- ব্রেকআপ হওয়ার ছোট গল্প
- ব্রেকাপ ভালোবাসার গল্প
- ব্রেকআপ হওয়ার গল্প ফেসবুক
- ব্রেকআপ হওয়ার কারণ
- ব্রেকআপ হওয়ার স্ট্যাটাস
১.ব্রেকআপ হওয়ার ছোট গল্প
আমাদের ৬ বছর ১১ মাসের সম্পর্কের শেষ হয়ে গেলো।
সে আমার সম্পর্কে চাচাতো বোন। যখন থেকে আমরা বুঝতে শিখি তখন থেকে আমাদের ভিতরে প্রেম নামক জিনিস টা কাজ করতে থাকে। আর সেই থেকে শুরু আর আজ তার শেষ ঘটলো।
ওর বিয়েতে সব কিছু নিজের হাতে করছিলাম সেই ওর বর আসা থেকে যাওয়া পর্যন্ত। বর পক্ষের লোকদের খাওয়ানো থেকে বরের খাওয়ানো হাত ধোয়ানো সব কিছু নিজের হাতে করলাম। তা ছাড়া আমার কিছু করার ছিলো না। কারণ আমাদের দুই পরিবারের কেউ চায়নি যে আমরা এক সাথে থাকি।
এজন্য নিজের সবচেয়ে প্রিয় কাছের মানুষটাকে যার হাতে তুলে দিবো তাকে খুব ভালোবেসেই আপ্পায়ন করলাম। বুকের সকল ব্যাথা বেদনা চেপে রেখে সব কিছু নিজেই করছিলাম। আমি ওকে একটি বারের জন্য ও বুঝতে দেইনি যে আমি ভিতর থেকে The end হয়ে গেছি।
সব কিছু নিজের ভিতরে চেপে রেখে সারা দিন কাটালাম। বিয়ের পরে ওরে নিয়ে চলে গেলো বর পক্ষরা আর আমি পাষানের মত দাঁড়িয়ে থেকে দেখলাম সব কিছু। কোনো কথা বলতে পারিনি।
সর্বশেষ আল্লাহর কাছে হাজার বার কোটি বার দোয়া করি আমার কলিজার টুকরাটা তার স্বামীর সাথে সুখে শান্তিতে জীবনের বাকি সময় টুকু পার করুক।
(নাম অপ্রকাশিত)
…………………..
অনুগল্প
.
আমি তখন সদ্য ছ্যাকাপ্রাপ্ত ছিলাম,মেডিকেলে চান্স পায়নি বলে শিশির আমার সাথে ব্রেকাপ করেছিল। জীবনের নতুন অধ্যায় শুরুর সময়েই প্রিয় মানুষটা হাত ছেড়ে দিয়েছিল। “তেলে আর জলে যেমন মিশ খায়না তেমনি মেডিকেল স্টুডেন্ট এর সাথে নাকি একজন ভার্সিটির স্টুডেন্ট এর যায়না। ” তার কাছে ভালোবাসার থেকে যোগ্যতা টাই যেনো বড় হয়ে দাড়িয়েছিল। আমার বাসা থেকে অবশ্য সেকেন্ড টাইম মেডিকেল এর প্রিপারেশন নিতে বলেছিল কিন্তু আমি না করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি খারাপ নাকি? প্রাচ্যের অক্সফোর্ড। একটা বছর নষ্ট করার কোনো মানেই নেই। সেখানে আছি সেখান থেকে বড় কিছু করে দেখাবো। ভার্সিটি যেতাম ক্লাস করতাম তারপর চলে আসতাম। চুপচাপ থাকতাম, ফ্রেন্ডদের সাথে তেমন আড্ডা কোলাহলে মাততাম না। ভার্সিটি তে নতুন ছিলাম বিধায় সিনিয়র দের র্যাগ খেতে হত,চুপচাপ সইতাম কারণ সে কষ্ট আমায় পোড়াত না। শিশিরের দেয়া কষ্টে তো এমনিতেই ভেঙে ছিলাম। কত রাত যে কেঁদেকেটে বালিশ ভিজিয়েছি তার ইয়ত্তা নেই। প্রথম প্রথম শিশিরকে ফোন দিয়ে অনেক রিকুয়েস্ট করতাম সম্পর্ক রাখার জন্য কিন্তু সে আমায় শুধু অপমানই করতো। সে তার কোনো এক জুনিয়র এর সাথে নাকি সম্পর্কে জড়িয়েছে, আমি যেনো আমার টাইপের কাউকে খুঁজে নেই। চাইতাম স্বাভাবিক হতে কিন্তু কিছুতেই পারছিলাম না। সেসময়ই কোথা থেকে যেনো ইশতিয়াক ভাইয়ার উদয় হয়।
আমার স্কুলের সিনিয়র ছিল সে,মুখচেনা ছিল কেবল,তার নামটা পর্যন্ত জানতাম না আমি কিন্তু সে চিনতো আমাকে। ভার্সিটি তে এসে কথা হয়, পরিচয় হয়। অন্য ডিপার্টমেন্ট এ পড়তো সে, ভার্সিটি তে সে পাবলিক ফিগার ছিল। আমাকে বলেছিল কোনো সমস্যা হলে বা দরকার হলে যাতে তাকে জানাই। নোটস মেনেজ করে দেয়া থেকে যাবতীয় কোনো হেল্প লাগলে সে করতো। আমাদের এলাকার লোক বিধায় ভরসা ও করতাম তাকে। কিন্তু সে যখন মেসেজের পর মেসেজ আর ফোনের পর ফোন দিত বড্ড বেশী বিরক্ত লাগতো। আমি বেশী রেসপন্স করতাম না আর সে অভিযোগ ও করতোনা।
আমার একজন ফ্রেন্ড এর থেকে জানতে পারি ইশতিয়াক ভাইয়া নাকি আমাকে স্কুললাইফ থেকে পছন্দ করতো ইভেন এখনো করে। আমাকে আগ বাড়িয়ে সাহায্য করার, এতো এতো মেসেজ ফোন দেয়ার কারণ কি তাহলে এটাই? পছন্দই যেহেতু করতো তাহলে জানায়নি কেনো আগে? জানালে হয়তো শিশির আমার জীবনে আসতোনা। শিশিরের সাথে সম্পর্কই তো হয়েছিল কলেজ থেকে। এখন তো আমার কিছুই করার নেই। উনি আমাকে পছন্দ করে এটা শিওর হয়েছিলাম সেদিন, যেদিন থেকে ওনার ফ্রেন্ড সার্কেল থেকে শুরু করে আমার সিনিয়র আর ফ্রেন্ড রা আমাকে ভাবী বলে ডাকা শুরু করেছিল। প্রচণ্ড রেগে গিয়েছিলাম আমি। তাকে ফোন দিয়ে ঝেড়েছিলাম ও অনেক,
__ আমার রিলেশন নেই দেখে কি এডভান্টেজ নিচ্ছেন আপনি?
__ নাতো, কেনো বলছো এ কথা??
__ কেনো সবাই আমাকে ভাবী বলছে? আই এ্যাম নাইদার ইউর গার্লফ্রেন্ড নর ওয়াইফ। হোয়াই ডু দে কল মি ভাবী, হোয়াই?
__ সবাই আমাকে সমীহ করে চলে। তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড শুনলে কেউ তোমাকে র্যাগ দেয়া বা কিছু বলার সাহস পাবেনা।
__ বোন তো বলা যেতো নাকি?
__ বোন বললে তো তোমাকে প্রোপোজ করার সাহস দেখাতো হয়তো অনেকে কিন্তু এখন অন্তত এমন করবেনা কেউ।
__ কেউ না করলেও আপনি তো করবেন।
__ করলে তো অনেক আগেই করতাম, প্রোপোজ করবো করবো ভেবে করার সাহস পেতাম না। যখন একটু সাহস হলো বলতে চাইলাম, তুমি অন্য কারো হয়ে গেছিলে ততদিনে। বলা হলোনা আর। যায় হোক ভালো থেকো।
সেদিন হলে গিয়ে কান্নাকাটি করেছিলাম খুব। শিশির বলেছিল ভালো থেকো আবার ইশতিয়াক ভাইয়ারও একই কথা। ভালো থাকা কি এতোই সহজ? পারছিলাম না আমি ভালো থাকতে। এরপর থেকে ইশতিয়াক ভাইয়ার সাথে কখনো দেখা হলে সে খুব মেপে মেপে কথা বলতো আমার সাথে। আমি সরি বলেছিলাম তাকে। কথা হতো মেসেঞ্জার, ফোনে। কখনো আমি নিজে নক করতাম কখনো সে। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তার সাথে। একটু একটু করে মোহিত হচ্ছিলাম তার প্রতি। শত মন খারাপ থাকলেও তার একটা মেসেজ মন ভালো করার টনিক হিসেবে কাজ করতো। তার মেসেজ পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠতাম মাঝেমাঝে। নিজের মনকে যখন আর মানাতে পারতাম না তখন নিজেই মেসেজ দিতাম। শিশিরের জন্য আর কান্নাও পেতোনা। হঠাৎ নিজেরই মনে হতে লাগলো, কি করছি আমি? স্বার্থপরতা করছি নাকি?ভালোবাসার মানুষকে ভুলতে আর একজনকে ব্যবহার করছি,তাও আবার সেই মানুষকে যে আমাকে ভালোবাসে। তাকে কন্টাক্ট করা কমিয়ে দিলাম। সে বুঝতে পেরেছিল।
__ ফড়িং তুমি নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছ কেনো?
তার কথার জবাব দিতে পারিনি,মুচকি হেসেছিলাম শুধু।
স্কুল কলেজে থাকতে একটু চঞ্চল ছিলাম, এজন্য সে আমার নাম ফারহিন থেকে ফড়িং দিয়েছিল। ব্রেকাপের পর সেই চঞ্চলতা হারিয়ে গিয়েছিল আমার,চুপচাপ শান্ত মেয়ে হয়ে গিয়েছি আমি এখন।
.
আমি এখন ফাইনাল ইয়ারে পড়ি, ব্যাচ এর টপ স্টুডেন্ট। শুনেছি শিশিরের নাকি ব্রেকাপ হয়ে গেছে। আর ইশতিয়াক ভাইয়া? সে জব করে। তার সাথে যোগাযোগ নেই অনেকদিন। তাকে মেইল করেছি দেখা করার জন্য,অপেক্ষা করছি তার আসার। ওই যে, তাকে আসতে দেখা যাচ্ছে। ফরমাল লুক, অফিস থেকে আসছে বোধহয়।
__ দেখা করতে বললে কেনো?
__ কেমন আছেন?
__ ভালো আছি।
__ আমি কেমন আছি জিজ্ঞাসা করবেন না?
__ ভালো থাকো তো সবসময় তাই জিজ্ঞাসা করলাম না। বলো কি বলবে?
__ আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।
__ তাই নাকি? কংগ্রাচুলেশনস!!
__ ঘামছেন কেনো আপনি এতো? লোকজন যে এতো ঢঙ করতে পারে, জানা ছিল না আমার।
__ ঢঙ করলাম কোথায়? অনেক গরম লাগছে তাই ঘামছি হয়তো।
__আপনার বন্ধুরা এখনো আমাকে ভাবী বলে ডাকে। আপনি কি চান না তারা সারাজীবন আমাকে ভাবী বলে ডাকুক??
__আমি তো চাই কিন্তু তুমি…
__কি আমি? পাত্রের মা বাবা এসে আমাকে পরিয়ে গেছেন। পাত্র আসেনি, তার কোনো ছবি দেখিনি। কিন্তু বায়ো শুনে কি আমি বুঝবোনা যে ব্যক্তিটি আপনি?
__না মানে,একবার তোমাকে হারিয়েছি তো আর চাইনা। ভয় লাগছিল তাই তোমাকে না জানিয়েই তোমার বাসায় প্রস্তাব পাঠিয়েছি। তুমি রাজী না থাকলে বিয়েটা হবেনা। ভালো থেকো, আসছি আমি।
__ইশতিয়াক!!
আমার ডাকে সে অবাক হয়ে পেছনে তাকালো।
__প্রথম ও শেষবারের মত নাম ধরে ডাকলাম। হবু বরকে তো আর ভাইয়া বলে ডাকা যায়না। যায় কি? নিজেকে খুব চালাক ভাবেন আর আমাকে বোকা তাইনা?
বায়ো শুনে তারপরেই কিন্তু আংটি পরেছি আমি। শোনেন,আমি কিন্তু আপনাকে অনেক বেশী ভালোবাসতে পারবোনা। একটুখানি ভালোবাসা তে কি আপনার চলবে?
__চলবে মানে! দৌড়াবে। আমি চাই তুমি আমার ফড়িং হয়ে থাকো, উড়ে বেরাও আমার মনের আকাশে।
.
সমাপ্ত
লেখা-মুনিয়া আনজুম
২.ব্রেকাপ ভালোবাসার গল্প
পাঁচ বছরের জানাশোনা, আর দুই বছরের প্রেম আজ দুই মিনিটে শেষ করে এলাম।
একটা প্রস্তাব রেখেছিলাম আবিদের কছে। প্রস্তাবও না ঠিক আমার ইচ্ছেটা জানিয়েছিলাম তাকে। জানাতেই পারি, যাকে দুই সাপ্তাহ পর বিয়ে করব তার কাছেই তো নিজের ইচ্ছে অনিচ্ছের দুয়ার খুলে সম্পূর্ণ দ্বিধাহীন দাঁড়াব।
” আবিদ আমার মা কিন্তু আমার সাথে আমাদের বাড়িতে যাবেন।”
” নিশ্চই যাবেন আণ্টি। উনারা বেড়াতে না গেলে কি আমাদের পূর্ণতা আসবে?”
” বেড়াতে নয় আবিদ। মা আমার সাথে স্থায়ীভাবে আমার বাড়িতেই থাকবেন।”
আবিদ হাসতে হাসতে বলল,
” কী যে বলো না বোকা। তোমার আব্বা জীবিত আছেন। তোমার ভাই আছে। তিনি সবাইকে রেখে আমাদের বাড়িতে থাকবেন কেন? “
” আমি রাখব সে কারনেই থাকবেন।”
আমার কথা শুনে আবিদ আবারও হাসতে লাগল,
” মায়েরা কখনো মেয়েদের বাড়িতে থাকে? মায়েদের একটা আত্মসম্মান আছে না?”
” বুঝলাম না আবিদ তুমি আসলে কী বুঝাতে যাচ্ছ? মায়েরা মেয়েদের বাড়িতে থাকে না মানে!”
আবিদ আমার কাঁধে হাত রেখে আরও গভীরভাবে আমাকে কাছে টেনে নিয়ে বলল,
” আমার দুই বোন। জানোই তো তুমি সব কিছু। বড় আপার ছেলে হওয়ার সময় কয়েক ঘণ্টা আর মেজো আপার বর অসুস্থ হওয়ায় একদিন থাকা ছাড়া আজ পর্যন্ত আম্মা আপুদের বাড়িতে যাননি। “
” আশ্চর্য কেন যাননি!”
” আম্মার না-কি লজ্জা লাগে। লাগবেই তো। দুলাভাই হচ্ছে পরের ছেলে। তার বাড়ি গিয়ে আম্মা থাকবেন কেন? আমরা ভাইয়েরা আছি না! লোকে কী বলবে!”
” দাঁড়াও আবিদ। তোমার কথা আমি স্পষ্ট বুঝলাম না। তোমার যদি ভাই না থাকতো মানে তোমার আম্মার যদি ছেলে না থাকতো তাহলে কি তোমার আম্মা তাঁর মেয়েদের কাছে গিয়ে থাকতে পারতেন না?”
” তুমি এত সিরিয়াস হচ্ছো কেন নীলা? এটাই তো স্বাভাবিক। আমার মায়েরও তো কোনো ভাই নেই। তারপরও আমার নানু কোনোদিন আমাদের সাথে থাকেননি।”
” কেন আবিদ? তোমার বাবা-মা বা তোমরা কি কখনো তোমার নানুকে তোমাদের সাথে রাখতে চেয়েছ?”
” না তো! কেন রাখব? লোকে কী বলবে? সবচেয়ে বড় কথা আমার নানুর কি কোনোটার অভাব ছিল যে তিনি আমাদের বাড়িতে থাকবেন!”
আমি আবিদের মনোভাব বুঝতে পারলাম। সে যে একটা ভুলের ভেতর আছে। সেটা থেকে তাকে বের করে আনতে হবে।
” আবিদ তোমার কোথাও বুঝার একটু ভুল হচ্ছে। এটা তোমার ভুল নয়। এই ভুল আমাদের সমাজ সৃষ্ট। তোমরা ছেলেরা যেমন বাবা-মার সন্তান, আমরা মেয়েরাও তো তাই। কোথাও কি লেখা আছে বাবা-মার দায়িত্ব ছেলে সন্তানের। বাবা-মা তো জন্ম থেকে শুরু করে শিক্ষা-দীক্ষা সবকিছুতেই ছেলে -মেয়ে সবাইকে সমানভাবে মানুষ করে। তাহলে মেয়েরা কেন তার বাবা-মাকে ইচ্ছে করলে নিজের কাছে রাখতে পারবে না? সমাজের এমন কিসের ভয়।”
” বাদ দাও না এসব নীলা। কী উদ্ভট একটা বিষয় নিয়ে মূল্যবান সময় নষ্ট করছ! বিয়ের কেনাকাটা কোথায় করতে চাও সেটা বলো?”
” কী বলছ আবিদ, এটা উদ্ভট বিষয়!”
” অবশ্য উদ্ভট। কোনো প্রয়োজন নেই কিছু নেই। হঠাৎ করে একটা অন্যায় আবদার করলে তোমার মা তোমার সাথে থাকবেন। এটা কেমন কথা। তুমি তো জানোই আমি কেমন পরিবারের ছেলে। এ প্রস্তাব কি আমি রাখতে পারব আমার বাবা-মাকে?”
আবিদের কথা শুনে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।
” না, আমি কিছু জানি না। তুমি কেমন পরিবারের ছেলে। এইমাত্র জানতে শুরু করেছি।”
” নীলা তুমি আমাকে অপমান করছ। তোমার কোনো অধিকার নেই আমার পরিবারকে নিয়ে কথা বলার।”
” কীসের অপমান! কী বলছ এসব! আমার মাকে আমি আমার কাছে রাখব। আমি উচ্চ শিক্ষিত, চাকরিজীবী একজন নারী। অথচ আমি আমার মাকে আমার সাথে রাখতে পারব না। তোমার পরিবারের পছন্দ নয় সে কারণে।”
” না, পারবে না। শুধু আমার পরিবার নয়, বিষয়টা আমারও পছন্দ নয়। মেয়ের মায়েরা স্থায়ীভাবে মেয়ের বাড়ি থাকে না। এটাই নিয়ম। অহেতুক তর্ক করে সম্পর্ক খারাপ করবে না। “
“ঠিক আছে আবিদ। আমারই ভুল হয়ে গেছে। অহেতুক তোমার সাথে তর্ক করা ঠিক হয়নি।”
” এই তো ভালো মেয়ে। এবার বলো,শপিং কোথায় করতে চাও। হাতে কিন্তু বেশি সময় নেই। মাত্র দুই সপ্তাহ।”
আমি আবিদের কথা শুনে পূর্ন দৃষ্টি মেলে তার দিকে তাকালাম।
পাঁচ বছর আগে বিশ্ববিদ্যারয়ের মাঠে প্রথম দেখা সেই সুদর্শন ছেলেটার সাথে বর্তমানে আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বিকৃত চিন্তা চেতনার কুৎসিত ছেলেটার কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছি না আমি।
আমার দৃষ্টি পাথরের মতো স্থির হয়ে আছে আবিদের মুখের উপর।
” এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? চলো আইসক্রিম খাই।”
আবিদ আমার হাত ধরে মৃদু টান দিলো। একজন মানুষের স্পর্শও এত বিরক্তিকর হয়। যাকে বিয়ে করার পরিকল্পনা করেছি। যার সাথে আমৃত্যু একসাথে পথচলার পরিকল্পনা করেছি।
আমি ভিতরে ভিতরে চমকালাম।
আলতো হাতে আবিদের হাত ছাড়িয়ে নিলাম আমার বাহু থেকে।
হঠাৎ রিকশার বেল বেজে উঠল আমার সামনে। আমি হাত দিয়ে রিকশা চালককে ইশারা করলাম। লাফিয়ে উঠলাম চলন্ত রিকাশায়।
” কোথায় যাচ্ছ নীলা? “
” জানি না। চলো একসাথে যাই।”
আমার কী হলো সেই মুহূর্তে বুঝতে পারলাম না। আমি দৃঢ়কণ্ঠে চিৎকার দিয়েই বললাম।
” না, একসাথে আর নয়। ভালো থেকো। “
রিকশা চালক পেডেলে জোরে চাপ দিলো। সাঁইসাঁই করে এগিয়ে গেলো ইঞ্জিনচালিত অটো রিকশা। মুহূর্তে আমি চোখের আড়াল হয়ে গেলাম আবিদের।
এই মুহূর্তে মাকে খুব মনে পড়ছে। জন্মের পর থেকে মায়ের মুখে যে কথা হাজারবার শুনে বড় হয়েছি,
” মারে ভালো করে লেখাপড়া কর। তোকে অনেক বড় হতে হবে। একদিন তোর হাত ধরেই আমি এই নরক থেকে মুক্তি নেব।”
নিন্মবিত্ত পরিবারের মেয়ে আমার মাকে বিয়ে দেয়া হয়েছে তাঁর বয়সের চেয়ে দুগুণের ও একটু বেশি বয়সি আমার বাবার কাছে। বিয়ের পর মা জানতে পারেন তিনি বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী। মাকে তিনি পছন্দ করে বিয়ে করেননি। পরিবারের চাপে পড়ে করতে বাধ্য হয়েছেন। বাবা তাঁর প্রথম স্ত্রীকেই ভালোবাসেন। কিশোরী আমার মা চৌদ্দ বছর বয়সে ফুলশয্যার ঘরে বসে স্বপ্ন ভঙের যে ধাক্কা খেলেন। আমাকে কোলে নিয়ে নাকি তিনি সে ভাঙা স্বপ্ন জোড়া লাগাতে বসে পড়লেন।
একটা সময় মায়ের সংসারের সব ঠিক হয়ে যায়। সন্তান জন্মদানে অক্ষম বাবার প্রথম স্ত্রী সব মেনে নেন। বাবা মায়ের কাছে ফিরে আসেন। তাকে ভালোবাসতে শুরু করেন। আমি ছাড়াও আমার একটা ভাই হয়।
তারপরও আমার মা পারেননি অন্যের স্বামীকে ভালোবাসতে, পারেননি অন্যের সংসারকে নিজের ভাবতে।
সংসার নামক জেলখানায় ইচ্ছের বিরুদ্ধে দিনের পর দিন আমার মা যন্ত্রচালিত রোবটের মতো করে সময় পার করেন।
একদিন আমি তাকে মুক্তি দেব সে আশায় তিনি দিন গুনেন।
আমি তো লেখাপড়া শিখেছি, অনেক বড়ও হয়েছি। একটা চাকরিও করছি। অথচ মাকে তো নরক থেকে মুক্তি দিতে পারিনি। উল্টো নিজেই একটা নরকে গিয়ে বাস করার স্থায়ী পরিকল্পনা করেছি।
ভীষণ ঘেন্না হলো নিজের প্রতি।
সাত বছর পর।
আমার সংসার হয়েছে। এই সংসার শুধু আমার একার নয়। এটা আমার মায়েরও সংসার। আমি আর রায়হান দুজনেই ব্যাংকে আছি। রাজ নামে আমাদের একটা পুচকো ছেলে আছে। সে তার বাবা – মায়ের চেয়ে নানীর কাছে থাকতেই বেশি পছন্দ করে।
রায়হানের বাবা-মা নেই শুধু মাত্র সে কারণেই নয়।
প্রথম থেকেই রায়হানের আমার প্রতি আমার চাওয়ার প্রতি একটা শ্রদ্ধাবোধ ছিল। যার কারণে সাত বছরের পরিচিত মানুষকে ভুলে নতুন করে রায়হানের সাথে জীবন শুরু করতে আমার মোটেও কষ্ট হয়নি। রায়হান আমার অতীত জানে। জানে কী কারণে সেই অতীতের ইতি টেনেছি আমি। সেও বিশ্বাস করে বাবা-মার দায়িত্ব সন্তানের, সে সন্তান ছেলে না মেয়ে সেটা বড় কথা নয়।
রায়হানের সে বিশ্বাসের কারণে আমার মা বিয়ের ত্রিশ বছর পর পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সে এসে নিজের একটা সংসার পেয়েছে।
সংসার
কামরুন নাহার মিশু
৩.ব্রেকআপ হওয়ার গল্প ফেসবুক
গার্লফ্রেন্ড ফোন দিয়ে বললো, ‘আজকে করবা?’
আমি লজ্জায় লাল, ‘ইস! একবারে বিয়ের পর করবো।’
– স্টুপিড, আমি দেখা করার কথা বলছি। এক্ষণ আমার বাসার সামনে আসবি।
.
আমি হালকা পার্ট নিলাম, ‘গাড়ি নিয়াসবো, নাকি বাইক? আমার দুইটাই আছে।’
– বাইক নিয়ে আসো। জোস হবে।
– পালসার না ইয়ামাহা? আমার দুইটাই আছে।
– ইয়ামাহা।
– আরওয়ান ফাইভ নাকি এফজেডএস? আমার দুইটাই আছে।
গার্লফ্রেন্ড রেগে গেলো।
‘থাপ্পড় খাবি না লাত্থি? আমার কাছে দুইটাই আছে।’
– ইয়ে মানে, আসতেছি।
– তাড়াতাড়ি আয়।
.
চুলে জেল টেল মেরে বের হতে যাবো এমন সময় আম্মু ঘরে আসলেন। হাতে মাংসের ব্যাগ। ব্যাগটা আমার হাতে দিয়ে বললেন, আমাদের বাসার কাজের বুয়া ময়নার মা’র বাড়িতে দিয়ে আয়। কুইক।
আমি আমতা আমতা করে বলার চেষ্টা করলাম যে, পরে যাই?
কিন্তু আমার অনুরোধ আম্মুর হাইকোর্টে পাশ হলো না।
.
তো কি আর করা। আমি ময়নার মায়ের বাসায় মাংস দিয়ে দিয়ে খালি ব্যাগ হাতে নিয়ে ফিরছিলাম। রাস্তার পাশে এক বাড়ির গেট খুলে এক আঙ্কেল হাত ইশারায় আমাকে ডাক দিলো। আমি উনার কাছে যেতেই দুই টুকরো মাংস আমার ব্যাগের মধ্যে ছুড়ে দিয়ে গেট আটকায়া দিলো। আমি কিছু বলারও সুযোগ পাইলাম না। আশেপাশে ভালোভাবে খেয়াল করে শিওর হলাম, আল্লাহ বাঁচাইছে। কেউ দেখেনাই। ব্যাগের মধ্যে আড়চোখে তাকায়া দেখি দুইটাই হাড্ডি। শালা খচ্চর আর কারে কয়। নিজেরা যা খাইতে পারবে না সেইগুলা দিচ্ছে।
যাই হোক, এখন আমার অবস্থা শাকিব খানের বউ অপু বিশ্বাসের মত। আব্রাম খান জয় হলো আমার মাংসের টুকরা। এই টুকরা দুইটা নিয়ে এখন আমি কি করবো!
.
বাসায় নিয়ে গেলে তো মানসম্মান পুরাই শেষ। আইডিয়া আসলো। মাংস কুড়াচ্ছে এরকম একজন দরিদ্র ব্যক্তিকে দেখে দান করে দিলেই তো হয়। সেক্ষেত্রে অবশ্য সওয়াব আমার হবে নাকি যে আঙ্কেলের মাংস তার হবে, এইটা শিওর না। আমি আশেপাশে ভালোভাবে চেয়ে দান করার মতো কাউকে খোজার ট্রাই করলাম। ইয়েস, পেয়েছি। এক মহিলা আসতেছে ব্যাগ হাতে। আধাকেজি মত মাংস অলরেডি তুলে ফেলেছে। আমি তার কাছে গিয়ে ব্যাগটা খুলে ধরে বললাম, এই দুইটা মাংসও উঠায় নেন। আর দ্রুত ঐ লাল গেটওয়ালা বাসায় যান আরো দিবে।
আমাকে অবাক করে দিয়ে মহিলা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো।
“ঐ ছেলে ঐ, সমস্যা কি তোমার? চিন আমারে? জানো আমি কে? আমার বর এক লাখ তের হাজার টাকার গরু কুরবানি দিছে একা আর তুমি আমারে দিতে আসছো দুই টুকরো মাংস। তোমার সাহস তো কম না। বাসা কই তোমার, হ্যা? আমি তোমাকে পুলিশে দেব। আমি তোমাকে জেলের ভাত খাওয়ায়ে ছাড়বো। এতো বড় অপমান! আজ তোমার একদিন কি আমার একদিন!”
.
মানুষজন জড় হয়ে যাচ্ছে রাস্তায়। আল্লাহ এ আমি কার পাল্লায় পড়লাম। কাহিনী যেদিকে যাচ্ছে পাবলিক আমারে ইভটিজার বলে মাইর না দেয়।
পাশ থেকে এক আঙ্কেল বললো, ‘ছি ছি ছি, আজকালকার ছেলেপেলের হইছে টা কি? স্কুল কলেজের মেয়ে হইলে তাও একটা কথা ছিলো, তুমি তো বয়স্ক মহিলারেও ছাড় দাও না। রাস্তার মধ্যে তোমার মায়ের বয়সী একজন মহিলারে দিনে দুপুরে খারাপ প্রস্তাব দিতে একটুও বাধলো না তোমার? কেয়ামতের আর বেশি দেরি নাই। ছি ছি ছি!’
.
‘হোয়াট দ্যা এফ, কি প্রস্তাব দিছি আমি? এ তো বিশাল ঝামেলায় পড়া গেল!’
.
এদিকে ঐ মহিলা থেমে নেই, ‘আমার আপন চাচাতো ভাই পুলিশের এসআই। আমার মামার শালা আর্মি অফিসার। আমার বাপ এই খুলনা শহরে প্রথম উট কুরবানি দেয় সেই উনিশশো একানব্বই সালে। তখন তোমার জন্মও হয়নাই। আমার ছোট ছেলে বুয়েটে পড়ে, মেজটা আইএলটসে আটের উপর স্কোর করছে..!’
.
‘ওহ গড, এর সাথে বুয়েটের কি সম্পর্ক। আইএলটিএস এর কি সম্পর্ক। প্লিজ হেল্প মি।’
.
মহিলার গলার তেজ বাড়তেছে, ‘আপনারা কি দাঁড়ায় দাঁড়ায় দেখবেন খালি? কিছু করবেন না? এই দেশে কি বিচার নাই? আমি কি ফোন দেব কাউরে? আমার আপন ছোট ভাই উপজেলা ছাত্রলীগের উপ আপ্যায়ন সম্পাদক…’
.
‘খাইছে আমারে। আমি ডিসিশন নিয়ে ফেললাম। ব্যাগটা শক্ত করে ধরে দিলাম ঝেড়ে দৌড়। পাবলিক কিছু না বুঝেই আমার পেছনে দৌড়াচ্ছে। তবে তারা দৌড় শুরু করেছে একটু দেরিতে। তার উপরে আমি দৌড়াচ্ছি আমার জান হাতে নিয়ে। সুতরাং আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি ধরা পড়লাম না। এক গলির মধ্যে ঢুকে আরেক গলি দিয়ে বের হয়ে মোটামুটি সেফ জায়গায় চলে আসলাম। ঘেমে নেয়ে অস্থির। মাংস দান করার শখ মিটে গেছে আমার।
দৌড়ের মধ্যেই গার্লফ্রেন্ড কল দিলো। আমি কোনোমতে রিসিভ করলাম। ওপাশ থেকে বললো, ‘এতো দেরি লাগতেছে কেন? আমি বাসার সামনে আধাঘন্টা ধরে দাঁড়ায়া আছি। তুমি কই?’
– এলাকায়।
– আচ্ছা থাকো, আমি তোমার এলাকায় আসতেছি।
.
না করতে যাবো, তার আগেই ফোন কেটে দিলো।
.
দৌড় থামিয়ে একটা দোকানের সামনে বেঞ্চিতে বসে বিশ্রাম নিচ্ছি এমন সময় একজন এসে পাশে বসলো।
– বস কি মাংস টোকাইতেছেন?
– না।
– কুরবানি দিছেন?
– হুম।
– আমারে কিছু দেন।
– আমি ব্যাগ উনার হাতে দিয়ে বললাম, ধরেন নেন।
– লোকটা খুশি হয়ে ব্যাগ খুলেই মুখ গোমড়া করে ফেললো, ‘ঐ ভাই হাড্ডি দেন ক্যান? হাড্ডি মাইনসে খায়? আপনারা বড়লোক হইছেন ঠিকই কিন্তু মানুষ হইতে পারেন নাই। ভালো গোশত সব ফ্রিজ ভইরা রাখছেন। ভাবছেন আপনাগো কুরবানি হইবো? বালডা হইবো। আপনি রাখেন আপনার হাড্ডি। আপনের মতো বড়লোকরে আমি থু দেই, থু!’
পাশ থেকে আরেকজন বললো, ‘আপনি মাংস কবরে নিয়া যাইয়েন। ঠিক আছে?’
যে দোকানে বসছি সেই দোকানদার চাচা আরো এক কাঠি সরেস, ‘গরীবের হক মাইরা খাওয়া মাংস আল্লাহ যেন আপনের গলা দিয়ে না নামায়। মানুষ গলায় হাড্ডি ফুইটা মরে আর আপনের মরন যেন হয় মাংস বাইধা!’
.
আমি কিছুই বললাম না। বলার ভাষা হারায় ফেলছি। দোকান থেকে উঠে চুপচাপ ঘোরাপথে এক মাঠের মধ্যে দিয়ে বাসার দিকে রওয়ানা দিলাম। মাঝপথে এক আন্টি এসে আরো দুই টুকরা মাংস আমার ব্যাগের মধ্যে দিয়ে গেল।
.
যাক এই দুইটাতে হাড় নাই। দুইটাই সলিড মাংস। শুকুর আলহামদুলিল্লাহ…!
.
কিন্তু ভাগ্য খারাপ থাকলে যা হয়। ঠিক এই মোমেন্টেই গার্লফ্রেন্ডের রিক্সা থামলো আমার পাশে।
গার্লফ্রেন্ডের গলায় আগুন, ‘ছি সোহাইল, ছি, তুমি মাংস টুকাইতেছ?’
– না মানে আসলে।
– আমি নিজের চোখে দেখলাম, এখন তো আমাকে উল্টাপাল্টা বুঝাইতে পারবা না। তুমি এতো ফকির?
– আসলে ব্যাপার হচ্ছে!
– রাখো তোমার ব্যাপার। বাইক আনবো না গাড়ি? তাইনা? ডায়ালগ দেয়ার সময় তো খুব দাও। এই তোমার বাইক আর গাড়ির অবস্থা? রাস্তায় মাংস টুলায়া কি গাড়িতে অকটেন ভরবা? ছি ছি, তুমি আমাকে মিথ্যা বলে ধোকা দিছ। আর কোনোদিন আমার সাথে কথা বলবা না, ব্রেকাপ।
– বাবু প্লিজ।
– আমার নাম বাবু না। আমার নাম রোজ। আর কোনোদিন আমার সাথে কন্টাক্ট করার ট্রাই করবি না তুই।
.
রোজ রিক্সায় উঠে চলে গেলো। কি আর করা! সবই কপাল। আমি বাসার দিকে রওয়ানা দিলাম।
.
পরিশিষ্ট: ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরে ব্যাগটা টেবিলের উপর রেখে খাটে শুয়ে পড়লাম ফ্যান ছেড়ে দিয়ে। আম্মু ব্যাগ খুলে আমার দিকে চোখ গরম করে তাকালেন।
‘তোরে এই অল্প একটু মাংস দিয়ে পাঠাইলাইম তার মধ্যে আবার চার পিস ফেরত আনছিস? সমস্যা কি তোর? জীবনে মাংস খেয়ে থাকিস না? আমরা তোরে খাওয়াই না? আমাদের ফ্যামিলিতে তো কেউ এরকম কিপ্টে না। তুই কার মত হইছিস! তোরে তো আমার ছেলে বলে পরিচয় দিতেই লজ্জা হচ্ছে। ছিহ!’
.
.
হে পিতিবি, বিদায়…..!
৪.ব্রেকআপ হওয়ার কারণ
সত্য_ঘটনা_অবলম্বনে_লিখিত।
দীর্ঘদিনের রিলেশন ব্রেকাপ করে বিয়ে করেছিলাম বাবার পছন্দের ছেলের সাথে৷ বাবার ডিসিশনের সামনে নিজের ডিসিশন রাখার সাহস কখনো হয়নি তাই হয়তো ভাগ্যকে মেনে নিয়ে অপরিচিত মানুষের হাত ধরে চলে এসেছিলাম একদম নতুন পরিবেশে৷
প্রাক্তনের কি অবস্থা জানতে চাইলেও আশেপাশে এতো লোকজন যে খোঁজ নিতেই পারলামনা। অবশ্য আমি জানতাম সে খুব বেশি কষ্টে থাকলে দরজা বন্ধ করে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে।
আজও তাই করছে৷
একমিনিট সে থাকতে পারেনা আমাকে ছাড়া।
প্রাক্তনের কথা ভাবতে ভাবতে মনমরা হয়ে বসেছিলাম। এমন সময় আমার স্বামী এসে বসলেন আমার পাশে। আস্তে করে নামাজটা পড়ে নিতে বললেন। কিছু বলতে পারলামনা। নামাজ পড়ে এসে উনার পাশে বসলাম।
কিছুক্ষণ কথপোকথন করার পর জানতে পারলাম তিনিও পারিবারিক চাপে বিয়ে করেছেন। ভরসা পেলাম। আমার কথাও জানালাম৷ তিনি কেমন যেন আশ্বস্ত হয়ে বললেন সমস্যা নেই দুজনেরই উচিত একটু সময় নেওয়া৷
হুম্ম! সময় নিলাম।
সংসারজীবনে দুজনের ভালো বন্ডিং হলেও দুজনই প্রাক্তনের স্মৃতি থাকে বের হতে পারিনি৷
আমার স্বামী এককথায় খুব ভালো মানুষ। চারমাসের সংসারে বুঝতে পারলাম তিনি আমার প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছেন। পরে জানতে পারি তার ডায়েরি দেখে আসলে প্রাক্তন বলে কেউ নেই আমাকে সঙ্গ দেওয়ার একটা প্রচেষ্টা। তিনি বিশ্বাস করতেন আমি একদিন সব ভুলে তার সাথে জীবন শুরু করবো।
ডায়েরি পড়ে কেমন চিট মনে হচ্ছিলো উনাকে। বাসায় ফিরলে খুব রেগে উনার সামনে ডায়েরি ফেলে দিয়ে বললাম এটা কি? প্রতারণা করছেন আমার সাথে?
তিনি নিটোল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন। কিছুই বললেননা৷ আমি সব গুছিয়ে নিয়ে ফিরে এলাম বাবার বাড়িতে। ফিরে আসার কারন সবাই জানতে চাইলেও আমি কিছু বলিনি। তিনিও বলেননি। শুধু ম্যাসেজ করেন “ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকবো”।
আমি ম্যাসেজ সীন করে রেখে দিলাম।
কেটে গেলো ছয় মাস। আমাদের বিয়ে দশমাস।
এদিকে প্রাক্তনের সাথে যোগাযোগ হলো। দূর্বলতা আগের মতোই৷ কথা কথা বলতে সিদ্ধন্ত নিলাম দুজনেই পালিয়ে যাবো। কিন্তু যেদিন যাবো সেদিন কেনো জানি উনার কথা খুব মনে পড়ছিলো। তবুও গেলাম। দেখি প্রাক্তন বাস স্টান্ডে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ট্রলি ব্যাগটা নিয়ে ছুটেই যাচ্ছি। তার সামনে এসে দাঁড়ালাম। তাড়াতাড়ি করে বাসে উঠলাম। কিন্তু ব্যাগটা আমার হাতেই। সে একবারের জন্যেও নিলোনা। ক্লান্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকলেও একবার বললোনা মুখটা মুছে নাও। কি অদ্ভুত!
এগুলো ভুল ধরার বিষয় না। আমি জানি প্রাক্তনের অভ্যাস৷ কিন্তু আজ কেনো জানি আমার স্বামী আর প্রাক্তনের মাঝে খুব বেশিই পার্থক্য নির্ণয় করতে ইচ্ছে করছিলো। এমন সময় মোবাইলে একটা ছোট্ট ম্যাসেজ। ” সে হাসপাতালে “।
বুকটা ধক করে উঠলো। বাস ছাড়বে এমন সময় ড্রাইভারকে থামতে বলেই নেমে গেলাম। সোজা চলে গেলাম পিজি হাসপাতালে। উনি অক্সিজেন মাস্ক পরে আছে। মাথা ফেটে গিয়েছ। পুরো শরীরে ব্যথা পেয়েছেন। খুব কষ্ট হচ্ছিলো। কিন্তু উনার সাথে সরাসরি কথা বলার অনুমতি নেই কারো।
বাইরে বসেই অপেক্ষা করছিলাম। পরেরদিন বিকেলে সবাইকে অনুমতি দেয়া হলো দেখা করার। তিনি প্রথমেই আমাকে খুঁজলেন। লজ্জানত দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম। কি বলবো বুঝতে পারছিনা। এমন সময় তিনিই জিজ্ঞেস করলেন, ” যাওনি?”
আমি কিছুই বললাম না।
কি হলো?
চলে গেলে কি খুব সুখী হতে?
অবশ্য আমি সইতে পারতামনা কিন্তু।
যাও।
আমি শক্ত করে উনার হাত ধরে বললাম, “না”। আপনার সাথেই থাকতে চাই। ফিরিয়ে দিবেন?
তিনি ঠিক তার বুকে কাছে টেনে নিয়ে বললেন, ” কখনোই না”।
আমি খুব শান্তি পাচ্ছিলাম।
তিনি প্রশ্ন করলেন কেনো ফিরে আসলে আগে বলো?
যত্নের অভাবে। ভালবাসায় শুধু আবেগ থাকলে হয়না। যত্নও থাকতে হয়। তার প্রতি ভালবাসা ছিলো। কিন্তু আপনার প্রতি ভালবাসা সৃষ্টিকর্রতা প্রদত্ত৷ আমি চাইলেও অস্বীকার করতে পারিনি৷ আপনার কাছেই সুখ। এই যত্নের লোভ সামলাতে পারিনি।
তাই।
তিনি কাছে টেনে নিয়ে বললেন, “আর যেওনা”। কপালে চুমু দিয়ে বললেন ” তুমি শুধু আমার”।
মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম।
শুরু করলাম সংসার।
মাঝেমাঝে প্রাক্তনের জন্য আফসোস হতো। কিন্তু এখন আর হয়না। সেও বিয়ে করে সুখে আছে।
ভাগ্যের ফায়সালায় আমি সন্তুষ্ট।
বেঁচে থাকুক প্রত্যকটা মানুষ বৈধ ভালবাসায়।
না ভাঙুক কোনো সংসার৷
ভাগ্যের_ফায়সালা
লেখাঃ #আশনা_আরাফ।
[নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কারো ব্যক্তিগত জীবন থেকে নেওয়া।]
৫. ব্রেকআপ হওয়ার স্ট্যাটাস
বান্ধবী হঠাৎই ফোন দিয়ে বললো, এই আমাকে ভালো কিছু বইয়ের নাম বলিস তো।
আমি অবাক হয়ে বললাম, তুই বই পড়িস?
ও বললো, আরে না! কিন্তু তন্ময়কে তো বলেছি পড়ি এখন ও আমাকে গিফট দিতে চায়।
তন্ময় ওর নতুন বফ। আমি বললাম,বলেছিস কেন এমন?
ও বললো, আরে! বইটই পড়ি না বললে মান থাকে? এখন ও বললো, তোমার খুব পড়ার ইচ্ছা কিন্তু কাছে নাই এমন কিছু বইয়ের নাম দিও গিফট করবো।
আমি রাগে রাগে আমার উইশলিস্টের একশ বইয়ের নাম পাঠিয়ে দিলাম।
সপ্তাহখানেক পর বান্ধবীর পোস্ট দেখতে পেলাম একশ বইয়ের এবং এক তোড়া লাল গোলাপের ছবি দিয়ে ক্যাপশনে লিখেছে, “থ্যাংকস লাভ”
সেখানে একটা ছেলে কমেন্ট করেছে, মধ্যাহ্ন বইটা আগে পইড়েন আপু। দারুন।
বান্ধবী রিপ্লাই এ লিখেছে, হ্যাঁ ওয়ান অব দা মাস্টারপিস অব জাফর ইকবাল।
আমি রিপ্লাই এ লিখলাম, জাফর ইকবাল না হুমায়ূন আহমেদ। ডানের দিকে পাঁচ নাম্বার বইটার কথা বলছে।
বান্ধবী রিপ্লাই ডিলিট দিলো।
আমার রাগ উঠে গেল। এদিকে এই একশ বই কেনার জন্য আমি কত কষ্ট করে টাকা জমাই। আমি মাসে দুই তিনটা করে কিনে কমাই আবার নতুন পছন্দের বই এসে একশ পূর্ণ হয়ে যায় কিন্তু কমে না।
কিছুদিন পর বান্ধবীর আবার ফোন।
এই দূর্গা কে রে?
আমি বললাম, দূর্গা চিনিস না? মা দূর্গা। ঠাকুর।
ও বললো, আরে না! আমিও তো প্রথমে তাই মনে করেছিলাম। পরে তন্ময় বললো দূর্গার মৃত্যুতে ও অনেক কেঁদেছে। আমি বললাম আমিও দুঃখে তিনদিন ভাত খাইনি।
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,পথের পাঁচালীর দূর্গা। তারপর ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিলাম।
এরপর ও বফের হাতের ওপর হাত রেখে একটা ছবি তুলে আমাকে পাঠালো। তারপর বললো, ক্যাপশন বল। বইয়ের যেন হয়।
আমি বললাম,মাথায় আসছে না।
ও রেগে বললো,এত কি বই পড়িস? এমন একটা কবিতা মনে কর যেটাতে হাতের ওপর ভালোবেসে হাত রাখা নিয়ে সুন্দর কথা লেখা আছে।
আমি বললাম,আমি গল্পের বই পড়ি,কবিতা না। গুগলে সার্চ দিয়ে খোঁজ।
ও গুগলে সার্চ দিয়েও হাতের ওপর হাত রাখা কিছু না পেয়ে রাগ করে অনলি মি করে প্রোফাইল পিক দিলো।
আরেকদিনের কথা। ভোরবেলায় আমার ঘুম নষ্ট করে ফোন দিয়ে তড়িঘড়ি করে বললো, তুই আজ শেষের কবিতা বইটা পড়বি।
আমি হাই তুলতে তুলতে বললাম,পড়েছি।
ও বললো,আবার পড়বি। তন্ময় আজ আমাকে ওটা পড়তে বলেছে। ও প্রশ্ন করতে পারে। যদি করে তুই স্টান্ডবাই থাকবি।
সেদিন রাতে তন্ময়ের সাথে আমাকে অমিত লাবণ্যের জটিল কেমিস্ট্রি নিয়ে আলোচনা করতে হলো। মাঝখান থেকে বান্ধবী নিজে শুধু বললো, সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো আমার বান্ধবীর নাম আর বইয়ের নায়িকার নাম এক।
আমার কাছে এটাকে সবচেয়ে মজার কিছু বলে মনে হলো না।
এরমধ্যে একদিন ও কাশফুলের মধ্যে একটা বই নিয়ে শুয়ে পড়লো। আমি বিব্রত ভঙ্গিতে এদিকে ওদিক তাকাচ্ছি এদিকে ও রিল্যাক্স মুডে শুয়ে সহজ গলায় বলছে, তোল ভালো করে তোল। প্রোফাইল পিক দিবো। দারুন হবে।
এরপরে সুন্দর একটা ছবি এডিট ফেডিট করে প্রোফাইল দিয়ে দেয়ার পরে আমি কমেন্ট করলাম,বইটার কোন অংশটা তোর সবচেয়ে বেশী ভালো লাগলো?
ও রিপ্লাই করলো,যে অংশে ঐযে একজন মারা গেল। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।
কিন্তু বইটা তো কমেডি বই! কেউ মারাই যায়নি। সামনাসামনি ওকে একথা বলতেই জিভ কেটে বললো,আমি আন্দাজে ঢিল মেরেছি। আসলে বেশীরভাগ বইয়েই তো কেউ না কেউ মরে! এই তো কাহিনী! যাক গে যাক।
কিছুদিন পর আবার এক কান্ড। ফেসবুকে পোস্ট দিলো, “পৃথিবীতে অনেক খারাপ ছেলে আছে কিন্তু একটাও খারাপ প্রেমিক নাই।” – হুমায়ূন আহমেদ
আমি কমেন্ট করলাম, হুমায়ূন আহমেদ এমন কথা বলেননি। বাবা প্রসঙ্গে এরকম একটা কথা আছে।
ও বললো,বলেছে তুই জানিস না। চুপ কর।
আমি চুপ করতে নারাজ। বললাম, খারাপ প্রেমিক তো অহরহ ই আছে। চারপাশেই তো দেখি খারাপ প্রেমিক। তোর আগের বফই তো তোরে চিট করলো।
ও পোস্ট ডিলিট করে ফোন দিয়ে আমার সাথে রাগারাগী করলো। আমার কমেন্ট নাকি ওর বফ দেখে ফেলেছে। আমি অবাক হয়ে বললাম,জানতো না তোর আগের কথা?
ও আরো অবাক হয়ে বললো, জানবে কেন?
আমি ভেবে দেখলাম তাই তো! যে বয়ফ্রেন্ড ওকে পড়ুয়া ভাবে সে ওর পাস্ট জানবে কিভাবে? ছেলেটার মাথায় কি কিছুই নেই?
যাইহোক, কিছু দিন পর আমার বান্ধবীর ব্রেকাপ হয়ে গেল। কারণ জানতে চাইবেন না। ওর এমনিতেই কিছুদিন পরপর ব্রেকাপ হয়,আবার নতুন রিলেশনে যায়।
আমি খুশী খুশী গলায় বললাম,এই বিষয়ে একটা ক্যাপশন আমার মনে পড়েছে। “প্রেম মানুষকে শান্তি দেয় কিন্তু স্বস্তি দেয় না।” এটা দিতে পারিস।
ও নাকে কেঁদে আমাকে বললো, এখন আমি ওর স্মৃতি নিয়ে কি করি?
আমি বললাম, তোর বইগুলো আমাকে সেল কর। নতুনের দাম পাবি না। পুরান দামে।
ও উদাস গলায় বললো, দাম লাগবে না নিয়ে যা। আমি খুশিমনে বই নিয়ে বাড়ি আসলাম। এদিকে ওর বফ সরি বলে ওর সাথে আবার প্যাচআপ করে নিলো। ও আমাকে ফোন দিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো, বইগুলো দিয়ে যা।
আমি রাগী গলায় বললাম,গাড়িভাড়া দিবি। বারবার বই আনো,নাও। ও রাজি হলো না। খুব কিপ্টা এমনিতে।
কিছুদিন পর আবার হাতের ওপর হাত রেখে পোস্ট। এবার ক্যাপশন খুঁজে পেয়েছে। লিখেছে, “দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম প্রেম বলে কিছু নেই। মানুষ যখন প্রেমে পড়ে, তখন প্রতিটি প্রেমই প্রথম প্রেম।”
Jannatul Firdous
আমাদের সকল ছোটগল্পের লিংক
https://kobitor.com/category/sotogolp/