#অন্যরকম তুমি
পর্ব ৪৫
#তানিশা সুলতানা
সাদি মায়ের কাছে কল দেয়। সাবিনা বেগম তখন ফ্রেশ হয়ে হাত মুখ মুছছিলেন।
সাদির কল পেয়ে মুখে হাসি ফুটে ওঠে। দ্রুত রিসিভ করে।
“হ্যাঁ সাদু বল
” কি করছো?
সাদি জিজ্ঞেস করে।
“এইত কিছু না। তুই?
” আমি রান্না শেষ করলাম। মা ও না কি রান্না করেছে? একটুখানি তরকারি ফ্রিজে রেখে দিও প্লিজ।
সাদি আমতা আমতা করে বলে। সাবিনা বেগম ফিক করে হেসে ফেলে। মায়ের হাসিতে লজ্জা পেয়ে যায় সাদি।
“তুলে রাখতে হবে কেনো? তুই আসলে আবার বলবি রান্না করে দিতে। রান্না তো শিখেই নিলো।
হাসতে হাসতে বলেন উনি।
“আজকে আমি যা বলেছি তারপর আর ও রান্না করবে না। আর এটাই ওর ফাস্ট রান্না। এটার তুলনা পরের রান্নার থেকে বেশি স্পেশাল।
সাদি লাজুক হেসে বলে।
” আচ্ছা বাবা রেখে দেবো। তুই আসছিস কবে?
“বিয়ের দিন আসবো
” আচ্ছা
আরও কিছুখন গল্প করে ফোন রেখে দেয়।
সাদি মুচকি হেসে খেতে যায়। ভীষণ খিধে পেয়েছে।।
খাবার খেয়ে সবাই খুব প্রশংসা করে। তাতে ছোঁয়ার মন নেই। যার থেকে প্রশংসা পেতে চায়। সেই তো করলো না। এদের প্রশংসা দিয়ে করবে টা কি?
চুপচাপ খেয়েছে। সিফাত জানায় পরির জ্বর হয়েছে। তনু বাসায় নেই সাগরের মায়ের সাথে তার বাপের বাড়ি গেছে। সাগর বন্ধুদের সাথে গেছে।
ছোঁয়া কোনোরকমে খেয়ে পরিকে দেখতে যায়। বেঘোরে ঘুমচ্ছে মেয়েটা। জ্বরে গা পুরে যাচ্ছে। ছোঁয়া জলপট্টি দিতে থাকে। চিন্তা হচ্ছে ভীষণ। সাবিনা বেগমও চলে এসেছে। পরির পাশে বসে আছে চিন্তিত মুখে।
সিফাত ডাক্তারকে কল করছে। আর সিফাতের বাবা এক কোনায় চুপটি করে বসে আছে। এরই মধ্যে ছোঁয়া সিমিকে মেসেজ দেয় পরির জ্বর হয়েছে। কিছুখনের মধ্যেই ডাক্তার চলে আসে৷ জ্বর মেপে ঔষধ দিয়ে চলে যায়। ডাক্তার চলে যেতেই হুরমুর করে পরির রুমে ঢুকে পড়ে সিমি৷ চোখে মুখে আতঙ্ক, এলোমেলো চুল গায়ে পরনে বাড়ির সাধারণ জামা। দেখেই বোঝা যাচ্ছে যেভাবে ছিলো সেভাবেই চলে এসেছে।
সবাই ওকে দেখে অবাক হয়ে যায়।
সিমি দৌড়ে এসে পরির পাশে বসে পড়ে। পরপর কয়েকটা চুমু খায় মেয়ের কপালে। তারপর মেয়ের কপালে কপাল ঠেকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে। যেনো এতখন শ্বাস আটকে ছিলো।
“তুমি এখানে? বাড়িতে বলে এসেছো?
সাবিনা বেগমের কথায় হুশ ফেরে সিমির। মাথা তুলে সবার দিকে এক পলক তাকায়। তারপর আবারও মাথা নিচু করে ফেলে।
” কাউকে বলে আসি নি
রিনরিনিয়ে জবাব দেয় সিমি।
“এই মেয়ে তোমার বাবা মাকে কল করে বল তোমার বোন এখানে আছে।
ছোঁয়ালে উদ্দেশ্য করে বলেই সাবিনা বেগম চলে যায়। সাথে শশুড় মশাইও চলে যায়। ছোঁয়া বোনের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
” ভাইয়া আপনি আমার রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। আমরা এখানে থাকবো।
সিফাতের দিকে তাকিয়ে বলে ছোঁয়া। সিফাত এগিয়ে এসে পরির জ্বর চেক করে সিমির দিকে এক পলক তাকিয়ে বেরিয়ে যায়।
সিমি পরিকে ঔষধ খাইয়ে দেয়।
একটু পরেই সাবিনা বেগম থালা ভর্তি ভাত নিয়ে হাজির হয়। সিমির সামনে ভাতের প্লেট রাখে।
“খেয়ে নাও। তোমার মেয়ের জ্বর কমে যাবে।
মুচকি হেসে সিমির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। সিমিও একটু হাসে।
” হুমম ভালোই তো। সব আদর আপির জন্য। আমাকে তো কেউ ভালোই বাসে না।
ছোঁয়া গাল ফুলিয়ে গোল হয়ে বসে বলে। ছোঁয়ার কথায় সাবিনা বেগম শব্দ করে হেসে ফেলে। সিমিও হাসে।
“হিংসা হয় না কি?
ছোঁয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন উনি।
” একটুও না
ছোঁয়া মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলে।
সাবিনা বেগম দুই হাতে জড়িয়ে ধরেন ছোঁয়াকে। ছোঁয়াও হেসে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নেয়।
“তুমি তো আমার পাগলী বউ মা।
” আর তুমিও আমার সোনা শাশুড়ী মা।
সিমি দুই একবার খাবার মুখে দেয়৷ গলা দিয়ে খাবার নামছে না। মাথায় হাজারও চিন্তা। ভাতের মধ্যেই হাত ধুয়ে প্লেট সরিয়ে রাখে। পরির একপাশে ছোঁয়া আরেক পাশে সিমি শুয়েছে।
ছোঁয়ার ঘুম আসছে না। সাদির সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে। দেরি করে না ছোঁয়া। চট করে উঠে ফোনটা হাতে নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়। রাত দশটা হবে।
রাস্তার লেমপোস্টের আলোতে রাস্তা আলোকিত হয়ে আসে। সেই আলো কিছুটা ছোঁয়ার মুখেও লাগছে।
দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে পা মেলে বসে ছোঁয়া।
তারপর কল করে সাদিকে।
সাদি তখন ল্যাপটপে অফিসের কাজ করছিলো। ফোন বেজে ওঠায় মুচকি হাসে। জানা আছে ছোঁয়া কল দিয়েছে।
সাদি ফোনটা রিসিভ করে।
“কি করছো?
মায়া মিশ্রত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে সাদি।
” আপনাকে অনুভব করার চেষ্টা করছি।
ছোঁয়া চোখ বন্ধ করে বলে।
সাদি ল্যাপটপ রেখে বিছানায় গাল এলিয়ে দেয়।
“আমাকে অনুভব?
” হুমমম।
একটু চুপ থেকে ছোঁয়া বলে ওঠে।
সাদু একটা জিনিস চাইবো দেবেন?
ছোঁয়া গম্ভীর গলায় বলে।
“বলো কি চাই?
সাদি চিন্তায় পরে যায়।
” আমার একটা বেবি প্রয়োজন। দেবেন?
সাদির চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায়। পনেরো বছরের মেয়ে বেবি চাইছে। ভাবা যায়?
সাদি জোরে জোরে দুটো শ্বাস নেয়।
“দেবেন না?
সাদির থেকে উওর না পেয়ে আবারও জিজ্ঞেস করে ছোঁয়া।
” হ্যাঁ দেবো তো। এখুনি গুগুল থেকে ডাউনলোড করে গোলুমলু নাদুসনুদুস একটা বেবি দিচ্ছি তোমায়।
সাদির রসিকতা শুনে রাগ উঠে যায় ছোঁয়ার। কতো সিরিয়াস একটা কথা বললো আর লোকটা সিরিয়াসলি নিলোই না।
দাঁত কটমট করে চোখ খুলে ছোঁয়া।
“আমি ওই বেবির কথা বলি নি।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে ছোঁয়া।
” তাহলে কোন বেবি?
সাদি না বোঝার ভান করে বলে।
“আমার পেট থেকে যে বেবি হবে।
” এতে আমি কি করবো?
সাদি ভ্রু কুচকে বলে।
“লেজ ছাড়া বাঁদর, হনুমান, হাতি, শয়তানের নানা, করলার জুস, ফোন রাখ। তোর সাথে আর কোনো কথা নাই। তুই একটা
ছোঁয়া কল কেটে দেয়। সাদি কপালে তিনটে ভাজ ফেলে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে। রেগে গিয়ে এই মেয়ের তুই তুকারি করাটা সাদির একদম পছন্দ না। একবার বাড়ি যাই থাপ্পড়ে তুই বলা বের করে দেবো।
খুব ভোরে সিমির ঘুম ভেঙে যায়। পরি উঠে বসে আছে।
“মা বসে আছো কেনো?
পরিকে বসে থাকতে দেখে বিচলিত হয়ে বলে সিমি।
পরি হাসিমুখে মায়ের দিকে তাকায়।
” তুমি এসেছো?
সিমিকে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে পরি। সিমিও মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
“আর যাবে না তো?
মাথা উঁচু করে সিমির দিকে তাকিয়ে বলে।
” নাহহহ সোনা আর যাবো না।
পরির এলোমেলো চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে বলে সিমি।
“খিধে পেয়েছে মা।
পরি আহ্লাদী সুরে বলে।
” চলে আগে দাঁত ব্রাশ করে নেবে।
সিমি পরিকে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে। দাঁত ব্রাশ করিয়ে দেয় পরিকে নিজেও দাঁত ব্রাশ করে নেয়। তারপর চোখে মুখে পানি দিয়ে বেরিয়ে পড়ে। পরিকে খাতা কলম দিয়ে আঁকতে বলে কিচেনের দিকে চলে যায়। কিছু একটা বানানোর জন্য।
সিমি কিচেনে আসতেই দেখতে পায় সিফাত নুডলস রান্না করছে। ভ্রু কুচকে আসে সিমি।
“রান্না কেনো করছেন?
কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে জিজ্ঞেস করেই ফেলে সিমি। সিফাত ঘাড় বাঁকিয়ে সিমির দিকে এক পলক তাকায়।
” পরির খিধে পেয়েছে।
সিফাত আবারও কাজে মন দিয়ে বলে।
“জানলেন কিভাবে?
অবাক হয়ে বলে সিমি।
” রাতে দুধ ছাড়া কিছু খায় নি। এত বড় রাত। এখন খিধে পাবেই। কমনসেন্স। তাছাড়া ছোট থেকেই পরির রাতে দুধ খেলে আমি ভোরে নুডলস করে দেই।
সিমি অবাক হয়ে যায়। একটা বাবা এতোটা কেয়ার ফুলি কি করে হতে পারে? কে বলেছে পৃথিবীতে মায়ের তুলনা অতুলনী? মা ছাড়া কেউ বেশি ভালোবাসে না?
এই তো সিফাত। অতুলনীয়, মায়ের থেকেও বেশি ভালো বাসতে পারে।
সিমির ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে ওঠে।
“স্বামী হিসেবে এতোটা পসেসিভ থাকতে আজকে আমাদের সুন্দর একটা পরিবার হতো। আজকে আমরা সুখি দাম্পত্যি হতাম। এভাবে ধুঁকে ধুঁকে মরতে হতো না।
তাচ্ছিল্য হেসে বলে সিমি। সিফাতের হাত থেমে যায়। সিমি এগিয়ে গিয়ে নুডলসের বাটিটা নিয়ে চলে যায়। সিফাত হাত মুঠ করে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে।
একটা ভুলের আর কত শাসুল দেবে?
এই বাড়িতে আসার পর থেকেই খালি একটু পরপর সাদিকে মনে পড়ছে ছোঁয়ার। এখানে তো চার দেয়ালে বন্দি। বাইরে বেরনো যাবে না।
একা একা বোর হচ্ছে। একটু পরপরই মনে হচ্ছে সাদির সাথে একটু কথা বলি।
মনে হওয়ার সাথেই কল দিচ্ছে কিন্তু সাদি রিসিভ করছে না। রাগ হচ্ছে খুব ছোঁয়ার। কোন মেয়ের সাথে নিকনিক করতে গেছে আল্লাহই জানে।
সাদি বেশ মজা পাচ্ছে। জানতো আজকে সারাদিন ছোঁয়া কল করবে। ছোঁয়ার থেকে কল পাওয়ার জন্যই তো ওকে এই বাড়িতে আনা। বাবার বাড়িতে থাকলে সারাক্ষণ এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াবে সাদির কথা মনেও থাকবে না। আর এই বাড়িতে চার দেয়ালে বন্দি থাকবে। সারাক্ষণ সাদিকেই ভাববে।
কিন্তু আজকে তো সাদি কল রিসিভ করবে না। যতখন না তিনশত একুশ বার ছোঁয়ার কল না হবে ততখন রিসিভ করবে না। এটাই হলো রিভেঞ্জ।
চলবে
বাড়ি থেকে চলে আসছি বোন কথা বলে না বলে। এখন যেখানে আছি সেখানে নেট থাকে না। কারেন্টের মতো হয়ে গেছে নেটওয়ার্ক। এই থাকে তো এই থাকে না।
বোন কথা না বলা পর্যন্ত বাড়িও যাবো না।
বাড়ি ফেরার পরে রেগুলার গল্প পাবেন। সেটা কবে থেকে জানি না