ভাড়াটিয়া পর্ব ৯
রায়হানের মামা এসেছেন আমেরিকা থেকে। একমাত্র ভাগনের বিয়ে উপলক্ষে। আনোয়ারা বেগম ওনার ভাই ইলিয়াস কে খবর দিয়েছেন। বিয়েটা খুব দ্রুত দিতে চান। সুইটি মেয়েটাকে ওনার মনে ধরেছে।
ইলিয়াস শুনে একটু মনখারাপ করল। ওনার একমাত্র ভাগনের বিয়ে হবে একটা ভাড়াটিয়া মেয়ের সাথে! এটা কোনো কথা?
তারপরও একমাত্র ভাগনের বিয়ের জন্য উনি বিশ ভরি স্বর্ন এনেছেন। আমেরিকায় স্বর্নের দাম মনে হয় কম। আসলে ওনার ইচ্ছেছিলো বিয়েটা ভেঙে দিবেন। শুরুতে বললে তো কাজ হবে না। সে উনি ভালো করে জানেন। মেয়ের একটা বড়ো দোষ বের করতে হবে। আপা কে খুশি করতে স্বর্নে নিয়ে হাজির হয়েছেন।
সুইটি কে দেখার পর ওনার সব পরিকল্পনা বাতিল হয়েছে! এখন সুইটির সাথে রায়হানের বিয়ে দেয়ার ব্যাপারে ওনার আগ্রহ সবচেয়ে বেশি!
ইলিয়াসের ইচ্ছে বিয়ের বাজারটা বিদেশ থেকে করবেন। ওনার ধারণা দেশে ভালো কিছু পাওয়া যায় না। সিঙ্গাপুর গেলে ভালো হতো। আপাতত ভারত থেকে করলেও চলে। তবে ভাগনের হানিমুন হবে মরিশাস। হানিমুনের জন্য মরিশাসের চেয়ে ভালো কোনো জায়গা হয় না। এখনি ভিসার ব্যবস্থা করতে হবে। ওনার এক বন্ধু আছে ট্রাবল এজেন্সির ব্যবসা করে। নাম হলো মিন্টু। উনি মিন্টুর সাথে কথা বলেছেন। উনি পাসপোর্ট জমা দিতে বলেছেন দুইয়েকদিনে ভিসা করে দিতে পারবে।
ইলিয়াস সুইটি কে জিজ্ঞেস করল,” মা তোমার পাসপোর্ট আছে না?”
সুইটি হাসি দিয়ে বলল, “না মামা।”
“বলো কি! পাসপোর্ট নেই। আচ্ছা সমস্যা নাই মিন্টু কে বললে সব ব্যবস্থা করে দিবে। ও আবার এ সব লাইন খুব ভালো বুঝে।”
প্রসঙ্গ এড়াতে সুইটি বলল, “মামা চা খাবেন?”
“সে খাওয়া যায়। তুমি এক কাজ করো তো মা। তোমার এক কপি ছবি আর আইডি কার্ডের ফটোকপি দাও। “
সুইটি কী করবে ঠিক বুঝতে পারছে না। আইডি কার্ড আর ছবি দেয়াটা কী ঠিক হবে? পরে এ সব দিয়ে ঝামেলা করবে না তো। এখন না করবেই বা কী করে!
সুইটি এক কাপ চা নিয়ে এসে বলল, “মামা নেন চা।”
ইলিয়াস চায়ের কাপটা নিয়ে আলত করে চুমুক দিয়ে বলল,” যাও তো মা তোমার এক কপি ছবি আর আইডি কাডের ফটোকপি নিয়ে এসো। আমি আজই মিন্টু কে দিয়ে আসব।”
অনিচ্ছায় উঠে দাঁড়াল। বুঝতে পারল ইলিয়াস ছাড়ার মানুষ না। এ সব পাগলা মানুষ কে ক্ষেপান ঠিক হবে না। ছবি আর আইডি কাডের ফটোকপি দিয়ে দিলো।
রায়হান আর সুইটির বিয়ের তারিখ ঠিক হয়েছে। বাড়ির সবাই খুশি। শুধু ফাতেমার মনটা একটু খারাপ! মনখারাপের কারনটা সে জানে কিন্তু কাউকে বলতে পারছে না।
সবাই সুইটি মেয়েটার মায়ায় পড়ে গেছে! মামাকে প্রথমে একটু অখুশি মনে হলেও এখন উনি সবচেয়ে বেশি ফালাচ্ছেন!
মেয়ের পাসপোর্ট করতে দিয়েছেন। বিয়ের পরে নাকি বিদেশে পাঠাবেন। যাক ভাইয়া ভালো থাকলেই হলো। ফাতেমার চিন্তা এখানেই। তার ভাইটা খুব ভালো!
শাহিন সাহেব এসেছেন বিয়ের কাডের অর্ডার দিতে। সাথে আসলাম কে নিয়ে এসেছেন। আসলাম অবশ্য আসতে রাজি ছিলো না। একটু জোর করে নিয়ে এসেছেন বলা যায়।
আসলাম বেশ খুশি। যতটা আয় হবে ভেবছিলেন এখন মনে হচ্ছে তারচেয়ে বেশি হবে। ছেলের এক মামা চলে এসেছে বিদেশ থেকে। ওনার কাছে নিশ্চয়ই ভালো ডলার আছে। স্বর্নই নাকি এনেছেন বিশ ভরি। এখন ভালো মতো কাজটা শেষ করতে পারলেই হয়।
শাহিন সাহেব একটা কার্ডের দোকানে ঢুকলেন। আসলাম পিছনে ঢুকলেন। দোকানদার শাহিন সাহেব কে দেখে চিনে সালাম দিলেন।” কেমন আছেন ভাইজান?”
একটু হেসে বললেন, “আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুমি কেমন আছ? “
“চলছে ভাইজান আপনাদের দোয়ায়। কী করতে পারি আপনার জন্য।”
“ভালো একটা বিয়ের কার্ড দেখাও।”
“রায়হানের বিয়ে দিবেন বুঝি?”
শাহিন সাহেব হালকা হেসে বললেন,” হ্যাঁ।”
দোকানদার বেশ কিছু কার্ড বের করে দেখালেন।” দেখুন ভাই কোন ডিজাইন ভালো লাগে।”
শাহিন সাহেবের একটা কার্ড ভালো লাগল। আসলামের তো পছন্দের কোনো বালাই নেই। শাহিন সাহেবের ভালো লেগেছে সেটা কেই সম্মতি দিলো।
কার্ডের অর্ডার দিয়ে চলে আসলেন।
আনোয়ারা খুব ব্যস্ত। অনেক কাজ করতে হবে৷ গ্রাম থেকে কিছু আত্মীয় স্বজন আসবেন বিয়ে উপলক্ষে তাদের থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। ঢাকা শহরে রাতে থাকার বিরাট সমস্যা! কারো বাসায় অতিরিক্ত ঘর পরে থাকে না! ছাদে সাময়িক ব্যবস্থা করতে হবে। বিয়েটা কমিউনিটই সেন্টারে করা হবে। বাড়িতে এত ঝামেলা করা যাবে না।
চলবে–
Nabil Mahmud