পাশ থেকে স্নিগ্ধ আগুনের তাপ বাড়িয়ে দিলো। মহুয়া এইবারও অত্যধিক আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো;
— এটা এখন কি করলে কাব্য ভাইয়া?
কাব্য মৃদু হাসলো. . বলে দিলো কি করলো সে;
— পোড়ানোর জন্যে দিলাম।
মহুয়া জিজ্ঞেস করলো;
— মায়ের রান্নার মতো এটাতে কেন মসলা কেন দিলে না?
কাব্য জবাব দিল;
— দিয়েছি তো। ম্যারিনেট করে রেখেছি।
— কাব্য ভাইয়া; ম্যারিনেট কি?
কাব্য এবারেও ধীরে-সুস্থে শিখিয়ে দিল মুরগি কিভাবে ম্যারেনেশন করতে হয়। মহুয়া খুব আগ্রহ দেখাচ্ছিল। কাব্য এক্য মুরগির স্লাইস ওর হাতের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো;
— পোড়াবি? ট্রাই করতে চাস?
মহুয়ার চোখ-মুখ কুচকে গেল;
— আমার কেমন যেন করে। মুরগি কাঁচা।
কাব্য হেসে ফেললো। স্নিগ্ধ পাশ থেকে কয়লার ভাপ সামলাতে সামলাতে মহুয়ার মাথায় থাপ্পড় মেরে বলবো;
— বিয়ের পর জামাইরেও বলিস. . মুরগি কাচা। পোল্ট্রি মুরগি হইসে একেকটা।
মহুয়া আবার জিজ্ঞেস করতে যায়;
— স্নিগ্ধ ভাইয়া; পোল্ট্রি কি?
স্নিগ্ধ হতাশ চোখে তাকালো মহুয়ার দিকে। মহুয়ার চোখে তখনো প্রশ্নের ভার! ছোট মেয়েটা একদিন হয়তবা এইসব প্রশ্নের ভারেই নুইয়ে পড়বে। স্নিগ্ধ কিছু বলার আগে; হঠাৎ মুবিন দৌড়ে এলো বোনের পাশে। মহুয়াকে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বললো;
— ভাইয়ারা রান্না করছে বোনু। ডিসটার্ব করা ব্যাড ম্যানার।
মহুয়া ওকেও জিজ্ঞেস করতে করতে যাচ্ছে;
— প্রশ্ন করা ব্যাড ম্যানার কেন হবে; ভাইয়া?
স্নিগ্ধ কপাল চাপড়ায় এই মহুর কথা শোনে। বিড়বিড় করে বলে;
— একেকটা নমুনা পয়দা হইসে এই ঘরে।
কাব্য স্নিগ্ধের দিকে তাকায়! ম্যারেনেট করা মুরগি পিস আরেকটা দক্ষভাবে নিজের হাতে তুলে নিতে নিতে বললো;
— থাক বাচ্চা ও। কয়লা আরও কটা দে।
____
আজ বেশ ঠান্ডা রাত, বাতাস বইছে ভালোই! তবুও কুহু বেশ দূরেই দাড়িয়ে হ্যান্ড ফ্যানের হাওয়া গিলছে। ওড়না দিয়ে চুলের একাংশ ঢেকে রাখা। কোথা থেকে শোনেছে কুহু. . চুল বের করে ছাদে ঘোরা উচিত না! ভূত-প্রেতে ধরে তাতে। তাই চুপচাপ মাথায় কাপড় তুলে রেখেছে। কুহুর গোলগাল নাদুস-নুদুস মুখটা ছাদের আলোয় দেখাচ্ছিল চুড়ান্ত মোহনীয়! কাব্য সেদিকে একবার তাকালো; পরপর গলা খাকারি দিয়ে উঁচু গলায় ডাকলো;
— কুহু; ওইখান থেকে সসের ডিব্বাটা নিয়ে আয়।
কুহু তো একপায়ে দাড়িয়ে কাব্যের হুকুম মানার জন্যে। ও এক দৌড়ে গিয়ে সসের ডিব্বা এনে দিলো কাব্যের হতে। কাব্য সেটা নেওয়ার সময় বেকায়দায় বলা; আর অবহেলায় বলুক. . কাব্যের ভেইন্স এ নীল শিরা-উপশিরার হাতটা কুহুর হাত ছুয়ে গেল. . . অযথাই; কুহুর মনটাকে হয়তো পুনরায় দুর্বল করে দেওয়ার জন্যে।
আচমকা প্রিয় শখের পুরুষের একটুখানি স্পর্শ কুহুর হৃদস্পন্দন থামিয়ে দিল। পাগলা ঘোড়ার ন্যায় ছুটলো তারপরেই! কুহু আঁতকে উঠে হাতটা দ্রুত সরিয়ে নিতেই; দুহাতের মাঝখানে থাকা সসের ডিব্বাটা পুরোটাই পরে গেল মাটিতে।
কাঁচের বোতল তো আর কুহুর মনের ছটফটানি মানবে না; মুহূর্তেই মাটিতে পরে ভেঙ্গে চৌচির হয়ে গেলো। কাব্য তো একপ্রকার হতবম্ব হয়ে ভাঙা সসের ডিব্বাটার দিকে চেয়ে আছে।এটা কি হলো?
ওদিকে আচমকা এমন একটা ব্লান্ডার করে ফেলায় কুহু নিজের চোখ অব্দি ছানাবড়া হয়ে গেলো। কাব্য কিছু বলার আগেই. . স্নিগ্ধ খিচে উঠে বলল;
— কুহু; বইন এটা কি করলি? একটাই সসের বোতল ছিলো। এখন বাকি মোরগ পোড়াবো কি করে? ধুর!
কুহু অসহায় চোখে স্নিগ্ধের দিকে তাকালো। ওর মন বারবার বলছে. . . কাব্য ভাই ওকে কিছু না বলুক। ও আবেগ সইতে পারেনি; কাব্যের বড়বড় আঙুলের স্পর্শ ওর মনে তোলপাড় করে দিয়েছে! এটুকু কাব্য ভাই কোনদিক না বুঝুক। লজ্জায় আর এ মুখ হতে পারবে না কখনো তাহলে।
কুহু চোখ-মুখ খিঁচড়ে কাব্যের দিকে তাকালো. . ভয়ে ভয়েই বলার চেষ্টা করলো কিছু.;
— সরি! কিভাবে এটা. . .
কাব্য সত্যই কুহুকে কিছুই বললেন না। জিজ্ঞেস করলেন না— সামান্য হাত ছুতেই কুহুর এই দুর্দশা কেন হয়ে গেল? বরং শান্ত স্বরে কাব্য স্রেফ এটুকু বললো;
— সমস্যা নেই। আমি কিনে আনছি।
কাব্য কথাটা বলে কিচেন এপ্রোন খুলে পাশে থাকা কায়ার হাতে ধরিয়ে দিল। আজ কাব্য গায়ে দিয়েছে হালকা নীল রঙের একটা টিশার্ট; আর হাঁটু সমান একটা ট্রাউজার। হাঁটুর নিচে পায়ের মধ্যে লেপ্টে থাকা ঘন লোম দেখা যাচ্ছিল। কুহুটাও সেটা দেখে আবারও কেপে কেপে উঠে। নিজের বেহায়াপনা দেখে কুহু নিজেই নিজেকে শাসিয়ে উঠলো;
— বেহায়ার জাত; ছেলে দেখলেই মুখ দিয়ে লোপ পরে, না? চুপ; একদম চুপ। হার্ট বেশি জোরে বিট করার এখানে কিছুই নেই কুহু, এটা সামান্য একজনের পা; ঘন লোমে ভরা পা। বাবার আছে এমন; চাচ্চুর আছে এমন; সবার আছে। এটা তেমন আহামরি কিছুই নয়। চোখ সরিয়ে চুপ করে বসে থাক।
অথচ কুহু জানে. . ওর চুপ করে বসে থাকার শাসানো কথা হৃদয় মানবে কেন? হৃদয় তো কাব্যকে দেখলেই টুপটাপ করে বৃষ্টি ঝরায়; কুহুর কথার অবাধ্য হয়েই ঝরায়।
কাব্য পকেটে ওয়ালেট ঢুকাচ্ছে। পাশ থেকে স্নিগ্ধ বললো;
— ভাই; এই গাধীরেও নিয়ে যাও। ও কাম সারছে; ও উসুল করুক। ওরে নিয়ে সসের ডিব্বা ওরে দিয়াই উঠাবা।
কুহু সেটা শোনে কুহুর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে দেখলো। তারপর নিজের মতো করেই চেয়ারে হ্যাঙ্গারের মতো ঝুলিয়ে রাখা জ্যাকেটটা হাতে নিতে নিতে বললো;
— একটা সসের বোতল উঠানোর জন্যে চৌদ্দ জন লাগে? ওর যাওয়ার কি দরকার?
কুহু উসখুস করছিলো ভীষণ। হয়তবা ও নিজেও যেতে চাইছে. . কাব্যের সাথে। সময় কাটাতে চাইছে তার সঙ্গে। কুহুর মনের অবস্থা বাজে কায়া হঠাৎ বলে বসলো;
— কুহুপু দোষ করেছে না? ও ক্যান যাবেনা? শিক্ষা হোক একটু।
কাব্য কুহুর দিকে তাকালো ঠান্ডা চোখে। কণ্ঠে তেমন ভার নেই; শীতল গলায় জিজ্ঞেস করলো;
— রাতে এখন ভালোই ঠান্ডা পড়েছে, যাবি?
কুহুও হাতে চাঁদ পেলো যেন। এটার অপেক্ষাতেই তো ছিলো ও। কুহু স্নিগ্ধের দিকে চেয়ে ভাব দেখিয়ে বললো;
— যাব আমি।
বলে কাব্যের আগে-আগেই হাঁটা ধরলো। কাব্য কুহুর অবুঝপনা, খামোকা জেদ দেখে ছোট করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে এগুতে লাগলো পেছন-পেছন। কায়া পেছন থেকে ডাকল একবার কুহুকে;
— কুহুপু শাল নিয়ে যাও; বাতাস ভালোই দিচ্ছে।
কুহু শোনে না. . তরতর করে চলে যায় ছাদ থেকে সিড়ি বেয়ে। কাব্য পেছন পেছনে আসছে; ফোন স্ক্রল করতে করতে। কাকে যেন মেসেজ করছিলো। কুহু একবার ভাবে. . জিজ্ঞেস করবে। পরে মনে হয়. . কাব্য ভাইয়ের হয়তবা জরুরি মেসেজ হতে পারে। সামান্য ব্যাপারে সন্দেহ করা ঠিক নয়। কাব্য ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড থাকলে সবার আগে কুহুই জানতো. . যেভাবে চিপকে থাকে সারাদিন তার সাথে. . ও জানবে না আবার!
সিড়ি দিয়ে বড্ড আরাম করে হেলেদুলে কুহু নামছিল. . তারপরেই ঘটলো বিপত্তি! চট করে সমস্ত সিড়ি অন্ধকার করে আচমকা বিদ্যুৎ চলে গেল। পুরো সিড়ি ঘুটঘুটে অন্ধকারে তলিয়ে গেল মুহূর্তেই। কুহুর নিকটোফোবিয়া থাকার দরুন জোরে ও চিৎকার দিয়ে সিঁড়ির হাতল চেপে ধরলো।
মুহূর্তেই ঘেমে হাপাতে হাপতে হাত বাড়িয়ে অন্ধের মতো খুঁজতে লাগল ভরসার মানুষকে;
— ক. . কাব্য ভাই. . আ. আপনি আছেন? ক. কাব্য ভাই. .
কুহুর গলার আওয়াজ থেমে থেমে আসছে। গলা থেকে একসময় শব্দ বেরুনো বন্ধ হয়ে গেলো। কুহু শুধু হাপড়ের মতো শ্বাস নিয়ে খুঁজে যাচ্ছে। তারপর. . একটা ভরসার হাত এসে আচমকা কুহুর হাতড়ে বেড়ানো হাতটা নিজের শক্তপোক্ত পুরুষ হাতটা দিয়ে চাপলো! খুব শক্তভাবে. . . ভীষন যত্নে. . ভরসা দিয়ে!
কানের পাশে শোনা গেল গম্ভীর এক কণ্ঠস্বর;
— আমি এইখানে! এখনো ভয় পাচ্ছিস?
#চলবে
ডেইলি এত-এতমানুষ গল্প পড়েন রিয়েক্ট না করেই। এমন কেন? কমেন্ট না করুন; একটা ছোট রিয়েক্ট তো করতেই পারেন। আশা করছি. . সবাই রিয়েক্ট-কমেন্টস করবেন। আজকের পর্ব এ আপনাদের রিয়েক্ট-কমেন্টের বন্যা দেখতে চাই।
গল্প যেদিন আসে; আমার গ্রুপে জানিয়ে দেওয়া হয় আগের দিন!
গ্রুপ লিঙ্ক—- https://www.facebook.com/share/g/5XQheuegTGqc2anJ/?mibextid=K35XfP