#টু ফাইভ এইট জিরো
পর্ব ৪
– রুদ্র বললো, নিয়াজ হাসানকে হ!ত্যা কে করেছে আমি জানি না। আমি যদি জানতাম বা জড়িত থাকতাম তাহলে কি কোনদিন সেই বাড়িতে যাই? আপনিই বলেন, কোন কারণে যাবো আমি?
– কারণ জানতে চান? সম্ভব্য কারণ।
– হ্যাঁ বলেন।
– আপনি বা নিয়াজ হাসানের হত্যাকারী জানতে পেরেছেন যে নিয়াজের বোন মামলা করেছে। সুতরাং সেই বিষয় তদন্ত শুরু হয়েছে। এখন যদি তদন্তের মাধ্যমে সবকিছু বের হয়ে যায় তাহলে তো সব শেষ হয়ে যাবে। তাই আপনি বা আপনারা সবাই মিলে তাইশা ও তার বাবাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন।
– আপনি এসব কি বলতেছেন পাগলের মতো।
– কিছু না, সম্ভব্য কারণটা জানালাম। এরকম যদি কিছু হয়ে থাকে তাহলে তো কাজটা করতেই পারে তাই না?
– কিন্তু আমি সেরকম কিছু করিনি।
– আপনি বিশ্রাম করুন, আমি একটু থানায় যাচ্ছি তাইশার সঙ্গে দেখা করতে। বিকেলে বা সন্ধ্যার পরে একবার আসবো আপনার কাছে। আমার বিশ্বাস, আপনি তখন সবটাই সুন্দর করে সত্যিটা গুছিয়ে বলবেন।
সাজু ভাই তার ডান হাতটা রুদ্রর দিকে বাড়িয়ে দিল মুসাফাহা করার জন্য। রুদ্র সাজুর হাতটা ধরে অবাক হয়ে গেল। সাজু হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে মুচকি হেসে বললেন,
– আমার শরীর সবসময়ই এরকম অতিরিক্ত গরম থাকে। মনে হয় যেন জ্বরে আক্রান্ত রোগী। আপনি হয়তো জানেন না তাই অবাক হয়েছেন।
রুদ্র কিছু বললো না। সাজু আবার বললো,
– ডাক্তারের কাছে শুনলাম যে আপনার শীররে যে বিষটা পাওয়া গেছে সেটা মানুষকে মারতে পারে না। খুব বেশি হলে ৬/৭ ঘন্টা শরীরটা অবশ হয়ে যায় বা অস্বাভাবিক লাগে। কিন্তু ওটাতে মানুষের মৃত্যু হয় না। সুতরাং আপনি নিজেই ইচ্ছে করে এটা নিয়েছেন কারণ আপনি নিজে তো নিজেকে মারতে চাইবেন না।
আসি, আসসালামু আলাইকুম।
রুদ্র বসে রইল বিছানায়, সাজু ভাই আস্তে আস্তে বেড়িয়ে গেল। চোখের সামনে থেকে আড়ালে চলে গেল সাজু৷ রুদ্রর চোখে মুখে ফুটে উঠেছে তখন ভিষণ চিন্তার ছাপ।
★★
হাসপাতালের পার্কিং প্লেস থেকে নিজের বাইকটা নিয়ে বের হয়ে গেল সাজু ভাই। সাজুর বাইকটা গেইট পার হবার সঙ্গে সঙ্গে দেয়ালের পাশ থেকে বের হয়ে এলো তামান্না। কিছুটা দুরত্বে থাকা তিন ফিট্ পাঁচ ইঞ্চি লম্বা এক বামনকে ইশারায় কাছে ডাকেন।
বামন লোকটার বয়স ৩৪ বছর। শরীরের উচ্চতা কম হলেও শক্তিতে সে কোনো অংশেই কম নয়। বামন লোকটার নাম কাজল।
– তামান্না বললো, কি বুঝলে কাজল?
বামন কাজল বললো,
– ছাঁদের চিলেকোঠার ঘরে যে নিয়াজ হাসান থাকতো সেই ছেলের মৃত্যুর ঘটনা। রুদ্রের সঙ্গে তো এসব নিয়ে প্রশ্ন করছিল এতক্ষণ।
– আফরিন হত্যার কোনো ঝামেলা নাই?
– নাহ, আর ওই রুদ্র ছেলেটা পুলিশের একজন ইনফর্মার হিসেবে কাজ করে। কিন্তু সাজু তো তাকেই সন্দেহ করেছে।
– তাই নাকি? তাহলে নিয়াজ সেদিন বাসার ছাদে এমনি এমনি মরেনি। খুন করা হয়েছে?
– হ্যাঁ, তবে একটা ঝামেলা হয়েছে।
– আবার কি?
– সাজু ভাই রুদ্রকে আপনার নাম জিজ্ঞেস করেছে। বলে তামান্না কে? এটা কি সেই তামান্না যে মেয়ে টাকার জন্য মানুষ হত্যা করে।
– এ কথা কেন জিজ্ঞেস করেছে?
– আমি জানি না।
– রুদ্র তখন কি বলেছে?
– রুদ্র তো আপনাকে চেনে না, তাই কিছু বলতে পারে নাই।
– কিন্তু সাজু আমার কথা কেন জিজ্ঞেস করলো। আমি তো রুদ্রর সঙ্গে কোনভাবেই জড়িত নয় তাহলে কেন জিজ্ঞেস করলো।
– শাহানা আপার কি অবস্থা? তাকে যে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে তারপর আর যোগাযোগ করেছেন তার সঙ্গে?
– নাহ, পুলিশ আমাকেও গ্রেফতার করতে চায় আর শাহানার বিরুদ্ধে অভিযোগ তেমন প্রমাণ নেই। স্বীকার না করলে মামলার আসামি খালাস ও হতে পারে।
– আমি অসুস্থ না হলে তো আপনি এতটা বিপদে পড়তেন না আপা। সরাসরি মেরে দিতাম তাহলে এসব সাক্ষী প্রমাণ আর থানা পুলিশের কোনো সমস্যা হতো না।
তামান্না নিঃশ্বাস ফেলে সামনে এগিয়ে যায়। সাজু এই নিয়াজ হত্যার ঘটনার মধ্যেও তার নাম কেন খুঁজে বেড়াচ্ছে সেটা তাকে জানতে হবে।
বামন কাজল পিছনে পিছনে যাচ্ছে, কাজলের কাছে একটা পিস্তল থাকে সবসময়। তামান্না আর কাজল গাড়িতে উঠে বসলো৷ গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে থানার দিকে।
★★
থানায় আসার পর থেকেই তাইশা কাঁদছে। কাল সারারাত ঘুমাতে পারেনি তাইশা। তাইশার বাবা জেনে গেছে তাইশা থানায়। তিনি হাসপাতাল থেকে সকাল বেলা মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। মেয়ের সামনে দাঁড়িয়ে হাউমাউ করে কান্না করলেন।
তাইশার যে দুই ভাই স্পেনে থাকে তারা সেখান থেকে কল দিচ্ছে বারবার৷ ইতিমধ্যে উকিল দিয়ে জামিনের ব্যবস্থা করার চেষ্টা চলছে। তাইশার বাবা ওসি সাহেবের কাছে কাঁদতে কাঁদতে শুধু বলেন,
– আমার একমাত্র মেয়ে ওসি সাহেব। ওকে আমি কোনদিন এক বিন্দু কষ্ট দেই নাই। আমি জীবিত অথচ আমার মেয়েটা থানায়। আপনি আমাকে গ্রেফতার করুন তবুও আমার মেয়েকে ছেড়ে দিন দয়া করে।
তখন ওসি সাহেব বললেন,
– সন্দেহের তালিকায় আপনিও আছেন। অসুস্থ থাকার কারণে আপনাকে আপাতত গ্রেফতার করা হচ্ছে না। তাছাড়া আমরা তদন্ত করছি, তাই আপনার বিরুদ্ধে কোনো মামলা দেইনি।
তাইশার বাবা কাঁদতে কাঁদতে কিছুক্ষণ আগে চলে গেছে। যাবার সময় মেয়ের হাতটা ধরে বারবার করে বলেছেন, আজকে সন্ধ্যার মধ্যে আমি তোকে জেল থেকে বের করবো মা। তুই কোনো চিন্তা করিস না, তোর বুড়ো বাপের প্রতি ভরসা রাখ।
ঠান্ডা কফির কাপটা হাতে নিয়েই তাইশার সঙ্গে কথা বলতে গেল সাজু। তাইশা সাজুর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। সাজু কফির কাপে চুমুক দিয়ে বললেন,
– যদি একটা আয়না আপনার সামনে এনে দেই তাহলে আপনি ঠিক কতক্ষণ তাকিয়ে থাকবেন?
– পনের থেকে বিশ সেকেন্ড, আর সেই সঙ্গে একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস।
– নিয়াজ হাসানের সঙ্গে আপনার কতদিনের সম্পর্ক ছিল? যেদিন তিনি মারা গেছেন সেদিন আপনি কোথায় ছিলেন? তার মৃত্যুর বিষয়টা সবার আগে কে বুঝতে পারে?
তাইশা তাকিয়ে আছে এখনো। সাজু প্রশ্ন বুঝতে পেরেছে ঠিকই কিন্তু উত্তর দিতে ইচ্ছে করছে না। অনিচ্ছা সত্ত্বেও সাজুর হাতের কাপটাে দিকে তাকিয়ে বললো,
– সম্পর্কটা প্রায় দুই বছরের। নিয়াজ যেদিন মারা যায় সেদিন আমি বাড়িতেই ছিলাম। নিয়াজ যে মারা গেছে সেটা ওর বড় বোন সবার আগে বুঝতে পেরেছিল।
– তিনি কি এখানেই থাকতো? মানে আপনাদের বাড়িতে নিয়াজের বোন থাকতো?
– নাহ, নিয়াজ দুদিন ধরে বাসার কারো মোবাইল কল রিসিভ করছিল না। তাই আপু এসেছিল ওর খোঁজ নিতে। উপরে গিয়ে দেখা যায় নিয়াজ তার রুমের মধ্যে দরজা বন্ধ করে শুয়ে আছে। তবে জানালা খোলা ছিল।
– তখন কি নিয়াজ বেঁচে ছিল?
– না।
– রুদ্রর কাছে আপনি নাকি বলেছেন যে নিয়াজ হাসান এক্সি!ডেন্ট করে মারা গেছে।
– তোই না তো, আমি বলেছিলাম যে অস্বাভাবিক ভাবে মৃত্যু হয়েছিল।
– তখন থানা পুলিশ হয়নি?
– হ্যাঁ হয়েছে তো, লাশ পোস্টমর্টেম করা হয়েছে। পুলিশের কাছে মামলা করা হয়েছে। নিয়াজের বোন যে মামলা করেছে সেই মামলা তো এখনো চলছে। কিন্তু মাঝখান থেকে আমাকে রুদ্রের উপর হামলার দায়ে গ্রেফতার করলো।
– আপনার হাসবেন্ডের ঘটনাটা কি ছিল। আর নিয়াজ মারা যাবার কতদিন পরে আপনার বিয়ে হয়েছে?
– মারা যাবার পর মানে? নিয়াজ তো আমার বিয়ের সপ্তাহ খানিক পরে মা-রা গেছে।
– আজব তো।
– কি হয়েছে?
– আপনি রুদ্রের কাছে বললেন যে নিয়াজ নাকি আপনার বিয়ের আগেই মা-রা গেছে। তাহলে সেই কথা আমার কাছে উল্টে যাচ্ছে কেন?
– আপনার কি মাথা খারাপ নাকি? আমি তো রুদ্র সাহেবকে বললাম যে নিয়াজ মারা গেছে আমার বিয়ের সপ্তাহ খানিক পরে। আর আমার হাসবেন্ড মারা গেছে দশদিন পরে।
সাজু বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ রইলো। কফির কাপটা ততক্ষণে শেষ হয়ে গেছে।
সাজু বললো, দুজনের মৃত্যুর ঘটনাই আমার সঙ্গে ভালো করে বলুন। আপনি যদি সত্যিটা বলেন তাহলে সন্ধ্যার আগে সত্যি সত্যি চলে যেতে পারবেন।
বাবা যখন আমার বিয়ে ঠিক করে তখন আমি নিয়াজের কথা বাবাকে বলেছিলাম। নিয়াজ তার বাবা ও বোনকে আমার বাবার কাছে নিয়ে আসে। কিন্তু আমার বাবা তাদের অপমান করেন। নিয়াজ কিছু বলে না, ওর একটাই কথা ছিল যে আমাকে সে বিয়ে করতে চায়।
কিন্তু অপমানিত হয়ে ওর বোন ও বাবা দুজনেই প্রচুর রাগ করে। নিয়াজকে বিভিন্ন ধরনের কথা বলতে থাকে কিন্তু নিয়াজ কিছু বলে না।
এরমধ্যে হঠাৎ নিয়াজের একটা ফুফাতো বোনকে ওর বড়বোন আবার আমাদের বাড়িতে আসে।
তাইশা কে থামিয়ে দিয়ে সাজু বললো,
– মেয়েটার নাম কি অবন্তী রহমান?
তাইশা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।
– আপনি কীভাবে জানেন?
– অবন্তীর বাবা নেই, মা মেয়ে একসঙ্গে ঢাকায় থাকতো।
– হ্যাঁ, কিন্তু বছর খানিক আগে অবন্তীর মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যায়। তারপর থেকে অবন্তী তার মামার বাসায় থাকতো। এসব কথা আমি নিয়াজ এর মুখে শুনতাম সবসময়। নিয়াজের মা-বাবা ও বোনের ইচ্ছে ছিল অবন্তীর সঙ্গে নিয়াজের যেন বিয়ে হয়।
– কিন্তু অবন্তীরও একটা রিলেশন ছিল তাই না?
– আপনি তো দেখি সব জানেন।
– সব জানি না, কিছু কিছু এলোমেলো প্রশ্ন আছে সেগুলোর উত্তর মিলে যাচ্ছে।
– অবন্তীর বয়ফ্রেন্ড কে আমি জানি না, তবে সেই লোক নিয়াজকে কল দিয়ে হুমকি দিয়েছিল। যদি অবন্তীকে বিয়ে করে তাহলে নাকি ওকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবে।
.
.
.
চলবে…..
লেখা:-
মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব।