অরোনী, তোমার জন্য~১১
লিখা- Sidratul Muntaz
রাবেয়া অরোনীর সাথে এখন সারাদিন গল্প করছেন। যেখানেই যান, অরোনীকে সাথে নিয়ে যান। কিছু খেলে অরোনীকেও ডেকে খাওয়ান। বাড়ির সবাই যখন একসাথে জরুরী আলোচনা করে তখন রাবেয়া উঁচু গলায় বলেন,” অরোনী কোথায়? আমাদের সাথে এসে বসো। বলো মা, এই বিষয়ে তোমার কি মতামত?”
বড় চাচীর এমন পরিবর্তন দেখে রুমা আর তানজিমা অবাক। রাবেয়া যখন সবার মাঝে অরোনীকে প্রাধান্য দেন, ননদরা তখন হিংসাত্মক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আশা মানে ছোট চাচীও অরোনীকে আগে পছন্দ করতেন না। এখন তিনিও এসব দেখে ভেতরে ভেতরে জ্বলছেন। রাবেয়া অরোনীর নাম নিলেই সকলের মুখ মলিন হয়ে যায়। আগে যখন রাবেয়া সকলের সামনে কথায় কথায় অরোনীকে অপমান করতেন তখন অনেকেই আড়ালে খুশি হতো।
তারাই এখন হিংসায় জ্বলে যাচ্ছে। অরোনীর ইদানীং নিজেকে এই বাড়ির যোগ্য ছোট বউ বলেই মনে হচ্ছে। আগে যেটা কখনোই মনে হতো না। রাবেয়ার সাথে অরোনীর সুসম্পর্ক গড়ে উঠা দেখে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছে উর্মি আর শীলা চাচী। তবে রিতু এখনও রাবেয়াকে সন্দেহ করে। তার ধারণা রাবেয়া হুট করে আবার বদলে যাবেন।
সন্ধ্যায় অরোনী টিভি দেখতে বসেছিল। তার প্রিয় একটা সিনেমা চলছে। পুরনো দিনের বলিউড মুভিগুলো এতো সুন্দর ছিল! অরোনী আমির খান আর জুঁহি চাওলার কাহিনী দেখে একা ঘরে বসেই হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে৷ দীপ্তি তখন অরোনীর ঘরে ঢুকল। মধুর হাসি দিয়ে বলল,” কি দেখছো অরোনী?”
অরোনী সোজা হয়ে বসে গায়ের ওরনা ঠিক করল।
” ভাবী, এসো৷ আমি একটা সিনেমা দেখছি।”
” খুব মজার সিনেমা মনে হয়?”
” হ্যাঁ অনেক মজার। আমির খান আর অজয় দেবগান দুই বন্ধু। ওদের কান্ড-কারখানা দেখলে আপনি না হেসে পারবেন না।”
দীপ্তি অরোনীর পাশে বসলেন। সিনেমা দেখার ইচ্ছে তার একদম নেই। কিন্তু রাহাত বলেছে অরোনীর সাথে খাতির করতে হবে। কারণ মা এখন অরোনীকে খুব দেখতে পারছেন। মা যাকে পছন্দ করবেন তার সাথেই ভালো সম্পর্ক রাখতে হবে। তাহলেই মা খুশি থাকবেন। আর মাকে খুশি রাখাই তাদের প্রধান কাজ। কারণ মা কোনো সাধারণ মানুষ না। অনেক ধন-সম্পদের মালকিন। সিনেমার সবচেয়ে কমেডি সিন হলো আমির আর অজয়ের পাইপ ধরে দুই বিল্ডিংয়ের মাঝে ঝুলে থাকা। ভয়ে দু’জনেই চিৎকার করছে। অজয় তার হিরোইন কাজলকে দেখতে গিয়েই এই বিপদের সম্মুখীন হয়েছে। অরোনী হাসতে হাসতে বলল,” ভাবী খুব মজা না?”
দীপ্তির একদম মজা লাগছে না। অরোনীর হাসি দেখলেই তার গা জ্বলছে। তবুও হেসে বলল,” হ্যাঁ, খুব মজা। নাম কি ছবির?”
” ছবির নাম ইষ্ক।”
” আচ্ছা অরোনী শোনো, যে কারণে এসেছিলাম সেই কারণটা বলি।”
” ও, তুমি দরকারে এসেছো? আমি ভাবলাম এমনি। ঠিকাছে বলো।”
অরোনী টিভির সাইন্ড কমিয়ে দিল। দীপ্তি বলল,” মা তোমাকে নিচে যেতে বলেছেন। সবজি পাকোড়া ভাজা হয়েছে তো। সবাই একসাথে খাবে।”
অরোনী অনীহা দেখিয়ে বলল,” আমি সবজি পাকোড়া খাবো না। মাকে বলে দাও।”
” মা শুনবেন না অরোনী। তুমি না গেলে তিনিও খাবেন না। প্লিজ চলো!”
অরোনী দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে টিভি বন্ধ করল। পছন্দের মুভিটা দেখা গেল না। থাক, পরে দেখে নিবে। সে তো নেটফ্লিক্সেই দেখছিল। অরোনী দীপ্তির সাথে নিচে নামল। রাবেয়া অরোনীর জন্য সবজি পাকোড়া আলাদা করে রেখেছেন। অরোনীর একদম খেতে ইচ্ছে করল না। সে তেলে ভাজা জিনিস তেমন পছন্দ করে না। তাই পাকোড়াগুলো সে রাফাতের জন্য রেখে দিল। অফিস থেকে এসে রাফাত খাবে। রাবেয়া অরোনীকে বললেন,” এদিকে এসো মা। তোমাকে একটা জিনিস দেখাবো।”
অরোনী রাবেয়ার সাথে তার শোবার ঘরে গেল। রাবেয়া ড্রয়ার খুলে ফ্যামিলি এলবাম বের করলেন। রাফাতের ছোটবেলার ছবি অরোনীকে দেখিয়ে নানান গল্প শুরু করলেন। অরোনী ছোট্ট রাফাতকে দেখে অবাক! মনে হচ্ছে যেন মাহাথিরকেই দেখছে। শুধু ক্যামেরার রেজুলেশন একটু খারাপ। এছাড়া মাহাথির আর রাফাতের ছোটবেলার ছবিতে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। অরোনীর প্রথম প্রথম গল্প শুনতে ভালোই লাগছিল। কিন্তু এখন খুব বোরিং লাগছে। ঘুম চলে আসছে। রাবেয়া সংসার থেকে শুরু করে নিজের পরিবারের ইতিহাস পর্যন্ত সব বলে ফেলছেন। তার কোন দুঃসম্পর্কের চাচার প্রেম কাহিনীও বলতে লেগেছেন। অরোনীর রীতিমতো ঘুমের জন্য হাই উঠে গেল। রাবেয়া অরোনীর হাতের উপর হাত রেখে বললেন,” সত্যি করে একটা কথা বলোতো অরোনী, তোমার কি এখনও আমার উপর সন্দেহ হয়? ভাবছো আমি তোমাকে পছন্দ করার নাটক করছি কিন্তু মনে মনে আগের মতোই আছি?”
অরোনী আশ্চর্য কণ্ঠে বলল,” নাতো মা! এরকম আমার কেন মনে হবে?”
রাবেয়া মসৃণ হাসি দিয়ে বললেন,” মনে না হলেই ভালো। আসলে আমি অনেক ভেবে দেখেছি। তোমার সাথে রেষারেষি করে আমার কোনো লাভ নেই৷ তোমাকে কষ্ট দেওয়া মানে একই কষ্ট আমার ছেলেও পাবে। আর মা হয়ে কি আমি ছেলের কষ্ট মানতে পারি বলো? আমি খারাপ শাশুড়ী হতে পারি কিন্তু খারাপ মা নই।”
অরোনী ইতস্ততভাবে বলল,” জ্বী সেটা অবশ্যই। খারাপ মা বলে কিছু হয় না। সন্তানের ভালো সব মা-ই চায়।”
” একদম ঠিক বলেছো। তোমার যখন সন্তান হবে তখন আরও ভালো করে বুঝবে।”
অরোনীর এই কথা শুনে লজ্জা লাগছে। ইশ, তার যদি মাহাথিরের মতো ফুটফুটে একটা ছেলে হতো। যাকে দেখলেই রাফাতের কথা মনে পড়বে!
রাহাত মায়ের ঘরে উঁকি দিয়ে বলল,” দীপ্তি কি এখানে আছে মা?”
রাবেয়া জবাব দিলেন,” না তো। বসার ঘরে আছে মনে হয়। খুঁজে দ্যাখ।”
” ঠিকাছে।” রাহাত চলে যেতে নিচ্ছিল। রাবেয়া আবার ডেকে বললেন,” তুই কি অফিস থেকে ফিরলি বাবা?”
” হ্যাঁ মা।”
” তোর হাতে কি?”
রাহাত পেছনে গুটিয়ে রাখা হাতটা সামনে আনল। নেটের ভেতর বড় প্যাকেটে রঙিন ফল-মূল দেখা যাচ্ছে। রাবেয়া তাকিয়ে থেকে বললেন,” কি এগুলো?”
রাহাত অপ্রস্তুত হেসে বলল,” মাহাথির ফল ছাড়া অন্য কিছু খেতে চায় না৷ তাই ওর জন্য বেদানা আর আঙুর এনেছিলাম।”
রাবেয়া বললেন,” তাই নাকি? আমারও ইদানীং বেদানা খেতে খুব ইচ্ছে করছিল। তুই..”
রাহাত কথাটা শুনেও না শোনার মতো দীপ্তিকে খুঁজতে বের হয়ে গেল। রাবেয়া পুরো কথা শেষ করার সুযোগও পেলেন না। এর আগেই রাহাত চলে গেছে। রাবেয়া শুকনো মুখে অরোনীর দিকে তাকালেন। অরোনী শাশুড়ীকে লজ্জা দিতে চাইল না৷ তাই এমন ভাব করল যেন সে মা-ছেলের কথা কিছুই শুনতে পায়নি। তার গভীর মনোযোগ ফ্যামিলি এলবামে। রাবেয়া চুপসে যাওয়া গলায় বললেন,” তিনবছরের বাচ্চা ফল ছাড়া কিছু খায় না এটা কি বিশ্বাসযোগ্য অরোনী?”
অরোনী কি উত্তর দিবে ভেবে পেল না। তার খুব অস্বস্তি লাগছে। রাবেয়া বললেন,” এগুলো আনা হয়েছে দীপ্তির জন্য। মাহাথিরের কথা বলেছে যেন আমাকে দিতে না হয়।”
অরোনী হাসার চেষ্টা করে বলল,” কি জানি মা? হয়তো মাহাথিরই খাবে। এই বয়সে তো বাচ্চারা খাওয়া নিয়ে অনেক ঝামেলা করে।”
রাবেয়া মাথা নেড়ে বললেন,” উহুম৷ বাচ্চা-কাচ্চা কি আমরা পালিনি? তিনবছরের বাচ্চা একটা আস্তো বেদানাই খেয়ে হজম করতে পারবে না। ওকে তো এখনও ওর মা পানির মতো পাতলা খিচুড়ি খাওয়ায়। ও বেদানার বিচি গিলবে কি করে?”
” তাহলে মনে হয় বেদানার জুস করে খাওয়াবে।”
” কি জানি বাবা!”
রাবেয়া শরীর ঝাড়া দিলেন। বোঝাই গেল খুব কষ্ট পেয়েছেন। এবার তিনি সংসারের গল্প ছেড়ে বেদানা গাছের গল্প বলতে শুরু করলেন। তাদের বাড়ির পাশে একটি বেদানার গাছ ছিল৷ অরোনী শুনতে শুনতে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
নিজের ঘরে ফিরে এসেই অরোনী রাফাতকে ফোন করে বলল,
” তুমি কোথায়? অফিস থেকে বের হয়েছো?”
” হ্যাঁ কেন? তোমার কিছু লাগবে?”
” হুম লাগবে। বেদানা লাগবে।”
” কি?”
” বেদানা চেনো না? ওইযে লাল-লাল ফল।”
” হ্যাঁ চিনেছি। কিন্তু তুমি তো বেদানা পছন্দ করো না। আমি একবার এনেছিলাম তখন ছুঁয়েও দেখোনি।”
” আমি কি বলেছি আমি পছন্দ করি?”
” তাহলে আনতে বলছো কেন?”
” ফেসিয়াল করবো।”
” হোয়াট? তুমি জানো বেদানার দাম কত? ওই টাকা দিয়ে দুইটা ফেসওয়াশ কেনা যাবে।”
অরোনী হাসতে হাসতে বলল,” বেদানা আনতে বলেছি মানে আনবে। এতো কথা শুনতে চাই না। বেদানা ছাড়া আজ তোমার ঘরে ঢোকা নিষেধ। “
এই কথা বলেই অরোনী ফোন কেটে দিল। রাফাত পড়ে গেল মহাবিপদে। এখন বেদানা কোথায় পাওয়া যায়?
রাতে এক কিলো বেদানা নিয়েই রাফাত ঘরে ফিরল। অরোনী খুশি খুশি কণ্ঠে বলল,” বেদানা এনেছো?”
” হ্যাঁ এইতো। এখন বলো তো কি করবে?”
” আমি কিছু করবো না। তুমিই করবে।”
” আমি কি করবো?”
” এগুলো নিয়ে মাকে দিয়ে আসবে।”
রাফাত হতভম্ব হয়ে বলল,” মা বেদানা খুব পছন্দ করেন এটা তুমি কিভাবে জানলে? মা তো নিজের পছন্দের কথা সহজে কাউকে বলেন না।”
” বুদ্ধি থাকলে সব জানা যায়। আর প্লিজ, আমি যে তোমাকে বেদানা আনতে বলেছি এটা আবার মাকে বলে দিও না। তুমি বলবে তুমি নিজেই এনেছো৷ বাজারে বেদানা দেখে তোমার মায়ের কথা মনে পড়েছিল তাই।”
” মিথ্যে কথা বলবো?”
” তো কি হয়েছে? মিথ্যে বললে তো আর তোমার দাঁত পড়ে যাচ্ছে না।”
” আচ্ছা ধরো বললাম। তারপর কি হবে?”
” কিছুই হবে না। তুমি যাও তো।”
অরোনী জোর করে রাফাতকে মায়ের ঘরে পাঠালো। রাফাত মায়ের হাতে বেদানা তুলে দেওয়ার পর মা খুব চমকে গেলেন। রাফাত অরোনীর শিখিয়ে দেওয়া মিথ্যে কথাটাও বলল। ওই কথা শুনে রাবেয়ার চোখে পানি চলে এলো। তিনি আঁচলে চোখের জল মুছে রাফাতের কপালে চুমু দিলেন। রাফাত বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ। সামান্য একটা জিনিস পেয়েই মা এতো খুশি হয়ে গেলেন! রাফাত তো ভাবতেই পারছে না। তার অসম্ভব অবাক লাগছে।
মা এতো নরম মনের মানুষই না। আজ কি হলো তাঁর? রাফাত ঠিক করেছে এখন থেকে প্রতিদিন অফিস থেকে ফেরার সময় মায়ের পছন্দের কিছু নিয়ে আসবে। মা যখন এতো খুশি হয়! তিনি তো ছোটবেলায় রাফাতের সব আবদার মিটিয়েছেন৷ কিন্তু নিজে কখনও আবদার করেননি। তাই বলে কি তাঁর আবদার নেই? নিশ্চয়ই আছে, কিন্তু মুখ ফুটে কখনও বলেন না।
রাফাত ঘরে ফিরে আসার পর অরোনী আগ্রহী কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,” বেদানা দিয়েছো মাকে?”
রাফাত ঝলমলে কণ্ঠে বলল,” তুমি কি ম্যাজিক জানো অরোনী? সামান্য বেদানা কিনে আনলাম বলে মা আমাকে এমনভাবে আদর করলেন যেন আমি এখনও বাচ্চাই আছি। ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। লজ্জা লাগছে এখন।”
অরোনী খিলখিল করে হেসে ফেলল। রাফাত মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল। অরোনী এখন আর রাফাতের সাথে ঝগড়া করে না। সবসময় মিষ্টি করে কথা বলে। আগে পরিবারের অশান্তি নিয়ে অরোনীর মেজাজ খারাপ থাকতো। কিছু বললেই তেতে উঠতো। কিন্তু এখন ধীরে ধীরে অরোনী আগের মতো হয়ে যাচ্ছে।
ভার্সিটিতে প্রথম দিন দেখা সেই শান্ত মেয়েটি। রাফাত এই কয়েকদিনে অরোনীকে খুব ভালোমতো চিনেছে। অরোনী এমন একটি মেয়ে যাকে জয় করতে খুব বেশি কিছু দরকার নেই। শুধু ভালোবাসা হলেই চলবে। যে অরোনীর কাছে খারাপ, অরোনীও তার কাছে খারাপ। একেবারে রুদ্রমূর্তি! আর যে অরোনীর কাছে ভালো, অরোনীও তার জন্য জান-প্রাণ ঢেলে দিতে প্রস্তুত।
সকাল সকাল আবার দীপ্তির বাপের বাড়ির লোকজন এসে হাজির হয়েছে। তাদের হৈচৈ শুনে অরোনীর ঘুম ভাঙল। রাফাত তখন অফিসে চলে গেছে। অরোনী দেখল তার দরজার কাছে মাহাথির ছোট ছোট পায়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে। অরোনী কোনো কথা বলল না। নিঃশব্দে দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।
তারপর হুট করে মাহাথিরের হাত ধরে ফেলল। মাহাথির প্রথমে ভয় পেল। তারপর অরোনীর মুখ দেখেই কিটকিট করে হেসে উঠল। অরোনী আজ এই কিউট ডাব্বাকে ইচ্ছেমতো পাপ্পা দিবে। মাহাথির অরোনীকে দেখলেই দৌড়ে পালায়। কিন্তু এখন কিভাবে পালাবে? অরোনী তাকে ধরে ফেলেছে। মাহাথিরকে কোলে নিয়ে অরোনী রুমে চলে যাচ্ছিল। পেছন থেকে একটা শীতল কণ্ঠ বলল,” হাই ভাবী, কেমন আছেন?”
অরোনী পেছনে তাকিয়ে দেখল রুবায়েত। ছেলেটাকে দেখেই অরোনীর ঠোঁটের হাসি মিলিয়ে গেল। চোখের দৃষ্টি কঠিন হলো। রুবায়েত মুচকি হেসে বলল,” আপার কাছে শুনলাম, আপনি নাকি দারুণ চা বানান? খেতে ইচ্ছে করছে। হট ভাবীর হাতে এক কাপ হট চা।”
অরোনী গরম কণ্ঠে বলল,” কি বললেন আপনি? হট ভাবী মানে কি?”
অরোনী এমনভাবে ফুঁসে উঠেছে যে রুবায়েত একটু ভড়কে গেল। মনে হচ্ছে মেয়েটা এখনি চিৎকার করে তাকে চড়- থাপ্পড় ধরণের কিছু একটা মারবে। তাই দ্রুত পরিস্থিতি সামলাতে বলল,” মানে রাগের কথা বলছি। আপনি যেভাবে চোখ গরম করে তাকিয়ে থাকেন মনে হয় খুব রাগ আপনার। রাগী ভাবী!”
অরোনী ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। ছেলেটাকে কুচি কুচি করতে ইচ্ছে করছে। দীপ্তি এসে বলল,” অরোনী, সবার জন্য একটু চা বানাও তো। আমার ভাইয়ের আবার তোমার হাতে চা খাওয়ার খুব শখ। তোমার বিখ্যাত চায়ের গল্প করেছিলাম তো!”
অরোনী ভালো চা বানায় এটা সত্যি। কিন্তু এই খচ্চরকে চা খাওয়াতে ইচ্ছে করছে না। তবে যেহেতু সবাই খাবে তাই অরোনীকে চা বানাতে হলো। বড় ট্রেতে চায়ের কাপগুলো সাজিয়ে যখন অরোনী ড্রয়িংরুমে ঢুকল তখনই খেয়াল করল রুবায়েত তার দিকে চেয়ে আছে। ঠিক সেদিনের মতো নিষ্পলকভাবে। অরোনীর শরীর জ্বালা করতে লাগল। এই ছেলের হাতে চায়ের কাপ তুলে দিতেও ভয় লাগছে।
যদি সুযোগ বুঝে অরোনীর হাত ছুঁয়ে দেয়? চাহনী দেখে তো মনে হচ্ছে এমনকিছুই মতলব তার। অরোনী সবাইকে একে একে চা দিল। রুবায়েত অপেক্ষা করছিল কখন তার সময়টা আসবে! অরোনী সর্বশেষ কাপটা রুবায়েতের কাছে নিয়ে এলো। রুবায়েতের ঠোঁটের হাসি আরও বিস্তৃত হলো। চোখের দৃষ্টি গাঢ় হলো। সে হাত বাড়িয়ে আছে কাপ নেওয়ার জন্য। অরোনী দীপ্তির কাছে কাপটা দিয়ে বলল,” তোমার ভাইকে পাস করোতো ভাবী।”
দীপ্তি অরোনীর থেকে কাপ নিয়ে রুবায়েতকে দিল। অরোনী খালি ট্রে নিয়ে চলে যাচ্ছে। রুবায়েতের চেহারাটা তখন দেখার মতো ছিল।
চলবে……..